MADHYAMIK GEOGRAPHY QUESTION PAPER 2017
MADHYAMIK GEOGRAPHY QUESTION PAPER 2017
WBBSE Madhyamik Geography Question Paper 2017 Solution | মাধ্যমিক ভূগোল প্রশ্নপত্র 2017
Geography Question Paper 2017 with answers for Madhyamik students of West Bengal Board of Secondary Education. Question and Answers of the question paper are given below.
মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীন মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২০১৭ সালের উত্তরসহ ভূগোল বিষয়ের প্রশ্নপত্র।
📌 মাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper CLICK HERE
2017
Geography
Time — Three Hours Fifteen Minutes
(First FIFTEEN minutes for reading the question paper only)
Full Marks — 90
(For Regular and Sightless Regular Candidates)
Full Marks — 100
(For External and Sightless External candidates)
Special credit will be given for answers which are brief and to the point.
Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.
[‘ক’ বিভাগ থেকে ‘চ’ বিভাগ পর্যন্ত প্রদত্ত প্রশ্ন নিয়মিত ও বহিরাগত সব পরীক্ষার্থীদের জন্য এবং ‘ছ’ বিভাগে প্রদত্ত প্রশ্ন শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য ]
[‘ক’ বিভাগে সকল প্রশ্ন আবশ্যিক, অন্য বিভাগে বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষ্যণীয়। ‘চ’ বিভাগে কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা বিকল্প প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তর লিখবে। অন্য সকলে মানচিত্র চিহ্নিত করবে।]
Madhyamik Geography Question Paper With Answer 2017 WBBSE
বিভাগ—’ক’
১. বিকল্পগুলির থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখো : ১x১৪=১৪
১.১ যে-প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ভূপৃষ্ঠের ওপর কাজ করে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়, তাকে বলে—
(ক) বহির্জাত প্রক্রিয়া
(খ) অন্তর্জাত প্রক্রিয়া
(গ) গিরিজনি আলোড়ন
(ঘ) মহিভাবক আলোড়ন
উত্তরঃ (ক) বহির্জাত প্রক্রিয়া
১.২ লবণযুক্ত শিলাস্তরের ওপর নদীর প্রধান ক্ষয় প্রক্রিয়াটি হল—
(ক) অবঘর্ষ ক্ষয় (খ) ঘর্ষণ ক্ষয় (গ) জলপ্রবাহ ক্ষয় (ঘ) দ্রবণ ক্ষয়
উত্তরঃ (ঘ) দ্রবণ ক্ষয়
১.৩ হেটেরোস্ফিয়ারের উচ্চতম স্তরটি হল—
(ক) হাইড্রোজেন স্তর
(খ) হিলিয়াম স্তর
(গ) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর
(ঘ) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর
উত্তরঃ (ক) হাইড্রোজেন স্তর
১.৪ যে-যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আদ্রতা পরিমাপ করা হ—
(ক) থার্মোমিটার (খ) ব্যারোমিটার (গ) হাইগ্রোমিটার (ঘ) অ্যানিমোমিটার
উত্তরঃ (গ) হাইগ্রোমিটার
১.৫ এল নিনোর প্রভাব দেখা যায়—
(ক) আটলান্টিক মহাসাগরে
(খ) প্রশান্ত মহাসাগরে
(গ) ভারত মহাসাগরে
(ঘ) সুমেরু মহাসাগরে
উত্তরঃ (খ) প্রশান্ত মহাসাগরে
👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
১.৬ পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম তখন যে-জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে বলে—
(ক) ভরা কোটাল
(খ) মরা কোটাল
(গ) পেরিজি জোয়ার
(ঘ) অ্যাপোজি জোয়ার
উত্তরঃ (গ) পেরিজি জোয়ার
১.৭ বর্জ্যব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি হল—
(ক) বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার
(খ) বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ
(গ) বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস
(ঘ) সবগুলিই প্রযোজ্য
উত্তরঃ (ঘ) সবগুলিই প্রযোজ্য
১.৮ ভারতের নবীনতম রাজ্যটি হল—
(ক) উত্তরাখণ্ড (খ) তেলেঙ্গানা
(গ) ছত্তিশগড় (ঘ) গোয়া
উত্তরঃ (খ) তেলেঙ্গানা
১.৯ উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রীষ্মকালে যে ধূলিঝড় দেখা যায় তা হল—
(ক) কালবৈশাখী (খ) আঁধি
(গ) পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ঘ) লু
উত্তরঃ (খ) আঁধি
১.১০ ভারতে মৃত্তিকা সংরক্ষণে গৃহীত একটি পদ্ধতি হ—
(ক) জলসেচ (খ) জুমচাষ (গ) ফালিচাষ (ঘ) পশুচারণ
উত্তরঃ (গ) ফালিচাষ
১.১১ ভারতে জোয়ার উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল—
(ক) মহারাষ্ট্র (খ) উত্তরপ্রদেশ (গ) বিহার (ঘ) পশ্চিমবঙ্গ
উত্তরঃ (ক) মহারাষ্ট্র
১.১২ ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ বলা হয়—
(ক) চেন্নাইকে (খ) বেঙ্গালুরুকে
(গ) কলকাতাকে (ঘ) দিল্লিকে
উত্তরঃ (খ) বেঙ্গালুরুকে
১.১৩ ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়কটি হল—
(ক) 1 নং জাতীয় সড়ক
(খ) 2 নং জাতীয় সড়ক
(গ) 6 নং জাতীয় সড়ক
(ঘ) 7 নং জাতীয় সড়ক
উত্তরঃ (ঘ) 7 নং জাতীয় সড়ক
১.১৪ 15′ x 15′ অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাগত বিস্তারের ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্রের সংখ্যাসূচক স্কেল (RF) হল—
(ক) 1 : 2,50,000 (খ) 1 : 1,00,000 (গ) 1 : 50,000 (ঘ) 1 : 25,000
উত্তরঃ (গ) 1 : 50,000
উত্তরসহ মাধ্যমিক ভূগোল ২০১৭ প্রশ্নপত্র
বিভাগ—’খ’
২.১ নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শু’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখো (যে-কোনো ছ-টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১x৬=৬
২.১.১ বার্খান বালিয়াড়ি থেকে সিফ বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়।
উত্তরঃ ‘শু’
২.১.২ ওজোনস্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বলা হয়।
উত্তরঃ ‘শু’
২.১.৩ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সাধারণত গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয়।
উত্তরঃ ‘অ’
২.১.৪ সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবীর সরলরৈখিক অবস্থানকে সিজিগি বলে।
উত্তরঃ ‘শু’
২.১.৫ ভারতে অধিকাংশ ধান শীতকালে রবিশস্য হিসেবে চাষ করা হয়।
উত্তরঃ ‘অ’
২.১.৬ ভারতের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ।
উত্তরঃ ‘অ’
২.১.৭ উপগ্রহ চিত্রে বিভিন্ন প্রতীকের সাহায্যে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলি বোঝানো হয়।
উত্তরঃ ‘অ’
২.২ উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো (যে-কোনো ছ-টির উত্তর দাও) : ১x৬=৬
২.২.১ বিভিন্ন ধরনের বহির্জাত শক্তির দ্বারা ভূমিভাগের সমতলীকরণ ঘটলে তাকে _______ বলে।
উত্তরঃ পর্যায়ন।
২.২.২ হিমবাহ ও জলধারা বাহিত নুড়ি, বালি, কাঁকর ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে দীর্ঘ সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা শৈলশিরার মতো ভূমিরূপকে _______ বলে।
উত্তরঃ এসকার।
২.২.৩ কোনো স্থানের উষ্ণতা-বৃষ্টিপাত লেখচিত্রে উষ্ণতার রেখাটি বৎসরের মধ্যভাগে নিম্নমুখী হলে স্থানটি _______ গোলার্ধে অবস্থিত।
উত্তরঃ দক্ষিণ।
২.২.৪ পৃথিবীর _______ বলের প্রভাবে গৌণ জোয়ার সৃষ্টি হয়।
উত্তরঃ কেন্দ্র বহির্মুখী (centrifugal)।
২.২.৫ শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (এয়ার কন্ডিশনার) ব্যবহারের ফলে বায়ুমন্ডলে ________ গ্যাস নির্গত হয়।
উত্তরঃ ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC)।
২.২.৬ দেবপ্রয়াগে ভাগীরথী ও _______ নদীর মিলনে গঙ্গানদীর সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তরঃ অলকানন্দা।
২.২.৭ ________ শহরকে দক্ষিণ ভারতের ম্যানচেস্টার বলা হয়।
উত্তরঃ কোয়াম্বাটোর।
২.৩ একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও (যে-কোনো ছ-টি) : ১x৬=৬
২.৩.১ যে-উচ্চভূমি দুটি নদী ব্যবস্থাকে পৃথক করে তার নাম লেখো।
উত্তরঃ জলবিভাজিকা।
২.৩.২ সম্পৃক্ত বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রতা কত ?
উত্তরঃ 100%
২.৩.৩ ক্রান্তীয় সমুদ্রে কোন ধরনের সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয় ?
উত্তরঃ উষ্ণ সমুদ্রস্রোত।
২.৩.৪ প্লাস্টিক কোন ধরনের বর্জ্য ?
উত্তরঃ জৈব-অভঙ্গুর বর্জ্য।
২.৩.৫ ভারতের সর্বোচ্চ গিরিপথ কোনটি ?
উত্তরঃ খারদুংলা অথবা মানাপাস।
২.৩.৬ পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য কোথায় অবস্থিত ?
উত্তরঃ গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা ব-দ্বীপে অবস্থিত।
২.৩.৭ ভারতের কোন মৃত্তিকা কার্পাস চাষের পক্ষে আদর্শ ?
উত্তরঃ কৃষ্ণ মৃত্তিকা।
২.৩.৮ কোন সড়কপথের মাধ্যমে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই ও কলকাতা যুক্ত হয়েছে ?
উত্তরঃ সোনালী চতুর্ভূজ এর মাধ্যমে।
২.৪ বামদিকের সঙ্গে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখো : ১x৪=৪
বাম দিক | ডান দিক |
২.৪.১ ইসরো | (১) কেরল |
২.৪.২ ভেম্বানাদ | (২) ভারতের শুল্কমুক্ত বন্দর |
২.৪.৩ আঁধি | (৩)ভারতের রকেট উৎক্ষেপণ সংস্থা |
২.৪.৪ কান্ডালা | (৪) রাজস্থান |
উত্তরঃ
২.৪.১ — ৩
২.৪.২ — ১
২.৪.৩ — ৪
২.৪.৪ — ২
বিভাগ—গ
৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষ্যণীয়) : ২x৬=১২
৩.১ পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ কীভাবে গঠিত হয় ?
উত্তরঃ নদীর মোহনায়, সমুদ্রস্রোতের প্রভাব কম থাকলে নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়। এর ফলে, নদী বক্ষে সজ্জিত পদার্থ প্রধান নদীকে ছোটো ছোটো শাখানদীতে বিভক্ত করে এবং শাখানদীগুলির দুই তীর বরাবর পলি সঞ্চিত হয়। বিভক্ত অংশগুলি পাখির পায়ের আঙুলের মতো দীর্ঘ ও সংকীর্ণ আকারে সমুদ্রের দিকে অগ্রসর হয়। এইভাবে পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ গঠিত হয়। উদাহরণ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি-মিসৌরি নদী-দ্বীপ।
অথবা,
বার্গস্রুন্ড কী ?
উত্তরঃ হিমবাহ পার্বত্য উপত্যকা বেয়ে নামার সময়, অনেকসময় পর্বতের থেকে ফাঁক এর দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হিমবাহ থেকে পর্বতের পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত সুবিশাল (সুগভীর) ফাটলকে বার্গস্রুন্ড বলে।
তবে অনেকে মনে করেন আগের হিমবাহ ও নতুন হিমবাহের মধ্যে যে ফাঁক সৃষ্টি হয় তাকে বার্গস্রুন্ড বলে। এটি পর্বতারোহীদের পক্ষে বিপজ্জনক।
৩.২ জেট বায়ুর দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ জেট বায়ু হল ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বত্তর দিয়ে উচ্চবেগে প্রবাহিত পশ্চিমা বায়ু। এর ২টি বৈশিষ্ট্য হল—
(i) এই বায়ু ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বস্তর (7-14.5 km) দিয়ে প্রবাহিত হয়। (ii) এটি একপ্রকার জিওস্ট্রফিক বায়ু। (iii) এটি উচ্চবেগে প্রবাহিত হয়।
অথবা,
বান ডাকা কী ?
উত্তরঃ জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল প্রবল বেগে নদীর মোহনা থেকে নদীপ্রবাহের বিপরীত মুখে নদীখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল স্ফীত হলে (৫-৮ মিটার উঁচু) নদী মোহনার মধ্য দিয়ে সশব্দে দ্রুতগতিতে নদী অভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রবল জলচ্ছ্বাস ঘটায়। একে বানডাকা বলে। নদী মোহনা ফানেলাকৃতি হলে, নদীর মোহনায় বালির চড়া থাকলে এবং নদীতে প্রবল জলস্রোত থাকলে বান খুব প্রবল হয়। উদাহরণ- হুগলি ও সুন্দরবনের নদনদী, টেমস নদী।
৩.৩ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ বলতে বোঝায় উৎপন্ন কঠিন বর্জ্যকে দিয়ে কোনো অবনমিত স্থান ভরাট করাকে। অর্থাৎ, পরিবেশের কোনো কঠিন বর্জাকে কোনো অবনমিত স্থানে মাটির নীচে ভরাট করাকে ভরাটকরণ (Landfill) বলে। এর থেকে Landfill gas (যেমন মিথেন) উৎপন্ন হয়।
অথবা,
বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার কাকে বলে ?
উত্তরঃ এমন কিছু বর্জ্য দ্রব্য আছে যেগুলি পরিবর্তন না করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। যার ফলে বর্জ্যের পরিমান কমে এবং অর্থের সাশ্রয় হয় ও সম্পদ বাঁচে। একে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বলে। উদাহরণ (i) কাচকে পৃথক করে – অ্যাসফান্টের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। (ii) তরকারির খোসা, গোবর, মল-মূত্র, পচা ডাল পাতা ইত্যাদিকে গর্তের মধ্যে চাপ দিয়ে পচিয়ে জৈবসার তৈরী করে কৃষিক্ষেত্রে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
৩.৪ মৌসুমি বিস্ফোরণের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরবসাগরীয় শাখা প্রচুর জলীয়বাষ্প নিয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কেরালার মালাবার উপকূলে পৌঁছায়। এই জলীয়বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী হয় এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। একেই মৌসুমি বিস্ফোরণ বা Burst of Monsoon বলে। এই বৃষ্টিপাতের ফলে ঐ অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়।
অথবা,
সামাজিক বনসৃজনের দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির উদ্দেশ্যে এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট অরণ্যসীমার বাইরে বৃক্ষরোপণ করাই হল সামাজিক বনসৃজন। এর দুটি উদ্দেশ্য হল—
(i) সেই অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিসাধন।
(ii) মৃত্তিকাক্ষয়, পরিবেশ দূষণ হ্রাস করা এবং বাস্তুতন্ত্রের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা।
৩.৫ জীবিকা সত্তাভিত্তিক কৃষি বলতে কী বোঝো ?
উত্তরঃ যে প্রকার কৃষিতে কৃষক নিজের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে শস্য বা কৃষিজ ফসল উৎপাদন করে, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যসাধন তেমন গুরুত্ব পায় না, তাকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে। এটি ভারতীয় কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
অথবা,
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সংজ্ঞা দাও।
উত্তরঃ মানুষের প্রয়োজনভিত্তিক নানান তথ্য বিভিন্ন উপায়ে মুহূর্তেই পৌঁছে দেবার কৌশলই হল তথ্যপ্রযুক্তি। এর মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ, অন্বেষণ, পুনরুদ্ধার, পরিবর্তন, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ, পরিমার্জন, প্রেরণ ইত্যাদি হয়ে থাকে। অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি পরিসেবা সংক্রান্ত কাজকর্মকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলে।
৩.৬ জিয়োস্টেশনারি উপগ্রহ কী ?
উত্তরঃ যে সব কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সাথে সামগ্রস্য রেখে পৃথিবীর আবর্তন গতির (২৪ ঘণ্টায়) সমান লয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, তাদের জিওস্টেশনারী উপগ্রহ বলে।
বৈশিষ্ট্য : (i) এগুলি 36000 km উচ্চতায় অবস্থিত।
(ii) এরা নিরক্ষীয় তলে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
(iii) পৃথিবীর অর্ধাংশের ছবি তুলতে পারে।
উদা: GOMS, GOES W, GOES E প্রভৃতি।
অথবা,
দূর সংবেদন কী ?
উত্তরঃ যখন ভূপৃষ্ঠের অন্তর্গত বস্তু বা বিষয়সমূহকে স্পর্শ না করে ভূপৃষ্ঠের অনেক উঁচু থেকে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরার সাহায্যে বিমান থেকে অথবা কৃত্রিম উপগ্রহে সংযুক্ত সেন্সরের মাধ্যমে তথ্যাবলি আহরণ করে ভূপৃষ্ঠে কম্পিউটারে পাঠানো হয় তখন এই ব্যবস্থাকে দূর সংবেদন বলে।
বিভাগ—ঘ
৪. সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষ্যণীয়) : ৩x৪=১২
৪.১ মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য দেখা যায় কেন ?
উত্তরঃ মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য দেখা যায় বা মরু অঞ্চলে বায়ু প্রধান শক্তি রুপে কাজ করে।
মরু অঞ্চলে বায়ু ছাড়া ক্ষয়কার্যের অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তি উপস্থিত না থাকায় ভূমিরূপ বিবর্তনে বায়ুই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে অর্থাৎ মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য দেখা যায়। কারণ—
বাধাহীন বায়ুপ্রবাহঃ মরু অঞ্চল প্রায় উদ্ভিদ বিরল হওয়ায় এখানে বায়ু বাধাহীনভাবে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। এছাড়া, মরু অঞ্চল জনমানবহীন বলে বায়ু বসতবাড়ি বা অন্য কোনো বাধারও সম্মুখীন হয় না। ফলে ভূপৃষ্ঠের আলগা বালুকারাশি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয়।
যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাবল্যঃ মরু অঞ্চলে দিন-রাত্রি এবং শীত-গ্রীষ্মের মধ্যে উষ্ণতার পার্থক্য অনেক বেশি। তাই উষ্ণতার পার্থক্যে শিলাসমূহ যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে অবশেষে বালিকণায় পরিণত হয়, যা বায়ুর ক্ষয়কার্যের প্রধান উপাদান।
বৃষ্টিপাতের অভাবঃ মরু অঞ্চলে বৃষ্টি প্রায় হয় না বা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই অল্প। তাই বালিস্তর সর্বদা আলগা ও শিথিল থাকে, আর এই আলগা বালুকণা বায়ু সহজেই উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে।
উদ্ভিদ বিরলতাঃ বৃষ্টির অভাবে মরু অঞ্চল প্রায় উদ্ভিদশূন্য। উদ্ভিদের সমাবেশ না থাকায় বায়ু যেমন বাধাহীনভাবে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়, তেমনি উদ্ভিদ না থাকায় মৃত্তিকা কে আঁকড়ে ধরে রাখার সুযোগ নেই। ফলে মৃত্তিকার স্তরও আলগা প্রকৃতির হয়, যা বায়ুর দ্বারা সহজেই অপসারিত হয়।
অথবা, সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর পার্থক্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য—
দিনের বিভিন্ন সময়ে বা বিভিন্ন ঋতুতে সাময়িক ভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে সাময়িক বায়ু বলে। এই সাময়িক বায়ু গুলির মধ্যে অন্যতম হল সমুদ্র বায়ু ও স্থল বায়ু, যা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়েই প্রবাহিত হয়ে থাকে। নিম্নে এই সমুদ্র বায়ু ও স্থল বায়ুর মধ্যে পার্থক্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
(i) সংজ্ঞা—
• স্থানীয় ভাবে সমুদ্র থেকে স্থল ভাগের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্র বায়ু বলে।
• একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্থল ভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত বায়ু কে স্থল বায়ু বলে।
(ii) প্রবাহের সময়—
• সাধারণত বিকেল ও সন্ধ্যায় সমুদ্রবায়ুর প্রবাহ বেশি দেখা যায়।
• স্থলবায়ু মূলত মধ্যরাত থেকে ভোরের দিকে প্রবাহিত হয়।
(iii) বায়ুর প্রকৃতি—
• সমুদ্রবায়ু জলভাগ থেকে আসে বলে আর্দ্র প্রকৃতির হয়।
• স্থলবায়ু স্থলভাগ থেকে প্রবাহিত হওয়ায় জলীয় বাষ্প হীন শুষ্ক প্রকৃতির হয়ে থাকে।
(iv) বায়ু প্রবাহের দিক—
• সমুদ্রবায়ু সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
• স্থলবায়ু স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়ে থাকে।
(v) বায়ু চাপের অবস্থান—
• সমুদ্র বায়ু প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রের ওপর উচ্চ চাপ ও স্থলভাগের ওপর নিম্ন চাপ অবস্থান করে।
• অন্যদিকে স্থলবায়ু প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রে নিম্ন চাপ ও স্থল ভাগে উচ্চ চাপের উপস্থিতি দেখা যায়।
(vi) ঋতু—
• বসন্ত ও গ্রীষ্ম কালে সমুদ্রবায়ুর প্রবাহ বেশি লক্ষ্য করা যায়।
• স্থলবায়ু সাধারণত শীতকালে বেশি প্রবাহিত হয়ে থাকে।
(vii) গতিবেগ—
• সমুদ্র বায়ু 10 থেকে 20 নট গতিবেগ সম্পন্ন হয়।
• স্থল বায়ু 5 থেকে 8 নট গতিবেগ সম্পন্ন হয়।
৪.২ জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য এবং জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য করো।
(১) ধারনা—
• যেসব বর্জ্য জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি দ্বারা সহজে বিয়োজিত হয় সেইসব বর্জ্যকে বলে জৈব ভঙ্গুর বর্জ। যেমন- শুকনো ফুল, বাড়ির বাগানের লতাপাতা, শাকসবজির খোসা, বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ প্রভৃতি।
যেসব
• বর্জ্য বিয়োজক দ্বারা সহজে বিশ্লেষিত হয় না, হয়, সেইসব বর্জ্যকে বলে জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য। যেমন- স্প্রে ক্যান, প্লাস্টিক, কাচ, ধাতব টুকরো প্রভৃতি।
(২) স্থায়ীত্ব—
• এগুলি খুব সহজে প্রকৃতিতে মিশে যায়।
• এটি বিভিন্ন ধরনের হয়, যথা- বিষাক্ত বর্জ্য, পুনচক্রী বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য প্রভৃতি।
(৩) শ্রেণি বিভাগ—
• জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য সাধারণভাবে একপ্রকারই হয়।
• এটি বিভিন্ন ধরনের হয়, যথা- বিষাক্ত বর্জ্য, পুনচক্রী বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য প্রভৃতি।
(৪) প্রভাব—
• এগুলি পরিবেশের পক্ষে প্রতি-কুল নয় বা পরিবেশমিত্র বর্জ্য।
• এই বর্জ্যগুলি পরিবেশ প্রতিকূল বা পরিবেশে শত্রু।
অথবা, বর্জ্য কম্পোস্টিং পদ্ধতির প্রধান সুবিধাগুলি কী কী ?
৪.৩ পাঞ্জাব হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি উন্নতির প্রধান তিনটি কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ উত্তর ভারতে অবস্থিত পাঞ্জাব, হরিয়ানা রাজ্য কৃষিতে উন্নত হওয়ার কারণ নিম্নে আলোচনা করা হল—
(ক) প্রাকৃতিক কারণ—
(i) জলবায়ুঃ পাঞ্জাব-হরিয়ানা রাজ্যের তাপমাত্রা 15° সেলসিয়াস থেকে 25° সেলসিয়াস এবং বৃষ্টিপাত 60 – 100 সেন্টিমিটার যা গম, কার্পাস, ধান চাষের পক্ষে আদর্শ। এখানে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এবং শীতকালে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্য বৃষ্টিপাত হয়।
(ii) উর্বর মৃত্তিকাঃ গঙ্গা ও সিন্ধু নদীর বিভিন্ন উপনদী দ্বারা বাহিত পলি গঠিত দোয়াব অঞ্চলগুলি খুব উর্বর। নদীর পলি গঠিত উর্বর দোআঁশ মৃত্তিকা কৃষিজ ফসল উৎপাদনে আদর্শ।
(iii) সমতল ভূপ্রকৃতিঃ পাঞ্জাব-হরিয়ানা রাজ্য সিন্ধু ও গঙ্গা সমভূমির অন্তর্গত। সমতল ভূ-প্রকৃতি হওয়ার জন্য কৃষিক্ষেত্রে জলসেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে কোন রকম অসুবিধা হয়না।
(খ) অর্থনৈতিক কারণ—
(i) জলসেচঃ পাঞ্জাব-হরিয়ানা রাজ্যের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব বেশি না হওয়ায় জলসেচের প্রয়োজন হয়। গঙ্গা, সিন্ধু নদীর বিভিন্ন উপনদী থেকে খাল কেটে কৃষিজমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানকার উল্লেখযোগ্য খালগুলি হল উচ্চ বারী দোয়াব খাল, পশ্চিম যমুনা খাল, সিরহিন্দ খাল প্রকৃতি।
(ii) সবুজ বিপ্লবঃ 1960 দশকে পাঞ্জাব-হরিয়ানা রাজ্যের কৃষকদের উন্নত ধরনের বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার ফলে কৃষি উৎপাদন বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। যা সবুজ বিপ্লব নামে পরিচিত। সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।
(iii) কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারঃ পাঞ্জাব-হরিয়ানা রাজ্যে কৃষিসংক্রান্ত প্রায় সমস্ত কাজ যন্ত্রের মাধ্যমে করা হয়। এতে সময় এবং অর্থের অপচয় কম হয়।
(iv) নিবিড় কৃষিকাজঃ কৃষিজমির তুলনায় মোট জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় নিবিড় পদ্ধতিতে এখানে কৃষি কাজ করা হয়। ফলে ফসল উৎপাদন অন্যান্য রাজ্য থেকে বেশি হয়।
(v) আর্থিক সহায়তাঃ দ্বিতীয় ও তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ভারত সরকার কৃষিক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে। মূলত এই অঞ্চলে এই অর্থের বিনিয়োগের ফলে অঞ্চলের কৃষির সামগ্রিক উন্নতি ঘটেছে।
অথবা, ভারতের নগর ও নগরায়ণের প্রধান তিনটি সমস্যা উল্লেখ করো।
ভারত একটি প্রাচীন দেশ। ভারতের সভ্যতাও অতি প্রাচীন। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ভারতে বহু জনপদ গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ ভারতের নগরায়ণ প্রক্রিয়া বহুদিন ধরেই শুরু হয়েছে। 2011 সালের আদমসুমারি অনুসারে ভারতে মহানগরের সংখ্যা 53 । তবে ভারতের নগরায়ণের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা যায়। যেমন-
(i) অপরিকল্পিত নগরায়ণ : ভারতের নগরায়ণ প্রক্রিয়া অতি প্রাচীন হলেও নগরায়ণের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের অভাব দেখা যায়। যে সময়ে একটি নগর ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ ঘটেছে কেবলমাত্র সেই সময়ের চাহিদার কথা ভেবেই নগর পরিকল্পনার রূপায়ণ দেখা যায় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ফলতঃ পরবর্তী সময়ে ঐ সকল নগরগুলির কাঠামোগত ও কর্মগত বিকাশের পর্যায়ে প্রভূত অসুবিধা লক্ষ্য করা গেছে।
(ii) জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি : ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কাম্য পরিমাণের তুলনায় বেশী। 2001 থেকে 2011 র মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় 17% । ভারতে জনসংখ্যা বণ্টনের ক্ষেত্রে অসম প্রকৃতির বিন্যাস দেখা যায়। একদিকে অতিরিক্ত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং তার সাথে শহরকেন্দ্রিকভাবে মানুষের বসবাসের প্রবণতা এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবে ভারতের নগরগুলিতে জনসংখ্যার প্রবল চাপ লক্ষ্য করা যায়। গ্রাম থেকে শহরমুখী পরিব্রাজন এক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা নেয়।
(iii) বাসস্থানের অভাব : অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপের জন্য ভারতের নগরগুলিতে সমস্ত মানুষকে সুষ্ঠু ও সুস্থভাবে বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা সম্ভব হয় না। শহরের বস্তিগুলিতে বহুলোকের বসবাস দেখা যায়। এছাড়া ভারতের বড় বড় শহরের রাস্তায়, ফুটপাতে, স্টেশনে বহু লোকের অস্থায়ীভাবে বসবাস লক্ষ্য করা যায়।
(iv) দূষণজনিত সমস্যা : ভারতের নগরায়ণের অন্যতম একটি সমস্যা হল পরিবেশ দূষণ। জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপের কারণে বাসস্থানের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং জমির অন্যান্য ব্যবহারের পরিমাণ কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে নিকাশি ও পয়ঃপ্রণালী অসুবিধা দেখা যায়। বহু মানুষ ভারতের নগরগুলিতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করে, ফলে তাদের ব্যবহৃত জঞ্জাল, নোংরা ইত্যাদি যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশকে দূষিত করে। এই দূষণ থেকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও বিভিন্ন সংক্রামক রোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়া অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ জলদূষণ, বায়ুদূষণও সৃষ্টি করে।
(v) পরিবহনের সমস্যা : ভারতে নগরায়ণের অন্যতম আরেকটি সমস্যা হল পরিবহনের সমস্যা। নগরায়ণের দ্রুত বৃদ্ধির ফলে আবাসজমির বৃদ্ধি ঘটেছে, তুলনায় পরিবহন পথের বিকাশলাভ সেই অনুপাতে সম্ভব হয়নি। আবার জনপরিবহনের তুলনায় ব্যক্তিগত আর্থিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত পরিবহন ব্যবস্থার বৃদ্ধি অনেক বেশী হয়েছে। এর ফলে যানবাহনের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলেও জনগণের প্রয়োজনে যানের সুষম বণ্টন ও ব্যবহার সম্ভব হয়নি। প্রচলিত সড়কপথের বিকল্প হিসেবে মেট্রো রেল, জলপরিবহন ও অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থাও বিশেষ বিকাশলাভ করেনি।
ভারতের নগরায়ণের ক্ষেত্রে এই সকল সমস্যাগুলি ভারতের মানব উন্নয়ন সূচককেও ঋণাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। তাছাড়া নগরায়ণের সমস্যাজনিত কারণ ভারতের আর্থিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৪.৪ উপগ্রহ চিত্রের প্রধান তিনটি ব্যবহার ও আলোচনা করো।
উত্তরঃ
উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার : বিভিন্ন উদ্দেশ্যে উপগ্রহ চিত্রকে ব্যবহার করা যায়। যেমন—
(১) ভূমির আবরণ ও ভূমির ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য লাভ—
(i) ভমির শ্রেণিবিভাগ : ভূমির আবরণ সম্পর্কে জানা যায় এবং তার ভিত্তিতে ভূমির শ্রেণিবিভাগ করা যায়।
(ii) মানচিত্র তৈরি : উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে ভূমি ব্যবহারের মানচিত্র তৈরি করা যায়।
(iii) ভূমি ব্যবহার সংক্রান্ত পরিবর্তন: IRS Series-এর উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি থেকে ভূমির ব্যবহার সংক্রান্ত পরিবর্তন জানা যায়।
(২) আবহাওয়া, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ব্যবহার—
(i) মেঘাচ্ছন্নতার পরিমাণ: মেঘাচ্ছন্নতার পরিমাণ সম্পর্কে জানা যায়।
(ii) ঝড়ের গতিপ্রকৃতি: উপগ্রহ চিত্রের থেকে ঝড়ের গঠন ও গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
(iii) আবহাওয়ার পূর্বাভাস : আবহাওয়ার যেসব তথ্য উপগ্রহ চিত্র থেকে পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে আবহাওয়ার নির্ভুল পূর্বাভাস দেওয়া যায়।
(iv) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ : ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
(v) আঞ্চলিক পুনর্গঠনের কাজ : বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, ভূমিধস প্রভাবিত অঞ্চলের উপগ্রহ চিত্র সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে উদ্ধার কাজ ও পুনর্গঠনের কাজে লাগে।
(3) কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার—
(i) ফসল চিহ্নিতকরণ ও মানচিত্র প্রস্তুত: বিভিন্ন ফসল চিহ্নিত করা, তাদের শ্রেণিবিভাগ করা এবং মানচিত্র প্রস্তুতে উপগ্রহ চিত্র ব্যবহৃত হয়।
(ii) রোগগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ফসল চিহ্নিতকরণ : উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে রোগগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ফসলকে চিহ্নিত করা যায় বলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
(4) অরণ্যের পরিমাপ ও সংরক্ষণ—
(i) অরণ্যের অবস্থান ও আয়তন নির্ণয়,
(ii) উদ্ভিদের প্রকৃতি ও প্রজাতি শনাক্তকরণ,
(iii) বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণ ও পরিবর্তন,
(iv) দাবানলের কারণে উদ্ভিদের ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত জানার জন্য উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করা হয়।
(5) অন্যান্য—
(i) সমুদ্রে মাছের ঝাঁকের অবস্থান নির্ণয়, প্ল্যাংকটনের উপস্থিতি, সমুদ্রজলের উয়তা নিরূপণ, সমুদ্রে ভাসমান হিমশৈলের অবস্থান এমনকি সমুদ্রগর্ভের ভূপ্রকৃতি নির্ণয় করার জন্যও উপগ্রহ চিত্র ব্যবহৃত হয়। (ii) উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে খনিজ সম্পদ জরিপ ও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় এবং (iii) শত্রুপক্ষের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায়।
অথবা, ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের স্কেলের উল্লেখ করো।
উত্তরঃ ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের ব্যবহার : ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রের তিনটি ব্যবহার হল—
(১) সামরিক প্রয়োজন: ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় সামরিক প্রয়োজনে।
(২) ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন বা নদীর গতিপথের পরিবর্তন বোঝার জন্য : কোনো অঞ্চলের ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন বা নদীর গতিপথের পরিবর্তন বোঝার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ব্যবহার করা হয়
(৩) আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা রচনা করার জন্য : যেহেতু ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে কোনো অঙ্কুলের ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তাই সেই অঞ্চলের উন্নয়ন পরিকল্পনা রচনা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ব্যবহৃত হয়।
বিভাগ – ‘ঙ’
৫.১ যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও (দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে চিত্রাঙ্ককন আবশ্যিক নয়) : ৫x২=১০
৫.১.১ শুষ্ক অঞ্চলে বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি চিত্র-সহ বর্ণনা করো।
উত্তরঃ শুষ্ক অঞ্চলে বায়ু ও জলাধারের মিলিত কাজের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ—
মরুভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হয়। তবে যখন বৃষ্টিপাত হয়, একেবারে মুশলধারেই তার আবির্ভাব ঘটে। আর বৃষ্টিপাতের সেই জল ভূপৃষ্ঠের ঢাল বরাবর নেমে কিছু অনিত্যবহ জলধারাও সৃষ্টি করে। এজন্য মরু অঞ্চলে বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে কিছু ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়, যেমন—
(1) ওয়াদি—
উৎপত্তি : আরবি শব্দ ‘ওয়াদি’র অর্থ শুষ্ক উপত্যকা। মর অঞ্চলের বালি ঢাকা ভূমিতে জল নিকাশের জন্য নদীনালা বিশেষ থাকে না বলে এক পশলা মুশলধারে বৃষ্টি হলেই বন্যা হয়ে যায়। বন্যা বা বৃষ্টির জল বেরোনোর জন্য তখন বালুকাভূমির ওপর অস্থায়ী নদী সৃষ্টি হয়। জল নেমে গেলে ওগুলি শুষ্ক খাত হিসেবে পড়ে থাকে। এই শুষ্ক নদীখাত-ই ওয়াদি নামে পরিচিত।
(2) পেডিমেন্ট—
উৎপত্তি : বায়ুপ্রবাহ ও জলধারার মিলিত ক্ষয়কার্যে উচ্চভূমি বা ইনসেলবার্জের পাদদেশে যে প্রায় সমতল মৃদু ঢালবিশিষ্ট ভূমিভাগের সৃষ্টি হয়, তাকে বলে পেডিমেন্ট।
বৈশিষ্ট্য : (i) এর ঢাল গড়ে 1 (এক) থেকে 10°-এর মধ্যে থাকে। (ii) পেডিমেন্টের ওপর ছোটো ছোটো শিলাখণ্ড, বালি, পলি ইত্যাদি থাকতে পারে। (iii) পেডিমেন্ট সম্পূর্ণ উন্মুক্ত হতে পারে। (iv) পেডিমেন্টের নীচে থাকে বাজাদা।
উদাহরণ : উত্তর আফ্রিকার অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশের কোনো কোনো অংশে বিস্তৃত পেডিমেন্ট আছে।
(3) বাজাদা—
উৎপত্তি : পেডিমেন্টের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারার সঙ্গে আসা নুড়ি, কাকর, পলি, বালি প্রভৃতি ঢালের নিম্নাংশে অর্থাৎ পেডিমেন্টের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার পলল ব্যজনী সৃষ্টি করে। এই ধরনের অনেকগুলি ভূমি পরস্পর যুক্ত হলে যে বড়ো আকারের পললভূমি গঠিত হয় তাকে বলে বাজাদা বা বাহাদা।
বৈশিষ্ট্য : (i) পেডিমেন্টের সামনে গড়ে ওঠা বাজাদা সম্পূর্ণরূপে সঞ্জয়জাত ভূমিরূপ। (ii) পেডিমেন্টের দিকে বাজাদার খাড়া অবতল ঢাল সৃষ্টি হলেও প্লায়ার কাছে ঢাল খুব কম বা একেবারে শূন্যও হতে পারে।
উদাহরণ : সাহারা মরুভূমি-সহ প্রায় সব মরুভূমিতেই বাজাদা আছে।
(4) প্লায়া—
উৎপত্তি : চারপাশের উচ্চভূমি থেকে আসা অনেকগুলি জলধারা মধ্যভাগের উপত্যকা বা নিম্নভূমিতে মিলিত হলে সেখানে লবণাক্ত জলের অগভীর হ্রদ সৃষ্টি হয়। বাজাদা পৃষ্ঠের ওপর গড়ে ওঠা এই মরুদের নাম প্লায়া। এগুলি সাধারণত অস্থায়ী প্রকৃতির হয় এবং এদের আয়তন বা ক্ষেত্রমান কয়েক বর্গমিটার থেকে কয়েক বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। মরু অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের নিম্নসীমা বা শেষসীমা হল এই প্লায়া।
৫.১.২ বায়ুমন্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের প্রধান তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বা উষ্ণতার তারতম্যের কারণ—
ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা সমান হয় না। কোথাও উষ্ণতা বেশি হয় আবার কোথাও কম হয়। বিভিন্ন কারণে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে উষ্ণতার এই তারতম্য বা পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সেগুলি হল-
(ক) অক্ষাংশঃ ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা সেই স্থানের অক্ষাংশের ওপর নির্ভর করে। নিম্ন অক্ষাংশ বা নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে কিরণ দেওয়ার ফলে সেখানকার তাপমাত্রা বেশি হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে যতই মেরুর দিকে যাওয়া যায় উষ্ণতা ততই কমতে থাকে। তার কারণ যতই উত্তর মেরুর দিকে এবং দক্ষিণ মেরুর দিকে যাওয়া যায় সূর্যরশ্মি ততই তির্যকভাবে কিরণ দেয় এবং দিনরাত্রি দৈর্ঘ্যের হ্রাস বৃদ্ধি হয়। এই কারণে উচ্চ অক্ষাংশে উষ্ণতা কম হয়। হিসাব করে দেখা গেছে প্রতি 1° অক্ষাংশ বৃদ্ধিতে 0.28° সেলসিয়াস উষ্ণতা হ্রাস পায়।
(খ) উচ্চতাঃ সূর্যের আলোতে প্রথম ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণের মাধ্যমে বায়ুমন্ডল উত্তপ্ত হয়। বায়ুমন্ডলে উপস্থিত জলীয় বাষ্প, ধূলিকণা, কার্বন-ডাই-অক্সাইড তাপমাত্রার শোষণ করে এবং বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে। নিম্ন বায়ুমণ্ডলে এই সকল উপাদান বেশি থাকায় তাপমাত্রা বেশি হয়। যতই উপর দিকে যাওয়া যায় এই সকল তাপ শোষণকারী উপাদান কমতে থাকে, তার সঙ্গে বাতাসের ঘনত্ব কমতে থাকায় উপরের বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা কম। হিসাব করে দেখা যায় প্রতি 1000 মিটার বা 1 কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা বা উষ্ণতা 6.4° সেলসিয়াস করে কমতে থাকে। অধিক উচ্চতায় অবস্থান করার জন্য দিল্লি থেকে সিমলার উষ্ণতা কম এবং শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং এর উষ্ণতা কম হয়।
(গ) স্থলভাগ এবং জলভাগের বন্টন বা সমুদ্র থেকে দূরত্বঃ স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ হয় এবং দ্রুত শীতল হয়। জলভাগ ধীরে ধীরে উষ্ণ হয় এবং ধীরে ধীরে শীতল হয়। স্থলভাগ জলভাগের চেয়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি হারে উষ্ণ এবং শীতল হয়। একই পরিমাণ সূর্যরশ্মি স্থলভাগ এবং জলভাগের উপর পড়লে স্থলভাগ অধিক উষ্ণ হয়। জল ভাগ ধীরে ধীরে উষ্ণ এবং শীতল হাওয়ায় সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে উষ্ণতার চরমভাব লক্ষ্য করা যায় না। অর্থাৎ গরমকালে উষ্ণতা খুব বেশি হয় না এবং শীতকালে উষ্ণতা খুব কম হয় না। এই কারণে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু সমভাবাপন্ন বা মৃদুভাবাপন্ন থাকে।
বিশাখাপত্তনম, মুম্বাই, গোয়া প্রভৃতিসহ সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে সমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়। দিল্লি, কানপুর, সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় এখানে শীত এবং গ্রীষ্মের তীব্রতা অনেক বেশি।
(ঘ) বায়ুপ্রবাহঃ শীতল অঞ্চলের ওপর দিয়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হলে সেখানকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং উষ্ণ অঞ্চলের ওপর দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হলে সেখানকার তাপমাত্রা হ্রাস পায়। উষ্ণ “লু” বায়ুর প্রভাবে গ্রীষ্মকালে উত্তর ভারতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আবার শীতকালে সাইবেরিয়ার উপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল বায়ুর প্রভাবে চীনের তাপমাত্রা অনেক কমে যায়।
(ঙ) সমুদ্রস্রোতঃ উষ্ণতার ভিত্তিতে সমুদ্রস্রোত দুই প্রকার, যথা- উষ্ণ সমুদ্রস্রোত এবং শীতল সমুদ্রস্রোত।যে স্থানের কাছ থেকে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয় সেখানকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং কোন স্থানের কাছ থেকে শীতল স্রোত প্রবাহিত হলে তাপমাত্রা কমে যায়। উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে নরওয়ের হেমারফেস্ট বন্দর দিয়ে শীতকালেও জাহাজ চলাচল করে। শীতল স্রোতের প্রভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন শহরের গড় উষ্ণতা কমে যায়।
৫.১.৩ পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি হল—
(1) মগ্নচড়া সৃষ্টি: শীতল স্রোতের সঙ্গে ভেসে আসা হিমশৈল উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে এসে গলে যায়। ফলে হিমশৈলের মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, বালি প্রভৃতি সমুদ্রবক্ষে দীর্ঘকাল ধরে জমতে জমতে উঁচু হয়ে মগ্নচড়ার সৃষ্টি করে।
উদাহরণ : নিউফাউন্ডল্যান্ডের অদূরে গ্রান্ড ব্যাংক, জর্জেন্স ব্যাংক প্রভৃতি এবং ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের কাছে ডগার্স ব্যাংক, রকফল ব্যাংক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য মগ্নচড়া।
(2) উপকূলের জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণ : সমুদ্রস্রোত উপকূলের জলবায়ুর ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে—
(i) উষ্ণতা : সমুদ্রস্রোত যে উপকুলের পাশ
দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেখানকার উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। উদাহরণ : শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে বায়ুর উষ্ণতা কমে এবং উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের প্রভাবে জাপানের পশ্চিম উপকূলে বায়ুর উষ্ণতা বাড়ে।
(ii) বৃষ্টিপাত : উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকে বলে ওই বায়ুর মাধ্যমে উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক বলে বৃষ্টিপাত ঘটায় না। উদাহরণ : আফ্রিকার দক্ষিণ- পশ্চিমে নামিবিয়া উপকূলে এই কারণে মরুভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
(iii) কুয়াশা ও ঝড়ঝঞ্ঝা: যেসব অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলন ঘটে সেখানে উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় এবং প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝা হয়। ফলে সেখানে জাহাজ বা বিমান চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। উদাহরণ : নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল।
(3) জলবায়ুর পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর সমুদ্রস্রোতের সর্বাধিক প্রভাব লক্ষ করা যায়। ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে এল নিনো ও লা নিনা আবির্ভাবের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে। এল নিনো আবির্ভূত হলে দক্ষিণ আমেরিকার পেরুচিলি ইকুয়েডর উপকূলে উত্তরমুখী শীতল হামবোল্ড স্রোতের পরিবর্তে উত্তর দিক থেকে উষ্ণ স্রোেত প্রবাহিত হয়। এর ফলে যেমন পেরু ইকুয়েডরে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়, তেমন ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমপ্রান্তে অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেয়। ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতেও তখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। আবার, এল নিনো অন্তর্হিত হলে যখন লা নিনার আবির্ভাব ঘটে তখন ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমের দেশগুলিতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও বন্যা হলেও পূর্বের দেশগুলিতে অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো ও লা নিনার আবির্ভাব ঘটলে সারা পৃথিবীর জলবায়ুতেই নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
এ ছাড়া বর্তমানে উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের ওপর সৃষ্ট প্রবল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় যেমন- সাইক্লোন, হ্যারিকেন, টাইফুন, উইলি উইলি প্রভৃতির সংখ্যা ও তীব্রতা অনেক বেড়েছে।
অন্যান্য প্রভাব: উল্লিখিত প্রভাবগুলি ছাড়াও উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে (4) বরফমুক্ত বন্দর, (5) জাহাজ চলাচলে সুবিধা, (6) দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।
৫.১.৪ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তরঃ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব (Effects of Global Warming) : মানুষের বিভিন্ন প্রকার অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপ, যেমন— অত্যধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যবিনাশ, কৃষিকাজে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়ন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে চলেছে এবং তার ফলস্বরূপ নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলা হয়। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। যেমন —
(১) মেরু অঞ্চলের বরফের গলন ও পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের গলন : ভূমণ্ডলের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মেরু অঞ্চলের বরফের স্তর ও পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহের গলন ঘটবে ও সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ফলস্বরূপ সমুদ্র উপকূলভাগের নীচু অংশ জলমগ্ন হবে, উপকূলবর্তী অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত ও অনুর্বর হয়ে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সমগ্র সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে।
(২) সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি : বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রের জলের যোগান বৃদ্ধি পাবে ও সমুদ্র জলপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে । বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমানে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১° সে. বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা প্রায় ১০ থেকে ১৫ সেমি. বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে পৃথিবীর নিম্ন উপকূল অঞ্চলসমূহ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম উচ্চতাসম্পন্ন দ্বীপগুলি সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হবে।
(৩) অধঃক্ষেপণের প্রকৃতির পরিবর্তন : বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ফলে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে উঠবে। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পাবে ও ভৌমজলের ভাণ্ডারে টান পড়বে। এইভাবে অধঃক্ষেপণের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটবে ও সমগ্র বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে।
(৪) শস্য উৎপাদনের বৈষম্য : বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বৃষ্টিপাতের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটবে, বৃষ্টিপাতের বন্টনেও চরম অসাম্য দেখা দেবে। ফলে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাবে। অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি দীর্ঘায়িত হয়ে কৃষিজ ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।
(৫) কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন : ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বায়ুমণ্ডল শুষ্ক হয়ে অনাবৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। ফলে বৃষ্টিপাতনির্ভর কৃষি এলাকাগুলিতে সেচব্যবস্থানির্ভর চাষবাস শুরু হবে। আর্দ্র কৃষি প্রণালীর পরিবর্তে পৃথিবীব্যাপী শুষ্ক কৃষি ও মিশ্র কৃষি পদ্ধতির প্রসার ঘটবে।
(৬) এল নিনো সৃষ্টি ও পৃথিবীব্যাপী তার প্রভাব : স্পেনীয় শব্দ ‘El Nino’ কথার অর্থ Christ Child বা শিশু খ্রীষ্ট । বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বভাগে পেরু ও ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূল দিয়ে কোনো কোনো বছর খ্রিষ্টমাসের সময় প্রচন্ড উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহের ফলে আবহাওয়ার যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে, তাকে এল নিনো বলা হয়। এল নিনোর প্রভাবে, (i) পূর্ব আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশসমূহে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে। ফলে খরা পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। (ii) পৃথিবীর পশ্চিম গোলার্ধের উষ্ণতা স্বাভাবিকের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। (iii) দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূলে সামুদ্রিক মৎস্যের আহরণ উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
(৭) পৃথিবীতে আগত ও বিকিরিত তাপের বৈষম্য : বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীতে আগত সূর্যরশ্মি ও পৃথিবী থেকে বিকিরিত সৌরতাপ শক্তির পরিমাণের মধ্যে বৈষম্য ঘটে। ফলে পৃথিবীর উষ্ণতা বাজেটের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। ফলে খরা ও বন্যা, ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ও দাবানলের প্রকোপ বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। যেমন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমে ভয়ংকর টর্নেডো ঘূর্নিঝড় এবং অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলের প্রাদুর্ভাব বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে।
লা নিনা কী ? স্পেনীয় শব্দ ‘La Nina’ কথার অর্থ হল ‘ক্ষুদ্র বালিকা’। প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্বভাগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা স্বাভাবিকের তুলনায় ৪° সে. কমে গেলে দক্ষিণ আমেরিকা পেরু, ইকুয়েডর উপকূল বরাবর কোনো কোনো বছর যে অতি শীতল সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হয়, তাকে লা-নিনা বলে। প্রভাবে ভারতে প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়।
৫.২ যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x২=১০
৫.২.১ ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য আলোচনা করো।
উত্তরঃ
৫.২.২ ভারতে ইক্ষুচাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
উত্তরঃ ইক্ষু উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশকে দুটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন— (ক) অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং (খ) অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ।
(ক) অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ—
(1) জলবায়ু : আখ উষ্ণ এবং আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল—
(i) উষ্ণতা : বাৎসরিক গড় 20° সেলসিয়াস থেকে 27° সেলসিয়াস উষ্ণতা আখ গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য উপযোগী।
(ii) বৃষ্টিপাত : 100 সেন্টিমিটার থেকে 150 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে আখ চাষ ভালো হয়। 100 সেন্টিমিটার কম বৃষ্টিপাত হলে জলসেচের প্রয়োজন হয়। কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে আখের রস কম হয়। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে আখে জলীয় অংশ বেশি থাকে ফলে আখ কম মিষ্টি হয়।
(iii) আর্দ্রতা : আখের চারা বৃদ্ধির সময় আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন হয় এবং আখ কাটার সময় রোদ ঝলমলে শুষ্ক আবহাওয়ার প্রয়োজন।
(iv) সামুদ্রিক বাতাস : সামুদ্রিক লবণাক্ত বাতাস আখের ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
(v) কুয়াশা এবং তুষারপাত : কুয়াশা ও তুষারপাত আখ চাষের ক্ষতি করে। সেই কারণে আখ চাষের জলবায়ু তুহিন মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
(2) মৃত্তিকা : চুন এবং লবণযুক্ত দোআঁশ মাটিতে আখ চাষ ভালো হয়। এছাড়া সুষম জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পলিমাটি, দোআঁশ মাটি, রেগুর মাটিতে আখের ফলন ভালো হয়। ক্ষারীয় মৃত্তিকায় আখ চাষ ভাল হয় না।
(3) ভূমির প্রকৃতি : গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে গাছ পচে যায়। উত্তম জলনিকাশি যুক্ত অল্প ঢালু জমিতে আখ চাষ ভালো হয়।
৫.২.৩ পশ্চিম ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ যে শিল্পে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পরিকাঠামোর উপর ভিত্তি করে রাসায়নিক সংশ্লেষের মাধ্যমে বহু রকমের ভোগ্যপণ্য এবং বিভিন্ন অনুসারী শিল্পের কাঁচামাল উৎপন্ন হয়, তাকে পেট্রো রাসায়নিক শিল্প বলে। প্রত্যাহিক জীবনে বহু প্রয়োজনীয় দ্রব্য এই শিল্প থেকে আসে বলে এই শিল্পের ব্যবহারিক গুরুত্ব ও প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভারতে এই শিল্পের সর্বাধিক বিকাশ ঘটেছে পশ্চিমাঞ্চলের মহারাষ্ট্র ও গুজরাট রাজ্যে। পশ্চিম ভারতের উল্লেখযোগ্য পেট্রোরসায়ন শিল্প কেন্দ্র গুলি হল—
মহারাষ্ট্র: ট্রম্বে, থানে, চেম্বুর, নাগোথেন প্রকৃতি।
গুজরাট: জামনগর, হাজিরা, কয়ালি, ভাদোদরা, দাহেজ, গান্ধার প্রভৃতি।
পশ্চিম ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতির কারণ গুলি হল—
(1) কাঁচামালের প্রাচুর্য : পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল (ন্যাপথা প্রোপেন বিউটেন বেনজিন প্রভৃতি) গুলির উৎস হল খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস। গুজরাটের আঙ্কেলেশ্বর, কাম্বে, নুনেজ, আমেদাবাদ ও কোসাম্বা এবং মহারাষ্ট্রের বোম্বে হাই, দমন দরিয়া, গান্ধার ও রত্না প্রভৃতি তৈলখনি ও গুজরাটে সুরাটের প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি এই অঞ্চলের পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামালের উৎস।
(2) তৈল শোধনাগার : মহারাষ্ট্রের ট্রম্বেতে দুটি এবং গুজরাটের জামনগর, কয়ালি তৈল শোধনাগার থেকে প্রাপ্ত উপজাত দ্রব্য সহজে কাঁচামাল হিসেবে পাওয়া যায়।
(3) বন্দরের সুবিধা : মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, নবসেবা ও গুজরাটের কান্ডালা, সুরাট বন্দর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, ইরান ও সৌদি আরব থেকে অপরিশোধিত খনিজ তেল ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ফ্রান্স থেকে উন্নত যন্ত্রপাতি আমদানি এবং উৎপন্ন পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করার সুবিধা রয়েছে।
(4) বিদ্যুতের সরবরাহ : এই শিল্পের বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র গুলি হল—
তাপবিদ্যুৎ : ট্রম্বে, আমেদাবাদ, ধুবারন প্রভৃতি।
জলবিদ্যুৎ : উকাই, কয়না, ভিরা প্রভৃতি।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ : তারাপুর, কাকরাপাড়া
ও কোটা প্রভৃতি।
(5) উন্নত পরিকাঠামো : মহারাষ্ট্র ও গুজরাট ভারতের প্রধান শিল্পোন্নত রাজ্য হওয়ায় পেট্রোরসায়ন শিল্প বিকাশের জন্য উন্নত পরিকাঠামো রয়েছে।
(6) পর্যাপ্ত জলসম্পদ : নর্মদা তাপ্তি সবরমতী মাহি প্রভৃতির নদী ও বিভিন্ন জলাধারা এবং ভূগর্ভস্থ জলের বিপুল যোগান রয়েছে।
(7) উন্নত পরিবহন : পশ্চিম ও মধ্য রেলওয়ে এবং 3, 4, 5, 6, 7,15,17 প্রভৃতির জাতীয় সড়কের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে পেট্রোরসায়ন শিল্প কেন্দ্র গলি থেকে উৎপন্ন পণ্য সহজে পরিবহন করা যায়।
(8) সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক : ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে ঘনবসতি এবং কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষা কেন্দ্র গুলি থাকায় সুদক্ষ শ্রমিক সহজে পাওয়া যায়।
(9) উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা : মহারাষ্ট্র গুজরাট কারিগরি ও প্রযুক্তি বিদ্যায় উন্নত হওয়ায় উচ্চ প্রযুক্তির অত্যাধুনিক পেট্রোরসায়ন শিল্প স্থাপনে সুবিধা হয়।
(10) মূলধনের জোগান : রিলায়েন্স, মফতলাল ও বম্বে ডাইং প্রকৃতির মত বৃহৎ শিল্প গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার এই শিল্পে অর্থলগ্নি করেছে। মুম্বাই ভারতের মূলধনের রাজধানী হওয়ায় বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা সংস্থা ও অর্থলগ্নিকারী সংস্থা থেকে শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
(11) সরকারি নীতি : গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের সরকারের অনুকূল শিল্প, শুল্ক, বাণিজ্য নীতি এবং শিল্প স্থাপনের জন্য উৎসাহ প্রদান করায় শিল্পটির দ্রুত প্রসার ঘটেছে।
(12) বিপুল চাহিদা : পশ্চিম ভারত জনবহুল ও সমৃদ্ধ বাজার সম্পন্ন হওয়ায় বস্ত্র, প্লাস্টিক, রং, ওষুধ, রাবার, সার, মোটরগাড়ি ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকৃতি অনুসারে শিল্পে পেট্রোরসায়ন শিল্পজাত দ্রব্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে।
উপরিউক্ত কারণ গুলির জন্য পশ্চিম ভারতে মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ট্রম্বে, থানে, ভাদোদরা, কয়ালি ও জামনগরকে কেন্দ্র করে পেট্রোরসায়ন শিল্পের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে।
৫.২.৪ ভারতের জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের পাঁচটি কারণ আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভারতে জনসংখ্যার প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল অসম বণ্টন। দেখা গেছে, ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় 50% (প্রায় 61 কোটি) বাস করে সমভূমিতে (মোট ভূমির প্রায় 23%)। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে জনসংখ্যার বণ্টন যেমন কম, তেমন মালভূমি অঞ্চলে বণ্টন মাঝারি। জনসংখ্যা বণ্টনের তারতম্যের কারণগুলিকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে—(ক) প্রাকৃতিক কারণ, (খ) অপ্রাকৃতিক বা সাংস্কৃতিক কারণ।
(ক) প্রাকৃতিক কারণ (Physical Factors) :
ভূ-প্রকৃতি, নদনদী, জলবায়ু, উদ্ভিদ, মৃত্তিকা, ভৌমজল, ভৌগোলিক অবস্থান প্রভৃতি জনসংখ্যা বণ্টনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
(i) ভূ-প্রকৃতি : ভূ-প্রকৃতি ভারতে জনসংখ্যা বণ্টনের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। ভূমির উচ্চতা, ঢাল, বন্ধুরতা, জলমগ্ন জলাভূমি প্রভৃতি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে জনবসতি গড়ে ওঠে। সিন্ধু, গঙ্গা ও উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল সমতল হওয়ায় কৃষি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্পে উন্নত; তাই জনসংখ্যা খুব বেশি। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল উঁচু, বন্ধুর এবং ঢাল বেশি হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্প প্রভৃতি গড়ে উঠতে পারেনি, কৃষিকাজ কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল; তাই, জনসংখ্যা এখানে খুবই কম। তবে হিমালয়ের কয়েকটি বিশেষ স্থানে (দার্জিলিং, গ্যাংটক, সিমলা, মুসৌরি প্রভৃতি) প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক দৃশ্যের কারণে পর্যটন শিল্পে উন্নত হওয়ায় জনসংখ্যা বেশি। মালভূমি অঞ্চলগুলিতে ভূমির ঢাল ও উচ্চতা মধ্যম প্রকার। ফলে জনবণ্টন মাঝারি। তবে, মালভূমির কয়েকটি স্থানে প্রচুর খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়। খনিজের ওপর ভিত্তি করে এখানে শিল্প গড়ে ওঠায় জনসংখ্যা বেশ বেশি।
(ii) নদনদী : ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনে নদনদী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি নদী অববাহিকা উর্বর হওয়ায় জনসংখ্যা বেশি। প্রত্যক্ষভাবে নদীর মাধ্যমে জলসেচ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। নদী—যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হওয়ায় নদী-উপত্যকায় শিল্পের বিকাশ ঘটেছে তাই নদী অববাহিকাগুলি জনাকীর্ণ। প্রাচীনকালে অধিকাংশ সভ্যতার বিকাশ নদী অববাহিকাতেই গড়ে উঠেছে।
(iii) জলবায়ু : জলবায়ু ও মানুষের ওপর জলবায়ুর প্রভাব অপরিসীম। তাই জনসংখ্যার স্থানীয় বর্ণীন উচ্চতা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, আল্লকা, শীতের প্রকোপ প্রভৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। উপকূপের জলবায়ু সারা বছর মনোরম বলে জনসংখ্যা বেশি। উন্নৎ-পূর্ব পায়াতি রাজগুলোতে জলবায়ু স্যাঁতসেঁতে বলে জনসংখ্যা কম। আবার উচ্চ হিমালয় পার্বত্য অবলে অত্যধিক শৈতা এবং এর মর অঞ্চলে অভ্যধিক গরম ও বৃষ্টির কারণে স্থানগুলি জনবিরল। জলবায়ুর প্রধান উপাদান – বৃষ্টিপাত, জনসংখ্যাতে প্টেনকে সর্বাচিক নিয়ন্ত্রণ করে। তাই হয় The Population May of India follows the rainfal map কারণ, বৃষ্টি হলে কৃষিতে পর্যাপ্ত জল শুওয়া যায়।
(iv) মৃত্তিকাঃ মাটির গুণাগুণের ওপর জনজীবন নির্ভর করে। মাটির গঠন ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্য ঘটায়। গলঙ্গা সমভূমি ও উপকূলীয় সমভূমির মুক্তিকা অত্যন্ত উত্তর বলে জনঘনত্ব বেশি। আবার, মালভূমি হওয়া সত্ত্বেও উরে বেগুন মুক্তিকার কারণে ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চল বেশ জনাকীর্ণ। ছোটোনাগপুরের ল্যাটেরাইট, দক্ষিণ ভারতে লাল মাটি এবং হিমালয অনুর্বর হওয়ায় জনসংখ্যা কম।
(v) জলাশয়ঃ জলাশয় ও ভৌমজল নিকাশি ব্যবস্থা, ভৌমজল স্তরের গভীরতা ও প্রাপ্তি, জলাভূমির অবস্থান প্রভৃতি গ্রাম্য জনসংখ্যার বণ্টনকে প্রভাবিত করে। এর মরুভূমির জন্যটন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জলাভূমির অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল। বন্যা অঞ্চলগুলিতে, যেখানে জলনিকাশি ব্যবস্থা উন্নত, সেখানে প্রচুর মানুষ বসবাস করে। সমভূমি অঞ্চলের মধ্যে যেখানে ভৌমজল স্তরের গভীরতা কম, সেখানে কৃষিকাজ উন্নত বলে জনসংখ্যাও বেশি।
(vi) বনভূমি : উত্তর-পূর্বের পার্বত্য অঞ্চল, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের গভীর বনভূমি—বসবাসের প্রতিকূল পরিবেশ হওয়ায় জনসংখ্যা কম। তবে, বনভূমি সীমান্ত অঞ্চলে বনজ সম্পদ (কাঠ, মg, লতাপাতা সংগ্রহের কারণে জনবসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়।
(খ) অর্থনৈতিক কারণ (Economic Factors)—
প্রাকৃতিক কারণগুলির সাথে সাথে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণ জনসংখ্যা বন্টনে সমান ভূমিকা গ্রহণ করে।
(i) খনিজ সম্পদঃ নিজ উত্তোলক অঞ্চলে কাজের সুযোগের সম্ভাবনা বাড়তে থাকে, ফলে ধীরে ধীরে বসতি গড়ে ওঠে। ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল ভারতের খনিজভাণ্ডার হওয়ায় এখানে বহু মানুষের বাস। একই কারণে, বাইলাভিলা, সালেম প্রভৃতি অতি অল জনাকীর্ণ।
(ii) শিল্পঃ শিল্পের উন্নতিতে কাজের সুযোগ বাড়ে। ফলে, বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষাবলে বসবাস শুরু করে। তাই, শিল্পালগুলিতে জনসংখ্যা অত্যধিক বেশি হয়। পশ্চিমবঙ্কোনা হুগলি নদীর উভয় তীরে হলদিয়া, দুর্গাপুর, আসানসোল, মুম্বাই, পুনে, গুজরাট এই কারণেই অতি
(iii) কৃষি ও পশু পালন : ভারতে গ্রামীণ জনসংখ্যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছে। উর্বর মৃত্তিকা ও সমতল ভূমিভাগের কারণে গঙ্গা সমভূমি ও উপকূলীয় সমভূমিতে জনাধিক্য দেখা যায়। সমভূমিতে যেখানে জলসেচ ব্যবস্থা উন্নত, সেখানে নিবিড় পদ্ধতিতে বছরে একাধিকবার ফসল উৎপাদন হয় বলে ধন জনবণ্টন দেখা যায়। গুজরাটের। উত্তর অংশ অনুর্বর হলেও পশুপালনের কারণে বেশি লোক বাস করে।
(iv) যোগাযোগ ব্যবস্থা : যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও জনসংখ্যার কটন সর্বদাই সমানুপাতিক। সমভূমি অঞ্চলে জালের মতো। সড়কপথ, রেলপথ বিস্তৃত বলেই অতি জনাকীর্ণ। আবার যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নতির কারণেই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল কম।
(গ) সামাজিক ও অন্যান্য কারণ—
(i) শহরায়ন : শহরায়ণের প্রভাবে জনসংখ্যা ক্রমশ বাড়ে। শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব সর্বদা বেশি। তাই বৃহত্তর মুম্বাই, কলকাতা, হায়দ্রাবাদ প্রভৃতি স্থানে জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 6000 জন অপেক্ষা বেশি।
(ii) জীবিকার সুযোগ : উর্বর শস্যশ্যামল ভূমি, শিল্পাঞ্চল, শহর প্রভৃতি মানুষের প্রাথমিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান) সহজে সেটার বলে উর্বর অঞ্চল, শহর ও নগরের দিকে মানুষের আগমন (Migration) ঘটে।
(iii) শিক্ষাকেন্দ্র : শিক্ষাকেন্দ্রগুলিতে দেশবিদেশ থেকে শিক্ষার্থী আসে, ফলে, জনসংখ্যা বাড়তে থাকে। শান্তিনিকেতন, বারাণসী নে এই কারণেই জনসংখ্যা বেশি।
(iv) তীর্থস্থানে : পুরী, কাশী, মথুরা প্রভৃতি তীর্থস্থানে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন হয়। ফলে দোকান, বাজার গড়ে ওঠে এবং মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
(ঘ) রাজনৈতিক কারণ ও সরকারি নীতি : রাজনৈতিক পরিবেশ, সরকারি ও বেসরকারি নীতি— জনসংখ্যা বিন্যাসের তারতম্য ঘটায়। 1947 সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার কারণেই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জনসংখ্যার আধিক্য ঘটে। সরকার পরিকল্পনার মাধ্যমে উপনগরী গড়ে তুললে (যেমন—সল্টলেক, রাজারহাট) জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
ঐতিহাসিক স্থান : ঐতিহাসিক যুগের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি (আগ্রা, পাটনা, মহিশুর প্রভৃতি)-তে স্বাভাবিক কারণেই জনসংখ্যার পুনর্বিন্যাস ঘটে।
এছাড়াও পর্যটন ব্যবস্থা, জনসাংখ্যিক কারণ (Demographic factors) যেমন—জন্মহার মৃত্যুহার, পরিব্রাজন,প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি জনসংখ্যা বণ্টনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
তবে, ভারতে জনসংখ্যা বণ্টনে কোনো একটি বিশেষ উপাদানের পরিবর্তে সম্মিলিতভাবে উপাদানগুলির কার্যকারিতার প্রভাব দেখা যায়।
বিভাগ – ‘চ’
৬. প্রশ্নপত্রের সাথে প্রদত্ত ভারতের রেখা-মানচিত্রে নিম্নলিখিতগুলি উপযুক্ত প্রতীক ও নামসহ চিহ্নিত করে মানচিত্রটি উত্তরপত্রের সঙ্গে জুড়ে দাও : ১x১০=১০
৬.১ নীলগিরি পর্বত;
৬.২ তাপ্তি নদী;
৬.৩ বছরে দু-বার বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চল;
৬.৪ পূর্ব ভারতের একটি ল্যাটেরাইট মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চল;
৬.৫ পশ্চিম ভারতের একটি মিলেট উৎপাদক অঞ্চল;
৬.৬ ভারতের বৃহত্তম পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র;
৬.৭ ভারতের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল;
৬.৮ ভারতের হাইটেক বন্দর;
৬.৯ পূর্বভারতের একটি মহানগর;
৬.১০ দক্ষিণ ভারতের একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ।
📌 আরও দেখুনঃ
» Madhyamik Geography Q.P 2024
» Madhyamik Geography Q.P 2023
» Madhyamik Geography Q.P 2022
» Madhyamik Geography Q.P 2020
» Madhyamik Geography Q.P 2019
» Madhyamik Geography Q.P 2018
» Madhyamik Geography Q.P 2017
📌 আরও দেখুনঃ
» মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ইংরেজি পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ইতিহাস পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ভূগোল পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান
» মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান
» দশম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র
» মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫
» মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের MCQ মক টেস্ট
But, there is no option for download or copy your content!
আমার আর্টিকেল যাতে চুরি না হয়ে যায় সেজন্য কপি করা যাবে না। পিডিএফ এর জন্য আলাদা করে পরিশ্রম করে লিংক দিতে হয়। আমি অত সময় দিতে পারছি না।