নোঙর কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর কবি অজিত দত্ত | WBBSE Class 9 Bengali Nongor Kobitar Question Answer

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

নোঙর কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর কবি অজিত দত্ত | WBBSE Class 9 Bengali Nongor Kobitar Question Answer

বহু বিকল্পধর্মী MCQ প্রশ্ন উত্তর | নোঙর (কবিতা) অজিত দত্ত– নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Class 9 Bengali Nongor Kobita Question and Answer :

1. ‘বাঁধা পড়ে আছে’-র অর্থ হল—
(ক) বেঁধে রাখা হয়েছে
(খ) তটে আটকে আছে
(গ) নোঙরে বাঁধা অবস্থায় আটকে আছে
(ঘ) জলে আটকে আছে।

উত্তরঃ (গ) নোঙরে বাঁধা অবস্থায় আটকে আছে

2. তটটি বাঁধা পড়ে আছে—
(ক) সাগরের কাছে
(খ) জোয়ারভাটার কাছে
(গ) কবির কাছে
(ঘ) কাছির কাছে

উত্তরঃ (খ) জোয়ারভাটার কাছে

3. দাঁড় টানা হয়—
(ক) নৌকাকে স্থির রাখার জন্য
(খ) নৌকা ভাসিয়ে রাখার জন্য
(গ) নৌকা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য
(ঘ) নৌকার গতিবেগ ঠিক রাখার জন্য।

উত্তরঃ (গ) নৌকা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য

4. ‘বাণিজ্য-তরী’ বাঁধা পড়ে আছে—
(ক) তটের কাছে
(গ) নদীর কাছে
(খ) কবির কাছে
(ঘ) সাগরের কাছে।

উত্তরঃ (ক) তটের কাছে

5. কবি কোথায় পাড়ি দিতে চেয়েছেন?
(ক) সাগরতীরে
(গ) মঙ্গল গ্রহে
(খ) সপ্তসিন্ধুপারে
(ঘ) সিন্ধুপারে

উত্তরঃ (ঘ) সিন্ধুপারে

6. ‘সপ্তসিন্ধুপারে’- অর্থাৎ –
(ক) সাতটি নদীর পারে
(গ) সাতসমুদ্র পারে
(খ) সাতটি দেশের পারে
(ঘ) সপ্তগিরি পারে

উত্তরঃ (খ) সাতটি দেশের পারে

7. ‘নোঙর কখন জানি পড়ে গেছে তটের কিনারে’—উদ্ধৃতাংশটির মাধ্যমে যে ভাবনা ব্যক্ত হয়েছে, তা হলো—
(ক) পাড়ি দেওয়ার বাসনা থাকলেও বন্ধন ছিন্ন করা যায় না
(খ) নৌকা নোঙরেই আটকে থাকে
(গ) ভারী পণ্যের কারণেই নোঙরে নৌকা বাঁধা থাকে
(ঘ) স্রোতে নোঙর ভেসে গেলে তবে নৌকা পাড়ি দেয়।

উত্তরঃ (ক) পাড়ি দেওয়ার বাসনা থাকলেও বন্ধন ছিন্ন করা যায় না

8. দাঁড়ের নিক্ষেপে কবি শোনেন –
(ক) সাগরের গর্জন
(খ) ঢেউ-এর গর্জন
(গ) স্রোতের বিদ্রুপ
(ঘ) জলের কল্লোলধ্বনি

উত্তরঃ (গ) স্রোতের বিদ্রুপ

9. ‘নোঙর’ হল—
(ক) কাছি
(খ) বড়শি
(গ) লৌহদণ্ড
(ঘ) কাছি বাঁধা বড়শির মতো যন্ত্র বা অঙ্কুশ

উত্তরঃ (ঘ) কাছি বাঁধা বড়শির মতো যন্ত্র বা অঙ্কুশ

10. জোয়ারের সময় নদীতে—
(ক) জলস্ফীতি ঘটে
(খ) জল কমে যায়
(গ) জল শুকিয়ে যায়
(ঘ) জল উবে যায়।

উত্তরঃ (ক) জলস্ফীতি ঘটে

11. কবি কী উদ্দেশ্যে তরি নিয়ে বেরিয়েছেন ?
(ক) বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে
(খ) ভ্রমণের উদ্দেশ্যে
(গ) সময় কাটানোর উদ্দেশ্যে
(ঘ) ক্লান্তি মেটানোর উদ্দেশ্যে।

উত্তরঃ (ক) বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে

12. কবির এই দাঁড় টানাকে কী মনে হয়েছে ?
(ক) মিছে (খ) বাস্তব (গ) কঠিন (ঘ) অযথা।

উত্তরঃ (ক) মিছে

13. জোয়ারের ঢেউগুলিকে কে শোষণ করে ?
(ক) সূর্যালোক
(খ) ভাটা
(গ) বড়ো সামুদ্রিক মাছ
(ঘ) জোয়ার স্বয়ং ।

উত্তরঃ (খ) ভাটা

14. তরিতে মাথা ঠোকে
(ক) কবি নিজে
(খ) সাগরের মাছ
(গ) ভাটার জল
(ঘ) জোয়ারের ঢেউ

উত্তরঃ (ঘ) জোয়ারের ঢেউ

15. ফুলে ফুলে ওঠে—
(ক) জোয়ার জল
(খ) ভাটার ঢেউ
(গ) জোয়ারের ঢেউ
(ঘ) ভাটার টান।

উত্তরঃ (গ) জোয়ারের ঢেউ

16. সাগরগর্জনে ওঠে কেঁপে–
(ক) তরি
(গ) নিস্তব্ধ মুহূর্ত
(খ) কবি
(ঘ) সমুদ্র প্রাণী

উত্তরঃ (গ) নিস্তব্ধ মুহূর্ত

17. মাস্তুলে বাঁধি পাল,‘মাস্তুল’ অর্থে—
(ক) নৌকার কিনারা
(খ) নৌকার উপর উচ্চ শক্ত দণ্ড
(গ) নৌকার ছই
(ঘ) নৌকার দাঁড়।

উত্তরঃ (খ) নৌকার উপর উচ্চ শক্ত দণ্ড

18. নৌকা বাঁধা আছে—
(ক) জোয়ারের টানে
(খ) নোঙরের কাছিতে
(গ) মাস্তুলের কাছিতে
(ঘ) দাঁড়ের সাথে

উত্তরঃ (খ) নোঙরের কাছিতে

19. ‘পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে’, ‘পাড়ি দেওয়া’র অর্থ—
(ক) পেরিয়ে যাওয়া
(খ) যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া
(গ) ভাসিয়ে দেওয়া
(ঘ) স্থির থাকা।

উত্তরঃ (খ) যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া

20. ‘মিছে দাঁড় টানি’-র অর্থ—
(ক) দাঁড় না টানা
(খ) নিষ্ফল দাঁড় টানা
(গ) দাঁড় টানার ভান করা
(ঘ) অবিরাম দাঁড় টানা

উত্তরঃ (খ) নিষ্ফল দাঁড় টানা

21. কবি দাঁড় টানেন–
(ক) অবিরাম
(খ) মাঝে মাঝে
(গ) দিনের বেলা
(ঘ) রাতের বেলা ।

উত্তরঃ (ক) অবিরাম

22. ‘নোঙর’ কবিতাটির রচয়িতা-
(ক) বুদ্ধদেব বসু
(গ) অজিত দত্ত
(খ) প্রেমেন্দ্র মিত্র
(ঘ) সমর সেন

উত্তরঃ (গ) অজিত দত্ত

23. ভাঁটার শোষণ আহরণ করে—
(ক) জোয়ারের জল
(খ) ভাটার জল
(গ) স্রোতের প্রবল প্রাণ
(ঘ) সমুদ্রের জল।

উত্তরঃ (গ) স্রোতের প্রবল প্রাণ

24. নোঙর কোথায় পড়ে আছে?
(ক) তটের কিনারে
(গ) মাস্তুলে
(খ) রাস্তার ধারে
(ঘ) নদীতে।

উত্তরঃ (ক) তটের কিনারে

25. নোঙর কোথায় পড়ে গিয়েছে ?
(ক) তটের মাঝে
(খ) তটের কিনারে
(গ) সমুদ্র মাঝে
(ঘ) নদীর জলে।

উত্তরঃ (খ) তটের কিনারে

26. পাল বাঁধা হয়—
(ক) নৌকায়
(গ) কাছির সঙ্গে
(খ) দাঁড়ে
(ঘ) মাস্তুলে

উত্তরঃ (ঘ) মাস্তুলে

27. দাঁড়ের ‘নিক্ষেপ’ হল –
(ক) দাঁড় চালনা
(গ) দাঁড় বাঁধা
(খ) দাঁড় তুলে নেওয়া
(ঘ) দাঁড় বন্ধ রাখা

উত্তরঃ (ক) দাঁড় চালনা

28. নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি কেঁপে ওঠে—
(ক) জলের গর্জনে
(খ) সাগরগর্জনে
(গ) বাতাসের গর্জনে
(ঘ) জোয়ারের গর্জনে।

উত্তরঃ (খ) সাগরগর্জনে

29. কবি সপ্তসিন্ধুপারে যাবেন
(ক) ভ্রমণ করতে
(গ) বিদেশ ঘুরতে
(খ) বাণিজ্য করতে
(ঘ) সাগর দেখতে

উত্তরঃ (খ) বাণিজ্য করতে

30. কবি কতক্ষণ দাঁড় টানেন ?
(ক) তিন রাত
(খ) সারারাত
(গ) অর্ধ দিন
(ঘ) অর্ধ রাত

উত্তরঃ (খ) সারারাত

31. নোঙর পড়ে গেছে—
(ক) কবির জ্ঞাতে
(খ) কবির অজ্ঞাতে
(গ) কবির ঘুমের সময়
(ঘ) গভীর রাতে।

উত্তরঃ (খ) কবির অজ্ঞাতে

32. ‘ভাঁটার শোষণ’ হল—
(ক) জলস্ফীতি
(খ) ভাটার টান
(গ) জল হ্রাস
(ঘ) জোয়ারের টান

উত্তরঃ (খ) ভাটার টান

33. তরী ভরা পণ্য নিয়ে কবি কোথায় পাড়ি দিতে চান ?
(ক) পঞ্চ সিন্ধুপারে
(গ) সপ্তসিন্ধুপারে
(খ) ষষ্ঠসিন্ধুপারে
(ঘ) অষ্টসিন্ধুপারে

উত্তরঃ (গ) সপ্তসিন্ধুপারে

34. ‘পণ্য’ হল
(ক) মানুষজন
(খ) বিক্রয়ের সামগ্রী
(গ) নিজের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি
(ঘ) বর্জ্য সামগ্রী।

উত্তরঃ (খ) বিক্রয়ের সামগ্রী

35. ‘তট’ হল—
(ক) তীরভূমি
(খ) স্থলভূমি
(গ) জলাভূমি
(ঘ) মরুভূমি

উত্তরঃ (ক) তীরভূমি

36. স্রোতের বিদ্রুপ শোনা যায়—
(ক) সাগরগর্জনে
(খ) জোয়ারের টানে
(গ) ভাঁটার শোষণে
(ঘ) দাঁড়ের নিক্ষেপে

উত্তরঃ (ঘ) দাঁড়ের নিক্ষেপে

37. জোয়ারের ঢেউগুলি তরিতে মাথা ঠুকে—
(ক) ভেঙে যায়
(গ) সমুদ্রে ছোটে
(খ) পালিয়ে যায়
(ঘ) তরি ভেঙে দেয়।

উত্তরঃ (গ) সমুদ্রে ছোটে

38. কবিতায় উল্লিখিত তরির চালক কে‌ ?
(ক) কবির বন্ধু
(গ) কবি স্বয়ং
(খ) ভগবান
(ঘ) কবির প্রতিযোগী ।

উত্তরঃ (গ) কবি স্বয়ং

39. কবির বাণিজ্যতরি কাদের কাছে বাঁধা ?
(ক) সময়ের কাছে
(খ) জোয়ার-ভাটার কাছে
(গ) প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে
(ঘ) প্রতিকূলতার কাছে।

উত্তরঃ (খ) জোয়ার-ভাটার কাছে

40. নোঙর পড়া-র অর্থ—
(ক) বাঁধা পড়া
(খ) গতি বাড়া
(গ) গতি হ্ৰাস
(ঘ) ভেঙে পড়া।

উত্তরঃ (ক) বাঁধা পড়া
41. তারার দিকে চেয়ে কবি –
(ক) দিকের নিশানা করেন
(খ) সাগরের নিশানা করেন
(গ) দেশের নিশানা করেন
(ঘ) তটের নিশানা করেন।

উত্তরঃ (ক) দিকের নিশানা করেন

42. তরি ভরা আছে –
(ক) ফসলে
(গ) যাত্রীতে
(খ) পণ্য দ্রব্যে
(ঘ) জলে।

উত্তরঃ (খ) পণ্য দ্রব্যে

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর | নোঙর (কবিতা) অজিত দত্ত– নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | Class 9 Bengali Nongor Kobita Question and Answer :

১. ‘নোঙর’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘নোঙর’ কবিতাটি কবি অজিত দত্তের ‘শাদা মেঘ কালো পাহাড়’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

২. ‘ততই বিরামহীন দাঁড় টানা’—দাঁড় টানা বিরামহীন কেন ?

উত্তরঃ নৌকাকে নোঙরের কাছি থেকে মুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় কথকের দাঁড় টানা বিরামহীন হয়।

৩. সারারাত মিছে দাঁড় টানার কারণ কী ?

উত্তরঃ কবির অজান্তে তটের কিনারে নােঙর পড়েছে, দাঁড় টেনে সামনের দিকে আর এগােনাে যায় না।

৪. প্রতিবার জলে দাঁড় পড়লে কী শােনা যাচ্ছে ?

উত্তরঃ প্রতিবার জলে দাঁড় পড়লে শােনা যাচ্ছে স্রোতের বিদ্রুপ।

৫. স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করে কে ?

উত্তরঃ স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করে ভাটার শােষণ।

৬. কবিকে স্রোতের বিদ্রুপ শুনতে হয় কেন ?

উত্তরঃ অজান্তে তটের কিনারে নােঙর পড়ে যাওয়ার ফলে কবি স্রোতের বিপরীত দিকে এগােতে পারেননি। তাঁর এই ব্যর্থতার জন্য বিদ্রুপ শুনতে হয়।

৭. সারারাত বিরামহীন দাঁড় টানার কারণ কী ?

উত্তরঃ সারারাত বিরামহীন দাঁড় টানার কারণ হলাে, নােঙরের বাঁধন থেকে মুক্ত করে পণ্য তরিখানা যাতে সপ্তসিন্ধু পাড়ি দিতে পারে তার চেষ্টা করা।

৮. কবি কোন্ দিকে চেয়ে নিশানা করে থাকেন ?

উত্তরঃ কবি আকাশের তারার দিকে চেয়ে নিশানা করে থাকেন।

৯. কবি দাঁড়ের নিক্ষেপে কী শুনতে পান ?

উত্তরঃ কবি দাঁড়ের নিক্ষেপে স্রোতের বিদ্রুপ শুনতে পান।

১০. কবি অজিত দত্তের নােঙর কী ধরনের কবিতা ?

উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের ‘নােঙর’ একটি রূপকধর্মী রােমান্টিক গীতি কবিতা।

১১. নােঙর কী ?

উত্তরঃ ‘নোঙর’ কবিতায় নোঙর শব্দটির প্রকৃত অর্থ হল নৌকা ঘাটে বেঁধে রাখার লৌহদন্ড বা বঁড়সি জাতীয় যন্ত্র ।

১২. ‘নােঙর’ কবিতায় কবি প্রকৃতপক্ষে কী বলতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ ক্লান্ত হতাশাময় জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাইলেও মানুষ দৈনন্দিন জীবনের মায়াডােরে বাঁধা আছে।

১৩. স্রোত কবিকে বিদ্রুপ করে কেন ?

উত্তরঃ নােঙরে বাঁধা কবির জীবন-তরি, জলের স্রোত ঠেলে এগােতে পারে না বলেই এই বিদ্রুপ।

১৪. ‘সাগরগর্জনে ওঠে কেঁপে’—উদ্ধৃতিৱ ছাৱা কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ জীবনের তীরে বসে কবি শুনেছেন মহাসাগরের গর্জন; তাঁর জীবনের নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি কেঁপে উঠছে সেই সাগরগর্জনে।

১৫. নৌকা কী কারণে দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারছে না ?

উত্তরঃ তটের কিনারায় নৌকার নােঙর পড়ে যাওয়ায় নৌকা দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে পারছে না।

১৬. ‘নোঙর’ কবিতায় ‘নোঙর’ ও ‘নৌকা’ কীসের প্রতীক ?

উত্তরঃ কবিতাটিতে নৌকা গতিশীল জীবন এবং নোঙর বন্ধন বা আবদ্ধতার প্রতীক।

১৭. নৌকায় দাঁড় ও পালের কাজ কী ?

উত্তরঃ নৌকায় সঙ্গে যুক্ত দাঁড় জল কেটে পাল বাতাসের গতিকে কাজে লাগিয়ে আর নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে চলে।

১৮. ‘নোঙর’ কবিতায় কবিতার কথকের কোন মনোভাবটি ফুটে উঠেছে ?

উত্তরঃ ‘নোঙর’ কবিতায় গণ্ডিবদ্ধ জীবনের আবদ্ধতার বিপরীতে মুক্তির আকাঙ্ক্ষার আকুতি প্রকাশিত হয়েছে।

১৯. ‘নোঙর’ কবিতাটি কার লেখা ?

উত্তরঃ ‘নোঙর’ কবিতাটি কবি অজিত দত্তের লেখা।

২০. কবি কীভাবে সপ্তসিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান ?

উত্তরঃ কবি তরিভরা পণ্য নিয়ে সপ্তসিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চান।

২১. ‘নোঙর’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তরঃ বড়শি আকৃতির লোহার তৈরি যন্ত্র, যা নৌকাকে তটের কিনারে আটকে রাখে, তাকেই নোঙর বলে।

২২. ‘নোঙর’ কবিতায় কথক কোথায় পাড়ি দিতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ নোঙ্গর কবিতায় কথক সুদূর সিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চেয়েছেন।

২৩. কবি সিন্ধুতীরে পাড়ি দিতে পারছেন না কেন ?

উত্তরঃ কবির নোঙ্গর তটের কিনারে পড়ে যাওয়ায় কবি সিন্ধুতীরে পাড়ি দিতে পারছেন না।

২৪. কবি সিন্ধুতীরে সিন্ধুতীরে পাড়ি দিতে চান কেন ?

উত্তরঃ কবি তার জীবনের সংকীর্ণতাকে ভাঙার জন্য বাণিজ্যতরী নিয়ে সিন্ধুতীরে পাড়ি দিতে চান।

২৫. ‘সারারাত মিছে দাঁড় টানি।’— কবি সারারাত মিছে দাঁড় টেনেছেন কেন ?

উত্তরঃ তটের কিনারে নৌকার নোঙর পড়ে গিয়েছে, তাই কবি সারারাত মিছে দাঁড় টেনেছেন।

২৬. কবিতার কথক কীভাবে দিকের নিশানা ঠিক করার চেষ্টা করেন ?

উত্তরঃ কবিতার কথক আকাশের তারার পানে চেয়ে দিকের নিশানা ঠিক করার চেষ্টা করেন।

২৭. ‘নোঙর’ কবিতায় কীসের বিরাম নেই ?

উত্তরঃ নৌকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আশায় দাঁড় টানার বিরাম নেই।

‘নোঙর’ কবিতার ৩ নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর নবম শ্রেণির | WBBSE Class 9 Bengali Nongor Kobita Question Answer

১. “নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।”– এখানে কবির আক্ষেপ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে ?

অথবা,

“নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।”- উদ্ধৃত লাইনটির তাৎপর্য লেখো।

উত্তরঃ কবি সুদূরের পিয়াসি। তার মধ্যে একটি চঞ্চল মন আছে, যেটি অজানা অচেনার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে চায় দূর সমুদ্রপারে। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে তিনি নানা কর্মের বন্ধনে বাঁধা পড়ে আছেন। সংসারের বিভিন্ন দায়িত্ব-কর্তব্যে তার দৈনন্দিন জীবন বাঁধা। কবির রোমান্টিক মন সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্তি চায়, ছুটে যেতে চায় স্বপ্ন-কল্পনার মায়াবী জগতে। কিন্তু মন চাইলেও বাস্তবকে উপেক্ষা করে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।

২.“সারারাত মিছে দাঁড় টানি, / মিছে দাঁড় টানি।”– দাঁড় টানাকে কবি মিছে বলেছেন কেন ?

উত্তরঃ যে স্বপ্নময় রূপকথার দেশের কল্পনা কবির মনকে প্রতি মুহূর্তে চঞ্চল করে তোলে, বাস্তবে কবির পক্ষে সেখানে পৌঁছোনো সম্ভব হয় না। তবু কবির সুদূর পিয়াসি মন আশায় বুক বেঁধে সারারাত ধরে কল্পনার জাল বুনে চলে। কিন্তু কবির সচেতন সত্তা জানে, ‘নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে’। অর্থাৎ জীবনের নৌকা দায়দায়িত্বপূর্ণ কর্মমুখর সংসারে বাঁধা পড়েছে। সে নৌকা আর চলবে না, তাই দাড় টানা বৃথা।

৩. “আমার বাণিজ্য-তরী বাঁধা পড়ে আছে।”- কথাটির তাৎপর্য লেখো।

উত্তরঃ কবি তার রচিত সাহিত্যকীর্তিগুলি
নিয়ে ভেসে যেতে চান দূরে-দূরান্তরে। সাতসমুদ্রের পাড়ের সেই সুদূর জগতে কবি মেতে উঠবেন সৃষ্টিশীল কাব্যরচনায়। সংসারের বাঁধন ছিন্ন করে কবি চলে যাবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। এই আশায় কবি প্রতিদিন বুক বাঁধেন, যেন তিনি নৌকার দাঁড় টেনে গন্তব্যে চলেছেন। কিন্তু, পরমুহূর্তেই তার মনে পড়ে যায়, বাস্তব জীবন ও সংসারের দায়িত্ব কর্তব্য ত্যাগ করে তিনি কোনোদিনই গন্তব্যে যেতে পারবেন না। তাই গভীর হতাশার সাথে কবি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

৪. নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ-নৌকা চিরকাল।’- নৌকা কেন চিরকাল নোঙরের কাছিতে বাঁধা ?

উত্তরঃ মানুষ মূলত সামাজিক ও সাংসারিক জীব। সমাজ-সংসারের কর্তব্য ও দায়িত্বের বাঁধনে সে সবসময় জড়িয়ে থাকে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন কর্মময়। কঠোর বাস্তবের সংঘাতে জীবনের অনেক স্বপ্ন কল্পনাই অপূর্ণ থেকে যায়। কবির জীবনও বাস্তব জগৎ ও সংসারের বাঁধনে বাঁধা পড়ে আছে। কিন্তু সৃষ্টিশীল মানুষের থাকে কল্পনাপ্রবণ মন, যে মন বারবার বাস্তবের বন্ধন ছিন্ন করে দূর অজানায় পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু জীবন তরি বাস্তবের দায়িত্ব কর্তব্যের নোঙরে চিরকাল বাঁধাই পড়ে থাকে।

৫. ‘স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।’- ‘স্রোতের বিদ্রুপ’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ কবি নৌকা নিয়ে দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে চান। কিন্তু তার সেই নৌকো তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়ে গেছে। কবির মন বাধা অগ্রাহ্য করে দাঁড় টেনে চলে। প্রতিবার দাঁড় টানলে যে শব্দ ওঠে তা যেন স্রোতের ঠাট্টা-বিদ্রুপ-উপহাস। স্রোত গতিশীল, কিন্তু কবির জীবনতরি আটকা পড়ে আছে। কবি চাইলেও সাংসারিক বন্ধন ছিন্ন করে সুদূরের আহ্বানে নৌকা ভাসাতে পারছেন না। তাই স্রোত কবির এই থমকে থাকাকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপে বিদ্ধ করে চলে।

৬. “নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল।”– নৌকা কেন চিরকাল নোঙরের কাছিতে বাঁধা ?

উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের রচিত’শাদা পাহাড় কালো মেঘ,কাব্যগ্রন্থ থেকে’ ‘নোঙর’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।

আলোচ্য অংশে,মানুষ সামাজিক ও সাংসারিক জীব। সমাজ-সংসারের কর্তব্য ও দায়িত্বের বাঁধনে সে সবসময় জড়িয়ে থাকে।কঠোর বাস্তবের সংঘাতে জীবনের অনেক স্বপ্ন-কল্পনাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কবির জীবন ও বাস্তব জগৎ সংসারের বাঁধনে বাঁধা পড়ে আছে। কিন্তু সৃষ্টিশীল মানুষের থাকে কল্পনাপ্রবণ মন,যে মন বারবার বাস্তবের বন্ধন ছিন্ন করে দূর অজানায় পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু জীবনতরি বাস্তবে দায়িত্ব-কর্তব্যের নোঙরে চিরকাল বাঁধাই পড়ে থাকে।

৭. ‘তরী ভরা পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে সপ্তসিন্ধুপারে,– কোন পণ্যে কবির নৌকা ভরা ?

উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের রচিত নোঙর কবিতায় নৌকা ভরা পণ্য নিয়ে কবি সাতসমুদ্রের তীরে পাড়ি দিতে চান। কর্ম জগতের বাইরে কবি জীবন নৌকা ভাষাতে চান তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি নিয়ে। কবি সাধারণ বাণিজ্যিক নন তার নৌকায় আছে অমূল্য সাহিত্য সম্ভার। কবি এই সাহিত্য-সম্ভার নিয়ে সাত সমুদ্রে পাড়ি দিতে চান। এখানে মানুষকে তরী এবং মানুষের কর্মসাধনাকে পণ্য বলে কবি চিহ্নিত করেছেন।

৮. ‘আমার বাণিজ্য-তরী বা‍ঁধা পড়ে আছে।’– বাণিজ্য তরী কেন বাঁধা পড়ে আছে বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের রচিত নোঙর কবিতার, ব্যবসার সঙ্গে লাভ লোকসানের বিষয়টি জড়িয়ে থাকে ঠিক তেমনি জীবিকার জালে আটকে পড়েছে আমাদের জীবন। বিভিন্ন যুগে বাণিজ্যিকরা ব্যবসা নিয়ে পাড়ি দিতেন দূর দেশে। পণ্যের আমদানি রপ্তানির সঙ্গে আদান-প্রদান চলতো। কবি সাধারণ বাণিজ্যিক নন, তাঁর তরিতে রয়েছে সাহিত্যসম্ভার। সেই স্বপ্ন কল্পনা সাহিত্য ভরাৎ তরী নিয়ে কবি পাড়ি দিতে চান সাত সমুদ্রের পারে, দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে দিতে চান তাঁর সৃষ্টিকে।

৯. ‘নোঙর’ কীসের প্রতীক তা বুঝিয়ে দাও ।

উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের লেখা নোঙর কবিতাটি একটি প্রতীক ধর্মী কবিতা। কবিতার মূল বিষয়বস্তু হল– নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে কবির সমুদ্রযাত্রা। বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্য কবির নৌকা অগ্রসর হয় না। তটের কাছে নোঙরের কাছিতে বাঁধা পড়ে আছে। তবু কবি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। এভাবেই চিরকাল তিনি দাঁড় টেনে সমুদ্রযাত্রায় যান।
‘নোঙর’ কবিতায় নোঙর শব্দটির প্রকৃত অর্থ হল নৌকা ঘাটে বেঁধে রাখার লৌহদন্ড বা বঁড়সি জাতীয় যন্ত্র । কিন্তু এখানে কবি নোঙর বলতে পিছুটান, জীবনযাত্রার নানা প্রতিবন্ধকতা বা প্রতিকূল অবস্থাকে বুঝিয়েছেন ।

বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর | নোঙর (কবিতা) অজিত দত্ত – নবম শ্রেণির বাংলা | Class 9 Bengali Nongor Question and Answer :

১. ‘নােঙর’ একটি প্রতীকী কবিতা আলােচনা করাে।

উত্তরঃ প্রতীককে ইংরেজিতে বলে Symbol. যখন মনের ভাবকে প্রকাশ করে, তখন তাকে বলে প্রতীক।

কবি অজিত দত্তের ‘নােঙর’ কবিতায় নানা প্রতীকে হৃদয়ের অনুভূতির ব্যঞ্জনা ধরা পড়েছে। ‘নােঙর’-কে তিনি বন্ধনের প্রতীকরূপে আর পরিচিত বাস্তবজগৎকে নদীর তটের প্রতীকরূপে ব্যবহার করেছেন। বাস্তব প্রয়ােজনের জগতের বাইরের জগৎকে তিনি ‘দূর সিন্ধুপার’ বা ‘সপ্তসিন্ধুপার’ বলে অভিহিত করেছেন। সেই বহুদূর অজানা জগতে পাড়ি দিতে চেয়েও কবির জীবন-নৌকা নােঙরে বাঁধা পড়েছে। জোয়ারের ঢেউগুলি কবির জীবনের স্বপ্ন-আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক নৌকায় মাথা ঠুকে অর্থাৎ কবির মনের দরজায় মাথা ঠুকে ব্যর্থ হয়ে তারা সমুদ্রের দিকে ছুটে যায়। সেই দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন কবিও। কাছি যেন বাস্তব জীবনের নানা সম্পর্কের সূত্র। জোয়ারভাটা হল জীবনের উত্থানপতন, আশা-নিরাশার প্রতীক। নােঙর যেমন স্থিতি বা বন্ধন, তেমনি স্রোত হল গতির প্রতীক। ‘বাণিজ্য’, ‘পণ্য’ এগুলি হল লাভ-ক্ষতিময় জীবন-জীবিকা ও সৃষ্টিসম্পদের প্রতীক। এভাবেই প্রতীকের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে কবিতার ব্যঞ্জনা। তাই সবদিক বিচার করে নােঙর’কে একটি আদর্শ প্রতীকী কবিতা বলা যায়।

২. ‘নোঙর’ কবিতাটির নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো।

উত্তরঃ ‘নোঙর’ শব্দটিএসেছে ফারসি ‘লঙ্গর’ শব্দ থেকে। নৌকাকে জলের মধ্যে বেঁধে রাখার ভারী বস্তুবিশেষকে নোঙর বলা হয়। শিকল বা কাছির সঙ্গে লোহার এই নোঙর বেঁধে জলের নীচে ফেলে কাছির অন্য প্রান্ত দিয়ে নৌকা বেঁধে রাখা হয়।

কবি অজিত দত্তের আলোচ্য কবিতা ‘নোঙর’-এর মাধ্যমে মানবজীবনের বন্ধনের কথা বলা হয়েছে। মানুষের জীবনও নৌকার মতো – সম্পর্কের, কর্মের, দায়িত্ব-কর্তব্য বোধের নোঙরে তা বাঁধা পড়ে থাকে। যারা ভাবুক, সৃষ্টিশীল ও রোমান্টিক মনের মানুষ, তাঁরা জীবনের সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে বাস্তব থেকে দূরে চলে যেতে চান মাঝে মাঝে। তাঁদের মনের স্বপ্ন-কল্পনার জগৎ ও কঠিন বাস্তব জগতের মধ্যে সংঘাত দেখা দেয়। কবির সৃষ্টিশীল মনেও এমনই সংঘাত চলে। সুদূরের আহ্বানকে তিনি উপেক্ষা করতে পারেন না, আবার দৈনন্দিন জীবনের সীমাবদ্ধতা থেকে বেরোতেও পারেন না। তাঁর জীবন যেন নোঙরে বাঁধা পড়া এক নৌকা। তাই এ কবিতায় নোঙর হল বন্ধনেরই প্রতিশব্দ। সেদিক থেকে বিচার করলে আলোচ্য কবিতাটির ‘নোঙর’ নামটি সার্থক ও যথাযথ।

৩. ‘নোঙর’ কবিতায় স্থিতি ও গতির চিত্র কীভাবে ধরা পড়েছে বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ কবি অজিত দত্ত রচিত ‘নোঙর’ কবিতায় স্থিতি ও গতির চিত্র সুচারুভাবে আঁকা হয়েছে। সমগ্র কবিতায় ছড়িয়ে আছে স্থিতি ও গতির নানা অনুষঙ্গ। স্থিতি ও গতির দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত মানব হৃদয়ের চিত্র তুলে ধরা আলোচ্য কবিতার অন্যতম ভাববস্তু। বাস্তব জগতের পরিচিত জগতের সীমানায় কবির মন আবদ্ধ থাকতে চায় না। তরি নিয়ে তিনি সাতসমুদ্রপারে যাত্রা করতে চান। কিন্তু অজান্তেই কখন যেন সেই তরি স্থিতিশীলতা নোঙরের কাছিতে বাঁধা পড়ে গেছে—‘নোঙর’ গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। নোঙর আর তটের উল্লেখের মাধ্যমে কবি বাস্তবজগতের স্থিতিশীলতার চিত্র তুলে ধরেছেন। নদীর তীরে বাঁধা নৌকাও স্থিতিকেই চিহ্নিত করে। অন্যদিকে জোয়ারের ঢেউগুলি গতির বার্তা নিয়ে আসে। কবির নিশ্চল জীবনে অভিঘাত হেনে তাকে সচল করতে চায়, তরি তবু চলে না। বাঁধা তরিতে মাথা ঠুকে অভিমানী ঢেউগুলি ফিরে যায় গতির জগতে। জোয়ার-ভাটা আসে যায়। নদী আর সমুদ্রের স্রোত চিরকাল গতিশীল, তেমনি কবির রোমান্টিক মনও গতিশীল। কিন্তু বাস্তবতার পটভূমিতে কবি অসংখ্য বন্ধনে বন্দি তাঁর জীবনতরি গতিহারা। রাতের নিস্তব্ধ নিঃসঙ্গ মুহূর্তগুলি কবির জীবনে গতির আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে। সারারাত তিনি অবিরাম দাঁড় নিক্ষেপ করে চলেন। কিন্তু তাঁর ব্যর্থ প্রচেষ্টাকে বিদ্রুপ করে স্রোত—

“নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি সাগরগর্জনে ওঠে কেঁপে, স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।”

দাঁড় টেনে টেনে, পাল তুলে, তারার দিকে চেয়ে নিশানা স্থির, বিরামহীন দাঁড় টেনেও কবি দূর সমুদ্রপারে পাড়ি দিতে ব্যর্থ হন। এই ব্যর্থতার বেদনায় বিষণ্ণ কবি গতিশীল জীবনধর্মে দীক্ষিত বলেই জীবনের কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছনোর আশায় তবু দাঁড় টেনে যান। এভাবেই ‘নোঙর’ কবিতার চিরকালীন গতিময়তার কথা ব্যঞ্জিত হয়েছে।

৪. ‘নোঙর’ কবিতা অবলম্বনে কবির সমুদ্রযাত্রার উদ্যোগ এবং ব্যর্থতার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ ‘নোঙর’ কবিতায় রোমান্টিক কবি অজিত দত্তের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছোনোর প্রবল ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে। পারিপার্শ্বিক বন্ধনের সীমানা পেরিয়ে তিনি চলে যেতে চান সপ্তসিন্ধুপারে। জলপথে কবির যাত্রা, তাই নৌকা প্রস্তুত রেখেছেন। সেই নৌকায় সারাজীবনের সঞ্চয় বোঝাই করেছেন, মাস্তুলে পাল বেঁধেছেন, হাতের মুঠোয় ধরেছেন দাঁড়—

“পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে।”

কিন্তু নিজের অজান্তে কখন তটের কিনারে নোঙর পড়ে গেছে। কবির সূদূরপিয়াসী মন বাঁধা পড়ে গেছে অদৃশ্য জাগতিক বন্ধনে। গতিশীল জীবনধর্মে দীক্ষিত আশাবাদী কবি থেমে থাকতে চান না, প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে তিনি অবিরত জীবনতরীর দাঁড় টানেন। যাত্রার মুহূর্তে দাঁড় বাইতে গিয়ে কবি অনুভব করেন নিজেরই অজান্তে কখন নোঙর পড়ে গেছে তটের কিনারে। কিন্তু তাঁর মন এই বন্ধনকে মেনে নিতে চায় না। তাই কবি সারারাত মিছে মিছি দাঁড় টানেন। জোয়ারভাটায় বাঁধা জীবনের এ তটে কবি নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকেন। তাঁর চোখের সামনে ঢেউগুলি দুরন্ত গতির বার্তা নিয়ে আসে আর সাড়া না পেয়ে ফিরে যায়। চঞ্চল স্রোত কবির স্থবিরতাকে বিদ্রুপ করে। নিস্তব্ধ রাতে কবি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। বারবার ব্যর্থ হয়েও তিনি গন্তব্যে পৌঁছোনোর আশা ও চেষ্টা ত্যাগ করেন না। কিন্তু তিনি জানেন এই দাঁড় টানা মিছে বা বৃথা। অসহায়, নিরুপায় কবির মন ব্যর্থতার বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।

৫.“নােঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে” — ‘নােঙর’ এখানে কীসের প্রতীক ? কবি নৌকা নিয়ে কোথায় যেতে চান ? কবির আকাঙ্ক্ষা ও আক্ষেপ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে ?

উত্তরঃ কবি অজিত দত্ত রচিত ‘নােঙর’ কবিতায় নােঙর হল জীবনের বিভিন্ন বন্ধন বা স্থিতিশীলতার প্রতীক। কবি নৌকা নিয়ে যেতে চান সুদূর সাতসাগরের পাড়ে৷ বাস্তব জীবনের বাধাবন্ধন থেকে অনেক দূরে কল্পনালােকে পাড়ি দিতে চান কবি। মধ্যযুগের সওদাগরদের মতাে কবি ভাসিয়ে দিতে চান তার সৃষ্টিসম্পদে ভরা নৌকা। রােজকার একঘেয়ে জীবনযাপন থেকে ছুটি নিয়ে তার কল্পনাপ্রবণ মন দূর অচেনা অজানা দেশে পাড়ি দিতে চায়। কবির আকাঙ্ক্ষা সাতসমুদ্রপাড়ে পাড়ি দেওয়ার। কবির ভাবুক মন সংসারের দায়িত্ব কর্তব্যের বাঁধন মানতে চায় না। কর্মময়, সাংসারিক জীবনের বাঁধন তাকে কঠিনভাবে বেঁধে রাখে। স্রোতের গতি কবির এই দায়িত্বের বন্ধনকে বিদ্রুপ করে, কিন্তু কবি নিরুপায়, অসহায়। এই দাঁড় টানা বৃথা জেনেও তিনি অবিরাম দাড় টেনে চলেন। তাই কবির তীব্র আক্ষেপ—

“তরী ভরা পণ্য নিয়ে পাড়ি দিতে সপ্তসিন্ধুপারে,
নােঙর কখন জানি পড়ে গেছে তটের কিনারে।
সারারাত তবু দাঁড় টানি, তবু দাড় টানি।।”

এভাবেই ‘নােঙর’ কবিতাটি কবির আকাঙ্ক্ষার অপূর্ণতা ও আক্ষেপের বেদনায় ধূসর হয়ে উঠেছে।

৬. “সারারাত তবু দাড় টানি”—কবি সারারাত দাড় টানেন কেন ? ‘তবু’ কথাটি বলার কারণ কী ? এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির কোন্ মানসিক অবস্থার পরিচয় ফুটে ওঠে ?

উত্তরঃ কবি অজিত দত্ত ‘নােঙর’ কবিতায় বলেছেন যে নৌকাভরা পণ্য নিয়ে তিনি সাতসাগরের পাড়ে পাড়ি দিতে চান। তাই তিনি সারারাত দাঁড় টানেন।

‘তবু’ শব্দের অর্থ ‘তা সত্ত্বেও’ পণ্যভরা নৌকা নিয়ে সাতসাগরপারে যাওয়ার বাসনা ছিল কবির। কিন্তু কখন তটের কিনারে নােঙর পড়ে গেছে তিনি বুঝতেও পারেননি। নৌকা যে আর তট ছেড়ে যাবেনা কখনও, তা তিনি জানেন। তবু মন যেন এই সত্য মানতে চায় না। কঠিন সত্যটি জানা সত্ত্বেও কবি সারারাত দাঁড় টেনে চলেন। এই কারণেই ‘তবু কথাটি বলা হয়েছে।

এই দাঁড় টানার মধ্য দিয়ে কবির অদম্য মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি জানেন, সমাজ-সংসারের নানা বন্ধন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। তবু তার কল্পনাবিলাসী মন বাঁধনহারা জীবনের স্বাদ পেতে চায়। কর্মময়, সাংসারিক জীবনের বাঁধন তাকে কঠিনভাবে বেঁধে রাখে। কিন্তু তার অবচেতন মন আশা-স্বপ্নের জাল বুনে চলে। তাই তিনি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। কবি জানেন, তার বাসনা হয়তো কোনােদিনই পূরণ হবে না, তবু স্বপ্নময় জীবনের অনুসন্ধানে তার ক্লান্তি নেই। দূর সাগরে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্নই তাকে বাঁচিয়ে রাখে।

৭. ‘স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে।’– স্রোতের বিদ্রূপ কবিকে কেন ব্যথিত করেছে নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের রচিত নোঙর কবিতায়, কবি তাঁর নৌকা নিয়ে সাতসমুদ্রের পারে পাড়ি দিতে চান। তাঁর বহুদিনের স্বপ্ন তার মন অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে চায়। কিন্তু তার অজান্তেই কখন-‘নোঙর গিয়েছে পড়ে তটৈর কিনারে, বাস্তব জগতে সমাজ- সংসার ছেড়ে জীবনকে এগিয়ে চলা খুব কঠিন। তাইতো দেখা যায়,নৌকা নোঙরের কাছিতে বাঁধা চিরকাল। জগত সংসারে কবি আবদ্ধ কর্ম জগতে ব্যস্ত তারপরেও কবির মন অসীম কল্পনার জগতে পাড়ি দিতে চায়। তাই তিনি সারারাত অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। কবি জানতেন তার এই প্রচেষ্টা বৃথা। তবু তার মন মানে না। তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত গুলি মনে পড়লে সমুদ্রের গর্জনের মতো কেঁপে ওঠে। কবির মন এতটাই চঞ্চল হয়ে উঠেছিল যে তিনি বারবার বা ঘন ঘন দাঁড় নিক্ষেপ করেন। কবি আটকা পড়ে আছেন সংসারের তটভূমিতে। তার মন চাইলেও সে কখনো এই সংসার থেকে মুক্ত হতে পারবেন না। তাই অবিরাম জল স্রোত যেন কবিকে প্রতিনিয়ত বিদ্রুপ করে চলেছে।

৮.“এ-তরীতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে।”– কারা ছোটে ? তারা কেন সমুদ্রের দিকে ছোটে ? তরিতে তাদের মাথা ঠোকার কারণ কী ?

উত্তরঃ কবি অজিত দত্তের নোঙর কবিতার অন্তর্গত উদ্ধৃত পঙ্ক্তিতে জোয়ারের উন্মত্ত ঢেউগুলির ছুটে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নদীতে জোয়ারের ঢেউগুলি তটের দিকে ধেয়ে আসে, তারপর আবার তটে-বাঁধা নৌকায় ধাক্কা খেয়ে সমুদ্রের দিকে ছুটে যায়। নৌকায় বাধা পেয়ে ঢেউগুলি সমুদ্রের দিকে ছোটে।

কবি তাঁর নৌকাখানি নিয়ে পাড়ি দিতে চান সুদূর সাতসাগরের পাড়ে- এক বাঁধনহারা জীবনের আহ্বানে। কিন্তু কবির জীবন যাকে কবিতায় নৌকার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, তা আসলে সমাজ ও সংসারর একাধিক দায়দায়িত্বের বাঁধনে বাঁধা পড়ে আছে। জীবনের উত্থানপতনের মতো নদীতে জোয়ারভাটার খেলা চলে। জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে ওঠে আর তীরের দিকে ধেয়ে আসে ৷ তারপর নৌকার গায়ে ধাক্কা খেয়ে তারা আবার ফিরে যায় সমুদ্রের দিকে। যে সমুদ্রের দিকে এই নৌকায় কবি যাত্রা করতে চান ঢেউগুলি সেদিকেই ব্যর্থ হয়ে ছুটে চলে যায়। কবির জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নের প্রতীকরূপী এই ঢেউগুলি তাঁর মনের দুয়ারে মাথা ঠুকে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। কবিকে তারা গতির জগতে নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়। সংসারের বন্ধনে কবি আবদ্ধ। কবির জীবন-নৌকাকে বাঁধন থেকে মুক্ত করতে চেয়েও তারা ব্যর্থ হয়ে সমুদ্রের দিকে ছুটে চলে।

👉নোঙর কবিতার আলোচনা নবম শ্রেণি বাংলা | Nongor Kobita Alochona Class 9 Bengali 

 

Leave a Reply