সাহিত্য মেলা
অষ্টম শ্রেণি বাংলা
স্বাধীনতা কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Sadhinota Kobitar Question Answer Class 8 Bengali wbbse
স্বাধীনতা কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Sadhinota Kobitar Question Answer Class 8 Bengali wbbse
স্বাধীনতা কবিতার কবিতা, কবি পরিচিতি, কবিতার ব্যাখ্যা, শব্দার্থ, হাতে কলমে প্রশ্ন ও উত্তর, অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Sadhinota Kobitar Question Answer Class 8 Bengali wbbse
1. অষ্টম শ্রেণির বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্নোত্তর Click Here
2. অষ্টম শ্রেণির সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্ন Click Here
স্বাধীনতা কবিতার কবিতা, কবি পরিচিতি, কবিতার ব্যাখ্যা, শব্দার্থ, হাতে কলমে প্রশ্ন ও উত্তর, অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর অষ্টম শ্রেণির বাংলা | Sadhinota Kobitar Question Answer Class 8 Bengali wbbse
স্বাধীনতা
—ল্যাংস্টন হিউজ
স্বাধীনতা কোনোদিনই আসবে না,
না,
আজ নয়
কোনোদিনই নয়
ভয় অথবা সমঝোতার মধ্যে,
তার কারণ
আমাদেরও তো অন্য সকলের মতন
অধিকার রয়েছে,
দুপায়ের ওপর দাঁড়িয়ে থাকার,
দুকাঠা জমির মালিকানার,
শুনে শুনে কান পচে গেল,
‘সময়ে
সবই হবে, কাল একটা নূতন দিন’-
মৃত্যুর পরে তো আমার কোনো
স্বাধীনতার প্রয়োজন হবে না, আগামীকালের রুটি
দিয়ে কি আজ বাঁচা যায়,
স্বাধীনতা একটা শক্তিশালী বীজপ্রবাহ,
বাঁচার জন্য,
একটা বড়ো প্রয়োজনের জন্য,
আমিও তো সেখানেই বাস করি,
তুমি যেখানে,
তাই
স্বাধীনতা আমার প্রয়োজন
তোমার যেমন।
কবি পরিচিতিঃ ল্যাংস্টন হিউজ (১৯০২– ১৯৬৭) : বিংশ শতকের কুড়ির দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং সমাজকর্মী ছিলেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম The Weavy Blues। তাঁর রচিত অন্যান্য বই Male Bone, Jerico-Jim Crow প্রভৃতি। কাব্য স্রষ্টা হিসেবে তিনি বহু পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন।
∆শব্দার্থ ও টীকা :
• স্বাধীনতা— নিজের অধীনতা, অন্যের দ্বারা শাসিত নয় এমন অবস্থা
• সমঝোতা— আপস, বনিবনা
• অধিকার— দখল, স্বত্ব
• কাঠা— জমির পরিমাণ বিশেষ (প্রায় ৭২০ বর্গফুট)
• মালিকানা— মালিকের অধিকার স্বত্ব।
• রেনেসাঁ— নবজাগরণ
• তরজমা— ভাষান্তর, এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ।
বিষয়সংক্ষেপঃ স্বাধীনতা’ শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে ‘স্ব’-এর অধীনতা, অর্থাৎ, নিজের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ। বাস্তবিকভাবে মুখে স্বাধীন হয়েছি বললেও প্রকৃত স্বাধীনতা কেউই পায়নি। ভয় অথবা বােঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে কোনােদিনই স্বাধীনতা আসবে । দু-কাঠা জমির মালিক হওয়া কিংবা দু-পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার অধিকার সকলের মতাে আমাদেরও আছে। সময়ে সবই হবে, কাল একটা নূতন দিন— এ কথা বারবার শুনে কান পচে গেল। এই শুনতে শুনতে মৃত্যু এসে গেলে আমাদের আর স্বাধীনতার দরকার নেই। স্বাধীনতা এমন একটি শক্তিশালী বীজপ্রবাহ, যার ধারা চলতেই থাকে। এটি নিয়েই মানুষ বাঁচে যা সবার জীবনে বড়াে প্রয়ােজন।
নামকরণঃ নামকরণ হয় কখনাে বিষয়কেন্দ্রিক, কখনাে উপমাধর্মী, কখন বা চরিত্রকেন্দ্রিক। নামকরণ যখন বিষয়কেন্দ্রিক হয় তখন তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে বিষয়ের সারমর্মতা। আমেরিকান কবি ল্যাংস্টন হিউজের লেখা ইংরেজি ভাষার কবিতাটি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও মুকুল গুহ বাংলায় তরজমা করেছেন। কবিতাটির নামকরণ হয়েছে স্বাধীনতা অর্থাৎ, সমগ্র কবিতায় মানুষের অন্তসত্ত্বার স্বাধীনতা প্রাপ্তির তীব্র আকাঙ্খ বারবার অনুরণিত হয়েছে। কবিতাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, কবি বলতে চেয়েছেন, স্বাধীনতা অর্থাৎ নিজেই নিজের অধীনে থাকা। সবার চাহিদার মূল্য দিয়ে নিজের মতাে বাঁচা। এটি মানুষের জন্মগত অধিকার। এসব কথাই এই কবিতার সমস্ত অংশ জুড়ে আছে। কবিতার শুরু, মাঝামাঝি ও শেষ-প্রতি ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা এবং তার জন্য এই কবির স্পষ্ট ও জোরালাে অভিমত ব্যক্ত হয়েছে। পরাধীন মানুষের কাছে, জীবনে বেঁচে থাকার জন্য এই অভিমত ভীষণ প্রয়ােজন। স্বাধীনতা ছাড়া মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ, চাহিদা ও মানসিকতার সমৃদ্ধি ঘটে । কবিতায় সে কথাই বারবার উচ্চারিত হয়েছে। বিষয়গত ও তাৎপর্যগতভাবে স্বাধীনতা কথাই বারবার আন্দোলিত হয়েছে। তাই কবিতাটির নামকরণ সার্থক।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর : স্বাধীনতা কবিতা অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Extra Question Answer Sadhinota Kobita Class 8 Bengali wbbse
• সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো।
১. ‘স্বাধীনতা’ কবিতাটি লিখেছেন—
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) কাজী নজরুল ইসলাম
(গ) ল্যাংস্টন হিউজ
(ঘ) সুভাষ মুখোপাধ্যায়
উত্তরঃ (গ) ল্যাংস্টন হিউজ।
২. ‘স্বাধীনতা’ কবিতাটি তরজমা করেছেন—
(ক) শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
(খ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়
(গ) শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও মুকুল গুহ
(ঘ) মুকুল গুহ ও মানবেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তরঃ (গ) শক্তি চট্টোপাধ্যায় ও মুকুল গুহ।
৩. ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্র
(ক) Male Bone
(খ) The Weavy Blues
(গ) The Ways of White Flocks
(ঘ) Jerico-Jim Crow
উত্তরঃ (খ) The Weavy Blues
৪. ল্যাংস্টন হিউজ জন্মগ্রহণ করেন কবে?
(ক) ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ (ক) ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে
৫. ল্যাংস্টন হিউজ মারা যান –
(ক) ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে
উত্তরঃ (খ) ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে।
৬. স্বাধীনতা কবিতায় কী কোনোদিনই আসবে না ?
(ক) পরিত্রাণ
(খ) অধিকার
(গ) স্বাধীনতা
(ঘ) দখল
উত্তরঃ (গ) স্বাধীনতা।
৭. “আজ নয় /কোনোদিনই নয় / ভয় অথবা সমঝোতার মধ্যে”- কী নয় বলে মনে করো ?
(ক) শত্রুতা
(খ) বন্ধুত্ব
(গ) খেলা
(ঘ) স্বাধীনতা
উত্তরঃ (ঘ) স্বাধীনতা।
৮. কয় কাঠা জমির মালিকানার কথা ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় বলা হয়েছে?
(ক) দু-কাঠা
(খ) পাঁচ কাঠা
(গ) চার কাঠা
(ঘ) তিন কাঠা
উত্তরঃ (ক) দু-কাঠা।
৯. “স্বাধীনতা একটা শক্তিশালী”—কী?
(ক) মানুষ
(খ) দৈত্য
(গ) বীজপ্রবাহ
(ঘ) অস্ত্র
উত্তরঃ (গ) বীজপ্রবাহ
১০. দু-কাঠা জমির পরিমাপ হল—
(ক) প্রায় ৭০০ বর্গফুট
(খ) ৭২০ বর্গফুট
(গ) ৭৩০ বর্গফুট
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তরঃ (ঘ) কোনোটিই নয়
১১. “আমার কোনো স্বাধীনতার প্রয়োজন হবে না”—কখন ?
(ক) বিদেশে যাওয়ার পরে
(খ) মৃত্যুর পরে
(গ) সব পাওয়ার পরে
(ঘ) চাকরি পাওয়ার পর
উত্তরঃ (খ) মৃত্যুর পরে
১২. স্বাধীনতা আমার প্রয়োজন—
(ক) তার যেমন
(খ) তোমার যেমন
(গ) তাদের যেমন
(ঘ) ওদের যেমন
উত্তরঃ (খ) তোমার যেমন।
১৩. ল্যাংস্টন হিউজ বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের অন্যতম কীসের নেতা?
(ক) বিপ্লবীদের
(খ) স্বাধীনতা আন্দোলনের
(গ) হালেম রেনেসাঁসের
(ঘ) শিল্পবিপ্লবের
উত্তরঃ (গ) হালেম রেনেসাঁসের।
হাতেকলমে প্রশ্নোত্তর : স্বাধীনতা কবিতা অষ্টম শ্রেণি বাংলা | Hate Kolome Question Answer Sadhinota Kobita Class 8 Bengali wbbse
১.১ ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী ?
উত্তরঃ ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘The Weavy Blues’.
১.২ তিনি কোন দেশের রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত ?
উত্তরঃ তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত।
২। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখাে :
২.১ ‘স্বাধীনতা’ বলতে কী বােঝাে ? কী কী বিষয়ে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়ােজন বলে তুমি মনে করাে ?
উত্তরঃ ‘স্বাধীনতা’ শব্দের অর্থ নিজের অধীনে থাকা। ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য ও স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রেখে বেঁচে থাকাই স্বাধীনতা। দেশের স্বাধীনতা বলতে বিজাতির অধীনে না থাকাকে এবং নিজের মতো করে কাজ করা ও বেঁচে থাকাকে বোঝানো হয়ে থাকে।
» নানা বিষয়ে মানুষের স্বাধীনতা প্রয়ােজন। যেমন- বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, লেখাপড়া, ব্যাবসাবাণিজ্য ইত্যাদি বিষয়ের স্বাধীনতা। প্রভৃতি। এ ছাড়া অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদার ব্যাপারেও মানুষের স্বাধীনতা থাকা প্রয়ােজন।
২.২ মানুষ পরাধীন হয় কখন ?
উত্তরঃ মানুষ যখন অন্য কোন মানুষ বা রাষ্ট্রশক্তির অধীনতা শিকারে বাধ্য হয় অর্থাৎ তাকে অপরের বশ্যতা স্বীকার করতে হয় তখনই সে পরাধীন হয়ে পড়ে। অন্যভাবে বলা যায়, শাসকশ্রেণির অত্যাচার ও অন্যায়কে প্রতিরােধ না-করে তাদের বশ্যতা স্বীকার করলে মানুষ পরাধীন হয়। এককথায়, মানুষের নিজস্বতা বিসর্জনই হল পরাধীন হওয়া।
২.৩ পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা পাওয়ার পথগুলি কী কী ?
উত্তরঃ পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা পাওয়ার প্রধান পথগুলি হল— শিক্ষা, আত্মমর্যাদাবােধ, জগৎ ও জীবন সম্পর্কে সচেতনতা। শিক্ষালাভের দ্বারা মানুষ দেশ ও দশের স্বরূপ বুঝে নিতে পারে। তার মাধ্যমে গড়ে ওঠে প্রকৃত মর্যাদাবােধ। আর তার দ্বারা সে পরাধীন মানুষের মনে আত্মশ্রদ্ধা, গৌরববােধ ও কল্যাণকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। তার শাসক শ্রেণির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলােচনার মাধ্যমে হারানাে স্বাধীনতাকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এই প্রচেষ্টা সফল না হলে সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে হবে। সবাইকে নিজের বিষয়ের প্রতি সচেতন হতে হবে এবং পরস্পর পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। কোনাে প্রলােভনে ভুললে হবে , কোনাে অবস্থাতেই হতাশ হওয়া চলবে না। সবশেষে প্রবল জাতীয়তাবােধ, দেশ ও জাতির প্রতি ভালােবাসাই স্বাধীনতালাভের প্রকৃতি পথ হয়ে ওঠে।
২.৪ ‘স্বাধীনতা’ কবিতাটির মধ্যে দুটি পক্ষ আছে— ‘আমি-পক্ষ’ আর ‘তুমি-পক্ষ’। এই ‘আমি-পক্ষ’ আর ‘তুমি-পক্ষ’–এর স্বরূপ বিশ্লেষণ করাে। এই ক্ষেত্রে ‘সে-পক্ষ’ নেই কেন ?
উত্তরঃ ‘আমি-পক্ষ’ এখানে পরাধীন মানুষ, যারা অত্যাচারিত, শাসিত-শােষিত, বতি আর ‘তুমি-পক্ষ’ অত্যাচারী, সুখভােগী, শাসক-শােষক-প্রভু সম্প্রদায়।
» কবির বক্তব্য সরাসরি দুটি পক্ষকে নিয়ে। আমিপক্ষে আছে পরাধীন অত্যাচারিতরা আর তুমি-পক্ষে আছে সাম্রাজ্যবাদী, অত্যাচারী ও অন্যের স্বাধীনতা হরণকারীরা। সে-পক্ষ সমাজের মধ্য স্বত্ত্বভােগীর মতাে তারা সরাসরি কাজে যুক্ত হয় না। যেহেতু কবিতাটিতে অভিযােগকারী ও অভিযুক্ত সরাসরি অবতীর্ণ তাই তৃতীয় ‘সে পক্ষ’ এখানে অপ্রয়ােজনীয়। একারণেই কবিতায় ‘সে পক্ষ’ নেই।
২.৫ সময়ে/সবই হবে, কাল একটা নূতন দিন -কবিতার মধ্যে উদ্ধৃতিচিহ্নের ভিতরে থাকা কথাটি কার/কাদের কথা বলে তােমার মনে হয় ? তাঁরা এ ধরনের কথা বলেন কেন ?
উত্তরঃ মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজের ‘স্বাধীনতা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃতিচিহ্নের ভিতরে থাকা কথাটি শাসকের বলে আমার মনে হয়।
» শাসক ও তার দলের সুবিধাভােগী আপাত বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক, সমাজতত্ত্ববিদ, কবি-শিল্পীরা মানুষের সমবেত প্রতিবাদকে বন্ধ করতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। তাঁরা স্বাধীনতাকামী মানুষকে বােঝাবার চেষ্টা করে, সময়ে সবই হবে, একটা নূতন দিন আসছে। দীর্ঘসূত্রতার সুযােগ নিয়ে তারা নিপীড়িত অত্যাচারিতদের প্রবােধ দেয়। আসলে তারা সময় নিয়ে প্রতিবাদীদের লক্ষ্যকে নিস্তেজ করে দিতে সচেষ্ট হয়। প্রতিবাদমুখর আন্দোলনকারী যাতে সােচ্চার কণ্ঠে নিজেদের স্বাধীনতা ও সুবিধার কথা বলে, শাসক ও তাঁর অনুবর্তীদের বিব্রত বা অতিষ্ঠ না-করে, তাদের সুখ-সমৃদ্ধি শান্তির ব্যাঘাত না-ঘটায়, সেকারণেই তাঁরা এধরনের কথা বলেন। এভাবেই তাঁরা ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়।
২.৬ আগামীকালের রুটি/দিয়ে কি আজ বাঁচা যায়’ -এখানে ‘আগামীকাল’ আর ‘আজ’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?
উত্তরঃ ল্যাংস্টন হিউজের ‘স্বাধীনতা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃত পঙক্তির ‘আগামীকাল’ ও ‘আজ’ শব্দ দুটি গভীর তাৎপর্যবাহী। আগামীকালের অর্থ হল, পরাধীন মানুষের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার স্বপ্ন মাত্র। কিন্তু স্বপ্ন নিয়ে কোনাে জাতি বাঁচাতে পারে না। আগামীর স্বপ্ন মানুষকে উজ্জীবিত করে তাকে বাঁচিয়ে রাখে। স্বাধীনতাকামী মানুষ আগামীকালের তত্ত্বকথায় আস্থা রাখতে পারে না। তারা বুঝতে পারে, আজকের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আগামীকালের সমৃদ্ধিকে প্রতিষ্ঠা দেবে।
‘আজ’ শব্দটির মাধ্যমে কবি বর্তমান সমাজের সমস্যা জর্জরিত পরাধীন মানুষ ও তাদের চরম দৈন্যদশাকে ব্যক্ত করেছেন। পরাধীনতার গ্লানি যে মানুষকে পীড়িত করছে, সে তৎক্ষণাৎ রেহাই পেতে চায়। যেখানে মানবিকতা লুণ্ঠিত, তাকে আজই মুক্ত করা প্রয়ােজন। অকারণ সময় নষ্ট করা অনুচিত। পরাধীন মানুষ তাই স্তোকবাক্য বা আগামীর স্বপ্ন চায় না তারা আজই এই অবৃথার থেকে মুক্তি চায়।
৩। নিম্নলিখিত পংক্তিগুলির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে :
৩.১ “মৃত্যুর পরে তাে আমার প্রয়ােজন হবে না।”
উৎস : উদ্ধৃতাংশটি ল্যাংস্টন হিউজের ‘স্বাধীনতা নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য : এখানে কবি বলতে চেয়েছেন, মানুষের জীবনের সমাপ্তি ঘটে মৃত্যুতে। তখন সে দেহ প্রাণহীন এবং তা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার অপেক্ষায়। অর্থাৎ, সে দেহ এমনিতেই মুক্ত। তাই কবি মৃত্যুর পরে স্বাধীনতার প্রয়ােজন বােধ করেন না।
৩.২ “স্বাধীনতা একটা শক্তিশালী বীজপ্রবাহ।”
উৎস : উদ্ধৃতাংশটি ল্যাংস্টন হিউজের ‘স্বাধীনতা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য : এখানে কবি ল্যাংস্টন হিউজ বলতে চেয়েছেন, স্বাধীনতা একটি প্রবাহ। প্রবাহ বলতে স্রোত বা ধারা বােঝায়। যেমন, নদীস্রোত বা নদীর জলের ধারা। এই স্রোত বা ধারা বিচ্ছিন্ন হয় না কখনও। তা বয়েই চলে। স্বাধীনতা তেমনই একটি বীজপ্রবাহ। কারণ, বীজের মধ্যে থাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থাৎ, আগামীর সম্ভবনা। যেহেতু স্বাধীনতার বিষয়টি মানুষের সেই লড়াই বা সংগ্রামের চিরাচরিত ইতিহাসের প্রবহমানতাকেই ইঙ্গিতপূর্ণ করে তুলেছে, তাই কবি “শক্তিশালী বীজপ্রবাহ’ কথাটি ব্যবহার করেছেন।
৩.৩ “আমাদেরও তাে অন্য সকলের…. জমির মালিকানার।”
উৎস : উদ্ধৃতাংশটি ল্যাংস্টন হিউজের লেখা ‘স্বাধীনতা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তাৎপর্য : এখানে কবি এই পৃথিবীর ওপর সকল মানুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। পৃথিবী হল- মহাশূন্যের একটি গ্রহ। এই গ্রহের জল-মাটিতে সকলেই জন্মেছে। সুতরাং, তা কারাের নিজস্ব হতে পারে না। কিন্তু, মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ শক্তি ও বুদ্ধিবলে। অন্যদের সমানাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চায়। সেইজন্য কবি সেইসব বিশেষ সুবিধাবাদী, সুখভােগী শাসকদের ইঙ্গিত করে বলেছেন, তাদের মতােই আমাদেরও সমস্ত কিছুতে অধিকার আছে। আর আছে দু-পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার কিংবা দু-কাঠা জমির মালিকানার অধিকার।
৩.৪ “স্বাধীনতা আমার প্রয়ােজন / তােমার যেমন।”
উৎস : ল্যাংস্টন হিউজ-এর ‘স্বাধীনতা’ কবিতা থেকে পঙক্তিটি উদ্ধৃত হয়েছে।
তাৎপর্য : এই পঙক্তির মধ্য দিয়ে কবি বলতে চেয়েছেন, পৃথিবীতে সকলেরই সমস্ত কিছুতে সমান অধিকার রয়েছে। বিশেষ এক শ্রেণির মানুষ সুখভােগ করবে, অন্যের ওপর প্রভুত্ব বিস্তার করবে, তা হতে পারে না। সেজন্য সেইসব মানুষের সব কিছুতে স্বাধীনতা বা অধিকারের প্রয়ােজনীয়তাকে গুরুত্ব দিয়ে কবি নিজেদের স্বাধীনতার প্রয়ােজনকে সমানভাবে তাৎপর্যমন্ডিত করে তুলেছে।
৪। নীচের প্রতিটি শব্দের ব্যাসবাক্য-সহ সমাস নির্ণয় করাে : স্বাধীনতা, দু-কাঠা, আগামীকাল, বীজপ্রবাহ।
» স্বাধীনতা = স্ব-এর অধীনতা — সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস।
» দু-কাঠা = দুই কাঠার সমাহার — দ্বিগু সমাস।
» আগামীকাল = আগামী যে কাল। — সাধারণ কর্মধারয় সমাস।
» বীজপ্রবাহ = বীজ রূপ প্রবাহ — রূপক কর্মধারয় সমাস।
৫. স্বাধীনতা নিয়ে লেখা আরও দুটো কবিতার উল্লেখ করাে এবং এই কবিতার সঙ্গে তাদের তুলনামূলক আলােচনা করাে :
উত্তরঃ স্বাধীনতা নিয়ে লেখা আরও দুটি কবিতা হল— কবি মুকুন্দদাসের ‘করমের যুগ এসেছে এবং রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতা’।
‘স্বাধীনতা’ কবিতার সঙ্গে বাকি দুটি স্বাধীনতা-বিষয়ক কবিতার মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকলেও সাদৃশ্যই বেশি আছে। ‘করমের যুগ এসেছে-তে আছে-কেউ বসে নেই, সকলেই স্বাধীনতার জন্য জেগে উঠেছে। সকলের কণ্ঠে একই উচ্চারণ। ধ্বনি, মানী, দুঃখী, দীন সকলেই সমান। কেউই ছােটো নয়।
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাধীনতা কবিতায় আছে স্বাধীনতা ছাড়া কেউ বাঁচতে চায় না। দাসত্বের শিকল কেউ পায়ে পরতে চায় না। দীর্ঘকাল দাসত্ব মানে নরকযন্ত্রণা ভােগ করা। একদিনের জন্যও যদি স্বাধীনতা পাওয়া যায়, তবে তা স্বর্গসুখের সমান। সবশেষে বলা যায়, ল্যাংস্টন হিউজের কবিতা বিদেশের, আর মুকুন্দ দাস ও রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা এই ভারতের। এই পার্থক্য ছাড়া মূল বক্তব্য সকলেরই প্রায় এক—পরাধীনতা থেকে মুক্তিলাভ ।