শংকর সেনাপতি
—শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়
কবি পরিচিতিঃ বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলায় ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল— ‘বৃহন্নলা’, ‘কুবেরের বিষয় আশয়’, ‘অনিলের পুতুল’, ‘সরমা ও নীলকান্ত’, ‘নির্বান্ধব’ ইত্যাদি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি শাহজাদা দারাশুকো উপন্যাসের জন্য ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
নামকরণঃ ছোট্ট ছেলে শংকরের পড়াশুনো চলে এক অভিনব পদ্ধতিতে । পড়ার জগৎ, বইয়ের পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে তার চারপাশে। তার শিক্ষকও বলেন, সজাগ হয়ে এই প্রকৃতিকে খোলা বইয়ের মতো যদি পড়া যায়, তাহলেই প্রকৃত শিক্ষা লাভ করা যায়। সুতরাং, সেনাপতি যেমন সব সৈন্যের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তেমনই প্ৰকৃত শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে সব ছাত্রের মধ্যে শংকরই এগিয়ে। আবার তার পদবিও সেনাপতি। সুতরাং, এই গল্পের নাম হিসেবে ‘সেনাপতি শংকর’ যথাপ্রযুক্ত ও সার্থক।
বিষয়বস্তুঃ আকন্দবাড়ি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শংকর কিছুটা আপনভোলা প্রকৃতির। তার স্বপ্নের গল্প বলতে গিয়ে ক্লাসে সবার হাসির পাত্র হয় সে। তার কল্পনায় আন্দিজ পর্বতমালার দৌড়বাজ পাখি এমু উড়ে এসে বসে ঘোলপুকুরের বড়োদিঘির পাড়ে— সবেদা গাছের ডালে। স্বপ্নে তার কাছে ধরা দেয় নীল রঙের বাতাস, খয়েরি রঙের ঘরবাড়ি। সেখানে কোনো ব্যথা নেই। আছে শুধু হাঁড়িচাচা, তিতির আর পানকৌড়ি। বিভীষণ মাস্টারমশাই এই কল্পনাপ্রবণ ছাত্রটির মনের কথা অনুভব করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘এই খোলামেলা পৃথিবীই সবচেয়ে বড়ো বই। তাকে চোখ ভরে দেখাই সবচেয়ে বড়ো পড়াশুনো।’
বাংলা সমস্ত অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর
১.১ শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো।
উত্তরঃ শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দুটি বইয়ের নাম- ‘সেনাপতি শংকর’ এবং ‘কুবেরের বিষয় আশয়’।
১.২ তিনি কোন্ বইয়ের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন ?
উত্তরঃ তিনি ‘শাহাজাদা দারাশুকো’ উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন।
২. নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও :
২.১ আকন্দবাড়ির স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা কোন্ কোন্ জায়গা থেকে পড়তে আসে ?
উত্তরঃ আকন্দবাড়ির স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ভেটুরিয়া, সাঁইবাড়ি, ঘোলপুকুর আর আকন্দবাড়ি থেকে পড়তে আসে।
২.২ স্কুলের জানলা থেকে কী কী দেখা যায় ?
উত্তরঃ স্কুলের জানলা দিয়ে আকাশের মেঘ দেখা যায়, দেখা যায় পাখি উড়ছে।
২.৩ শংকর কীসের স্বপ্ন দেখে ?
উত্তরঃ শংকর স্বপ্ন দেখে শঙ্খচিলের মতো ঘোলপুকুরে গাব গাছের উঁচু ডাল থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে বড়ো দিঘিতে। সোজা জলে না পড়ে সে ভাসছে শঙ্খচিলের মতোই। ডানার বদলে দুহাতে বাতাস কেটে।
২.৪ শংকরের স্বপ্নে বাতাসের রং কী ?
উত্তরঃ শংকরের স্বপ্নে বাতাসের রং নীলচে।
২.৫ এমু ছাড়া উড়তে পারে না শুধু দৌড়তে পারে এমন একটি পাখির নাম লেখো।
উত্তরঃ এমু ছাড়া উড়তে পারে না শুধু দৌড়তে পারে এমন একটি পাখির নাম উটপাখি।
৩. গল্প থেকে একই অর্থযুক্ত শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখো:
বিদ্যালয়, অনিল, জগৎ, একাগ্রচিত্ত, পাখা, রোপণ করা।
উত্তরঃ বিদ্যালয়— স্কুল। অনিল— বাতাস। জগৎ—পৃথিবী। একাগ্রচিত্ত— একমনা। পাখা— ডানা। রোপণ করা— রোয়া।
৪. বিপরীতার্থক শব্দ লিখে তা দিয়ে বাক্য রচনা করো :
ভিজে, রাত, বাইরে, গাঢ়, বিশ্বাস।
উত্তরঃ
ভিজে – শুকনো : বাতাসে শুকনো পাতা ঝরে পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
রাত – দিন : শীতকালে দিন ছোেটা হয়।
বাইরে – ভিতরে : ঘরের ভিতরে এখন গোপন মিটিং চলছে।
গাঢ় – হাল্কা : হাল্কা আলোয় লোকটিকে ঠিকমতো চেনা গেল না।
বিশ্বাস – অবিশ্বাস : সৎ মানুষকে অবিশ্বাস করা উচিৎ নয়।
৫. সন্ধি বিচ্ছেদ করো :
উত্তরঃ
বঙ্গোপসাগর = বঙ্গ + উপসাগর।
তন্ময় = তৎ + ময়।
সাবধান = স + অবধান।
ত্রিশেক = ত্রিশ + এক।
পঞ্চানন = পঞ্চ + আনন।
৬. নীচের শব্দগুলির কোনটি বিশেষ্য এবং কোন্টি বিশেষণ তা খুঁজে নিয়ে আলাদা দুটি স্তম্ভে সাজাও। এরপর বিশেষ্যগুলির বিশেষণের রূপ এবং বিশেষণগুলির বিশেষ্যের রূপ লেখো:
প্রকৃতি, ব্যথা, মাটি, বিশ্বাস, জল, মাঠ, শব্দ।
বিশেষ্য | বিশেষণ |
প্রকৃতি | প্রাকৃতিক |
ব্যথা | ব্যথিত |
মাটি | মেটে |
বিশ্বাস | বিশ্বাসী, বিশ্বস্ত |
মাঠ | মেঠো |
শব্দ | শাব্দিক |
জল | জলীয় |
৭. সমোচ্চারিত বা প্রায়-সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দগুলির অর্থ লিখে বাক্যে প্রয়োগ করো।
উত্তরঃ
ভাষা – (যার দ্বারা কথা বলা হয়) : বাংলা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা।
ভাসা – (ভেসে থাকা) : একটানা দশ মিনিট জলে ভাসা আমার পক্ষে অসম্ভব নয়।
পড়ে – (পড়াশোনা করে): কবিতা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
পরে – (পরিধান করে) : সে জামাপ্যান্ট পরে স্কুলে এসেছে।
শংকর – (শিব) : শংকর বেল পাতাতে তুষ্ট হন।
সংকর – (মিশ্র) : পুতুলটি সংকর ধাতুতে তৈরি।
মাথা – (মস্তক) : মাথা উঁচু করে চলা উচিৎ।
মাতা – (মা) : মাতা সকলের কাছে প্রিয়।
বাঁশ – (বংশ) : বাঁশ আমাদের নানা কাজে লাগে।
বাস – (বসবাস) : আমরা বহু বছর ধরে কলকাতায় বাস করছি।
৮. গল্পে বেশ কিছু পাখি ও গাছের নাম আছে। এই পাখি ও গাছের নামের তালিকা তৈরি করে এগুলি সম্পর্কে তথ্য জানিয়ে নামের পাশে পাশে লেখো। প্রয়োজনে শিক্ষক- শিক্ষিকার সাহায্য নাও। এগুলি ছাড়াও তোমার জানা আরও কিছু পাখি আর গাছের নাম, তাদের বৈশিষ্ট্য লিখে নীচের ছকটি পূরণ করো।
উত্তরঃ
পাখির নাম— তিতির
আকার— মাঝারি
রঙ— বাদামী
ঠোঁট— ছোটো
লেজ— ছোটো
পা— নেই
ঝুটি— নেই
পাখির নাম— পানকৌড়ি
আকার— মাঝারি
রঙ— কালো
ঠোঁট— সরু, লম্বা
লেজ— মাঝারি
পা— আছে
ঝুটি— আছে
পাখির নাম— কাক
আকার— মাঝারি
রঙ— কালো
ঠোঁট— শক্ত, বড়ো
লেজ— মাঝারি
পা— নেই
ঝুটি— নেই
পাখির নাম— মাছরাঙা
আকার— মাঝারি
রঙ— নীল, হলুদ
ঠোঁট— শক্ত, লম্বা
লেজ— মাঝারি
পা— নেই
ঝুটি— নেই
পাখির নাম— হাঁড়িচাচা
আকার— ছোটো
রঙ— বাদামি, ধূসর
ঠোঁট— লম্বা
লেজ— লম্বা
পা— নেই
ঝুটি— নেই
গাছের নাম— সবেদা
আকার— মাঝারি
কী জাতীয়— বৃক্ষ
পাতাগুলো কেমন— লম্বা, সরু
ফুল— সাদা
ফল— গোলাকার
কোথায় দেখছো— বাগানে
গাছের নাম— নারকেল
আকার— বেশ লম্বা
কী জাতীয়— বৃক্ষ
পাতাগুলো কেমন— লম্বা, সরু
ফুল— হলুদ, খুব ছোটো
ফল— বড়ো
কোথায় দেখছো— বাগানে
গাছের নাম— আম
আকার— বড়ো, ডালযুক্ত
কী জাতীয়— বৃক্ষ
পাতাগুলো কেমন— লম্বা, সরু
ফুল— সাদা
ফল— লম্বাটে
কোথায় দেখছো— বাগানে
৯. নীচে কতগুলি উপসর্গ দেওয়া হল। গল্প থেকে উপযুক্ত শব্দ খুঁজে নিয়ে এই উপসর্গগুলি যুক্ত করে কয়েকটি নতুন শব্দ তৈরি করো।
উত্তরঃ
উপসর্গ | শব্দ | নতুন শব্দ |
বি | জ্ঞান | বিজ্ঞান |
প্র | গাঢ় | প্রগাঢ় |
নি | খাদ | নিখাদ |
সু | স্বপ্ন | সুস্বপ্ন |
আ | গা | আগা |
১০. নীচের বাক্যগুলি থেকে সংখ্যাবাচক শব্দ খুঁজে বের করো।
১০.১ পাঁচ-সাত মাইলের ভেতর বঙ্গোপসাগর।
উত্তরঃ পাঁচ-সাত।
১০. জনা ত্রিশেক ছেলেমেয়ে বসে।
উত্তরঃ জনা ত্রিশেক।
১০.৩ সেদিকে তাকিয়ে একটি ছেলে আনমনা হয়ে পড়েছিল।
উত্তরঃ একটি।
১০.৪ এক-একদিন রাতে স্বপ্নের ভেতর সেও অমন ভেসে পড়ে।
উত্তরঃ এক-একদিন।
১১. নীচের বাক্যগুলি থেকে অনুসর্গ খুঁজে বার করো। প্রতিটি বাক্যের ভিতর যেসব শব্দ আছে তাদের সঙ্গে কী কী বিভক্তি যুক্ত হয়েছে দেখাও।
১১.১ এখানে বাতাসের ভেতর সবসময় ভিজে জলের ঝাপটা থাকে।
উত্তরঃ এখানে– এ বভক্তি, বাতাসের– এর বিভক্তি, ভেতর– অনুসর্গ, সবসময়– শূন্য বিভক্তি, ভিজে– শূন্য বিভক্তি, জলের– এর বিভক্তি, ঝাপটা– শূন্য বিভক্তি, থাকে– শূন্য বিভক্তি।
১১.২ মাটির মেঝে।
উত্তরঃ মাটির– ‘র’ বিভক্তি, মেঝে– শূন্য বিভক্তি।
১১.৩ সেই জানালা দিয়ে মেঘ দেখা যায় আকাশের।
উত্তরঃ সেই– শূন্য বিভক্তি, জানালা– শূন্য বিভক্তি, দিয়ে– অনুসর্গ, মেঘ– শূন্য বিভক্তি, দেখা– শূন্য বিভক্তি, যায়– শূন্য বিভক্তি, আকাশের– এর বিভক্তি।
১১.৪ স্বপ্নের ভেতর সে খাট থেকে পড়েও যায়।
উত্তরঃ স্বপ্নের– এর বিভক্তি, ভেতর–
অনুসর্গ, সে– শূন্য বিভক্তি, খাট– শূন্য বিভক্তি, থেকে– অনুসর্গ, পড়েও– অনুসর্গ, যায়– শূন্য বিভক্তি।
১১.৫ সে তার স্বপ্নের কথা আর কাউকে কখনও বলবে না।
উত্তরঃ সে– ‘এ’ বভক্তি, তার– ‘র’ বিভক্তি, স্বপ্নের– এর বিভক্তি, কথা– শূন্য বিভক্তি, আর– শূন্য বিভক্তি, কাউকে– ‘এ’ বভক্তি, কখনও– অনুসর্গ, যায়– শূন্য বিভক্তি।
১২. নীচের বাক্যগুলি থেকে উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ খুঁজে নিয়ে লেখো।
১২.১ আকন্দবাড়ি স্কুলের ক্লাস ফাইভে বিভীষণ দাশ এমু পাখির কথা বলেছিলেন।
১২.২ স্কুলের সামনে ধানক্ষেতে রোয়া ধান সবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
১২.৩ গাঢ় ছাই রঙের বিরাট এক পাখি।
১২.৪ তন্ময় হয়ে শুনছিল শংকর।
১২.৫ এই খোলামেলা পৃথিবীই সবচেয়ে বড়ো বই।
উত্তরঃ
উদ্দেশ্য | বিধেয় |
১২.১ আকন্দবাড়ি স্কুলের ক্লাস ফাইভে বিভীষণ দাশ | এমু পাখির কথা বলেছিলেন। |
১২.২ স্কুলের সামনে | সবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। |
১২.৩ বিরাট এক পাখি | গাঢ় ছাই রঙের। |
১২.৪ শংকর | তন্ময় হয়ে শুনছিল। |
১২.৫ এই খোলামেলা পৃথিবীই | সবচেয়ে বড়ো বই। |
১৩. ‘কথা’, ‘চোখ’ -এই শব্দগুলির প্রত্যেকটিকে দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্য লেখো।
উত্তরঃ
কথা—
(১) তোমার কথা খুব মিষ্টি। (গলার স্বর অর্থে)
(২) কথা দিলাম তোমার উপকার করব। (প্রতিশ্রুতি অর্থে)।
চোখ—
(১) সে চোখে কম দেখে। (নয়ন অর্থে)
(২) বাচ্চাটাকে চোখে চোখে রেখো। (নজরে রাখা অর্থে)
১৪. নীচের বাক্যগুলির মধ্যে কোনটি
সরল, কোনটি জটিল ও কোটি যৌগিক বাক্য তা খুঁজে নিয়ে লেখো।
১৪.১ জানলায় কোনো শিক নেই।
উত্তরঃ সরল বাক্য।
১৪.২ জেগে থাকতে দেখা আর স্বপ্নে দেখা জিনিস আজকাল শংকরের গুলিয়ে যাচ্ছে।
উত্তরঃ যৌগিক বাক্য।
১৪.৩ পাখি দেখার জন্য যখন মাঠে বা বাগানে ঘুরবে তখন খুব সাবধানে পা টিপে টিপে চলবে।
উত্তরঃ জটিল বাক্য।
১৪.৪ বিভীষণ মাসসাই যে তাকে এমন একটা কথা বলবেন তা ভাবতে পারেনি শংকর।
উত্তরঃ জটিল বাক্য।
১৫. নীচের শব্দগুলি দিয়ে বাক্য তৈরি করে একটি অনুচ্ছেদের রূপ দাও:
গুঁড়ো, প্রকৃতি, জানলা, ডানা, ছায়া, শব্দ, স্বপ্ন, খোলামেলা।
উত্তরঃ বাইরে হাওয়ায় বৃষ্টির গুঁড়ো উড়ে বেড়াচ্ছে। জানলা দিয়ে একমনে তাকিয়ে দেখছে ঝিমলি। প্রকৃতি যেন রোজ নতুন সাজে এসে হাজির হয়। গাছে বসা সবুজ টিয়ার ডানায় মুক্তোর মতো বিন্দু বিন্দু জল। গাছের নীচে ছায়া আজ আর নেই। চারদিকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। যেন এক অজানা স্বপ্নের দেশ। প্রকৃতির এমন খোলামেলা দৃশ্য সত্যিই বিরল।
১৬. নীচের প্রশ্নগুলির নিজের ভাষায় উত্তর লেখো :
১৬.১ ‘পাগলা বাতাসে তার ঢেউয়ের গুঁড়ো সবসময়ে উড়ে আসছে’– এখানে বাতাসকে ‘পাগলা’ বলা হলো কেন ?
উত্তরঃ আকন্দবাড়ি গ্রামটি সমুদ্র থেকে বেশি দূরে অবস্থিত নয়। তাই বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। এখানে বাতাস জোরে বয় এবং এলোেমলোভাবে বয়। তাই বাতাসকে পাগলা বলা হয়েছে।
১৬.২ ‘বিভীষণ দাশ এমু পাখির কথা বলেছিলেন।’– গল্পের ‘বিভীষণ দাশ’-এর পরিচয় দাও। এমু পাখি ছাড়া গল্পে আর কোন্ পাখির প্রসঙ্গ এসেছে ?
উত্তরঃ গল্পের বিভীষণ দাশ আকন্দবাড়ি স্কুলের প্রকৃতিবিজ্ঞানের শিক্ষক। তিনি কড়া মাস্টারমশাই হিসাবে পরিচিত। কিন্তু তাঁর কোমল মনেরও পরিচয় পাওয়া যায়। তাই শংকরের এমু পাখি দেখা এবং সেই পাখির বর্ণনা শুনে তিনি বিরক্ত হলেও তিনি পাখি দেখার পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। চোেখ খোেলা রেখে পৃথিবীর পাখি, গাছপালা, মেঘ, আলো দেখার কথা বলেছেন।
গল্পে এমু পাখি ছাড়া বাজপাখি, শঙ্খচিল, তিতির, পানকৌড়ি, হাঁড়িচাচা, মাছরাঙা, ডৌখোল ইত্যাদি পাখির প্রসঙ্গ আছে।
১৬.৩ ‘শংকর বুঝল, কোথাও একটা বড়ো ভুল হয়ে যাচ্ছে।’–কে এই শংকর ? তার স্বভাবের প্রকৃতি কেমন ? তার যে কোথাও একটা বড়ো ভুল হয়ে যাচ্ছে-এটা সে কীভাবে বুঝতে পারল ?
উত্তরঃ অভিমন্যু সেনাপতির ছেলে শংকর সেনাপতি আকন্দবাড়ি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র।
শংকর খুব আনমনা, কল্পনাপ্রবণ, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। সে অদ্ভুত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখে। প্রকৃতি ভালোবাসে, গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। সরল প্রকৃতির ছেলে।
শংকর এমু পাখিকে স্বপ্নে দেখেছে বলাতে এবং মাস্টার মশাইয়ের আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যখন দেখল ক্লাসের অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা হাসছে, মাস্টারমশাই-এর গলায়ও ঠাট্টার সুর। তখন সে বুঝতে পারল তার কোথাও একটা বড়ো ভুল হয়ে যাচ্ছে।
১৬.৪ এমু পাখির যে বর্ণনা শংকর দিয়েছিল তার সঙ্গে পাখিটির মিল বা অমিল কী লেখো।
উত্তরঃ শংকর এমু পাখির যা বর্ণনা দিয়েছে তাতে রঙের ও আকারের দিক থেকে কিছুটা মিললেও, পাখির ওড়ার সম্পর্কে যা বলেছে, বা অন্য পাখির ভয়ে সরে যাওয়া সম্পর্কে যা বলেছে তা একেবারেই ঠিক নয়। এমু পাখি উড়তে পারে না কিন্তু জোরে দৌড়াতে পারে। ফলে দৌড়বাজ পাখি। বসবাস আন্দিজ পাহাড়ে। ফলে তার পক্ষে ঘোলপুকুরের বড়ো দিঘির পাড়ে সবেদা গাছে বসা একেবারেই সম্ভব নয়। তার ডানায় বাতাস কাটার শব্দও অসম্ভব।
১৬.৫ ‘এটা কি পঞ্চানন অপেরা পেয়েছো ?’– ‘অপেরা’ বলতে কী বোঝ ? এখানে অপেরার প্রসঙ্গ এল কেন ?
উত্তরঃ ‘অপেরা’ বলতে যাত্রাপালাকে বোঝানো হয়।
যাত্রাপালায় বাস্তবের চেয়ে কল্পনার প্রাধান্য থাকে। শংকর এমু পাখি সম্পর্কে যে বিবরণ দিয়েছে, তা শংকরের কল্পনা বা স্বপ্ন। এই প্রসঙ্গে অপেরার কথা এসেছে।
১৬.৬ ‘বলো, বলতেই হবে’-কাকে একথা বলা হলো ? উদ্দিষ্টকে কোন্ কথা বলতে হবে বলে দাবি জানানো হয়েছে ?
উত্তরঃ একথা আকন্দবাড়ি স্কুলের ছাত্র শংকর সেনাপতিকে বলা হয়েছে।
ঘোলপুকুরে এমু পাখি দেখেছে শংকর। কিন্তু সেটা সম্ভব নয়, কারণ এমু পাখি আন্দিজ পাহাড়ে থাকে। সেজন্যই শংকর কীভাবে এমু পাখিকে ঘোলপুকুরে দেখেছে সেটাই বলতে বলা হয়েছে।
১৬.৭ গল্প অনুসরণে আকন্দবাড়ি স্কুলে প্রকৃতিবিজ্ঞান ক্লাসে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ আকন্দবাড়ি স্কুলে প্রকৃতিবিজ্ঞানের ক্লাসে শংকরের এমু পাখি দেখা নিয়ে এক বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। শিক্ষক বিভীষণ দাশ যখন ক্লাসে পড়াচ্ছিলেন তখন শংকর জানালার ফাঁক দিয়ে আনমনা হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়েছিল। শিক্ষকের প্রশ্নে জানায় যে, সে এমু পাখি দেখেছে। তার কল্পনায় দেখা এমু পাখির বাস্তবে কোনো মিল নেই। স্বপ্নে দেখা এমু পাখির কথা শুনে শিক্ষকের গলায় ঠাট্টার সুর ও সমস্ত ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের হাসি তাকে একটু ঘাবড়ে দেয়। শংকর অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েও সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে, তার প্রকৃতি প্রেমের জন্য শিক্ষক তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন। তাকে এই পৃথিবীর পাখি, গাছপালা, মেঘ, আলো চোেখ খোলা রেখে দেখার জন্য উৎসাহিত করেন। তার বুকটা গর্বে ফুলে উঠে; আর সে-ই যুদ্ধ জয়ের সৈনাপতি।
১৬.৮ ‘স্বপ্নে সে অনেক কিছু জানতে পেরেছে।’– কার স্বপ্ন দেখার কথা বলা হয়েছে ? স্বপ্ন দেখে সে কী জেনেছে ?
উত্তরঃ এখানে আকন্দবাড়ি স্কুলের ছাত্র শংকরের স্বপ্ন দেখার কথা বলা হয়েছে।
স্বপ্নে শংকর এমু পাখির সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছে। এছাড়া জেনেছে, স্বপে বাতাসের রং নীলচে, বাড়ি ঘরদোর খয়েরি রঙের। স্বপ্নে ধাক্কা কিংবা গুঁতো খেলে কোনো ব্যথা লাগে না। তাই ঘোলপুকুরে বড়োদিঘিতে ডুব দেওয়াব সময় দিঘিতে পোঁতা বাঁশে গা ঘসে গেলেও তার গায়ে ব্যথা লাগে নি।
১৬.৯ ‘পাখি দেখার জন্য যখন মাঠে বা বাগানে ঘুরবে’– তখন কীভাবে চলতে হবে ? ঘুরবে’-তখন কীভাবে চলতে হবে ?
উত্তরঃ পাখি দেখার জন্য শিক্ষকের উপদেশ অনুযায়ী সাবধানে পা টিপে টিপে চলতে হবে যাতে একটুও শব্দ না হয়। তাহলে পাখি উড়ে যাবে। এছাড়া জামা কাপড়ের রং শুকনো পাতার রং বা জলপাই রঙের হলে ভালো। এই রং গাছের পাতার সঙ্গে মিশে থাকে। তবে সবচেয়ে ভালো বেগুনি রঙের জামা পরলে। কারণ বেগুনি রং পাখিরা দেখতে পায় না।
১৬.১০ “তাদের কথা বলতে পারো ?”- এই প্রশ্নের সূত্র ধরে বক্তা-শ্রোতার কথোপকথনের অংশটুকু নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তরঃ মাস্টারমশাইয়ের পাখি দেখার প্রশ্নের উত্তরে শংকর মাছরাঙা পাখির কথা বলে। এছাড়া, হাঁড়িচাচা, পানকৌড়ি, তিতির পাখির কথাও বলে। মাস্টারমশাই সে কথা শুনে শংকরকে চোখ খোলা রেখে পৃথিবীর পাখি, গাছপালা, মেঘ, আলো সব দেখে নিতে বললেন। তাতে শংকরের বুক গর্বে ফুলে উঠল। মাস্টারমশাই আরও বললেন খোলামেলা পৃথিবীই সবচেয়ে বড়ো বই ও তাকে চোখ ভরে দেখাই সবচেয়ে বড়ো পড়াশুনো।
👉 পরবর্তী পাঠঃ পাইন দাঁড়িয়ে আকাশে নয়ন তুলি