কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি
মেঘে কৈল অন্ধকার মেঘে কৈল অন্ধকার।
দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার।।
ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর।
উত্তর পবনে মেঘ ডাকে দুর দুর।।
নিমিষেকে জোড়ে মেঘ গগন-মণ্ডল।
চারি মেঘে বরিষে মুষলধারে জল।।
কলিঙ্গে উড়িয়া মেঘ ডাকে উচ্চনাদ।
প্রলয় গণিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।
হুড় হুড় দুড় দুড় বহে ঘন ঝড়।
বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়।।
ধূলে আচ্ছাদিত হইল যে ছিল হরিত।
উলটিয়া পড়ে শস্য প্রজা চমকিত।।
চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ।
সঘনে চিকুর পড়ে বেঙ্গ-তড়কা বাজ।।
করি-কর সমান বরিষে জলধারা।
জলে মহী একাকার পথ হইল হারা।।
ঘন ঘন শুনি চারি মেঘের গর্জন।
কারো কথা শুনিতে না পায় কোনো জন।।
পরিচ্ছিন্ন নাহি সন্ধ্যা দিবস রজনী।
কলিঙ্গে সোঙরে সকল লোক যে জৈমিনি।।
হুড় হুড় দুড় দুড় শুনি ঝন ঝন।
না পায় দেখিতে কেহ রবির কিরণ।।
গর্ত ছাড়ি ভুজঙ্গ ভাসিয়া বুলে জলে।
নাহি জানি জলস্থল কলিঙ্গ-মণ্ডলে।।
নিরবধি সাত দিন বৃষ্টি নিরন্তর।
আছুক শস্যের কার্য হেজ্যা গেল ঘর।।
মেঝ্যাতে পড়য়ে শিল বিদারিয়া চাল।
ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল।।
চণ্ডীর আদেশ পান বীর হনুমান।
মঠ অট্টালিকা ভাঙ্গি করে খান খান।।
চারিদিকে বহে ঢেউ পর্বত-বিশাল।
উঠে পড়ে ঘরগুলা করে দলমল।।
চণ্ডীর আদেশে ধায় নদনদীগণ।
অম্বিকামঙ্গল গান শ্রীকবিকঙ্কণ।।
কবি পরিচিতিঃ মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য ধারায় মুকুন্দ চক্রবর্তীকে নিঃসংশয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ কবির সম্মানে ভূষিত করা যায়। তাঁর সৃজনশীলতা, মৌলিকতা ও অভিনবত্বের জন্য তিনি মঙ্গলকাব্যের প্রচলিত কাহিনীর বাইরে এসে রচনায় অসাধারণত্ব দান করেছেন। ভাষা, ছন্দ, অলংকার প্রয়োগ এবং চরিত্র সৃষ্টিতে তাঁর পরিবেশনা অভিনবত্বের দাবি রাখে।কবির আত্মপরিচয় থেকে জানা যায় তার পূর্বপুরুষরা বর্ধমানের রত্না নদীর তীরে দামিন্যা গ্রামে বাস করতেন। তার পিতার নাম হৃদয় মিশ্র এবং মাতার নাম দৈবকি। মোঘল পাঠানের সংঘর্ষে উদ্ভুত রাজনৈতিক বিপর্যয় ও ডিহিদার মামুদ শরীফের অত্যাচারে সাত পুরুষের ভিটা মাটি ছেড়ে সপরিবারে দেশান্তরী হতে বাধ্য হন কবি। পথশ্রমে ক্লান্ত কবি তাঁর শিশুদের অন্নের জন্য কান্না শুনতে শুনতে নিদ্রা যান এবং সেই সময়ই দেবী চণ্ডী নিজের মাহাত্ম্য প্রচারের উদ্দেশ্যে স্বপ্নাদেশ দেন।পরবর্তীকালে এই স্বপ্নাদেশে এবং রঘুনাথ রায়ের রাজত্বের সময় তার পৃষ্ঠপোষকতায় মুকুন্দ চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গল কাব্য রচনা করেন। এই কাব্যটি অভয়ামঙ্গল, অম্বিকামঙ্গল নামেও পরিচিত।
কবিতার সারসংক্ষেপঃ
কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কবিতায় দেবী চণ্ডীর রোষে কলিঙ্গদেশে যে ভীষণ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছে, কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী সেই বর্ণনা দিয়েছেন। মেঘে মেঘে অন্ধকার হয়ে গেছে কলিঙ্গদেশের আকাশ। এমন অন্ধকার যে মানুষ নিজেই নিজের শরীর দেখতে পাচ্ছে না। ঈশান কোণে মেঘ জমে উঠেছে, ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। উত্তরদিকের বাতাস থেকে ভেসে আসতে লাগল মেঘের গর্জন। নিমেষের মধ্যে সারা আকাশ কালো অন্ধকারে ঢেকে গেল। চারিদিকের মেঘের থেকে শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। কলিঙ্গের আকাশে উড়ে আসা মেঘ উচ্চস্বরে গর্জন করতে লাগলো। প্রলয়ের কথা ভেবে সে দেশের অধিবাসীরা শঙ্কিত হয়ে উঠলো। প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টির জন্যে বিপন্ন মানুষ যে যার বাড়ি ছেড়ে পালাতে লাগল। সবুজ গাছপালা, খেত সব ধুলোয় ঢেকে গেল। ঝড়ের দাপটে ফসল নষ্ট হয়ে গেল। চারিদিক থেকে অবিরাম বৃষ্টি হতে থাকলো। হাতিরা তাদের শুঁড়ে করে সমানে জল ছিটিয়ে চলেছে। বৃষ্টির আওয়াজে মানুষ পরস্পরের কথা শুনতে পাচ্ছেনা। চারিদিক মেঘে ঢেকে রয়েছে। রাত-দিনের তফাৎ করা যাচ্ছে না। চারিদিকে জল জমে যাওয়ায় সাপেরা আর গর্তে লুকিয়ে না থেকে জলে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছে। এই দুর্যোগে আতঙ্কিত কলিঙ্গ বাসী মনে মনে জৈমিনি মুনিকে স্মরণ করেন। কারণ একমাত্র তিনিই পারেন এই দুর্যোগ থেকে তাদের উদ্ধার করতে।টানা সাত দিনের অবিরাম বৃষ্টির ফলে শস্যের কাজ বিঘ্নিত হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি জলে ভিজে পচে গেছে। ভাদ্র মাসে যেভাবে শব্দ করে তাল পড়ে, সেই রকম ঘরের চাল ভেঙে বৃষ্টির সাথে সশব্দে শিল পড়ছে। পর্বত সমান বিশাল বিশাল ঢেউ আর সমস্ত নদনদী দেবীর আদেশে বন্যার বেগে কলিঙ্গদেশে ধেয়ে এলো। সেই সব ঢেউ এর আঘাতে কলিঙ্গের ঘরবাড়িগুলো টলমল করে উঠলো।
শব্দার্থঃ
• নিমেষেক— মুহূর্তের মধ্যে
• সঘন— ঘন হয়ে • চিকুর— বিদ্যুৎ
• ঈশান— উত্তর-পূর্ব দিক নিরন্তর-অন্তহীন হেজ্যা-জল লেগে পচে যাওয়া
• উচ্চনাদে— জোরে শব্দ করে
• প্রলয়— প্রচন্ড •বিপাক— অসুবিধা
• বিষাদ— মন খারাপ • ভবন— আবাস
• ব্যঙ্গ তড়কা— ব্যাঙের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলা
• কৈল— করল • অঙ্গ— শরীর
• ঈশান— উত্তর-পূর্ব কোণ • সঘনে— নিরন্তর
• চিকুর—বিদ্যুৎ • পবনে— বাতাসে
• নিমিষেকে— মুহূর্ত মধ্যে • গগন— আকাশ
• জোড়ে মেঘ—মেঘে আবৃত হয়
• চারিমেঘে— চার রকমের মেঘে
• বরিষে— বর্ষণ করে
• মুষলধারে— অবিশ্রান্ত ধারায়
• উচ্চনাদ— জোরালো বা চড়া গলায়
• প্রলয়— ধ্বংস • গণিয়া— ভেবে
• বিষাদ—শঙ্কিত হয় • বিপাকে— মন্দভাগ্যে
• রড়— দৌড় বা ছুট • হরিত— সবুজবর্ণ
• করি-কর— হাতির শুঁড়
• বেঙ্গ তড়কা— ব্যাঙের মতো তড়াক করে লাফিয়ে লাফিয়ে
• গর্জন— ভীষণ শব্দ • মহী— পৃথিবী
• সোঙরে— স্মরণ করে • রজনী— রাত্রি
• দিবস— দিন • রবি— সূর্য
• কিরণ— রশ্মি
• ভুজঙ্গ— সাপ • নিরন্তর— অবিরাম
• বুলে— চলে বেড়ায় বা ভেসে বেড়ায়
• নিরবধি— সীমাহীন
কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি পদ্যাংশের সরল অর্থ—
“মেঘে কৈল অন্ধকার মেঘে কৈল অন্ধকার।
দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার।।”
চারদিক কালো মেঘে ঢেকে গেছে। মেঘের অন্ধকার এতটাই গাঢ় যে মানুষজন তাদের নিজ অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না।
“ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর।
উত্তর পবনে মেঘ ডাকে দুর দুর।।”
উত্তর পূর্ব কোণে ঘন মেঘ থেকে ‘চিকুর’ অর্থাৎ চুলের ন্যায় বিদ্যুৎ ঠিকরে বেরোচ্ছে। উত্তর প্রান্তে বাতাসের সঙ্গে দুর দুর শব্দে মেঘ ডাকছে।
“নিমিষেকে জোড়ে মেঘ গগন-মণ্ডল।
চারি মেঘে বরিষে মুষলধারে জল।।”
নিমেষের মধ্যে মেঘ জড়ও হয়ে সমগ্র গগন মন্ডল অর্থাৎ আকাশ জুড়ে একটা ঘন কালো মেঘ তৈরি হয়। চার রকমের মেঘ থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয়।
“কলিঙ্গে উড়িয়া মেঘ ডাকে উচ্চনাদ।
প্রলয় গণিয়া প্রজা ভাবয়ে বিষাদ।।”
কলিঙ্গ দেশে মেঘ উড়ে এসে ‘উচ্চনাদে’ বা উচ্চস্বরে গর্জন (মেঘের ডাক) শুরু করে। আবহাওয়ার এই ‘প্রলয়’ অর্থাৎ ধ্বংসাত্মক রূপ দেখে কলিঙ্গবাসী বুঝতে পারে যে তাঁদের বিপদ আসন্ন, আর এই ভাবনা তাঁদের মনে ‘বিষাদ’ অর্থাৎ বিষন্ন ভাবের সঞ্চার করে।
“হুড় হুড় দুড় দুড় বহে ঘন ঝড়।
বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়।।”
‘হুড় হুড় দুড় দুড়’ শব্দে ঘন ঝড় বয়ে চলে। ফলে বিপদে পড়ে কলিঙ্গবাসি তাদের ‘ভবন’ বা ঘর ছেড়ে পালিয়ে (রড়) যায়।
“ধুলে আচ্ছাদিত হইল যে ছিল হরিত।
উলটিয়া পড়ে শস্য প্রজা চমকিত।।”
প্রবল ঝড়ের ফলে সবুজ রঙের সকল উদ্ভিদ ধুলোতে ঢাকা পড়ে। ঝড়ের দাপটে শস্য উলটে পড়েছে। ঝড়ের এই বিধ্বংসী রূপ দেখে কলিঙ্গবাসী চমকে ওঠে।
“চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ।
সঘনে চিকুর পড়ে বেঙ্গ-তড়কা বাজ।।”
চার রকম মেঘ থেকে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে, যেমন আটটি হাতি চারদিক থেকে জল দেয়। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে যেন ব্যাঙ যেভাবে লাফায়, তেমন ভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে ঘন মেঘ থেকে বাজ পড়ছে।।
“করি-কর সমান বরিষে জলধারা।
জলে মহী একাকার পথ হইল হারা।।”
হাতি যেভাবে তার শুঁড়ের সাহায্যে জল বর্ষণ করে তেমন ভাবে আকাশ থেকে সমানে বর্ষণ হয়ে চলেছে। প্রবল জলবর্ষণে গোটা পৃথিবী তথা সারা কলিঙ্গ প্রদেশের পথ জলে ডুবে গেছে। তাই আলাদা করে আর পথের অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে না, পথ জলের মধ্যে একাকার অর্থাৎ মিশে গেছে।
“ঘন ঘন শুনি চারি মেঘের গর্জন।
কারো কথা শুনিতে না পায় কোনো জন।।”
চার মেঘের ঘন ঘন গর্জন (মেঘের ডাক) শোনা যাচ্ছে। এই গর্জন এতটাই প্রবল যে কলিঙ্গবাসী একে অপরের কথা শুনতে পাচ্ছে না।
“পরিচ্ছিন্ন নাহি সন্ধ্যা দিবস রজনী।
কলিঙ্গে সোঙরে সকল লোক যে জৈমিনি।।”
আলাদাভাবে দিন, সন্ধ্যা, রজনী বা রাত আর বোঝা যাচ্ছে না। কলিঙ্গবাসী আতঙ্কিত হয়ে ঋষি জৈমিনির নাম ‘সোঙরে’ বা স্মরণ করছেন।
“হুড় হুড় দুড় দুড় শুনি ঝন ঝন।
না পায় দেখিতে কেহ রবির কিরণ।।”
কলিঙ্গ প্রদেশে ‘হুড় হুড় দুড় দুড়’ শব্দে প্রবল ঝড় শুনতে পাওয়া যাচ্ছে, তাই এই সময়ে কেউ ‘রবির কিরণ’ অর্থাৎ সূর্যের আলো দেখতে পাচ্ছে না।
“গর্ত ছাড়ি ভুজঙ্গ ভাসিয়া বুলে জলে।
নাহি জানি জলস্থল-কলিঙ্গ-মন্ডলে।।”
প্রবল বৃষ্টির ফলে সাপেরা গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে জলে ‘বুলে’ বা ভ্রমণ করছে। প্রবল বৃষ্টিতে জল-স্থল সবই একাকার হয়ে গেছে।
“নিরবধি সাত দিন বৃষ্টি নিরন্তর।
আছুক শস্যের কার্য হেজ্যা গেল ঘর।।”
সাত দিন ধরে নিরন্তর বা একটানা বৃষ্টি চলছে। এই প্রবল বৃষ্টিতে কলিঙ্গবাসীর ঘরের শষ্য এবং যা কিছু ছিল তা ‘হেজ্যা’ বা হেজে বা জলে ভিজে পচে গেছে।
“মেঝ্যাতে পড়য়ে শিল বিদারিয়া চাল।
ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল।।”
ঘরের চাল ফুটো বা ‘বিদীর্ণ’ করে মাটিতে শিল পড়ছে যেন ভাদ্রমাসের পড়ে থাকা তার। কবি এই ঘটনাকে ভাদ্র মাসে তাল পড়ার সাথে তুলনা করেছেন।
“চন্ডীর আদেশ পান বীর হনুমান।
মঠ অট্টালিকা ভাঙ্গি করে খান খান।।”
মা চণ্ডীর আদেশে বীর হনুমান তাঁর প্রবল পরাক্রমে কলিঙ্গ প্রদেশ ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে করে খান খান। অর্থাৎ ঝড়ের প্রাবল্যে কলিঙ্গ দেশের বিভিন্ন মঠ ও অট্টালিকা ভেঙে পড়ছে।
“চারিদিকে বহে ঢেউ পর্বত-বিশাল।
উঠে পড়ে ঘরগুলা করে দল মল।।”
চারিদিকে পর্বতের ন্যায় বিশাল ঢেউ উঠছে। ফলে ঘরবাড়ি গুলি যেন নিজের জায়গা ছেড়ে ওঠা নামা করছে।
“চন্ডীর আদেশে ধায় নদনদীগণ।
অম্বিকামঙ্গল গান শ্রীকবিকঙ্কণ।।
মা চণ্ডীর আদেশে সমস্ত নদনদী ধেয়ে আসে কলিঙ্গ দেশে। শ্রীকবিকঙ্কণ তথা মুকুন্দ চক্রবর্তী তাঁর অম্বিকামঙ্গল কাব্যে এই কথা বলেন।
আরও পড়ুনঃ
কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি কবিতার প্রশ্ন উত্তর
ধীবর-বৃত্তান্ত নাটকের বিষয় বস্তু, সারাংশ, আলোচনা, নামকরণ, শব্দার্থ
নবম শ্রেণির বাংলা ধীবর-বৃত্তান্ত নাটকের প্রশ্নোত্তর
ইলিয়াস গল্পের বিষয়বস্তু, সারাংশ, আলোচনা, নামকরণ, শব্দার্থ
ইলিয়াস গল্পের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর | নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্নোত্তর