পাগলা গনেশ
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
লেখক পরিচিতিঃ
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (১৯৩৫): জন্ম ব্রহ্মপুত্র নদীর ধারে ময়মনসিংহে। পিতার রেলে চাকরির সূত্রে আশৈশব যাযাবর জীবন দেশের নানা স্থানে। স্কুলশিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা, পরে আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’, প্রথম কিশোর উপন্যাস ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’। কিশোর সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন ১৯৮৫ সালের ‘বিদ্যাসাগর পুরস্কার’। এছাড়াও পেয়েছেন ‘আনন্দ পুরুস্কার’, ‘সাহিত্য অকাদেমি’ পুরস্কার। সব ধরনের খেলায় বক্সিং, টেনিস, ক্রিকেট, ফুটবল, টি.টি., অ্যাথলেটিকস-এ তাঁর উৎসাহ অদম্য। পাঠক হিসেবেও সর্বগ্রাসী। ভালোবাসেন থ্রিলার, কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি।
পাগলা গনেশ গল্পটি বই থেকে পড়ে নিও।
• শব্দার্থ:
» প্রতিরোধকারী– প্রতিরোধ করেছে বা বাধা দিয়েছে এমন।
» উড়ান যন্ত্র– যাতে চড়ে উড়ে বেড়ানো যায় এমন যন্ত্র।
» সশরীরে– শরীর সহ বা শরীর নিয়ে।
» অনাবশ্যক– যার দরকার নেই।
» ভাবাবেগ– আবেগ বা অনুভূতির আধিক্য, বিহ্বলতা।
» খামোখা– অকারণে, অনর্থক।
» বিলুপ্ত– সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছে এমন।
» মেদুর– স্নিগ্ধ ও কোমল।
» উদ্রেক– সঞ্চার, উদয়।
» মৃত্যুঞ্জয়– মরণকে জয় করেছে এমন।
» অবজার্ভেটরি– মানমন্দির।
» গ্রহ– নক্ষত্র প্রভৃতি পর্যবেক্ষণের গবেষণাগার।
» ল্যাবরেটরি/গবেষণাগার– (বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে) যেখানে গবেষণা করা হয়।
» অন্তরীক্ষ– আকাশ।
» নিপাট– একেবারে, নিতান্ত, নিছক।
» অন্তহীন– শেষ নেই যার।
» আয়ু– জীবনকাল।
» কৃতী– সফল, সার্থক।
» সসম্ভ্রমে– সম্মান/ মর্যাদা সহ।
» অভিবাদন– নমস্কার বা কোনোভাবে সম্মান প্রদর্শন (দেখানো/জানানো)।
» নিরীহ– নির্বিরোধ, কারো ক্ষতি করে না এমন।
» মন্ত্রমুগ্ধ– মন্ত্রের দ্বারা সম্পূর্ণ বশীভূত।
» উচ্ছন্নে যাওয়া– অধঃপাতে যাওয়া।
» মকসো– অভ্যাস।
উৎসঃ
কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি অবলম্বন করে আধুনিক যুগের বিশিষ্ট লেখক “শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়” এক গল্পগ্রন্থ রচনা করেছেন, যার নাম “পাগলা গণেশ”। আর আমাদের পাঠ্য “পাগলা গণেশ” গল্পটি তাঁর এই গল্পগ্রন্থের একটি প্রধান গল্প।
বিষয়সংক্ষেপঃ
এই গল্পে ভবিষ্যতের কথা বলা হয়েছে। ৩৫৮৯ সালে বিজ্ঞান নির্ভর এক কল্পিত পৃথিবীর কথা গল্পকার আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এক বিশেষ ধরণের মলম আবিষ্কৃত হওয়ায় মানুষ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাধাকে অতিক্রম করে তাদের সাম্রাজ্য সুদূর এভারেষ্ট পর্যন্ত বিস্তার করেছে। এমনকি অন্যান্য নক্ষত্রপুঞ্জেও মানুষ তাদের কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে ছুটে গিয়েছে। পৃথিবীতে মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কার হওয়ার ফলে আর কেউ মারা যাচ্ছে না। সবাই বিজ্ঞানী হয়ে উঠেছে। নাচ, গান, কবিতা প্রভৃতি সকল সুকুমার মনোবৃত্তি মানুষ হারিয়ে ফেলে বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় যেনো যন্ত্রমানব হয়ে উঠেছে।
ঠিক এইরূপ পরিস্থিতিতে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র গণেশ হিমালয়ের কোলে বসে সাংস্কৃতিক চর্চায় মেতে ওঠেন। তিনি কবিতা লিখে বাতাসে ভাসিয়ে দিতে থাকেন, আনন্দের গান করে, ছবি এঁকে সকলের মনে হারিয়ে যাওয়া অনুভূতিগুলিকে পুনরায় জাগিয়ে তুলতে চান। তার এই প্রচেষ্টায় প্রাথমিকভাবে আকৃষ্ট হন তারই এক প্রাক্তন ছাত্র, যিনি বর্তমানে একজন পুলিশ। তিনি গণেশের কথায় উদবুদ্ধ হয়ে প্রথমে তার মা ও স্ত্রীকে নিয়ে আসেন। তারাও গণেশের কথায় প্রবলভাবে আকর্ষিত হয়ে ওঠেন। এরপরে তিনি তাঁর অন্যান্য পুলিশ বন্ধুদের আনতে শুরু করেন। রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আসেন। তিনি গণেশকে জানান যে, গণেশের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পৃথিবী জুড়ে সবাই আবার গান গাইছে, কবিতা লিখছে, ছবি আঁকছে। আর তখন গণেশ বুঝতে পারেন যে, পৃথিবীটা হয়তো যান্ত্রিক হয়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
হাতে কলমে’র প্রশ্নের উত্তর
১.সঠিক উত্তরটি খুঁজে নিয়ে লেখো:
১.১ ‘পাগলা গণেশ’ একটি (বিজ্ঞান / কল্পবিজ্ঞান / রূপকথা)’ – বিষয়ক গল্প।
উত্তরঃ কল্পবিজ্ঞান।
১,২ ‘অবজার্ভেটরি’- র বাংলা প্রতিশব্দ (পরীক্ষাগার / গবেষণাগার / নিরীক্ষণাগার)।
উত্তরঃ নিরীক্ষণাগার।
১.৩ সভ্যসমাজ থেকে দূরে পালিয়ে গিয়ে গণেশ (হিমালয়ের গিরিগুহায় / গভীর জঙ্গলে / মহাকাশে) আশ্রয় নিয়েছিলেন।
উত্তরঃ হিমালয়ের গিরিগুহায়।
১.৪ গল্পের তথ্য অনুসারে মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কার হয়েছিল (৩৫৮৯ / ৩৪৩৯ / ৩৫০০) সালে।
উত্তরঃ ৩৪৩৯
২.সংক্ষেপে উত্তর দাও :
২.১ “সালটা ৩৫৮৯”—এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে কোন্ কোন্ নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা গল্পে বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ সালটা ৩৫৮৯, ইতিমধ্যে মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরােধকারী মলম আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। চাঁদ, মঙ্গল ও শুক্রগ্রহে মানুষ ল্যাবরেটরি স্থাপন করেছে, সূর্যের আরও দুটি গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে এবং জানা গেছে সৌরজগতে আর কোনাে গ্রহ নেই। মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কারের কারণে পৃথিবীতে মানুষ আর মারা যায় না। আলাের চেয়েও দ্রুতগতিসম্পন্ন মহাকাশযান ইতিমধ্যেই আবিষ্কৃত হয়ে গেছে।
২.২ “ওসব অনাবশ্যক ভাবাবেগ কোনাে কাজেই লাগে না”— ‘অনাবশ্যক ভাবাবেগ’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ? তাকে সত্যিই তােমার অনাবশ্যক বলে মনে হয় কি ?
উত্তরঃ ‘পাগলা গণেশ’ গল্পে ‘অনাবশ্যক ভাবাবেগ’ বলতে কবিতা, গান, ছবি আঁকা, কথাসাহিত্য, নাটক, সিনেমা ইত্যাদির চর্চাকে বােঝানাে হয়েছে।
না, এগুলির কোনােটিকেই আমার অনাবশ্যক বলে মনে হয় না। কারণ এগুলি চর্চা করলে মানুষের মনকে সতেজ, অনুভূতিশীল ও সৃষ্টিশীল রাখে।
২.৩ “চর্চার অভাবে মানুষের মনে আর ওসবের উদ্রেক হয় না।”– মানুষের মন থেকে কোন্ কোন্ অনুভূতিগুলি হারিয়ে গেছে ?
উত্তরঃ ‘পাগলা গনেশ’ গল্প অনুসারে মানুষের মনে ‘দয়া’, ‘মায়া’, ‘করুণা’, ‘ভালােবাসা ইত্যাদি অনুভূতি আর নেই, বিজ্ঞানের যান্ত্রিকতায় তা হারিয়ে গেছে।
২.৪ ‘ব্যতিক্রম অবশ্য এক আধজন আছে”- ব্যতিক্রমী মানুষটি কে ? কীভাবে তিনি ব্যতিক্রম হয়ে উঠেছিলেন ?
উত্তরঃ প্রশ্নে উল্লিখিত ব্যতিক্রমী মানুষটি হলেন ‘পাগলা গণেশ’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিজ্ঞানী গণেশ।
৩৫৮৯ খ্রিস্টাব্দের দেড়শাে বছর আগে যখন মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কৃত হয়, তখন সকলের মতাে গণেশও টনিকটি খেয়েছিলেন। ফলে তিনি অমর হয়ে যান। সেই সময় থেকেই সুকুমার শিল্পবিরােধী আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে শিল্প, সংগীত, সাহিত্য ইত্যাদি চর্চার পাট ক্রমশ উঠে যেতে থাকল। গণেশের সেটা পছন্দ হল না। তা ছাড়া, বিজ্ঞানের বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার বলেও তার মনে হল। চেষ্টা করে যখন গণেশ দেখলেন কালের চাকার গতি উলটো দিকে ফেরানাে যাবে না, তখন তিনি নিজে এই সভ্যসমাজ ছেড়ে একাই হিমালয়ের এক গুহায় আশ্রয় নিলেন। সেখানে তিনি তাঁর কবিতাচর্চা, ছবি আঁকা, গানের চর্চা বজায় রাখলেন। এভাবেই গণেশ একজন ব্যতিক্রমী মানুষ হয়ে উঠলেন।
২.৫ “ও মশাই, এমন বিকট শব্দ করছেন কেন ?” – কার উদ্দেশ্যে কারা এ কথা বলেছিল ? কোন্ কাজকে তারা ‘বিকট শব্দ’ মনে করেছিল ?
উত্তরঃ একদিন গণেশ সন্ধ্যাবেলায় গলা ছেড়ে গান গাইছিলেন। হঠাৎ দুটো পাখাওয়ালা লােক লাসা থেকে ইসলামাবাদ উড়ে যেতে যেতে নেমে এসে গণেশকে উদ্দেশ্য করে রীতিমতাে ধমক দিয়ে মন্তব্যটি করেছিল।
গণেশের গলা ছেড়ে গান গাওয়াকেই তারা ‘বিকট শব্দ’ বলে মনে করেছিল।
২.৬ “গণেশ তাদের মুখশ্রী ভুলে গেছে”— গণেশ কাদের মুখশ্রী ভুলে গেছেন ? তার এই ভুলে যাওয়ার কারণ কী বলে তােমার মনে হয় ?
উত্তরঃ ‘পাগলা গণেশ’গল্পে গণেশ তার তিন ছেলে ও এক মেয়ের মুখশ্রী ভুলে গেছেন।
গণেশের ছেলেমেয়েরা তাঁর কাছে থাকে না, গত একশাে বছরের মধ্যে তারা বাপের কাছেও আসেনি। এই দীর্ঘ বিচ্ছেদের ফলেই গণেশ তাদের মুখশ্রী ভুলে গেছেন।
২.৭ “গণেশকে সসম্রমে অভিবাদন করে বলল”—কে, কী বলেছিল? তার এভাবে তাকে সম্মান জানানাের কারণটি কী?
উত্তরঃ পিপে থেকে বেরিয়ে আসা একজন পুলিশম্যান সসম্রমে গণেশকে অভিবাদন করে বলেছিল, গণেশ যখন কলকাতার সায়েন্স কলেজে মাইক্রো ইলেকট্রনিকস পড়াতেন, তখন সে তার ছাত্র ছিল। তারপর গণেশের পাহাড়ময় কাগজ ছড়ানোর কারণ জানতে চেয়েছিল।
তার এভাবে সম্মান জানানাের কারণ হল, গণেশ একসময়ে সেই পুলিশ ম্যানের শিক্ষক ছিলেন।
২.৮ “আমি পৃথিবীকে বাঁচানাের চেষ্টা করছি” বক্তা কীভাবে পৃথিবীকে বাঁচানাের চেষ্টা করেছিল ? তার প্রয়াস শেষপর্যন্ত সফল হয়েছিল কি ?
উত্তরঃ বক্তা গণেশ কবিতা লিখে, গান গেয়ে, ছবি এঁকে পৃথিবীর মানুষের ভেতরের মানবিক বােধগুলিকে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছিলেন।
হ্যাঁ,তার এই প্রয়াস শেষপর্যন্ত সফল হতে চলেছিল।গণেশ বুঝেছিলেন যে, দুনিয়াকে বাঁচানাের জন্য তার চেষ্টা সফল হতে চলেছে। কারণ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের কাছ থেকে গণেশ জানতে পেরেছিলেন যে, বর্তমানে লােকে গান গাইতে লেগেছে, কবিতা মকসাে করছে, হিজিবিজি ছবি আঁকছে।
২.৯ “লােকটা অসহায়ভাবে মাথা নেড়ে বলল”—এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? সে কী বলল ? তার অসহায়ভাবে মাথা নাড়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ
» এখানে অসহায়ভাবে মাথা নাড়া লােকটি হল একজন পুলিশম্যান। গণেশ যখন কলকাতার সায়েন্স কলেজে শিক্ষকতা করতেন, তখন সে ছিল তার ছাত্র।
» পুলিশম্যানটি গণেশের কবিতা লেখা আছে এমন একটি কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে ছিল। সেই কাগজটির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে সে বলেছিল যে, সে কিছুই বুঝতে পারছে না, কোনােদিনও সে সেসব পড়েনি এবং তাদের আমলে শিক্ষানিকেতনে সেসব পড়ানােও হত না। একইসঙ্গে সে জানায় যে, আরও আগে কবিতা নামে কী যেন একটা ছিল বলে সে শুনেছে।
» গণেশের কবিতা পড়ে সে অসহায়ভাবে মাথা নেড়ে তার কবিতা বােঝার অক্ষমতার কথা জানিয়েছিল।
২.১০ “তিনজন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বসে রইল”— এই তিনজন কারা ? তাদের মুগ্ধতার কারণ কী ?
উত্তরঃ এখা মন্ত্রমুগ্ধ যে তিনজনের কথা বলা হয়েছে, তারা হল গণেশের প্রাক্তন ছাত্র এক পুলিশম্যান, তার স্ত্রী আর তার মা।
»গণেশ তাদের কবিতা পড়ে আর গান গেয়ে। শােনান, নিজের আঁকা ছবি দেখান। এই সব দেখে পুলিশম্যান, তার স্ত্রী এবং মা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বসে থেকেছিল।
৩.‘পাগলা গণেশ’ গল্পের মুখ্য চরিত্র গণেশকে তােমার কেমন লাগল ?
উত্তরঃ ৩৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানের যান্ত্রিকতা গ্রাস করে ফেলল পৃথিবীকে। এর ফলে মানুষ অমরতা পেল। কিন্তু শিল্প, সংগীত, সাহিত্য ইত্যাদি সুকুমার কলা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকল মানুষের জীবন থেকে। সেই সময় গণেশ কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে মানবিক বোধগুলিকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হলেন এবং ধীরে ধীরে তা ফিরিয়ে আনলেন। সেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে লােকে গণেশকে স্বাভাবিক মনে করেনি। তাই তিনি হয়ে গিয়েছিলেন ‘পাগলা গণেশ’। তাকে তো ‘পাগলা’ বলে মনে হতেই পারে । কিন্তু গণেশ ‘পাগলা’ নন, তিনি আন্তরিক। যান্ত্রিক পৃথিবীর হৈ- হল্লার মাঝে নিঃসঙ্গ হলেও তিনি মানবতার পূজারি । বিজ্ঞাননির্ভর মানুষ একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন । তাই পারস্পরিক আবেগের সূত্রে মানুষকে বাঁধতে তিনি বিজ্ঞানের পাশে মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও মানসবৃত্তিকে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছেন। একক যুদ্ধের সার্থক সৈনিক গণেশ তাই এক সার্থক মানবচরিত্র হিসেবে এ গল্পে আত্মপ্রকাশ করেছেন। গল্পশেষে তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব যখন জানান লোকে গান গাইতে লেগেছে, কবিতা মকসো করছে, হিজিবিজি ছবি আঁকছে।’ তখন গণেশের প্রাণময় উক্তি— “যাঃ তাহলে আর ভয় নেই। দুনিয়াটা বেঁচে যাবে … ”।
৪. অর্থ অপরিবর্তিত রেখে রেখাঙ্কিত শব্দগুলির পরিবর্তে নতুন শব্দ বসাও:
৪.১ ওসব অনাবশ্যক ভাবাবেগ কোনাে কাজেই লাগে না।
উত্তরঃ ওসব অপ্রয়ােজনীয় ভাবাবেগ কোনাে কাজেই লাগে না।
৪.২ কেউ ঠাট্টা বিদ্রুপ করল না।
উত্তরঃ কেউ উপহাস-পরিহাস করল না।
৪.৩ দুনিয়াটা বেঁচে যাবে।
উত্তরঃ পৃথিবীটা বেঁচে যাবে।
৪.৪ মহাসচিব তার বিমান থেকে নামলেন গণেশের ডেরায়।
উত্তরঃ মহাসচিবতার আকাশযান থেকে নামলেনগণেশের আস্তানায়।
৪.৫ গণেশকে সসম্ভ্রমে অভিবাদন জানিয়ে বলল।
উত্তরঃ গণেশকে সসম্মানে অভিবাদন জানিয়ে বলল।
৪.৬ লােকে গান গাইতে লেগেছে, কবিতা মকসো করছে।
উত্তরঃ ললাকে গান গাইতে লেগেছে, কবিতা অভ্যাস করছে।
৪.৭ হিমালয় যে খুব নির্জন জায়গা, তা নয়।
উত্তরঃ হিমালয় যে খুব জনহীন জায়গা, তা নয়।
৪.৮ ধুর মশাই, এ যে বিটকেল শব্দ। :
উত্তরঃ ধুর মশাই, এ যে বিকট শব্দ।
৫. এককথায় লেখাে— মহান যে সচিব, প্রতিরােধ করে যে, গতিবেগ আছে যার, মৃত্যুকে জয় করেছে যে, অন্ত নেই যার।
উত্তরঃ
» মহান যে সচিব— মহাসচিব
» প্রতিরােধ করে যে— প্রতিরােধী।
» গতিবেগ আছে যার— গতিশীল।
» মৃত্যুকে জয় করেছে যে— মৃত্যুঞ্জয়।
» অন্ত নেই যার— অনন্ত
৬. সন্ধি বিচ্ছেদ করাে: মাধ্যাকর্ষণ, আবিষ্কার, মৃত্যুঞ্জয়, অনাবশ্যক, গবেষণা, অন্তরীক্ষ, গণেশ, হিমালয়, নির্জন, গবেষণাগার, পরীক্ষা।
উত্তরঃ
» মাধ্যাকর্ষণ = মাধ্য + আকর্ষণ।
» আবিষ্কার = আবিঃ + কার
» মৃত্যুঞ্জয় = মৃত্যুম্ + জয়।
» অনাবশ্যক = অন্ + আবশ্যক।
» গবেষণা = গাে + এষণা।
» অন্তরীক্ষ = অন্তঃ + ঈক্ষ।
» গণেশ = গণ + ঈশ ।
» হিমালয় = হিম + আলয়।
» নির্জন = নিঃ + জন।
» গবেষণাগার = গাে + এষনা+ আগার
» পরীক্ষা = পরি + ঈক্ষা।
৭. সমার্থক শব্দ লেখাে : কৃত্রিম, পৃথিবী,আন্দোলন।
উত্তরঃ » কৃত্রিম — নকল।
» আন্দোলন— আলােড়ন
» পৃথিবী— দুনিয়া, জগৎ
৮. নিম্নলিখিত বিশেষণগুলির পর উপযুক্ত বিশেষ্য বসাও এবং বাক্য রচনা করাে : কৃত্রিম, মেদুর, সুকুমার, যান্ত্রিক, ফিরােজা, মন্ত্রমুগ্ধ।
উত্তরঃ
বিশেষণ –কৃত্রিম
বিশেষ্য – কৃত্রিম উপগ্রহ
বাক্য – আকাশে এখন কৃত্রিম উপগ্রহ প্রায়ই দেখা যায়।
বিশেষণ – মেদুর
বিশেষ্য – মেদুর আকাশ
বাক্য – মেঘে মেদুর আকাশ স্নিগ্ধ সুন্দর হয়ে উঠল।
বিশেষণ – সুকুমার
বিশেষ্য – সুকুমার শিল্পকলা
বাক্য – সুকুমার শিল্পকলা সকলেই শিল্পকলা পছন্দ করে।
বিশেষণ – যান্ত্রিক
বিশেষ্য – যান্ত্রিক গােলযােগ
বাক্য – যান্ত্রিক গােলযােগের জন্য
মােটরগাড়ি থেমে গেল।
বিশেষণ – ফিরােজা
বিশেষ্য – ফিরােজা রং
বাক্য – ফিরােজা রঙের শাড়ি নীনার খুব পছন্দ।
বিশেষণ – মন্ত্রমুগ্ধ
বিশেষ্য – মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতা
বাক্য – রমার গান শুনে শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বসে রইল।
৯.রেখাঙ্কিত পদগুলির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো।
৯.১ গণেশও আর সকলের মতাে টনিকটা খেয়েছিল।
উত্তরঃ কর্তৃকারক, শূন্য বিভক্তি।
৯.২ তার গানের গলা বেশ ভালােই।
উত্তরঃ সম্বন্ধপদ, এর’ বিভক্তি।
৯.৩ আকাশে একটা পিপে ভাসছিল।
উত্তরঃ অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
৯.8 আজ সকালে গণেশকে কবিতায় পেয়েছে।
উত্তরঃ অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
৯.৫ আমি পৃথিবীকে বাঁচানাের চেষ্টা করছি।
উত্তরঃ কর্মকারক, ‘কে’ বিভক্তি।
৯.৬ ও মশাই, অমন বিকট শব্দ করছেন কেন ?
উত্তরঃ কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৯.৭ রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব তাঁর বিমান থেকে নামলেন।
উত্তরঃ অপাদানকারক, ‘থেকে’ অনুসর্গ।
৯.৮ তিনজন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বসে রইল।
উত্তরঃ করণকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
👉 পরবর্তী পাঠঃ বঙ্গভূমির প্রতি।
BABU IAI SHA
BABU IAI SHA
Bujhte parchi nah
Pingback: সপ্তম শ্রেণি বাংলা প্রশ্নোত্তর | WBBSE Class 7 Bengali Question Answer - Prosnodekho -