পাইন দাঁড়িয়ে আকাশে নয়ন তুলি
—হাইনরিখ্ হাইনে
উত্তরে বুনো নগ্ন পাহাড় ‘পরে,
দাঁড়ায়ে পাইন আকাশে নয়ন তুলে,
যেন বরফের রূপালি কাপড় প’রে,
স্বপ্ন সে দেখে দিনরাত দুলে দুলে।
স্বপ্ন সে দেখে দূরে মরুভূমি প’রে
সেই দেশে যেথা প্রভাতে সূর্য ওঠে,
তপ্ত পাহাড়ে বেদনায় বুক ভ’রে
দাঁড়ায়ে রয়েছে পামগাছ মরুতটে।
অনুবাদ: সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
শব্দার্থ—
নগ্ন পাহাড়— গাছপালাহীন (ন্যাড়া) পাহাড়। তপ্ত— গরম। বুনো— বন্য। প্রভাত— ভোরবেলা। বেদনা— ব্যথা, কষ্ট।
কবি পরিচিতি—
হাইনরিখ হাইনে (১৭৯৭-১৮৫৬): জন্ম জার্মানির রাইন নদীর তীরে ড্যুসেলডর্ফ-এ। ঊনবিংশ শতকের অন্যতম বিশিষ্ট জার্মান কবি। তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। প্রাবন্ধিক এবং সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। তবে গীতিকবি হিসেবেই তিনি বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছেন। ১৮১৭ সালে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। ১৮২৬ সালে প্রকাশিত হয় হাস্ট্রাইজে (Harzreise) বা হার্ৎস যাত্রা। ১৮২৭ সালে প্রকাশিত কাব্যগীতিগ্রন্থ (Buch der Lieder) উত্তর সাগরগীতিকা তাঁকে বিশ্বজনীন খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল। এ ছাড়াও নতুন কবিতা, জার্মানি: এক শীতের রূপকথা প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ এবং ফরাসি পরিস্থিতি, রোমান্টিক কাব্যধারা, ধর্মের ইতিহাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য আলোচনাগ্রন্থ। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় তাঁর গীতিকবিতাগুলি অনূদিত হয়েছে।
বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর
হাতে কলমে’র প্রশ্নের উত্তর
১. কবি হাইনরিখ হাইনের জন্মস্থান কোথায় ?
উত্তরঃ কবি হাইনরিখ হাইনের জন্মস্থান জার্মানির রাইন নদীর তীরে অবস্থিত ড্যুসেলডর্ফ-এ।
১.২ কবি হাইনের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম লেখো।
উত্তরঃ কবি হাইনের লেখা দুটি কবিতার বইয়ের নাম—
(১) নতুন কবিতা।
(২) জার্মানি : এক শীতের রূপকথা।
১.৩ কবি হাইনের লেখা দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ কবি হাইনের লেখা দুটি গদ্যগ্রন্থের নাম—
(১) ধর্মের ইতিহাস। (২) ফরাসি পরিস্থিতি।
২. ঠিক উত্তরের উপরে ‘/’ চিহ্ন দাও :
২.১ (উত্তরে / দক্ষিণে / পশ্চিমে) বুনো নগ্ন পাহাড়ে পাইন দাঁড়িয়ে।
উত্তরঃ উত্তরে বুনো নগ্ন পাহাড়ে পাইন দাঁড়িয়ে।
২.২ যেন বরফের (সোনালি / রুপালি / সবজে) কাপড় পরে…..।
উত্তরঃ যেন বরফের রপালি কাপড় পরে।
২.৩ মরুতটে দাঁড়িয়ে রয়েছে (পাইন / পাম / খেজুর) গাছ।
উত্তরঃ মরুতটে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাম গাছ।
২.৪ জার্মান ভাষায় কবিতা লেখেননি (গোয়ঠে / রিলকে / শেক্সপিয়ার)।
উত্তরঃ জার্মান ভাষায় কবিতা লেখেননি শেক্সপিয়ার।
৩. নীচের প্রশ্নগুলির দু-একটি বাক্যে উত্তর লেখো :
৩.১ পাইন গাছ সাধারণত কোন্ অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায় ?
উত্তরঃ পাইন গাছ সাধারণত শীতের দেশে পাহাড়ি অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়।
৩.২ পাইনগাছ কী ধরনের পোশাক পরে আছে বলে কবির মনে হয়েছে ?
উত্তরঃ পাইন গাছ বরফের রুপালি পোশাক পরে আছে বলে কবির মনে হয়েছে।
৩.৩ পামগাছ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ?
উত্তরঃ পামগাছ মরুতটে দাঁড়িয়ে আছে।
৩.৪ পাইনগাছ কী ভাবে স্বপ্ন দেখে ?
উত্তরঃ পাইনগাছ আকাশে নয়ন তুলে, দিনরাত দুলে দুলে স্বপ্ন দেখে।
৪. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো :
৪.১ পামগাছের বুক বেদনায় ভরা কেন ?
উত্তরঃ পামগাছ একা নিঃসঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে তপ্ত মরুতটে। তাই তার বুক বেদনায় ভরা।
8.2 পাইনগাছ কী স্বপ্ন দেখে ?
উত্তরঃ পাইনগাছ স্বপ্ন দেখে দূরে মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা পাম গাছের।
৪.৩ বরফের দেশের পাইনগাছ, মরুভূমির পাম গাছের স্বপ্ন দেখে কেন ?
উত্তরঃ বরফের দেশের পাইনগাছ যেখানে থাকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার সেখানে ভালো লাগে না। ভাল লাগে, দূরের কিছুকে। আর এখানে বরফের অতিরিক্ত ঠাণ্ডা, পাইনগাছের কষ্ট ও যন্ত্রণার কারণ। তার কাছে, গরম দেশ বা জায়গাই স্বপ্ন দেখার বিষয়, অর্থাৎ ঠান্ডার থেকে তার কাছে গরম জায়গাই প্রত্যাশিত। তাছাড়া উভয়ের মধ্যে একটি বিষয়ে মিল আছে। তা হল নিঃসঙ্গতা। সেই জন্যই বরফের দেশের পাইনগাছ, মরুভূমির পামগাছের স্বপ্ন দেখে।
৫. ‘মরুভূমি’ ও ‘মরুতট’ শব্দদুটির লক্ষ্য করো :
মরু + ভূমি – মরুভূমি। মরু + তট মরুতট।
একইভাবে ‘সূর্য’ ও ‘নয়ন’-এর সঙ্গে একাধিক শব্দ যোগ করে নতুন শব্দ তৈরি করো।
উত্তরঃ
সূর্য + তোরণ → সূর্যতোরণ।
সূর্য + সাক্ষী → সূর্যসাক্ষী।
নয়ন + জল → নয়নজল।
নয়ন + মণি → নয়নমণি।
৬. সমগ্র কবিতাটির মধ্যে কতগুলি বিশেষণ খুঁজে পাও লেখো।
উত্তরঃ সমগ্র কবিতাটির মধ্যে বিশেষণগুলি হল— (১) বুনো, (২) নগ্ন, (৩) রুপালি, (৪) তপ্ত, (৫) দুলে দুলে।
৭. নানারকম গাছের নাম লিখে নীচের ছকটি পূরণ করো :
উত্তরঃ
পার্বত্য অঞ্চল— পাইন, ফার, বার্চ, ওক, উইলো।
মরুভূমি অঞ্চল— পাম. ফণিমনসা, খেজুর, কাঁটাগাছ।
৮. পার্বত্য অঞ্চল ও মরু অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ফুটিয়ে তুলতে তুমি নীচের মানস মানচিত্রে কী কী শব্দ ব্যবহার করবে ? তুমি এর মধ্যে যে-কোনো একটিতে মানস অভিযান গেলে কী কী জিনিস সঙ্গে নেবে ? সেই অভিযানের কাল্পনিক বিবরণ কয়েকটি বাক্যে লেখো।
উত্তরঃ
মরুভূমি অঞ্চলের ভূ প্রকৃতি ফুটিয়ে তুলতে মরুদ্যান, মরীচিকা ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করব। মরুঅঞ্চলে মানস অভিযানে গেলে গরমের উপযোগী পোশাক, উপযুক্ত জল, পায়ের উপযুক্ত জুতো সঙ্গে নোবো।
মরুভূমিতে উটের পিঠে উঠে যাত্রা শুরু করলাম। খাবারও যথেষ্ট পরিমাণে নিয়েছি। যাত্রা শুরু করেছি মরুতীর্থ হিংলাজের পথে। কিন্তু এই যাত্রাপথ অত্যন্ত কঠিন। অধিকাংশই উত্তপ্ত ভয়াবহ পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পারে না কেউই। তাই বেশি দূর না গিয়ে ফিরে আসতে হবে তা জানি।
👉 পরবর্তী পাঠঃ মন-ভালো-করা