WBBSE Madhyamik History Solved Question Paper 2018 | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র 2018 উত্তরসহ

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

MADHYAMIK HISTORY QUESTION PAPER 2018

WBBSE Madhyamik History Solved Question Paper 2018 | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র 2018 উত্তরসহ

2018 History Question Paper with answers for Madhyamik students of West Bengal Board of Secondary Education. Question and Answers of the question paper are given below.
মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীন মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২০১৮ সালের উত্তরসহ ইতিহাস বিষয়ের প্রশ্নপত্র।

📌 মাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper CLICK HERE

2018
HISTORY
Time 3 Hours 15 Minutes
( First 15 minutes for reading the question paper only )

Full Marks – 90 For Regular Candidates
Full Marks – 100 For External Candidates

Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.

[ ‘ক’ বিভাগ থেকে ‘ঙ’ বিভাগ পর্যন্ত প্রদত্ত প্রশ্ন নিয়মিত ও বহিরাগত সব পরীক্ষার্থীদের জন্য। ‘চ’ বিভাগে প্রদত্ত প্রশ্ন শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য ]

( ‘ক’ বিভাগে সকল প্রশ্ন আবশ্যিক। অন্য বিভাগে বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়। ‘খ’ বিভাগে কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা বিকল্প প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তর লিখবে অন্য সকলে মানচিত্র চিহ্নিত করবে। )

বিভাগ – ‘ক’

১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো : ২০x১ =২০

১.১ ‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থটি হল একটি—
(ক) উপন্যাস (খ) কাব্যগ্রন্থ (গ) জীবনীগ্রন্থ
(ঘ) আত্মজীবনী

উত্তরঃ (ঘ) আত্মজীবনী।

১.২ ‘সোমপ্রকাশ’ ছিল একটি—
(ক) দৈনিক পত্রিকা (খ) সাপ্তাহিক পত্রিকা
(গ) পাক্ষিক পত্রিকা (ঘ) মাসিক পত্রিকা

উত্তরঃ (খ) সাপ্তাহিক পত্রিকা।

১.৩ ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদের প্রকাশক ছিলেন—
(ক) কালীপ্রসন্ন সিংহ
(খ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
(গ) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
(ঘ) রেভাঃ জেমস লং

উত্তরঃ (ঘ) রেভাঃ জেমস লং

১.৪ সতীদাহ প্রথা রদ হয়—
(ক) ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ (খ) ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে।

১.৫ সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করেছিলেন—
(ক) বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী
(খ) স্বামী বিবেকানন্দ
(গ) শ্রীরামকৃষ্ণ
(ঘ) কেশব চন্দ্র সেন

উত্তরঃ (গ) শ্রীরামকৃষ্ণ।

১.৬ কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩২) অনুষ্ঠিত হয়েছিল —
(ক) মেদিনীপুরে (খ) ঝাড়গ্রামে
(গ) ছোটোনাগপুরে (ঘ) রাঁচিতে

উত্তরঃ (ঘ) রাঁচিতে।

১.৭ ভারতে প্রথম অরণ্য আইন পাশ হয়—
(ক) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ (গ) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে।

১.৮ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলেছেন—
(ক) রমেশচন্দ্র মজুমদার
(খ) সুরেন্দ্রনাথ সেন
(গ) বিনায়ক দামোদর সাভারকার
(ঘ) দাদাভাই নৌরজি

উত্তরঃ (গ) বিনায়ক দামোদর সাভারকার।

১.৯ ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান ঘটে—
(ক) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ (খ) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।

১.১০ ভারত সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন—
(ক) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(খ) আনন্দমোহন বসু
(গ) রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
(ঘ) শিবনাথ শাস্ত্রী

উত্তরঃ (গ) রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।

১.১১ বাংলা ভাষায় প্রথম ছাপা বই হল—
(ক) বর্ণপরিচয়
(খ) আ গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গোয়েজ
(গ) মঙ্গল সমাচার মতিয়ের
(ঘ) অন্নদামঙ্গল

উত্তরঃ (খ) আ গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গোয়েজ।

১.১২ ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’ -এর যে বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন—
(ক) জগদীশচন্দ্র বসু (খ) সি.ভি. রমন
(গ) প্রফুল্লচন্দ্র রায় (ঘ) সত্যেন্দ্রনাথ বসু

উত্তরঃ (খ) সি.ভি. রমন।

১.১৩ বয়কট আন্দোলনের ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল—
(ক) বাংলার কৃষক শ্রেণি (খ) মধ্যবিত্ত শ্রেণি
(গ) জমিদার শ্রেণি (ঘ) ছাত্রসমাজ

উত্তরঃ (ক) বাংলার কৃষক শ্রেণি।

১.১৪ বাবা রামচন্দ্র কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন—
(ক) বিহারে (খ) যুক্তপ্রদেশে (গ) রাজস্থানে
(ঘ) মহারাষ্ট্রে

উত্তরঃ (খ) যুক্তপ্রদেশে।

১.১৫ রম্পা উপজাতীয় বিদ্রোহ সংঘটিত হয়—
(ক) মালাবার অঞ্চলে
(খ) কোঙ্কন উপকূলে
(গ) উড়িষ্যায়
(ঘ) গোদাবরী উপত্যকায়

উত্তরঃ (ঘ) গোদাবরী উপত্যকায়।

১.১৬ ‘নারী কর্ম মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—
(ক) উর্মিলা দেবী (খ) বাসন্তী দেবী
(গ) কল্পনা দত্ত (ঘ) লীলা রায় (নাগ)

উত্তরঃ (ক) উর্মিলা দেবী।

১.১৭ সূর্য সেন প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবীদলের নাম ছিল—
(ক) অনুশীলন সমিতি
(খ) গদর দল
(গ) ইন্ডিয়ান রিপাবলিক্যান আর্মি
(ঘ) বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স

উত্তরঃ (গ) ইন্ডিয়ান রিপাবলিক্যান আর্মি।

১.১৮ দলিতদের ‘হরিজন’ আখ্যা দিয়েছিলেন—
(ক) জ্যোতিবা ফুলে (খ) নারায়ণ গুরু
(গ) গান্ধিজি (ঘ) ড. আম্বেদকর

উত্তরঃ (গ) গান্ধিজি।

১.১৯ স্বতন্ত্র ভাষাভিত্তিক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয় —
(ক) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ (গ) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

১.২০ গোয়া ভারতভুক্ত হয়—
(ক) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে (খ) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে
(গ) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে (ঘ) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ (গ) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে।

বিভাগ – ‘খ’

২. যে-কোনো ষোলোটি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্তত একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে) : ১৬x১=১৬

উপবিভাগ : ২.১

একটি বাক্যে উত্তর দাও :

২.১.১ ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি কোন ঐতিহাসিক ঘটনার পটভূমিকায় অঙ্কিত ?

উত্তরঃ বঙ্গভঙ্গ – বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের।

২.১.২ নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (১৯২০) কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়‌ ?

উত্তরঃ বোম্বাই – এ।

২.১.৩ ফরওয়ার্ড ব্লক কোন বছর প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তরঃ ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে।

২.১.৪ মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে ?

উত্তরঃ হরিচাঁদ ঠাকুর।

উপবিভাগ : ২.২

ঠিক বা ভুল নির্ণয় করো :

২.২.১ মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালিকে নৃত্যের বিষয়ে আগ্রহী করে তুলেছিলেন উদয়শংকর।

উত্তরঃ ঠিক।

২.২.২ ভারতসভা ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেছিলেন।

উত্তরঃ মিথ্যা।

২.২.৩ ফরাজি একটি প্রাচীন উপজাতির নাম।

উত্তরঃ মিথ্যা।

২.২.৪ বাংলায় লাইনো টাইপ প্রবর্তন করেন বিদ্যাসাগর।

উত্তরঃ মিথ্যা।

উপবিভাগ : ২.৩

ক-স্তম্ভ খ-স্তম্ভ
২.৩.১ জহরলাল নেহেরু (১) অসহযোগ আন্দোলন
২.৩.২ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল (২) পুনা চুক্তি (১৯৩২)
২.৩.৩ কালীপ্রসন্ন সিংহ (৩) ‘লেটার্স ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার’
২.৩.৪ ড. আম্বেদকর (৪) হুতুম পেঁচার নকশা

উত্তরঃ

২.৩.১ জহরলাল নেহেরু – (৩) ‘লেটার্স ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার’
২.৩.২ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল – (১) অসহযোগ আন্দোলন
২.৩.৩ কালীপ্রসন্ন সিংহ – (৪) হুতুম পেঁচার নকশা
২.৩.৪ ড. আম্বেদকর – (২) পুনা চুক্তি (১৯৩২)

উপবিভাগ : ২.৪

প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখামানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত করো ও নাম লেখো :
২.৪.১ চুয়াড় বিদ্রোহের এলাকা,
২.৪.২ মুন্ডা বিদ্রোহের এলাকা,
২.৪.৩ মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) কেন্দ্র ঝাঁসি,
২.৪.৪ দেশীয় রাজ্য জুনাগড়

অথবা,

(কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য)

শূন্যস্থান পূরণ করো:

২.৪.১ ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল __________ খ্রিস্টাব্দে।

উত্তরঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে‌।

২.৪.২ __________ ছিলেন বারাসাত বিদ্রোহের নেতা।

উত্তরঃ তিতুমির।

২.৪.৩ প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন _________ শাস্ত্রের অধ্যাপক।

উত্তরঃ রসায়ন।

২.৪.৪ ‘মাস্টারদা’ বলা হত ­­­­­________ কে।

উত্তরঃ সূর্য সেন।

উপবিভাগ : ২.৫

নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যাটি নির্বাচন করো :

২.৫.১ বিবৃতি : উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের ব্যাপ্তি ছিল খুবই সীমিত।

ব্যাখ্যা ১ : কারণ শুধুমাত্র গ্রামবাংলায় নবজাগরণ হয়েছিল।

ব্যাখ্যা ২ : কারণ এই নবজাগরণ সীমিত ছিল শুধুমাত্র সাহিত্যের ক্ষেত্রে।

ব্যাখ্যা ৩ : কারণ এই নবজাগরণ শুধুমাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রগতিশীল সমাজের মধ্যে সীমিত ছিল।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : কারণ এই নবজাগরণ শুধুমাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রগতিশীল সমাজের মধ্যে সীমিত ছিল।

২.৫.২ বিবৃতি : ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার ‘তিন আইন’ পাস করে।

ব্যাখ্যা ১ : এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলমান-খ্রীষ্টান সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা।

ব্যাখ্যা ২ : এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নতি সাধন করা।

ব্যাখ্যা ৩ : এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা এবং বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ করা।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা এবং বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ করা।

২.৫.৩ বিবৃতি : রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা পছন্দ করতেন না।

ব্যাখ্যা ১ : কারণ, এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল ব্যয়সাপেক্ষ।

ব্যাখ্যা ২ : কারণ, এই শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যম ছিল মাতৃভাষা।

ব্যাখ্যা ৩ : কারণ, এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মনের বিকাশ ঘটাত না।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : কারণ, এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মনের বিকাশ ঘটাত না।

২.৫.৪ বিবৃতি : সরলা দেবী চৌধুরানি লক্ষীর ভান্ডার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ব্যাখ্যা ১ : বিদেশি পণ্য বিক্রির জন্য।

ব্যাখ্যা ২ : আন্দোলনকারী মহিলাদের সাহায্যের জন্য।

ব্যাখ্যা ৩ : স্বদেশী পণ্য বিক্রির জন্য।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : স্বদেশী পণ্য বিক্রির জন্য।

বিভাগ – ‘গ’

৩. দুটি অথবা তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে-কোনো ১১টি): ১১x২ =২২

৩.১ পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব হল মানবসভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে পরিবেশের ভূমিকা চিহ্নিত করে পরিবেশ সচেতনতা ও পরিবেশ সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। পরিবেশের সংকটজনক পরিস্থিতি, পরিবেশ বিপর্যয় এবং তার ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করা। সর্বোপরি, বাসস্থানের ওপর পরিবেশগত গুরুত্ব আরোপ করা।

৩.২ স্মৃতিকথা অথবা আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদানরূপে ব্যবহার করা হয় ?

উত্তরঃ স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী থেকে অনেক সময় সমকালীন সময়ের রাজনৈতিক ঘটনাবলির কথা জানা যায় ৷ আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে৷ আত্মজীবনীতে উল্লিখিত সমকালীন আর্থসামাজিক ঘটনাবলিও ইতিহাস রচনায় ব্যবহৃত হতে পারে। আত্মজীবনীতে উল্লিখিত লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধিগুলি ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজে লাগতে পারে।

৩.৩ ‘মেকলে মিনিট’ কী ?

উত্তরঃ জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২ ফেব্রুয়ারি বড়োলাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের কাছে একটি প্রস্তাব রাখেন, যা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত। এই প্রস্তাবে মেকলে বলেন যে, প্রাচ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা খুবই পশ্চাৎপদ। এজন্য এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়া উচিত।

৩.৪ সমাজ সংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা কী ছিল ?

উত্তরঃ ডিরোজিওর অনুগামীরা নব্যবঙ্গ নামে পরিচিত। হিন্দু সমাজের পৌত্তলিকতা, জাতিভেদপ্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, সতীদাহ প্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে এবং নারীশিক্ষা, নারীস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতির সপক্ষে নব্যবঙ্গরা আন্দোলন চালায়। তারা সমাজে যুক্তিবাদেরও প্রসার ঘটায়।

৩.৫ দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন ?

উত্তরঃ দুদু মিঞা ছিলেন বাংলার ফরাজি আন্দোলনের প্রধান প্রবর্তক, শরিয়ত উল্লাহর পুত্র এবং ফরাজি আন্দোলনের নেতা। তাঁর নেতৃত্বে ঊনবিংশ শতকে ফরাজি আন্দোলন ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক আন্দোলনের রূপ নেয়।

৩.৬ নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা কীরূপ ছিল ?

উত্তরঃ হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক। তিনি তাঁর পত্রিকায় বাংলার চাষিদের ওপর নীলকরদের অত্যাচারের বিবরণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি দরিদ্র নীলচাষিদের নানাভাবে সহায়তা করেন।

৩.৭ ‘মহারানীর ঘোষণাপত্র’ -এর (১৮৫৮) মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তরঃ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে মহারানির ঘোষণার এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটান এবং ভারতীয়দের নিজ শাসনাধীনে এনে তাদের বিভিন্ন সুযোগসুবিধা দান। তবে এই সবই ছিল রাজনৈতিক চমক মাত্র। এর ফলে ভারতীয়রা প্রকৃতভাবে লাভবান হয় নি।

৩.৮ ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয় ?

উত্তরঃ পরাধীন ভারতে প্রচলিত সামাজিক কুপ্রথা সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করা এবং তাৎকালীন রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক ত্রুটিগুলি জনসমক্ষে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গচিত্র আঁকা হয়।

৩.৯ বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা কী ছিল ?

উত্তরঃ বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার ছাপাখানার হরফ নির্মাণের অন্যতম রূপকার। তিনি বাংলা ছাপাখানায় সচল ধাতু হরফের প্রচলন করেছিলেন।

৩.১০ বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী ?

উত্তরঃ বাংলায় মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই প্রকাশনীতে কম খরচে বেশি বই ছাপা হত। এখানে হ্যান্ডমেড পেপারের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। ফলে স্বদেশি কারিগরির মুনশিয়ানা ফুটে ওঠে। তাছাড়া পুঁথি, পাঁচালী এবং অনুবাদ সাহিত্যের প্রকাশনার প্রসার ঘটে।

৩.১১ ‘একা’ আন্দোলন শুরু হয় কেন ?

উত্তরঃ কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর বৃদ্ধি, কর আদায়ে সীমাহীন অত্যাচার, প্রভুর জমি ও খামারে কৃষকদের বিনা বেতনে বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা প্রভৃতি কারণে যুক্তপ্রদেশের কৃষকরা একা আন্দোলন শুরু করেছিল।

৩.১২ বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন কেন শুরু হয় ?

উত্তরঃ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভয়ানক বন্যায় গুজরাটের বারদৌলি তালুকে কৃষকদের ফসল নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সরকার সেখানকার কৃষকদের ওপর রাজস্বের হার ৩০ শতাংশ (পরে কমিয়ে ২২ শতাংশ) বাড়িয়ে দেয়। তাই কৃষকরা খাজনা বন্ধের দাবি তোলে এবং ভূমিরাজস্ব কমানোর দাবিতে বারদৌলির কৃষকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে।

৩.১৩ অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠা হয় ?

উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা রদ করার জন্য কার্লাইল সার্কুলার, লায়ন সার্কুলার প্রভৃতি জারি করে। এর প্রতিবাদী প্রচেষ্টারূপে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

৩.১৪ দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তরঃ দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল নারীশিক্ষার প্রসার সাধন এবং বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য নারীদের প্রস্তুত করা।

৩.১৫ কী পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন ?

উত্তরঃ কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারত অথবা পাকিস্তানে যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাক মদতপুষ্ট হানাদাররা কাশ্মীর আক্রমণ করলে হরি সিং ভারতের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন। ভারত সরকার সামরিক সাহায্য করলে হরি সিং ভারতের সঙ্গে যোগ দেন এবং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন।

৩.১৬ রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) কেন গঠিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ প্রধানত দুটি উদ্দেশ্যে ফজল আলির নেতৃত্বে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়। যেমন– (১) রাজ্য পুনর্গঠন করা হবে কি না বা হলেও এর ভিত্তি কী হবে তা ঠিক করা। (২) রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন এবং ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করা।

বিভাগ – ‘ঘ’

৪. সাত-আটটি বাক্যে যে-কোনো ছ-টি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৬x৪=২৪

(প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্তত একটি করে প্রশ্নের উত্তর দাও)

উপবিভাগ : ঘ.১

৪.১ ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজচিত্র পাওয়া যায় ?

উত্তরঃ ঊনিশ শতকের কলকাতা, কলকাতা তথা বাংলার তৎকালীন সমাজ এবং বাঙালিয়ানা— এই তিনটি বিষয় কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’-য় ব্যঙ্গাত্মক ও তির্যক ভঙ্গিমায় ফুটে উঠেছে।

(i) ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ গ্রন্থটির প্রথম ভাগ ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে ও দ্বিতীয় ভাগ ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে এবং সর্বোপরি ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয়।

(ii) গ্রন্থটির একদিকে চড়কপার্বণ, রথযাত্রা, দুর্গাপূজা, বারোয়ারি পূজা-পার্বণ যেমন স্থান পেয়েছে তেমনি আবার কলকাতার বাবু সমাজের ভণ্ডামি বেপরোয়া জীবনের অন্ধকার দিক, ক্রিশ্চানি হুজুগ, মিউটিনি, লঙ সাহেব, লখনউ -এর বাদশাহ -এর কথাও এতে উঠে এসেছে।

(iii) কালীপ্রসন্ন সিংহ একদিকে ইংরেজি জানা নব্য বাবু ও অন্যদিকে গোঁড়া হিন্দু সমাজ উভয়ের জীবনের স্ববিরোধীতাকে তুলে ধরেছিলেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা প্রগতিশীলতা অপেক্ষা ধর্মীয় গোঁড়ামিকে অধিকমাত্রায় প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তৎকালীন সমাজকে বিশ্লেষণ করেন এবং বাবু সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করে তৎকালীন শিক্ষিত বাঙালি সমাজকে সচেতন করতে তাঁর সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

(iv) কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর ‘হুতুম প্যাঁচার নকশা’ -য় সমসাময়িক সমাজ ও কলকাতার ভোগবাদী নাগরিক জীবনের তীব্র সমালোচনা করলেও শালীনতার গণ্ডী কখনোই অতিক্রম করেনি। লেখকের রসবোধ, সাহিত্যগুণ এবং সমাজ সচেতনতাবোধ ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ -কে কালোর্ত্তীর্ণ করেছে। ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ -কে উনিশ শতকের ইতিহাসে তৎকালীন সমাজচিত্রের একটি জীবন্ত দলিল বলা যায়।

৪.২ এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

উত্তরঃ ভারতের সনাতনী চিকিৎসা বিদ্যার বিপ্রতীপে আধুনিক ও পাশ্চাত্য অভিমুখী চিকিৎসা বিদ্যার অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার জন্য ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্বয়ং বেন্টিঙ্ক সাহেব এবং ভূমি দান করেন মতিলাল শীল।

• কলকাতা মেডিকেল কলেজ হল এশিয়ার দ্বিতীয় কলেজ যেখানে আধুনিক ইউরোপীয় চিকিৎসা বিদ্যা শেখানো হত। কলকাতা মেডিকেল কলেজে আধুনিক শল্য চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা ও রূপায়নে উদ্যোগী হন এর প্রথম সুপারিনটেনডেন্ট এম. জে. ব্রামলি।

• কলকাতা মেডিকেল কলেজে শব ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্রের জয়যাত্রার সূচনা করেছিলেন মধুসূদন গুপ্ত ও তাঁর সহযোগীরা।

• কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বার সকল বর্ণের ছাত্রদের জন্য এমনকি মেয়েদের জন্যও উন্মুক্ত ছিল। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ছিলেন প্রথম মহিলা চিকিৎসক এবং পরবর্তীকালে ভার্জিনিয়া মেরী মিত্র ও বিধুমুখী বসু এখান থেকেই যোগ্যতার সঙ্গে চিকিৎসা বিদ্যায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা মেডিকেল কলেজ বাংলা তথা ভারতের চিকিৎসা বিদ্যার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করে।

উপবিভাগ : ঘ.২

৪.৩ কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

উত্তরঃ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ভারতে পরপর দুটি অরণ্য আইন প্রণয়ন করে, একটি ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে এবং আরেকটি ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। এই দুই আইনেরই মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক স্বার্থ রক্ষা করা এবং ভারতের বনভূমির ওপর আধিপত্য স্থাপন করা।

(i) কাঠ সংগ্রহঃ উনিশ শতকের শেষদিকে ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর সম্প্রসারণের জন্য প্রচুর কাঠের প্রয়োয়জন দেখা যায়; পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য রেলপথ নির্মাণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার জন্য প্রচুর কাঠের তক্তার প্রয়োজন পড়ে। এইসব প্রয়োজনের নিরিখে অরণ্য সম্পদের ওপর অধিকার কায়েমের জন্য ঔপনিবেশিক সরকার ‘অরণ্য আইন’ পাশ করেছিল।

(ii) বনাঞ্চল পরিষ্কারঃ অরণ্য আইন পাশের পেছনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল, ভারতের সুবিশাল বনভূমিকে পরিষ্কার করে কৃষিযোগ্য করে তোলা। এছাড়াও বনাঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ঝুম চাষের পরিবর্তে স্থায়ী কৃষিকাজে অভ্যস্থ করে তোলার তাগিদ ছিল।

(iii) রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধিঃ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল নতুন কৃষিজমির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করা ও ভারতের সম্পদ আত্মস্থ করা।

(iv) সরকারের আয় ও ব্যবসাবাণিজ্যের বৃদ্ধিঃ রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বনজ সম্পদকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যয় করে আয় ও মুনাফা বৃদ্ধি করা ছিল ঔপনিবেশিক সরকারের উদ্দেশ্য।

(v) বন সংরক্ষণঃ অরণ্য আইন জারি করার পেছনে ঔপনিবেশিক শক্তির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য যাই থাক না কেন, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই সরকার ভারতের বনাঞ্চলকে সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত অরণ্য এবং গ্রামীণ অরণ্য (অশ্রেণিভুক্ত) – এই তিনটি ভাগে ভাগ করে বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে ঔপনিবেশিক সরকার স্বার্থ ও মুনাফা বজায় রাখতে গিয়ে অরণ্য আইন প্রণয়নের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাধিকার, জীবন ও জীবিকার মূলে কুঠারাঘাত করেছিল যার ফলে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন কৃষক উপজাতি বিদ্রোহ।

উপসংহারঃ উনিশ শতকের শেষদিকের সামাজিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে অরণ্য আইন প্রণয়ন ছিল একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এই আইনের প্রেক্ষিতে বাংলার আদিবাসী কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষ সর্বপ্রথম ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র
প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছি।

৪.৪ ১৮৫৭ – এর মহাবিদ্রোহকে কী সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উত্তরঃ ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

(i) ডঃ সুরেন্দ্রনাথ সেন তাঁর ‘Eighteen Fifty Seven’ গ্রন্থে এবং ডঃ শশীভূষণ চৌধুরী তাঁর ‘Civil Rebellion in the Indian Mutinies, 1857-59’ গ্রন্থে এই বিদ্রোহকে সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের মতে ইংরেজ শাসন ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি সামন্ত প্রভুদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং তাদের ক্ষমতা খর্ব করেছিল। তাদের হাতেই ছিল বিদ্রোহের নেতৃত্ব। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে সামনে রেখে তারা পুরাতন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর পুনঃপ্রবর্তন করতে চেয়েছিল। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে ১৮৫৭ -এর বিদ্রোহ ছিল ক্ষয়িষ্ণু অভিজাততন্ত্র ও মৃতপ্রায় সামন্তশ্রেণির ‘মৃত্যুকালীন আর্তনাদ’।

(ii) অধ্যাপক সুশোভন সরকার উপরোক্ত বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে— নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাঈ, হজরৎ মহল, কুনওয়ার সিং প্রমুখরা সামন্ত জমিদার ও তালুকদার হলেও তারা ছিলেন বিদ্রোহের স্বাভাবিক নেতা। ডঃ সরকার এই বিদ্রোহকে অনেকাংশে জাতীয় বিদ্রোহ হিসাবে দেখার পক্ষপাতী।

(iii) আমরা ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে যেমন সামন্ত শ্রেণির নেতৃত্বদানের বিষয়টিকে অস্বীকার করতে পারি না তেমনি সৈনিক, কৃষক, কারিগর সহ সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান ও ভাবাবেগকেও অগ্রাহ্য করতে পারি না। প্রকৃতপক্ষে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ নানা সুরে বাঁধা ছিল, যেখানে নানা ধরনের প্রতিরোধ নানারূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

উপবিভাগ : ঘ.৩

৪.৫ বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

ভূমিকা : বাংলা তথা ভারতের একজন প্রকাশক,মুদ্রণ-শিল্পবিদ, পুস্তক ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকতার পথ প্রদর্শক রূপে বাঙালি গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ভূমিকা বিশেষ স্মরণীয়।

কর্মজীবন : শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনারি প্রেসের একজন কম্পোজিটার রূপে তিনি তার কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং ‘ফরিস অ্যান্ড কোম্পানি প্রেসে’ যোগদান করেন, এখানে থাকাকালীন তিনি বইয়ের ব্যাবসাও শুরু করেন।

বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস স্থাপন : 1818 খ্রিস্টাব্দে হরচন্দ্র রায়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তিনি কলকাতার চোরবাগান স্ট্রিটে ‘বাঙ্গালা গেজেট’ নামে একটি প্রেস স্থাপন করেন। সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে এই প্রেসটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

প্রকাশিত গ্রন্থ : এই প্রেস থেকে নিজের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ যেমন বাংলা গ্রামার, ইংরেজি গ্রামার ছাড়াও ‘‘গঙ্গাভক্তিতরঙ্গিনী,‘লক্ষ্মীচরিত’, ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ চাণক্য শ্লোক প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। এই প্রেস থেকেই তৎকালীন সাড়াজাগানো প্রথম বাংলা সচিত্র গ্রন্থ ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গাল’ কাব্য প্রকাশিত হয়।

সংবাদপত্র- সাময়িক পত্র প্রকাশনা : প্রথম বাঙালি সাংবাদিক হিসেবে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন। তার উদ্যোগে ‘বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস থেকে 1818 খ্রিস্টাব্দে 16 মে প্রথম প্রকাশিত হয় ‘বাঙ্গালা গেজেটি’ নামক পত্রিকা। দেশীয় উদ্যোগে তিনিই সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র প্রকাশনার পথপ্রদর্শক ছিলেন। রামমোহন রায়ের সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে বিভিন্ন লেখা এখানে প্রকাশিত হয়।

পুস্তক বিক্রেতা : পুস্তক বিক্রেতা রূপেও তিনি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দান করেন। তিনিই ছিলেন প্রথম বাঙালি পুস্তক বিক্রেতা। সেই সময় শিক্ষার বিস্তার ও ছাপাখানার প্রসার ঘটলে তার দেখাদেখি অন্যান্য বাঙালিও পুস্তক ব্যাবসার কাজে লিপ্ত হয়।

উপসংহার : শেষ জীবনে তিনি কলকাতা ছেড়ে জন্মস্থানে ফিরে গেলেও সেখান থেকেই মুদ্রণ, প্রকাশনা ইত্যাদির কাজ চালিয়ে যান। তার হাত ধরেই মুদ্রণ, প্রকাশনা, পুস্তক ব্যাবসা, সংবাদ প্রকাশনা ইত্যাদির বিশেষ রূপ অগ্রগতি ঘটে। সমসাময়িক পত্রিকা ‘সমাচার দর্পণ’ ইত্যাদিতে তার সম্বন্ধে উচ্ছ্বসিত প্রশংসাও করা হয়।

৪.৬ শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উত্তরঃ ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(i) ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন ও প্রেসের প্রতিষ্ঠা হলেও শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশনের প্রাণপুরুষ উইলিয়াম কেরি এর দু’বছর আগে থেকেই কাঠের মুদ্রণ যন্ত্র ও দেশীয় ভাষায় অর্থাৎ বাংলা হরফ সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং ১৮০০ থেকে ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সম্ভবত শ্রীরামপুর মিশন প্রেস লোহার মুদ্রণ যন্ত্রও নিয়ে আসে।

(ii) মিশনারি জশুয়া মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড এবং চার্লস গ্রান্ট প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে কেরি সাহেব বই ছাপার উদ্যোগ নেন এবং বই ছাপার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভূমিকা নেন ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’।

(iii) শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রথম ছাপা বই ছিল বাইবেলের অনুবাদ ‘মঙ্গল সমাচার মতীয়ের রচিত’। প্রথম দিকে মিশন মূলত ধর্মীয় বই অনুবাদ করত এবং এখান থেকে ছাত্রদের জন্য অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক, পত্রপত্রিকা যেমন— মাসিক পত্রিকা ‘দিগদর্শন’, সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সমাচার দর্পণ’ প্রভৃতি ছাড়াও অন্যান্য গ্রন্থ যেমন— মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের ‘বত্রিশ সিংহাসন’, ‘রাজাবলি’, ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’, রামরাম বসু রচিত ‘লিপিমালা’, ‘জ্ঞানোদয়’ হরপ্রসাদ রায়ের ‘পুরুষ পরীক্ষা’, কেরির ‘বাংলা ব্যাকরণ’, ‘ইঙ্গবঙ্গ অভিযান’ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়।

(iv) প্রথমে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও কিছুটা পরে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি -র সঙ্গে সহযোগী হিসাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশন উদ্যোগী হয়েছিল। একটি মাত্র কাঠের মুদ্রণ যন্ত্রকে সম্বল করে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস তার যাত্রা শুরু করলেও ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে মুদ্রণ যন্ত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৮টিতে। ১৮০১ খ্রিঃ থেকে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শ্রীরামপুর থেকে চল্লিশটি ভাষায় দু-লক্ষ বারো হাজার বই প্রকাশিত হয়েছিল।

উপবিভাগ : ঘ.৪

৪.৭ সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো : দেশবিভাগ (১৯৪৭) জনিত উদবাস্তু সমস্যা।

উত্তরঃ ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার প্রথম পাঁচ বছরে উদ্বাস্তু সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু উত্তর পশ্চিম ভারতে মূলত পাঞ্জাবে আশ্রয় নিয়েছিল। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তু ও শরনার্থীরা জীবন ও জীবিকার স্বার্থে আশ্রয় নিয়েছিল মূলত এপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায়।

• নিরাপত্তাজনিত অভাব, ধর্ম ও সংস্কৃতিগত সাদৃশ্য এবং বাংলা ভাষা স্বাচ্ছন্দ্যের দরুন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় এবং পুনর্বাসন দেওয়া ছিল খুবই কঠিন কাজ। বিপুল জনসংখ্যা, পরিকাঠামো জনিত সমস্যা, কিছুটা কেন্দ্রীয় স্তরের উদাসীনতা উদ্বাস্তু সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রাথমিকভাবে স্টেশনে, ফুটপাতে, খোলা আকাশের নীচে এবং বিভিন্ন উদ্বাস্তু ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল। পরে অবশ্য ছিন্নমূল এইসব মানুষজন নিজ উদ্যোগে কলোনি গড়ে তোলেন আবার কোথাও বা সরকারি সাহায্যে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।

• উদ্বাস্তু মানুষদের অসহায়তা, জীবনযন্ত্রণা, ভয়াবহ স্মৃতি এবং পূর্বতন গ্রাম বা শহরের মধুর স্মৃতি ধরা পড়েছে তাদের আত্মকথা, স্মৃতিকথা এবং সমসাময়িক সাহিত্যে । এই দেশভাগ, দাঙ্গা এবং অভিপ্রয়াণের জ্বলন্ত সাক্ষী ছিলেন যেমন নারীরা, তারাও তাদের ভয়াবহ স্মৃতি, যন্ত্রণা সর্বোপরি সংগ্রামকে কাগজে কলমে বা আলাপচারিতায় তুলে ধরেছেন ।

৪.৮ হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল ?

উত্তরঃ স্বাধীনতার প্রাক্কালে দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে হায়দ্রাবাদ সবচেয়ে বড় এবং সম্পদশালী দেশীয় রাজ্য ছিল। স্বাধীন ভারতের অখন্ডতা রক্ষা ও নিরাপত্তার দিক থেকেও হায়দ্রাবাদ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি হায়দ্রাবাদে নিজামের স্বৈরতন্ত্র এবং সামন্ত্রতান্ত্রিক জুলুমের বিরুদ্ধে হায়দ্রাবাদের সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ এবং গণতন্ত্রের প্রতি তীব্র আকুতি হায়দ্রাবাদের ভারত ভুক্তির বিষয়টি জোরালো করে তুলেছিল।

অন্যদিকে নিজামের ভারতবিরোধী অবস্থান মজলিস-ইতেহাদ-উল-মুসলিমিন এর মত সংগঠনের তৎপরতা বৃদ্ধি সর্বোপরি গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষদের ওপর নিজামের রাজাকার বাহিনীর অত্যাচার হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তিকে অনিবার্য করে তুলেছিল।

এমতাবস্থায় ভারত সরকার প্রথমে অর্থনৈতিক অবরোধ করে এবং পরে নিরুপায় হয়ে মেজর জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর সামরিক অভিযান অপারেশন ‘পোলো’ প্রেরণ করেন। ১৮ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলে আসে। শেষ পর্যন্ত ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি হায়দ্রাবাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতভুক্ত হয়।

বিভাগ – ‘ঙ’

৫. পনেরো-ষোলোটি বাক্যে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ১x৮=৮

৫.১ ঊনিশ শতকের বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজগুলির কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

উত্তরঃ ব্রাহ্মধর্ম ও ব্রাহ্মসমাজের প্রবর্তক রাজা রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার যেমন— সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা, জাতিভেদ প্রথা প্রভৃতি অমানবিক প্রথার উচ্ছেদ সাধন এবং নারীশিক্ষার প্রসার, বিধবা বিবাহ প্রবর্তন, নারীজাতির সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি ।

১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে সেপ্টেম্বর রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে মতপার্থক্য তৈরি হলে ব্রাহ্মসমাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামমোহন রায় তাঁর ধর্মমতকে কোনো বিশেষ সম্প্রদায় রূপে গড়ে তুলতে চাননি, কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজকে একটি বিশেষ সম্প্রদায় রূপে গড়ে তোলেন এবং ‘ব্রাহ্মধর্মের অনুষ্ঠান পদ্ধতি’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’ এবং ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ‘তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা’ স্থাপিত হয় এবং ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় নারীশিক্ষা ও বিধবা বিবাহের পক্ষে এবং বহুবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালান। কিন্তু অচিরেই বেদের অভ্রান্ততা, ব্রাহ্ম আচার্যদের উপবিত ধারণ প্রভৃতি নানা প্রশ্নে মত পার্থক্য তৈরি হলে ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ থেকে বহিস্কৃত হয়ে কেশবচন্দ্র সেন ও তার অনুগামীরা ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্রাহ্মসমাজ ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ’ নামে পরিচিত হয়।

কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে সমাজ সংস্কার আন্দোলন উনিশ শতকে এক নতুন মাত্রা পায় এবং তিনি ইন্ডিয়ান মিরর, বামাবোধিনী পত্রিকায় নারীশিক্ষার প্রসার, নারী স্বাধীনতা, অসবর্ণ বিবাহ প্রভৃতির পক্ষে এবং বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালান। নারী কল্যাণের জন্য ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘বামাবোধিনী’ ও ব্রাহ্মিকা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। কেশবচন্দ্র সেনের আন্দোলনের চাপে সরকার ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘তিন আইন’ পাস করে— বাল্য বিবাহ ও বহুবিবাহ রদ, অসবর্ণ বিবাহকে আইন সিদ্ধ করে। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে ‘সঙ্গত সভা’ প্রতিষ্ঠা করে নিপীড়িত মানুষের সেবা ও ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।

কিন্তু কেশবচন্দ্রের খ্রিস্টপ্রীতি, চৈতন্যপ্রীতি, গুরুবাদ ও ভক্তিবাদে আকর্ষণ, হিন্দু রীতিতে নাবালিকা কন্যা সুনীতি দেবীর বিবাহ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজের অভ্যন্তরে প্রবল দ্বন্দ্ব তৈরি করে। শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখরা ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই মে ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিভাজনের পর কেশবচন্দ্র সেনের ব্রাহ্মসমাজের নাম হয় ‘নববিধান ব্রাহ্মসমাজ’।

‘সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ’ এর নেতা শিবনাথ শাস্ত্রী নারীশিক্ষা ও নারী স্বাধীনতা প্রভৃতি কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে এবং বিধবা বিবাহের পক্ষে প্রচার চালান।

৫.২ মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ ভারতে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে ইংরেজরা যে “ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার” প্রবর্তন করেছিলো, উনিশ শতকের শেষের দিকে সেই শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। যে সমস্ত ভারতীয় চিন্তাবিদ ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করে বিকল্প শিক্ষা পদ্ধতির কথা বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা ভাবনার মধ্যে মূল দিক ছিলো তিনটি। যথা—

• এক, তিনি ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার “মূল ধারা” বা “পদ্ধতির” একেবারেই বিরোধী ছিলেন। কারণে ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয় জীবনাদর্শ, ঐতিহ্য ও রীতিনীতিকে কোন মূল্যই দেওয়া হয় নি।

• দুই, ঔপনিবেশিক “শিক্ষা পদ্ধতি” ও “ভাবধারার” মধ্যে প্রকৃতি ও মানুষের কোন সমন্বয় ছিলো না। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমন এক শিক্ষা ভাবনার বাস্তবায়ন ঘটাতে চেয়েছিলেন, যার মধ্যে প্রকৃতি ও মানুষ দুইয়েরই সংযোগ থাকবে।

• তিন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বাস করতেন, ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির শিকড় গ্রামেই নিহিত। তাই গ্রাম সমাজ ও তার অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় ঘটাতে হবে।

(১) প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয়—

প্রকৃতির সঙ্গে শিক্ষার সমন্বয় ঘটাতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর –

(i) শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন,

(ii) সেখানে ব্রহ্ম বিদ্যালয় বা পাঠভবন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন,

(iii) প্রকৃতির কোলে শিশুদের উন্মুক্ত পরিবেশে শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।

(iv) বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, বন মহৎসব, পৌষমেলা, বসন্ত উৎসব ইত্যাদির প্রচলন করেন।

(২) মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয়—

অন্যদিকে শিক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সমন্বয় ঘটাতে তিনি

(i) সমন্বয়বাদী ভাবধারা ও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয় সাধনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

(ii) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং তাকে প্র্যাকটিক্যালে রূপায়িত করবার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন “বিশ্বভারতী” বিশ্ববিদ্যালয়।

(৩) গ্রামসমাজ ও শিক্ষার সমন্বয়—

(i) শিক্ষার সুফল ও সুবিধা যাতে শহরাঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে সেইজন্য রবীন্দ্রনাথ গ্রাম সমাজ ও কৃষির উন্নয়নে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

(ii) শিক্ষার মধ্য দিয়ে গ্রামীন পরিকাঠামো, অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন ঘটানোর কথা ভাবেন।

(iii) এই উদ্দেশ্য পূরনের জন্য শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন।

৫.৩ বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।

ভূমিকা : বাঙালি বিপ্লবী ও রাজনৈতিক নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায়ের হাত ধরেই রাশিয়ার তাসখন্দে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ভারতের উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলন এক অন্য রূপ ধারণ করে।

ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠনঃ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে প্রথম সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলন হয় এবং এখানেই সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ারের সভাপতিত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকাঃ বাংলায় মুজাফফর আহমেদ, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখ কমিউনিস্টরা শ্রমিক ও কৃষকদের সংগঠিত করে ১৯২৫খ্রিস্টাব্দে ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ গঠন করেন। এর অনুকরণে বোম্বাই, পাঞ্জাব ও যুক্তপ্রদেশে অনুরূপ পার্টি গড়ে ওঠে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’।

সাইমন-কমিশন বিরােধী আন্দোলনঃ ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন ভারতে এলে কংগ্রেসের তরফে যে ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়, তাতে বামপন্থীরা অংশ নেয়। এর পাশাপাশি কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে শিল্প-শ্রমিকদের ধর্মঘট ইংরেজ সরকারকে বিপাকে ফেলেছিল।

পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিঃ কমিউনিস্ট দলের সদস্যরা জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থিত থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রমাগত পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে এসেছিল।এই দাবি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের লাহাের অধিবেশনে পূর্ণতা পায়।

মিরাট ষড়যন্ত্র মামলাঃ ঔপনিবেশিক সরকার কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ৩২ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে মামলা শুরু করে, যা মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এই মামলায় মুজফ্ফর আহমেদ, কিশোরীলাল ঘোষ, ধরণী গোস্বামী, গোপেন চক্রবর্তী, রাধারমণ মিত্র, গোপাল বসাক এবং শিবনাথ মুখোপাধ্যায় অভিযুক্ত হন।

আইন অমান্য আন্দোলনঃ মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ৩৩ জন নেতা কারাবন্দি হওয়ায়বামপন্থী দল দুর্বল হয়ে পড়ে। তবুও বোম্বাইয়ে রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সদস্যরা লাল পতাকা নিয়ে ধর্মঘট করে। শোলাপুরে বস্ত্রশিল্প শ্রমিকেরা ধর্মঘট করে এবং সমান্তরাল সরকার গড়ে তোলে। সরকার কমিউনিস্ট দলকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ফ্রন্টে রাশিয়ার মিত্র ছিল ইংল্যান্ড। তাই কমিউনিস্ট দল ইংল্যান্ডের যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। শ্রমিক ধর্মঘট বন্ধ রাখে এবং ভারতছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরে থাকে। তবুও কলকাতা ট্রাম পরিবহন কর্মীরা ধর্মঘট করে এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়।

বিশ্বযুদ্ধোত্তর গণ আন্দোলনে নেতৃত্বঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বাংলার তেভাগা আন্দোলন বা তেলেঙ্গানা আন্দোলনগুলি কমিউনিস্ট পার্টির দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

উপসংহার : বহু বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও কমিউনিস্টরা শ্রেণি সংগ্রামের চরিত্র বজায় রাখে। তারা তাদের নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। কমিনটার্নের নির্দেশ ও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কোনো কোনো কার্যক্রম সমালোচিত হয়। কিন্তু তাদের কার্যকলাপ যে জাতীয়তাবাদী ছিল এই কথা স্বীকার করতেই হয়।

📌 আরও দেখুনঃ

» Madhyamik History Q.P 2024

» Madhyamik History Q.P 2023

» Madhyamik History Q.P 2022

» Madhyamik History Q.P 2020

» Madhyamik History Q.P 2019

» Madhyamik History Q.P 2018

» Madhyamik History Q.P 2017

📌 আরও দেখুনঃ

» মাধ্যমিক বাংলা সিলেবাস ২০২৫

» মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ইংরেজি পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ইতিহাস পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ভূগোল পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান

» দশম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র

» মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫

» মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের MCQ মক টেস্ট

Leave a Reply