নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণি বাংলা | Nobo Nobo Sristi Probondher Question Answer Class 9 Bengali wbbs
সাহিত্য সঞ্চয়ন
নবম শ্রেণি বাংলা (প্রথম ভাষা)
নবম শ্রেণি বাংলা নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর | Class 9 Bengali Nobo Nobo Sristi Probondher Question Answer wbbse
নবম শ্রেণির বাংলা লেখক পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ, বহু বিকল্পীয়, অতি সংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | West Bengal Class 9 Bengali Nobo Nobo Sristi Probondher Question Answer wbbse
1. নবম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. নবম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here
নবম শ্রেণির বাংলা লেখক পরিচিতি, উৎস, বিষয় সংক্ষেপ, নামকরণ, বহু বিকল্পীয়, অতি সংক্ষিপ্ত, ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | West Bengal Class 9 Bengali Nobo Nobo Sristi Probondher Question Answer wbbse
লেখক পরিচিতিঃ সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪ – ১৯৭৪) : জন্ম শ্রীহট্টের করিমগঞ্জে। বাবার নাম সৈয়দ সিকান্দর আলি। মহাত্মা গান্ধির ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে স্কুল ছাড়েন। শান্তিনিকেতনে পড়া শেষ করে তিনি কাবুলের শিক্ষাবিভাগে অধ্যাপক হন। তিনি আরবি, ফারসি, জার্মান সহ ১৫টি ভাষা জানতেন। প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি, উপন্যাস ও রম্য-রচনায় তাঁর দক্ষতা অসামান্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘দেশে বিদেশে’, ‘পঞ্চতন্ত্র’, চাচাকাহিনি, ময়ূরকণ্ঠী, শবনম, ধূপছায়া, টুনিমেম, হিটলার প্রভৃতি। তিনি ‘নরসিংহদাস পুরস্কারে’ সম্মানিত।
উৎসঃ মুজতবা আলীর ‘চতুরঙ্গ’ নামক গ্রন্থ থেকে সংকলিত পাঠ্য অংশ ‘নব নব সৃষ্টি’। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে এই নামটি সংকলকদের দেওয়া। আসল রচনাটির নাম ‘মামদোর পুনর্জন্ম’।
বিষয়সংক্ষেপঃ প্রাচীন যুগের অধিকাংশ ভাষাকে লেখক আত্মনির্ভরশীল এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা বলেছেন। হিব্রু, গ্রীক, আবেস্তা, সংস্কৃত এবং কিছুটা পরবর্তী যুগের আরবিও নতুন ভাষার প্রয়োজন হলে নিজ ভান্ডারে প্রথমে শব্দের খোঁজ করেছে। এই সমস্ত ভাষা খুব সামান্যই বিদেশী ভাষা ব্যবহার করেছে, এই ভাষা গুলি স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে লেখক কোন আপত্তি প্রকাশ করেননি। এই বিচারে লেখক বর্তমান যুগের বাংলা এবং ইংরেজিকে অন্য ভাষার উপর নির্ভরশীল বলেছেন। কারণ বাংলা এবং ইংরেজি প্রয়োজন ছাড়াও বিদেশি শব্দ ব্যবহার করে। পাঠান-মোগল যুগে আরবি, ফারসি শব্দের খুব বেশি প্রচলনের ফলে এই দুই ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় প্রচুর শব্দ প্রবেশ করেছে।
লেখক স্পষ্ট ভাবে বলেছেন যে বিদেশী শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করবেই সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। আলু কফির বা বিলেতি ওষুধের ব্যবহার যেমন রোজ বাড়ছে, তেমনি বাংলা ভাষাতে বিদেশি শব্দ থেকে যাবে এবং আরো নতুন শব্দের প্রবেশ ঘটবে। হিন্দি ভাষার তরুণ সাহিত্যিকরা হিন্দি ভাষা থেকে আরবি, ফারসি, ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বন্ধ করার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। তাঁদের এই চেষ্টার ফলাফল ভালো না মন্দ হবে, সে কথা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে রবীন্দ্রনাথ নজরুল বা বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষায় অনায়াসেই বিদেশি শব্দের ব্যবহার করেছেন। এমনকি হিন্দি ভাষার বঙ্কিমচন্দ্র হিসেবে পরিচিত মুন্সি প্রেম চন্দও হিন্দি ভাষার আরবি, ফরাসি শব্দের ব্যবহার করেছেন। শংকর দর্শনের ভাষা সংস্কৃত ভাষা হবে। আবার মোগলাই রেস্তোরাঁর ভাষা হুতুম প্যাঁচার নকশায় ব্যবহৃত ভাষার মতোই হবে। বসুমতি পত্রিকার সম্পাদকীয়তে গাম্ভীর্য থাকলেও বাঁকা চোখের ভাষাতে রয়েছে চটুলতা।
বাংলা ভাষায় যেসব বিদেশি শব্দ প্রবেশ করেছে তাদের মধ্যে আরবি ফারসি এবং ইংরেজি প্রধান। স্কুল-কলেজ থেকে সংস্কৃত চর্চা বন্ধ করা উচিত নয় কারণ বাংলা ভাষার বর্তমানেও সংস্কৃত ভাষার প্রয়োজন আছে। ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেও সংস্কৃতের মতই একই কথা প্রযোজ্য কারণ দর্শন নন্দন শাস্ত্র এবং বিজ্ঞান বিষয়ক সাহিত্যচর্চাতে ইংরেজি ভাষার বিকল্প নেই কারণ রেলের ইঞ্জিন চালাতে হয় কি করে তা জানার জন্য ইংরেজি ভাষারই বেশি প্রয়োজন। আরবি এবং ফারসি ভাষা দারুন ভাবে বাংলায় প্রবেশ আর করবে না, কারণ তরুণ বাঙালিরা এই দুই ভাষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। তবে যে সব আরবি ফরাসি শব্দ বাংলা ভাষায় ইতিমধ্যে ঢুকে গেছে সেগুলি দীর্ঘদিন চালু থাকবে।
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় মাদ্রাসাগুলিতে আরবি ভাষা পড়ানো হলেও ভারতীয় আর্যরা ফরাসি ভাষার প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট হন। ফরাসি ভাষার জন্মের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে উর্দু এবং কাশ্মীরি ভাষার জন্ম হয়। উর্দু কবি ইকবাল উর্দু ভাষাকে ফরাসির প্রভাব থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেন।
বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য পদাবলী কীর্তন। এই কাব্যের শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীমতি রাধার চরিত্রে খাঁটি বাঙালিয়ানা ফুটে উঠেছে। ভাটিয়ালির নায়িকা, বাউলের ভক্ত, মুর্শিদি গানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাঙালি তার ধর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য-সর্বত্রই সত্য-শিব- সুন্দরের আরাধনা করেছেন এবং সেই আরাধনায় কেউ বাধা দিলে বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। এই বিদ্রোহী মনোভাব বাঙালি
হিন্দু-মুসলিম উভয় জাতির ক্ষেত্রেই বর্তমান।
নামকরণঃ সাহিত্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে নামকরণের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। নামকরণ নানান ভাবে হতে পারে। যেমন- বিষয়কেন্দ্রিক, চরিত্র প্রধান, ব্যঞ্জনাধর্মী ইত্যাদি। লেখক তার নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধে বলেছেন, কিছু ভাষা আছে যেমন সংস্কৃত, হিব্রু, গ্রীক, আবেস্তা এমনকি আরবি ইত্যাদি প্রাচীন ভাষাগুলি অনেকটাই আত্মনির্ভরশীল। আবার বাংলা ইংরেজির মত ভাষাগুলি অন্য ভাষা থেকেও শব্দ নেই। এই শব্দগুলি স্থায়ীভাবে ভাষায় থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগর সকলেই অন্য ভাষা থেকে শব্দ নিয়ে নিজেদের সাহিত্যে ব্যবহার করেছেন। এইসব শব্দও বাংলা ভাষায় কিছুদিন টিকে থাকবে। এখন আরবি থেকে ফরাসির গ্রহণ যোগ্যতা বেশি। উর্দু ও হিন্দি সাহিত্যে ফরাসি ভাষার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ইকবালের মতো কেউ কেউ অবশ্য উর্দুকে ফরাসির প্রভাব মুক্ত করতে চেষ্টা করেছেন। আবার পদাবলী কীর্তন বাঙালি হিন্দুই হোক অথবা মুসলমান তারা সব সময় স্বাধীনভাবে চলতে চায়। এই বিদ্রোহীসত্তা তাদের মধ্যে সব সময় কাজ করতে থাকে। সব মিলিয়ে শব্দ ও ভাষা ধার নেওয়া বা বর্জন করা এই দুই বিপরীতমুখী লড়াইয়ে সাহিত্য গড়ে ওঠে। তাই ‘নব নব সৃষ্টি’ নামকরণটি সার্থক হয়ে উঠেছে।
বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর নব নব সৃষ্টি (সৈয়দ মুজতবা আলী) নবম শ্রেণি বাংলা | MCQ Question Answer Class 9 Bengali wbbse
• ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১. ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশটির রচিয়তা হলেন–
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) বুদ্ধদেব বসু
(গ) সৈয়দ মুজতবা আলী
(ঘ) বেগম রোকেয়া
উত্তরঃ (গ) সৈয়দ মুজতবা আলী
২. সৈয়দ মুজতবা আলীর ছদ্মনাম–
(ক) ভানু সিং
(খ) ওমর খৈয়াম
(গ) মৌমাছি
(ঘ) শ্রীপান্থ
উত্তরঃ (খ) ওমর খৈয়াম
৩. ‘নতুন শব্দ প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ভাষা’–
(ক) অন্য ভাষা থেকে শব্দ দয়া করে
(খ) অন্য ভাষা থেকে শব্দ নিয়ে তাকে বদলে নেয়
(গ) নিজের ভান্ডারে খোঁজ করে
(ঘ) নতুন শব্দ তৈরি করে নেয়
উত্তরঃ (গ) নিজের ভান্ডারে খোঁজ করে
৪. প্রাচীন যুগের ভাষা হল—
(ক) ইংরেজি
(খ) ফার্সি
(গ) হিব্রু
(ঘ) ফরাসি
উত্তরঃ (গ) হিব্রু
৫. আইন-আদালত, খাজনা-খারিজ কোন্ ভাষার শব্দ ?
(ক) আরবি-উর্দু
(খ) সংস্কৃত-উর্দু
(গ) বাংলা-ফার্সি
(ঘ) আরবি-ফার্সি
উত্তরঃ (ঘ) আরবি-ফার্সি
৬. বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি কোনটি ?
(ক) পদাবলি কীর্তন
(খ) ভাটিয়ালি
(গ) বাউল
(ঘ) অনুবাদ
উত্তরঃ (ক) পদাবলি কীর্তন।
৭. এদের মধ্যে প্রাচীন যুগের ভাষা নয়—
(ক) গ্রিক
(খ) এসপেরান্তো
(গ) আবেস্তা
(ঘ) হিব্রু
উত্তরঃ (খ) এসপেরান্তো।
৮. ‘আতর’ শব্দটি–
(ক) তামিল শব্দ
(খ) ফারসি শব্দ
(গ) আরবি শব্দ
(ঘ) ইংরেজি শব্দ
উত্তরঃ (খ) ফারসি শব্দ।
৯. লেখালেখির ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর যে ভাষাটি ব্যবহার করতেন, তা হল—
(ক) আধুনিক বাংলা ভাষা
(খ) প্রাচীন অপভ্রংশ ভাষা
(গ) প্রাচীন মাগধী ভাষা
(ঘ) সাধু ভাষা
উত্তরঃ (ঘ) সাধু ভাষা।
১০. ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধাংশটির নাম–
(ক) ‘চতুরঙ্গ’
(খ) ‘বত্রিশ সিংহাসন’
(গ) ‘পঞ্চতঞ্চ’
(ঘ) ‘চাচা কাহিনী’
উত্তরঃ (ক) ‘চতুরঙ্গ।
১১. খাঁটি বাঙালি মেয়ের রূপ ধারণ করেছেন–
(ক) কুম্ভী
(খ) দ্রৌপদী
(গ) গান্ধারী
(ঘ) শ্রীরাধা
উত্তরঃ (ঘ) শ্রীরাধা।
১২. “সংস্কৃত শব্দ বাংলায় ঢুকেছে”, কারণ–
(ক) সংস্কৃত চর্চা এদেশে ছিল বলে
(খ) সংস্কৃত বাংলা ভাষার জননী বলে
(গ) বাংলায় এখনও বহু সংস্কৃত শব্দের প্রয়োগ রয়েছে,
(ঘ) সংস্কৃত ভাষা জানা আবশ্যক বলে
উত্তরঃ (ক) সংস্কৃত চর্চা এদেশে ছিল বলে।
১৩. যিনি আরবি-ফারসি শব্দের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা আহাম্মুখি বলে মনে করতেন, তিনি হলেন—
(ক) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসার
(খ) কাজী নজরুল ইসলাম
(গ) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়
(ঘ) সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
উত্তরঃ (গ) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়।
১৪. উর্দুকে ফার্সির অনুকরণ থেকে কিঞ্চিৎ
নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন—
(ক) কবি ইকবাল
(খ) নিদা ফজিল
(গ) আলি সরদার জাফরি
(ঘ) মির্জা গালিব
উত্তরঃ (ক) কবি ইকবাল।
১৫. নিম্নলিখিত ভাষা গুলির মধ্যে কোনটি একটি আত্মনির্ভরশীল ভাষা ?
(ক) বাংলা
(খ) ফরাসি
(গ) সংস্কৃত
(ঘ) ইংরেজি
উত্তরঃ (গ) সংস্কৃত।
১৬. নিম্নলিখিত ভাষাগুলির মধ্যে যেটি একটি আত্মনির্ভরশীল ভাষা নয়, সেটি হলো—
(ক) হিব্রু
(খ) গ্রিক
(গ) সংস্কৃতি
(ঘ) ইংরেজি
উত্তরঃ (ঘ) ইংরেজি।
১৭. বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ –
(ক) বিদ্যমান নয়
(খ) অল্প পরিমাণে বিদ্যমান
(গ) বিদ্যমান
(ঘ) বহুলরূপে বিদ্যমান
উত্তরঃ (গ) বিদ্যমান।
১৮. ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে উল্লিখিত ভাটিয়ালি হল একটি বিশেষ ধরনের—
(ক) জাতি
(খ) কবিত
(গ) নাচ
(ঘ) পল্লিগীতি
উত্তরঃ (ঘ) পল্লিগীতি।
১৯. রচনার ভাষা নির্ভর করে –
(ক) তার লেখকের মানসিকতার উপর
(খ) তার বিষয়বস্তুর উপর
(গ) রচনার সময়কালের উপর
(ঘ) পাঠকের চাহিদার উপর
উত্তরঃ (খ) তার বিষয়বস্তুর উপর।
২০. রান্নাঘর থেকে যা তাড়ানো মুশকিল, তা হলো—
(খ) আলু-বেগুন
(খ) পটল-কপি
(গ) আলু-কপি
(ঘ) বেগুন-উচ্ছে
উত্তরঃ (গ) আলু-কপি।
২১. ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে যে-মহাকাব্যের উল্লেখ আছে, তা হল—
(ক) রামায়ণ
(খ) ধর্মমতা
(গ) মহাভারত
(ঘ) সবকটি
উত্তরঃ (গ) মহাভারত।
২২. প্রাচীন যুগের সব ভাষাই–
(ক) আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ
(খ) পরনির্ভরশীল
(গ) বর্তমানে অপ্রচলিত
(ঘ) বহুল প্রচলিত
উত্তরঃ (ক) আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ।
২৩. ‘আবেস্তা’ ভাষাটি ব্যবহার করত—
(ক) গ্রিকরা
(খ) ইহুদিরা
(গ) আরবদেশীয়রা
(ঘ) জরাথুস্ট্রিয়রা
উত্তরঃ (ঘ) জরাথুস্ট্রিয়রা।
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর নব নব সৃষ্টি (সৈয়দ মুজতবা আলী) নবম শ্রেণি বাংলা | Very Short Answer Type Question Answer Class 9 Bengali wbbs
• কম-বেশী ১৫টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-১
১. লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী’র মতে বর্তমান যুগের কোন্ কোন্ ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয় ?
উত্তরঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী’র মতে বর্তমান যুগের ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়।
২. নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষায় আরবি ফারসি শব্দ ব্যবহার করেছেন তার কী কী উদাহরণ দিয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলী ?
উত্তরঃ নজরুল ইসলাম ‘ইনকিলাব’ এবং ‘শহীদ’ প্রভৃতি আরবি-ফারসি শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহার করেছেন।
৩. কোনাে নতুন চিন্তা বা অনুভূতি বােঝানাের জন্য নবীন শব্দের প্রয়ােজন হলে সংস্কৃত ভাষা কী করে ?
উত্তরঃ নতুন চিন্তা বা অনুভূতি বােঝাতে সংস্কৃত তার নিজের ভাণ্ডারেই কোনাে ধাতু বা শব্দের সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন শব্দ তৈরির চেষ্টা করে।
৪. “প্রাচীন যুগের সব ভাষাই তাই”—প্রাচীন যুগের কোন্ কোন্ ভাষার কথা লেখক উল্লেখ করেছেন ?
উত্তরঃ লেখক প্রাচীন যুগের সংস্কৃত, হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা এবং কিছুটা পরবর্তীযুগের আরবি ভাষার কথা বলেছেন।
৫. “সে সম্বন্ধেও কারও কোনাে সন্দেহ নেই।’— কোন্ বিষয়ে সন্দেহ নেই ?
উত্তরঃ শিক্ষার মাধ্যমরূপে ইংরেজির বদলে বাংলা গ্রহণ করলে প্রচুর পরিমাণে ইউরােপীয় শব্দ বাংলায় প্রবেশ করবে। এ বিষয়ে কারও কোনাে সন্দেহ নেই।
৬. সংস্কৃতকে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলতে লেখকের আপত্তি নেই কেন ?
উত্তরঃ কারণ সংস্কৃত ভাষা অন্য ভাষার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের ভাণ্ডারে খোঁজ করার মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরির চেষ্টা করে।
৭. পাঠান-মােগল যুগে আরবি ও ফারসি থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়েছিল কেন?
উত্তরঃ পাঠান-মােগল যুগে আইন-আদালত, খাজনাখারিজ নতুন করে দেখা দেওয়ায় আরবি-ফারসি ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়েছিল।
৮. “চেষ্টাটার ফল আমি হয়তো দেখে যেতে পারব না’— কোন চেষ্টার কথা বোঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ হিন্দি ভাষা থেকে আরবি, ফারসি বা ইংরেজির মতাে ভাষা দূর করার চেষ্টার কথা বােঝানাে হয়েছে।
৯. ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী কোন্ প্রশ্নকে অবান্তর বলেছেন ?
উত্তরঃ বিদেশি শব্দগ্রহণ ভালাে না মন্দ– এই প্রশ্নকে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী অবান্তর বলেছেন।
১০. ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে লেখক রান্নাঘর থেকে কী কী তাড়ানাে মুশকিল বলেছেন ?
উত্তরঃ ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে লেখক রান্নাঘর থেকে আলু-কপি এ জাতীয় বিদেশি সবজি তাড়ানাে মুশকিল বলেছেন ।
১১.“হিন্দি উপস্থিত সেই চেষ্টাটা করছেন’— হিন্দি কোন্ চেষ্টা করছে ?
উত্তরঃ হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার কথা এখানে বলা হয়েছে।
১২. ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে কোন্ কোন্ ভাষাকে লেখক সৈয়দ মুজতবাআলী বলেছেন ‘আত্মনির্ভরশীল’ ?
উত্তরঃ ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে লেখক প্রাচীন যুগের হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা,সংস্কৃত এবং আরবি ভাষাকে ‘আত্মনির্ভরশীল’ বলেছেন।
১৩. “নূতন আমদানিও বন্ধ করা যাবে না।”— কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এরূপ বলেছেন ?
উত্তরঃ বিদেশি দ্রব্যের ব্যবহারের মতাে বিদেশি ভাষাও মাতৃভাষায় থাকবে এবং তাদের আসা বন্ধ করা যাবে না— এই প্রসঙ্গে লেখক এ কথা বলেছেন ।
১৪. “সেগুলাে নিয়ে অত্যধিক দুশ্চিন্তা করার কোনাে কারণ নেই।”— কোন্ বিষয়ে দুশ্চিন্তা করা নিষ্প্রয়ােজন ?
উত্তরঃ পাের্তুগিজ, ফরাসি, স্প্যানিশ ইত্যাদি শব্দ বাংলা ভাষায় এত কম এসেছে যে তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনাে কারণ নেই বলে লেখক মনে করেছেন।
১৫. “বহু সাহিত্যিক উঠে পড়ে লেগেছেন”— লেখক কোন্ ভাষার সাহিত্যিকদের কথা বলেছেন ?
উত্তরঃ লেখক হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকদের কথা বলেছেন।
১৬. “বহু সাহিত্যিক উঠে পড়ে লেগেছেন”— বহু সাহিত্যিক কোন্ কাজে তৎপর হয়েছেন ?
উত্তরঃ হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকরা হিন্দি ভাষা থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ দূর করার জন্য তৎপর হয়েছেন।
১৭. ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে কয়েকজন বাঙালি সাহিত্যিক ও পণ্ডিত ব্যক্তির নাম এসেছে, তারা কারা ?
উত্তরঃ আলােচ্য রচনাংশে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বঙ্কিমচন্দ্র, আলাল (প্যারীচাঁদ) ও হুতােম (কালীপ্রসন্ন)-এর নাম পাওয়া যায়।
১৮. ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে ব্যবহৃত ‘আলাল’ ও ‘হুতােম’ কাদের লেখা, গ্রন্থ দুটি কী কী ?
অথবা,
‘আলাল’ ও ‘হুতােম’-এর ভাষা— ‘আলাল’ ও ‘হুতােম’ কী ?
উত্তরঃ ‘আলাল’ হল আলালের ঘরের দুলাল, লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র। ‘হুতােম’ হল হুতােম প্যাঁচার নকশা, লেখক কালীপ্রসন্ন সিংহ।
১৯. হিন্দি ভাষা সাহিত্যের বঙ্কিম কাকে বলা হয় ?
উত্তরঃ হিন্দি ভাষাসাহিত্যের বঙ্কিম বলা হয় বিখ্যাত সাহিত্যিক মুন্সী প্রেমচাঁদকে।
২০. কোন্ পত্রিকার সম্পাদকীয় রচনার ভাষায় গাম্ভীর্য আছে বলে লেখক মনে করেন ?
অথবা,
বসুমতীর সম্পাদকীয় রচনার ভাষা কেমন ছিল ?
উত্তরঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, বসুমতী পত্রিকার সম্পাদকীয় রচার ভাষায় গাম্ভীর্য আছে৷
২১. ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে লেখক কোন্ উর্দু কবির কথা উল্লেখ করেছেন ?
উত্তরঃ ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে লেখক উর্দু কবি ইকবালের কথা উল্লেখ করেছেন।
২২. বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ ঢুকেছে তার মধ্যে কোন্ কোন্ ভাষা প্রধান বলেছেন লেখক ?
উত্তরঃ বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ প্রবেশ করেছে তার মধ্যে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি অন্যতম।
২৩.“সে ভাষার শব্দ বাংলাতে ঢুকবেই।”— কোন্ ভাষার শব্দ ?
উত্তরঃ বাংলা ছাড়া অন্য যে-কোনাে ভাষার চর্চা আমরা করি না কেন সে ভাষার শব্দ বাংলাতে ঢুকবেই।
২৪. বিস্তর সংস্কৃত শব্দ বাংলায় প্রবেশের কারণ কী ?
উত্তরঃ প্রাচীন যুগ থেকেই বাংলাদেশে সংস্কৃত ভাষার চর্চা ছিল। ফলে বিস্তর সংস্কৃত শব্দ বাংলায় প্রবেশ করেছে।
২৫. “যতদিন থাকবে ততদিন আরও ঢুকবে বলে আশা করতে পারি।’– যতদিন কী থাকার কথা বলেছেন লেখক ?
উত্তরঃ বাংলাদেশে যতদিন সংস্কৃত ভাষার চর্চা চলবে ততদিন বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দের প্রবেশও চলতে থাকবে।
২৬. স্কুল-কলেজ থেকে যে আমরা সংস্কৃতচর্চা উঠিয়ে দিতে চাই না তার অন্যতম প্রধান কারণ কী বলেছেন লেখক ?
উত্তরঃ বাংলা অনেকাংশেই সংস্কৃত ভাষার ওপর নির্ভরশীল, তাই শিক্ষাক্ষেত্রেও সংস্কৃত ভাষার চর্চা বন্ধ করা হয়নি।
২৭. কোন্ বিশেষ বিশেষ বিদ্যাচর্চায় ইংরেজি অবশ্যই প্রয়ােজন বলে লেখক মনে করেন ?
উত্তরঃ দর্শন, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যার মতাে বিদ্যাচর্চায় ইংরেজি অবশই প্রয়ােজন বলে লেখক মনে করেন।
২৮. “এই দুই ভাষা থেকে ব্যাপকভাবে আর নূতন শব্দ বাংলাতে ঢুকবে।”— কোন্ দুই ভাষা’র কথা এখানে বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে সৈয়দ মুজতবা আলী দুই ভাষা বলতে আরবি এবং ফারসি ভাষার কথা বলেছেন।
২৯. হিন্দি গদ্যের ওপর কোন্ ভাষার প্রভাব পড়ার কথা বলেছেন লেখক ?
উত্তরঃ হিন্দি গদ্যের ওপর ফারসি ভাষার প্রভাব পড়ার কথা বলেছেন লেখক।
৩০. ভারতীয় আর্যরা কোন্ ভাষার সৌন্দর্যে বেশি অভিভূত হয়েছিল ?
উত্তরঃ ভারতীয় আর্যরা ফারসি ভাষার সৌন্দর্যে বেশি অভিভূত হয়েছিল।
৩১. উর্দু সাহিত্যের মূলসুর কোন ভাষার সঙ্গে বাঁধা বলেছেন লেখক ?
উত্তরঃ উর্দু সাহিত্যের মূলসুর ফারসির সঙ্গে বাঁধা বলেছেন লেখক।
৩২. ইরানে নবীন ফারসি ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল কীভাবে ?
উত্তরঃ আর্য ইরানি ভাষা এবং সেমিতি আরবি ভাষার সংঘর্ষে ইরানে নবীন ফারসি ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল।
৩৩. “ধর্ম বদলালেই জাতির চরিত্র বদলায় না।”– লেখক কেন এরকম বলেছেন ?
উত্তরঃ সত্য-শিব-সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় যারা বাধা দেয়, বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলমানরা তাদের বিরােধী। তাই লেখক আলােচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
৩৪. ইরানে আর্য-ইরানি ভাষা ও সেমিতি আরবি ভাষার সংঘর্ষে ভারতবর্ষে কোন্ কোন্ সাহিত্যের সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ ইরানে আর্য ইরানি ভাষা ও সেমিতি আরবি ভাষার সংঘর্ষে ভারতবর্ষে সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি সাহিত্যের সৃষ্টি হয়।
৩৫. “ভারতবর্ষীয় এ তিন ভাষা ফার্সির মতাে নব নব সৃষ্টি দিয়ে ঐশ্বর্যশালী সাহিত্যসৃষ্টি করতে পারল না।”— ভারতবর্ষের এ তিন ভাষা কী কী ?
উত্তরঃ ‘ভারতবর্ষীয় এ তিন ভাষা’ বলতে সিন্ধি, উর্দু এবং কাশ্মীরি ভাষাকে বােঝানাে হয়েছে।
৩৬. কে উর্দুকে ফারসির অনুকরণ থেকে নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন ?
উত্তরঃ উর্দু ভাষার কবি ইকবাল উর্দু ভাষাকে ফারসির অনুকরণ থেকে কিঞ্চিৎ নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
৩৭. সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি কোনটি ?
উত্তরঃ সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি হল পদাবলি কীর্তন।
৩৮. “এ সাহিত্যের প্রাণ এবং দেহ উভয়ই খাঁটি বাঙালি।”– এ সাহিত্য বলতে কোন্ সাহিত্যকে বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ ‘নব নব সৃষ্টি’ রচনাংশে পদাবলি কীর্তন সম্পর্কে আলােচ্য উদ্ধৃতাংশটি ব্যবহৃত হয়েছে।
ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর নব নব সৃষ্টি (সৈয়দ মুজতবা আলী) নবম শ্রেণি বাংলা | Descriptive Short Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse
• কমবেশি ৬০টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৩
১. “সংস্কৃত ভাষা আত্মনির্ভরশীল’- সংস্কৃত ভাষা সম্পর্কে এ কথাবলা হয়েছে কেন ?
উত্তরঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলেছেন কারণ কোনো নতুন চিন্তা, অনুভূতি প্রকাশের জন্য নতুন শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ভাষা তা অন্য ভাষা থেকে ধার করার কথা কখনওই ভাবে না। পরিবর্তে নিজের শব্দভাণ্ডারে তার খোঁজ করে। নিজের ভাণ্ডারে থাকা ধাতু বা শব্দ খোঁজে, যার সামান্য অদলবদল করে কিংবা পুরোনো ধাতু দিয়েই নতুন শব্দটি তৈরি করা যেতে পারে। এই কারণেই সংস্কৃতকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলা হয়েছে।
২. ‘বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা আত্মনির্ভরশীল নয়।’– ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কীভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন ?
উত্তরঃ প্রাচীন যুগের সংস্কৃত ভাষা তো বটেই, তা ছাড়া হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা প্রভৃতি সব ভাষাই ছিল আত্মনির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়। কারণ, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থেকে শব্দ গৃহীত হয়েছে ও হচ্ছে। পাঠান-মোগল শাসন যুগে আইন-আদালত, খাজনাখারিজ ব্যাপারে নতুন নতুন শব্দের জন্য আরবি ও ফারসি ভাষা থেকে শব্দ নিতে হয়েছিল। তার পরবর্তী ইংরেজ শাসন যুগে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে নিতে হয়েছে কিংবা অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ নিতে হচ্ছে। ইংরেজির মাধ্যমে প্রচুর ইউরোপীয় শব্দ আমাদের বাংলা ভাষায় ঢুকেছে। কাজেই বর্তমান বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়।
৩. “বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে প্রশ্ন অবান্তর”– কেন লেখক কথা বলেছেন আলোচনা করো।
উত্তরঃ ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে লেখক বলেছেন বাংলা ভাষা কখনোই আত্মনির্ভরশীল নয়। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে আমরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষা থেকে শব্দ নিয়েছি এবং সেই প্রক্রিয়া এখনও বজায় রয়েছে। পাঠান ও মোগল যুগে আইন-আদালত ইত্যাদি প্রসঙ্গে প্রচুর আরবি ও ফারসি শব্দ গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তী যুগে ইংরেজি ভাষা থেকেও এই শব্দ নেওয়া হয়েছে। তার পরিমাণ এতটাই বেশি যে, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ হয় না। লেখকের মতে, শিক্ষার মাধ্যম রূপে ইংরেজিকে বর্জন করে বাংলা গ্রহণ করার পরে এই প্রবণতা আরও বাড়বে। ফলে বিদেশি শব্দের আমদানি করার ভাবনা যখন বন্ধ করা যাবে না, সেক্ষেত্রে তার ভালোমন্দ নিয়ে ভাবা নিতান্তই অর্থহীন।
৪. ‘ধর্ম বদলালেই জাতির চরিত্র বদলায় না।’– বক্তার এর উত্তেজিত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতিটি প্রবন্ধকার সৈয়দ
মুজতবা আলীর লেখা প্রবন্ধ ‘নব নব সৃষ্টির
অংশবিশেষ। বাঙালি হিন্দুর ভিতরেই বিদ্রোহ কেবল সীমাবদ্ধ নয়। বাঙালির মধ্যে মুসলমান ধর্মের লোকও আছে। তারা হিন্দু থেকে মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। কিন্তু বাঙালি হিন্দুর মতো বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও একই বিদ্রোহের
প্রবণতা বিদ্যমান। ধর্ম পরিবর্তনের ফলে চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি।
৫. ‘স্কুল-কলেজ থেকে আমরা সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দিতে চাই না’– ‘স্কুল-কলেজ থেকে সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে না দেবার কারণ প্রসঙ্গে বক্তা কী বলেছেন ?
উত্তরঃ অংশটি মুজতবা আলীর ‘নব নব সৃষ্টি’ নামক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। সংস্কৃত ভাষা অত্যন্ত উন্নত ও সমৃদ্ধশালী। নতুন শব্দ তৈরির ব্যাপারে অসামান্য দক্ষতা আছে এই ভাষার। প্রাচীনকাল থেকে এদেশে সংস্কৃত চর্চা ছিল বলে বহু সংস্কৃত শব্দ বাংলায় ঢুকেছে, ঢুকছে এবং আগামীতে যতদিন এ ভাষা থাকবে ততদিন ঢুকবে। স্কুল-কলেজে বাংলাতে এখনও আমাদের প্রচুর সংস্কৃত শব্দের প্রয়োজন। লেখকের মতে, ‘সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দিলে আমরা অন্যতম প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হব।’
৬. ‘ভাটিয়ালির নায়িকা, বাউলের ভক্ত, মুরশিদিয়ার আশিক ও পদাবলির শ্রীরাধা একই চরিত্র’– ভাটিয়ালি, বাউল, মুরশিদিয়া ও শ্রীরাধার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ
ভাটিয়ালি : বাংলাদেশের মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে নৌকার মাঝি-মাল্লাদের গান। উল্লেখযোগ্য লোকসংগীত।
বাউল : বাউল সম্প্রদায়ের রচিত গান। একতারা, খঞ্জনি, ডুগি, খমক ইত্যাদি যন্ত্রের সঙ্গে এই গান গাওয়া হয়
মুর্শিদি : মুর্শিদি হল গুরুবাদী মুসলমান সম্প্রদায়ের ভাব ও গান।
শ্রীরাধা : রাধা হলেন কৃষপ্রেমিকা ও গোপবালা। পিতা বৃষভানু, মাতা কলাবতী ও স্বামী আয়ন ঘোষ। তিনি ঈশ্বর জ্ঞানে কৃষ্ণকে মনপ্রাণ সমর্পণ করেন।
৭. ‘সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দিলে আমরা অন্যতম প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হব।’– লেখক এ কথা বলেছেন কেন ?
উত্তরঃ নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেন আমরা যে ভাষার চর্চা বেশি করি তার শব্দ আমাদের বাংলাতে ঢোকে বেশি। সংস্কৃত বেশি চর্চার ফলে বাংলায় বিস্তর সংস্কৃত এককালে ঢুকেছে। স্কুল-কলেজের পাঠ্য বিষয় থেকে সংস্কৃত তুলে না দেওয়াই শ্রেয়। কারণ বাংলা ভাষাতে এখনও সংস্কৃত শব্দের প্রয়োজন আছে। লেখক সেজন্য বলেছেন যে, সংস্কৃত চর্চা উঠিয়ে দেওয়ার অর্থ হল বাঙালির অন্যতম খাদ্য থেকে বঞ্চিত হওয়া।
৮. আলাল’, ‘হূতোম’ ও ‘শংকরদর্শন’-এর পরিচয় দাও।
উত্তরঃ ‘আলাল’ শব্দটি ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে। প্যারীচাঁদ মিত্রের ছদ্মনাম হল ‘টেকচাঁদ ঠাকুর। তিনি ছদ্মনামে চলিত বাংলায় ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ‘আলালের ঘরের দুলাল’ উপন্যাসটি লেখেন।
কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ গদ্যরচনার সংক্ষিপ্ত নাম ‘হুতোম। কলকাতার কথ্য বাংলায় লেখা সেই আমলের কলকাতার বাবু চরিত্রের বর্ণনা নিয়ে লেখা ১৮৬১-৬২ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়।
শংকরাচার্য বিশ্বের সেরা দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম। অদ্বৈতবাদ নিয়ে তাঁর দর্শন। লেখক তাঁর দর্শনকে বলেছেন শংকরদর্শন।
৯. বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তাৱ পদাবলি কীর্তনে।– এই মন্তব্যের স্বপক্ষে লেখকের বক্তব্য লেখো।
উত্তরঃ সৈয়দ মুজতবা আলী বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্য সম্পর্কে মন্তব্য করেন যে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি তার পদাবলি কীর্তনে। পদাবলি সাহিত্যের দেহ ও প্রাণ দুই-ই খাঁটি বাঙালি। পদাবলি সাহিত্যের কানু বা কানাই মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণের খাঁটি বাঙালি রূপ। পুরাণ ও ভাগবতের শ্রীরাধা পদাবলি সাহিত্যে খাঁটি বাঙালি মেয়ে। ভাটিয়ালির নায়িকা, বাউলের ভক্ত, মুরশিদিয়ার আশিক আর পদাবলির শ্রীরাধা একই চরিত্র।
১০. ‘বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান’– লেখকের অনুসরণে আলোচনা করো।
উত্তরঃ প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেন বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান। সে রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্য যাতেই যখনই সত্য-শিব-সুন্দরের খোঁজ পেয়েছে, তখনই সে সেটা গ্রহণ করতে চেয়েছে। কেউ তখন তাকে ‘গতানুগতিক পন্থা’ বা ‘প্রাচীন ঐতিহ্য’-এর দোহাই দিয়ে সে চেষ্টায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেই সে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। বিদ্রোহ উচ্ছঙ্খলতায় পরিণত হলে তার বিরুদ্ধে আবার বিদ্রোহ করেছে। এই বিদ্রোহের প্রবণতা কিন্তু হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সব বাঙালির মধ্যেই বিদ্যমান। ধর্ম পালটালেও জাতিগত চরিত্র থেকেছে অপরিবর্তিত।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নব নব সৃষ্টি (সৈয়দ মুজতবা আলী) নবম শ্রেণি বাংলা | Essay Type Question Answer Class 9 Bengali wbbse
• কমবেশি ১৫০ শব্দের মধ্যে উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান-৫
১. “প্রাচীন যুগের সব ভাষাই তাই।”– কোন্ কোন্ ভাষার উল্লেখ করে লেখক কেন এমন মন্তব্য করেছেন ? এ প্রসঙ্গে বর্তমান যুগের কোন্ দুটি ভাষা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন লেখো ? (বই পৃঃ ১৮)
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর রচিত নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের আলোচ্য অংশে সংস্কৃত এবং তার সঙ্গে হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা এবং কিছুটা আধুনিক আরবি ভাষার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন যুগের অধিকাংশ ভাষাই নতুন চিন্তা-ভাবনা, নতুন বিষয় বোঝাতে নতুন শব্দের প্রয়োজন হলে তা নিজ শব্দভাণ্ডারের ধাতু বা শব্দ দ্বারাই তৈরি করার চেষ্টা করেছে। অন্য ভাষা থেকে ঋণ নেওয়ার কথা ভাবে না। বিদেশি শব্দ ব্যবহার করলেও তা অতিসামান্য। তাই লেখক প্রাচীন ভাষাগুলিকে আত্মনির্ভরশীল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বলেছেন।
ভাষার স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রসঙ্গেই লেখক বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা ভাষার উল্লেখ করেছেন।
অতিরিক্ত শব্দগ্রহণঃ আধুনিক কালের ভাষা ইংরেজি এবং বাংলা অন্যান্য ভাষা থেকে অতিরিক্ত শব্দ গ্রহণ করে নিজের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার ও প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করে।
আরবি-ফারসি শব্দের প্রবেশঃ পাঠান, মোগল যুগে এভাবেই বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ প্রবেশ করেছে এবং স্থানলাভ করেছে। বাংলা পরবর্তীকালে ইংরেজি থেকে এবং ইংরেজির মাধ্যমে অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করেছে। এই কারণে ইংরেজি ও বাংলা, লেখকের মতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা নয়।
২. “বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা আত্মনির্ভরশীল নয়”– আত্মনির্ভরশীল ভাষা কাকে বলে ? লেখকের এরকম মনে হওয়ার কারণ কী ? (বই পৃঃ ১৮)
উত্তরঃ আত্মনির্ভরশীল ভাষা– লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর নব নব সৃষ্টি রচনায় বলেছেন যে, ভাষার আত্মনির্ভরশীলতার অর্থ ভাষার স্বয়ংসম্পূর্ণতা। সংস্কৃতকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়ে তিনি বলেছেন যে এই ভাষায় কোনো নতুন চিন্তা, অনুভূতি, কিংবা বস্তুকে বোঝানোর জন্য শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত তা নিজের ভাণ্ডারেই সন্ধান করে। প্রয়োজনে এমন কোনো ধাতু বা শব্দকে খুঁজে নিতে চায় যা সামান্য অদল-বদল করে বা পুরোনো ধাতুর সাহায্যেই একটি নতুন শব্দ নির্মাণ করে নেওয়া যায়। তাই সংস্কৃত ভাষা একটি আত্মনির্ভরশীল ভাষা হয়ে উঠতে পেরেছে।
লেখকের এরকম মনে হওয়ার কারণ ভাষার স্বয়ংসম্পূর্ণতা প্রসঙ্গেই লেখক বর্তমান যুগের ইংরেজি ও বাংলা ভাষার উল্লেখ করেছেন।
অতিরিক্ত শব্দগ্রহণঃ আধুনিক কালের ভাষা ইংরেজি এবং বাংলা অন্যান্য ভাষা থেকে অতিরিক্ত শব্দ গ্রহণ করে প্রয়োজন মেটানোর এবং নিজের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে।
আরবি-ফারসি শব্দের স্থানলাভঃ পাঠান, মোগল যুগে এভাবেই বাংলা ভাষায় প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ স্থানলাভ করেছে। বাংলা পরবর্তীকালে ইংরেজি থেকে এবং ইংরেজির মাধ্যমে অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করেছে। এই কারণে ইংরেজি ও বাংলা লেখকের মতে স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা নয়।
৩। বিদেশি শব্দ ব্যবহার বিষয়ে লেখক মুজতবা আলীর ভাবনার পরিচয় দাও।
অথবা,
“বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে প্রশ্ন অবান্তর।”– কে এমন মনে করেন ? তার এমন মনে হওয়ার কারণ কী লেখো।
অথবা,
“বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে প্রশ্ন অবান্তর।”– মন্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও। (বই পৃঃ ১৯)
উত্তরঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘নব নব সৃষ্টি রচনাংশে বর্তমানে বিদেশি শব্দ নেওয়া ভালো না মন্দ সে বিষয়ে প্রশ্ন অবান্তর বলে মনে করেন।
লেখকের মতে, দৈনন্দিন জীবনে আলু-কপি কিংবা বিলিতি ওষুধের মতই আমাদের ভাষাতেও বিদেশি শব্দ থেকে যাবে এবং ভবিষ্যতে তা আমদানি করাও বন্ধ করা যাবে না। প্রাচীন কাল থেকেই বাংলা ভাষায় সংস্কৃত, আরবি, ফারসি প্রভৃতি শব্দ অনায়াসে মিশেছে। ইংরেজি ভাষার বদলে বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালু করার ফল হাতেনাতে পাওয়া গেছে। কেউ কেউ জোর করে বিদেশি শব্দ বর্জনের চেষ্টা করলেও মুজতবা আলী জানিয়েছেন, বিখ্যাত লেখকেরা অনেকেই সাদরে বিদেশি শব্দ গ্রহণ করেছেন। যেমন রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে লিখেছেন আবু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে’… ইত্যাদি। এখানে ‘আব্রু, ইজজৎ’, ইমান’ আরবি শব্দ। আবার নজরুল ইসলামই বাংলায় আরবি শব্দ ইনকিলাব ঢুকিয়ে গিয়েছেন। বিদ্যাসাগর সাধু গদ্যে বিদেশি শব্দ ব্যবহার না করলেও, অসাধু রচনায় আরবি, ফারসি প্রচুর ব্যবহার করেছেন। নিষ্ঠাবান পণ্ডিত হলেও হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বিদেশি শব্দ বিশেষত আরবি-ফারসির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করাকে বোকামি মনে করতেন। এমনকি হিন্দি সাহিত্যে প্রেমচন্দ্রও বিস্তর আরবি-ফারসি ভাষা ব্যবহার করেছেন। এইসব দৃষ্টান্ত দিয়ে প্রাবন্ধিক বুঝিয়ে দিয়েছেন বিদেশি শব্দের ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে প্রশ্ন তোলাই অবান্তর।
৪. “ইংরেজি চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।”– বক্তা কে ? এরূপ উক্তির কারণ কী ?
উত্তরঃ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধের লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী।
লেখকের মতে বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল ভাষা নয়। আরবি-ফারসির মতোই ইংরেজির থেকেও আমরা প্রচুর শব্দ নিয়েছি। ভাষাকে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য অন্য ভাষাকে ত্যাগ করার চেষ্টা একেবারে বিরল ঘটনা নয়। হিন্দিতে এ চেষ্টা হয়েছে। আবার বিখ্যাত লেখকদেরও দেখা গিয়েছে যে, তাঁরা অন্য পথে হেঁটেছেন। বাংলা ভাষাতেই রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এর উদাহরণ। লেখক দেখিয়েছেন যে বাংলা ভাষায় যে শব্দসমূহ এসেছে তার মধ্যে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি প্রধান। এক্ষেত্রে ইংরেজির ভূমিকা কোনোভাবেই এড়ানো সম্ভব নয়। প্রয়োজনীয় বাংলা শব্দের অভাব– দর্শন, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থ কিংবা রসায়নবিদ্যা ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় শব্দ বাংলায় যথেষ্ট নেই। রেল ইঞ্জিন চালানোর প্রযুক্তি বিষয়ে বাংলায় কোনো বই নেই। এখানে ইংরেজির উপরে নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এইসব কারণেই লেখকের মনে হয়েছে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য ইংরেজির চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।
৫। ধর্ম বদলালেই জাতির চরিত্র বদলায় না।’– উৎস ও প্রসঙ্গ নির্দেশ করে উদ্ধৃতির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
অথবা,
“ধর্ম বদলালেই জাতির চরিত্র বদলায় না।”– নব নব সৃষ্টি রচনা অবলম্বনে এই উক্তির সত্যতা বিচার করো।
উত্তরঃ আলোচ্য উদ্ধৃতিটি প্রখ্যাত প্রবন্ধকার সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধের শেষে সৈয়দ মুজতবা আলী বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি ও বাঙালি চরিত্রের বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। রাজনীতি, ধর্ম, সাহিত্য– বাঙালি যেখানে যখনই সত্য-শিব-সুন্দরের খোঁজ পেয়েছে তখনই তা সাদরে গ্রহণ করতে চেয়েছে।
কেউ গতানুগতিকতা বা প্রাচীন ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে তাতে বাধা দিতে গেলে বাঙালি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। আবার সেই বিদ্রোহই যদি উচ্ছৃঙ্খলতা বা নৈরাজ্যের দিকে যায় তখন বাঙালি তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে। অর্থাৎ সত্য-শিব-সুন্দরের ধারণাকে বাঙালি চিরন্তন বলে গ্রহণ করেছে।
লেখক লক্ষ করেছেন যে এই রুচি বা জীবনাদর্শকে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে হিন্দু বা মুসলমানদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আর এই বিদ্রোহে বাঙালি মুসলমানরাও যোগ দিয়েছে। তার কারণ জাতি, ধর্ম বদলে গেলেও জাতিসত্তা একই থেকে যায়। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটি সমগ্র বাঙালি জাতিরই, কোনো বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নয়। লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, ধর্ম বদলালে জাতির চরিত্র বদলায় না। বাঙালি মুসলমানরাও বাঙালি জাতিসত্তারই অংশ। তার ধর্ম আলাদা হলেও এদেশের জল হাওয়াতেই তার চেতনা ও জীবনাদর্শের বিকাশ। তাই ধর্ম বদলে গেলেও মনোভাবের কোনো বদল বাঙালি মুসলমানের মধ্যে ঘটেনি।
৬. “ফল যদি ভালো হয় তখন তাঁরা না হয় চেষ্টা করে দেখবেন।”— কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এরূপ বলেছেন ? বাংলা সাহিত্যিকদের নিয়ে এই প্রসঙ্গে লেখক কী বলেছেন ?
উত্তরঃ সৈয়দ মুজতবা আলী ‘নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধে’ ভাষায় বিদেশি শব্দের ব্যবহার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকদের একটি প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছেন। হিন্দি ভাষাকে আরবি, ফারসি, ইংরেজি শব্দ থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্য নিয়ে হিন্দি সাহিত্য রচনায় ব্রতী হয়েছেন বেশ কিছু হিন্দি সাহিত্যিক। তাঁদের এই চেষ্টার ফল ভালো না খারাপ হবে, তা বিচার করার চেয়েও বড়ো কথা হল এই যে তাঁরা এই জাতীয় একটি চেষ্টা শুরু করেছেন।
বাংলা সাহিত্যিকদের নিয়ে লেখকের অভিমত হলো বাংলা সাহিত্যিকরা অনায়াসেই বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দের মিশ্রণ ঘটিয়েছেন। নতুন নতুন সাহিত্য সৃষ্টি করতে হলে ভাষা বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক হবে এটাই মূল কথা। তাই রবীন্দ্রনাথ খুব স্বচ্ছন্দেই আরবি-ফারসি ভাষার সংমিশ্রণে লিখেছেন, আব্রু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে। নজরুল ইসলামও ইনকিলাব বা শহিদ এই শব্দগুলি সহজেই তাঁর লেখায় বাংলা ভাষার মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছেন। বিদ্যাসাগরও তাঁর চলিত ভাষায় লেখা রচনার মধ্যে আরবি-ফারসি শব্দের ব্যবহার করেছেন। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরবি-ফারসি শব্দের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করাকে মূর্খামি বলে মনে করতেন।
৭. “রচনার ভাষা তার বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে।”– মন্তব্যটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর নব নব সৃষ্টি পাঠ্য প্রবন্ধ থেকে নেওয়া। রচনার গাম্ভীর্য, আভিজাত্য, চটুলতার সঙ্গে ভাষার ব্যবহার গভীরভাবে জড়িত।
বিদেশি ভাষার প্রয়োজনীয়তা – নতুন শব্দ তৈরি বা বিষয়ের মধ্য দিয়ে নতুন চিন্তা ও অনুভূতি ফুটিয়ে তুলতে গেলে বিদেশি ভাষার প্রয়োজন। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষা বাতিল করার ফলে বাংলা ভাষায় বিদেশি শব্দ আরও বেশি করেই প্রবেশ করেছে। তবে বিদেশি শব্দ কোনোভাবেই লেখার মাধুর্যকে নষ্ট করতে পারে না যদি তা বিষয়কেন্দ্রিক হয়। বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার – রবীন্দ্রনাথ আরবি-ফারসিকে স্বাগত জানিয়ে খুব স্বচ্ছন্দেই লিখেছেন, আব্রু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে, ইমান দিয়ে, বুকের রক্ত দিয়ে। নজরুল ইসলামও ইনকিলাব, শহিদ, প্রভৃতি শব্দ বাংলায় অনায়াসেই ব্যবহার করেছেন। শংকরদর্শন-এর আলোচনায় যে গাম্ভীর্য ও আভিজাত্য রয়েছে, তা সংস্কৃত শব্দ ব্যবহারেই সঠিক রূপ লাভ করে।
বসুমতী পত্রিকার সম্পাদকীয় ভাষাও একইরকম গম্ভীর প্রকৃতির। কিন্তু বাঁকা চোখে পত্রিকার ভাষায় চটুলতা তার বিষয় উপযোগী। আবার রেলের ইঞ্জিন কীভাবে চালাতে হয় বা বিজ্ঞানচর্চা ও দর্শনের বিষয় জানতে ইংরেজি ভাষার বিকল্প নেই। ইতিকথা – সুতরাং সঠিক ভাষা প্রয়োগ বিষয়বস্তুর মূলভাবকে তুলে ধরতে পারে।
৮. বাংলায় যেসব বিদেশি ভাষার শব্দ ঢুকেছে তার মধ্যে কোন্ কোন্ ভাষাকে লেখক প্রধান বলেছেন ? এই প্রসঙ্গে সংস্কৃত ও ইংরেজি নিয়ে লেখক কী বলেছেন ?
অথবা,
বাংলা ভাষায় আগন্তুক শব্দ কোন্গুলি ? প্রসঙ্গক্রমে সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষা নিয়ে লেখকের বক্তব্য স্পষ্ট করো।
উত্তরঃ লেখকের মতে বাংলায় আগত প্রধান বিদেশি ভাষাসমূহ – সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর নব নব সৃষ্টি রচনাংশে জানিয়েছেন যে বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ প্রবেশ করেছে সেগুলির মধ্যে আরবি, ফারসি ও ইংরেজি ভাষার শব্দই প্রধান
সংস্কৃত ও ইংরেজি সম্বন্ধে লেখকের অভিমত হলো একসময়ে ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশে সংস্কৃত ভাষার ব্যাপক চর্চা ছিল। কারণ সংস্কৃতই ছিল আদি ও মূল ভাষা। এখনও স্কুল-কলেজে সংস্কৃতচর্চা হয়। সংস্কৃত থেকে উৎপন্ন হওয়ার ফলে বাংলা ভাষায় সংস্কৃত ভাষার প্রভাব থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। সংস্কৃত শব্দ এখনও সামান্য হলেও বাংলা ভাষায় প্রবেশ করছে। সংস্কৃত ভাষাকে বাংলার মাতৃসম ভাষাই বলা হয়, তাই সংস্কৃতচর্চা বন্ধ করে দিলে বাংলা ভাষা এক স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। তাই লেখক এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আমরা অন্যতম প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হবো।
আধুনিক শিক্ষার ধারায় দর্শনশাস্ত্র, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা এবং বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার বিকল্প নেই। উদাহরণ হিসেবে লেখক বলেছেন যে রেলের ইঞ্জিন কী করে চালাতে হয়, সে বিষয়ে বাংলায় কোনো বই নেই। ফলে এই বিষয়টা বুঝতে হলে বাঙালিকে ইংরেজি ভাষারই আশ্রয় নিতে হয়। সুতরাং ইংরেজি চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি। — এ কথা বলাই যায়।