CLASS 7 HISTORY 2ND UNIT TEST
WBBSE Class 7 History Second Unit Test Question Answer Set-3 | সপ্তম শ্রেণি ইতিহাস দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন
📌 সপ্তম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র | Class 7 All Subject Question Paper
Set-3
সিলেবাস— চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অধ্যায়।
দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন
সপ্তম শ্রেণি
বিষয় : ইতিহাস
পূর্ণমান : 25 সময় : 50 মিনিট
১। ঠিক উত্তরটি বেছে নাও : (যে-কোনো পাঁচটি) ১x৫=৫
১.১ সুলতানদের জয় করা রাজ্য বা প্রদেশ হল (মুক্তি / ইকতা / উলেমা )।
উত্তরঃ ইকতা
১.২ পায়ে হাঁটা যে ডাকের ব্যবস্থা ছিল তাকে বলা হয় – ( দাওআ / উলাক / ওয়ালি)।
উত্তরঃ দাওআ
১.৩ পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় (১৫৩০ / ১৫৪৫ / ১৫৫৬) খ্রিস্টাব্দে।
উত্তরঃ ১৫৫৬
১.৪ বীরবলের প্রকৃত নাম ছিল– ( মোহন দাস / মহেশ দাস / চরণ দাস)।
উত্তরঃ (খ) মহেশ দাস।
১.৫ মুঘল যুগে বড় ও সুন্দর বাড়ি গুলিকে (হাভেলি / বাংলো / মাকান) বলা হত।
উত্তরঃ হাভেলি।
১.৬ মুঘল আমলে ভারতে আমদানি হত (হাতি / ঘোড়া / মশলা।
উত্তরঃ ঘোড়া।
২। নীচের প্রশ্নগুলির একটি বাক্যে উত্তর দাও : ১×৫=৫
২.১ আরবি ভাষায় ‘সুলতান’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ আরবি ভাষায় ‘সুলতান’ শব্দের অর্থ ও কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা।
২.২ মহম্মদ বিন তুঘলক সোনা ও রুপার বদলে কোন ধাতুর মুদ্রা চালু করেছিলেন ?
উত্তরঃ মহম্মদ বিন তুঘলক সোনা ও রুপার বদলে তামার ধাতুর মুদ্রা চালু করেছিলেন।
২.৩ খানুয়ার যুদ্ধ কত খ্রিস্টাব্দে হয় ?
উত্তরঃ খানুয়ার যুদ্ধ ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল।
২.৪ ‘আকবরনামা’ গ্রন্থটি কার লেখা ?
উত্তরঃ ‘আকবরনামা’ গ্রন্থটির লেখক আবুল ফজল।
২.৫ চিরাগ-ই দিল্লি কথার অর্থ কী ?
উত্তরঃ চিরাগ-ই দিল্লি কথার অর্থ দিল্লির প্রদীপ।
৩। নীচের যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ২×২=৪
৩.১ ‘জিজিয়া কর’ কী ?
উত্তরঃ মুসলমান শাসকরা অমুসলমান প্রজাদের কাছ থেকে জিজিয়া নামে এক বিশেষ ধরনের কর আদায় করত। এটি ছিল মাথাপিছু এক ধরনের কর। এর বিনিময়ে মুসলমান শাসকরা অমুসলমান প্রজাদের জীবন, নিজের ধর্মপালন ও সম্পত্তির সুরক্ষা প্রদান করতেন। তবে জিজিয়া কর দিতে হত না ব্রাহ্মণ, নারী, শিশু, দাস, সন্ন্যাসী, অন্ধ, খঞ্জ, গরিব ও উন্মাদ ব্যক্তিদের।
৩.২ ঔরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য ক্ষত বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ মুঘল সম্রাট ওরঙ্গজেব দক্ষিণ ভারত জয় করে বেশি রাজস্ব আদায় করতে ও মারাঠাদের দমন করতে চেয়েছিলেন। দাক্ষিণাত্যকে নিজের অধিকার আনার জন্য ২৫ বছর ধরে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফল হয়নি একই দাক্ষিণাত্য কত বলা হয়।
৩.৩ ‘দাদন’ বলতে কী বোঝায় ?
উত্তরঃ ‘দাদন’ শব্দের অর্থ অগ্রিম ইউরোপীয় বণিকরা ভারতীয়দের দাদন বা অগ্রিম অর্থ বা কাঁচামাল দিয়ে উৎপাদিত সামগ্রী কম দামে কিনে নিত।
৪। নীচের যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৩×২=৬
৪.১ বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির মধ্যে সংঘর্ষকে তুমি কি একটি ধর্মীয় লড়াই বলবে ? তোমার যুক্তি দাও।
উত্তরঃ দক্ষিণ ভারতে ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর ও ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে বাহমনি নামে দুটি রাজ্য গড়ে ওঠে। এই দুটি শক্তিশালী রাজ্যের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চলেছিল।
• ধর্মীয় লড়াই : বিজয়নগর ছিল হিন্দু রাজ্য আর বাহমনি ছিল মুসলিম শাসিত রাজ্য। তাই উভয় রাজ্যের মধ্যে লড়াই লেগে থাকত বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু এ কথা ঠিক নয়। এই লড়াইয়ের আসল কারণ ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক।
• অর্থনৈতিক : কৃষ্ণা ও তুঙ্গভদ্রা নদীর মধ্যবর্তী রায়চুর দোয়াব ছিল একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। এই অঞ্চলের অধিকার নিয়ে চোল ও চালুক্যদের মধ্যে এবং যাদব ও হোয়েসলদের মধ্যেও লড়াই হত। কৃষ্ণা-গোদাবরী বদ্বীপ অঞ্চলটিও ছিল অতি উর্বর অঞ্চল এবং মারাঠা অঞ্চলের গোয়া ছিল বহির্বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। গোয়াতে ইরাক-ইরান থেকে উন্নতমানের ঘোড়া আমদানি হত। গোয়া যার দখলে থাকবে সে উন্নত অশ্বারোহী বাহিনী গঠন করতে পারবে। তাই এই অঞ্চলগুলি দখল করার জন্য উভয় শক্তি উদগ্রীব হয়েছিল। তাই বলা যায়, বিজয়নগর ও বাহমনি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দুই রাজ্য হলেও এদের লড়াইয়ের আসল কারণ ধর্মীয় নয়, আসল কারণ ছিল অর্থনৈতিক।
৪.২ পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।
উত্তরঃ পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ: পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে। আকবর ও আদিল শাহের প্রধানমন্ত্রী হিমুর মধ্যে পানিপতের এই যুদ্ধ হয়েছিল।
• যুদ্ধের পটভূমি : হুমায়ুনের মৃত্যুর সময় আকবর ছিলেন পাঞ্জাবের কালানৌরে। মুঘল সম্রাটের অনুপস্থিতির সুযোগে শের শাহের আত্মীয় আদিল শাহের প্রধানমন্ত্রী হিমু দিল্লি অধিকার করেন। আকবর তাঁর অভিভাবক বৈরাম খানের সাহায্যে দিল্লি দখলের জন্য এলে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে হিমুর সঙ্গে পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়।
• যুদ্ধের ফল : পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধে আকবর জয়লাভ করেন। আকবর পুনরায় দিল্লি দখল করে মুঘল সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
৪.৩ কেন সুলতানদের সময়কার পুরোনো দিল্লির ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়েছিল ?
উত্তরঃ সুলতানি আমলে ভারতের প্রধান শাসনকেন্দ্র ছিল দিল্লি। তাই ভারতের সুলতানি শাসনকে ‘দিল্লি সুলতানি’ বলা হত। তবে সুলতানি আমলের প্রথম দিল্লি বা কুতুব দিল্লি পরবর্তীকালে পুরোনো দিল্লি নামে পরিচিত হয়।
• পুরোনো দিল্লির অবক্ষয়ের কারণ—
(ক) মুঘলদের রাজধানীর পরিবর্তন : সুলতানদের পরবর্তীকালে মুঘল শাসকগণ দিল্লি থেকে বিভিন্ন জায়গায় রাজধানী স্থানান্তরিত করেছিলেন। মুঘল আমলে পুরোনো দিল্লির পরিবর্তে আগ্রা, ফতেহপুর সিকরি, শাহজাহানাবাদ রাজধানীর মর্যাদা লাভ করেছিল।
(খ) সার্বভৌম প্রতিষ্ঠা : অনেক শাসকগণ নতুন এলাকায় শহর প্রতিষ্ঠা করে নিজের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইতেন। এজন্য সম্রাট শাহ জাহান পুরোনো দিল্লি থেকে কিছু দূরে শাহজাহানাবাদ শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
৫। নীচের যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর লেখো : ৫×১=৫
৫.১ ইবন বতুতার বিবরণ থেকে মহম্মাদ বিন তুঘলকের সময়ের ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্বন্ধে কী জানা যায় ?
উত্তরঃ ইবন বতুতা ছিলেন উত্তর আফ্রিকার মরক্কো দেশের তাঞ্জিয়ার শহরের অধিবাসী। তিনি দিল্লির সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে ভারতে এসেছিলেন। তিনি ভারতভ্রমণ করে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন। তাঁর বিবরণীর নাম অল-রিহলা। তাঁর এই গ্রন্থ থেকে সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলকের সময়ের ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবরণ পাওয়া যায়।
ইবন বতুতার বিবরণে ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থা—
ভারতের ডাকব্যবস্থাঃ মহম্মদ বিন তুঘলকের রাজত্বকালে ভারতে ডাকে চিঠিপত্র পাঠানোর দু-রকম ব্যবস্থা ছিল– উলাক ও দাওআ।
উলাকঃ ঘোড়ার পিঠে চেপে চিঠিপত্র দ্রুত নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাকে বলা হয় উলাক। এই ব্যবস্থায় প্রতি চার মাইল অন্তর চিঠিপত্র হস্তান্তরিত হতে হতে দ্রুত এগিয়ে যেত।
দাওআঃ পায়ে হেঁটে এক জায়গা থেকে আর-এক জায়গায় চিঠিপত্র পৌঁছোনোর ডাকব্যবস্থাকে বলা হয় দাওআ। এই ব্যবস্থায় প্রায় প্রত্যেক মাইলের এক-তৃতীয়াংশে ডাকের তাঁবু থাকে। সেই তাঁবুতে ডাকের লোকেরা কোমর বেঁধে ডাক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। এদের প্রত্যেকের হাতে একটি দু-হাত লম্বা লাঠি থাকে এবং লাঠির মাথায় তামার তৈরি কয়েকটি ঘণ্টা বাঁধা থাকে। ডাকবাহকেরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দৌড়ে চিঠিপত্র এগিয়ে নিয়ে যায়।
ডাক যোগাযোগের প্রধান উদ্দেশ্যঃ দেশের নিরাপত্তার জন্য সুলতান সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গুপ্তচর রাখার ব্যবস্থা করতেন। এই গুপ্তচর বা গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা দেশে কোনো নতুন লোকের আগমন ঘটলে তাদের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখত। গুপ্তচররা তাদের সম্পর্কে সন্দেহ হলে নবাগতদের নাম, তাদের দেহের ও পোশাকের বর্ণনা, তাদের সঙ্গীসাথি ও ঘোড়া-সহ সব কিছুর বিবরণ গুপ্তচররা সুলতানকে জানাতেন।
৫.২ মুঘল সম্রাটদের কী কোনো নির্দিষ্ট উত্তরাধিকার নীতি ছিল ? উত্তরাধিকারের বিষয়টি কেমনভাবে তাদের শাসনকে প্রভাবিত করেছিল ?
উত্তরঃ ভারতে মুঘল সম্রাটদের কোনো নির্দিষ্ট উত্তরাধিকার নীতি ছিল না।
মুঘল শাসনে উত্তরাধিকার নীতির প্রভাব—
তৈমুরীয় নীতি : মুঘল সম্রাটগণ ছিলেন তুর্কি নেতা তৈমুর লঙের বংশধর। তৈমুরীয় নীতি অনুসারে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সাম্রাজ্য ভাগ করার প্রথা ছিল। কিন্তু ভারতের মুঘল সম্রাটগণ তা মানেননি।
বাবরের পর হুমায়ুন যখন দিল্লির সম্রাট হন তখন তিনি তৈমুরীয় উত্তরাধিকার নীতি মানেননি। হুমায়ূন সাম্রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং তাঁর বাকি তিন ভাই কামরান, আসকারি ও হিন্দালকে কিছু অঞ্চলের দায়িত্ব দেন।
রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ : এক মুঘল সম্রাটের পর কে সম্রাট হবেন তা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়। কারণ সম্রাটের সব পুত্রই সিংহাসনের দাবিদার হতেন। সম্রাটের সব পুত্রদেরই লক্ষ্য ছিল- ‘তখত আউর তখতা’ অর্থাৎ ‘হয় সিংহাসন, নইলে কফিন’। শাহ জাহানের রাজত্বের শেষদিকে ঔরঙ্গজেব তাঁর তিন ভাই দারা, সুজা ও মুরাদকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করেন। ঔরঙ্গজেবের পর ভ্রাতৃহত্যা প্রবল আকার ধারণ করে।
অভিজাতদের ক্ষমতা বৃদ্ধি : মুঘল সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে অভিজাতরা বিভিন্ন রাজপুত্রের সমর্থক হয়ে ওঠে। যিনি সম্রাট হতেন সমর্থক অভিজাতদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেত। ফলে অভিজাতরাও ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠত।
মুঘল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় : মুঘল সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধ হত, ফলে মুঘল সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এর ফলে সম্রাটের ক্ষমতা কমে যায়, অর্থসংকট সৃষ্টি হয় এবং মুঘল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় ঘটে।