স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী প্রশ্ন ও উত্তর | কমলা দাশগুপ্ত | সপ্তম শ্রেণি [WBBSE]

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

 

          স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী

               —কমলা দাশগুপ্ত 
 
লেখিকা পরিচিতি : কমলা দাশগুপ্ত ১৯০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য বর্ণময় চরিত্র। প্রত্যক্ষভাবে সশস্ত্র বিপ্লবে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। গোপনে বিরোধীদের অস্ত্র সরবরাহ করতেন। একাধিকবার কারাবরণ করেছিলেন ব্রিটিশের হাতে। তাঁর আত্মজীবনী ‘রক্তের অক্ষরে’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। তিনি ‘মন্দিরা’ পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সমস্ত নারী অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের জীবন ও লড়াইয়ের ইতিহাস রাখা রয়েছে তাঁর ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী’ নামক গ্রন্থে (১৯৬৩)। পাঠ্য রচনাটি এই বই থেকেই নেওয়া হয়েছে। কমলা দাশগুপ্ত ২০০০ সালে পরলোক গমন করেন।
 
সারসংক্ষেপ : ১৮৮৮ সালে হাওড়া জেলার বালিতে জন্ম ননীবালা দেবীর। পিতা সূর্যকান্ত ব্যানার্জী ও মাতা গিরিবালা দেবী। ষোলো বছর বয়সের বিধবা ননীবালা দেবী বিপ্লবের দীক্ষা নেন ভ্রাতুষ্পুত্র অমরেন্দ্র চ্যাটার্জির কাছে। পলাতক অমর চ্যাটার্জি ও তার সহকর্মীকে প্রায় দুমাস আশ্রয় দেন রিষড়াতে। অমর চ্যাটার্জি পলাতক হলেও ধরা পড়েন রামচন্দ্র মজুমদার। ননীবালা দেবী প্রেসিডেন্সি জেলে রামবাবুর স্ত্রী সেজে মসার পিস্তলের গুপ্ত খবর তার থেকে জেনে আসেন। ১৯১৫ সালে গৃহকর্ত্রী সেজে চন্দননগরে আশ্রয় দেন বিপ্লবী নেতা যাদুগোপাল মুখার্জী, অমর চ্যাটার্জি, অতুল ঘোষ, ভোলানাথ চ্যাটার্জি, নলিনীকান্ত কর, বিনয় ভূষণ দত্ত ও বিজয় চক্রবর্তীকে। পুলিশ চন্দননগরে তল্লাশি চালালে সবাই পলাতক হন। ননীবালা দেবী বাল্যবন্ধুর দাদা প্রবোধ মিত্রের সঙ্গে পেশোয়ারে পালিয়ে যান। সেখানে কলেরা রোগাক্রান্ত অবস্থায় ধরা পড়েন। তাঁকে পাঠানো হয় কাশীর জেলে, পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট জিতেন ব্যানার্জি তাকে রাখেন কাশীর “পানিশমেন্ট সেল’-এর অন্ধকার আলো বাতাসহীন কক্ষে। তিনদিন প্রায় আধঘণ্টা ধরে তাকে আটকে রাখা হয়। অর্ধমৃত অবস্থা হলেও তিনি মুখ খোলেন না। এরপর তাঁকে পাঠানো হয় প্রেসিডেন্সি জেলে। আই. বি পুলিশের সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি তাঁকে জেরা করেন। তিনি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। জিজ্ঞাসা সূত্রে তিনি জানান বাগবাজারে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রীর কাছে তাকে পাঠানো হলে তবেই তিনি খাবেন। তাঁকে দরখাস্ত লিখতে বলা হয়। কিন্তু তাঁর লেখা দরখাস্ত ছিঁড়ে কাগজের টুকরিতে ফেলে দিলে তিনি গোল্ডিকে চড় কষান। দুবছর বন্দিজীবন কাটিয়ে ১৯১৯ সালে মুক্তি পান। বাইরে এসে আত্মীয়স্বজন কেউ তাকে স্থান দেয় না। সকলের অনাদর, লাঞ্চনা, দারিদ্র্যের মধ্যেও গৌরবে স্থির হয়ে কাটিয়ে দেন বছরের পর বছর। ১৮৮৭ সালে দুকড়িবালা দেবী জন্মগ্রহণ করেন বীরভূম জেলায় নলহাটি থানার কাউপাড়া গ্রামে। পিতা নীলমণি চট্টোপাধ্যায় ও মা কমলকামিনী দেবী। স্বামী ফণীভূষণ চক্রবর্তী। তিনি বোনপো নিবারণ ঘটককে খুব স্নেহ করতেন। নির্ধারণ ও অন্যান্য বন্ধুবান্ধব সকলের স্বদেশি বই ও বেআইনি বই পড়ার আড্ডা ছিল তাঁর বাড়ি। নিবারণের সঙ্গে পরিচয় সূত্রেই বিপ্লবী দলে তাঁর নাম লেখানো। রডা কোম্পানি থেকে অস্ত্রশস্ত্র গাড়ির গাড়োয়ান সেজে চুরি করে হরিদাস দত্ত। সেই চুরি করা সাতটা মসার পিস্তল লুকিয়ে রাখা হয় তাঁর বাড়িতে। পুলিশের কাছে ধরা পড়েন তা-ও মুখ খোলেন না। বিচারে তাঁর দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। মুক্তি পান ১৯১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। সম্ভবত ১৯৭০ সালে তাঁর মৃত্যু হয় 
মূলকথা : ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী ‘ নামক পাঠ্য গদ্যাংশে মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামী ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর অসীম সাহস, আত্মত্যাগ, দেশের জন্য জীবন বলিদানের কথা লেখিকা কমলা দাশগুপ্ত আমাদের জানিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীরাও যে পুরুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, সংসার, সমাজ ভুলে দেশের জন্য প্রাণোৎসর্গ করেছিল তার নিদর্শন এই গদ্যাংশ।
  » লেখিকা কমলা দাশগুপ্ত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক পাঠ্য গদ্যাংশে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এমন দুজন নারী—ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর কথা লিখেছেন। ষোলো বছরের বিধবা নারী ননীবালা দেবীর বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত হওয়া, বিপ্লবীদের সাহায্য করা, এমনকি অমানবিক অত্যাচার সহ্য করেও সঙ্গীসাথিদের নাম প্রকাশ না করা —এই সমস্ত কাহিনি এই গল্প থেকে জানতে পারি। অন্যদিকে দুকড়িবালা দেবীর আত্মত্যাগ, বিপ্লবের স্বার্থে নিজের সন্তানের কথাও না ভেবে, সঙ্গীসাথিদের নাম প্রকাশ না করে দুবছরের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করা—এসবই আমরা জানাতে পারি পাঠ্যগল্পটি থেকে। স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল নারীরাও। দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন ছিল তাদের চোখেও। পাঠ্য গদ্যাংশে স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের ভূমিকার কথাই বলা আছে।
 
• শব্দার্থ ও টীকা : 
 
» ভ্রাতুষ্পুত্র— ভাইয়ের ছেলে। 
» দৃষ্টি— নজর। 
» বিধবা— স্বামী মৃত যে নারীর। 
» গুপ্ত— লুকানো। 
» হাসিল— আদায়। 
» ব্যবধান — দূরত্ব। 
» ইন্টারভিউ— সাক্ষাৎকার। 
» নিশাচর— রাত্রে বিচরণ করে যে। 
» হুলিয়া— পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করার জন্য চেহারার বর্ণনা ও নামসহ বিজ্ঞাপন। 
» নিমেষে— পলকে। 
» যাবৎ— ধরে। 
» সন্ধান— খোঁজ। 
» চূর্ণ— ভেঙে দেওয়া। 
» চূড়ান্ত— সর্বশেষ। 
» জ্ঞানশূন্য — অজ্ঞান। 
» দরখাস্ত – আবেদন জানিয়ে লিখিত পত্র। 
» ক্ষিপ্ত — খেপা, উন্মত্ত।
» পরিপূর্ণ— ভর্তি। 
» বোনপো― বোনের ছেলে। 
» মসার— অতিরিক্ত গুলি রাখার খোপযুক্ত এক বিশেষ ধরনের পিস্তল।
» তল্লাশি— খোঁজ, অনুসন্ধান। 
» সশ্রম— শ্রমের সঙ্গে যুক্ত। 
» জেরা— প্রশ্নের পর প্রশ্ন। 
» গাড়োয়ান — গাড়িচালক। 
» কারাদণ্ড— শাস্তিস্বরূপ বন্দিরূপে কারাগার বা হাজতে অবস্থান। 
» পিস্তল — বন্দুক। 
» কার্তুজ— বন্দুকের টোটা। 
» ছদ্মবেশী— আত্মগোপনের জন্য ছদ্মবেশ বেশ ধারণকারী ব্যক্তি। 
» আড্ডা — গল্প। 
» ট্রাইবুনাল— বিচারসভা। 
» অভিনব— নতুন, অপূর্ব ।


          হাতে কলমে’র প্রশ্নোত্তর 
 
১. ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো :
 
১.১ ননীবালা দেবী বিপ্লবের দীক্ষা পেয়েছিলেন (অমরেন্দ্র চ্যাটার্জি / যাদুগোপাল মুখার্জি / ভোলানাথ চ্যাটার্জি) এর কাছে।
 
উত্তরঃ অমরেন্দ্র চ্যাটার্জির।
 
১.২ ননীবালা দেবী (রিষড়াতে / চুঁচুড়াতে / চন্দননগরে) অমর চ্যাটার্জি ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকে আশ্রয় দেন।
 
উত্তরঃ রিষড়াতে।
 
১.৩ চন্দননগর থেকে পালিয়ে ননীবালা দেবী যান (পেশোয়ারে / কাশীতে / রিষড়াতে)।
 
উত্তরঃ পেশোয়ারে।
 
১.৪ কাশীর ডেপুটি পুলিশ সুপার (জিতেন ব্যানার্জি / হিতেন ব্যানার্জি / যতীন ব্যানার্জি) ননীবালা দেবীকে জেরা করতেন।
 
উত্তরঃ জিতেন ব্যানার্জি
 
১.৫ পুলিশ সুপার গোল্ডির কাছে ননীবালা দেবী (সারদামণি দেবী / ভগিনী নিবেদিতা / দুকড়িবালা দেবী)’র কাছে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
 
উত্তরঃ সারদামণি দেবী ।
 
১.৬ দুকড়িবালা দেবী বিপ্লবের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন (বোনপো / ভাইপো / ভাই) নিবারণ ঘটকের কাছে।
 
উত্তরঃ বোনপো।
 
৭. বিপ্লবী হরিদাস দত্ত (গাড়োয়ান / পুলিশ / খালাসি)-র ছদ্মবেশে পিস্তল চুরি করেন।
 
উত্তরঃ গাড়োয়ান।
 
২. সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও :
 
২.১ বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদারের ‘মসার’ (পিস্তল)-এর খোঁজ নেওয়ার জন্য ননীবালা দেবী কী কৌশল অবলম্বন করেছিলেন ?
 
উত্তরঃ বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদারের ‘মসার’ পিস্তলের খোঁজ নেওয়ার জন্য বিধবা ননীবালা দেবী রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে রামবাবুর সাক্ষাৎকার (ইন্টারভিউ) নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
 
২.২ “ এঁদের সকলেরই মাথায় অনেক হাজার টাকার হুলিয়া ছিল”— ‘হুলিয়া’ শব্দটির অর্থ কী ? এঁরা কারা? এঁদের আশ্রয়দাত্রী কে ছিলেন ? হুলিয়া থাকার জন্য এঁরা কীভাবে চলাফেরা করতেন ?
 
উত্তরঃ ‘হুলিয়া’ শব্দটির অর্থ হল পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার চেহারার বর্ণনাসহ বিজ্ঞাপন ।
» এঁরা হলেন বিপ্লবী নেতা যাদুগোপাল মুখার্জি, অমর চ্যাটার্জি, অতুল ঘোষ, ভোলানাথ চ্যাটার্জি, নলিনীকান্ত কর, বিনয়ভূষণ দত্ত ও বিজয় চক্রবর্তী।
 
» এঁদের আশ্রয়দাত্রী ছিলেন ননীবালা দেবী।
» ‘হুলিয়া’ থাকার জন্য এরা সারাদিন দরজা বন্ধ করে ঘরে কাটাতেন আর সুবিধামতো নিশাচরের মতো শুধু রাতে বেরিয়ে পড়তেন। পুলিশ এসে পড়লেই নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যেতেন, আর পুলিশ এদের ধরার জন্য হয়রান হয়ে ফিরে যেতো।
 
২.৩ “ননীবালা দেবী পলাতক হলেন”— ননীবালা দেবী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন কেন? তিনি পালিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন ? সেখানে তিনি কোন্ অসুখে আক্রান্ত হন ?
 
উত্তরঃ কমলা দাশগুপ্তের ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক পাঠ্য গদ্যাংশে দেখি মহিলা না থাকলে বাড়ি ভাড়া পাওয়া যেত না বলে যাদুগোপাল মুখার্জি, অমর চ্যাটার্জি, অতুল ঘোষ প্রমুখ বিপ্লবীদের সঙ্গে ননীবালা দেবী গৃহকর্ত্রীর বেশে চন্দননগরে বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন। তবে খবর পেয়ে পুলিশ চন্দননগরে কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালালে বিপ্লবীরা পালিয়ে যান। এরপর পুলিশ ননীবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করতে তৎপর হয়ে ওঠে। তাই ননীবালা দেবী পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
 » তিনি পালিয়ে বাল্যবন্ধুর দাদা প্রবোধ মিত্রের সঙ্গে পেশোয়ারে যান।
 » সেখানে তিনি কলেরা রোগে আক্রান্ত হন।
 
২.৪ “ননীবালা দেবী সবই অস্বীকার করতেন”—ননীবালা দেবী কোন্ কথা অস্বীকার করতেন ? তার ফলশ্রুতিই বা কী হত ?
 
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামী কমলা দাশগুপ্ত রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’নামক পাঠ্য গদ্যাংশে দেখি পেশোয়ারে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কলেরা রোগাক্রান্ত ননীবালা দেবীকে কাশীর জেলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত যে তিনি বিপ্লবীদের চেনেন কিনা, তারা কোথায় আছে তা জানেন কিনা। কিন্তু ননীবালা দেবী সব অস্বীকার করতেন। তিনি বলতেন, কাউকে চেনেন না, কিছুই জানেন না ।
 » অস্বীকারের ফলশ্রুতিস্বরূপ কাশীর জেলের প্রাচীরের বাইরে মাটির নীচে ‘পানিশমেন্ট সেল’বা শাস্তি কুঠুরিতে পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট জিতেন ব্যানার্জী ননীবালা দেবীকে তিনদিন প্রায় আধঘণ্টা ধরে তালাবন্ধ করে আটকে রাখতেন।
সেলটিতে দরজা ছিল একটাই কিন্তু আলো বাতাস প্রবেশ করার জন্য কোনো জানলা ছিল না। আধঘণ্টা পর ননীবালা দেবীকে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় পাওয়া যেত। তাও তিনি স্বীকার করতেন না।
 
২.৫ কাশীর জেলের ‘পানিশমেন্ট সেল’টির 
অবস্থা কেমন ছিল? সেখানে ননীবালা দেবীর ওপর কী ধরনের অত্যাচার করা হত ?
 
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামী কমলা দাশগুপ্ত রচিত পাঠ্য ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’নামক গদ্যাংশ অনুসারে কাশীর জেলের প্রাচীরের বাইরে মাটির নীচে ছিল ‘পানিশমেন্ট সেল’ বা শাস্তিকুঠুরি। তাতে দরজা ছিল একটাই, কিন্তু আলো বাতাস প্রবেশ করবার জন্য কোনো জানলা ছিল না ।
 » সেখানে পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট জিতেন ব্যানার্জি তিনদিন প্রায় আধ ঘণ্টা সময় ধরে তাঁকে তালাবন্ধ করে আটকে রাখতেন। কবরের মতো সেলে আধঘণ্টা পরে দেখা যেত ননীবালা দেবীর অর্ধমৃত অবস্থা। তবু তিনি মুখ খুলতেন না। তৃতীয় দিনে প্রায় ৪৫ মিনিট তাকে আটকে রাখা হয়। তালা খুলে দেখা যায় মাটিতে জ্ঞানশূন্য হয়ে তিনি পড়ে আছেন ৷
 
২.৬ “ননীবালাদেবী তখুনি দরখাস্ত লিখে দিলেন”—ননীবালা দেবী কাকে দরখাস্ত লিখে দিয়েছিলেন? দরখাস্তের বিষয়বস্তু কী ছিল? শেষপর্যন্ত সেই দরখাস্তের কী পরিণতি হয়েছিল ?
 
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামী কমলা দাশগুপ্ত রচিত পাঠ্য ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’নামক গদ্যাংশ থেকে জানা যায় ননীবালা দেবী আই. বি. পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডিকে দরখাস্ত লিখে দিয়েছিলেন।
 » ননীবালা দেবী দরখাস্তে লিখেছিলেন, তাকে যদি বাগবাজারে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রীর কাছে রেখে আসা হয় তাহলে তিনি খাবেন।
 
 » শেষপর্যন্ত অবশ্য গোল্ডি সাহেব তার দরখাস্ত নিয়ে ছিঁড়ে দলা পাকিয়ে ছেঁড়া কাগজের টুকরিতে ফেলে দেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে ননীবালা দেবী আহত ক্ষিপ্ত বাঘের মতো লাফিয়ে উঠে গোল্ডির মুখে এক চড় বসিয়ে দেন।
 
২.৭ ‘এবার আমায় দলে নিয়ে নাও’— কে, কাকে এই অনুরোধ জানিয়েছিলেন? তিনি কেন, কোন্ দলে অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন ?
 
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্ৰামী কমলা দাশগুপ্ত রচিত পাঠ্য ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক গদ্যাংশ থেকে জানতে পারি দুকড়িবালা দেবী বোনপো নিবারণকে এই অনুরোধ জানিয়ে ছিলেন।
 
 » তিনি দেশকে ইংরেজ সরকারের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য স্বদেশিদের দলে
অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন।
 
২.৮ পুলিশ কোন্ অভিযোগে দুকড়িবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করেন? বিচারে তাঁর কী শাস্তি হয় ?
 
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামী কমলা দাশগুপ্তের লেখা পাঠ্য “স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ গদ্যাংশে দেখি দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সাতটা মসার পিস্তল পায়। বাড়িতে অস্ত্র লুকিয়ে রাখার অপরাধে এবং তিনি অস্ত্র কোথা থেকে পেয়েছেন, কে দিয়েছে—এই সমস্ত কথা স্বীকার না করায় পুলিশ দুকড়িবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করেন।
 
 » বিচারে তাঁর দুবছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়।
 
৩. আট-দশটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
 
৩.১ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী স্বনামধন্য খ্যাতনামা বিপ্লবীদের তুলনায় ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর অবদান সামান্য নয়— এ বিষয়ে তোমার মতামত জানাও।
 
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী অনেক খ্যাতনামা বিপ্লবীদের কথা আমরা জানি। কিন্তু কমলা দাশগুপ্ত তাঁর ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক রচনায় যে দু’জন মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা বলেছেন, খ্যাতনামা বিপ্লবীদের তুলনায় তাঁদের অবদান সামান্য নয়, অসামান্য।
ভাতুষ্পুত্র অমরেন্দ্র চ্যাটার্জির কাছে বিপ্লবের দীক্ষা পেয়ে ননীবালা দেবী পলাতক অমর চ্যাটার্জি ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকে রিষড়ায় আশ্রয় দেন। এরপর অমর চ্যাটার্জি পলাতক হন। কিন্তু ‘মসার’ পিস্তলের সন্ধান না দিয়েই গ্রেপ্তার
হন রামচন্দ্র মজুমদার। ননীবালা দেবী রামবাবুর স্ত্রী সেজে জেলে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে পিস্তলের গুপ্ত খবর নিয়ে আসেন। চন্দননগরে এসে বিপ্লবীদের গৃহকর্ত্রী সেজে বাড়িভাড়া নিয়ে থাকেন। সেখান থেকে বাল্যবন্ধুর দাদার সঙ্গে
পেশোয়ারে গিয়ে কলেরা রোগাক্রান্ত অবস্থায় ধরা পড়েন। তাঁকে জেলের ‘পানিশমেন্ট সেল’-এ তিনদিন প্রায় আধঘণ্টা একটা দরজা জানলাহীন অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখা হয়। অর্ধমৃত অবস্থাতেও তিনি মুখ খোলেন নি। প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে আসা হলে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেন। এমনকি তাঁর দরখাস্ত ছিঁড়ে ফেলায় পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডির গালে হাত তুলতেও তিনি পিছুপা হননি। অপরদিকে বোনপো নিবারণ ঘটকের সূত্রে বিপ্লবের দীক্ষা নিয়ে দুকড়িবালা দেবী রডা কোম্পানি থেকে চুরি করে আনা সাতটা মসার পিস্তল নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। পুলিশের তল্লাশিতে ধরা পড়ে গেলেও পিস্তল কোথা থেকে পেয়েছেন, কে দিয়েছে তা স্বীকার করেননি। সামান্য গ্রামের বউ হয়ে কোলের শিশুকে ফেলে চলে যান পুলিশের সঙ্গে।
বিচারে তার দুবছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়।
এই সমস্ত ঘটনাই প্রমাণ করে স্বনামধন্য খ্যাতনামা বিপ্লবীদের তুলনায় ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদান কম ছিল না।
 
৩. ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর অনমনীয় বৈপ্লবিক মনোভাব কীভাবে পরবর্তী কালের বিপ্লবী নারীকে পথ দেখিয়েছে : পাঠ্য গদ্যাংশ অবলম্বনে তোমার মতামত জানাও।
 
উত্তরঃ স্বাধীনতা সংগ্রামী কমলা দাশগুপ্ত রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলার নারী’ গ্রন্থের অন্তর্গত পাঠ্য ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক গদ্যাংশে ননীবালা দেবী ও দুকড়িবালা দেবীর অনমনীয় বৈপ্লবিক মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে।
   » মাত্র ষোলো বছর বয়সে বিধবা হয়ে ভ্রাতুষ্পুত্র অমরেন্দ্র চ্যাটার্জির কাছে বিপ্লবের দীক্ষা নেন ননীবালা দেবী। নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন বিপ্লবীদের। পিস্তলের গুপ্ত খবর জানার জন্য রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে প্রবেশ করেন জেলে। একজন বিধবা নারীর পক্ষে অন্য পুরুষের স্ত্রী সেজে জেলে গিয়ে পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া খুব সামান্য ব্যাপার নয় । তখনকার সমাজও এ বিষয়কে ভালো চোখে দেখত না। আবার বিপ্লবীদের গৃহকর্ত্রী সেজে তাদের সাহায্য করার জন্য বিপ্লবীদের সঙ্গে তিনি নানা জায়গায় পালিয়ে বেড়িয়েছেন। পেশোয়ারে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন। তাঁকে কাশীর জেলের ‘পানিশমেন্ট সেল’এ নিয়ে আসা হয়। আলো বাতাসহীন অন্ধকার কুঠুরির মধ্যে পরপর তিনদিন প্রায় আধঘণ্টা আটকে রাখা হয় তাঁকে, অর্ধমৃত অবস্থা হয়ে গেলেও তিনি মুখ খোলেননি। তাঁর দরখাস্ত ছিঁড়ে ফেলায় সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডিকে চড় মারতেও পিছুপা হননি। প্রেসিডেন্সি জেলে তিনি খাওয়া বন্ধ করে দেন। আবার দুকড়িবালা দেবী বিপ্লবীদের চুরি করা রডা কোম্পানির অস্ত্র নিজের বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। পুলিশের তল্লাশিতে ধরা পড়ে গেলেও কিছু স্বীকার করেননি। কোথা থেকে পিস্তল পেয়েছেন, কে দিয়েছে— এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। কোলের সন্তানকে ফেলে রেখে পুলিশের সঙ্গে চলে গেছেন। দু’বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। আর এইভাবেই নিজেদের অনমনীয় বৈপ্লবিক মনোভাবকে হাতিয়ার করে ননীবালা দেবী ও দুকুড়িবালা দেবী পরবর্তীকালের বিপ্লবী নারীদের পথ দেখিয়েছেন স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের ভিত্তি গেঁথে গেছেন তাঁদের জন্য। তাঁরাই প্রমাণ করেছেন চাইলে নারীও নিজের দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ দিতে পারে।
 
৪. ননীবালা দেবী এবং দুকড়িবালা দেবী ছাড়া তুমি আর কোন্ কোন্ মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামীর কথা জান? তাঁদের অবদানের কথা শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে জেনে নাও এবং খাতায় লেখো।
 
উত্তরঃ ননীবালা দেবী এবং দুকড়িবালা দেবী ছাড়াও আমি মাতঙ্গিনী হাজরা ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের কথা জানি ।
নীচে তাঁদের অবদানের কথা লেখা হল—
 
মাতঙ্গিনী হাজরা : সালটা ১৯৪২, মহাত্মা গান্ধি তখন কারাগারে। তিনি সেখান থেকেই ইংরেজদের সম্বোধন করে বললেন, ইংরেজ তুমি ভারত ছাড়ো’। মহাত্মাজির ডাকে সমগ্র ভারত ঝাঁপিয়ে পড়ল ইংরেজদের বিরুদ্ধে। এদিকে বাংলাদেশের মেদিনীপুরের বিপ্লবীরা ব্রিটিশের পতাকা মেদিনীপুরের মাটি থেকে সরিয়ে তার জায়গায় ভারতের জাতীয় পতাকা ওড়ালো। বিপ্লবীরা যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেয়। টেলিগ্রামের তার খুলে ফেলল। সরকারি অফিসে আগুন ধরিয়ে দিল। ইংরেজ সরকার বিদ্রোহীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালালো । প্রতিবাদ জানাতে এক বিরাট মিছিল বের করে বিদ্রোহীরা। এই মিছিলের সামনে ছিল ছিয়াত্তর বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা। ভারতের জাতীয় পতাকা হাতে তিনি তাঁর বিপ্লবী বাহিনী নিয়ে এগিয়ে চললেন। ইংরেজ সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ল বিপ্লবীদের উপর। তমলুকের মাটি রক্তে লাল হয়ে গেল। তবুও এগিয়ে চললেন মাতঙ্গিনী হাজরা। হঠাৎ একটি গুলি এসে বিদ্ধ হল মাতঙ্গিনীর বুকে। রক্তপাত হল প্রচুর। তাঁর দেহ অবশ হয়ে এল। তবুও তিনি ক্ষান্ত হননি। এরপর আরেকটা গুলি এসে লাগে তাঁর কপালে। জাতীয় পতাকা বুকে চেপে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন। মৃত্যুমুখে পতিত হয়েও এই বীর নারী জাতীয় পতাকা হাতছাড়া করলেন না।
 
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার : জন্ম চট্টগ্রামে। আই. এ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম হন। বি. এ পাশও করেন। চট্টগ্রামে এক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। চট্টগ্রামে বিপ্লবী নেতা মাস্টারদা সূর্যসেনের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর তাঁর দলে যোগ দেন। একদিন বিপ্লবীদের গোপনসভার খবর পেয়ে পুলিশ ঘেরাও করে। মাস্টারদা ও প্রীতিলতা আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়ে একজন পুলিশ অফিসারকে জখম করে পালিয়ে যান। বিপ্লবীদের ধরতে না পেরে পুলিশ ও সৈন্যরা চট্টগ্রামের মানুষদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। ইংরেজদের এই অত্যাচারের জবাব দেওয়ার ভার মাস্টারদা প্রীতিলতার ওপর দেন। চট্টগ্রামের পাহাড়িতলা অঞ্চলে ইংরেজদের একটা ক্লাব ছিল। সেখানে ইংরেজরা নাচগান করত। একদিন সন্ধ্যার পর মাত্র চারজন সঙ্গী নিয়ে প্রীতিলতা ওই ক্লাব আক্রমণ করেন। ক্লাব ঘরের কাছেই ছিল সেনাশিবির। পিস্তলের গুলি আর ইংরেজদের চিৎকার শুনে তারা ছুটে আসে। তখন বীর সেনাপতির মতো প্রীতিলতা সঙ্গীদের পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়ে নিজে আত্মহত্যা করেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধ করে মাত্র একুশ বছর বয়সে প্রীতিলতার মৃত্যু হয় ।
 
৫. ঘটনার ক্রমানুসারে সাজিয়ে লেখো :
 
৫.১ চন্দননগরে যাদুগোপাল মুখার্জী, অমর চ্যাটার্জী, অতুল ঘোষ প্রমুখ বিপ্লবীকে আশ্রয়দান ও সেখান থেকে পলায়ন করলেন ননীবালা দেবী।
 
৫.২ পেশোয়ার থেকে গ্রেপ্তার করে কাশীতে পাঠানো হল ননীবালা দেবীকে এবং আলোবাতাসহীন বদ্ধ ঘরে তালাবন্ধ
করে শাস্তি দেওয়া হত।
 
৫.৩ বাগবাজারে মা সারদার কাছে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে দরখাস্ত লিখলেন ননীবালা দেবী।
 
৫.৪ আই. বি. পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি ননীবালা দেবীকে জেরা করতেন।
 
৫.৫ অমরেন্দ্র চ্যাটার্জি ও তাঁর সহকর্মীকে রিষড়াতে দুমাস আশ্রয় দিলেন ননীবালা দেবী।
 
৫.৬ পুলিশ সুপার গোল্ডি দরখাস্ত ছিঁড়ে ফেলায় ক্ষিপ্ত ননীবালাদেবী এক চড় বসিয়ে দিলেন গোল্ডির মুখে।
 
৫.৭ ভাইপো অমরেন্দ্র চ্যাটার্জির কাছে বিপ্লবের দীক্ষা পেলেন ননীবালা দেবী।
 
 
৫.৮ রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ননীবালাদেবী সংগ্রহ করলেন পিস্তলের গুপ্ত খবর।
 
উত্তরঃ 
 
(১) ৫.৭ ভাইপো অমরেন্দ্র চ্যাটার্জির কাছে বিপ্লবের দীক্ষা পেলেন ননীবালা দেবী।
 
(২) ৫.৫ অমরেন্দ্র চ্যাটার্জি ও তাঁর সহকর্মীকে রিষড়াতে দুইমাস আশ্রয় দিলেন ননীবালা দেবী।
 
(৩) ৫.৮ রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ননীবালাদেবী সংগ্রহ করলেন পিস্তলের গুপ্ত খবর।
 
(৪) ৫.১ চন্দননগরে যাদুগোপাল মুখার্জী, অমর চ্যাটার্জি, অতুল ঘোষ প্রমুখ বিপ্লবীকে আশ্রয়দান ও সেখান থেকে পলায়ন
করলেন ননীবালা দেবী।
 
(৫) ৫.২ পেশোয়ার থেকে গ্রেপ্তার করে কাশীতে পাঠানো হল ননীবালা দেবীকে এবং আলোবাতাসহীন বদ্ধ ঘরে তালাবন্ধ
করে শাস্তি দেওয়া হত ।
 
(৬) ৫.৪ আই. বি. পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি ননীবালা দেবীকে জেরা করতেন।
 
(৭) ৫.৩ বাগবাজারে মা সারদার কাছে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে দরখাস্ত লিখলেন ননীবালা দেবী।
 
(৮) ৫.৬ পুলিশ সুপার গোল্ডি দরখাস্ত ছিঁড়ে ফেলায় ক্ষিপ্ত ননীবালাদেবী এক চড় বসিয়ে দিলেন গোল্ডির মুখে।
 
৬. কে, কোন্ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মিলিয়ে লেখো :

 

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার আইন অমান্য আন্দোলন
মাতঙ্গিনী হাজরা সিপাহি বিদ্রোহ
সরোজিনী নাইডু ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ
ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই লবণ সত্যাগ্রহ
উত্তরঃ

 

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ
মাতঙ্গিনী হাজরা আইন অমান্য আন্দোলন
সরোজিনী নাইডু লবণ সত্যাগ্রহ
ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই সিপাহি বিদ্ৰোহ

 

৭. পাঠ্য গদ্যাংশটি পড়ে নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে দু-চার কথা লেখো :
 
উত্তরঃ 
 
• অমরেন্দ্র চ্যাটার্জি : কমলা দাশগুপ্ত রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক পাঠ্য গদ্যাংশে ননীবালা দেবীর ভ্রাতুষ্পুত্র অমরেন্দ্র চ্যাটার্জি সম্পর্কে জানতে পারি। তিনি ননীবালাদেবীকে বিপ্লবের দীক্ষা দেন। সহযোদ্ধা হয়ে ননীবালা দেবী ভ্রাতুষ্পুত্র ও তার কয়েকজন সহকর্মীকে আশ্রয় দেন। অমরেন্দ্র চ্যাটার্জি অত্যন্ত চতুর ও সাহসী বিপ্লবী ছিলেন। বারবার পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি পালিয়ে যান ৷
 
• প্রবোধ মিত্র : কমলা দাশগুপ্ত রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক পাঠ্য গদ্যাংশে দেখি ননীবালা দেবীর বাল্যবন্ধুর
দাদা হলেন প্রবোধ মিত্র । ননীবালা দেবী চন্দননগর থেকে পালানোর পর তার সঙ্গে পেশোয়ারে যান। প্রবোধ মিত্র অবশ্য
প্রথমে ননীবালা দেবীকে নিজের সঙ্গে নিতে রাজি হননি। তবে ননীবালা দেবীর বাল্যবন্ধু অনুনয় বিনয় করে রাজি করান।
 
• জিতেন ব্যানার্জি : কমলা দাশগুপ্ত রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক পাঠ্য গদ্যাংশে দেখি কাশীর ডেপুটি পুলিশ সুপারিটেন্ডেন্ট জিতেন ব্যানার্জি পেশোয়ার থেকে ননীবালা দেবীকে ধরে এনে কাশীর জেলে চালান করেন। সেখানে তাঁকে জেরা করতেন । অত্যন্ত নিষ্ঠুর পুলিশ কর্মচারী ছিলেন জিতেন ব্যানার্জি। কাশীর জেলের ‘পানিশমেন্ট সেল’- এর অন্ধকার আলোবাতাসহীন ঘরে ননীবালা দেবীকে প্রায় আধঘণ্টা সময় ধরে আটকে রাখেন। ননীবালা দেবীর অর্ধমৃত অবস্থা দেখেও তার মায়া হয়নি। শেষদিন ননীবালাদেবীর স্নায়ুর শক্তিকে চূর্ণ করে দেবার জন্য প্রায় ৪৫ মিনিট আটকে রাখা হয়। তৎকালীন ইংরেজ শাসনের সময় বাঙালি পুলিশরাও যে কীভাবে অর্থের জন্য নিজের দেশমাতৃকার পরাধীনতা স্বীকার করে, ইংরেজ সরকারের পদানত হয়ে, বিপ্লবীদের উপর অত্যাচার করেছিল তার নিকৃষ্ট নিদর্শন পাঠ্য গদ্যাংশের জিতেন ব্যানার্জী চরিত্রটি।
 
• গোল্ডি : কমলা দাশগুপ্ত রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক পাঠ্য গদ্যাংশের গোল্ডি হল এক অত্যাচারী আই. বি. পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট। প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে আসার পর ননীবালা দেবী যখন অনশন শুরু করেন, তখন তাঁকে জেরা করতেন গোল্ডি। কোনোভাবেই ননীবালা দেবীকে খাওয়াতে না পারায় গোল্ডি জানতে চান কী করলে ননীবালা দেবী খাবেন। ননীবালা দেবী তার উত্তরে বলেন তাকে যদি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রীর কাছে বাগবাজারে পাঠানো হয় তবেই তিনি খাবেন। গোল্ডি ননীবালা দেবীকে নিজের বক্তব্য দরখাস্তে লিখে দিতে বলেন। ননীবালা দেবী দরখাস্ত লিখে দিলে গোল্ডি তা ছিঁড়ে কাগজের টুকরিতে ফেলে দেন। এইভাবে গোল্ডি চরিত্রের মধ্যে দিয়ে তৎকালীন অত্যাচারী ইংরেজ শাসক চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখিকা।
 
• নিবারণ ঘটক : কমলা দাশগুপ্ত রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক পাঠ্য গদ্যাংশে দেখি দুকড়িবালা দেবীর বোনপো হলেন নিবারণ ঘটক। তার সঙ্গে পরিচয় সূত্রেই দুকড়িবালা দেবীর বিপ্লবী দলে যোগদান। নিবারণ ঘটক ছিলেন মাইনিং ক্লাসের ছাত্র। তখন থেকেই তিনি বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে দুকড়িবালা দেবীর বাড়িতে লুকিয়ে স্বদেশি বই, বেআইনি বই পড়তেন। রডা কোম্পানির অস্ত্র চুরিতে তিনিও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন।
 
• হরিদাস দত্ত : কমলা দাশগুপ্ত রচিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী’ নামক পাঠ্য গদ্যাংশে দেখি রডা কোম্পানি থেকে অস্ত্রচুরির ঘটনার মূল কারিগর হরিদাস দত্ত। ১৯১৪ সালের ২৬ আগস্ট রডা কোম্পানির জেটি-সরকার শ্রীশ মিত্র বড়ো সাহেবের হুকুম মতো মালপত্র খালাস করতে জাহাজঘাটে আসেন। তিনি ২০২টি অস্ত্রপূর্ণ বাক্স খালাস করে সাতটি গোরুর গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে আসতে থাকেন। ছ’ খানা গাড়ি তিনি রডা কোম্পানির গুদামে পৌঁছিয়েও দেন। কিন্তু সপ্তম গাড়িটি গুদামে পৌঁছায় না। কারণ বিপ্লবী হরিদাস দত্ত সেই গাড়ির গাড়োয়ান সেজে ছদ্মবেশে সেই গাড়িটি উধাও করেন। সেই গাড়িতে ৯টি বাক্স ভর্তি কার্তুজ ও ৫০টি মসার পিস্তলে ভর্তি একটি বাক্স ছিল। মালপত্রগুলি পরে বিপ্লবীদের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রেরিত হয় । এইভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে অনেক কাজ করেছিলেন। তৎকালীন সেই সমস্ত অসীম সাহসী বিপ্লবীদের উদাহরণ গদ্যাংশের হরিদাস দত্ত চরিত্রটি।
 
৮. অর্থ লেখো ও বাক্য রচনা করো :
 
উত্তরঃ 
 
» হুলিয়া— পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করার জন্য তার চেহারার বর্ণনাসহ বিজ্ঞাপন।
» বাক্য— আসামি কোর্টে বার বার হাজির না হওয়ায় কোর্ট থেকে তার নামে হুলিয়া জারি হয়েছে।
 
» মসার— অতিরিক্ত গুলি রাখার খোপযুক্ত বন্দুক বিশেষ।
» বাক্য— স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের কাছে তখনকার দিনে মসার পিস্তল খুব জনপ্রিয় ছিল।
 
» দরখাস্ত— আবেদন জানিয়ে লিখিত পত্র।
» বাক্য— আগামীকাল ছুটি নিতে হলে এখনই একটা দরখাস্ত লিখে জমা দাও।
 
» কারাদণ্ড— শাস্তিস্বরূপ বন্দিরূপে বা হাজতে অবস্থান।
» বাক্য— কেউ বেআইনি কাজকর্ম করলে তাকে কারাদণ্ড ভোগ করতেই হবে।
 
» নিশাচর— রাক্ষস, পেচক, শ্বাপদ, চোর প্রভৃতি যারা রাত্রিকালে বিচরণ করে।
» বাক্য— নিশাচর পাখিরা সাধারণত রাতে শিকার ধরে।
 
৯. নীচের স্থলাক্ষর অংশগুলির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো :
 
৯.১ বিপ্লবী অমরেন্দ্র চ্যাটার্জির কাছে বিপ্লবের দীক্ষা পেলেন ননীবালা দেবী। 
 
উত্তরঃ কর্তৃকারকে ‘র’ বিভক্তি।
 
৯.২ ১৯১৫ সালে চন্দননগরে আবার বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল।
 
উত্তরঃ অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি।
 
৯.৩ স্নায়ুর শক্তিকে চূর্ণ করে দেবার চূড়ান্ত প্রচেষ্টা।
 
উত্তরঃ কর্ম কারকে ‘কে’ বিভক্তি।
 
৯.৪ এগুলি ছিল রডা কোম্পানি থেকে চুরি করে আনা মাল।
 
উত্তরঃ অপাদান কারকে ‘থেকে’ অনুসর্গ।
 
৯.৫ ছ’খানা গাড়ি তিনি রডা কোম্পানির গুদামে পৌঁছে দেন।
 
উত্তরঃ সম্বন্ধ পদ ‘র’ বিভক্তি।
 
৯.৬ তল্লাশিতে পাওয়া যায় সাতটা মসার পিস্তল
 
উত্তরঃ 
» তল্লাশিতে— করণ কারকে ‘তে’ বিভক্তি, 
» মসার পিস্তল— কর্ম কারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
 
৯.৭ শত জেরাতেও মাসিমার মুখ থেকে বের করতে পারল না।
 
উত্তরঃ অপাদান কারকে ‘থেকে অনুসর্গ।
 
১০. এককথায় লেখো :
 
উত্তরঃ 
» পলায়ন করেছেন যিনি— পলাতক
» এক সঙ্গে কাজ করেন যিনি—‌ সহকর্মী
» বাজ পাখির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি— শ্যেনদৃষ্টি
» বাল্যকালের বন্ধু— বাল্যবন্ধু
» আবেদন জানিয়ে লিখিত পত্র— দরখাস্ত
» মহান কর্মে ব্রতী নারী— মহীয়সী
» এগিয়ে থাকেন যিনি / অগ্রে গমন করেন যিনি— অগ্রগামী

This Post Has One Comment

Leave a Reply