পটলবাবু ফিল্মস্টার প্রশ্ন উত্তর সপ্তম শ্রেণি | Potolbabu Film Star Question Answer Class 7 [WBBSE]

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

পটলবাবু ফিল্মস্টার
—সত্যজিৎ রায়

সারসংক্ষেপ : সত্যজিৎ রায়ের ‘এক ডজন গপ্পো’ থেকে গৃহীত ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ গল্পে দেখি পটলবাবু বাহান্ন বছর বয়সে সিনেমায় পথচারীর এক ছোট্ট ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান প্রতিবেশী নিশিকান্ত ঘোষের সাহায্যে। সিনেমায় অভিনয় করে নিজের লুকিয়ে থাকা, হারিয়ে যাওয়া শিল্পীসত্তাকে সকলের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পেয়ে সাংসারিক কাজে গণ্ডগোল করে ফেলেন। কল্পনা করতে বসেন ভবিষ্যৎ মান, সম্মান, প্রতিপত্তির। আসলে যুদ্ধের সময় রেলের চাকরি খুইয়ে পেটের জ্বালায় নিজের শিল্পীমনকে জলাঞ্জলি দিতে হয় তাকে। বাহান্ন বছর বয়সে আবার সে সুযোগ আসায় স্বভাবতই অত্যন্ত খুশি হন তিনি। এরপর যখন জানতে পারেন অভিনয়ে তাকে শুধুমাত্র আঃ’শব্দটি উচ্চারণ করতে হবে, তখন তিনি বিমর্ষ হয়ে পড়েন। পরে নাট্যগুরু গগন পাকড়াশির অমূল্য উপদেশ মনে পড়ায় তিনি আবার উৎসাহ ফিরে পান এবং নিজের ছোটো পার্ট থেকেও রস নিংড়ে বের করার চেষ্টা করতে থাকেন। পরিচালককে অভিনয় ভালো ভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য সংবাদপত্রের গুরুত্ব বোঝান। পরিচালক তাঁর পরামর্শ গ্রহণও করেন। এরপর অসাধারণ অভিনয় করে, সকলের প্রশংসা কুড়িয়ে পারিশ্রমিক না নিয়েই সেখান থেকে চলে যান।

মূলকথা : সত্যজিৎ রায় রচিত ‘এক ডজন গপ্পো’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার গল্পে দেখি বাহান্ন বছর বয়সে সিনেমায় ক্ষুদ্র ভূমিকায় অভিনয় করে পটলবাবু প্রমাণ করে দেন তিনি প্রকৃত শিল্পী। তাঁর অভিনয় সকলের প্রশংসা কেড়ে নেয়। অভিনয় শেষে পারিশ্রমিক না নিয়েই তিনি চলে যান। আসলে নিজের শিল্পীসত্তাকে সামান্য পাঁচ-দশ টাকার বিনিময়ে বেচতে তিনি চাননি। আত্মতৃপ্তির জন্য আর্থিক অনটনের মধ্যেও টাকাকে অস্বীকার করে তিনি প্রমাণ করেন টাকাই শেষ কথা নয়।

• শব্দার্থ :
» হদিস— সন্ধান, খোঁজখবর।
» নগণ্য— সামান্য, তুচ্ছ, গণনার অযোগ্য।
» অভাবনীয়— অপ্রত্যাশিত।
» ফরমাস— আদেশ, নির্দেশ।
» স্মরণশক্তি— মনে রাখার ক্ষমতা, স্মৃতিশক্তি। » বৃকোদর— ভীম।
» আগন্তুক— অতিথি, অপরিচিত অভ্যাগত।
» পথচারী— পথিক।
» প্রতিপত্তি— সম্মান, মর্যাদা, প্রভাব।
» ঠাহর— মনোযোগ দিয়ে দেখা।
» অপদস্থ— লাঞ্ছিত, অসম্মানিত।
» পরিহাস— ঠাট্টা, কৌতুক।
» নিরীহ — নিরুপদ্রব, শান্তশিষ্ট।
» নির্বিবাদী— নির্বিরোধ।
» নিষ্ঠুর— নির্মম, দয়াহীন।
» দৃকপাত — ভ্রুক্ষেপ, ফিরে তাকানো।
» ঋষিতুল্য— ঋষির মতো জ্ঞানী ও শ্রদ্ধার্থ।
» নিরুৎসাহ— হতাশ, উৎসাহহীন।
» বাজিমাত— বিপক্ষের সম্পূর্ণ পরাভব, খেলার জয়যুক্ত সমাপ্তি।
» নিরিবিলি— নিরালা, নিভৃত।
» বাসিন্দা— বাসকারী, অধিবাসী।
» তামাশা— ঠাট্টা, কৌতুক, পরিহাস।
» রোমাঞ— পুলক।
» আন্দাজ— অনুমান।
» তারিফ— প্রশংসা।
» আত্মতৃপ্তি— নিজের সন্তোষ।
» আচ্ছন্ন— অভিভূত।
» কদর— মর্যাদা, যোগ্যতা।
» ট্যাগোর্স বার্থডে— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন।
» ফিল্ম— সিনেমা। » সিন— দৃশ্য।
» হদিশ— সন্ধান। » নগণ্য— তুচ্ছ, সামান্য। » দোহারা— রোগাও নয় মোটাও নয় এমন। » হ্যান্ডবিল— ইস্তেহার।
» ইনসিওরেন্স— বীমা।
» দালালি— ব্যবসা-বাণিজ্য বা ক্রয়-বিক্রয় বা অন্যান্য কথাবার্তায় যে ব্যক্তি মধ্যস্থরূপে কাজ করে তার পারিশ্রমিক।
» অজান্তে—না জেনে।
» আপাদমস্তক—পা থেকে মাথা পর্যন্ত।
» পেডেস্ট্রিয়ান—পথিক।
» ডায়লগ——সংলাপ।
» স্রেফ— শুধুমাত্র।
» হ্যান্ডশেক— করমর্দন।
» তেপায়া— তিনটি পা-যুক্ত।
» পাংচুয়াল— সময়নিষ্ঠ।
» ছোকরা— ছেলে, যুবক।
» ফিমেল— মহিলা।
» পরিহাস— ঠাট্টা, তামাশা।
» নির্বিবাদী— নির্বিরোধী।
» নিষ্ঠুর—নির্দয়। ক্যাশ— নগদ।
» হন্তদন্ত—ব্যস্তসমস্ত, অতিব্যস্ত।
» সংসর্গ—সম্বন্ধ, মেলামেশা।
» আওড়াতে— বলতে। আস্ত—গোটা।
» রিহার্সাল—মহড়া।
» খাঁকড়ে—ঝেড়ে। » স্টেজ—মঞ্চ।
» আচ্ছন্ন—ঢাকা।
» উৎকণ্ঠা— উদ্‌বেগ, চিন্তা।
» আত্মতৃপ্তি— নিজের সন্তোষ।


👉আরো দেখো : সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর👈


(হাতে কলমে’র প্রশ্ন উত্তর)

১. বন্ধনীতে দেওয়া একাধিক উত্তরের মধ্যে ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে নীচের বাক্যগুলি আবার লেখো :
১.১. পটলবাবু অভিনয়ের সময়ে সংলাপ হিসেবে বলেছিলেন (ওঃ / উঃ / আঃ) শব্দটি।

উত্তরঃ আঃ শব্দটি পটলবাবু অভিনয়ের সময়ে সংলাপ হিসেবে বলেছিলেন ।

১.২. অভিনয়ের সময় পটলবাবুর হাতে ছিল (আনন্দবাজার পত্রিকা / যুগান্তর / স্টেটসম্যান)।

উত্তরঃ অভিনয়ের সময় পটলবাবুর হাতে ছিল যুগান্তর পত্রিকা।

১.৩. অভিনয়ের সময় পটলবাবুর নাকের নীচে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল (ঝঁপো / চাড়া দেওয়া / বাটারফ্লাই) গোঁফ।

উত্তরঃ অভিনয়ের সময় পটলবাবুর নাকের নীচে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল বাটারফ্লাই গোঁফ।

১.৪. (বরেন দত্ত / বরেন মল্লিক / বরেন চৌধুরী)-র পরিচালিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন পটলবাবু।

উত্তরঃ বরেন মল্লিক পরিচালিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন পটলবাবু।

১.৫. করালীবাবুর বাড়িতে (কীর্তন / শ্যামাসংগীত / কথকতা) হয় (শনিবার বিকেলে / রবিবার সকালে / রবিবার বিকেলে)।

উত্তরঃ করালীবাবুর বাড়িতে শ্যামাসংগীত হয় রবিবার সকালে।

২. নীচের এলোমেলো ঘটনাগুলি গল্পের ঘটনাক্রম অনুযায়ী লেখো :

২.১. টাকার তাঁর অভাব ঠিকই—কিন্তু আজকের এই যে আনন্দ, তার কাছে পাঁচটা টাকা আর কী ?

২.২. তা আপনি তো বেশ পাংচুয়াল দেখছি।

২.৩ পটলবাবু সবে বাজারের থলিটা কাঁধে ঝুলিয়েছেন এমন সময় বাইরে থেকে নিশিকান্তবাবু হাঁক দিলেন, ‘পটল আছে নাকি সে ?

২.৪. দুরুদুরু বুকে পটলবাবু এগিয়ে চললেন আপিসের গেটের দিকে।

২.৫. সে কী, টাকা না নিয়েই চলে গেল নাকি লোকটা ?

২.৬. ঠিক আধঘণ্টা পরেই পটলবাবুর ডাক পড়ল, তখন আর তাঁর মনে কোনো নিরুৎসাহের ভাব নেই।

উত্তরঃ

১.(২.৩) পটলবাবু সবে বাজারের থলিটা কাঁধে ঝুলিয়েছেন এমন সময় বাইরে থেকে নিশিকান্তবাবু হাঁক দিলেন, ‘পটল আছে নাকি সে ?

২.(২.৪) দুরুদুরু বুকে পটলবাবু এগিয়ে চললেন আপিসের গেটের দিকে।

৩.(২.২) তা আপনি তো বেশ পাংচুয়াল দেখছি।

৪.(২.৬) ঠিক আধঘণ্টা পরেই পটলবাবুর ডাক পড়ল, তখন আর তাঁর মনে কোনো নিরুৎসাহের ভাব নেই।

৫.(২.১) টাকার তাঁর অভাব ঠিকই—কিন্তু আজকের এই যে আনন্দ, তার কাছে পাঁচটা টাকা আর কী?

৬.(২.৫) সে কী, টাকা না নিয়েই চলে গেল নাকি লোকটা ?

৩. গল্প থেকে এই যে অংশটি নীচে উদ্ধৃত করা হয়েছে, শুটিং-এর সেই ব্যস্ত পরিস্থিতিটি তোমার নিজের ভাষায় নতুন করে লেখো।

উত্তরঃ গলিতে রিহার্সাল দেবার সময় পটলবাবুর একটা আইডিয়া মাথায় এসেছিল। অনেক ভাবনা চিন্তা করার পর সেটা সাহস করে বলে ফেললেন পরিচালক বরেন মল্লিককে। পটলবাবু বললেন যদি তার হাতে একটা খবরের কাগজ থাকে আর সেটা পড়তে পড়তে যদি ধাক্কা লাগে তাহলে অন্যমনস্কতার ভাবটা ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়। বরেন মল্লিক পটলবাবুর কথা শেষ হতে না দিয়েই বললেন ‘বেশ তো, এরপর অন্য একজনকে যুগান্তর পত্রিকাটা পটলবাবুর হাতে দিতে বললেন এবং পটলবাবুকে পত্রিকা দিয়ে নিজের জায়গায় রেডি হতে বললেন। এরপর বরেনবাবু নায়ক চঞ্চলকুমার রেডি কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। নায়কও সম্মতি জানালেন গাড়ির পাশ থেকে। এরপর ‘সাইলেন্স’বলেই আবার ‘এক মিনিট’ বলে বাধা দিলেন। বরেনবাবু কেষ্টকে বললেন পটলবাবুকে একটা গোঁফ দেওয়ার জন্য যাতে তার ক্যারেকটারটা পুরোপুরি ফুটে ওঠে। কেষ্ট কীরকম গোঁফ দেবে জানতে চাইল। ‘ঝুপো, না চাড়া দেওয়া, বাটারফ্লাই।”—সবই তার কাছে আছে। উত্তরে বরেনবাবু বললেন তাড়াতাড়ি বাটারফ্লাই গোঁফ দিতে।

৪. নীচের শব্দগুলির অনুরূপ শব্দ পাঠ্য অংশটিতে পাবে, খুঁজে নিয়ে লেখো।

উত্তরঃ
» উৎসাহহীন— নিরুৎসাহ।
» নিরালা— নির্জন।
» অপ্রত্যাশিত— অভাবনীয়
» নিরুপদ্রব— নির্বিবাদী।
» লাঞ্ছিত— অপদস্থ।
» সন্ধান— হদিশ / খোঁজ।
» প্রশংসা— তারিফ।
» পথিক— পেডেস্ট্রিয়ান/ পথচারী।

৫. নীচের শব্দগুলিতে যে ইংরেজি শব্দগুলো আছে, তার বদলে বাংলা শব্দ বসিয়ে বাক্যগুলি আবার নতুন করে লেখো।

৫.১ বুঝতে পারছেন, ব্যাপারটা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট ?

উত্তরঃ বুঝতে পারছেন, ব্যাপারটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ?

৫.২ এই দাদুকে ডায়লগ লিখে দে।

উত্তরঃ এই, দাদুকে সংলাপ লিখে দে।

৫.৩ একজন অন্যমনস্ক, বদমেজাজি পেডেস্ট্রিয়ান……

উত্তরঃ একজন অন্যমনস্ক, বদমেজাজি পথিক……..

৫.৪ তাহলে একটু ওদিকে সরে গিয়ে ওয়েট করুন।

উত্তরঃ তাহলে একটু ওদিকে সরে গিয়ে অপেক্ষা করুন।

৫.৫ আজ ট্যাগোরস্ বার্থ-ডে।

উত্তরঃ আজ তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন।

৫.৬ সাইলেন্স। রোদ বেরিয়েছে।

উত্তরঃ চুপ। রোদ বেরিয়েছে।

৫.৭ থিয়েটার এর চেয়ে শতগুণে ভালো…..

উত্তরঃ নাটক এর চেয়ে শতগুণে ভালো..

৫.৮ আপনি তো বেশ পাংচুয়াল দেখছি।

উত্তরঃ আপনি তো বেশ সময়নিষ্ঠ দেখছি।

৬. নীচের বিশেষণগুলির পরে উপযুক্ত বিশেষ্য বসিয়ে বাক্য রচনা করো :

উত্তরঃ
» দোহারা— পুলিশ ধরার আগেই দোহারা চোরটি দৌড়ে পালিয়ে গেল।

» ব্যস্তসমস্ত— ব্যস্তসমস্ত ভদ্রলোকটি ছুটে গিয়ে বাস ধরল।

» আমুদে— ঘনাদা একজন আমুদে মানুষ।

» অন্যমনস্ক— ছেলেটি বড্ড অন্যমনস্ক ছাত্র।

» দরকারি— দরকারি বইটি হারিয়ে গেছে।

» গম্ভীর— গম্ভীর মানুষটি সজ্জন।

» নির্জন — তিনি নির্জন স্থানে বসে চিন্তামগ্ন।

» আচ্ছন্ন— চিন্তায় আচ্ছন্ন দুখী মানুষটি ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছেন।

৭. নীচের বিশেষ্যগুলির আগে উপযুক্ত বিশেষণ বসিয়ে বাক্য রচনা করো :

» প্রস্তাব— কখনও কারো খারাপ প্রস্তাবে রাজি হওয়া উচিত নয়।

» অভিনয়— ভালো অভিনয় করতে পারলে অভিনয় জগতে উন্নতি করা যায়।

» ফরমাশ — শ্যামলবাবুর তার বাড়ির চাকরটিকে খুব ফরমাশ খাটায় ।

» উদ্ধত্য— ব্যবহারে বেশি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করা উচিত নয়।

» পরিশ্রম— কঠোর পরিশ্রম জীবনে সাফল্য আনে।

» সাফল্য— এবার পরীক্ষায় রেবা আগেরবারের তুলনায়ও অধিক সাফল্য অর্জন করেছে।

» উৎকণ্ঠা— অত্যধিক উৎকণ্ঠা শরীরের পক্ষে ভালো নয়।

» আত্মতৃপ্তি— নিজের খাবারটা ক্ষুধার্ত শিশুটির হাতে তুলে দিতে পেরে অত্যন্ত আত্মতৃপ্তি অনুভব করলাম।

৮. নীচের বাক্যগুলি থেকে সংখ্যাবাচক শব্দ, অনির্দেশক সংখ্যাবাচক শব্দ আর পূরণবাচক শব্দগুলি খুঁজে বার করে লেখো :

৮.১ নিশিকান্ত ঘোষ মশাই নেপাল ভট্‌চাজ্যি লেনে পটলবাবুর তিনখানা বাড়ি পরেই থাকেন।

উত্তরঃ তিনখানা— সংখ্যাবাচক শব্দ ।

৮.২ বছর ত্রিশেক বয়স, লম্বা দোহারা চেহারা।

উত্তরঃ বছর ত্রিশেক— অনির্দেশক সংখ্যাবাচক শব্দ

৮.৩ বাহান্ন বছর বয়সে ফিল্মে অভিনয় করার প্রস্তাব আসতে পারে এটা অনুমান করা কঠিন বৈকি।

উত্তরঃ বাহান্ন— সংখ্যা বাচক শব্দ।

৮.৪ পটলবাবুর ন’বছরের সাথের চাকরিটি কর্পূরের মতো উবে গল।

উত্তরঃ ন— সংখ্যাবাচক শব্দ।

৮.৫ তারপর এই দশটা বছর কী না করেছেন পটলবাবু।

উত্তরঃ দশটা— সংখ্যাবাচক শব্দ

৮.৬. সেইটের সামনে ঠিক সাড়ে আটটায় পৌঁছে যাবেন।

উত্তরঃ সাড়ে আটটা— পূরণবাচক শব্দ।

৮.৭ পটলবাবু দশ আনা বিরক্তির সঙ্গে তিন আনা বিস্ময় ও তিন আনা যন্ত্রণা মিশিয়ে ‘আঃ’ শব্দটা উচ্চারণ করে চলতে আরম্ভ করলেন।

উত্তরঃ দশ আনা ও তিন আনা— পূরণবাচক শব্দ।

৯. নীচের বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে বদলে লেখো :

উত্তরঃ
» উৎকণ্ঠা— উৎকণ্ঠিত।
» উচ্চারণ— উচ্চারিত।
» দত্ত— দন্তী। » অনুভব— অনুভূত।
» প্রয়োগ— প্রযুক্ত। » বিরক্তি— বিরক্ত।
» ঔদ্ধত্য— উদ্ধত।
» পরিবেশন— পরিবেশিত।

১০. নীচের শব্দগুলি দিয়ে নতুন বাক্যরচনা করো :

উত্তরঃ
» টক করে— বাবা ঘুরতে যাওয়ার কথা বলায় টক করে আমার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল।

» ধাঁ করে—একটা লরি আচমকা ধাঁ করে এসে ভিখারিটিকে চাপা দিয়ে চলে গেল।

» তিড়িং করে— পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে সমীর আনন্দে তিড়িং করে লাফিয়ে উঠল।

» হন্তদন্ত হয়ে— স্ত্রীর দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শ্যামলবাবু হস্তদন্ত হয়ে বাড়ি গেল।

» ঝিমঝিম করে— খুব রোদে বের হলে আমার মাথা ঝিমঝিম করে।

» ফিসফিস করে— সকলের সামনে কানে কানে ফিসফিস করে কথা বলা একধরনের অভদ্রতা।

» ঠাহর করে— অন্ধকার রাস্তায় ঠাহর করে চলতে হয়।

» টুক করে— সুযোগ পেয়েই কাকটা টুক করে রুটির টুকরো মুখে নিয়ে উড়ে গেল।

১১. নীচের বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো :

উত্তরঃ
» গভীর— গভীরতা। » বিকৃত— বিকার।
» উচিত— ঔচিত্য। » নির্বিবাদী— নির্বিবাদ।
» তীব্র— তীব্রতা। » সংযত— সংযম।
» নির্জন— নির্জনতা। » সার্থক— সার্থকতা।

১২. নিম্নরেখাঙ্কিত অংশের কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো :

১২.১ নরেশ ভিড় ঠেলে এসে বলল, ‘আপনি এই ছায়াটায় দাঁড়ান একটু।

উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘বিভক্তি।

১২.২ এবার পটলবাবু লোকটিকে দেখতে পেলেন।

উত্তরঃ কর্ম কারকে ‘কে’ বিভক্তি।

১২.৩ নরেশ একভাঁড় চা নিয়ে পটলবাবুর দিকে এগিয়ে এল।

উত্তরঃ নরেশ— কর্তৃ কারকে শূন্য’ বিভক্তি। একভাঁড় চা— কর্ম কারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।

১২.৪ শশাঙ্ক তার হাতের খাতা থেকে একটা সাদা পাতা ছিঁড়ে কলম দিয়ে তাতে কী জানি লিখে কাগজটা পটলবাবুকে দিল।

উত্তরঃ হাতের খাতা থেকে— অপাদান কারকে ‘থেকে’ অনুসর্গ। সাদাপাতা— কর্ম কারকে শূন্য বিভক্তি।

১৩. একটি বাক্যে উত্তর দাও :

১৩.১ পটলবাবুর কাছে যেদিন ফিল্মে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে, সেদিন ছুটির দিন ছিল কেন ?

উত্তরঃ পটলবাবুর কাছে যেদিন ফিল্মে অভিনয়ের প্রস্তাব আসে সেদিন ছুটির দিন ছিল কারণ সেদিন ছিল রবীন্দ্রজয়ন্তী।

১৩.২ বাজারে গিয়ে কেন গৃহিণীর ফরমাশ গুলিয়ে গেল পটলবাবুর ?

উত্তরঃ বাহান্ন বছর বয়সে ফিল্মে অভিনয় করার প্রস্তাব পেয়ে আনন্দে বাজারে গিয়ে গৃহিণীর ফরমাশ গুলিয়ে গেল পটল বাবুর।

১৩.৩ থিয়েটারে পটলবাবুর প্রথম পার্ট কী ছিল ?

উত্তরঃ থিয়েটারে পটলবাবুর প্রথম পার্ট ছিল মৃত সৈনিকের।

১৩.৪ উনিশশো চৌত্রিশ সালে পটলবাবু কলকাতায় বসবাস করতে এলেন কেন?

উত্তরঃ উনিশশো চৌত্রিশ সালে পটলবাবু কলকাতার হাডসন অ্যান্ড কিম্বার্লি কোম্পানিতে চাকরির জন্য কলকাতায় বসবাস করতে এলেন।

১৩.৫ পাড়ায় থিয়েটারের দল গড়া আর হল না কেন পটলবাবুর ?

উত্তরঃ তেতাল্লিশ সনে পটলবাবু পাড়ায় থিয়েটারের দল গড়ার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু সেই সময় যুদ্ধের ফলে আপিসে ছাঁটাই হয়। চাকরি চলে যাওয়ায় পটলবাবুর আর থিয়েটারের দল গড়া হয়নি।

১৩.৬ পটলবাবু তাঁর সময়নিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য কোন উদাহরণ দিতে ভালোবাসতেন ?

উত্তরঃ পটলবাবু তাঁর সময়নিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার জন্য উদাহরণ দিয়ে বলতেন ন’বছর হাডসন কিম্বার্লিতে চাকরি করেছেন, লেট হননি একদিনও, — ‘নট এ সিঙ্গল ডে’।

১৩.৭ ‘পটলবাবুর লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গেল’— পটলবাবু এমন লজ্জা পেলেন কেন ?

উত্তরঃ নরেশ দত্ত যখন পটলবাবুকে জিজ্ঞাসা করেন ফিল্মে অভিনয় করতে তার আপত্তি আছে কিনা, তখন পটলবাবু এত ভালো সুযোগ পেয়ে বিনয়বশত লজ্জা পেলেন।

১৩.৮ ‘গগন পাকড়াশি আজ তাঁকে দেখলে সত্যিই খুশি হতেন’—তাঁর খুশি হওয়ার কারণ কী ?

উত্তরঃ গগন পাকড়াশি ছিলেন পটলবাবুর নাট্যগুরু। পটলবাবু ফিল্মে অভিনয় করার সুযোগ পাচ্ছেন। সে যত ছোটো পার্টই হোক, শিষ্যের এই সাফল্য দেখলে তিনি নিশ্চয়ই খুশি হতেন।

১৪. চার-পাঁচটি বাক্যে উত্তর দাও :

১৪.১ ‘আমার টক করে তোমার কথা মনে পড়ে গেল’- কার মনে পড়ে গেল পটলবাবুর কথা ? পটলবাবুর বহর বিশেষ করে তাঁর মনে পড়ল কেন ?

উত্তরঃ পটলবাবুর প্রতিবেশী নিশিকান্ত ঘোষের মনে পড়ে গেল পটলবাবুর কথা।

নিশিকান্তবাবুর ছোটো শালা ফিল্মে লোক জোগাড় করে দেয়। সে নিশিকান্তবাবুর কাছে বছর পঞ্চাশ ব বেঁটেখাটো, মাথায় টাক আছে এমন লোকের খোঁজ করেন। উদ্দিষ্ট ব্যক্তির চেহারার বর্ণনার সঙ্গে পটলবাবুর চেহারার মিল থাকায় নিশিকান্তবাবুর মনে পড়ে পটলবাবুর কথা।

১৪.২ ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। সাধে কি তোমার কোনোদিন কিচ্ছু হয় না ?’— পটলবাবুর গৃহিণীর এই মন্তব্যের কারণ কী ?

উত্তরঃ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে পটলবাবু অনেক কিছু ভাবতে থাকেন। তার মনে হয় এই ছবিতে অভিনয় উন্নতির সিঁড়ির প্রথম ধাপ। এরপর যদি বেঁচে থাকেন তো ধীরে ধীরে মান, যশ, প্রতিপত্তি, খ্যাতি সবকিছুই তিনি লাই করবেন। আর এই আনন্দে বাহান্ন বছর বয়সে তিনি তিড়িং করে লাফ দিয়ে ওঠেন। শুধুমাত্র ছবিতে অভিনয়ের কথা হয়েছে। অভিনয়টাও হয়নি। তাই পটলবাবুর গৃহিণী উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেন।

১৪.৩ কার উপদেশের স্মৃতি পটলবাবুর অভিনয়-সত্তাকে জাগিয়ে তুলল ? কোন ‘অমূল্য উপদেশ তিনি দিয়েছিলেন পটল বাবুকে ?

উত্তরঃ প্রথমে শুধুমাত্র ‘আঃ’ ডায়লগটি তাকে বলতে হবে শুনে পটলবাবু বিরক্ত হন। উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। তখন তার নাট্যগুরু গগন পাকড়াশির উপদেশের স্মৃতি মনে পড়ে। আর তাঁর অভিনয় সত্তা জেগে ওঠে।

গগন পাকড়াশি পটলবাবুকে বলেছিলেন যত ছোটো পার্টই হোক না কেন, তাতে কোনো অপমান নেই। শিল্পী হিসেবে আসল কৃতিত্ব হল সেই ছোট্ট পার্টের মধ্যে থেকে শেষ রসটুকু নিংড়ে বার করে তাকে সার্থক করে তোলা। থিয়েটারের কাজ হল পাঁচজনে মিলেমিশে কাজ। সকলের সাফল্য জড়িয়েই নাটকের সাফল্য।

১৪.৪ ‘ধন্যি মশাই আপনার টাইমিং! বাপের নাম ভুলিয়ে দিয়েছিলেন প্রায় – ওঃ!’—বক্তা কে ? কোন্ ঘটনার ফলে তার এমন বক্তব্য ?

উত্তরঃ উদ্ধৃতাংশটির বক্তা সত্যজিৎ রায় রচিত ‘এক ডজন গপ্পো’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার গদ্যাংশের সিনেমার নায়ক চঞ্চলকুমার। সিনেমার একটা শট-এ. পটলবাবুর সঙ্গে নায়কের ধাক্কা খাওয়ার দৃশ্য আছে। সেই দৃশ্যে পটলবাবুর কপালের সঙ্গে নায়কের মাথা ঠুকে যায়। দুজনেই সামান্য আঘাত পায়। তাই দৃশ্য শেষ হলে নায়ক চঞ্চলকুমার উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেন।

১৪.৫ ‘এতদিন অকেজো থেকেও তাঁর শিল্পীমন ভোঁতা হয়ে যায়নি’—এই অনুভব কীভাবে জাগল পটলবাবুর মনে?

উত্তরঃ পরিচালক বরেন মল্লিকের একটা ছবিতে এক বদমেজাজি পথিকের অভিনয় করার সুযোগ পান পটলবাবু। খুব ছোট্ট পার্ট। নায়কের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগার একটা দৃশ্য আছে। আর ধাক্কা লাগার পর তাকে শুধু বিরক্তি-প্রকাশক শব্দ ‘আঃ” বলতে হবে। শুটিং-এর পর সকলে তার অভিনয়ের খুব প্রশংসা করেন। তখন নিজের সাফল্যে উপরিউক্ত অনুভব পটলবাবুর মনে জাগল।

১৪.৬ পটলবাবুর ফিল্মে অভিনয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রোডাকশান ম্যানেজার নরেশ দত্তর অনেকগুলি ব্যস্ত মুহূর্ত । টুকরো মুহূর্তগুলি জোড়া দিয়ে নরেশ দত্ত নামে মানুষটির সম্পূর্ণ ছবি নিজের ভাষায় তৈরি করো।

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের ‘এক ডজন গপ্পো’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পটলবাবু ফিমার গল্পে দেখি নিশিকান্ত ঘোষের কাছ থেকে খবর পেয়ে পটলবাবুর সঙ্গে অভিনয়ের ব্যাপারে কথা বলতে আসেন নরেশ দত্ত। নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে পটলবাবুর সঙ্গে যখন তার দেখা হয়, তখন দেখি পটলবাবুকে ‘অতুলবাবু’ নামে সম্বোধন করেন। বুঝতে পারি পটলবাবুর মতো সামান্য পার্টের অভিনেতার নাম মনে রাখার প্রয়োজন তিনি বোধ করেননি। পটলবাবুর দিকে চায়ের ভাঁড় যখন তিনি এগিয়ে দেন তখন বোঝা যায় তার মানবিকতাবোধ আছে। সকলের মাঝে পটলবাবুকে তিনি মনে রেখেছেন। আবার অভিনয়ের মাঝে মাঝেই তিনি আগন্তুকদের সরিয়ে দেন, অভিনয় শুরুর আগে সকলকে সচেতন করে দেন যাতে কারও কথা বলার কারণে অভিনয় বন্ধ করতে না হয়। সুতরাং, বোঝা যায় ব্যবস্থাপনাতেও তিনি বেশ পারদর্শী।

১৫. দশটি বাক্যের মধ্যে উত্তর দাও :

১৫.১ ‘আঃ’— এই একটিমাত্র উচ্চারণ কৌশলে আর অভিনয় দক্ষতায় ‘একটা আস্ত অভিধান’ লিখে ফেলা যায়। শব্দটি নিয়ে ভাবতে এমনটাই মনে হয়েছিল পটলবাবুর। পটলবাবুর ভাবনাধারা কি ঠিক বলে মনে হয় তোমার ? ‘আঃ’– শব্দের উচ্চারণে কত ধরনের ভাবপ্রকাশ সম্ভব বলে তোমার মনে হয় ?

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় রচিত ‘এক ডজন গল্পো’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার গদ্যাংশে দেখি পটলবাবু একবার ছবিতে পথচারীর ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পান। সেখানে তার ডায়লগ ছিল শুধু একটি শব্দ ‘আঃ’। এই শব্দটি বলার আগে রিহার্সাল করার সময় পটলবাবুর মনে হয়, এই শব্দটি দিয়ে আস্ত অভিধান লিখে ফেলা যায়। আর আমার মনে হয় এবিষয়ে পটলবাবুর ভাবনাধারা ঠিকই। একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে “আঃ শব্দটি কতরকমের ভাব প্রকাশ করে।
» চিমটি খেয়ে সামান্য আঘাতে ‘আঃ’ বলা যায়, গরমে ঠান্ডা শরবত খেয়ে বা হাওয়া পেয়ে বলা যায় আয়। আবার আচমকা কেউ কানে সুড়সুড়ি দিলে বলা যায় “আঃ”।

দীর্ঘশ্বাসের প্রকাশ পায় “আঃ” শব্দে, তাচ্ছিল্যের ভাবও প্রকাশ পায়। আবার অভিমানেও বলি “আঃ”। মৃদুস্বরে বলি আঃ, চড়াগলায়ও বলি আঃ ।— এইভাবেই ‘আঃ’ শব্দটি দিয়ে অনেকরকম ভাবপ্রকাশ করতে পারি আমরা।

১৫.২. ‘সে কী, টাকা না নিয়েই চলে গেল নাকি লোকটা। আচ্ছা ভোলা মন তো’। তোমার কি মনে হয়, সফলভাবে কাজ করার পরেও কেন টাকা না নিয়েই চলে গিয়েছিলেন পটলবাবু ? পটলবাবুর চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি যথার্থ বলে মনে হয় তোমার ? নিজের যুক্তি দিয়ে লেখো।

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের এক ডজন গপ্পো গ্রন্থের ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ নামক পাঠ্য গদ্যাংশে দেখি আচমকাই বাহার বছর বয়সে পটলবাবু সিনেমায় এক পথচারীর ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান। অভিনয় করার সময় তাকে শুধুমাত্র ‘আঃ’ শব্দটি উচ্চারণ করতে হবে জেনে প্রথমে তিনি নিরুৎসাহী হয়ে পড়েন। কিন্তু পরে নিজের নাট্যগুরু গগন পাকড়াশির উপদেশ মনে পড়ায় তিনি উৎসাহ ফিরে পান এবং অত্যন্ত সফলভাবে অভিনয় করেন। কিন্তু অভিনয়ের পর টাকা না নিয়েই চলে যান। আমার মনে হয় সফলভাবে অভিনয় করার পর পটলবাবু যে আত্মতৃপ্তি পেয়েছিলেন তার কাছে সামান্য পাঁচ-দশ টাকার কোনো মূল্যই ছিল না। নিজের ভালো লাগাকে তিনি দাম দিয়ে বেচতে চাননি। সেই আত্মতৃপ্তি তার কাছে হয়ে উঠেছিল অমূল্য আর তাই টাকা না নিয়েই চলে গিয়েছিলেন তিনি।

আপাতদৃষ্টিতে পটলবাবুর টাকা না নিয়ে চলে যাওয়াটাকে বোকামি বা ভুলো মনের পরিচায়ক বলেই মনে হবে। যে আর্থিক অনটনের মধ্যে তার দিন কাটত, সেখানে পাঁচ-দশ টাকার দাম অনেক বেশি। কিন্তু প্রকৃত শিল্প, পরিশ্রম কখনও টাকা দিয়ে বিচার করা যায় না। সত্যিকারের শিল্পীমন কখনও টাকার হিসাব করে না। তাই সেদিক থেকে দেখলে পটলবাবু চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি যথার্থ বলেই মনে হয়।

১৫.৩. কেমন করে শুটিং চলে, তার জীবন্ত কিছু টুকরো টুকরো ছবি উঠে এসেছে এই গল্পের আনাচে কানাচে। সেই সব টুকরো জুড়ে জুড়ে নিজের ভাষায় শুটিং-এর মুহূর্তগুলির একটি সম্পূর্ণ ছবি তৈরি করো।

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের ‘এক ডজন গপ্পো’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার গল্পে কেমন করে শুটিং হয় তার কিছু খণ্ড চিত্র উঠে এসেছে। গল্পে দেখি, চারিদিকে শুটিং-এর নানা সরঞ্জাম ও লোকজন ছড়িয়ে থাকে। শুটিং-এর নানা সরঞ্জাম কাঁধে করে বয়ে নিয়ে একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হয় কিছু লোককে। অভিনেতাকে ডায়লগ বলে দেওয়ার জন্য লোক থাকে। অভিনয় শুরুর আগে পরিচালক ‘স্টার্ট সাউন্ড’ বলেন। তারপর ভেতর থেকে সাউন্ড রেকর্ডিস্ট বলে ‘রানিং’। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা চলতে শুরু করে। তারপর পরিচালক বলে ‘অ্যাকশন’। এরপর অভিনেতারা ডায়লগ বলা শুরু করে। আর পরিচালক যখন ‘সাইলেন্স’ বলে, তখন সকল দর্শক, কলাকুশলীরা নিশ্চুপ হয়ে যায়। ওটাই শুটিং শুরুর সংকেত।

১৫.৪. অভিনয়ের নানা ধরনের প্রসঙ্গ এই গল্পে ছড়িয়ে আছে। থিয়েটার আর সিনেমার অভিনয়ের ধরনে সাদৃশ্য আর বৈসাদৃশ্যের কিছু কথা মনে এসেছিল পটলবাবুর। পটলবাবুর মতামত নিজের ভাষায় লিখে, এ বিষয়ে তোমার কোনো মতামত থাকলে তাও জানাও।

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায় রচিত ‘এক ডজন গপ্পো’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ গল্পে দেখি বাহান্ন বছর বয়সে সিনেমায় এক পথচারীর ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পান পটলবাবু। সিনেমায় অভিনয় করার সময় শুটিং দেখতে দেখতে মাঝে মাঝেই তার মনে থিয়েটার ও সিনেমার নানা সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যের কথা জেগে ওঠে।

সিনেমার শুটিং-এর সময় নানারকম যন্ত্রপাতি, ক্যামেরা নিয়ে লোকজনকে যাতায়াত করতে হয়। থিয়েটারে এসবের কোনো বালাই নেই। সিনেমার শুটিং-এর সঙ্গে সাইলেন্স, কার্ট, স্টার্ট সাউন্ড, রানিং, অ্যাকশন প্রভৃতি শব্দগুলো জড়িয়ে থাকে। কিন্তু থিয়েটারের সঙ্গে এসমস্ত শব্দের কোনো যোগ নেই।

সামান্য একটি শব্দ ‘আঃ’ উচ্চারণ করতে হবে শুনে পটলবাবু একটু বিরক্তই হন। বারবার থিয়েটারের সঙ্গে সিনেমার তফাৎ তার মনে আসে। তার মনে হয় সিনেমায় যা না কাজ তার ত্রিশগুণ ফুটানি আর ভড়ং। এর চেয়ে থিয়েটারের কাজই ভালো ৷

আসলে থিয়েটারে অভিনয় হয় সামনাসামনি, সরাসরি, সেখানে শুটিং-এর কোনো ব্যাপার নেই। তাই ঝামেলাও কম। কিন্তু সিনেমায় সে সুবিধা নেই। তাই নানারকম ব্যবস্থাপনাও করতে হয়। তবে সিনেমার অভিনয়ে একবার কোনো গণ্ডগোল হলে আবার নতুনভাবে অভিনয় করা যায়, কিন্তু থিয়েটারে সে সুযোগ নেই। যা হবে একবার ঠিক হলে ঠিক, ভুল হলে ভুল। ভুল শোধরানোর জায়গা থিয়েটারে নেই। থিয়েটারে নিজের বক্তব্যকে খুব জোরে উচ্চারণ করে প্রতিষ্ঠা করতে হয় কিন্তু সিনেমায় তার প্রয়োজন নেই। কারণ সিনেমায় সামনে থাকে ক্যামেরা। কিন্তু থিয়েটারে অভিনেতার সামনে থাকে অসংখ্য দর্শক শ্রোতা। শেষ সারির শ্রোতার কাছেও যাতে বক্তব্য পৌঁছায় সেদিকে নজর রাখতে হয় অভিনেতাদের।

তবে যতই পার্থক্য থাকুক, দুটো ক্ষেত্রেই অভিনয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুটো ক্ষেত্রেই সামান্য পার্ট থেকে রস নিংড়ে বের করা কুশীলবদের কাজ। ভালো শিল্পীর কদর উভয়ক্ষেত্রেই বর্তমান।

১৫.৫. বছর পঞ্চাশের বেঁটেখাটো টাকমাথা নাট্যপ্রিয় পটলবাবুকে তোমার কেমন লাগল নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরঃ সত্যজিৎ রায়ের ‘এক ডজন গপ্পো’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পটলবাবু ফিল্মস্টার’ গল্পে দেখি বাহান্ন বছর বয়সি পটলবাবুকে।

গল্পের শুরুতেই দেখি সিনেমায় একটা পথচারীর ভূমিকায় ছোটো পার্ট করার সুযোগ পান পটলবাবু। এ সুযোগ অবশ্য তার কাছে আসে প্রতিবেশী নিশিকান্ত ঘোষের হাত ধরে। নিশিকান্ত ঘোষের ছোটো শালা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত। তিনি বছর পাশের বেঁটেখাটো, মাথায় টাক আছে এমন লোকের সন্ধান করলে নিশিকান্তবাবুই পটলবাবুর কথা তাকে বলেন। জানতে পারি পটলবাবুর অভিনয় করার শখ। নেশাও বলা যায়। যাত্রায়, শখের থিয়েটারে, পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠানে তাঁর বাঁধা কাজ ছিল। কিন্তু নিজের ন’বছরের পুরনো রেলের চাকরি খুইয়ে পেটের জ্বালায় সে শখও তার হারিয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন জায়গায় রোজগারের সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। কিন্তু শখটা মনের কোণে লুকিয়ে ছিল। তাই সিনেমায় খুব ছোট্ট পার্ট অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে তিনি রাজি হয়ে যান।

পটলবাবুকে দেখে মনে হয় তিনি খুব কল্পনাবিলাসী। তাই সিনেমায় সুযোগ আসতে না আসতেই তিনি নিজের ভবিষ্যতের মান-যশ-অর্থ, প্রতিপত্তির কথা ভাবতে বসেন। অবশ্য খুব একটা সাংসারিক তাকে বলা যায় না। সিনেমায় অভিনয় করার সুযোগ আসায় তিনি বাজারে গিয়ে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস আনতেই ভুলে যান।

তিনি যে খুব সময় সচেতন তার প্রমাণ পাওয়া যায় নির্দিষ্ট সময় শুটিং-এর জায়গায় পৌঁছানোর মধ্যে দিয়ে। সিনেমা যে খুব একটা দেখেন না পটলবাবু, তারও পরিচয় পাই। তাই নায়ক চঞলকুমার ও পরিচালক বরেন মল্লিককে তিনি চিনতে পারেন না।

সিনেমায় শুধুমাত্র ‘আঃ শব্দটি উচ্চারণ করতে হবে শুনে প্রথমে পটলবাবু একটু বিরক্তই হন। কিন্তু পরে নিজের নাটাগুরু গগন পাকড়াশির কথা তার মনে পড়ে যায় এবং পরামর্শমতো ছোটো পার্টের মধ্যে থেকেও রস নিংড়ে বার করার চেষ্টা করেন তিনি।

নিজের ছোটো পার্টকেও তিনি গুরুত্ব দেন। তাই বারবার নিজে নিজে রিহার্সাল দিয়ে নেন। অভিনয় সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। তাই পথচারীর হাতে খবরের কাগজ দেওয়ার পরামর্শ তিনি পরিচালককে দেন এবং এতে পরিচালকের কাছ থেকে প্রশংসাও পান।

শেষে অসাধারণ অভিনয় করে সকলের মন জিতে নেন। কিন্তু পারিশ্রমিক না নিয়েই সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। আসলে তিনি নিজের শিল্পী সত্তাকে সামান্য পাঁচ-দশ টাকার জন্য বিক্রি করতে চাননি। আর তাই সমগ্র গল্পটা পড়ে পটলবাবুকে আমার দক্ষ অভিনেতা ও নিরেট ভালো মানুষ বলেই মনে হয়।

This Post Has 2 Comments

  1. Sampriti Mondal

    Thank you for this question’s answer .
    Because I am poor in Bengali.
    Once again thank you 😄.

Leave a Reply