WBBSE Class 8 Geography Second Unit Test Question Paper With Answer Set-6 | অষ্টম শ্রেণি ভূগোল দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন সেট-৬

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

2ND SUMMATIVE EVALUATION
CLASS 8 (VIII) WBBSE
GEOGRAPHY QUESTION PAPER

WBBSE Class 8 Geography Second Unit Test Question Paper With Answer Set-6 | অষ্টম শ্রেণি ভূগোল দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন সেট-৬

📌 অষ্টম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র | Class 8 All Subject Question Paper

Set-6

সিলেবাস/Syllabus—
(১) ৪র্থ অধ্যায় : চাপ বলয় ও বায়ু প্রবাহ।
(২) ৫ম অধ্যায় : মেঘ-বৃষ্টি।
(৩) ৯ম অধ্যায় : উত্তর আমেরিকা।
(৪) ১০ম অধ্যায় : দক্ষিণ আমেরিকা

দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন
অষ্টম শ্রেণি
বিষয় : ভূগোল
পূর্ণমান : 25            সময় : 50 মিনিট

১। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখ : ( যে কোন তিনটি) ১×৩=৩

১.১ ক্যাটাবেটিক বায়ু হল- (আকস্মিক/ স্থানীয় / সাময়িক/ নিয়ত বায়ু)।

উত্তরঃ সাময়িক বায়ু।

১.২ বিশ্বের বৃহত্তম কফি উৎপাদক দেশ হলো – ( কলম্বিয়া / ব্রাজিল / আর্জেন্টিনা/ চিলি)।

উত্তরঃ ব্রাজিল

১.৩ আয়তনে দক্ষিণ আমেরিকা বিশ্বের (তৃতীয় / দ্বিতীয় / চতুর্থ / পঞ্চম) বৃহত্তম মহাদেশ।

উত্তরঃ চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ।

১.৪ একটি শীতল স্থানীয় বায়ুর উদাহরণ হল – (সেলভা / সাভানা / তৈগা / ডাউনস্)।

উত্তরঃ সেলভা।

১.৫ চিরবসন্তের দেশ বলা হয়-(কুইটো/ চিলি / পেরু/ প্যাটাগোনিয়া)-কে।

উত্তরঃ কুইটো।

২। শূন্যস্থান পূরণ কর: (যে কোন দুটি) ১×২=২

২.১ বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা পরিমাপ করা হয় _________ যন্ত্রের সাহায্যে।

উত্তরঃ হাইগ্রোমিটার।

২.২ __________ পৃথিবীর সর্বোচ্চ হ্রদ।

উত্তরঃ টিটিকাকা

২.৩ সেন্ট লরেন্স নদীর দৈর্ঘ্য _________।

উত্তরঃ প্রায় ১১২০ কিমি।

২.৪ বজ্রমেঘ বলা হয় ________ মেঘকে।

উত্তরঃ কিউমুলোনিম্বাস।

৩। ‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও। ১×৫=৫

১. কলম্বিয়া নদী    (ক) মিসিসিপি-মিসৌরি
২. গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (খ) সেলকির্ক পর্বত
৩. পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ (গ) কানাডা
৪. সুপিরিয়র হ্রদ   (ঘ) প্রেইরি তৃণভূমি অঞ্চল
৫. পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি (ঙ) কলোরাডো নদী

উত্তরঃ

১. কলম্বিয়া নদী (খ) সেলকির্ক পর্বত
২. গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (ঙ) কলোরাডো নদী
৩. পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ (ক) মিসিসিপি-মিসৌরি
৪. সুপিরিয়র হ্রদ (গ) কানাডা
৫. পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি (ঘ) প্রেইরি তৃণভূমি অঞ্চল।

৩. নীচের প্রশ্নগুলির অনধিক ৩০টি শব্দে উত্তর দাও (যে কোনো দুটি) ২×২=৪

৩.১ ‘ঘূর্ণবাতের চক্ষু’ কাকে বলে ?

উত্তরঃ শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রের 5-20 কিমি. ব্যাসযুক্ত বৃত্তাকার অঞ্চলকে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে। ঘূর্ণবাতের চক্ষুর বায়ু গতিহীন ও শান্ত থাকে। এখানকার আকাশ মেঘমুক্ত ও বৃষ্টিহীন থাকে। চক্ষু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে শান্ত পরিবেশ উল্লম্ব স্তম্ভ সৃষ্টি করে। টর্নেডোতে ঘূর্ণবাতের চক্ষু স্পষ্ট বোঝা যায়। উল্লেখ্য, ঘূর্ণবাতের চক্ষু-তে গভীর নিম্নচাপ বিরাজ করে।

৩.২ শুষ্ক অঞ্চলে শিশির কম পড়ে কেন ?

উত্তরঃ শুষ্ক বা প্রায় শুষ্ক অঞ্চলের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুবই কম। সেখানে শীতল হয়ে ঘনীভূত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পের অভাব দেখা দেয়। তাই শুষ্ক অঞ্চলে শিশির কম পড়ে। উদাহরণ: রাজস্থানের জয়সলমীরে শিশির পড়ে না বললেই চলে।

৩.৩ গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (Grand Canion) কী ?

উত্তরঃ বৃষ্টিপাতের অভাবের জন্য মরুভূমির মৃত্তিকা শিথিল থাকে। সেজন্য নদীগুলির নিম্নক্ষয় বেশি হয়। নদীর নিম্নক্ষয় বেশি হওয়ার জন্য নদী উপত্যকা খুবই গভীর হয় এবং নদী উপত্যকা ইংরেজি ‘।’ অক্ষরের মতো দেখতে হয়। এইরূপ ‘।’ আকৃতিবিশিষ্ট সুগভীর নদীখাতকে গিরিখাত বলে। উদাহরণ: কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পৃথিবীর গভীরতম গিরিখাত (দৈর্ঘ্য প্রায় 446 কিমি এবং গভীরতা 1600 মিটারেরও বেশি।

৩.৪ হিমপ্রাচীর কী ?

উত্তরঃ উত্তর আমেরিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব উপকূল সংলগ্ন নিউ ফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের পাশ দিয়ে গাঢ় নীল বর্ণের উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত এবং গাঢ় সবুজ বর্ণের শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত পাশাপাশি প্রবাহিত হচ্ছে। এই দুই ভিন্ন বর্ণের সমুদ্রস্রোতের মিলনস্থলে যে সুস্পষ্ট রেখা দেখা যায়, তাকে হিমপ্রাচীর বলে। ।

৪। নীচের প্রশ্নগুলির অনধিক ৫০টি শব্দে উত্তরঃ দাও (যে কোনো দুটি) ৩×২=৬

৪.১ শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাতের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ সংজ্ঞা : ‘শৈল’ অর্থাৎ পর্বত, ‘উৎক্ষেপ’ অর্থাৎ উপরে ওঠা। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতে বাধা পেয়ে পর্বতগাত্র বেয়ে এটা উপরে উঠে ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত হয়, তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে।

শর্ত বা পরিবেশ : (i) সমুদ্রের উপকূলবর্তী বা নিকটবর্তী অঞ্চলে পর্বতের অবস্থান, (ii) জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে পর্বত বা উচ্চভূমির অবস্থান।

প্রক্রিয়া : জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় কোনো উঁচু পর্বত, মালভূমি বা উচ্চভূমি দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হলে, তা ওই উচ্চভূমির গা বেয়ে উপরে উঠে গিয়ে প্রসারিত, শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (Orographic Rainfall) বলে। আমাদের দেশে মৌসুমি বৃষ্টিপাতও এই ধরনের।

প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর কিছু আর্দ্র বায়ুতে লীনতাপ সংযোজিত হলে তা পুনরায় উত্থিত হয়ে বিপরীত দিকে অনুবাত ঢালে পৌঁছায়। অনুবাত ঢাল বেয়ে নীচে নামার ফলে সেটি উয় ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। বায়ু যত নীচের দিকে পার্বত্য ঢালের উম্মতর স্থানে নামতে শুরু করে বায়ুর উয়তা ততই বাড়তে থাকে। ফলে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ু অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। জলীয় বাষ্প কম থাকার কারণে অনুবাত ঢালে খুব কম বৃষ্টি হয়। তাই একে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল (Rain Shadow Region) বলে।

বৈশিষ্ট্য : (i) বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এই বৃষ্টিপাত হয়। (ii) বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্বত্র সমান নয়। (ii) বছরের বিভিন্ন সময়ে এই বৃষ্টি হয়, (iv) এই বৃষ্টিপাত বেশ কিছুটা সময় ধরে চলে। (v) প্রধানত পার্বত্য বা উচ্চভূমি অধ্যুষিত অঞ্চলে এই বৃষ্টিপাত হয়ে।

উদাহরণ : জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর।

৪.২ শরৎকালে পশ্চিমবঙ্গের আকাশে তুমি দেখতে পাও এমন দুটি মেঘের নাম লেখো এবং তাদের বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তরঃ পশ্চিমবঙ্গের শরৎকালে আকাশে দেখতে পাওয়া যায় এমন দুটি মেঘ হল-(1) কিউমুলাস ও (2) সিরোকিউমুলাস।

১. কিউমুলাস মেঘের বৈশিষ্ট্য: (ⅰ) এই মেঘের উল্লম্ব বিস্তার যথেষ্ট বেশি, (ii) এই মেঘের নিম্নাংশের রং কালো এবং উপরিভাগের রং সাদা, (iii) এই মেঘের উপরিতল ফুলকপির মতো এবং তলদেশ সমতল।

২.সিরোকিউমুলাস মেঘের বৈশিষ্ট্য: (i) এই মেঘ পেঁজা তুলোর মতো সাদা রঙের, (ii) ম্যাকারেল মাছের পিঠের মতো দেখতে হয়, (iii) পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে।

৪.৩ দক্ষিণ আমেরিকার ‘সাভানা তৃণভূমি’ সম্পর্কে কী জানো ?

উত্তরঃ আমাজন অববাহিকা বা সেলভা বনভূমির উত্তর ও দক্ষিণে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে লম্বা লম্বা কর্কশ (4 মিটার) ও কাঁটাযুক্ত শক্ত ঘাসের তৃণ ভূমি সৃষ্টি হয়েছে, তাকে ‘সাভানা তৃণভূমি’ বলা হয়। এই তৃণভূমিটি ব্রাজিলের উচ্চভূমি, গিয়ানা উচ্চভূমি, ওরিনোকো অববাহিকা এবং প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনার উত্তর অংশে দেখা যায়। এখানকার জলবায়ুর প্রকৃতি হল গ্রীষ্মকাল উষ্ণ-আর্দ্র এবং শীতকাল শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির। গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণা 27°- 30° সে. গ্রে. এবং শীতকালীন গড় উষ্ণা 23°-25° সে. গ্রে. থাকে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 50-100 সেমি। এই সাভানা তৃণভূমি ব্রাজিলের উচ্চভূমিতে ক্যাম্পোস, ওরিনাকো ও গিয়ানার উচ্চভূমিতে ল্যানোস এবং আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়েতে গ্রানচাকো নামে পরিচিত। এখানে শিকারিরা প্রচুর জীবজন্তু সহজেই শিকার করে বলে এই তৃণভূমি ‘শিকারিদের স্বর্গ’ নামে পরিচিত।

৫। নীচের প্রশ্নগুলির অনধিক ৮০টি শব্দে উত্তর দাও : ( যে কোনো একটি) ৫

৫.১ পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে শীতকালে বেশি বৃষ্টিপাত হয় কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ উভয় গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়, তাকে বলে পশ্চিমা বায়ু। এই বায়ুটির প্রভাবে মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়। এর কারণগুলি হল-

১. আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু: প্রতিটি মহাদেশেরই পশ্চিমে আছে সুবিস্তৃত মহাসাগর। তাই এই বায়ুটি পশ্চিম দিক থেকে আসার সময় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প গ্রহণ করে মহাদেশগুলিতে প্রবেশ করে।

২.জলীয় বাষ্পসমৃদ্ধ পশ্চিমা বায়ু:– মহাদেশগুলির পশ্চিমভাগে। জলীয় বাষ্পসমৃদ্ধ পশ্চিমা বায়ু আগে এসে পৌছায় বলে সেখানে। বেশি বৃষ্টিপাত হয় এবং তারপর ওই বায়ু যতই পূর্ব দিকে যেতে থাকে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায় বলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমতে থাকে।

৩. শীতল স্থলভাগের প্রভাব : শীতকালে জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি শীতল থাকে। এর ফলে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু শীতল স্থলভাগের ওপর এসে দ্রুত ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এ ছাড়া এ ছাড়া শীতল মেরুবায়ুর সংস্পর্শে এসেও দ্রুত ঘনীভূত হয় এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়।

৪. বায়ুচাপ বলয়ের অবস্থান পরিবর্তন:- সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়গুলির সীমা পরিবর্তিত হয় বলে গ্রীষ্মকালে মহাদেশগুলির পশ্চিমভাগের যেসব স্থান শুষ্ক আয়ন বায়ুর অন্তর্ভুক্ত হয়, সেই স্থানগুলিতেই শীতকালে আর্দ্র পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। যেমন- ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল।

৫.২ সমুদ্র বায়ু ও স্থলবায়ু সৃষ্টির কারণ ব্যাখ্যা করো ?

উত্তরঃ সমুদ্র ও স্থলবায়ুর মূলকারন হল দিন ও রাতে স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য। দিনের বেলা স্থলভাগ যত তাড়াতাড়ি তাপ শোষণ করে উত্তপ্ত হতে পারে জলভাগ পারে না, তাই দিনের বেলা স্থলভাগের উপর অধিক উষ্ণতার জন্য নিম্নচাপ ও জলভাগ তথা সমুদ্রের ওপর উচ্চচাপ বিরাজ করে। যার ফলে দিনের বেলা বিশেষ করে বিকেল বেলা সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে যে বাতাস প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্র বায়ু বলে, কারণ বায়ু যেদিক থেকে প্রবাহিত হয়, সেই দিক অনুসারে তার নাম রাখা হয়। অপর দিকে রাতের বেলা স্থলভাগ অতি দ্রুত শীতল হয়ে যায় কিন্তু সেই তুলনায় জলভাগ শীতল হতে পারে না, তখন জলভাগের উষ্ণা সামান্য বেশি হওয়ায় সমুদ্রের উপর নিম্নচাপ ও স্থলভাগের উপর উচ্চচাপ বিরাজ করে। তাই রাতের বেলা স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে বায়ুর প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। স্থলভাগ থেকে প্রবাহিত হওয়ায় একে স্থল বায়ু বলে। ভোরের দিকে স্থল বায়ুর গতিবেগ বেশি হয়।

৫.৩ নিয়ত বায়ু প্রবাহের বর্ণনা দাও।

উত্তরঃ পৃথিবীতে ওটি স্থায়ী নিম্নচাপ ও 4টি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় থাকার জন্য কতকগুলি বায়ু সারাবছর ধরে ওই উচ্চচাপ বলয়গুলি থেকে নিম্নচাপ বলয়গুলির দিকে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হয়। এদের বলে নিয়ত বায়ু। নিয়ত বায়ু প্রধানত তিনপ্রকার—

১. আয়ন বায়ু : উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের যথাক্রমে কর্কটীয় ও মকরীয় বা উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে দুটি বায়ু সারাবছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, তাদের বলা হয় আয়ন বায়ু।

শ্রেণিবিভাগ : আয়ন বায়ু দু প্রকার [i] উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু উত্তর গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আয়ন বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ। বলয়ের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্র অনুসারে ডান দিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। একে বলা হয় উত্তর- পর্ব আয়ন বায়ু।

[ii] দক্ষিণ- পূর্ব আয়ন বায়ু: দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে আয়ন বায়ু নিয়মিতভাবে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্র অনুসারে বাম দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই এই বায়ুর নাম আয়ন বায়ু।

বৈশিষ্ট্য : [i] বায়ুর গতিবেগ: উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি বলে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ুর গতিবেগ একটু কম, ঘণ্টায় 15-25 কিলোমিটার। দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি থাকায় দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু ঘণ্টায় 25-35 কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয়।

[ii] প্রবাহ অঞ্চল: আয়ন বায়ু সাধারণত নিরক্ষরেখার দু-দিকে 5° থেকে 25° অক্ষরেখার মধ্যে সাবাবছর প্রবাহিত হয়।

[iii] প্রভাব: আয়ন বায়ুর প্রবাহপথে মহাদেশগুলির পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পৃথিবীর বড়ো বড়ো মরুভূমিগুলি (যেমন- সাহারা, থর, কালাহারি, আটাকামা প্রভৃতি) সৃষ্টি হয়েছে।

২. পশ্চিমা বায়ু : উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু দুই মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপবলয় (সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয়)-এর দিকে সারাবছর নির্দিষ্ট পথে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়, তাদের বলা হয় পশ্চিমা বায়ু।

শ্রেণিবিভাগ— পশ্চিমা বায়ু দু প্রকার [i] দক্ষিণ-পশ্চিমা বায়ু: উত্তর গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু সুমেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্রানুসারে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। তাই এই বায়ুকে বলা হয় দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু। [ii] উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু: দক্ষিণ গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে পশ্চিমা বায়ু ফেরেলের সুত্রানুসারে বাম দিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ। বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। তাই এই বায়ুকে বলা হয় উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু।

বৈশিষ্ট্যঃ [i] নামকরণ: পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ু পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত। [ii] নিম্নচাপ বলয় অভিমুখী প্রবাহ : উত্তর ও দক্ষিণ উভয় গোলার্ধে 35-60° অক্ষাংশের মধ্যে। উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় অভিমুখে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। [iii] বৃষ্টিপাতের আধিক্য : পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পশ্চিম অংশে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। [iv] নাতিশীতোয় তৃণভূমির অবস্থান: পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পূর্বাংশে বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমশ কমে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ নাতিশীতোয় তৃণভূমির সৃষ্টি হয়েছে। [v] গতিবেগ: এই বায়ুর গতিবেগ উত্তর গোলার্ধের থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে (জলভাগের বণ্টন বেশি থাকার কারণে) বেশি।

৩.মেরু বায়ু : সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু নিয়মিতভাবে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, তাদের মেরু বায়ু বলে।

শ্রেণিবিভাগ : মেরু বায়ু দু-প্রকার— [i] উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু উত্তর গোলার্ধের মেরু বায়ু সুমেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে ফেরেলের সূত্রানুসারে ডান দিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। এর নাম উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু। [ii] দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু: দক্ষিণ গোলার্ধের মেরু বায়ু কুমেরু দেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ধাবিত হওয়ার সময় ফেরেলের সূত্রানুসারে। বাম দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু নামে প্রবাহিত হয়।

বৈশিষ্ট্য: [i] শুষ্ক প্রকৃতি: মেরু বায়ু অতিশীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির। [ii] শীতকালীন প্রাধান্য: এই বায়ুর প্রভাব বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে বেশি পরিলক্ষিত হয়। [iii] তুষারপাত ও বৃষ্টিপাত: মেরু বায়ুর প্রভাবে মহাদেশগুলির পূর্ব অংশে তুষারপাত ও সামান্য বৃষ্টিপাত হয় এবং দুই মেরুবৃত্তে ভয়াবহ তুষারঝড়ের সৃষ্টি হয়।

This Post Has One Comment

  1. শ্যামল ঘোষ

    Very good

Leave a Reply