WBCHSE Class 11 Bengali Question Paper With Answer 2017 | একাদশ শ্রেণি বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৭

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

WBCHSE HIGHER SECONDARY (XI) BENGALI QUESTION PAPER WITH ANSWER 2017
একাদশ শ্রেণি বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৭, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র সঠিক এবং নির্ভুল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তোমরা অবশ্যই তোমাদের সাবজেক্ট শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়ে নেবে। নিচে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র দেওয়া হলো।

একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা
নতুন পাঠক্রম
বাংলা ‘ক’ ভাষা
২০১৭
সময় : ৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট        [পূর্ণমান : ৮০]

পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে। বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কাটা যাবে। ডানপাশে প্রশ্নের পূর্ণমান দেওয়া আছে।

একাদশ শ্রেণি বাংলা মক্ টেস্ট ২০১৭

1 / 18

১.১ ভূতের উপদ্রবে ঘরে টেকা দায় হয়—

2 / 18

১.২ মহানগরী থেকে তেলেনাপােতার দূরত্ব কত ?

3 / 18

১.৩ “পুলিশ দেখে ভয় পাওয়ার লােক সে নয়'–এখানে যার কথা বলা হয়েছে—

4 / 18

১.৪ সনাতন ঘুম বলতে রবীন্দ্রনাথ কী বুঝিয়েছেন ?

5 / 18

১.৫ যামিনীর মা তেলেনাপােতাকে বলেছে—

6 / 18

১.৬ কার উৎসাহে হাঙর ধরার উপকরণ সংগৃহীত হয়েছিল ?

7 / 18

১.৭ যে মাছগুলি হাঙরের আশে-পাশে ঘুরছিল, পিঠে চড়ে বসছিল তাদের নাম ছিল—

8 / 18

১.৮ গ্যালিলিওর দূরবীনে ধরা পড়েছিল—

9 / 18

১.৯ ‘আরশি' শব্দের অর্থ কী ?

10 / 18

১.১০ ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা' কবিতায় পার্থকে নীলধ্বজ কী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন ?

11 / 18

১.১১ 'দীপান্তর' কথার অর্থ হল—

12 / 18

১.১২ 'নুন' কবিতার কথকের দিন যায়—

13 / 18

১.১৩ থুরথুরে বুড়াের একমাত্র অতিপ্রাকৃত শক্তি হল—

14 / 18

১.১৪ বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে—

15 / 18

১.১৫ 'পথের দাবী' উপন্যাসটি কার লেখা ?

16 / 18

১.১৬ মরীচিকা', 'মরুশিখা’ ও ‘মরুমায়া' কাব্যগ্রন্থগুলির লেখক—

17 / 18

১.১৭ মধ্যভারতীয় আর্যভাষার আনুমানিক সময়কাল—

18 / 18

১.১৮ শর বা কাঠ দিয়ে লেখা হত যে লিপি, তা হলাে—

Your score is

The average score is 81%

0%

১। ঠিক উত্তরটি নির্বাচন করাে। ১×১৮ =১৮

১.১ ভূতের উপদ্রবে ঘরে টেকা দায় হয়—
(ক) বুড়াে কর্তার (খ) নাস্তিকেরষ (গ) বাচ্চাদের (ঘ) গৃহস্থের

উত্তরঃ (ঘ) গৃহস্থের।

১.২ মহানগরী থেকে তেলেনাপােতার দূরত্ব
কত ?
(ক) মাত্র দশ মাইল (খ) মাত্র কুড়ি মাইল
(গ) মাত্র ত্রিশ মাইল (ঘ) মাত্র পঁচিশ মাইল।

উত্তরঃ (গ) মাত্র ত্রিশ মাইল।

১.৩ “পুলিশ দেখে ভয় পাওয়ার লােক সে
নয়’–এখানে যার কথা বলা হয়েছে—
(ক) সৌখী (খ) সৌখীর মা (গ) সৌখীর বাবা
(ঘ) সৌখীর বউ।

উত্তরঃ (খ) সৌখীর মা।

১.৪ সনাতন ঘুম বলতে রবীন্দ্রনাথ কী
বুঝিয়েছেন ?
(ক) আদিমকালের ঘুম (খ) অন্ধকারে ঘুম
(গ) ভাতঘুম (ঘ) চিরকালের ঘুম।

উত্তরঃ (ক) আদিমকালের ঘুম।


👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈


১.৫ যামিনীর মা তেলেনাপােতাকে বলেছে—
(ক) মৃত্যুপুরী (খ) স্বর্গপুরী (গ) পাতালপুরী
(ঘ) প্রেতপুরী

উত্তরঃ (ঘ) প্রেতপুরী।

১.৬ কার উৎসাহে হাঙর ধরার উপকরণ
সংগৃহীত হয়েছিল ?
(ক) আরব মিঞা (খ) খালাসি (গ) লেখক
(ঘ) সেকেন্ড ক্লাসের ফৌজি

উত্তরঃ (ঘ) সেকেন্ড ক্লাসের ফৌজি।

১.৭ যে মাছগুলি হাঙরের আশে-পাশে
ঘুরছিল, পিঠে চড়ে বসছিল তাদের নাম
ছিল—
(ক) বনিটো (খ) ম্যাকরেল (গ) চোষক
(ঘ) পাইলট ফিশ।

উত্তরঃ (গ) চোষক।

১.৮ গ্যালিলিওর দূরবীনে ধরা পড়েছিল—
(ক) মঙ্গলের উপগ্রহ
(খ) বৃহস্পতির চাঁদের ছবি
(গ) পৃথিবীর নক্ষত্র
(ঘ) মঙ্গলের চাঁদের ছবি

উত্তরঃ (খ) বৃহস্পতির চাঁদের ছবি।

১.৯ ‘আরশি’ শব্দের অর্থ কী ?
(ক) আয়না (খ) পড়শী (গ) কাঁচ (ঘ) ছায়া।

উত্তরঃ (ক) আয়না।

১.১০ ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতায়
পার্থকে নীলধ্বজ কী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন ?
(ক) নারায়ণ (খ) শিব (গ) ব্রহ্মা (ঘ) ইন্দ্র

উত্তরঃ (ক) নারায়ণ।

১.১১ দীপান্তর’ কথার অর্থ হল—
(ক) অন্য দ্বীপ (খ) সবুজ দ্বীপ
(গ) অনেক দ্বীপ (ঘ) দ্বীপের বাইরে

উত্তরঃ (ক) অন্য দ্বীপ।

১. ১২ নুন’ কবিতার কথকের দিন যায়—
(ক) হেসে খেলে (খ) আহ্বাদে
(গ) অসুখে ধারদেনাতে (ঘ) খুশিতে

উত্তরঃ (ক) হেসে খেলে।

১.১৩ থুরথুরে বুড়াের একমাত্র অতিপ্রাকৃত
শক্তি হল—
(ক) জাদু (খ) মন্ত্র (গ) ধৈর্য (ঘ) জলপড়া

উত্তরঃ (গ) ধৈর্য।

১.১৪ বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে—
(ক) সংস্কৃত থেকে
(খ) শৌরসেনী প্রাকৃত থেকে
(গ) পৈশাচী প্রাকৃত থেকে
(ঘ) মাগধী প্রাকৃত থেকে

উত্তরঃ (ঘ) মাগধী প্রাকৃত থেকে।

১.১৫’পথের দাবী’ উপন্যাসটি কার লেখা ?
(ক) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(খ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(গ) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
(ঘ) ধূর্জটিপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়

উত্তরঃ (খ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

১.১৬ মরীচিকা’, ‘মরুশিখা’ ও ‘মরুমায়া
কাব্যগ্রন্থগুলির লেখক—
(ক) যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
(খ) মােহিতলাল মজুমদার
(গ) কাজী নজরুল ইসলাম
(ঘ) সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

উত্তরঃ (ক) যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত।

১.১৭ মধ্যভারতীয় আর্যভাষার আনুমানিক
সময়কাল—
(ক) ৬০০ খ্রিঃ পূঃ – ৯০০ খ্রিস্টাব্দ
(খ) ৬০০ খ্রিঃ পূঃ – ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ,
(গ) ৬০০ খ্রিঃ পূঃ – ১০০০ খ্রিস্টাব্দ,
(ঘ) ৬০০ খ্রিঃ পূঃ – ১২০০ খ্রিস্টাব্দ

উত্তরঃ (ক) ৬০০ খ্রিঃ পূঃ – ৯০০ খ্রিস্টাব্দ।

১.১৮ শর বা কাঠ দিয়ে লেখা হত যে
লিপি, তা হলাে—
(ক) চিত্রপ্রতীক লিপি (খ) চিনীয় লিপি
(গ) বাণমুখ লিপি (ঘ) স্বরলিপি

উত্তরঃ (ক) চিত্রপ্রতীক লিপি।

২। অনধিক কুড়িটি শব্দে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও। ১ × ১২ = ১২

২.১ “যবে দেশ-দেশান্তরে জনরব লবে এ কাহিনী, -কি কহিবে ক্ষত্ৰপতি যত ?” – কোন কাহিনির কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ রাজা নীলধ্বজ তার পুত্রহন্তা
অর্জুনের সঙ্গে সখ্যতা করেছেন- আলােচ্য
অংশে এই কাহিনির কথা বলা হয়েছে।

২.২ ‘আমি কেমনে সে গাঁয় যাই রে’- বক্তা সে গাঁয়ে যেতে পারছেন না কেন ?

উত্তরঃ সেই গ্রামের চারদিকে অগাধ পানি, সেই জলরাশি পার করে দেওয়ার মতাে কোনাে নৌকা বা মাঝি নেই। তাই বক্তা সেই গ্রামে যেতে পারছেন না।

২.৩ ‘বেজেছে বাণীর সেতারে আজ ?’- বাণীর সেতারে কবি কী শুনতে চেয়েছেন।

উত্তরঃ কবি বাণীর সেতারে বিধির বেতার
মন্ত্র শুনতে চেয়েছেন।

২.৪ ‘নুন’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে
নেওয়া হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘ভুতুমভগবান’ কাব্যগ্রন্থ থেকে
নেওয়া।

২.৫ ‘অন্য সব দেশে যত ঘানি ঘােরে তার
থেকে তেল বেরােয়’,– এই তেল কী কাজে
ব্যবহার হয় ?

উত্তরঃ অন্য সব দেশে ঘানি থেকে যে তেল বেরোয় তা দিয়ে সেই দেশের ভবিষ্যতের রথচক্রকে সচল রাখা হয়।

২.৬ ‘আপনার দুই বন্ধু তখন দুই কারণে অচেতন।’– কারণ দুটি কী কী ?

উত্তরঃ একজন নিদ্রায় অচেতন, অপরজন মদ্যপান করে অচেতন।

২.৭ “কিন্তু পুঁতবাে কোথায় ?’– কথকের এ
মন্তব্যের কারণ কী ?

উত্তরঃ গােলাপচারা পোঁতার ব্যাপারে এই মন্তব্যের কারণ হল কথক একজন বস্তিবাসী দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ, কোনােভাবে শুধু মাথাগোঁজার স্থানটুকুই আছে।

২.৮ ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ‘বিধির
বেতার-মন্ত্র’ কী ?

উত্তরঃ ‘বিধির বেতারমন্ত্র’ বলতে কবি স্বাধীনতার বার্তাকে বুঝিয়েছেন।

২.৯ ‘দুঃখের কথা হায়, কব কারে?’- বক্তা কে ?

উত্তরঃ আলােচ্য অংশের বক্তা হলেন
মাহেশ্বরপুরীর রাজমহিষী জনা।

২.১০ ‘যমযাতনা সকল যেত দূরে’– কীভাবে তা সম্ভব ?

উত্তরঃ কবির পড়শি যদি কবিকে ছুঁতেন্যতাহলেই কবি যমযাতনা থেকে মুক্তি পেতেন।

২.১১ বাংলা সাহিত্যে ব্যবহৃত গদ্য উপভাষার প্রধান রূপ দুটি কী কী ?

উত্তরঃ গদ্য উপভাষার প্রধান দুটি রূপ হল সাধু এবং চলিত।

অথবা,

ঋগবেদ কোন ভাষায় রচিত ?

উত্তরঃ ঋকবেদ বৈদিক ভাষায় রচিত।

২.১২ ইন্দো-ইরানীয় শাখাটি যে দুটি শাখায়
বিভক্ত হয়েছিল সেই শাখাদুটির নাম লেখাে।

উত্তরঃ ইরানীয় আর্য এবং ভারতীয় আর্য।

অথবা,

নব্য ভারতীয় আর্যভাষার বিস্তারকাল উল্লেখ করাে।

উত্তরঃ ৯০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত।

৩। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫×১ = ৫

৩.১ ‘কর্তার ভূত’ কী নিছক ভূতের গল্প নাকি
রাজনৈতিক রূপক কাহিনী ? ব্যাখ্যাসহ লেখাে।

উত্তরঃ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লিপিকা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত বহুল প্রাচীন কর্তার ভূত নামক রচনাটি প্রকৃতপক্ষে একটি কথিকা

আলোচ্য রচনার মধ্য দিয়ে কবিগুরু তৎকালীন ‘মানুষের চিরকালীন অভ্যাস এর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। ভুতের কথা বলা হলেও এটি কোন ভৌতিক রহস্যময় কাহিনী নয়। এটি আবার নিছক কোন রাজনৈতিক কাহিনী ও নয়। এখানে লেখক রূপকের আড়ালে মানুষের উপর চেপে বসে থাকা চিরকালীন ধর্ম তন্ত্র ও কুসংস্কার আলোচনা করেছেন।

ভূত বলতে এখানে অতীতকে বোঝানো হয়েছে। অতীত কাল থেকে এই আদিম মানুষের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপনে অভ্যস্ত। এই অতীতকালে তারা তাদের সমস্ত ভাবনার চিন্তা অর্পণ করেছিল দলের প্রধান নেতা ও নেত্রী স্থানীয় ব্যক্তিদের ওপর। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে কর্তার মৃত্যু ঘটলেও তার ভূত অর্থাৎ ধর্মতন্ত্রের ধারণা এদেশের মানুষজনকে ছেড়ে যায়নি সে প্রতি পদে পদে এদের অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

ভূতের দেশের জেলখানার অনেক নিয়মে চাপা পড়ে খানি ঘোরাতে থাকা মানুষ তাদের তেজ এবং অগ্রগতির পথকে হারিয়ে ফেলে। ভূত বলে প্রকৃতি কোন বস্তু বা শক্তির অস্তিত্ব নেই যাকে আমরা অনুভব করতে পারি। এটা কেবলমাত্র প্রাচ্যের মানুষের মনের মধ্যে বাসা বেঁধে থাকা চিরকালীন ভয়। এই ভয়ে মানুষকে সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে দেয় না। আধুনিক চিন্তা ভাবনার পথে এক পা বাড়ালেই তার মনে ভয় তাকে বলে ওঠে সে অশুদ্ধ হয়ে যাবে এবং প্রকৃতি প্রাচীন ঐতিহের এর গর্বকে হারিয়ে ফেলবে।

তাই কবিগুরুর এই রচনাকে আমরা কেবল নিছক ভূতের গল্প বা রাজনৈতিক রূপক কাহিনী বলতে পারিনা। এটা আসলে তৎকালীন কুসংস্কার ছন্ন ধর্মতন্ত্রের কবির সুতীর্ণ প্রতিবাদী রচনা।

৩.২ ‘ডাকাতের মা’ ছােটোগল্প অবলম্বনে সৌখীর মায়ের চরিত্র লেখো।

উত্তরঃ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা “ডাকাতের মা” গল্পের মূল চরিত্রদ্বয়ের অন্যতম হল ডাকাত সর্দার সৌখীর মায়ের চরিত্রটি।তার চরিত্রটি গল্পে যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে তা হল নিম্নরূপ—

সন্তানের প্রতি অপত্যস্নেহঃ তার হৃদয়ের টুকরো তার একমাত্র সন্তান ডাকাত সর্দার সৌখীর জন্য তার অপত্যস্নেহ ছিল অকৃত্রিম।

পরিশ্রমীঃ সৌখীর মা ছিলেন অত্যন্ত পরিশ্রমী। সৌখী জেলে যাবার দুবছর পর থেকে টাকা দেওয়া বন্ধ করলে তিনি বাড়ীতে খইমুড়ি ভেজে বিক্রি করে সংসার চালাতেন।

বাস্তবজ্ঞান সম্পন্নাঃ সৌখীর মা ছিলেন গভীর বাস্তব বোধ সম্পন্না ৷ তাই জেল থেকে ফেরার পর সৌখীকে টাকা না পাঠানোর বা পুত্রবধূ ও নাতির অসুস্থতার কথা জানাননি।

পুত্রবধূ ও নাতির প্রতি স্নেহঃ অসুস্থ রুগ্ন বৌমার অবস্থার কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়ে তাকে বাপের বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

পুরুষতন্ত্রের প্রতি আস্থাঃ নিরক্ষর হওয়ায় তার পুরুষতন্ত্রের প্রতি অস্থা ছিল।ছেলের হাতে মার খেলেও কিছু মনে করেনি।

আত্মসম্মান বোধঃ জমায়েত আত্মসম্মান বোধ ছিল গভীর।ডাকাতের বৌ আর এখন ডাকাতের মা সে ভিক্ষাও করতে পারবে না আর কেউ বাড়ীতে কাজেও নেবেনা। তাই নিজের বাড়ীতে খইমুড়ি বেচে বিক্রি করে সংসার চালাতো।

৪। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫ × ১ =৫

৪.১ মানবজাতির উন্নতির বর্তমান অবস্থার জন্য যতগুলি কারণ প্রাচীনকাল থেকে কাজ করেছে তার মধ্যে বােধহয় ভারতের বাণিজ্য সর্বপ্রধান’– কোন কোন জিনিসের আশায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভারতে বাণিজ্য শুরুর আগে কোন কোন পথে কীভাবে ভারতের সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলি বাণিজ্য করতে আসতাে ? সুয়েজ খাল খননের পর বাণিজ্যে কী কী সুবিধা হয়েছিল ? ২+৩

উত্তরঃ স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর ‘সুয়েজখালে: হাঙ্গর শিকার’ রচনায় উল্লেখ করেছেন যে, সুতি কাপড়, তুলা, পাট, নীল, লাক্ষা, চাল, হিরে, মতি ইত্যাদির সঙ্গে উৎকৃষ্ট রেশমি পশমিনা যেমন ভারতে পাওয়া যেত, তেমনই লবঙ্গ, এলাচ, মরিচ, জায়ফল, জয়িত্রি ইত্যাদি নানাবিধ মশলার প্রাপ্তিস্থানও ছিল ভারতবর্ষ।

কোনাে দেশ যখন সভ্য হয়েছে অর্থাৎ উন্নতির পথে অগ্রসর হয়েছে তখন তারা ভারতে বাণিজ্য করতে এসেছে। এই বাণিজ্য প্রধানত দুটি ধারায় চলেছিল—একটি স্থলপথে আফগানিস্তান, ইরান হয়ে, অন্যটি লােহিত সাগর হয়ে জলপথে৷ ইরান বিজয়ের পর সিকান্দার শা তার সেনাপতি নিয়াকুসকে সিন্ধুনদ হয়ে আরবসাগর পার হয়ে লােহিত সমুদ্র দিয়ে জলপথের সন্ধানে পাঠান। প্রাচীনকালে ব্যাবিলন, ইরান, গ্রিস, রােম ইত্যাদি প্রাচীন দেশের ঐশ্বর্যবৃদ্ধি অনেক পরিমাণে ভারতের বাণিজ্যের ওপর নির্ভর করত। তুর্কিরা রােম সাম্রাজ্য দখল করে ইতালীয়দের ভারতবাণিজ্যের পথ বন্ধ করে দিলে কলম্বাস আটলান্টিক পার হয়ে নতুন রাস্তা বের করার চেষ্টা করেন—যার ফল আমেরিকা মহাদ্বীপের আবিষ্কার। পাের্তুগিজরা আবার আফ্রিকাকে বেষ্টন করে ভারতে আসার নতুন পথ আবিষ্কার করেছিল।

সুয়েজ খাল খননে বাণিজ্য সুবিধাঃ সুয়েজ খাল খননের ফলে ভূমধ্যসাগর আর লোহিত সাগরের মধ্যে সংযোগসাধন হয়ে ইউরোপ আর ভারতবর্ষের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সুগম হয়েছিল।

৪.২ ক্যাথলিক খ্রিস্টান যাজকদের সঙ্গে
গ্যালিলিওর বিরােধের কারণ কী ? গ্যালিলিওর জীবনের শেষ ন’বছর যে অবস্থায় কেটেছিল তার বিবরণ দাও।

উত্তরঃ দূরবীনের সাহায্যে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গালিলিও নিশ্চিত ছিলেন যে, কোপারনিকাসের মতবাদ অভ্রান্ত। তা নিয়েই সনাতনপন্থী খ্রিস্টান ধর্মর্যাজকদের সঙ্গে গালিলিওর সংঘাত। গালিলিওর এই মতবাদের বিরুদ্ধতা করেন সনাতনীরা। ‘সনাতনী’ বলতে যাঁরা চিরাচরিত ধর্মাদর্শে বিশ্বাসী ধার্মিক। তারা ফ্লোরেন্সের ডােমিনিকান সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী। তাঁদের বিরুদ্ধতার কারণ ছিল যে, তাঁরা মনে করতেন গালিলিওর অধ্যাপনা ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী। বাইবেলের অনেক বক্তব্যের সরাসরি বিরুদ্ধে। বাইবেলের ওপর মানুষের যে বিশ্বাস তিনি তা নষ্ট করতে চাইছেন।

ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গালিলিওর জীবনের শেষ ন’বছর অত্যন্ত দুঃখকষ্টের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছিল। এই ন’বছর তিনি ফ্লোরেন্সের শহরতলিতে নিজের গৃহে অন্তরীণ ছিলেন। যে মেয়েটি তাঁর দেখাশোনা করতো, এত দুঃখকষ্টের মধ্যে সেও মারা যায়। একসময় তিনি নিজেও অন্ধ হতে বসলেন। তখনও তাঁর মাথার মধ্যে নতুন নতুন অনেক নতুন চিন্তা ভিড় জমাতো কিন্তু তাঁর জীবন এতটাই বিস্বাদ হয়ে উঠেছিল যে নতুন করে আর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করত না।

শেষের পাঁচ বছর পোপের অনুগ্রহে তাঁর বন্ধন একটু শিথিল হয়েছিল। তখন দেশবিদেশ থেকে অনেকেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতো। অবশেষে, ১৬৪২ সালের ৮ ই জানুয়ারি এই মহান বিজ্ঞানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

৫.১ “মহারথীপ্রথা কি হে এই, মহারথী।”– মহারথী প্রথা’ কী ? কে, কীভাবে এই প্রথার উল্লেখ করেছিল তার বর্ণনা দাও। ১+৪

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতায় মহারথী প্রথা নামক একটি পৌরাণিক যুদ্ধনীতির উল্লেখ রয়েছে। এই প্রথা অনুযায়ী, যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো সশস্ত্র যোদ্ধা কোন নিরস্ত্র যোদ্ধার ওপর আক্রমণ করতো না।

আলোচ্য কবিতায় জনা একজন সদ্য সন্তানহারা জননী। তাঁর পুত্রের হত্যাকারী অর্জুন, যাকে রাজসভায় বসিয়ে নাচগানের আয়োজন করেছিল রাজা নীলধ্বজ। জনার ধারণা রাজা নীলধ্বজ হয়তো অর্জুনকে বীর যোদ্ধা বলে মনে করেন এবং সেই জন্যই অর্জুনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু জনার মনে হয়েছে অর্জুন প্রকৃত বীরপুরুষ নয়, বরং একজন কাপুরুষ। সেই প্রসঙ্গে জনা অর্জুনের কাপুরুষতার অনেক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছেন।

স্বয়ম্বর সভায় দ্রৌপদীকে লাভ করা থেকে শুরু করে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্মের হত্যালীলা, মিথ্যা কথা বলে গুরু দ্রোণাচার্য নিধন- এই সকল ক্ষেত্রে অর্জুনের বীরত্বের থেকে তার কাপুরুষতাই বেশি প্রমাণিত হয়েছে। একইরকমভাবে, কুরুক্ষেত্রের রণক্ষেত্রে মহাবীর কর্ণের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে অর্জুন তাকে বধ করেছিল। ব্রহ্মশাপে কর্ণের রথের চাকা যখন মেদিনী গ্রাস করেছিল ঠিক সেই সুযোগে অর্জুন কর্ণকেও তীরবিদ্ধ করেছিল। জনার মনে হয়েছে অর্জুনের এই কাজ মহারথী প্রথার বিরুদ্ধে কারণ অর্জুন যখন কর্ণকে বধ করেছিল তখন কর্ণের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। ঠিক এই প্রসঙ্গে জনা ‘মহারথী-প্রথার’ উল্লেখ করেছিলেন।

৫.২ ‘তবু লক্ষ যােজন ফাঁক রে’— কাদের মধ্যে লক্ষ যােজন ফাঁক ? একত্র থেকেও এই দূরত্বের কারণ কী ? ১+৪

উত্তরঃ ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’- কবিতানুসারে পড়শি আর লালন উভয়ের মধ্যে লক্ষ যােজন ব্যবধান রয়েছে।

লালনের পড়শি হলেন তাঁর ‘মনের মানুষ’। লালন হৃদয় উজাড় করে তাঁকে ভালােবাসেন। হাসিকান্নার খেলাও চলে তাঁর সঙ্গে। কখনও বা ‘দেখা দিয়ে ওহে রসুল ছেড়ে যেও না’ বলে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন লালন। ভক্ত ভগবানের এই যে পরস্পরের ভালােবাসা, তার মধ্য দিয়ে যে প্রেম ভাব, তাতে কবি লালন পড়শিকে দেখতে না পেলে উতলা হয়ে বলেন, ‘আমি একদিনও না দেখিলাম তারে’ অথচ পড়শি বা লালনের ‘মনের মানুষ’ তাঁর কাছাকাছি আরশিনগরে অর্থাৎ, তাঁর বােধবুদ্ধির মধ্যে ‘চিৎ’ বা আত্মা রূপে বিরাজ করছেন। এভাবে পড়শি আর লালন একত্রে থাকেন। সেই অর্থে ভক্ত ও ভগবান একাত্ম। তবু তাঁদের উভয়ের মধ্যে আছে লক্ষ যােজন ব্যবধান। আসলে দেহ ও চেতনা (পড়শি) একত্রে থাকে বটে, কিন্তু দেহকে সাধনায় পৃথক দেখা যায়। যার নাম স্বরূপদর্শন। প্রকৃতপক্ষে ভাবাধিক্যে দেহ আর চেতনার মধ্যে সৃষ্টি হয় লক্ষ যােজন ব্যবধান।

৫.৩ ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেম কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে আলােচনা করাে।

উত্তরঃ কাজি নজরুল ইসলামের লেখা ফণি-মনসা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতায় কবির স্বদেশপ্রেমের অসামান্য প্রকাশ দেখা যায়।

১৭৫৭ খ্রিঃ পলাশীর প্রান্তরে ভারতবর্ষের যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তাচলে গিয়েছিল, তার জন্য কবির আক্ষেপ এই কবিতায় তীব্র স্বরে ধ্বনিত হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে বন্দি ও দেশান্তরী হতে হয়েছে অনেক দেশপ্রেমিককে। আন্দামান ও নির্বাসন তখন সমার্থক শব্দে পরিনত হয়েছে। স্বাধীনতার লাঞ্ছনা, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপর ব্রিটিশ শাসকদের নির্মম অত্যাচারের ছবি কবি তাঁর হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে তাকে মর্মস্পর্শী ভাষায় এই কবিতায় চিত্রিত হয়েছে।

কবি দেখেছেন সংগ্রামী মানুষের উপর নেমে আসা অত্যাচারের জঘন্য রূপ। কবি দেখেছেন প্রতিবাদের আর মুক্তির কন্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নির্লজ্জ প্রয়াস। এমন এক আইনের শাসনে দেশ বাঁধা, সেখানে সত্য কথা বললে বন্দি হতে হয়, স্বাধীন মনে কথা বললে বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হয়। আইনের সাহায্যে ন্যায়বিচারের পরিবর্তে শাসক যেখানে অত্যাচার আর শোষণকে কায়েম রাখতে সক্ষম হয়। কিন্তু শাসনের অবশান আর স্বাধীনতার উন্মেষের মধ্যেই রয়েছে জীবনের সার্থকতা।

৫.৪ ‘আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক’— কারা, কাদের কাছে এই দাবি করেছে ? এই দাবি কতটা যুক্তিসংগত ? ১ + ৩

উত্তরঃ কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষজন, যারা দিন আনে দিন খায়, তারাই একথা বলেছে। তারা সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষজনের কাছে তথা শাসকশ্রেণীর কাছে এই দাবি করেছে।

জন্মসূত্রে আমরা সকলেই সমান কিন্তু
মানুষ যত বড় হয় ততই বৈষম্যগুলি প্রকট হতে থাকে। সবকটি বৈষম্যের মধ্যে প্রধানতম হল আর্থিক বৈষম্য কারণ অর্থই হল সভ্যতার চালিকাশক্তি। আর্থিক বৈষম্যই মানুষকে ধনী অথবা নির্ধন হিসাবে চিহ্নিত করে; অতিরিক্ত আহারে কারো শরীরে মেদ জমে, কেউবা অনাহারে দিন কাটায়। আলোচ্য কবিতায় এই সকল নির্ধন, অর্ধভুক্ত কিম্বা অভুক্ত মানুষের চাহিদার কথাই উঠে এসেছে। সমাজ তথা রাষ্ট্রের কান্ডারি শাসকশ্রেণীর কাছে তারা বেঁচে থাকার ন্যূনতম রসদটুকু দাবি করেছে।

তাদের এই দাবি সম্পূর্ণই সঙ্গত কারণ জীবনধারণের অধিকার মানুষের প্রাথমিক অধিকার আর জীবনধারণের জন্য তিনটি মৌলিক চাহিদা হল অন্ন, বস্ত্র এবং বাসস্থান। আধুনিক বিশ্বে প্রতিটি রাষ্ট্রই জনকল্যাণকামী রাষ্ট্র এবং সেখানে প্রতিটি নাগরিকের অন্নসংস্থানের ভার, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, রাষ্ট্রের উপরই বর্তায়। তাই “শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা” করতে বলে বক্তা কোনো অন্যায় আবদার করেনি।

৬। অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে
একটি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫ × ১ = ৫

৬.১ বাড়ির মালিকদের অবশ্য বিলাপ করার কোনােই কারণ ছিল না বাড়ির মালিকদের নাম কী ? তাদের বিলাপ করার কারণ ছিল না কেন ? ১+৪

উত্তরঃ গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো’ গল্পে বাড়ি মালিকদের নাম হল পেলাই ও এবং এলিসেন্দা।

পেলাইওদের বাড়িতে একজন রক্ত-মাংসের জ্যান্ত দেবদূতকে বন্দী করে রাখা হয়েছে- এই খবর প্রচার হবার মাত্রই জনে জনে এসে তাদের বাড়িতে ভিড় করে। উপচে পড়া ভিড় দেখে বাড়ি-মালিকরা দর্শনী বাবদ মাথাপিছু পাঁচ সেন্ট করে আদায় করতে শুরু করে। ক্রমশ ভিড় বাড়তে থাকে এবং বাড়তে থাকে উপার্জনও। এমন সময় সেখানে হাজির হয় মাকড়শায় পরিণত হওয়া একটি মেয়ে। এবার তাকে দেখার জন্য দর্শকদের ভিড় বাড়তে থাকে এবং বুড়োর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। এই ঘটনায় বাড়ির মালিকদের দুঃখ বা বিলাপ করার কথা ছিল কিন্তু তারা তা করেনি কারণ—
এতদিনে বুড়োর দর্শনী বাবদ তারা যা রোজগার করেছিল তাতে তাদের ঘর ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে তারা একটি বিলাসবহুল দোতলা বাড়ি বানিয়েছিল, পেলাইও সাধ্যপালের কাজ ছেড়ে দিয়ে স্বাধীন ব্যবসা শুরু করেছিল এবং এলিসেন্দা অভিজাত রমণীদের মতো মূল্যবান জুতো আর পোশাক কিনেছিল। অন্যভাবে বললে, বুড়োর দর্শক কমে যাওয়াতে তারা একপ্রকার ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছিল এবং যে রোজগার তারা করেছে তা খরচ করার প্রয়োজনীয় সময় এবং সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। এইজন্য লেখক বলেছেন “বাড়ির মালিকদের অবশ্য বিলাপ করার কোনোই কারণ ছিল না”।

৬.২ শিক্ষার সার্কাস কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা আলােচনা করাে।

উত্তরঃ মালায়ালাম ভাষার স্বনামধন্য কবি আইয়াপ্পা পানিকরের একটি অনবদ্য কবিতা হলো ‘শিক্ষার সার্কাস’। কবিতার এই নামকরণ থেকে কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে এটাই অনুমান করা যেতে পারে যে কবি কোনোভাবে শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করতে চেয়েছেন। মূল কবিতাটি পাঠ করলে কবির অভিপ্রায় আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

শিক্ষা হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন নবীন শিক্ষার্থী তার পূর্বসূরীদের আয়ত্ত করা জ্ঞান আহরণ করতে পারে। কিছু প্রচলিত এবং কিছু অপ্রচলিত মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী শিখতে থাকে এবং সারাজীবন ধরেই সে কিছু না কিছু শেখে। কবি এখানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার অর্থাৎ বিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন এবং তাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

প্রচলিত পরীক্ষা ব্যবস্থা হল পরীক্ষাসর্বস্ব। এখানে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান পরিমাপ করা হয় বৎসরান্তে একটি মাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে। পরীক্ষায় পাশ করলেই যেহেতু একজন শিক্ষার্থী পরের শ্রেণীতে উন্নীত হতে পারে, তাই পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়াটাই ছাত্রছাত্রীদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে, জ্ঞানার্জন হয়ে ওঠে গৌণ বিষয়৷ এইভাবে একের পর এক শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যখন সব শিক্ষা শেষ হয়ে যায় তারপরও দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীর লব্ধ জ্ঞান শূন্য। কবি এই শিক্ষাব্যবস্থাটাকেই সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করতে চেয়েছেন।

৭। অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর। ৫×২ = ১০

৭.১ ‘গুরু’ নাটকে মােট ক’টি গান আছে ? শেষ গানটি কার জন্য গাওয়া হয়েছে ? গানটির মর্মার্থ লেখাে। ১+১+৩

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘গুরু’ নাটকে সাতটি গান আছে ।

রবীন্দ্রনাথের ‘অচলায়তন’ নাটকে তেরােটি গান আছে। অচলায়তনের রূপান্তরিত ‘ গুরু’ নাটকে অচলায়তনের ছটি গান নেওয়া হয়েছে। একটি নতুন গান সংযােজিত হয়েছে ‘গুরু’নাটকের শেষে। ‘গুরু’ নাটকে নাট্যকার গানের সংখ্যা কমিয়ে এনেছেন সম্ভবত নাটককে সংক্ষিপ্ত, গতিময় ও নাট্যদ্বন্দ্বকে তীক্ষ্ণতর করার উদ্দেশ্যে।

‘গুরু’ নাটকের প্রথম গানটি পঞ্চকের। গান গাইতে গাইতে পঞকের প্রবেশ। গানটি আট চরণের। চারভাগে গানটি গাওয়া হয়েছে সংলাপের মাঝে মাঝে। দীর্ঘদিন পরে গুরু যে অচলায়তনে আসছেন, পঞ্চকের গানের মধ্যে তা আভাসিত। গুরুর জন্য, ব্যাকুলতা, তা প্রকাশিত আকাশে। তাঁর আগমনের বার্তা বাতাসে। এভাবে গুরুর আগমনবার্তা অচলায়তনের সর্বত্র প্রচারিত।

প্রথম গানের মতাে দ্বিতীয় গানটিও পঞ্চকের একক কণ্ঠে। অপূর্ব এক নাটকীয় পরিস্থিতিতে গানটি গেয়েছে পঞ্চক, অবশ্য আরও অন্যান্য আয়তনিকদের সঙ্গে নৃত্য সহযােগে। অচলায়তনের জীর্ণ পুথিসর্বস্ব নীরস নিষ্প্রাণ জীবন থেকে মুক্তির জন্যে আচার্য গুরুর কাছে কামনা করেছেন হৃদয়ের বাণী, প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে তােলার শক্তি। পঞ্চকেরও একই কামনা। তাই তার নৃত্যসহ উদাত্ত কণ্ঠে গান— ‘ওরে ওরে ওরে আমার মন মেতেছে ……’ তৃতীয় গানও পঞ্চকের একক কণ্ঠে, অবশ্য তার পিছনে যুনকরা দলবদ্ধ হয়ে নৃত্য করেছে। পাহাড়-মাঠের মুক্ত পরিবেশে মুক্তির সন্ধানে পঞ্চক। পরের গান যুনকের। তারা মনের আনন্দে চাষ করে। চাষ করাই তাদের কর্ম ও ধর্ম। পরের গানও তাদের। যার মর্মার্থ হল তাদের কাজের বাছবিচার নেই। তারা সব কাজেই হাত লাগায়। কর্মমার্গই হল তাদের সাধন পথ। দর্ভকদের গান পরের গান। তারা শাস্ত্র জানে না, তারা নামগান করে। সেই নামগানই তারা শােনায়। নাটকের শেষ গান একেবারে সমাপ্তি লগ্নে। যুনক ও দর্ভকেরা গুরুকে প্রদক্ষিণ করে গুরুর জয়গান গেয়েছে — ‘ভেঙেছে দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়/তােমার হউক জয়।’

৭.২ ‘পঞ্চকদাদা বলেন অচলায়তনে তাকে কোথাও ধরবে না’— বক্তা কে ? পঞ্চকদাদা কে ? তাঁকে বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে ? তাকে কোথাও ধরবে না পঞ্চকদাদার এরকম মনে হয়েছে কেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকের প্রথম দৃশ্যে উপস্থিত বালকদের মধ্যে প্রথম বালকটি একথা বলেছিল।

পঞ্চকদাদা অর্থাৎ, পঞ্চক হল অচলায়তনের একজন বয়স্ক শিক্ষার্থী। সে অচলায়তনের পুঁথিগত বিদ্যা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। এইজন্য যথা সময়ে তার শিক্ষালাভ সম্পুর্ণ হয়নি। তার আরেকটি পরিচয় হল, সে অচলায়তনের মহাপন্ডিত মহাপঞ্চকের ভাই।

প্রথম বালকটি ‘তাঁকে’ বলতে গুরুকে বোঝাতে চেয়েছিল।

অচলায়তনের কেউই গুরুকে কোনদিন স্বচক্ষে দেখেনি। গুরু আসছে শুনে সকলের মধ্যেই কৌতুহল দেখা যায়। সকলেই নিজের মতো করে গুরুকে কল্পনা করে নেয়। মহাপঞ্চক, উপাধ্যায় প্রভৃতির মনে হয়েছিল যে গুরু হবেন মূর্তিমান ঈশ্বর এবং অচলায়তনের মন্ত্র-তন্ত্র-আচারের প্রতি নিষ্ঠাবান একজন যোগী পুরুষ। অপরদিকে, পঞ্চকের মনে হয়েছিল যে গুরু হবেন এসবের উর্দ্ধে।

অচলায়তনের অন্যান্য আবাসিকদের তুলনায় পঞ্চক ছিল মুক্ত মনের অধিকারী। অচলায়তনের প্রাচীরঘেরা জীবন এবং পুঁথিগত বিদ্যা তার মনঃপুত ছিল না। সে মনে মনে প্রার্থনা করেছিল যে গুরুর আগমন হোক এবং সে পুঁথির বোঝা থেকে নিস্তার পাক। তার অনুভবে গুরু ছিলেন একজন উদার প্রকৃতির মহামানব। আর তাঁর এই বিশালতার কথা কল্পনা করে পঞ্চক বলেছিল যে অচলায়তনে তাঁকে কোথাও ধরবে না। গুরু পুঁথিপত্র, মন্ত্র-তন্ত্র, যাগ-যজ্ঞ, আচারনিষ্ঠার ঊর্ধ্বে। তাঁকে যথার্থভাবেই অচলায়তনে ধরতো না। তাই নাটকের শেষে দেখি, গুরু নিজে এসে আয়তনের প্রাচীর ভেঙে ফেলেছেন।

৭.৩ “পৃথিবীতে জন্মেছি, পৃথিবীকে সেটা খুব কষে বুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি”— কে, কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছে ? উক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে পঞ্চক এসে উপস্থিত হয় পাহাড় মাঠে। সেখানে ঘৃনকদের বসতি। তাদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় পঞ্চক জানতে চায় যে, তারা চাষ করে কিনা। এর উত্তরে প্রথম যূনক এই কথাগুলি বলেছিল।

যূনকদের জীবনে কর্মই হল ধর্ম। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত নানা কাজে নিযুক্ত থাকে। আর সব কাজের মতো তারা চাষও করে। চাষ করে তারা যে শস্য উৎপাদন করে তা দিয়ে তারা নিজেদের ভরণপোষণ করে এবং অন্যদেরও খাবার জোগান দেয়।

এই শস্য দিয়ে অচলায়তনের আবাসিকরাও উদরপূর্তি করে থাকে কিন্তু তাদের চাষ করা চলে না, কারণ, সেটা শাস্ত্র মতে নিষিদ্ধ। কেন নিষিদ্ধ তারও কোনো যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা নেই। আসলে, শাস্ত্রবিধির বাধানিষেধ তাদের জীবনকে এমনই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে যে বদ্ধ জলাশয়ের মতো নিস্তরঙ্গ জীবনযাপনে তারা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। অচলায়তনের বাইরে থেকে তাদের অস্তিত্ব টের পাওয়া না ৷

এর ঠিক বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে যূনকরা দিনরাত নানা কাজের মধ্য দিয়ে তাদের অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করছে। চাষ করার সময় তারা লাঙ্গলের ফলা দিয়ে এমনভাবে পৃথিবীর বুক ছিন্নভিন্ন করে করে দেয় যে পৃথিবীও তাদের কথা স্মরণে রাখে। এইজন্য প্রথম যুনক বলেছিল “পৃথিবীতে জন্মেছি, পৃথিবীকে সেটা খুব কষে বুঝিয়ে দিয়ে তবে ছাড়ি।”

৮। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫×২ = ১০

৮.১ চর্যাপদের পুঁথি কে আবিষ্কার করেন ?
আনুমানিক কোন সময়ে চর্যাপদগুলি রচিত
হয়েছিল ? এই পদগুলিতে তৎকালীন
সমাজজীবনের যে প্রতিফলন দেখা যায়, সংক্ষেপে লেখাে।

উত্তরঃ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নির্দশন হলো চর্যাপদ। মহামোহপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবার থেকে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন এবং ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে “ হাজার বছরের পুরান বাঙালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা ” নামে প্রকাশ করেন।

চর্যার রচনার সময়কাল নিয়েও ইতিহাস গবেষকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ও প্রবোধচন্দ্র বাগচীর মতে চর্যার পদগুলি খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত। কিন্তু ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও রাহুল সাংকৃত্যায়ন এই সময়কালকে আরও ২০০ বছর পিছিয়ে দিয়ে চর্যার রচনাকাল খ্রিস্টীয় অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী বলে মতপ্রকাশ করেছেন।

চর্যাপদের কবিগণ বাস্তব জীবনের বিভিন্ন চিত্রকে রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছেন তাঁদের রচিত পদগুলিতে। সেজন্য চর্যাপদ থেকে তখনকার সমাজজীবন সম্পর্কে অনেক কথাই জানতে পারা যায়।

বর্ণভেদঃ ‘চর্যাপদ এর পদগুলিতে নিম্নবর্গীয় ডােম শবরদের মতাে মানুষ সাধারণ জনবসতি থেকে দূরে বাস করত। উচ্চবর্ণের মানুষেরা এইসব নিম্নবর্ণের মানুষদের ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করত।

জীবিকাঃ প্রাচীন বাংলার মানুষের যে কয়েকটি জীবিকার উল্লেখ আছে এই গ্রন্থে, তা হল তাঁত বােনা, চাঙ্গারি তৈরি করা, পশু-শিকার করা, নৌকা বাওয়া, মাছ ধরা, মদ তৈরি ও বিক্রি করা, জঙ্গলের গাছ কাটা প্রভৃতি।

আহার্যঃ প্রধান খাদ্য হিসেবে ভাত এবং অন্যান্য আহার্য বস্তু হিসেবে দুধ, মাছ ও মাংসের উল্লেখ পাওয়া যায় চর্যাপদ-এ।

উৎসব-অনুষ্ঠানঃ ‘চর্যাপদএর যুগে বাজনা বাজিয়ে বরের বিবাহ করতে যাওয়ার প্রচলন ছিল; এমনকি যৌতুক প্রথারও উল্লেখ পাওয়া যায়। সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে নাচ, গান ও অভিনয়ের যে প্রচলন ছিল, একটি পদে তার প্রমাণও পাওয়া যায়।

বিনােদনঃ সেকালে মাদল, পটহ, ডমরু, বাঁশি, একতারা, বীণা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ছিল। অবসর বিনােদনের জন্য নববল’ বা দাবা খেলা হত আর কপূর সহযােগে পান খাওয়া ছিল বিশেষ বিলাসিতা।

দস্যু ভয়ঃ ‘চর্যাপদ’-এর যুগে দেশে চোর-ডাকাতের, জলদস্যুর যেমন উপদ্রব ছিল, তেমনি সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও ছিল।

বিচারব্যবস্থাঃ তবে সমাজে যেমন চোর ডাকাত দস্যুর উৎপাত ছিল, তেমনি বিচার ব্যবস্থার অস্তিত্বের ও প্রমাণ মেলে। চোর ধরার জন্য “দুষাধী” অর্থাৎ দারোগা এবং শাস্তির জন্য “উআরি” অর্থাৎ থানার ব্যবস্থার কথা ও চর্যাপদ থেকে জানা যায়।

যৌতুক প্রথাঃ বিবাহ উৎসবে যৌতুক প্রথা ও প্রচলিত ছিল। “জাউতুকে কি অ আনতু ধাম” – পঙ্কতি বিবাহে যৌতুক দেওয়া রীতির পরিচয় পাওয়া যায়।

উপসংহারঃ চর্যাপদ যদিও বৌদ্ধ সাধন সংগীত তার সত্বেও তা সমকালীন সমাজের জীবন্ত দলিল এবং সম্ভবত এই সমাজ ব্যবস্থায় সমকালীন গৌড় বঙ্গের সমাজ জীবনেরই ছায়াপাত ঘটেছে।

৮.২ শ্রীচৈতন্যদেব কত খ্রিস্টাব্দে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ? বাংলা সাহিত্যে চৈতন্যদেবের প্রভাব আলােচনা করো।

উত্তরঃ শ্রীচৈতন্যদেব ১৪৮৬ খ্রি: নদীয়া জেলার অন্তর্গত নবদ্বীপে জন্ম গ্রহণ করেন। বাংলার সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে যে মহাপুরুষের প্রভাব সব থেকে বেশি তিনি হলেন শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু । তাকে কেন্দ্ৰ করেই হয়ে থাকে যুগ বিভাজন। যথা – প্রাক-চৈতন্যেযুগ, চৈতন্য সমসাময়িক ও চৈতন্য পরবর্তী যুগ নিজে কোনো গ্রন্থ রচনা না করেও তিনি বাংলা সাহিত্যে বিশাল প্রভাব ফেলেছেন। নিম্নে তা বর্ণিত হল—

• চৈতন্যের আগে বৈষ্ণব সাহিত্যে কৃষ্ণের ঐশ্বর্যভাবের প্রাধান্য থাকলেও চৈতন্যদেবের মৃত্যুর পরে মূলত কৃষ্ণের মাধুর্যভাব নিয়েই পদরচনা শুরু হয়।

• চৈতন্যদেবের প্রভাবেই বাংলা সাহিত্যে রচিত হয় ‘গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ’ এবং ‘গৌরচন্দ্রিকা’ বিষয়ক নানা পদ।

• মহাপ্রভুর দিব্যজীবনকে কেন্দ্র করে এরপর শুরু হয় চরিতসাহিত্য রচনার জোয়ার। এই জীবনীসাহিত্যের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল লােচনদাসের। চৈতন্যমঙ্গল’, বৃন্দাবনদাসের চৈতন্যভাগবত’, কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত প্রভৃতি।

• ভারতীয় রসতত্ত্বের সঙ্গে চৈতন্যপ্রভাবে ভক্তিরসতত্ত্ব নামে এক নতুন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এইরকম রসতত্ত্বজাতীয় দুটি গ্রন্থ হল, ভক্তিরসামৃতসিন্ধু, উজ্জ্বলনীলমণি।

• চৈতন্যদেবের প্রভাবে অনেক ইসলামি কবিও রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা নিয়ে পদ রচনা করেছেন।

• চৈতন্য-পরবর্তী সময়ে রচিত অনুবাদ কাব্য, মঙ্গলকাব্য, লােকসাহিত্যের মধ্যেও চৈতন্যদেবের বিশেষ প্রভাব লক্ষ করা যায়। কাশীদাসী মহাভারতের পরতে পরতে বৈষ্ণবীয় রুচি ও কোমলতার ছোঁয়া অনুভব করা যায়। অষ্টাদশ উনবিংশ শতাব্দীর শাক্তপদাবলি ও বাউলগানের মধ্যেও যে ভক্তিরসের ধারা প্রবাহিত হয়েছিল, তার উৎসেও চৈতন্য প্রভাবের প্রতিফলন দেখা যায়। চৈতন্য-পরবর্তীকালের মঙ্গলকাব্যের বন্দনা অংশে স্থান পায় ‘চৈতন্যবন্দনা’।

৮.৩ মাইকেল মধুসূদন দত্তের দুটি নাটকের নাম লেখাে। নাট্যকার হিসেবে তার কৃতিত্ব আলােচনা করাে।

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা দুটি নাটক হল- শর্মিষ্ঠা এবং পদ্মাবতী।

ভূমিকাঃ বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাসে মধুসূদন এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। বাংলা নাট্যমঞ্চে মধুসূদনের আবির্ভাব কিছুটা আকস্মিকভাবেই। বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘রত্নাবলী’ নাটকের অভিনয় দেখতে গিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে যথার্থ নাটকের অভাব অনুভব করেছিলেন। সংস্কৃতানুগ বাংলা নাটকের মুক্তির জন্য তিনি নিজে নাটক রচনা করবেন মনস্থির করেন। বিষয়বস্তু আহরণের জন্য তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির গ্রন্থাগার থেকে কয়েকটি সংস্কৃত ও বাংলা গ্রন্থ আনেন। এরপরেই লেখেন তাঁর প্রথম নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’(১৮৫৯)। তারপর একে একে রচনা করেন ‘পদ্মাবতী’ (১৮৬০) ও ‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১) নাটক এবং দুটি প্রহসন- ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’ (১৮৬০)।

নাট্যকার হিসেবে মধুসূদন দত্তের কৃতিত্বঃ

(১) বাংলা নাটকে তিনিই প্রথম সংস্কৃত রীতি পরিহার করে ইউরোপীয় রীতি প্রবর্তন করেন। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যে আধুনিক নাটকের সূত্রপাত ঘটেছিল।

(২) তাঁর কৃষ্ণকুমারী নাটকটি একটি সার্থক ঐতিহাসিক নাটক এবং একইসঙ্গে প্রথম বাংলা ঐতিহাসিক ট্রাজেডি।

(৩) নাট্যকার হিসেবে মধুসূদন দত্ত সমাজ এবং সমকালের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। তাই দেখা যায়, তাঁর রচিত প্রহসন দুটিতে সমকালীন সামাজিক অসঙ্গতির প্রতি চরম ব্যাঙ্গের আঘাত হানা হয়েছে।

মূল্যায়নঃ মধুসূদন বাংলা নাটককে আধুনিকতার অঙ্গনে এনেছিলেন। তিনি নাটকের সংলাপে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেছেন। তিনি বাংলা নাটকের একটি পথরেখা তৈরি করে দিয়েছিলেন যা পরবর্তী বহু নাট্যকার অনুসরণ করেছেন।

৮.৪ লােককথা কাকে বলে ? লােককথার
যে-কোনাে দুটি শাখার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ১+২+২

উত্তরঃ লোকসংস্কৃতির প্রধানতম অঙ্গটি হলো লোককথা। যে সকল কথা (বা, কাহিনি) বহুযুগ ধরে লোকমুখে প্রচলিত আছে সেগুলিকে লোককথা বলে।

লোক সমাজে প্রচলিত রূপকথা, উপকথা, নীতিকথা, ব্রতকথা, পুরাণকথা, জনশ্রুতি- এসবই লোককথার অন্তর্গত। নিচে লোককথার দুটি শাখা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল—

রূপকথাঃ রূপকথায় থাকে রাক্ষস-খােক্কস, আর রাজপুত্র এদেরকে বধ করে রাজকন্যা আর অর্ধেক রাজত্ব অধিকার করে।

অবাস্তব এবং অদ্ভুত পরিবেশ সৃজন, চরিত্রসমূহের অস্পষ্টতা, আয়তনের দীর্ঘতা এবং কাহিনির জটিলতা রূপকথার বৈশিষ্ট্য। রূপকথার কোনাে চরিত্রেরই কোনাে নাম নেই—কেবল রাজা, রাজপুত্র, রানি ইত্যাদি হল তাদের পরিচয়। কোনাে রাজ্যেরও নাম নেই—কেবল থাকে কোনাে-এক দেশের রাজার উল্লেখ। ঘুরেফিরে আসে তেপান্তরের মাঠ, আর তিরপনির ঘাট। কিন্তু সেগুলি কোথায় তা কেউ জানে না। এই অনির্দিষ্টতাই রূপকথাকে সর্বজনীন করে তুলেছিল। বাংলা রূপকথায় রাজাদের একাধিক স্ত্রী থাকার উল্লেখ পাওয়া যায়। নিয়তি বা ভাগ্য বাংলা রূপকথায় গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অধিকার করে থাকে। যেমনকাজলরেখার কাহিনি। আবার প্রেমও বাংলা রূপকথায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে অনেকক্ষেত্রে। যেমন- মধুমালা বা শঙ্খমালার কাহিনি।

ব্রতকথাঃ বাংলার ব্রতকথাগুলি বাংলার লৌকিক দেবদেবীদের অবলম্বন করে লেখা হয়েছে। এই ব্রতকথাগুলি হল উচ্চতর সংস্কৃতি ও আদিম সংস্কারগুলির মিশ্রণের ফল। অনিষ্টকারী কোনাে দেবতাকে সন্তুষ্ট করে তার দ্বারা কল্যাণ সাধন করাই বাংলার ব্রতকথাগুলির উদ্দেশ্য। ব্রতকথায় দোষগুণ-সমন্বিত মানবরূপেই দেবতাদের আবির্ভাব ঘটে। সুখ-দুঃখ, প্রতিহিংসা, হাসিকান্নার অনুভূতি এই দেবতাদের মধ্যে দেখা যায়। ব্রতকথার দেবতাদের সঙ্গে মঙ্গলকাব্যের দেবতাদের ভাবগত অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। নিতান্ত পার্থিব জীবনই ব্রতকথার বিবেচ্য, দেবদেবীরাও তার সঙ্গেই যুক্ত। গার্হস্থ্য সুখসমৃদ্ধির সন্ধানই ব্রতকথার লক্ষ্য। কখনাে কখনাে রূপকথাকে কিছুটা পরিবর্তিত করে ব্রতকথার আকার দেওয়ার চেষ্টাও লক্ষ করা যায়। যেমন সঙ্কটার ব্রতকথা।

৯। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: ৫ × ১ = ৫

৯.১ প্রাকৃত ভাষার এইরূপ নামকরণের কারণ কী ? এই ভাষার তিনটি আঞ্চলিক রূপের নাম লেখাে। ২+৩

উত্তরঃ ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে, ভারতীয় আর্য ভাষার বিবর্তনের মধ্য দিয়েই বাংলা, হিন্দি, ওড়িয়া, অসমীয়া প্রভৃতি ভারতের আধুনিক ভাষাগুলির জন্ম হয়েছে। ভারতীয় আর্য ভাষার সাড়ে তিন হাজার বছরের ইতিহাসকে তিনটি যুগে বিভক্ত করা হয়। যথা—
(১) প্রাচীন ভারতীয় আর্য (খ্রি:পূ:১৫০০-
খ্রি:পূ: ৬০০ )
(২) মধ্য ভারতীয় আর্য (খ্রি: পূ: ৬০০- ৯০০ খ্রি:)
(৩) নব্য ভারতীয় আর্য (৯০০খ্রি:- বর্তমান)

মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার প্রধান কথ্যরূপটি হল প্রাকৃত ভাষা যা সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুশাসন থেকে বেরিয়ে এসে সাধারণ জনগণের ভাষা হয়ে উঠেছিল। এই ভাষাটিকে প্রাকৃত ভাষা বলা হয় দুটি কারণে—

(১) ব্যাকরণের আলোচনায় ‘প্রকৃতি’ শব্দের অর্থ হল মূল উপাদান। বৈদিক-সংস্কৃত ভাষার মূল উপাদান নিয়ে এই ভাষার জন্ম তাই একে বলা হয় প্রাকৃত ভাষা।

(২) প্রাকৃত ভাষা বলতে প্রাকৃত জনের বা সাধারণ জনগণের মুখের ভাষাকে ও বোঝায়। উল্লেখ্য যে, সংস্কৃত ছিল শিক্ষিত মানুষের ভাষা এবং ব্যাকরণের বেড়াজাল থাকায় সাধারণ মানুষের পক্ষে সংস্কৃত আয়ত্ত করা সম্ভব হত না। এইজন্য সাধারণ মানুষ সংস্কৃত ভাষার মূল উপাদান গ্রহণ করে যে ভাষায় কথাবার্তা বলত তাকেই প্রাকৃত ভাষা বলা হয়।

প্রাকৃত ভাষার তিনটি আঞ্চলিক রূপ হল- (১) মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত (২) শৌরসেনী প্রাকৃত (৩) মাগধী প্ৰাকৃত।

৯.২ অবর্গীভূত ভাষা কাকে বলে ? পৃথিবীর
উল্লেখযােগ্য কয়েকটি অবর্গীভূত ভাষার
পরিচয় দাও।

অবর্গীভূত ভাষাঃ পৃথিবীর যেসব ভাষার সঙ্গে অন্য কোনো ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক সাদৃশ্য পাওয়ার যায়নি কিংবা সামান্য কিছু সাদৃশ্য পাওয়া গেলেও এমন কোনো তাত্ত্বিক প্রমাণ বা সূত্র স্থাপন করা যায় না যার মাধ্যমে তাদের বংশ চিহ্নিত করা সম্ভব হতে পারে, এই ভাষাগুলিকে অবর্গীভূত বা অশ্রেণিবদ্ধ (Unclassified) ভাষা বলে। পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অবর্গীভূত ভাষার পরিচয়:

কয়েকটি অবর্গীভূত ভাষাঃ

পৃথিবীতে বহুসংখ্যক অবর্গীভূত ভাষা রয়েছে।সেগুলির মধ্যে বেশিরভাগই ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ভাষা। তবে দুয়েকটি সমৃদ্ধ ভাষাও রয়েছে যেগুলি ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে অবর্গীভূত ভাষার পর্যায়ে পড়ে।

জাপানি ভাষাঃ জাপানের প্রধান ভাষা হল জাপানি ভাষা। এটি একটি সমৃদ্ধ ভাষা। অনেকে এই ভাষাতে আলতাই শ্রেণীভুক্ত বলে মনে করেন। কিন্তু আলতাই শ্রেণীভুক্ত ভাষাগুলির সঙ্গে জাপানি ভাষার যেমন কিছু সাদৃশ্য রয়েছে তেমনি বেশ কিছু বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। তাছাড়া জাপানি ভাষা ও লিপিতে চিনা ভাষার প্রভাব রয়েছে। এসব কারণে ভাষাতাত্ত্বিকগণ জাপানি ভাষাকে একটি অবর্গীভাষা বলে অভিহিত করেন।

কোরীয় ভাষাঃ কোরীয় ভাষাও একটি সমৃদ্ধ অবর্গীভূত ভাষা। অনেকেই এই ভাষাকে আলতাযই শ্রেণীভুক্ত করার চেষ্টা করেন কিন্তু এই অভিমত গ্রহণযোগ্য নয়৷ তাছাড়া কোরীয় ভাষাতেও মোঙ্গল-মাঞ্চ এবং চীনা ভাষার সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। এজন্য এটিকে অবর্গীভূত ভাষা বলে গণ্য করা হয়।

বাস্ক ভাষাঃ ফ্রান্স ও স্পেনে প্রচলিত অবর্গীভূত ভাষা হল বাস্ক। ফিনো-উগ্রীয় ভাষা বংশের সঙ্গে এই ভাষায় আপাত সাদৃশ্য থাকলেও এই ভাষাকে কোনো নির্দিষ্ট ভাষাবংশের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না।

৯.৩ বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে
আলােচনা করাে। ৫

উত্তরঃ বাংলা লিপির উদ্ভব নিয়ে পণ্ডিতমহলে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে। বিতর্কের বিষয় দুটি– বাংলা লিপি কোন লিপি থেকে এসেছে আর কোন সময়ে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে।

সিন্ধু লিপি ছাড়া প্রাচীন ভারতের প্রধান দুটি লিপি হল ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী। সিন্ধু লিপির এখনো পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি তাই সিন্ধু লিপি থেকে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে একথা বলা যাবে না। খরোষ্ঠী লিপির সঙ্গে বাংলা লিপির কোনো সাদৃশ্য নেই। তাই একটা বিষয়ে পণ্ডিতগণ একমত যে বাংলা লিপি এসেছে ব্রাহ্মী লিপি থেকে। ব্ৰাহ্মী থেকে বাংলা লিপির উদ্ভবের ইতিহাসটি এইরকম—

খ্রীঃ পূঃ অষ্টম-সপ্তম শতকে ব্রাহ্মী লিপির উদ্ভব হয়েছিল। খ্রীঃ পূঃ দ্বিতীয়-প্রথম শতকে ব্রাহ্মী লিপির উত্তর ভারতীয় লিপিরূপ থেকে জন্ম নেয় কুষাণ লিপি। কুষাণ লিপি থেকে আসে গুপ্ত লিপি গুপ্তলিপির পুর্বী শাখার পুর্ব বিভাগ থেকে জন্ম নেয় সিদ্ধমাতৃকা লিপি। সপ্তম শতকে আসে কুটিল লিপি। আর কুটিল লিপি থেকেই বাংলা লিপির জন্ম হয়।

ঠিক কোন সময়ে বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছিল তা আজ আর জানা সম্ভব নয় তবে অষ্টম শতক থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে কোনো এক সময়ে বাংলা লিপির জন্ম হয়েছিল বলে অধিকাংশ পণ্ডিত মত পোষণ করেছেন।

CLASS 11 BENGALI QUESTION PAPER
2014 2015 2016 2017 2018
2019 2020 2022 2023 2024

Leave a Reply