জেলখানার চিঠি গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Jelkhanar Chithi Golper Question Answer Class 8 Bengali wbbse

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

সাহিত্য মেলা
অষ্টম শ্রেণি বাংলা

জেলখানার চিঠি গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Jelkhanar Chithi Golper Question Answer Class 8 Bengali wbbse

জেলখানার চিঠি গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Jelkhanar Chithi Question Answer Class 8 Bengali wbbse

জেলখানার চিঠি গল্পের উৎস, বিষয়সংক্ষেপ, শব্দার্থ ও টীকা, অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর, হাতে কলমে প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Jelkhanar Chithi Golper Question Answer Class 8 Bengali wbbse

1. অষ্টম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here

2. অষ্টম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here

জেলখানার চিঠি গল্পের উৎস, বিষয়সংক্ষেপ, শব্দার্থ ও টীকা, অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর, হাতে কলমে প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Jelkhanar Chithi Golper Question Answer Class 8 Bengali wbbse

জেলখানার চিঠি
—সুভাষচন্দ্র বসু

উৎসঃ শ্রী দিলীপ কুমার রায়কে লেখা সুভাষচন্দ্র বসুর এই পত্রটি তার ‘তরুণের স্বপ্ন’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। সুভাষচন্দ্র মান্দালয় জেলে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে থাকার সময় ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২রা মে তারিখে তার বন্ধু দিলীপ কুমার রায়কে ওই চিঠিটি লিখেছিলেন।

মূল বিষয় : আলোচ্য পত্রটি মান্দালয় জেলে রাজনৈতিক বন্দি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর ঘনিষ্ঠ
বন্ধু দিলীপ কুমার রায়কে লিখেছিলেন। এতে রাজনৈতিক বন্দিদের ঘিরে জেলের ভিতরে সতর্কতা ও সাবধানতার কথা, পরাধীন ভারতবর্ষে জেলের অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার কথা, কারা শাসনপ্রণালীর ত্রুটির কথা, জীবনে বন্দিদশার নানান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা পত্রলেখক আলোচনা করেছেন। সুভাষচন্দ্র বসু জানিয়েছেন, জেলের অভিজ্ঞতা থেকে নানারকম চিন্তা তাঁর মনে আসে। তিনি লিখেছেন—“সে সম্বন্ধে পাতার পর পাতা লিখে যেতে পারি কিন্তু একটা চিঠির তো শেষ আছে।” কারা শাসনপ্রণালী এবং কারাজীবনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা চিঠিটির ‘জেলখানার চিঠি’ নামকরণ অবশ্যই যথার্থ হয়েছে।

অতিরিক্ত বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর জেলখানার চিঠি অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Extra Question Answer Class 8 Bengali wbbse

• সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ :

১. জেলখানার চিঠি গদ্যটি লিখেছেন—
(ক) সুভাষচন্দ্র বসু
(খ) জগদীশচন্দ্র বসু
(গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) কাজী নজরুল ইসলাম

উত্তরঃ (ক) সুভাষচন্দ্র বসু।

২. জেলখানার চিঠি লেখা হয়েছে—
(ক) তিহার জেল থেকে
(খ) মান্দালায় জেল থেকে
(গ) আন্দামান জেল থেকে
(ঘ) প্রেসিডেন্সি জেল থেকে

উত্তরঃ (খ) মান্দালায় জেল থেকে।

৩. জেলখানার চিঠি লেখার তারিখটি হলো—
(ক) ২/৫/২৫ (খ) ৩/৫/২৪ (গ) ৩/৪/২৫
(ঘ) ২/৪/২৪

উত্তরঃ (ক) ২/৫/২৫

৪. সুভাষচন্দ্র বসু যে বন্ধুর চিঠির উত্তর দিয়েছেন তিনি হলেন—
(ক) বিদ্যাসাগর (খ) বিদ্যাধর (গ) দাসু রায়
(ঘ) দিলীপ

উত্তরঃ (ঘ) দিলীপ।

৫.নেতাজি সুভাষ তার বন্ধু দিলীপের লেখা চিঠি পেয়েছিলেন—
(ক) ২১/৩/২৫ (খ) ২২/৩/২৫ (গ) ২৩/৩/২৫
(ঘ) ২৪/৩/২৫

উত্তরঃ (ঘ) ২৪/৩/২৫

৬. পত্রাকারের ভবিষ্যতের কর্তব্য হবে কারা—
(ক) বন্ধ করা (খ) সংস্কার করা (গ) ধ্বংস করা (ঘ) পরিচর্যা করা

উত্তরঃ (খ) সংস্কার করা।

৭. সুভাষচন্দ্রের মতে আমাদের শিল্প ও সাহিত্য অনেকাংশে সমৃদ্ধ হতো যদি—
(ক) দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি হতো
(খ) শিল্প সাহিত্য বেশি করে চর্চা হতো
(গ) কারা-জীবনের অভিজ্ঞতা থাকতো
(ঘ) শিল্প সাহিত্য নিয়ে সবাই ভাবতো

উত্তরঃ (গ) কারা-জীবনের অভিজ্ঞতা থাকতো।

৮. সে সময়ের শিল্প ও সাহিত্য যে কবির কবিতার জন্য ঋণী—
(ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য
(খ) বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
(গ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
(ঘ) কাজী নজরুল ইসলাম

উত্তরঃ (ঘ) কাজী নজরুল ইসলাম।

৯. লোকমান্য তিলক কারাবাস কালে আলোচনা লিখেছেন—
(ক) গীতার (খ) মহাভারতের (গ) রামায়ণের
(ঘ) ইলিয়াড ওডিসের

উত্তরঃ (ক) গীতার।

১০. লোকমান্য তিলক মান্দালায় জেলে বন্দি ছিলেন—
(ক) চার বছর (খ) পাঁচ বছর (গ) ছয় বছর
(ঘ) সাত বছর

উত্তরঃ (গ) ছয় বছর।

১১. জেল বন্দিদের জেলের মধ্যে আকাল বৃদ্ধ হওয়ার কারণ—
(ক) খারাপ খাদ্য
(খ) ব্যায়ামের অভাব
(গ) বন্ধু জনের অভাব
(ঘ) উপরের সবকটি

উত্তরঃ (ঘ) উপরের সবকটি।

১২. সভ্য সমাজের অপরাধীদের প্রতি আরো যা দেখানো উচিত—
(ক) সহানুভূতি
(খ) কঠিন শাস্তি
(গ) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
(ঘ) দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা

উত্তরঃ (ক) সহানুভূতি।

১৩. বন্ধু দিলীপ সুভাষচন্দ্রকে পাঠিয়েছিলেন—
(ক) কিছু বই
(খ) কিছু টাকা
(গ) একটি দামি কলম
(ঘ) মোবাইল ফোন

উত্তরঃ (ক) কিছু বই।

১৪. জেলখানার চিঠি পাঠ্য অংশটি অনুদিত হয়েছে—
(ক) হিন্দি থেকে
(খ) বাংলা থেকে
(গ) ইংরেজি থেকে
(ঘ) মান্দালায় জেল থেকে।

উত্তরঃ (গ) ইংরেজি থেকে।

১৫. নেতাজি পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে ছিলেন—
(ক) জাপানে
(খ) আমেরিকায়
(গ) ইউরোপে
(ঘ) রাশিয়ায়

উত্তরঃ (ঘ) রাশিয়ায়।

১৬. নেতাজি পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে ছিলেন—
(ক) ১৯৪০ সালে
(খ) ১৯৪১ সালে
(গ) ১৯৪২ সালে
(ঘ) ১৯৪৩ সালে

উত্তরঃ (খ) ১৯৪১ সালে।

‘হাতে কলমে’ প্রশ্নোত্তর জেলখানার চিঠি অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Hate Kolome Question Answer Class 8 Bengali wbbse

১.১ সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কেন ?

উত্তরঃ ভারতবিদ্বেষী ইংরেজ অধ্যাপক ওটেনকে প্রহারের অভিযােগে সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন।

১.২ রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি কোন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন ?

উত্তরঃ রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন।

২। অনধিক তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :

২.১ তােমার পাঠ্য পত্রখানি কে, কোথা থেকে, কাকে লিখেছিলেন ?

উত্তরঃ পাঠ্য পত্রখানি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বর্তমান মায়ানমারের মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে লিখেছিলেন।

২.২ কোন ব্যাপারটিকে পত্ৰলেখক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন ?

উত্তরঃ সুভাষচন্দ্র বসু এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা অকারণে বা সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে রাজনৈতিক বন্দি হিসাবে জেলে অন্তরীন থেকে যেসব ঘটনাকে মেনে চলতে বাধ্য হচ্ছেন, সেই অকারণে বন্দি থাকার ব্যাপারটাকেই তিনি আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন।

২.৩ বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তি সঞ্চারিত হয় কীভাবে ?

উত্তরঃ বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তির সঞ্চারিত হওয়ার অন্যতম কারণ হল— দার্শনিক ভাব। এই ভাবের কারণেই মানুষের মনে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে একটি তাৎপর্যপূর্ণ আধ্যাত্ম ধারণা হয়।

২.৪ মান্দালয় জেল কোথায় অবস্থিত ?

উত্তরঃ মান্দালয় জেল বর্তমান মায়ানমারে অবস্থিত। পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এই জেলে বন্দি রেখে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাত। বালগঙ্গাধর তিলকও এই জেলে একসময় বন্দি ছিলেন।

২.৫ ভারতীয় জেল বিষয়ে একটি পুস্তক সুভাষচন্দ্রের লেখা হয়ে ওঠেনি কেন ?

উত্তরঃ ভারতীয় জেল বিষয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর একটি পুস্তক লেখা না-হয়ে ওঠার কারণ, বই লেখার জন্য যে উদ্যম বা শক্তির প্রয়ােজন, সেই সময় তার কাছে সেই উদ্যম বা শক্তির অভাব ছিল। তা ছাড়া, তাঁর বিভিন্ন সমস্যা ও অস্থিরতার কারণে সে চেষ্টার উপযুক্ত সামর্থ্যও ছিল না।

২.৬ সুভাষচন্দ্র কেন দিলীপ রায় প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি ?

উত্তরঃ সুভাষচন্দ্র বসু দিলীপ রায় প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি। কারণ, দিলীপকুমার রায় প্রেরিত বইগুলির তিনি ছাড়া আরও বহু পাঠক আছেন। আসল কথা হল— লেখকের আরও অনেক রসগ্রাহী পাঠক তৈরি হওয়ায় বক্তা বইগুলি পাঠাতে অপারগ।

৩। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখাে :

৩.১ নেতাজি ভবিষ্যতের কোন কর্তব্যের কথা এই চিঠিতে বলেছেন ? কেন এই কর্তব্য স্থির করেছেন ? কারাশাসন প্রণালী বিষয়ে কাদের পরিবর্তে কাদের প্রণালীকে তিনি অনুসরণযােগ্য বলে মনে করেছেন ?

উত্তরঃ নেতাজি ভবিষ্যৎ ভারতের কারাগার সংস্কারসাধনের কথা এই চিঠিতে বলেছেন।

» স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য নেতাজিকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তাঁর মনে হয়েছে, কোনাে কারণে কাউকে যদি জেলে থাকতে হয়, তবে জেলের পরিবেশের কারণে তার মানসিকতার বিকার ঘটতে বাধ্য। জেলের বিকৃত পরিবেশে অধিকাংশ বন্দিদের সামান্যতম নৈতিক উন্নতি হয় না। বরং তাদের মনে আরও বেশি ক্ষোভ, হিংসা, ঘৃণা ও প্রতিহিংসা জেগে ওঠে। কারাশাসন প্রণালী সংস্কার করেই এই অবস্থার বদল ঘটানাে সম্ভব হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এ কারণে, এই কাজকে তিনি নিজের ভবিষ্যৎ কর্তব্য বলে স্থির করেছেন।

» কারাশাসন প্রণালী বিষয়ে ভারতীয় কারাশাসন প্রণালী (আসলে ব্রিটিশ প্রণালী)-র পরিবর্তে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস-এর মতাে উন্নত দেশগুলির কারাশাসন প্রণালী অনুসরণ যােগ্য বলে তিনি মনে করেছেন।

৩.২ ‘সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি।’– বক্তা কে ? তিনি কী জন্য খুশি হয়েছেন ?

উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তির বক্তা মান্দালয় জেলে বন্দি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু।

» জেলে বন্দি আসামির কাছে বাইরে থেকে কোনাে চিঠি এলে তা দু-দুবার পরীক্ষা করা হয়। এটিই ব্রিটিশ শাসকের রীতি। এবার সেই রীতি লঙ্ঘিত হয়েছে। বন্ধু দিলীপকুমার রায়ের চিঠি তাঁর কাছে অন্যান্য বারের মতাে এবার double distillation’-র ভিতর দিয়ে আসেনি বলে তিনি খুশি হয়েছেন।

৩.৩ ‘আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।’– কে, কাকে এ কথা বলেছেন ? কীসের উত্তর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে এ কথা বলেছেন।

» নেতাজি দিলীপকুমার রায়ের লেখা পড়ে অভিভূত। চিঠিটি সুভাষচন্দ্র বসুর হৃদয়কে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর মনকে সেই চিঠি এতটাই স্পর্শ করেছে যে, তিনি যেন নতুন এক চিন্তায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন। দিলীপকুমারের লেখায় তাঁর মন এমন বিমােহিত হয়ে উঠেছে যে, তাঁর পক্ষে সে চিঠির উত্তর দেওয়া সুকঠিন। এমনকি তিনি এও জানেন, যে তাঁর চিঠি censor হয়ে প্রাপকের কাছে যাবে। তাতে নেতাজির ব্যক্তিমনের গভীর আবেগ ও বেদনা অনেকের সামনে চলে আসবে, যা তিনি কোনােদিন চাননি। তাই এরকম চিঠি তাঁর পক্ষে লেখা সম্ভব নয় বলেই তিনি বলেছেন- “আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।

৩.৪ ‘পরের বেদনা সেই বুঝে শুধু যে জন ভুক্তভােগী।’– উদ্ধৃতিটির সমার্থক বাক্য পত্রটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখাে। সেই বাক্যটি থেকে লেখকের কোন মানসিকতার পরিচয় পাও ?

উত্তরঃ পাঠে উল্লিখিত আলােচ্য উদ্ধৃতিটির সমার্থক বাক্য হল— “আমি যদি স্বয়ং কারাবাস না করতাম তাহলে একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে ঠিক সহানুভূতির চোখে দেখতে পারতাম।”

» ওপরের বাক্য থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, নেতাজি কারাবন্দিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তিনি মনে করেন, জেলখানা কেবল শাস্তি দানের জায়গা নয়, তা সংশােধনের স্থানও হওয়া উচিত। তাই তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের সংশােধনের মধ্যে দিয়ে সমাজজীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী। কিন্তু এদেশের কারাগারের যে শাসন-প্রণালী, তাতে বন্দিদের সুকোমল মানসবৃত্তি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। লেখক তার সহানুভূতিশীল মন দিয়ে এগুলি উপলব্ধি করেন। সুতরাং, এর থেকে বােঝা যায়, তিনি দরদি ও অনুভূতিশীল মনের অধিকারী।

৩.৫ ‘আমার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে, অনেকখানি লাভবান হতে পারব।’– কোন্ প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি ? জেলজীবনে তিনি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কীভাবে লাভবান হওয়ার কথা বলেছেন ?

উত্তরঃ জেলের মধ্যে যে নির্জনতায় বা দীর্ঘ সময়সীমায় মানুষ বন্দি জীবনযাপন করতে করতে জীবনের চরম সমস্যাগুলিকে তলিয়ে বােঝার সুযােগ পায়, সেই নির্জনতা প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি।

» লােকমান্য তিলক কারাবাসকালে গীতার আলােচনা করে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে লাভবান হয়েছেন। সেই আধ্যাত্মিকতার কথাই লেখক বলেছেন।

৩.৬ ‘Martyrdom’ শব্দটির অর্থ কী ? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তা কী বক্তব্য রেখেছেন ?

উত্তরঃ ‘Martyrdom’ শব্দের অর্থ হল ‘আত্মবলিদান। অন্যভাবে বলা যায় রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য বা মহৎ আদর্শের খাতিরে স্ব-ইচ্ছায় প্রবল কষ্টভােগ করা।

» এই শব্দটির উল্লেখ করে বক্তা বলেছেন, দিলীপকুমার রায় তাঁর কারাবাসকে আত্ম বলিদানের সঙ্গে তুলনা করলেও, নিজে তিনি সেটিকে সেভাবে মনে করার স্পর্ধাও রাখেন না। এটি তার কাছে বড়ােজোর একটা আদর্শ হতে পারে।

৩.৭ যখন আমাদিগকে জোর করে বন্দি করে রাখা হয় তখনই তাদের মূল্য বুঝতে পারা যায় ?’— কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে ? তাদের মূল্য বিষয়ে লেখকের বক্তব্য আলােচনা করাে।

উত্তরঃ জেলের ভিতরে অনুষ্ঠিত পিকনিক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা চর্চার ফলে বন্দি মানুষের জীবনে সরসতা ও সমৃদ্ধিলাভ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে।

» তাদের মূল্য বলতে, জেলের ভিতর অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক ও আনুষঙ্গিক নানা অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে লেখক বলেছেন, এর ফলে, বন্দিদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সাধিত হয়। খাদ্যপানীয় বা শরীরচর্চার অভাবে কিংবা সমাজ বিচ্ছিন্ন অবস্থানের বন্দিজীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে। কিন্তু, সুস্থ মানসিক পরিবর্তন হলেই বন্দি মানুষ জেলের বাইরের মানুষের মতাে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তাদের মধ্যে কোনাে অমানুষিক বিকৃতি আসে না। বরং সুস্থ কল্যাণকর আচরণে সবাই একসঙ্গে অবস্থান করে। সেক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি জীবনে উৎকর্ষতা দান করে।

৩.৮ “মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কী কঠোর ও নিরানন্দময়।”— যে ঘটনায় লেখকের মনে এই উপলদ্ধি ঘটে তার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ লেখক সুভাষচন্দ্র মনে করেন জেলের ভিতরে বন্দিদের দৈহিক কষ্ট অপেক্ষা মানসিক কষ্ট সবচেয়ে বেশি। যেখানে অত্যাচার ও অপমানের আঘাত যথাসম্ভব কম আসে সেই বন্দি জীবনটা ততটা যন্ত্রণাদায়ক হয় না। এই সমস্ত সুক্ষ্ম ধরনের আঘাত উপর থেকেই আসে, জেলের কর্তাদের এ বিষয়ে কিছু হাত থাকে না। অন্তত লেখকের সেইরকম অভিজ্ঞতা। এই যে সব আঘাত, উৎপীড়ন এগুলো আঘাতকারীর প্রতি মানুষের মনকে আরো বিরূপ করে তোলে। সেই দিক দিয়ে দেখলে মনে হয় এইগুলোর উদ্দেশ্য ব্যর্থ, কিন্তু পাছে আমরা আমাদের পার্থিব অস্তিত্ব ভুলে যাই এবং নিজেদের অন্তরের মধ্যে একটা আনন্দের জগৎ গড়ে তুলি, তাই এই সব আঘাত আমাদের উপর বর্ষণ করে স্বপ্নাবিষ্ট আত্মাকে জাগিয়ে বলে দেয় মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কী কঠোর ও নিরামন্দময়।

৩.৯ এই চিঠিতে কারাবন্দি অবস্থাতেও দুঃখকাতর, হতাশাগ্রস্ত নয়, বরং আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী নেতাজির পরিচয়ই ফুটে উঠেছে।— পত্রটি অবলম্বনে নিজের ভাষায় মন্তব্যটির যাথার্থ্য পরিস্ফুট করাে।

উত্তরঃ সুভাষচন্দ্র বসু মান্দালয় জেলে বন্দি জীবনযাপন করলেও চিঠির মধ্যে তাঁর মানসিক অবস্থার অবনতির কথা কোথাও নেই। তিনি এখানে দুঃখে কাতর বা হতাশায় মগ্ন নন। বরং দেখা যায়, খুব সহজ ও স্পষ্টভাষায় তিনি লিখছেন, কারাশাসনের সংস্কার প্রয়ােজন। এছাড়া জেলের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বই লিখতে চান। তিনি মনে করেন, দীর্ঘ কারাবাসে বা নির্জনতায় আধ্যাত্মিক উন্নতি হতে পারে। তিনি আশা করেন, জেলের ভিতরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি বন্দিদের জীবনে উৎকর্ষ সাধন করতে পারে। সর্বোপরি তিনি ভাবেন, অশ্রুপাতের ভিতর অনেক মহত্তর কর্ম লুকিয়ে আছে। অর্থাৎ, বিনা দুঃখ-কষ্টে মহৎ কিছু লাভ করা সম্ভব নয়। সুতরাং, সুভাষচন্দ্র বসু রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে কারাবাসের সময় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার দ্বারা কারাশাসনের অব্যবস্থা ও বন্দিদের চরম দুর্ভোগ উপলব্ধি করলেও তিনি দুঃখকাতর বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েননি। বরং, আত্মবিশ্বাসী হয়ে দুঃখ জয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।

৩.১০ কারাগারে বসে নেতাজির যে ভাবনা, যে অনুভব, তার অনেকখানি কেন অকথিত রাখতে হবে ?

উত্তরঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রাজনৈতিক বন্দি হিসাবে মান্দালয়ের কারাগারে অবস্থানকালে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২মে বন্ধু দিলীপকুমার রায়কে চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, কারাগারে অবস্থানকালে তার যে ভাবনা বা উপলব্ধি, তার অনেকখানিই অকথিত রাখতে হবে। কারণ, এটি তাঁর পুরােপুরি অন্তরের গভীরতম প্রবাহ, যা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। এটি দিনের উন্মুক্ত আলােয় প্রকাশিত হলে তার মাধুর্য নষ্ট হতে পারে। এমনকি ‘Censor’- এর হাতে সেটির লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে কিংবা জনগণের বহু আলােচনায় সেটি তাঁর বিপদের কারণও হতে পারে।

৪। নীচের বাক্যগুলির তথ্যগত অশুদ্ধি সংশােধন করাে :

৪.১ নেতাজি মনে করতেন না যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তরে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে।

উত্তরঃ নেতাজি মনে করতেন যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের ভিতর মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করে।

৪.২ কারাগারে বন্দি অবস্থায় নেতাজি সুভাষ গীতার আলােচনা লিখেছিলেন।

উত্তরঃ কারাগারে বন্দি অবস্থায় লােকমান্য তিলক গীতার আলােচনা লিখেছিলেন।

8.৩ জেল জীবনের কষ্ট মানসিক অপেক্ষা দৈহিক বলে নেতাজি মনে করতেন।

উত্তরঃ জেল জীবনের কষ্ট দৈহিক অপেক্ষা মানসিক বলে নেতাজি মনে করতেন।

৫। নীচের বাক্যগুলি থেকে সমাসবদ্ধ পদ বেছে নিয়ে ব্যাববাক্য-সহ সমাসের নাম লেখাে :

৫.১ তােমার চিঠি হৃদয়তন্ত্রীকে কোমলভাবে স্পর্শ করেছে।

উত্তরঃ হৃদয়তন্ত্রী = হৃদয় রূপ তন্ত্রী— রূপক কর্মধারয় সমাস।

৫.২ সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে জেলে আছি।

উত্তরঃ অজ্ঞাত = নয় জ্ঞাত— নঞ তৎপুরুষ সমাস।

৫.৩ তখন আমার নিঃসংশয় ধারণা জন্মে।

উত্তরঃ নিঃসংশয় = নিঃ (নেই) সংশয় যার / যাতে— বহুব্রীহি সমাস।

৫.৪ নূতন দণ্ডবিধির জন্যে পথ ছেড়ে দিতে হবে।

উত্তরঃ দণ্ডবিধি = দণ্ডের নিমিত্ত বিধি — নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস।

৫.৫ লােকমান্য তিলক কারাবাস-কালে গীতার আলােচনা লেখেন।

উত্তরঃ লােকমান্য = লােক দ্বারা মান্য — করণ তৎপুরুষ সমাস

৬। শব্দগুলির ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করাে : পাঠক, দর্শন, দৈহিক, আধ্যাত্মিক, ভণ্ডামি, সমৃদ্ধ, মহত্ত্ব, অভিজ্ঞতা।

» পাঠক = √পঠ্ + অক্।

» দর্শন = √দৃশ্ + অন্।

» দৈহিক = দেহ + ষ্নিক্।

» আধ্যাত্মিক = অধ্যাত্ম + ইক্ (য়িক)।

» ভণ্ডামি = ভণ্ড + আমি।

» সমৃদ্ধ = সম্ + ঋদ্ধ।

» মহত্ত্ব = মহৎ + ত্ব।

» অভিজ্ঞতা = অভিজ্ঞ + তা।

৭। নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করাে :

৭.১ আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন। (না-সূচক বাক্যে)

উত্তরঃ আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া মােটেই সহজ নয়।

৭.২ সেই জন্যই সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে সে লজ্জা পায়। (প্রশ্নবােধক বাক্যে)।

উত্তরঃ সেই জন্যই সাধারণের কাছে মুখ দেখাতে সে লজ্জা পায় না কি?

৭.৩ লজ্জায় তারা বাড়িতে কোনাে সংবাদ দেয়নি। (যৌগিক বাক্যে)

উত্তরঃ তারা লজ্জা পেয়েছে এবং বাড়িতে কোনাে সংবাদ দেয়নি।

৭.৪ কতকগুলি অভাব আছে যা মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে। (সরল বাক্যে)

উত্তরঃ কতকগুলি অভাবকে মানুষ ভিতর থেকে পূর্ণ করে তুলতে পারে।

৭.৫ বিনা দুঃখ কষ্টে যা লাভ করা যায় তার কোন মূল্য আছে ? (নির্দেশক বাক্যে)

উত্তরঃ দুঃখ কষ্টেই লভ্যবস্তুর মূল্য নিরূপিত হয়।

৮। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :

৮.১ “শুধু শাস্তি দেওয়া নয়, সংশােধনই হওয়া উচিত জেলের প্রকৃত উদ্দেশ্য।”– তুমি কি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত ? তােমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তরঃ হ্যাঁ, আমি এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত। কারণ, জেলবন্দি মানুষ শুধু শাস্তি পেলে দণ্ডদাতার প্রতি বিরূপ হতে পারে এবং সেইসঙ্গে সমাজের প্রতিও তার ঘৃণা জন্মায়। এমনকি, মানবসভ্যতাও তার কাছে অর্থহীন মনে হতে পারে। মানুষ মনুষ্যত্বহীন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া জেলের ভিতরের অবস্থা সম্পর্কে নেতাজি বলেছেনসেখানকার সমস্ত আবহাওয়া মানুষকে বিকৃত, অমানুষ করার উপযােগী। সেখানে অপরাধীদের নৈতিক উন্নতি হয় না। বরং, তারা আরও হীন হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, দীর্ঘ বন্দিত্বের জীবনে মানুষ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং একপ্রকার হতাশ হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলে লােকমান্য তিলকের অকাল-মৃত্যুর উদাহরণ টেনে তিনি স্পষ্ট করেছেন, দৃঢ়চেতা কিছু মানুষ শত দুরবস্থায় ভেঙে না-পড়লেও বেশিরভাগ মানুষই মানসিক দিক দিয়ে চরম বিপর্যস্ত হয়। এজন্য শাস্তির পাশাপাশি কারা-শাসনবিধি পালটানাে উচিত।

৮.২ “আমাদের দেশের আর্টিস্ট বা সাহিত্যিকগণের যদি কিছু কিছু কারাজীবনের অভিজ্ঞতা থাকত তাহলে আমাদের শিল্প ও সাহিত্য অনেকাংশে সমৃদ্ধ হতাে।”– এ প্রসঙ্গে কারাজীবন যাপন করা কয়েকজন সাহিত্যিকের নাম এবং তাঁদের রচিত গ্রন্থের নাম উল্লেখ করাে।

উত্তরঃ কারাজীবন যাপন করেছেন, এমন কয়েকজন সাহিত্যিক হলেন—মুকুন্দদাস, কাজী নজরুল ইসলাম, সুভাষ মুখােপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ি প্রমুখ। তাঁদের লেখা গ্রন্থগুলির নাম যথাক্রমে—“কর্মক্ষেত্র’, ‘প্রলয় শিখা’, ‘পদাতিক।

৮.৩ পত্রটি পড়ে কারাজীবন বিষয়ে তােমার যে ধারণা ও অনুভূতি জন্মেছে তা জানিয়ে বন্ধুকে একটি পত্র লেখাে।

উত্তরঃ পত্রটি নিজের মতো করে লিখবে

৮.৪ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সম্পর্কে আরও জেনে ‘সুভাষচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম’ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করাে।

সুভাষচন্দ্রের স্বদেশপ্রেম

ওড়িশার কটক শহরে ২৩ জানুয়ারি ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন জানকীনাথ বসু। তিনি পড়াশােনা করেন রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে, পরে ভরতি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে। এই কলেজ থেকেই সুভাষচন্দ্রের স্বদেশপ্রেমের পরিচয় পাওয়া যায়। সেখানে ইংরেজির অধ্যাপক ওটেন সাহেব ভারতবিদ্বেষী মনােভাবের পরিচয় দিলে, সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সংঘাত বাধে এবং এই কারণে তিনি কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন।

তখনকার দিনে আইসিএস ছিল খুব নাম করা চাকরি। কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসু ইংরেজদের গােলামি করবেন না বলে স্বদেশপ্রেম বা স্বাধীনতার জন্য সে চাকরি ছেড়ে দেন। বিলেত থেকে ফিরে আসেন দেশ সেবার জন্য। গান্ধিজি ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সহায়তায় স্বাধীনতা আন্দোলনে যােগ দেন। ভারতে দেশসেবার কাজে তাঁর বিরােধ বাধল অহিংসবাদীদের সঙ্গে। কারণ, এতদিনে তিনি বাংলার সহিংসবাদীদের কাছে বিশেষ প্রিয় হয়ে উঠেছেন।

ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গৃহবন্দি করল কিন্তু তিনি এলগিন রােডের বাড়ি থেকে ব্রিটিশের চোখে ধুলাে দিয়ে ছদ্মবেশে পালালেন আফগানিস্তান, সেখান থেকে জার্মান দেখা হল হিটলারের সঙ্গে। কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য সিদ্ধ না হওয়ার জন্য ডুবােজাহাজে করে গেলেন জাপানে। সেখানে রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে লাভ করলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব। এরপর তৈরি করলেন মুক্তিবাহিনী। তাদের দিয়েই তিনি পরাজিত করলেন ইংরেজ সৈন্যদের এবং ইম্ফল ও কোহিমায় ওড়ালেন স্বাধীন ভারতের পতাকা। মুক্ত হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। ‘জয় হিন্দ’ এবং ‘দিল্লী চলাে’, ছিল তাঁর বিখ্যাত স্লোগান।

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান পরাজিত হলে নেতাজি আত্মগােপন করেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্যই থেকে গিয়েছে। তবে তিনি যেখানে যেভাবেই থাকুন, ভারতবাসীর মনে তিনি চিরজাগরুক।

Leave a Reply