কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি গল্পের প্রশ্নোত্তর ষষ্ঠ শ্রেণি বাংলা | Kumore Pokar Basabari Golper Question Answer Class 6 WBBSE

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি গল্প—

আমাদের দেশে ঘরের আনাচে-কানাচে বা দেয়ালের গায়ে লম্বাটে ধরনের এবড়ো- খেবড়ো এক-একটা শুকনো মাটির ডেলা লেগে থাকতে দেখা যায়। সেগুলি একপ্রকার কালো রঙের লিকলিকে কুমোরে-পোকার বাসা। এই পোকাগুলির গায়ের রং আগাগোড়া মিশমিশে কালো। কেবল শরীরের মধ্যস্থলের বোঁটার মতো সরু অংশটি হলদে। ডিম পাড়বার সময় হলেই এরা বাসা তৈরি করবার জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজতে বের হয়। দুই-চার দিন ঘুরে-ফিরে মনোমতো কোনো স্থান দেখতে পেলেই তার আশেপাশে বারবার ঘুরে বিশেষভাবে পরীক্ষা করে দেখে। তারপর খানিক দূর উড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসে এবং স্থানটাকে পুনঃপুনঃ দেখে নেয়। দু-তিনবার এরূপভাবে এদিক-ওদিক উড়ে অবশেষে কাদামাটির সন্ধানে বের হয়। যতটা সম্ভব নিকটবর্তী স্থানে কাদামাটি সন্ধান করতে সময় সময় দু-একদিন চলে যায়। কাদামাটির সন্ধান পেলেই বাসা নির্মাণের জন্য সেই স্থান থেকে নির্বাচিত স্থানে যাতায়াত করে রাস্তা চিনে নেয়। সাধারণত আশেপাশে চল্লিশ-পঞ্চাশ গজ ব্যবধান থেকে মাটি সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু অত কাছাকাছি বাসা নির্মাণের উপযোগী মাটি না পেলে সময় সময় দেড়-দুশো গজ দূর থেকেও মাটি সংগ্রহ করে থাকে। কাছাকাছি কোনো স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাসার একটা কুঠুরি নির্মাণ প্রায় শেষ করে এনেছে, এমন সময় সেই স্থানে কাদামাটি চাপা দিয়ে বা বাসাটা সরিয়ে ফেলে দেখেছি—সংস্কারবশেই হোক আর বুদ্ধি করেই হোক, কুমোরে-পোকাটা বাসার সন্ধান না পেয়ে কোনো একটা জলাশয়ের পাড়ে উড়ে গিয়ে সেখান থেকে ভিজা মাটি সংগ্রহ করে পূর্বের জায়গায় নতুন করে বাসা তৈরি শুরু করেছে। যতবারই এরূপ করেছি, ততবারই দেখেছি পুকুর বা নালা, ডোবা যত দূরেই থাকুক না কেন, সেখান থেকেই ভিজা মাটি এনে বাসা তৈরি করেছে। এইসব অসুবিধার জন্য অবশ্য বাসা নির্মাণে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে। একটি কুঠুরি তৈরি হয়ে গেলেই তার মধ্যে উপযুক্ত পরিমাণ খাদ্য, অর্থাৎ পোকামাকড় ভরতি করে তাতে একটি মাত্র ডিম পেড়ে মুখ বন্ধ করে তারই গা ঘেঁষে নতুন কুঠুরি নির্মাণ শুরু করে। কাজেই এ থেকে মনে হয় যে, কুমোরে-পোকা ইচ্ছামতো ডিম পাড়বার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

বাসা নির্মাণের জন্য মাটি সংগ্রহ করবার সময় উড়ে গিয়ে ভিজা মাটির উপর বসে এবং লেজ নাচাতে নাচাতে এদিক-ওদিক ঘুরেফিরে দেখে। উপযুক্ত মনে হলেই সেখান থেকে ভিজা মাটি তুলে নিয়ে চোয়ালের সাহয্যে খুব ছোট্ট এক ডেলা মাটি মটরদানার মতো গোল করে মুখে করে উড়ে যায়। মাটি খুঁড়ে তোলবার সময় অতি তীক্ষ্ণ স্বরে একটানা গুনগুন শব্দ করতে থাকে। মুখ দিয়ে চেপে চেপে মাটির ডেলাটিকে দেয়ালের গায়ে অর্ধ-চক্রাকারে বসিয়ে দেয়। মাটির ডেলাটিকে লম্বা করে চেপে বসাবার সময়ও তীক্ষ্ণস্বরে একটানা গুনগুন শব্দ করতে থাকে। কোনো অদৃশ্য স্থানে বাসা বাঁধবার সময়ও এই গুনগুন শব্দ শুনেই বুঝতে পারা যায়, কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধছে। পুকুর ধারে কাদামাটির উপর মাছির মতো একপ্রকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকা ঘুরে ঘুরে আহার সংগ্রহ করে। এরূপ স্থলে মাটি তোলবার সময় ওইরূপ কোনো পোকা তার কাছে এসে পড়লে মাটি তোলা বন্ধ রেখে তাকে ছুটে গিয়ে তাড়া করে। যাহোক, বারবার এরূপ এক-এক ডেলা মাটি এনে ভিতরের দিকে ফাঁকা রেখে ক্রমশ উপরের দিকে বাসা গেঁথে তুলতে থাকে। প্রায় সওয়া ইঞ্চি লম্বা হলেই গাঁথুনি ক্ষান্ত করে। এরূপ একটি কুঠুরি তৈরি করতে প্রায় দু-দিন সময় লেগে যায়। ইতিমধ্যে মাটি শুকিয়ে বাসা শক্ত হয়ে যায়। কুমোরে-পোকা তখন কুঠুরির ভিতরে প্রবেশ করে মুখ থেকে একপ্রকার লালা নিঃসৃত করে তার সাহায্যে কুঠুরির ভিতরের দেয়ালে প্রলেপ মাখিয়ে দেয়। প্রলেপ দেওয়া শেষ হলে শিকারের অন্বেষণে বের হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাকড়সার অভাব নেই; তারা জাল বোনে না, ঘুরে ঘুরে শিকার ধরে। এই কুমোরে-পোকারা বেছে বেছে এরূপ ভ্রমণকারী মাকড়সা শিকার করে থাকে। কোনোরকমে মাকড়সা একবার চোখে পড়লেই হলো, ছুটে গিয়ে তার ঘাড় কামড়ে ধরে। কিন্তু কামড়ে ধরলেও একেবারে মেরে ফেলে না। শরীরে হুল ফুটিয়ে একরকম বিষ ঢেলে দেয়। একবার হুল ফুটিয়ে নিরস্ত হয় না। কোনো কোনো মাকড়সাকে পাঁচ-সাতবার পর্যন্ত হুল ফুটিয়ে থাকে। এর ফলে মাকড়সাটার মৃত্যু হয় না বটে, কিন্তু একেবারে অসাড়ভাবে পড়ে থাকে। তখন কুমোরে-পোকা অসাড় মাকড়সাকে মুখে করে নবনির্মিত কুঠুরির মধ্যে উপস্থিত হয়। কুঠুরির নিম্নদেশে মাকড়সাটাকে চিত করে রেখে তার উদরদেশের এক পাশে লম্বাটে ধরনের একটি ডিম পাড়ে। ডিম পেড়েই আবার নতুন শিকারের সন্ধানে বের হয়। সারাদিন অক্রান্ত পরিশ্রম করে দশ-পনেরোটা মাকড়সা সংগ্রহ করে সেই কুঠুরির মধ্যে জমা করে আবার দু-তিন ডেলা মাটি এনে কুঠুরির মুখ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। তারপর দু-এক দিনের মধ্যেই পূর্বোক্ত কুঠুরির গায়েই আর একটি কুঠুরি নির্মাণ শুরু করে। সেই কুঠুরিটিও মাকড়সা পূর্ণ করে তাতে ডিম পেড়ে মুখ বন্ধ করবার পর তৃতীয় কুঠুরি নির্মাণ করতে আরম্ভ করে। এরূপে এক একটি বাসার মধ্যে চার-পাঁচটি কুঠুরি নির্মিত হয়। ডিম পাড়া সম্পূর্ণ হয়ে গেলে সে তার ইচ্ছামতো যেকোনো স্থানে চলে যায়, বাসার আর কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। বাচ্চাদের জন্যে খাদ্য সঞ্চিত রেখেই সে খালাস।

শব্দার্থ : আনাচে-কানাচে– কোনায় কোনায়। পুনঃপুনঃ– বারবার। সংস্কারবশে– প্রচলিত ধারণা বা বিশ্বাস অনুসারে। নিয়ন্ত্রণ– আয়ত্ত, পরিচালন। অর্ধ চক্রাকার– আধখানা ঢাকার আকারবিশিষ্ট। কুঠুরি– ছোটো ঘর বা প্রকোষ্ঠ। গাঁথুনি– পরপর স্থাপিত ইট, পাথর ইত্যাদির বিন্যাস। নিঃসৃত– নির্গত। প্রলেপ– লেপন করা হয় এমন বস্তু। নিম্নদেশে– নীচের অঞ্চলে। পূর্বোক্ত– আগে বলা হয়েছে এমন। সঞ্চিত– জমিয়ে রাখা হয়েছে এমন। খালাস– মুক্তি, রেহাই।

কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি গল্পের লেখক পরিচিতি:

গোপালচন্দর ভট্টাচার্য (১৮৯৫-১৯৮২):
প্রকৃতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের সুত্রে তাঁর রচনার মূল উপাদান প্রকৃতি ও প্রাণীজগৎ। জীবজগতের খুঁটিনাটি তথ্য সহজ ভাব ও সরল ভাষায় তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের অনুসন্ধিৎসা এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধগুলিকে বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদে পরিণত করেছে। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার জন্য তিনি রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো – বাংলার মাকড়সা, বাংলার কীটপতঙ্গ ইত্যাদি।


আরও দেখোঃ বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর


(হাতে কলমে প্রশ্নের উত্তর)

১.১ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় কী ধরনের লেখালিখির জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন ?

উত্তরঃ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ রচনার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। তাঁর রচনার মূল উপাদান ছিল প্রকৃতি ও প্রাণীজগৎ।

১.২ তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো।

উত্তরঃ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্যের লেখা একটি বইয়ের নাম ‘বাংলার মাকড়সা’।

২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:

২.১ কুমোরে-পোকার চেহারাটি কেমন ?

উত্তরঃ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য রচিত ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ প্রবন্ধে কুমোরে পোকার চেহারা লিকলিকে। গায়ের রং আগাগোড়া মিশমিশে কালো। কেবল শরীরের মধ্যস্থলের বোঁটার মতো সরু অংশটি হলদে।

২.২ কুমোরে-পোকা কী দিয়ে বাসা বানায় ?

উত্তরঃ কুমোরে-পোকা ভিজে নরম কাদা মাটি দিয়ে বাসা বানায়।

২.৩ কোনো অদৃশ্য স্থানে কুমোরে-পোকা বাসা বাঁধছে – তা কীভাবে বোঝা যায় ?

উত্তরঃ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য রচিত ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক জানিয়েছেন, কোথাও বাসা বাঁধার সময় কুমোরে পোকা তীক্ষ্ণস্বরে একটানা গুণগুণ করে। এই গুণগুণ শব্দ থেকেই বোঝা যায় যে কুমোরে পোকা বাসা বাঁধছে।

২.৪ মাকড়সা দেখলেই কুমোরে-পোকা কী করে ?

উত্তরঃ গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য রচিত ‘কুমোরে পোকার বাসাবাড়ি’ প্রবন্ধ পাঠে জানা যায় মাকড়সা চোখে পড়লেই কুমোরে পোকা ছুঠে গিয়ে তার ঘাড় কামড়ে ধরে। মাকড়সার শরীরের হুল ফুটিয়ে বিষ ঢেলে তাকে অসাড় করে দেয়।

৩. নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণ এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্য করো : লম্বাটে, স্থান, নির্বাচিত, নির্মাণ, সঞ্চিত।

উত্তরঃ

» লম্বাটে (বিশেষণ) – লম্বা (বিশেষ্য)
» স্থান (বিশেষ্য) – স্থানীয় (বিশেষণ)
» নির্বাচিত (বিশেষণ) – নির্বাচন (বিশেষ্য)
» নির্মাণ (বিশেষ্য) – নির্মিত (বিশেষণ)
» সঞ্চিত (বিশেষণ) – সঞ্চয় (বিশেষ্য)

৪. নীচের বাক্যগুলি থেকে অনুসর্গ খুঁজে বের করো :

৪.১ বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজতে বের হয়।

উত্তরঃ অনুসর্গ— জন্য।

৪.২ সেই স্থান থেকে নির্বাচিত স্থানে যাতায়াত করে রাস্তা চিনে নেয়।

উত্তরঃ অনুসর্গ— থেকে।

৪.৩ সেই স্থানে কাদামাটি চাপা দিয়ে দেখেছি।

উত্তরঃ অনুসর্গ—দিয়ে।

৫. উপযুক্ত প্রতিশব্দ পাঠ থেকে খুঁজে লেখো : নির্মাণ, উপযোগী, ভরতি, সন্ধান, ক্ষান্ত।

উত্তরঃ

নির্মাণ— তৈরি,  সন্ধান— খোঁজ
উপযোগী— উপযুক্ত,  ভরতি— পূর্ণ
ক্ষান্ত— নিরস্ত

৬. তুমি প্রতিদিন পিঁপড়ে, মৌমাছি, মাকড়সা প্রভৃতি কীট-পতঙ্গ তোমার চারপাশে দেখতে পাও। তাদের মধ্যে কোনো একটিকে পর্যবেক্ষণ করো, আর তার চেহারা, স্বভাব, বাসা বানানোর কৌশল ইত্যাদি খাতায় লেখো।

»কীট/পতঙ্গের নাম— মৌমাছি।

»কোথায় দেখেছ— গাছের ডালে।

»চেহারা/গায়ের রং— দেহ তিন খণ্ডএ বিভক্ত, গায়ের রং কালচে।

»কীভাবে চলে— উড়ে উড়ে চলে।

»কী খায়— ফুলের মধু খায়।

»বিশেষ বৈশিষ্ট্য— চাক তৈরি করে বসবাস করে। এক একটি চাকে ৩০/৪০ হাজার মৌমাছি থাকে। এরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে না।

»বাসাটি দেখতে কেমন— এরা যে চাক তৈরি করে তাতে অজস্র ছোট কুঠুরি আছে। এর মধ্যে মৌমাছিরা মধু ভরে রাখে।

»কীভাবে বানায়— মৌমাছিদের পেটের নিম্নভাগে অবস্থিত গ্রন্থি থেকে মোম উৎপন্ন হয়। সেই মোমের সাহায্যে এরা চাক তৈরি করে।

৭. সন্ধি বিচ্ছেদ করো : যথেষ্ট, পূর্বোক্ত, জলাশয়, পরীক্ষা, চক্রাকার, নিরস্ত্র

» যথেষ্ট— যথা + ইষ্ট
» পূর্বোক্ত— পূর্ব + উক্ত
» জলাশয়— জল + আশয়
» পরীক্ষা— পরি + ঈক্ষা
» চক্রাকার— চক্র + আকার
» নিরস্ত্র— নিঃ + অস্ত্র

৮. নীচের প্রশ্নগুলি নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :

৮.১ কুমোরে-পোকার বাসাবাড়িটি দেখতে কেমন ?

উত্তরঃ কুমোরে পোকার বাসাবাড়িটি দেখতে অনেকটা লম্বাটে ধরনের, প্রায় সওয়া ইঞ্চি লম্বা।

৮.২ কুমোরে-পোকা বাসা বানানোর প্রস্তুতি কীভাবে নেয় ?

উত্তরঃ কুমোরে-পোকার ডিম পাড়ার সময় হলে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে।তারপর পঞ্চাশ গজ ব্যবধানের মধ্যে নরম কাদামাটির সন্ধান করতে থাকে। সাধারণত কাদামাটির সন্ধান পেলেই ভালো করে রাস্তা চিনে নেয়। তারপর ওই নরম কাদামাটি মুখে করে নিয়ে এসে বাসা বাঁধে।

৮.৩ কুমোরে-পোকার বাসা বানানোর প্রক্রিয়াটি নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরঃ বাসা নির্মাণের জন্য মাটি সংগ্রহ করবার সময় উড়ে গিয়ে ভিজা মাটির উপর বসে এবং লেজ নাচাতে নাচাতে এদিক-ওদিক ঘুরেফিরে দেখে। উপযুক্ত মনে হলেই সেখান থেকে ভিজা মাটি তুলে নিয়ে চোয়ালের সাহয্যে খুব ছোট্ট এক ডেলা মাটি মটরদানার মতো গোল করে মুখে করে উড়ে যায়।মাটি খুঁড়ে তোলবার সময় অতি তীক্ষ্ণ স্বরে একটানা গুনগুন শব্দ করতে থাকে। মুখ দিয়ে চেপে চেপে মাটির ডেলাটিকে দেয়ালের গায়ে অর্ধ-চক্রাকারে বসিয়ে দেয়। মাটির ডেলাটিকে লম্বা করে চেপে বসাবার সময়ও তীক্ষ্ণস্বরে একটানা গুনগুন শব্দ করতে থাকে। মাটি তোলবার সময় কোনো পোকা তার কাছে এসে পড়লে মাটি তোলা বন্ধ রেখে তাকে ছুটে গিয়ে তাড়া করে। তারপর আবার মাটি এনে ভিতরের দিকে ফাঁকা রেখে ক্রমশ উপরের দিকে বাসা গেঁথে তুলতে থাকে। প্রায় সওয়া ইঞ্চি লম্বা হলেই গাঁথুনি শেষ করে। এরূপ একটি কুঠুরি তৈরি করতে প্রায় দু-দিন সময় লেগে যায়। ইতিমধ্যে মাটি শুকিয়ে বাসা শক্ত হয়ে যায়। কুমোরে-পোকা তখন কুঠুরির ভিতরে প্রবেশ করে মুখ থেকে একপ্রকার লালা নিঃসৃত করে তার সাহায্যে কুঠুরির ভিতরের দেয়ালে প্রলেপ মাখিয়ে দেয়।

৮.৪ ‘এইসব অসুবিধার জন্য অবশ্য বাসা নির্মাণে যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে।’— কোন্ অসুবিধাগুলির কথা এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ প্রবন্ধে লেখক জানিয়েছেন কুমোরে পোকা কাছাকাছি কোনো স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করে বাসার একটা কুঠুরি নির্মাণ প্রায় শেষ করে এনেছে এমন সময় সেই স্থানে লেখক কাদামাটি চাপা দিয়ে বা বাসাটা সরিয়ে দিয়ে দেখেছেন। সংস্কারবশত বা বুদ্ধি করে কুমোরে পোকাটা বাসার সন্ধান না পেয়ে আবার পূর্বের জায়গায় বাসা বানানো শুরু করেছে। তাই লেখক স্বীকার করেছেন এই অসুবিধার জন্য অবশ্য বাসা নির্মাণে তার যথেষ্ট বিলম্ব ঘটেছে।

৮.৫ কুমোরে-পোকার শিকার ধরার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো। শিকারকে সে কীভাবে সংগ্রহ করে ?

উত্তরঃ কুমোরে পোকারা বেছে বেছে ভ্রমণকারী মাকড়সা শিকার করে থাকে। কোনোরকমে মাকড়সা একবার চোখে পড়লেই হলো, ছুটে গিয়ে তার ঘাড় কামড়ে ধরে। কিন্তু কামড়ে ধরলেও একেবারে মেরে ফেলে না। শরীরে হুল ফুটিয়ে একরকম বিষ ঢেলে দেয়। একবার হুল ফুটিয়ে নিরস্ত হয় না। কোনো কোনো মাকড়সাকে
পাঁচ-সাতবার পর্যন্ত হুল ফুটিয়ে থাকে। এর ফলে মাকড়সাটার মৃত্যু হয় না বটে, কিন্তু একেবারে অসাড়ভাবে পড়ে থাকে। তখন কুমোরে-পোকা অসাড় মাকড়সাকে মুখে করে নবনির্মিত কুঠুরির মধ্যে উপস্থিত হয়। কুঠুরির নিম্নদেশে মাকড়সাটাকে চিত করে রেখে তার উদরদেশের এক পাশে লম্বাটে ধরনের একটি ডিম পাড়ে। ডিম পেড়েই আবার নতুন শিকারের সন্ধানে বের হয়। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে দশ-পনেরোটা মাকড়সা সংগ্রহ করে সেই কুঠুরির মধ্যে জমা করে আবার দু-তিন ডেলা মাটি এনে কুঠুরির মুখ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়।

৮.৬ ‘বাসার আর কোনো খোঁজ খবর নেয় না’— কখন কুমোরে পােকা তার বাসার আর কোনো খোঁজ খবর নেয় না ?

উত্তরঃ কুমোরে-পোকা শিকার ধরে কুঠুরির মধ্যে রেখে সেখানে ডিম পেড়ে কুঠুরির মুখ বন্ধ করে। তারপর অন্য কুঠুরি নির্মাণ করতে শুরু করে। একটি বাসায় চার-পাঁচটি কুঠুরি নির্মাণ করে ডিম পাড়া সম্পূর্ণ হলে সে তার ইচ্ছা মতো যে-কোনো স্থানে চলে যায়। বাচ্চাদের জন্য খাদ্য সঞ্চিত রেখেই সে খালাস। তার বাসার আর কোনো খোঁজ খবর নেয় না।

আরও পড়ুনঃ হ য ব র ল প্রশ্নোত্তর।

ষষ্ঠ শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র | ১ম, ২য়, ৩য় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের প্রশ্নপত্র | All Unit Test Question Paper

Leave a Reply