MADHYAMIK HISTORY QUESTION PAPER 2017
WBBSE Madhyamik History Question Paper 2017 Solved | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র 2017
2017 History Question Paper with answers for Madhyamik students of West Bengal Board of Secondary Education. Question and Answers of the question paper are given below.
মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীন মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২০১৭ সালের উত্তরসহ ইতিহাস বিষয়ের প্রশ্নপত্র।
📌 মাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper CLICK HERE
2017
HISTORY
(NEW SYLLABUS)
Time 3 Hours 15 Minutes
( First 15 minutes for reading the question paper only )
Full Marks : 90 For Regular Candidates
Full Marks : 100 For External Candidates
Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.
[ ‘ক’ বিভাগ থেকে ‘ঙ’ বিভাগ পর্যন্ত প্রদত্ত প্রশ্ন নিয়মিত ও বহিরাগত সব পরীক্ষার্থীদের জন্য। ‘চ’ বিভাগে প্রদত্ত প্রশ্ন শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য ]
( ‘ক’ বিভাগে সকল প্রশ্ন আবশ্যিক। অন্য বিভাগে বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়। ‘খ’ বিভাগে কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা বিকল্প প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তর লিখবে অন্য সকলে মানচিত্র চিহ্নিত করবে। )
(নতুন পাঠ্যসূচী)
বিভাগ – ‘ক’
১। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো : ২০×১=২০
১.১ ভারতের ফুটবল খেলার প্রবর্তন করেন—
(ক) ফরাসিরা (খ) পোর্তুগিজরা
(গ) ওলন্দাজরা (ঘ) ইংরেজরা
উত্তরঃ ইংরেজরা
১.২ বিপিনচন্দ্র পাল লিখেছেন—
(ক) জীবনস্মৃতি (খ) এ নেশন ইন মেকিং
(গ) আনন্দমঠ (ঘ) সত্তর বৎসর
উত্তরঃ সত্তর বৎসর
১.৩ ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন—
(ক) কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
(খ) দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ
(গ) উমেশচন্দ্র দত্ত
(ঘ) শিশির কুমার ঘোষ
উত্তরঃ উমেশচন্দ্র দত্ত
১.৪ সাধারন জনশিক্ষা কমিটি গঠিত হয়—
(খ) 1713 খ্রিস্টাব্দে (খ) 1913 খ্রিস্টাব্দে
(গ) 1813 খ্রিস্টাব্দে (ঘ) 1823 খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ 1823 খ্রিস্টাব্দে
১.৫ নববিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—
(ক) কেশব চন্দ্র সেন
(খ) স্বামী বিবেকানন্দ
(গ) মহির্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) দয়ানন্দ সরস্বতী
উত্তরঃ কেশব চন্দ্র সেন
👉মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
১.৬ সুই মুন্ডা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন—
(ক) চুয়াড় বিদ্রোহ (খ) মুন্ডা বিদ্রোহ
(গ) কোল বিদ্রোহ (ঘ) সাঁওতাল হুল
উত্তরঃ কোল বিদ্রোহ
১.৭ 1878 খ্রিস্টাব্দে অরণ্য আইনে অরণ্যকে ভাগ করা হয়—
(ক) চারটি স্তরে (খ) দুটি স্তরে
(গ) পাঁচটি স্তরে (ঘ) তিনটি স্তরে
উত্তরঃ তিনটি স্তরে।
১.৮ 1857সালের মহাবিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলেছেন—
(ক) সুভাষচন্দ্র বসু
(খ) বি ডি সাভারকার
(গ) জওহরলাল নেহেরু
(ঘ) রাসবিহারী বসু
উত্তরঃ বি ডি সাভারকার
১.৯ ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হল—
(ক) ভারত সভা
(খ) ভারতের জাতীয় কংগ্রেস
(গ) বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা
(ঘ) লন্ডন হোল্ডার্স সোসাইটি
উত্তরঃ ভারত সভা।
১.১০ ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি আঁকেন—
(ক) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) নন্দলাল বসু
উত্তরঃ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১.১১ ভারতে ‘হাফ টোন’ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন—
(ক) সুকুমার রায়
(খ) পঞ্চানন কর্মকার
(গ) চার্লস উইলকিন্স
(ঘ) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
উত্তরঃ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
১.১২ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেন—
(ক) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
(খ) স্বামী বিবেকানন্দ
(গ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(ঘ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১.১৩ ‘একা’ আন্দোলনের নেতা ছিলেন—
(ক) মাদারি পাসি (খ) ডঃ আম্বেদকর
(গ) বাবা রামচন্দ্র (ঘ) মহাত্মা গান্ধী
উত্তরঃ মাদারি পাসি
১.১৪ নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল—
(ক) 1920 খ্রিস্টাব্দে (খ) 1917খ্রিস্টাব্দে
(গ) 1927খ্রিস্টাব্দে (ঘ) 1929খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ 1920 খ্রিস্টাব্দে
১.১৫ বারদৌলি সত্যাগ্রহ হয়েছিল—
(ক) পাঞ্জাবে (খ) মাদ্রাজে (গ) বোম্বাই-এ
(ঘ) গুজরাটে
উত্তরঃ গুজরাটে
১.১৬ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল—
(ক) 1904 খ্রিস্টাব্দে (খ) 1911 খ্রিস্টাব্দে
(গ) 1906 খ্রিস্টাব্দে (ঘ) 1905 খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ 1905 খ্রিস্টাব্দে
১.১৭ মাতঙ্গিনী হাজরা ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন যে স্থানে—
(ক) তমলুক (খ) সুতাহাটা (গ) বরিশালা
(ঘ) পুরুলিয়া
উত্তরঃ তমলুক
১.১৮ দিপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—
(ক) বাসন্তী দেবী (খ) বীণা দাস
(গ) লীলা নাগ (রায়) (ঘ) কল্পনা দত্ত
উত্তরঃ লীলা নাগ (রায়)
১.১৯ ভারতের ‘লৌহমানব’ বলা হয়—
(ক) মোহাত্মা গান্ধীকে
(খ) রাজেন্দ্র প্রসাদ কে
(গ) মোহম্মদ আলি জিন্নাহকে
(ঘ) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে
উত্তরঃ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল
১.২০ ‘এ ট্রেন টু পাকিস্তান’ লিখেছেন—
(ক) ভি পি মেনন (খ) খুশবন্ত সিং
(গ) সলমন রুশদি (ঘ) জওহরলাল নেহেরু
উত্তরঃ খুশবন্ত সিং
বিভাগ – ‘খ’
২। নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্তত একটি করে মোট 16 টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১৬×১=১৬
উপবিভাগ : ২.১
একটি বাক্যে উত্তর দাও :
(২.১.১) ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন ?
উত্তরঃ দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ।
(২.১.২) সরকারি নথিপত্র কোথায় সংরক্ষণ করা হয় ?
উত্তরঃ সরকারি নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয় মহাফেজখানায় বা লেখ্যাগারে বা আর্কাইভ-এ।
(২.১.৩) বাংলায় কোন শতকের নবজাগরণের শতক বলা হয় ?
উত্তরঃ উনিশ শতকের নবজাগরণের শতক বলা হয়।
(২.১.৪) ‘উলগুলান’ বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ ‘উলগুলান’বলতে বোঝায় ‘চরম বিশৃঙ্খলা’ বা ‘বিদ্রোহ’কে।
উপবিভাগ : ২.২
ঠিক বা ভুল নির্ণয় করো:
(২.২.১) শ্রীরামকৃষ্ণ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
উত্তরঃ ভুল
(২.২.২) মহাবিদ্রোহের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ডালহৌসি।
উত্তরঃ ভুল
(২.২.৩) ‘গোরা’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইউরোপে সমাজকে সমর্থন করেছিলেন।
উত্তরঃ ভুল
(২.২.৪) গান্ধীজি ও ডঃ আম্বেদকর যৌথভাবে দলিত আন্দোলন করেছিলেন।
উত্তরঃ ভুল
উপবিভাগ : ২.৩
‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভের মেলাও :
ক -‘স্তম্ভ’ | খ -‘স্তম্ভ’ |
(২.৩.১) অরবিন্দ ঘোষ | (১) আজান্দ হিন্দ ফৌজ |
(২.৩.২) তারকনাথ পালিত | (২) বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ |
(২.৩.৩) নবগোপাল মিত্র | (৩) বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট |
(২.৩.৪) রসিদ আলী | (৪) হিন্দু মেলা |
উত্তরঃ
(২.৩.১) অরবিন্দ ঘোষ – বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
(২.৩.২) তারকনাথ পালিত – বেঙ্গল
টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট।
(২.৩.৩) নবগোপাল মিত্র – হিন্দু মেলা।
(২.৩.৪) রসিদ আলী – আজান্দ হিন্দ ফৌজ।
উপবিভাগ : ২.৪
প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থান গুলি চিহ্নিত করো ও নাম লেখো :
(২.৪.১) সাঁওতাল বিদ্রোহের এলাকা।
(২.৪.২) নীল বিদ্রোহের একটি কেন্দ্র।
(২.৪.৩) দেশীয় রাজ্য হায়দরাবাদ।
(২.৪.৪) পুনর্গঠিত রাজ্য গুজরাট।
অথবা,
(কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য)
শূন্যস্থান পূরণ করো :
(২.৪.১) মাস্টারদা নামে পরিচিত ছিলেন__________।
উত্তরঃ সূর্যসেন
(২.৪.২) ওয়াহাবি বলতে বোঝায়_______।
উত্তরঃ নবজাগরণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠী।
(২.৪.৩) ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির লেখক ছিলেন____________।
উত্তরঃ স্বামী বিবেকানন্দ
(২.৪.৪) হরি সিং ছিলেন____ এর রাজা।
উত্তরঃ কাশ্মীর
উপবিভাগ : ২.৫
নিম্নলিখিত বিবৃতি গুলির সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যা টি নির্বাচন করো :
(২.৫.১) বিবৃতি : ‘একা’আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে।
ব্যাখ্যা ১ : এটি ছিল ব্যক্তিগত আন্দোলন।
ব্যাখ্যা ২ : এটি ছিল একটি কৃষক আন্দোলন।
ব্যাখ্যা ৩ : এটি ছিল একটি শ্রমিক আন্দোলন
উত্তরঃ এটি ছিল একটি কৃষক আন্দোলন।
(৩.৫.২) বিবৃতি : ভারত সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে।
ব্যাখ্যা ১ : এর উদ্দেশ্যে ছিল বিপ্লবীদের দমন করা।
ব্যাখ্যা ২ : এর উদ্দেশ্য ছিল আইন অমান্য আন্দোলন দমন করা।
ব্যাখ্যা ৩ : এর উদ্দেশ্যে ছিল দেশব্যাপী সাম্যবাদী কার্যকলাপ দমন করা।
উত্তরঃ এর উদ্দেশ্য ছিল দেশব্যাপী সাম্যবাদী কার্যকলাপ দমন করা।
(২.৫.৩) বিবৃতি : বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।
ব্যাখ্যা ১ : বামপন্থীরা ছিল জমিদার ও শিল্পপতিদের সমর্থক।
ব্যাখ্যা ২ : তারা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক।
ব্যাখ্যা ৩ : তারা ছিলো শ্রমিক কৃষকদের ব্রিটিশ বিরোধী ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের সমর্থক।
উত্তরঃ তারা ছিলো শ্রমিক-কৃষক ব্রিটিশবিরোধী ঐক্য সংগ্রামের সমর্থক।
(২.৫.৪) বিবৃতি : ভারতে নারীরা জাতীয় আন্দোলনে প্রথম অংশ নিয়েছিল বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময়।
ব্যাখ্যা ১ : কারণ তারা গান্ধীজীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
ব্যাখ্যা ২ : কারণ তারা অরবিন্দ ঘোষের বিপ্লবী ভাবধারায় দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
ব্যাখ্যা ৩ : কারণ তারা বিদেশি দ্রব্য বর্জন করতে চেয়েছিল।
উত্তরঃ কারণ তারা বিদেশি দ্রব্য বর্জন করতে চেয়েছিল।
বিভাগ – ‘গ’
৩। দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে-কোনো ১১ টি) : ১১×২=২২
৩.১ সামাজিক ইতিহাস কী ?
উত্তরঃ ১৯৬০-এর দশক থেকে এডওয়ার্ড থমসন, এরিক হবসবম প্রমুখ ঐতিহাসিকদের হাত ধরে জন্ম নেয় নতুন সামাজিক ইতিহাস। দরবারি ইতিহাসের পরিবর্তে সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবন, সামাজিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক, ধৰ্ম-সংস্কৃতি এভাবে সামগ্রিক যাপনের কথা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সামাজিক ইতিহাস চর্চায়। হ্যারল্ড পার্কিন, রনজিৎ গুহ প্রমুখরা এই ধারাকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলেন।
৩.২ ইতিহাসের উপাদান রূপে সংবাদপত্রের গুরুত্ব কী ?
উত্তরঃ আধুনিক ইতিহাস রচনায় সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ, সম্পাদকীয়, চিঠিপত্র, নানাবিষয়ের ওপর প্রকাশিত লেখাগুলো ইতিহাস রচনায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য উপাদানের সাথে তুলনা করে সংবাদপত্রে প্রাপ্ত তথ্যাদি প্রাথমিক উপাদানরূপে বিবেচিত হয়। সমকালীন সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির বার্তাবহ সংবাদপত্র ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও আধুনিক ভারতের গঠনের ইতিহাস রচনায় বিশেষ সহায়ক।
৩.৩ বাংলার নারী শিক্ষা বিস্তারে রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ রাজা রাধাকান্ত দেব সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে। হিন্দু কলেজ, স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় অন্যতম উদ্যোগী রাজা রাধাকান্ত দেব নারী শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। বেথুন স্কুল, ডাফস্কুল গঠনে, নারীদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করতে, বিভিন্ন সভা আয়োজনে রাধাকান্ত দেব বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
৩.৪ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ বিভক্ত হল কেন ?
উত্তরঃ ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে সংস্কারের প্রশ্নে ব্রাহ্মসমাজ আদি ও ভারতবর্ষীয় এই দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছিল। কেশবচন্দ্র সেনের খ্রিস্টধর্ম প্রীতি, গুরুবাদের প্রতি আসক্তি, ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে নিজের নাবালিকা কন্যা সুনীতিদেবীর সাথে কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়নের বিবাহদানের প্রশ্নে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজে কেশব সেনের অনুগামী ছিলেন যারা তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামীকে আচার্য করে শিবনাথ শাস্ত্রীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ। অন্যদিকে কেশবচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ব্রাহ্মসমাজ ১৮৮০ খিষ্টাব্দে পরিণত হয় নববিধান ব্রাহ্মসমাজে।
৩.৫ ফরাজি আন্দোলন কি ধর্মীয় পুনর্জাগরণের আন্দোলন ?
উত্তরঃ ইসলামের সংস্কার ও পুনরুজ্জীবনের আদর্শ নিয়ে ফরাজি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। ‘ফরাজি’ শব্দের অর্থ ইসলামের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। ইসলাম শাস্ত্রে সুপন্ডিত হাজী শরিয়ত-উল্লাহ ১৮২০ খ্রীস্টাব্দে কোরান নির্দেশিত পথে ধর্ম সংস্কারের জন্য এই আন্দোলনের সূচনা করেন। আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কারণ হিন্দু জমিদার কর্তৃক ধর্মীয় কারণে ফরাজিদের উপর অতিরিক্ত ‘কর’ বা ‘আবওয়াব’ আদায়। তবে উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দমননীতির কারণে আন্দোলন ব্যর্থ হয়। ফরাজিদের শক্তির উৎস ছিল ধর্মীয় ঐক্য কিন্তু অবধারিতভাবে এটি একটি কৃষক অভ্যুত্থান।
৩.৬ নীলকরেরা নীল চাষীদের উপর কিভাবে অত্যাচার করত তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ ১৮৫৯-১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে নীলকর সাহেবদের সীমাহীন অত্যাচার ও শোষণের প্রতিবাদে কৃষকরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। নীলকররা নীলচাষীদের নানাভাবে অত্যাচার করত, নীলকুঠিতে ধরে এনে নীলচাষে বাধ্য করা হতো, প্রহার করা হতো, হত্যা করা হতো। কৃষকেরা নীল-চাষে বাধ্য না হলে তাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিত, কৃষকদের স্ত্রী ও নারীদের সম্মানে হাত দিতেও পিছপা হতো না ।
৩.৭ উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ‘সভা সমিতির যুগ’ বলা হয় কেন ?
উত্তরঃ উনবিংশ শতকে ব্রিটিশদের উদ্যোগে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটে এবং ভারতবর্ষের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের মানুষ শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি জাতীয়তাবোধে উদ্দীপিত হয়ে ওঠে। মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উপলব্ধি করে যে ব্যক্তিগতভাবে বিচ্ছিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা সম্ভব নয়। এর একমাত্র উপায় হল ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন। এই উদ্দেশ্যে সেই সময়ে বাংলা মাদ্রাজ ও বোম্বেতে অনেক সভা সমিতি গড়ে ওঠে। এই কারণে উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধকে ‘সভা সমিতির যুগ’ বলেছেন।
৩.৮ ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস কীভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল ?
উত্তরঃ সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে রচিত ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের মাধ্যমে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবোধের প্রসার ঘটে। আনন্দমঠের সন্তানদের উচ্চারিত ‘বন্দে মাতরম’ সংগীত বিপ্লবীদের মন্ত্রমুগ্ধ করেছিল। এই উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র পরাধীন ভারতমাতার দুর্দশার চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে দেষবাসীকে মুক্তি আন্দোলনে আন্দোলিত করেন। সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের জ্বলন্ত দলিল স্বরূপ ‘আনন্দমঠ’ দেশপ্রেমের জোয়ার এনেছিল।
৩.৯ উনিশ শতকের বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’এর ভূমিকা কী ছিল ?
উত্তরঃ উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশেরর জন্য মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই বিজ্ঞান কেন্দ্রে সম্পূর্ণ নিজের তত্ত্বাবধানে স্বাধীনভাবে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক গবেষণার ব্যবস্থা করা হয় ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকৃত আয়োজন করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে তোলা হয়।
৩.১০ ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল ?
উত্তরঃ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ সালে বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে স্নিগ্ধ পল্লি প্রকৃতির বুকে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল প্রাচীন ভারতীয় আশ্রমিক শিক্ষার সঙ্গে আধুনিক শিক্ষাচেতনার সম্মিলন। শিক্ষার্থীর জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন, শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের সমন্বয় গড়ে তোলা, আদর্শ শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা; আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার মৌলিক নীতিরূপ স্বাধীনতা, সৃজনশীলতার বিকাশ।
৩.১১ নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে বোম্বাইতে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য গুলি হলো—
(i) বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক আন্দোলনের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করা।
(ii) বিভিন্ন অঞ্চলের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়া।
(iii) শ্রমিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করা।
(iv) শ্রমিকদের সমাজতন্ত্রের সাথে যুক্ত করা।
৩.১২ ‘ওয়ার্কার্স এন্ড পেজেন্টস পার্টি’কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ গড়ে উঠেছিল শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা কমানো, সর্বনিম্ন মজুরির হার নির্ধারণ করা, জমিদারি প্রথার অবসান ঘটানো এবং পুনরায় নতুনভাবে শ্রমিকদের সংগঠিত করার উদ্দেশ্যে। মোজাফফর আহমেদ, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখের নেতৃত্বে ‘লাঙ্গল’ ও ‘গণবাণী’ পত্রিকাকে মুখপাত্র করে প্রাথমিকভাবে কংগ্রেসের মধ্য থেকে ও পরবর্তীতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তভাবে কৃষকদের স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
৩.১৩ রশিদ আলী দিবস কেন পালিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন দিল্লীর লালকেল্লায় বিচার শুরু হলে তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ থেকে ১৩ই ফেব্রুয়ারি কলকাতা গণ আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে। ১১ই ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা কলকাতার রাজপথে আন্দোলনের নামে এবং প্রতিবাদ দিবস রূপে ১২ই ফেব্রুয়ারি দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালন করে।
৩.১৪ দলিত কাদের বলা হয় ?
উত্তরঃ ব্যাকরণ অনুযায়ী ‘দলিত’ শব্দটি একটি বিশেষণ, যার অর্থ মাড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এমন বা পদদলিত। ১৯৩০-এর দশক থেকে অস্পৃশ্যরা নিজেদের দলিত বলে পরিচয় দিতে শুরু করে। এরা হল বর্ণ হিন্দু সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন। এরা সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের কাছে অত্যাচারিত হতো। ডঃ বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বে দলিত আন্দোলন বৃহত্তর রূপ নেয়।
৩.১৫ রাজ্যগুলি ভারতভুক্তি দলিল বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ভারত সরকার দেশীয় রাজ্যগুলির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রশ্নে এক বলিষ্ঠ নীতি গ্রহণ করেছিল। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অধীনে স্থাপিত হলো দেশীয় রাজ্য দপ্তর এবং এর সচিব হলেন ভি পি মেনন। মাউন্টব্যাটেনের পরামর্শে প্রায় সমস্ত দেশীয় রাজ্যগুলিকে বিশাল পরিমাণ ভাতা, খেতাব ও অন্যান্য সুবিধার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ‘Instrument of Acession’ নামে একটি দলিলে স্বাক্ষর করে ভারত ইউনিয়নে যোগদান করান। এটিই দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির দলিল নামে খ্যাত।
৩.১৬ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে কেন নেহেরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল ?
উত্তরঃ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতার পর ভারতের কাছে প্রধান সমস্যা ছিল উদ্বাস্তু সমস্যা। পাকিস্তান থেকে ভারতে বহু শরণার্থী চলে আসে এবং ভারত থেকে পাকিস্তান বহু শরণার্থী চলে যায়। দাঙ্গা বহুল এই সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য ১৯৫০ সালে ৮ই এপ্রিল নেহেরু-লিয়াকৎ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে ভারত সরকার ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে উদ্যোগী হয়।
বিভাগ – ‘ঘ’
৪। সাত বা আটটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও। প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্তত ১টি করে মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে) : ৬×৪=২৪
উপবিভাগ : ঘ.১
৪.১ নারী ইতিহাসের উপর একটি টীকা লেখো।
উত্তরঃ বিশ শতকের মধ্য ভাগ থেকে সারা পৃথিবীতে নারীকেন্দ্রিক চেতনা ও নারী আন্দোলনের জোয়ার লক্ষ্য করা যায়। নতুন সামাজিক ইতিহাস চর্চা ও নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চার মধ্যে নারীদের প্রান্তিক অবস্থান আলোচনার আঙ্গিনায় উঠে আসে। ১৯৭০ এর দশক থেকে নারী ইতিহাসচর্চা ইতিহাসের একটি স্বতন্ত্র ধারারূপে গুরুত্ব লাভ করে। Gerda Lerner -এর মতে, নারীমুক্তির জন্য নারী ইতিহাসচর্চা আবশ্যক। নারী ইতিহাসচর্চার মধ্যে উঠে এসেছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর যোগদান, অভিজ্ঞতা, অবস্থান, ভূমিকার কথা। নারীর অধিকার বা অধিকারহীনতা, নারী স্বাধীনতা, প্রতিনিধিত্ব, ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সম্পর্ক, লিঙ্গ বৈষম্য, নারীবাদী সাহিত্য, নারী আন্দোলন সমস্তই নারী ইতিহাসচর্চার পরিসরে আলোচিত হচ্ছে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রাধান্যের বিরুদ্ধে মতামত প্রকাশিত হয়। বাল্যবিবাহ, পণপ্রথা, নারীশিক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলি ইতিহাসের কালানুক্রমে নারীদের অবস্থান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে এসেছে। পিতৃতন্ত্র কীভাবে উৎপাদনের উপাদান, জমি এবং সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে সেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে নারী ইতিহাসচর্চা। Gerda Lerner, জেরাল্ডিন ফোর্বস, জে. কৃষ্ণমূর্তি, যশোধারা বাগচী, বীনা আগরওয়াল প্রমুখ নারী ইতিহাসচর্চাকারীদের মধ্যে অগ্রগণ্য।
৪.২ স্বামী বিবেকানন্দের ধর্ম সংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মীয় চিন্তাধারার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ‘নব্য বেদান্তবাদ’। বিবেকানন্দ প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়ে এটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। স্বামীজীর বেদান্ত তত্ত্বের প্রচার আর তার সহায়ক উপাদানরূপে কর্মযোগের প্রচার করে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের মুক্তির পথের সন্ধান দিয়ে গেছেন। কুসংস্কার, অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ, ধনী-দরিদ্র্যের বিভেদ দূর করে তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ ও কর্মশক্তিতে উদ্দীপ্ত হওয়ার আহ্বান জানান। বিবেকানন্দ দেশকে মাতৃরূপে কল্পনা করে তার মুক্তির জন্য সকলকেই শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। বিবেকানন্দের নব্য বেদান্তের অভিমুখ ছিল একটাই— জগতের কল্যাণেই নিজের মোক্ষলাভ। তাঁর ধর্মদর্শন ঈশ্বরের সেবা প্রকৃতপক্ষে মানুষের সেবা করা।
উপবিভাগ : ঘ.২
৪.৩ 1855 খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ করেছিল কেন ?
উত্তরঃ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পরে এদেশে যেসব উপজাতি বিদ্রোহ হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী উপজাতি বিদ্রোহ হল ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ। বিভিন্ন অঞ্চলে শান্ত ও নিরীহ সাঁওতালরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বিদ্রোহের কারণ:- ১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি হল—
(i) রাজস্বের হার বৃদ্ধি : সাঁওতালরা সাধারণত অরণ্য সঙ্কুল জমিতে চাষবাস করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করত কিন্তু নতুন ভূমি রাজস্ব আইন প্রণয়ন হলে সাঁওতালদের সেই জমির ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করা হয় ।
(ii) মহাজনদের প্রতারণা : মহাজনরা সাঁওতালদের নানাভাবে ঠকাত । নগদ টাকায় খাজনা মেটাতে হত বলে সাঁওতালরা মহাজনদের কাছে নগদ অর্থে ফসল বিক্রি করত এবং অন্যায়ভাবে বেশি সুদ আদায় করত ।
(iii) ব্যবসায়ীদের অত্যাচার : ব্যবসায়ীরা এদেশে দোকান খুলে বসে সাঁওতালদের নানাভাবে ঠকাত । তারা কেনারাম ও বেচারাম বাটখারা ব্যবহার করে সাঁওতালদের ঠকাত ।
(iv) বেগারশ্রম : ভারতে রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ শুরু হলে ব্রিটিশ ঠিকাদাররা সাঁওতালদের বেগার শ্রম দানে বাধ্য করত ।
(v) নিম্ন মজুরি : মহাজন ও জমিদাররা নিম্ন মজুরিতে সাঁওতালদের বলপূর্বক জমিতে খাটিয়ে নিত । এই কারণে মহাজন ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের প্রচুর ক্ষোভ জমা ছিল ।
(vi) ধর্মান্তরকরণ : খ্রিস্টান মিশনারিরা সাঁওতালদের অঞ্চলে বলপূর্বক প্রবেশ করে তাদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করত ।
সর্বোপরি অরণ্যবাসী সাঁওতালরা অরণ্যের অধিকার রক্ষায় শেষ অবধি বিদ্রোহের পথই বেছে নিয়েছিল ।
৪.৪ 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কিরূপ মনোভাব ছিল ?
উত্তরঃ ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সাধারণভাবে সমর্থন করেননি ।
ইংরেজদের উপর বিশ্বাস : তখনকার পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি সমাজ ইংরেজদের প্রতি অধিক আগ্রহ পোষণ করত । তারা ভাবে এই সময় ভারতের ওপর থেকে ইংরেজ শক্তি চলে গেলে ভারতকে সঠিকভাবে চালানো যাবে না । তখনকার বাঙালি শিক্ষিত সমাজ ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের পক্ষে কল্যাণকর বলে মনে করত ।
বিদ্রোহের অযৌক্তিকতা : ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহকে সমকালীন বাঙালি সমাজ অপ্রয়োজনীয় মনে করেছিল । বিদ্রোহে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে ভারতে আবার মুসলিম শাসনের দিন আসতে পারে, এই আশঙ্কা মূলত হিন্দু বাঙালিদের ছিল ।
অন্যান্য বাঙালিদের অভিমত : বিভিন্ন বাঙালি যেমন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ বিদ্রোহের উদ্দেশ্যের প্রতি তাদের অনাস্থা প্রকাশ করেন । তখনকার যুগে বাঙালি মধ্যবিত্তের এক বিরাট অংশ ইংরেজদের অধীনে চাকরি করত, তাই তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যেতে চায়নি ।
1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে তখন শিক্ষিত বাঙালি সমাজের সমর্থনের অভাবে বাংলায় তা খুব একটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি ।
উপবিভাগ : ঘ.৩
৪.৫ ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ আঠারো শতকের শেষ দিক থেকে উনিশ শতকে শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে ছাপাখানার ছাপা বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত। ঘনিষ্ঠ। এই সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে-
(ক) শিক্ষার বিস্তার : ছাপাখানা চালু হওয়ার পর বাংলা ভাষায় প্রচুর বইপত্র (যেমন পীয়ারসনের বাক্যাবলী’, লসনের ‘পাবলী’, রাধাকান্তদেবের ‘বেঙ্গলী স্পেলিং বুক’, হারলের ‘গণিতঙ্ক’) ছাপা শুরু হলে শিক্ষার্থীরা নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ পাওয়ায় বাংলাদেশে শিক্ষার বিস্তার ঘটে।
(খ) শিশু-শিক্ষার প্রসার: ছাপাখানা শিশু শিক্ষার অগ্রগতিতে সাহায্য করেছিল। এ প্রসঙ্গে মদনমোহন তর্কালঙ্কার-এর রচিত ‘শিশু শিক্ষা’ (এর বিখ্যাত কবিতা ‘পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল’) ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ (১ম ও ২য় ভাগ) এবং রামসুন্দর বসাক রচিত “বাল্যশিক্ষা প্রভৃতি গ্রন্থের কালজয়ী ভূমিকার কথা বলা যায়।
(গ) গণ শিক্ষার বিস্তার: ছাপাখানার ফলে স্কুল-কলেজ শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি গণ শিক্ষারও বিস্তার ঘটে। কৃত্তিবাসী রামায়ণ (১৮০১ খ্রি.), কাশীদাসী মহাভারত (১৮০২ খ্রি.), বাঙ্গালার ইতিহাস’ (১৮০৪ খ্রি.) প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থ ও ইতিহাস গ্রন্থের পাশাপাশি বাংলা বিষয়ের উপর রচিত বিচিত্রধর্মী গ্রন্থ এবং সমাচার দর্পণ, সংবাদ প্রভাকর’ প্রভৃতি ভাষায় প্রকাশিত পত্রপত্রিকার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের ও শিক্ষার প্রসার ঘটে।
(ঘ) সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা উদ্যোগে গতি: ছাপাখানার ফলে দেশীয় ভাষায় শিক্ষাদানে সরকারী ও বেসরকারী উৎসাহদান বৃদ্ধি পায়। এ প্রসঙ্গে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশন এবং ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটির উদ্যোগে বাংলায় স্কুল পাঠ্যপুস্তক রচনা ও পরিবেশনার কথা বলা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলা ছাপাখানার প্রবর্তনের ফলে বাংলায় ছবি, মানচিত্র, নকশা ছাপানোর পাশাপাশি গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, অভিধান, ব্যাকরণ প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন সম্ভব হয় এবং শিক্ষক ও ছাত্র সমাজের কাছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞানজগতের দরজা উন্মোচিত হয়।
৪.৬ কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় ‘বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ এর কি ভূমিকা ছিল ?
ভূমিকা : ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যে সকল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হল বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট।
প্রতিষ্ঠা : ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে বিশিষ্ট আইনজীবি ও শিক্ষা-দরদি তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
উদ্দেশ্য : এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি নিয়ন্ত্রণ-মুক্ত শিক্ষা-ব্যবস্থার প্রচলন এবং বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার।
জাতীয় শিক্ষার উদ্যোগ : স্বদেশি আন্দোলনের সময় দেশে ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার একটি অন্যতম উদ্যোগ ছিল বাংলায় স্বদেশি ধাঁচে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এই উদ্দেশ্যে আইনজীবী তারকনাথ পালিতের প্রচেষ্টায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট নামে একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
সমন্বয় : দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট ও বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ একত্রে মিশে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিকাল স্কুল নাম গ্রহণ করে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নাম হয় কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বা CET.
কার্যক্রম : উভয় প্রতিষ্ঠান মিশে যাওয়ার পর কলাবিভাগের পাশাপাশি এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, প্রযুক্তি, শিল্পপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয়। এর ফলে বাংলার বহু শিক্ষিত যুবক কারিগরি বিদ্যা লাভ করে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।
জার্নাল : কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি-র ছাত্রছাত্রীরা ‘টেক’ নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করে। এই জার্নালের প্রথম সংখ্যাটি তারা স্বদেশি আন্দোলনের যুগের সেই সকল আত্মত্যাগীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে যাঁরা জাতীয় শিক্ষার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
উপসংহার : বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউটের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলদেশীয় শিক্ষার দ্বারা বাংলার যুবকদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলা। এই প্রতিষ্ঠান তার উদ্দেশ্যপূরণে সফল হয়েছিল। পরবর্তীতে এটি পরিণত হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
উপবিভাগ : ঘ.৪
৪.৭ দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধী আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখো।
ভূমিকা : ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে ভারতের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কংগ্রেস দলের প্রতিনিধি মহাত্মা গান্ধি এবং দলিত শ্রেণির প্রতিনিধি ড. ভীমরাও আম্বেদকর। দলিতদের অধিকার নিয়ে বৈঠকে গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে তীব্র মতভেদ ও বিতর্ক শুরু হয়।
মতভেদের বিষয় : গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে মতভেদের মূল বিষয় ছিল উচ্চবর্ণের হাত থেকে দলিতদের অধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব আদায়। এই অধিকার আম্বেদকর যেভাবে চাইছিলেন তার সঙ্গে গান্ধিজি একমত ছিলেন না।
আম্বেদকরের পৃথক নির্বাচনের দাবি : আম্বেদকর লক্ষ্য করেছিলেন যে, দলিতরা ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে। সেই কারণে তারা নির্বাচনে নিজেদের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধিকে জেতাতে ব্যর্থ হয়। তাই আম্বেদকর দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচন, তথা রাজনৈতিক অধিকার দাবি করেন।
পৃথক নির্বাচনে গান্ধিজির আপত্তি : গান্ধিজি দাবি করেন যে, দলিতরা সংখ্যালঘু নয়, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই তিনি দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার দানের বিরোধিতা করেন।
সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ঘোষণা : এই পরিস্থিতিতে১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করেন। এই নীতির মাধ্যমে দলিত-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হলে আম্বেদকর তা সমর্থন করেন।
গান্ধিজির অনশন : মুসলিম ও শিখদের পৃথক নির্বাচন মেনে নিলেও গান্ধিজি দলিতদের পৃথক নির্বাচনের নীতির বিরোধিতা করে আমরণ অনশন শুরু করেন।
পুনা চুক্তি স্বাক্ষর : দলিতদের অধিকারের প্রশ্নে গান্ধিজির উদ্যোগকে আম্বেদকর পর্যাপ্ত নয় মনে করে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ অনশনে গান্ধিজির প্রাণসংশয় দেখা দিলে ১৯৩২খ্রিস্টাব্দে আম্বেদকর গান্ধিজির সঙ্গে পুনা চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করেন।
উপসংহার : আসলে ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা করে। কিন্তু পুনা চুক্তি ছিল সাম্প্রদায়িক বিভেদ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ।
৪.৮ ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও যৌতিকতা খতিয়ে দেখার জন্য ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বিচারপতি এস. কে. ধর-এর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এই কমিশনের নাম ‘ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন’। এই কমিশন মনে করেছিল যে, ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন করলে জাতীয় ঐক্য বিঘ্নিত হবে ও প্রাদেশিক জটিলতা দেখা দেবে। তাই বিষয়টি নিয়ে আবার নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে জওহরলাল নেহরু, বল্লভ ভাই প্যাটেল এবং কংগ্রেস সভাপতি পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিয়ে কংগ্রেস একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটিও সেই সময়ে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের বিপক্ষে রিপোর্ট দেয়। এই অবস্থায় ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকার মাদ্রাজ প্রদেশের তেলেগু ভাষাভাষী অঞ্চলগুলি একত্রিত করে পৃথক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠন করে। তামিল ভাষাভাষীদের জন্য সৃষ্টি হয় তামিলনাড়ু। অন্ধ্রপ্রদেশের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীগুলিও নিজেদের জন্য আলাদা রাজ্য দাবি করতে থাকে।
বিভাগ – ‘ঙ’
৫। পনেরো বা ষোলটি বাক্যে যেকোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ১×৮=৮
৫.১ শিক্ষা বিস্তারের প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদী বিতর্ক কি ? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আলোচনা করো। ৫+৩
ভূমিকা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এরপর এদেশে শিক্ষাব্যবস্থার নীতি-নির্ধারণের বিষয়টি তাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
প্রাচ্যবাদী : প্রাচ্যবাদীরা ভারত -এ প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন। প্রাচ্যবাদের সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এইচ টি প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, উইলসন প্রমুখ।
পাশ্চাত্যবাদী : পাশ্চাত্যবাদীরা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা, অর্থাৎ ইংরেজি, আধুনিক বিজ্ঞান প্রভৃতি শিক্ষার প্রসারের দাবি জানান। পাশ্চাত্যবাদের সমর্থকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মেকলে, আলেকজান্ডার ডাফ, সন্ডার্স, কলভিন প্রমুখ।
দ্বন্দ্বের সূত্রপাত : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে জনশিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নিলে এদেশে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো উচিত সে প্রশ্নকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
রামমোহন রায়ের উদ্যোগ : ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন দ্বারা ভারতীয় জনশিক্ষার জন্য প্রতি বছর ১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাজা রামমোহন রায় সরকারকে এক পত্রের দ্বারা এই টাকা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা অর্থাৎ ইংরেজি ও আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য ব্যয়ের অনুরোধ জানান।
প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব : বেন্টিঙ্কের শাসনকালে ভারতে প্রাচ্য না পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা উচিত এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা কার্যত প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট এবং পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংলিসিস্ট নামে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এভাবে সরকারি শিক্ষানীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
মেকলে মিনিট : বেন্টিঙ্কের আমলে জনশিক্ষা কমিটি-র সভাপতি মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড বেন্টিঙ্কের কাছে একটি প্রস্তাব দেন যা ‘মেকলে মিনিট‘ নামে পরিচিত। অবশেষে পাশ্চাত্যবাদীরা জয়ী হন এবং সরকার ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার -এর নীতি নেয়।
প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্বের সমাপ্তি : শেষপর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীরা জয়ী হওয়ার ফলে ভারতে সরকারি উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের কোনো বাধা রইল না। এরপর একে একে বিভিন্ন পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে এদেশে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের পথ আরও সুগম হয়।
উচ্চশিক্ষার বিকাশে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা—
ভারত -এ পাশ্চাত্য ধাঁচে আধুনিক উচ্চতর শিক্ষার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে লর্ড ক্যানিং-এর শাসনকালে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এদেশে উচ্চশিক্ষার বিকাশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
পরিধি : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের প্রাচীনতম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাশ্চাত্য ধাঁচের বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্বে লাহোর থেকে রেঙ্গুন এবং শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের পরিধি বিস্তৃত ছিল। এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উচ্চশিক্ষা তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত।
মানের উৎকর্ষ : স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় উপাচার্য থাকার সময় (১৯০৬-১৪ খ্রি. এবং ১৯২১-২৩ খ্রি.) এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উৎকর্ষের শিখরে পৌঁছোয়। তাঁর সময়ে কলা ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে উন্নত গবেষণার কাজ সারা বিশ্বের প্রশংসা অর্জন করে। তাঁর অনুরোধে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ এখানে পড়াতে আসেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক অধ্যাপক ছিলেন।
প্রথম স্নাতক : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে যদুনাথ বোস ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রথম স্নাতক হন। এশিয়ার প্রথম ডি লিট বেণীমাধব বড়ুয়া এখানকার ছাত্র ছিলেন।
কৃতী ছাত্র : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করে বিভিন্ন ছাত্র পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। এখানকার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য কৃতী ছাত্র ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান, রমেশচন্দ্র মজুমদার, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, নীহাররঞ্জন রায়, স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ।
উপসংহার : প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্বে পাশ্চাত্যবাদীদের জয় লাভের ফলে ভারতে পাশ্চাত্য ধারায় উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটতে থাকে। এক্ষেত্রে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। প্রথমদিকে এই বিশ্ববিদ্যালয় মূলত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণ ও ডিগ্রি প্রদান করত। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে এটি দেশের বৃহত্তম গবেষণা ও শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়।
৫.২ সংক্ষেপে মহাবিদ্রোহের (1857)চরিত্র বিশ্লেষণ করো। ৮
উত্তরঃ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার পর থেকে এই বিদ্রোহের চরিত্র নিয়ে নানা মতবাদ উত্থাপিত হয়েছে। বেশির ভাগ ব্রিটিশ লেখক একে সিপাহী বিদ্রোহ বলে মেনে নিলেও কারো কারোর কাছে এটা একটা জাতীয় বিদ্রোহ। অনেকে মনে করেন এটা সামন্ত বিদ্রোহ ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্রিটিশ সেনা জেনারেল আউটরাম একে ‘মুসলমানদের ষড়যন্ত্র’ বলেছেন।
সিপাহী বিদ্রোহ : স্যার চার্লস রেকস, জন সিলি, আর্ল রবার্টস প্রমুখদের মতে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ছিল সিপাহী বিদ্রোহ। সমকালীন বিদগ্ধ ভারতীয়দের মধ্যে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দাদাভাই নৌরোজি, অক্ষয় কুমার সরকার, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রমুখেরা এই বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ বলে মেনে নিয়েছেন । ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার তার “Sepoy Mutiny and the Revolt of 1857” গ্রন্থে এই বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন । এ বিষয়ে তাদের মতামতগুলি হল—
(i) বিপ্লবীদের কোনো পূর্ণ পরিকল্পনা ছাড়াই এই বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল।
(ii) বিপ্লবীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক ছিল না।
(iii) মহাবিদ্রোহের শতবার্ষিকী সভায় রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন— “The so called First national war of independence in 1857 is neither First nor national nor war of independence.”
জাতীয় বিদ্রোহ : ডিসরেলি, নর্টন, ডাফ, হোমস প্রমুখেরা ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলেছেন। বিনায়ক দামোদর সাভারকার এই বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলেছেন। এই বিষয়ে তাদের মতামতগুলি হল—
(i) পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলির তুলনায় ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে গণ সমর্থন ছিল প্রবল।
(ii) সুরেন্দ্রনাথ সেন স্পষ্ট করে বলেছেন যে বিদ্রোহের নেতা হিসাবে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে মেনে নেওয়ায় এই বিদ্রোহ এক অন্য মাত্রা পায়।
সামন্ত বিদ্রোহ : রজনীপাম দত্ত, এরিখ স্টোকস, জওহরলাল নেহেরু, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখেরা এই বিদ্রোহকে সনাতন পন্থীদের বিদ্রোহের সাথে তুলনা করে একে সামন্ত বিদ্রোহ বলেছেন। জওহরলাল নেহেরু তাঁর ‘Discovery of India’ গ্রন্থে এই বিদ্রোহকে সনাতন পন্থীদের বিদ্রোহ বলেছেন।
মূল্যায়ন : অবশেষে উল্লেখ্য যে সকল ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের ভাবধারা গড়ে ওঠেনি। শিখ, গোর্খা, রাজপুত প্রভৃতি জাতিগুলিও এই বিদ্রোহ থেকে দূরে ছিল। সুশোভন সরকার বলেছেন “হজরত মহল, কুনওয়ার সিং, লক্ষীবাঈ প্রভৃতি সামন্ত জমিদার ও তালুকদারদের হাতে বিদ্রোহের নেতৃত্ব ছিল বলে একে প্রতিক্রিয়াশীল আখ্যা দেওয়া যায় না।” কিন্তু একথা অস্বীকার করা যায় না যে, নানা ত্রুটি-বিভাজন সত্ত্বেও এই বিদ্রোহে গণচরিত্রের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। ফিরিঙ্গিদের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমানের সমন্বিত বিদ্রোহের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক রূপটিকেও অস্বীকার করা যায় না।
৫.৩ সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। ৮
ভূমিকা : উনিশ শতকের শেষার্ধ ও বিশ
শতকের প্রথমার্ধে বহিভারতে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের ঘটনা ভারতের তার রাজনীতিতে নারী শক্তির গুরুত্বকে বৃদ্ধি করে। রাজনীতিতে। নারী- পুরুষের সমানাধিকারের তত্ত্বও ক্রমশই জনায় শুতে।
প্রেক্ষাপট : বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর থেকেই সশস্ত্র বিপ্লবী। আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপট রচিত হয়। স্বদেশি আন্দোলনের অন্যতম নেতা কৃয়কুমার মিত্রের কন্যা কুমুদিনী মিত্র তার সুপ্রভাত’ পত্রিকার মাধ্যমে দেশপ্রেমের আদর্শ প্রচার করে এবং এই পত্রিকা শহরের মধ্যবিত্ত নারীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মীরা দাশগুপ্তার সম্পাদিত ‘বেণু পত্রিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা—
(১) বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্ব : এই আন্দোলনের সময় বাংলার কয়েকজন নারী বিপ্লবীদের আশ্রয়দান, গোপনে সংবাদ প্রেরণ ও অস্ত্র সরবরাহের দায়িত্ব পালন করেন। এ প্রসঙ্গে ননীবালা দেবীর কথা বলা যায়। এ ছাড়া সরলাদেবী চৌধুরানির। প্রতিষ্ঠিত লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ও বীরাঙ্গনা ব্রত’ স্বদেশি চেতনার বিকাশে সাহায্য করেছিল।
(২) দীপালি সংঘ : বিপ্লবী লীলা রায় (নাগ) কর্তৃক ঢাকায়। প্রতিষ্ঠিত দীপালি সংঘের (১৯২০ খ্রিস্টাব্দ) উদ্যোগে নারীদের। লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্র চালানো, অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় ও বৈপ্লবিক। আন্দোলনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। এই সংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে। যুক্ত ছিলেন ছাত্রী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
(৩) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার : বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। (১৯১১-৩২ খ্রি.) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক মাস্টারদা সূর্য। সেনের সহযোগী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী চট্টগ্রামের। পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে ক্লাব বিপর্যস্ত করে দেয় এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড বিষপান করে আত্মহত্যা করেন।
(৪) কল্পনা দত্ত : চট্টগ্রামের বিখ্যাত বিপ্লবী নারী কল্পনা দত্ত। বিপ্লবী দলের গোপন কাগজপত্র ও অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার দায়িত্ব। পেয়েছিলেন। তা ছাড়া তিনি বন্দি বিপ্লবী নেতাদের মুক্ত করার জন্য ডিনামাইট ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনি জেলবন্দি হন ও ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জেল থেকে ছাড়া পান।
(৫) শান্তি ও সুনীতি : কুমিল্লার দুইজন ছাত্রী শান্তি ঘোষ ও। সুনীতি চৌধুরী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি. জি. ভি. স্টিভেনকে গুলি করে হত্যা করেন। আবার উজ্জ্বলা মজুমদার দার্জিলিং-এ গভর্নর। অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা করলে ধরা পড়েন ও জেলবন্দি হন।
(৬) বীণা দাস : আধা বৈপ্লবিক সংগঠন ছাত্রী সংঘ’-এর সদস্য তথা কলেজ ছাত্রী বীণা দাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় সেনেট হলে গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার জন্য গুলি করেন (৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ খ্রি.)। জ্যাকসন অল্পের জন্য বেঁচে যান এবং জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে বীণা দাসের নয় বছর কারাদণ্ড হয়।
(৭) লক্ষ্মী সায়গল : আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী ঝাসি। ব্রিগেডের’ দায়িত্বপ্রাপ্ত লক্ষ্মী স্বামীনাথন বা লক্ষ্মী সায়গলের। বৈপ্লবিক কাজকর্মও খুব উল্লেখযোগ্য ছিল।
পর্যালোচনা : সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদান ছিল সীমিত। বৈপ্লবিক প্রচেষ্টায় পুরুষ বিপ্লবীদের তুলনায় নার বিপ্লবীদের দায়িত্ব কম দেওয়া হত। তাছাড়া এই রূপ সশস্ত্র আন্দোলন মূলত বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ ছিল।
(কেবলমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য)
বিভাগ – ‘চ’
৬। ৬.১ একটি পূর্ণ বাক্যে উত্তর দাও (যে কোনো ৪টি) : ৪×১=৪
৬.১.১ ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’র’ সম্পাদক কে ছিলেন ?
৬.১.২ কোন বৎসর সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা হয় ?
৬.১.৩ ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’কাদের বলা হয় ?
৬.১.৪ একজন ব্যঙ্গচিত্র শিল্পীর নাম লেখ।
৬.১.৫ কে বর্ণপরিচয় রচনা করেন।
৬.১.৬ অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি কে প্রতিষ্ঠা করেন ?
৬.২ দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোন তিনটি) : ৩×২=৬
৬.২.১ স্থানীয় ইতিহাস বলতে কী বোঝোয় ?
৬.২.২ উডের নির্দেশনামার (1854) যে-কোনো দুটি সুপারিশ উল্লেখ করো।
৬.২.৩ ডেভিড হেয়ার কেন বিখ্যাত ?
৬.২.৪ ‘ভারত সভা’প্রতিষ্ঠার যেকোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখ।
৬.২.৫ কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেছিল ?
📌 আরও দেখুনঃ
📌 আরও দেখুনঃ
» মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ইংরেজি পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ইতিহাস পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ভূগোল পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান
» দশম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র
» মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫
» মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের MCQ মক টেস্ট