WBCHSE HIGHER SECONDARY (XI) BENGALI QUESTION PAPER WITH ANSWER 2015
একাদশ শ্রেণি বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৫, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র সঠিক এবং নির্ভুল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তোমরা অবশ্যই তোমাদের সাবজেক্ট শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়ে নেবে। নিচে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র দেওয়া হলো।
একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা
নতুন পাঠক্রম
বাংলা ‘ক’ ভাষা
২০১৫
সময় : ৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট [পূর্ণমান : ৮০]
✪ পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে। বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কাটা যাবে। ডানপাশে প্রশ্নের পূর্ণমান দেওয়া আছে।
১.ঠিক উত্তরটি নির্বাচন করাে : [ ১x১৮ = ১৮ ]
১.১ আগে ভাগে ভূতে পেয়ে বসেছে—
(ক) সমাজকে (খ) ওঝাকে
(গ) অর্বাচীনদের (ঘ) মাসিপিসিদের
উত্তরঃ (খ) ওঝাকে।
১.২ মহানগরী থেকে তেলেনাপােতার সম্ভাব্য দূরত্ব—
(ক) কুড়ি মাইল (খ) বাইশ মাইল
(গ) পঞ্চাশ মাইল (ঘ) ত্রিশ মাইল
উত্তরঃ (ঘ) ত্রিশ মাইল।
১.৩ “এর আগেরবার সৌখী জেল থেকে এনেছিল”—
(ক) একটি থালা (খ) একটি জামা
(গ) একটি কম্বল (ঘ) একটি চাদর
উত্তরঃ (গ) একটি কম্বল।
১.৪ “বসে আছেন কেন ? টান দিন”– উক্তিটির বক্তা—
(ক) যামিনী (খ) গাড়ােয়ান (গ) মণি (ঘ) নিরঞ্জন
উত্তরঃ (ক) যামিনী।
👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈
১.৫ খােকার মা নাকে কেঁদে স্বামীকে মনে করিয়ে দিলেন—
(ক) তার বাজার খরচ ফুরিয়েছে
(খ) খােকার নতুন জামা চাই
(গ) বাড়িতে আত্মীয় আসবে
(ঘ) লােটা হল বাড়ির লক্ষ্মী
উত্তরঃ (ঘ) লােটা হল বাড়ির লক্ষ্মী।
১.৬ গতস্য শােচনা নাস্তি ‘ কথাটির অর্থ—
(ক) ভুলের জন্য অনুশােচনা
(খ) যা হয়ে গেছে তার জন্য অনুশােচনা করে লাভ নেই
(গ) অনুশােচনাই সংশােধনের উপায়
(ঘ) অনুশােচনা করলেই ক্ষমা করা যায় না
উত্তরঃ (খ) যা হয়ে গেছে তার জন্য অনুশােচনা করে লাভ নেই।
১.৭ “সেই গ্রীক দার্শনিকের কথা সকলেই মাথা পেতে নেয় নির্বিচারে”–সেই দার্শনিকের নাম—
(ক) গালিলিও (খ) অ্যারিস্টটল
(গ) মাইকেল এন্জেলাে (ঘ) কোপারনিকাস
উত্তরঃ (খ) অ্যারিস্টটল।
১.৮ গালিলিও ডাক্তারিতে যখন ভরতি হন তখন তার বয়স ছিল—
(ক) আঠারাে (খ) পনেরাে (গ) ষােলো
(ঘ) সতেরাে
উত্তরঃ (ঘ) সতেরাে।
১.৯ জনার পুত্রের নাম কী ?
(ক) কর্ণ (খ) প্রবীর (গ) অভিমন্যু (ঘ) অশ্বত্থামা
উত্তরঃ (খ) প্রবীর
১.১০ ‘বাজাও পাঞ্চজন্য’– পাঞ্চজন্য কী ?
(ক) কৃষ্ণের বাঁশি (খ) অর্জুনের শাঁখ
(গ) কৃষ্ণের শাঁখ (ঘ) নারদের বীণা
উত্তরঃ (গ) কৃষ্ণের শাঁখ।
১.১১ “পড়শী যদি আমায় ছুঁত।”– পড়শি ছুঁলে কী হবে ?
(ক) যম-যাতনা দূর হবে
(খ) সুবুদ্ধির বিকাশ হবে
(গ) সমাজ সচেতনতা বাড়বে
(ঘ) ভালােবাসা বোধ জাগবে
উত্তরঃ (ক) যম-যাতনা দূর হবে।
১.১২ ‘বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি।’
(ক) পাখির খাঁচা (খ) ফুলের টব
(গ) গােলাপ চারা (ঘ) ফুলের তােড়া
উত্তরঃ (গ) গােলাপ চারা
১.১৩ ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটির অনুবাদক—
(ক) শক্তি চট্টোপাধ্যায় (খ) সুভাষ মুখােপাধ্যায়
(গ) বিষ্ণু দে (ঘ) উৎপল কুমার বসু
উত্তরঃ (ঘ) উৎপল কুমার বসু
১.১৪ ‘অভিনব জয়দেব’ নামে পরিচিত—
(ক) চণ্ডীদাস (খ) বিদ্যাপতি (গ) জ্ঞানদাস (ঘ) গােবিন্দদাস
উত্তরঃ (খ) বিদ্যাপতি
১.১৫ ‘নীলদর্পণ’ নাটকটির রচয়িতা—
(ক) মধুসূদন দত্ত (খ) গিরিশচন্দ্র ঘােষ
(গ) দীনবন্ধু মিত্র (ঘ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
উত্তরঃ (গ) দীনবন্ধু মিত্র
১.১৬ কোন্ টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা উপন্যাস ?
(ক) গৃহদাহ (খ) আরণ্যক (গ) কবি (ঘ) ঘরেবাইরে
উত্তরঃ (ঘ) ঘরেবাইরে
১.১৭ শ্ৰীকৃবিজয় ’ গ্রন্থটির রচয়িতা—
(ক) মালাধর বসু (খ) পরমানন্দ গুপ্ত
(গ) দ্বিজমাধব (ঘ) যশােরাজ খান
উত্তরঃ (ক) মালাধর বসু
১.১৮ ভারতে প্রচলিত দ্রাবিড় ভাষাবংশের একটি প্রধান ভাষা—
(ক) তামিল (খ) সাঁওতালি (গ) নাগা (ঘ) ওড়িয়া
উত্তরঃ (ক) তামিল।
২। অনধিক ২০টি শব্দে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও। ১×১২ = ১২
২.১ “অন্যায় সমরে মূঢ় নাশিল বালকে, ‘মূঢ়’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ এখানে ‘মূঢ়’ বলতে অর্জুনকে বােঝানাে হয়েছে।
অথবা,
‘সত্যবতীসূত ব্যাস বিখ্যাত জগতে।’-ব্যাস কেন বিখ্যাত ?
উত্তরঃ মহাভারতের মহাভারতের রচয়িতা
রচয়িতা হিসাবে ব্যাসদেব বিখ্যাত।
২.২ “আমি বাঞ্ছা করি…”– ‘বাঞ্ছা’ শব্দের অর্থ কী ?
উত্তরঃ বাঞ্ছা শব্দের অর্থ ইচ্ছা বা কামনা।
২.৩ “হায় শৌখিন পূজারি..”– ‘শৌখিন পূজারি’ কে ?
উত্তরঃ কবি শৌখিন দেশভক্তদের শৌখিন
পূজারী বলেছেন।
২.৪ “সব দিন হয় না বাজার”– সবদিন বাজার না হওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ সবদিন হাতে পয়সা থাকে না তাই সবদিন বাজার হয় না।
২.৫ “দেশের লােক ভারি নিশ্চিন্ত হলাে।”– নিশ্চিন্ত হওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ বুড়াে কর্তা মারা যাওয়ার পরেও ভূত হয়ে তাদের ঘাড়ে চেপে থাকবে, এইজন্য দেশের লােক নিশ্চিন্ত হয়েছিল।
২.৬ “তার বাড়ি ফিরবার আনন্দ অর্ধেক হয়ে গিয়েছে মুহুর্তের মধ্যে তার আনন্দ অর্ধেক হওয়ার কারণ কী ?
উত্তরঃ কারণ বাড়ি ফিরে এসে সৌখী তার
সন্তানকে দেখতে পায় না।
২.৭ গ্রান্ড ডিউকের কাছ থেকে গালিলিও
রাজপণ্ডিত হিসেবে কী সম্মান পেয়েছিলেন ?
উত্তরঃ বছরে ১০০০ স্কুদি মাইনে এবং রাজপণ্ডিত ও দার্শনিক হিসাবে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন গ্যালিলিও।
২.৮ “আমরা আসা পর্যন্ত চৌকি দিচ্ছিল”— কারা, কেন চৌকি দিচ্ছিল ?
উত্তরঃ জাহাজের নিচে নৌকায় পাহারারত
পুলিশগুলাে জাহাজযাত্রীরা যাতে ডাঙায় নামতে পারে সেই জন্য চৌকি দিচ্ছিল।
২.৯ “সেই দুঃস্বপ্ন দেখে আঁতকে ওঠে”– কোন দুঃস্বপ্নের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ প্রথমবার ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে দেখার ঘটনাই পেলাইওর কাছে দুঃস্বপ্ন বলে মনে হয়েছে।
২.১০ বঙ্গালি উপভাষার একটি ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য লেখাে।
উত্তরঃ বঙ্গালি উপভাষায় অপিনিহিতির প্রয়ােগ লক্ষ্য করা যায়।
২.১১ IPA-এর পুরাে নাম কী ?
উত্তরঃ ইন্টার্নেশনাল ফোনটিক আলফাবেট।
২.১২ বিভাষা বা Ideolect বলতে কী বােঝো ?
উত্তরঃ ব্যক্তি মানুষের নিজস্ব ভাষা বা বাচনভঙ্গি হলাে বিভাষা বা ব্যক্তিভাষা (Ideolect)।
৩। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে ১টি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫×১ = ৫
৩.১ ‘ওরে অবােধ, আমার ধরাও নেই, ছাড়াও নেই, তােরা ছাড়লেই আমার ছাড়া’–এখানে কাদের অবােধ বলেছেন ? উক্তিটির তাৎপর্য আলােচনা করাে। ১+১+৩
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কর্তার ভূত’ গল্পে বুড়ো কর্তা ‘ভূতগ্রস্ত’ দেশবাসীকে ‘অবোধ’ বলে সম্বোধন করেছেন।
গল্পের শেষ অংশে কর্তার এই কথাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কর্তা মারা যাওয়ার পর দেশবাসী মনে করল যে কর্তা ভূত হয়ে তাদের ধরে রেখেছে। কর্তার অভিভাবকত্বে অনেকে শান্তি অনুভব করলেও দেশের নবীন প্রজন্ম বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এরকম অবস্থায় দেশের দু-একজন মানুষ যারা দিনের বেলায় ভুতুড়ে নায়েবের ভয়ে মুখ খুলতে পারে না, গভীর রাতে কর্তার শরনাপন্ন হয়। কর্তাকে তারা জিজ্ঞাসা করে যে কখন তিনি ছাড়বেন। কর্তা দেশবাসীকে অভয় দিয়ে বলেন-“তোরা ছাড়লেই আমার ছাড়া”।
কর্তা সম্পূর্ণ বাস্তব কথাই বলেছেন। আসলে কর্তা তো তাদের ধরে রাখেনি বরং তারাই কর্তাকে ধরে রেখেছে। কর্তা অনেক আগেই গত হয়েছেন কিন্তু পুরাতনপন্থী মানুষেরা নতুনের কাছে আত্মসমৰ্পণ করবে না বলেই কর্তার ভূতকে আঁকড়ে ধরে পড়ে ছিল। কর্তার ভূতের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই- জ্ঞানবিমুখ, ধর্মভীরু মানুষের মনেই তার আধিপত্য। মনোবিজ্ঞান অনুসারে, মানুষের ভয় থেকেই ভুতের জন্ম হয় এবং মানুষই তাকে পোষণ করে। কর্তার ভূত প্রসঙ্গেও একই কথা প্রযোজ্য।
৩.২ “এতক্ষণে বােঝে সৌখী ব্যাপারটা।”— কোন ব্যাপারটার কথা বলা হয়েছে ? কীভাবে এই ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিলেন, আলােচনা করাে। ১+৪
উত্তরঃ সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘ডাকাতের মা’ গল্পের সৌখীর মা যে চোদ্দো আনা পয়সার জন্য লোটা চুরি করেছে-সেই ব্যাপারটাই সৌখী বুঝতে পেরেছিল।
ডাকাতসর্দার সৌখী জেল থেকে প্রায় পাঁচ বছর পর, নির্দিষ্ট মেয়াদের আগেই ছাড়া পেয়ে একদিন রাতে তার বাড়ি ফিরে আসে। তার স্ত্রী এবং না দেখা শিশুপুত্র তার শ্বশুরবাড়িতে থাকায় তার বিধবা মার সঙ্গেই কেবল দেখা হয়। সে রাতে খাওয়া দাওয়া করে সে তার বিধবা মাকে জেল থেকে আনা নতুন কম্বলটা দিয়ে নিজে মার পুরোনো কম্বলটা নিয়ে শুয়ে পড়ে অনেক বেলা অবধি ঘুমোনোর ইচ্ছা নিয়ে। কিন্তু সকালবেলায় হই-হট্টগোল শুনে সে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে যে, তার মা পাড়ার মাতাদিন পেশকারের লোটা চুরির করাতে পেশকারসাহেব বাসন-বিক্রেতাকে এবং থানার দারোগাসাহেবকে নিয়ে তাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছেন। তার মা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় এতটাই হতবুদ্ধি হয়ে যায় এবং ডাকাতসর্দারের মা হয়েও লোটাচুরির অভিযোগে এতটাই লজ্জিত হয়ে পড়ে যে, চুরির অভিযোগ অস্বীকার করতে পর্যন্ত ভুলে যায়। দারোগাসাহেব একটা লোটা দেখিয়ে যখন সৌখীর মাকে সেটি বাসনওয়ানাকে চোদ্দো আনায় বিক্রি করার কথা জিজ্ঞাসা করে, তখন সৌখীর মায়ের মুখ থেকে কোনো কথা বেরোয় না । শুধু একবার ছেলে সৌখীর দিকে তাকিয়ে মাথা হেঁট করে নেয় সে। এসবকিছু দেখেশুনেই সৌখী সমস্ত ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছিল।
৪। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে ১টি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫×১ = ৫
৪.১ “হে ভারতের শ্রমজীবী” শ্রমজীবী সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের ধারণা ‘সুয়েজখালে : হাঙ্গর শিকার’ রচনা অবলম্বনে লেখাে।
উত্তরঃ স্বামী বিবেকানন্দের ‘পরিব্রাজক ‘ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘সুয়েজখালেঃ হাঙ্গর শিকার’ প্রবন্ধে ভারতের অতীত ঐতিহ্য সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে লেখক ভারতের শ্রমজীবীদের মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন।
প্রথমেই স্বামীজি বলেছেন তাদের অনলস পরিশ্রমের কথা। প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সভ্যতা একটি সম্পদশালী সভ্যতা হিসাবে বহির্বিশ্বে খ্যাত ছিল আর এই সম্পদের ভিত্তি ছিল ভারতের শ্রমজীবী মানুষ। এই সম্পদের টানে বহু বিদেশী জাতি ভারতে ছুটে এসেছে- কেউ বাণিজ্য করার জন্য আবার, কেউ বা লুণ্ঠন করার জন্য। এইজন্য স্বামীজি বলেছেন- পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, দিনেমার, ইংরেজ প্রভৃতি জাতির ঐশ্বর্য হল এই সব সাধারণ মানুষের শ্রমদানের ফল।
একইসঙ্গে স্বামীজি একথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, মানব সভ্যতার মূল কান্ডারী এই শ্রমজীবীরা হলেও তারা কোনোদিন যোগ্য সম্মান পায়নি, বরং চিরকাল তারা দারিদ্র আর অবহেলার শিকার। স্বামীজী বলেছেন “দশ হাজার লোকের বাহবার সামনে কাপুরুষও অক্লেশে প্রাণ দেয়, ঘোর স্বার্থপরও নিষ্কাম হয়”, কিন্তু ভারতের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ কারো বাহবার আশা না করে নিজ নিজ কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। সকলের অজান্তে তারা যেসব ক্ষুদ্র কাজ করে যাচ্ছে তাতেই আসল বীরত্ব। তাই স্বামীজি তাদের সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়েছেন।
৪.২ “এই স্বভাবই শেষ জীবনে তার অশেষ
দুঃখের কারণ হল।”— কার, কোন স্বভাবের
কথা বলা হয়েছে ?সেই স্বভাব তার শেষ
জীবনে ‘অশেষ দুঃখের কারণ হল’ কীভাবে ? ১+৪
উত্তরঃ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ‘গালিলিও’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায় যে বাল্যকাল থেকেই গালিলিও সবকিছু যুক্তি সহকারে বিচার করে নিতেন। তখনকার দিনে প্রচলিত বিশ্বাস, ধ্যানধারণা কোনোকিছুই তিনি চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে পারতেন না। তাঁর এই যুক্তিবাদী স্বভাবই তাঁর শেষ জীবনে ‘অশেষ দুঃখের কারণ হয়েছিল।
গালিলিও যখন জন্মেছিলেন তখন ইউরোপে আক্ষরিক অর্থেই মধ্যযুগ; তখনও বিজ্ঞানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল পুরাতন ধর্মতন্ত্র;
কোপার্নিকাসের মতবাদ তখনো স্বীকৃতি বাধা পায়নি বরং টলেমি নির্দেশিত পথেই চলত গ্রহ-নক্ষত্রের পর্যবেক্ষণ। গালিলিও নিজের তৈরি দূরবীন নিয়ে যেসকল জিনিস আবিষ্কার করলেন তার ফলে কোপার্নিকাসের বিশ্ববিন্যাসের তত্ত্ব তাঁর কাছে অভ্রান্ত মনে হল।
সনাতনপন্থীরা তাঁর বিজ্ঞানসাধনাকে ‘ধর্মবিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এমনি ষড়যন্ত্রের জাল রচনা করেছিল যে জীবনের শেষ বছরগুলি তাঁর কাছে নারকীয় হয়ে উঠেছিল।
গালিলিও যদি সেদিন যুক্তি-তর্কের পরোয়া না করে মধ্যযুগীয় বিশ্বাসের কাছে মাথা নত করে নিতেন তাহলে হয়তো তাঁর শেষ জীবনে এতো বিপর্যয় নেমে আসতো না।
৫। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে ২টি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫×২ = ১০
৫.১ ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতায় জনার ক্রুদ্ধ অভিমানী স্বর কীভাবে ধরা পড়েছে ?
উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের “নীলধ্বজের প্রতি জনা” কবিতায় বীরাঙ্গনা জনা একজন সদ্য সন্তানহারা জননী। কিন্তু আলোচ্য কবিতায় জনার শোকালাপের থেকে ক্রুদ্ধ অভিমানী স্বর বেশি ফুটে উঠেছে।
মধুসূদন দত্তের লেখা বীরাঙ্গনা কাব্য নামক পত্ৰকাব্যের অন্তর্গত নীলধ্বজের প্রতি জনা পত্রকবিতায় অশ্বমেধ যজ্ঞের অশ্ব আটকে রাখার জন্য পার্থ তথা অর্জুনের সঙ্গে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাহেশ্বরী রাজ্যের যুবরাজ প্রবীরকে হত্যা করেন। রাজা নীলধ্বজ তার একমাত্র পুত্রের হত্যাকারীকে যুদ্ধে পরাজিত না করে তাকে তার সিংহাসনে বসিয়ে প্রভুজ্ঞানে সেবা করছেন।
ক্ষত্রিয়কুলের এই অনুচিত কার্যে রানী জনা অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে রাজা নীলধ্বজের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় জনা ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর স্বামীকে একটি অভিযোগপত্র লিখেছেন। পত্রে তিনি নানা দৃষ্টান্তের সাহায্যে অর্জুন চরিত্রের নীচতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও জনা স্বামীর মনে পুত্রহন্তার বিরুদ্ধে প্রতিশোধস্পৃহা জাগিয়ে তুলতে ব্যর্থ হন । স্বামী গুরুজন, তাই তাঁকে দোষারোপ করা উচিত কাজ নয় জেনেও পুত্রশোকাতুরা জনা তাঁর মনের দুঃখ ও অভিমানের কথা স্বামীকে না জানিয়ে পারেননি। এমনকি স্বামীকে তিনি ক্ষত্রিয়ধর্ম সম্পর্কেও স্মরণ করিয়ে তাঁর এইরূপ নিন্দনীয় কাজের সমালোচনা করেছেন। সবশেষে রাগ ও অভিমানের জ্বালা ভুলতে তিনি জাহ্নবীর জলে প্রাণ বিসর্জনের সংকল্প করেছেন। এখানেই তাঁর কুব্ধ ও অভিমানী স্বর তীব্র আকারে ধরা পড়েছে। স্বামীর মনোযোগ না পাওয়ায় তাই তাঁকে বলতে শোনা যায়—“এ জনাকীর্ণ ভবস্থল আজি/বিজন জনার পক্ষে।” এর জন্য তিনি অবশ্য তাঁর ভাগ্যকেই দোষারোপ করেছেন। এই ধরনের খেদোক্তির মধ্য দিয়ে জনার অভিমানী কণ্ঠস্বরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৫.২ “দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক।”— দ্বীপান্তরের ঘূর্ণিপাক’ কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
৫.৩ “বলবাে কী সেই পড়শীর কথা”— পড়শী কে ? উক্তিটির আলােকে পড়শীর স্বরূপ সম্পর্কে আলােচনা করাে। ১+৪
উত্তরঃ লালন ফকিরের ‘বাড়ীর কাছে আরশিনগর’ কবিতাটি একটি বাউলগান। বাউল দর্শন অনুযায়ী মানবশরীরের মধ্যে ঈশ্বরের বাসা। এই ঈশ্বর হল মানুষের অন্তরাত্মা অর্থাৎ তার একান্ত আপন ‘মনের মানুষ’। আলোচ্য গানটিতে এই মনের মানুষকে কবি আরশিনগরে বসতকারী “পড়শী” বলে অভিহিত করেছেন।
পড়শীকে দেখার জন্য কবি আকুল হয়ে উঠেছেন কিন্তু সে এমন জায়গায় বসবাস করে যে তার কাছে পৌঁছানো খুবই কঠিন। পড়শির গ্রামের চারিদিকে অগাধ জলরাশি। কবি সেই জলরাশি অতিক্রম করে যেতে পারেন না কারণ সেই জলের কোনো কিনারা নেই। আবার কবিকে আরশীনগরে পৌঁছে দিতে পারে এমন কোনো মাঝিও সেখানে নেই। এখানে রূপকের আশ্রয়ে কবি যা বলতে চেয়েছেন তা হল, কবির পড়শী বা মনের মানুষ বিষয়-বাসনার উর্দ্ধে অবস্থান করেন কিন্তু কবিকে ঘিরে রেখেছে অগণিত পার্থিব বাসনা। এই জন্য একেই জায়গায় বসবাস করেও কবির সঙ্গে তাঁর মনের মানুষের ‘লক্ষ্য যোজন ফাঁক’ রয়ে গেছে। পড়শির রূপ বর্ণনা প্রসঙ্গে লালন বলেছেন যে তার ‘হস্ত-পদ-স্কন্ধ-মাথা’ কিছুই নেই অর্থাৎ এই পড়শী নিরাকার। সে কখনো শুন্যে ভাসে আবার কখনো কোন বস্তুকে আশ্রয় করে দৃশ্যমান হয় ।
কবির চিরকাঙ্ক্ষিত পড়শী এবং কবির মাঝখানে সব ব্যবধান যদি ঘুচে যেত তাহলে হয়তো পড়শি কবিকে ছুঁতে পারতেন। আর তারপরই কবির ‘যম যাতনা’ চিরকালের মতো লোপ পেত।
৫.৪ “আমি তার মাথায় চড়ি” –কে, কার মাথায় চড়ে ? পক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে। ১+১+৩
উত্তরঃ কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় কথক রাগের মাথায় চড়েন।
‘নুন’ কবিতাটি “দিন আনি দিন খাই” মানুষের যন্ত্রণাময় জীবনযাপনের দিনলিপি। আর্থিকভাবে অসচ্ছল এইসব মানুষেরা “অল্পেই খুশি”। যত দিন যায় তাদের না-পাওয়ার অংকটা বাড়তেই থাকে, তবু তারা সগর্বে বলে- “কী হবে দুঃখ করে?” অসুখ করলে তাদের ধার করা ছাড়া উপায় থাকে না; কখনো অর্থাভাবে নিরন্ন দিন কাটাতে হয়। এইসব দুঃখ-কষ্ট যেন তাদের গা-সওয়া হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে দুঃখ ভোলার জন্য তারা গঞ্জিকা সেবন করে ঠিকই, কিন্তু সেটাও রাতের অন্ধকারে। সেইজন্য ভদ্রসমাজ তাদের দুঃখটা ঠিক বুঝতে পারেনা।
তারপর একদিন সহ্যের সীমা মাত্ৰা অতিক্রম করে যায়। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর রাত্রিবেলায় খেতে বসে যখন ঠাণ্ডা ভাতে নুনটুকু জোটে না তখন রাগ হওয়াই স্বাভাবিক। রাগ ক্রমশ বাড়তে থাকে। এতদিন ধরে না-পাওয়ার যন্ত্রনা ক্ষোভে পরিণত হয় এবং তাদের ক্ষোভের কথা পাড়ার ভদ্র-অভদ্র কারো জানতে বাকি থাকে না। কথকের ভাষায় –
“বাপ-ব্যাটা দু’ভাই মিলে সারা পাড়া মাথায় করি।”
এভাবেই ক্ষুধার জ্বালা তাদের লোকলজ্জার কথা ভুলিয়ে দেয়। রাগ প্রশমিত হলে, সমাজের কাছে তারা অকপটে দাবি জানায়—
“আমাদের শুকনো পাতে লবণের ব্যবস্থা হোক”।
৬। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে ১টি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫×১ = ৫
৬.১ “এলিসেন্দা একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললে” — এলিসেন্দা কী দেখেছিল ? এলিসেন্দা কেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল ? সে কেমনভাবে উড়ে যাচ্ছিল ? এলিসেন্দা কেন তাকিয়ে তাকে দেখতে থাকে ? ১+১+৩
উত্তরঃ গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে এলিসেন্দা দেখেছিল যে, ডানাওয়ালা বুড়াে ডানা মেলে বাড়িগুলাের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।
এলিসেন্দা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল, তার কারণ ডানাওয়ালা বুড়াে যেভাবে ক্রমশ উপদ্রব হয়ে উঠছিল তার জীবনে, তা থেকে তার মুক্তি ঘটল। অন্যদিকে ডানাওয়ালা বুড়ােরও অবাঞ্ছিত জীবন থেকে মুক্তি ঘটল।
কোনো মতিচ্ছন্ন জরাগ্রস্ত শকুনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ ডানাঝাপটানি দিয়ে বুড়োটি উড়ে যাচ্ছিল। উড়ালটায় সে কোনোপ্রকারে নিজেকে ধরে রেখেছিল ।
এলিসেন্দা বুড়োর উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি তাকিয়ে দেখতেই থাকে কারণ—
(১) ডানা থাকা সত্ত্বেও এর আগে কেউ কোনোদিন বুড়োকে উড়তে দেখিনি। এইজন্য এলিসেন্দার কাছে বুড়োর উড়ে যাওয়ার দৃশ্যটি ছিল অবিশ্বাস্য এক সত্য।
(২) দীর্ঘদিন ধরে তাদের জীবনে বুড়োটি ছিল একপ্রকার উপদ্রবের মতো, তাই এতদিনে সে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। কিন্তু এখন আর সে কোনো উপদ্রব নয়, বরং কল্পনার রাজ্য থেকে উঠে আসা জীবন্ত একজন দেবদূত।
(৩) এলিসেন্দাদের ভাগ্যপরিবর্তনের মূল কারণ ছিল এই বুড়োটা। তাই প্রথমে ডানা ছড়িয়ে উড়বার চেষ্টা এবং আকাশে উড়তে পারা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
৬.২ আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবির অনাস্থার কারণ কী ?
উত্তরঃ কবি আইয়াপ্পা পানিকর ছিলেন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। সারাজীবন অধ্যাপনা করেছেন। কাজেই এদেশীয় বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার প্রকৃত পরিচয় তিনি জানতেন । তার বাইরের ও ভিতরের রূপ ও চেহারা তাঁর অজানা ছিল না। তিনি ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় এদেশীয় বর্তমান শিক্ষার বাইরের ও ভিতরের রূপটিকে শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন।
শিক্ষার্থী ক্লাসের পর ক্লাস উত্তীর্ণ হয়ে তার শিক্ষার ধারাটিকে এগিয়ে নিয়ে চলে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের দিকে। পরে উচ্চমাধ্যমিকের বৃত্ত টপকে কলেজীয় শিক্ষাস্তরে। এভাবে স্তরের পর স্তর ডিঙিয়ে এগিয়ে চলে শিক্ষার্থীর শিক্ষাধারা। শিক্ষাধারা অনুসরণে শিক্ষার্থীর এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আছে একে অপরকে টপকে যাওয়ার প্রতিযােগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেজন্য কবি পানিকর শিক্ষাকে বলেছেন সার্কাস, শিক্ষার ক্রীড়াচক্র। চক্রাকারে আবর্তমান শিক্ষার্থী শিক্ষার স্তরের পর স্তর অতিক্রম করে চলমান। কিন্তু শিক্ষা যেহেতু পুথিসর্বস্ব, পরীক্ষার মাধ্যমে ক্লাস টপকানাের ডিগ্রি ডিপ্লোমা পাওয়ার মরিয়াপনা চেষ্টা তাই শিক্ষা জ্ঞানহীন, প্রাণহীন, নিরানন্দ ও নীরস। নীরস ও জ্ঞান অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে, অন্তরকে আলােকিত করে, মানবিক গুণে সমৃদ্ধ করে, তার চর্চা হয় না এদেশীয় শিক্ষায়। কাজেই জ্ঞানচর্চার নামে এক মস্ত ধোঁকাবাজি চলে। ধোকা মানেই ধাপ্পা বা ফাঁকি। তাই উচ্চশিক্ষিত হয়েও কত মানুষ অমানুষ থেকে যায়।
৭। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে ২টি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫×২ = ১০
৭.১ “একটু উৎপাত হলে যে বাঁচি”-কে বলেছে ? কোন্ উৎপাত ? সে উৎপাত চায় কেন ? ১+১+৩
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুরু নাটকের দ্বিতীয় দৃশ্যে এই উক্তিটি করেছে নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র পঞ্চক।
বহুদিনের প্রচলিত সংস্কারে বন্দি অচলায়তনে গুরুর আগমন বার্তায় সকলে উদবিগ্ন, সেই সঙ্গে পঞ্চকও। জীবনের প্রকৃত আদর্শ কী হওয়া উচিত সে বিষয়ে তার গুরুর সাহায্য প্রয়ােজন। এ কথা সে যখন যূনকদের নেতা দাদাঠাকুরকে জানায় তখনই দাদাঠাকুর তাকে বলে যে গুরু আসা মানে অনেক উৎপাত বাড়বে। কিন্তু পঞ্চক এই উৎপাতই সাধ করে পেতে চাইছে।
প্রতিদিনের একঘেয়ে বদ্ধ জীবনযাপনে সে হাঁপিয়ে উঠেছে। এর মধ্যে সে কিছু পরিবর্তন চায়, নতুনত্বের আস্বাদ পেতে চায়, খােলা আকাশের নীচে মুক্ত কণ্ঠে গান গেয়ে মুক্ত মনে ছুটে বেড়াতে চায়। খাঁচায় বদ্ধ পাখির মতাে জীবন তার দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, এর থেকে সে মুক্তি পেতে চায়। নড়াচড়াবিহীন অচল জীবন বদ্ধ জলাশয়ের মতাে মজে যায়। সেটা তখন মৃত্যুরই দোসর হয়ে ওঠে। তাই জীবনে গতির সঞ্চার করতে হয়, যাতে সে মুক্তির আনন্দ উপভােগ করতে পারে। কর্মের মধ্য দিয়েই পঞ্চক জীবনে গতির সঞ্চার করতে চায়। কর্মীরা প্রতি মুহূর্ত বেঁচে উঠছে, তাই জীবনের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত ‘চরৈবেতি’। তাই পঞ্চক তাদের বৈচিত্র্যহীন, নীরস জীবনে একটু উৎপাত-ই চেয়েছে।
৭.২ “উনি গেলে তােমাদের অচলায়তনের
পাথরগুলাে সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে, পুঁথি
গুলাের মধ্যে বাঁশি বাজবে”— বক্তা কে ? ‘উনি’ বলতে কাকে চিহ্নিত করা হয়েছে ? উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ১+১+৩
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে প্রথম যূনক তাদের দাদাঠাকুর সম্পর্কে পঞ্চককে একথা বলেছে।
অচলায়তন একটি বিদ্যায়তন। অচলায়তনিকরা জ্ঞানমার্গে ঈশ্বরের সাধনা করে। তাদের জীবনে হাজার রকমের সংস্কার। সবসময় মন্ত্ৰ পাঠ করে, আচার পালন করে তারা নিজেদের শুদ্ধ রাখার চেষ্টা করে। নিজেদের পবিত্রতা রক্ষার জন্য তারা নিজেদেরকে ক্ষুদ্র গণ্ডীতে বদ্ধ করে রেখেছে। কঠোর অনুশাসনের মধ্যে জীবন যাপন করাকেই তারা জীবনের সার্থকতা বলে মনে করে। আর অচলায়তনের পুঁথিগুলি তাদের জীবনের পথপ্রদর্শক। সংস্কারের বেড়াজালে অচলায়তন এবং তার আবাসিকদের জীবন অচল হয়ে পড়েছে।
এসবের বিপরীতপ্রান্তে রয়েছেন যুনকদের দাদাঠাকুর। তিনি কর্মের প্রতীক, তিনি মুক্ত প্রাণের দিশারী। সচলতাই তাঁর জীবনের মূল মন্ত্র। সঙ্গীত আর নৃত্যে যে জীবনের প্রকাশ- দাদাঠাকুর দাদাঠাকুর সেই জীবনপথের অগ্রপথিক। তাই পঞ্চক যখন দাদাঠাকুরকে অচলায়তনে নিয়ে যাবার কথা বলে তখন প্রথম যূনক বলেছিল “উনি গেলে অচলায়তনের পাথরগুলো সুদ্ধ নাচতে আরম্ভ করবে, পুঁথিগুলোর মধ্যে বাঁশি বাজবে”। অর্থাৎ যেসকল জীৰ্ণ সংস্কার একটি বিদ্যায়তনকে অচলায়তনে পরিণত করেছিল, দাদাঠাকুর গেলে সেসবের অবসান হবে- অচলায়তনের মুক্তি ঘটবে।
৭.৩ “আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি।”—বক্তা কে ? কোন প্রসঙ্গে, কাকে উদ্দেশ্য করে বক্তা এ কথা বলেছেন ? এই বক্তব্যের মধ্যে বক্তার চরিত্রের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে ? ১+২+২
উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘গুরু’ নাটকের আচার্য অদীনপুণ্য এই উক্তির বক্তা ।
আচার্য অদীনপুণ্য দর্ভকপল্লীতে নির্বাসিত। সেখানে নির্বাসিত পঞ্চকও হাজির। পঞ্চক ও আচার্যের মধ্যে কথা হচ্ছে। আচার্য বলছেন, তাঁর যেন মনে হচ্ছে অচলায়তনে সুভদ্র কাঁদছে। পঞকের বক্তব্য হল অচলায়তন থেকে এতদূরে কান্না শুনতে পাওয়ার কথা নয়। আচার্য মশাই অন্য কিছু শুনছেন। আচার্য আদীনপুণ্য তা মেনে নিলেন, কিন্তু তিনি তাে সুভদ্রের কান্না বুকে করে এনেছেন। এই হল তাঁর উক্তির প্রসঙ্গ।
আচার্য অদীনপুণ্যের বক্তব্যের মধ্যে তাঁর চরিত্রের এই দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে যে, বালক সুভদ্রকে প্রায়শ্চিত্তের জন্য। প্রাণহননকারী কঠিন মহাতামস ব্রতের মধ্যে আচার্য বসাতে চান না। কারণ অচলায়তনের পাষাণকারায় দমবন্ধ করা বন্ধন থেকে মুক্তির ডাক তিনি শুনেছেন। তাঁর হৃদয় এখন স্নেহ ও করুণায় কোমল ও দ্রবীভূত । সুভদ্রের অপরাধকে আচার্য নিজের অপরাধ বলে মনে করেছেন। তাই প্রায়শ্চিত্তের প্রতিবাদ করে তিনি বলেছেন , ‘যদি কোনাে অপরাধ ঘটে সে আমার।’ তিনি নির্বিকার চিত্তে সুভদ্রের কান্না বুকে নিয়ে দভকপল্লীতে নির্বাসিত হয়েছেন।
৮৷ অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে ২টি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫× ২ = ১০
৮.১ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কটি খণ্ড ও কী কী ? এই কাব্যটির সাহিত্যমূল্য আলােচনা করাে। ১+২+২
উত্তরঃ বড়ু চন্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলা অবলম্বন করে লেখা একটি আখ্যান কাব্য। সমগ্র কাব্য টি ১৩টি খন্ডে বিভক্ত- জন্মখন্ড, তাম্বুলখন্ড, দানখন্ড, নৌকাখন্ড, ভারখন্ড, ছাত্রখন্ড, বৃন্দাবনখন্ড, কালিয়দমন খণ্ড, যমুনাখন্ড, হারখন্ড, বান খন্ড, বংশীখণ্ড এবং রাধা বিরহ।
রাধা কৃষ্ণের কাহিনী নিয়ে বাংলা ভাষায় রচিত আদি-মধ্যযুগের প্রথম কাহিনী কাব্য,আবার চন্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ এর পূর্বে জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যটি রাধাকৃষ্ণের নিয়ে আলোচনা করেছে।এখানে বৈষ্ণব পদাবলীর অন্তর্নিহিত বীজ লুকিয়ে ছিল তা শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে এক বৃক্ষ রুপে পায়।
এই গ্রন্থে মোট ১৩টি খন্ড রয়েছে। জন্ম খন্ড বাদ দিয়ে প্রায় সমগ্র খন্ডের প্রধান চরিত্র রাধা কৃষ্ণ ও বড়াই। এই চরিত্রগুলির উক্তি-প্রত্যুক্তি ও ছন্দবদ্ধ সুরের মধ্য দিয়ে নাটগীতিকা ফুটে উঠেছে। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন গ্রন্থে রাধা কৃষ্ণ ও বড়াই এর পরস্পরের কথোপকথনের দিক খুঁজে পাওয়া যায়—
কৃষ্ণ: “কাহারো বৌ তু কাহারো রানী। বেছে যমুনাতে তোলদী।”
রাধিকা: “বড়ার বৌ ম বড়ার ঝি।তোক্ষে কানি তুলি তোহ্মাতে কি।”
এই নাট্যগুণ লক্ষ্য রেখে ডক্টর শশীভূষণ দাশগুপ্ত রাধা কৃষ্ণের মধ্য দিয়ে বাংলা নাটকের দিক লক্ষ্য করেছে। আবার এই ছন্দরীতি সমালোচনা করে অনেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন গ্রন্থটিকে ঝুমুর জাতীয় লৌকিক নাটের এক প্রাচীন নিদর্শন বলেছেন।
এছাড়া নাট্যকাব্যটির এই গঠনরীতি কাব্যটিকে এক অসামান্য পর্যায়ে ভূষিত করেছে। বংশীখণ্ড কৃষ্ণের বাঁশির মধুর সুর শুনে রাধিকার হৃদয় যে আকুল-ব্যাকুল হয়ে উঠেছে তা এক অনবদ্য সৃষ্ট—
“কে না বাঁশি বাএ বড়ায়ি কালিনী নই কূলে।
কে না বাঁশী বড়ায়ি এ গোঠ গোকুলে৷৷
আকুল শরীর মোর বেআকুল মন।
বাসির শবদেঁ মো আউলাইলোঁ রান্ধন।।”
আবার আখ্যায়িকা, গীতিকাব্য ও নাট্য রসের সংমিশ্রণে ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ এক অনবদ্য কাব্য। শব্দ প্রয়োগ, ছন্দ সৃষ্টিতে ও অলংকার সংযোজনে কবির অভিনবত্ব প্রশংসায়িত। বাংলা ভাষার স্বাভাবিক উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে এর পাশাপাশি—
“শরত কুদিত বদন কমলা।
মোর মন পৌড়ে যৌন বুম্বারের পানি।।”
প্রভৃতি অলংকার সংযোজনে চন্ডীদাস নিজস্ব কৃতিত্ব রেখেছেন। এছাড়া শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ভাষা প্রায় ২০০ বছর বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পদাবলী সাহিত্যের ভাষায় উন্নত হয়েছে। তাম্বুল, ভার, ছাত্র খণ্ডে, নৌকা খন্ডে, আমরা আদি-রসের অনুভব করি। কিন্তু রাধা-বিরহ’ অংশে যে প্রেমের পরিচয় আমরা খুঁজে পাই সেখানে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য এক অনবদ্য গ্রন্থ।
(অথবা এই উত্তরটাও লিখতে পারো)
উত্তরঃ কবি বড়ু চন্ডীদাস পৌরানিক ভাগবতকে অনুসরন করলেও সমকালীন লৌকিক জীবনধারা এই গ্রন্থের স্থান পেয়েছে। চরিত্র, চিত্রকর সৃষ্টি, কাহিনী গ্রন্থন, ছন্দ ও অলংকার সৃষ্টি এবং ভাষা তৈরির নৈপুন্যে এই গ্রন্থের কাব্যমূল্য অপরিসীম ।
রাধা-কৃষ্ণ-বড়াই এই তিনটি চরিত্রের সংলাপে কাব্যটিতে যেমন নাটকীয়তা প্রাধান্য পেয়েছে ঠিক অপরদিকে গীতি বেঞ্জনার প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । অর্থাৎ গ্রন্থটি নায়ক ও গীতের সম্বন্বয় নাটগীতিকার স্থান দখল করেছে।
কবি বড়ুচন্ডীদাস পুরাণ ভাগবত ও আংশিক রামায়ণের প্রভাব শ্রীকৃষ্ণকীর্তন গ্রন্থে স্থান দিলেও স্বর্গের দেব-দেবী মর্তের গ্রাম্য নর-নারীতে পরিণত হয়েছে। যেখানে দরিদ্র পরিবারের মাটির বাড়িতে মাটির তিলক পরিয়ে দিয়েছেন।
পরিশেষে বলা যায়, এই গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণের প্রেম কামনা যেমন অতিমাত্রায় প্রকাশিত হয়েছে। ঠিক তেমনি নায়কের প্রেম গ্রহন করে নায়িকার বিরহ-বেদনা পাঠক চিত্তে আলোড়ন সৃষ্টি করছে – এখানেই শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কাব্যমূল্য গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে ।।
৮.২ চণ্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি কে ? তার কাব্যপ্রতিভা আলােচনা করাে। ১+৪
উত্তরঃ চণ্ডীমঙ্গল কাব্যধারার সর্বশ্রেষ্ট কবি হলেন কবিকঙ্কণ মুকুন্দ চক্রবর্তী।
কবিকঙ্কণ তাঁর কাব্যটিকে কোথাও ‘অভয়ামঙ্গল’, কোথাও ‘চণ্ডীকামঙ্গল’ আবার কোথাও ‘অম্বিকামঙ্গল’ বলেছেন। তবে, সাধারণ বাঙালির কাছে তাঁর কাব্যটি ‘কবিকঙ্কণ চণ্ডী’ নামেই অধিক পরিচিত। এই কাব্যে কবির কাব্যপ্রতিভার যে নিদর্শন পাওয়া যায় তা হল—
(১) চরিত্রসৃষ্টিতে কবি নিপুণহস্ত ছিলেন। তাঁর কাব্যের প্রতিটি চরিত্র স্বমহিমায় উজ্জ্বল। কালকেতু, ফুল্লরা, ভাড়ু দত্ত প্রভৃতি চরিত্রসমূহ কবির হাতের ছোঁয়ায় যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সমালোচকদের মতে, ব্যক্তিগত জীবনে কবি নানান উত্থান- পতনের সম্মুখীন হয়েছিলেন, তাঁর কাব্যের চরিত্রগুলি সেই অভিজ্ঞতালব্ধ জীবনদর্শনের ফলবিশেষ।
(২) তাঁর কাব্যে বিবিধ ছন্দের প্রয়োগ এবং
অলংকার ব্যবহারের বৈচিত্র পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ছন্দ-অলংকার প্রয়োগে কবি যে বিশেষভাবে দক্ষ ছিলেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
(৩) কৌতুকরস পরিবেশনে কবি বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। কাব্যের নানা স্থানে কবির কৌতুকবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
(৪) চণ্ডীমঙ্গলের প্রচলিত কাহিনি অবলম্বনে কাব্য রচনা করলেও কাহিনি-বিন্যাসে কবি স্বকীয়তা দেখিয়েছেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, মুকুন্দ চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যটি কেবল সুপাঠ্য মঙ্গলকাব্য হিসাবে নয় সমগ্র মধ্যযুগের একটি ব্যতিক্রমী কাব্য- উপন্যাসের লক্ষণ যুক্ত একটি উৎকৃষ্ট কাব্য। সেদিক থেকে বিচার করলে, মুকুন্দ চক্রবর্তী মধ্যযুগের একজন অন্যতম প্রতিভাবান কবি।
৮.৩ গীতিকবিতা কাকে বলে ? এই ধারায়
বিহারীলাল চক্রবর্তীর অবদান আলােচনা করাে। ২+৩
উত্তরঃ কবিমনের আবেগ-অনুভূতি-কল্পনা ছন্দময়ভাবে প্রকাশিত হয় যেসব কাহিনীবিহীন কবিতায়, সংক্ষেপে তাই হল লিরিক বা গীতিকবিতা। গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্য নির্ধারন করতে গিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যথার্থই বলেছেন– “বক্তার ভাবোচ্ছ্বাসের পরিস্ফুটতামাত্র যাহার উদ্দেশ্য সেই কাব্যই গীতিকবিতা।”
বিহারীলাল চক্রবর্তী (২১ মে, ১৮৩৫ – ২৪ মে, ১৮৯৪) বাংলা ভাষার কবি। বাংলা সাহিত্যের প্রথম গীতি-কবি হিসেবে তিনি সুপরিচিত। রবীন্দ্রনাথ তাকে বাঙলা গীতি কাব্য-ধারার ‘ভোরের পাখি’ বলে আখ্যায়িত করেন। তার সব কাব্যই বিশুদ্ধ গীতিকাব্য। মনোবীণার নিভৃত ঝংকারে তার কাব্যের সৃষ্টি। বাঙালি কবি মানসের বহির্মুখী দৃষ্টিকে অন্তর্মুখী করার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। অতি অল্পকালের ভিতরে তিনি বাংলা কবিতার প্রচলিত ধারার পরিবর্তন ঘটিয়ে নিবিড় অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে গীতিকবিতার ধারা চালু করেন। এ বিষয়ে তিনি সংস্কৃত ও ইংরেজি সাহিত্যের মাধ্যমে গভীরভাবে প্রভাবিত হন। বিহারীলাল তার কবিতায় ভাবের আধিক্যকে খুব বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রকৃতি ও প্রেম, সংগীতের উপস্থিতি, সহজ-সরল ভাষা বিহারীলালের কবিতাকে দিয়েছে আলাদাধারার বৈশিষ্ট্য।
বিহারীলাল চক্রবর্তীর কাব্যচর্চা– আধুনিক বাংলা কাব্যের প্রথম গীতিকবি হলেন ‘ভোরের পাখি’ বিহারীলাল চক্রবর্তী। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল– ‘সংগীত শতক’(1862), ‘বঙ্গসুন্দরী’(1870), ‘নিসর্গসন্দর্শন’(1870), ‘বন্ধুবিয়োগ’(1870), ‘প্রেমপ্রবাহিনী’(1871), ‘সারদামঙ্গল’(1879), ‘সাধের আসন’(1889)। ‘সংগীত শতক’ কাব্যে কবি তাঁর কৈশোর ও প্রথম যৌবনের অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য ভাবনা অস্ফুটভাবে প্রকাশ করেছেন। বিহারীলাল ‘নিসর্গসন্দর্শন’ কাব্যের কবিতাগুলিতে নিসর্গ প্রকৃতিতে ব্যক্তিসত্ত্বা আরোপ করে সচেতন কবি হৃদয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মধ্যে দিয়ে নবতম কাব্যশৈলীর উদ্ভাবন ঘটিয়েছেন, তা গীতিকবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জননী-জায়া-কন্যা-ভগিনি– প্রভৃতি বিবিধ মূর্তিধারিণী নারীর স্নেহ-মায়া-মমতায় রূপ এ সৌন্দর্যের সন্ধান করেছেন কবি ‘বঙ্গসুন্দরী’ কাব্যে। কবি নিজের এবং বন্ধুবর্গের জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে এবং নিজের প্রেমানুভূতিকে কাব্যাকারে রূপদান করেছেন তাঁর ‘বন্ধুবিয়োগ’ ও ‘প্রেমপ্রবাহিনী’ কাব্যদুটিতে। তবে বিহারীলাল চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কাব্য ‘সারদামঙ্গল’, যেখানে কবির সৌন্দর্যচেতনা, গীতিবৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। রবীন্দ্রনাথের নতুন বউঠান কাদম্বরীর অনুরোধে কবি বিহারীলাল ‘সাধের আসন’ কাব্যটি রচনা করেন। এখানে কবি সৌন্দর্যতত্ত্বের তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা করেছেন।
৮.৪ ‘ধাঁধার’ বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে। অন্তত দুটি ধাঁধার উদাহরণ দাও। ৩+২
উত্তরঃ যে বাক্যে, একটি মাত্র ভাব বা বিষয়কে রূপকের দ্বারা প্রশ্নের আকারে প্রকাশ করা হয়, তাকে এককথায় ধাঁধা বলা যেতে পারে। ধাঁধার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, যথা—
ধাঁধার বৈশিষ্ট্যঃ ধাঁধায় যে মূল বৈশিষ্ট্যগুলি বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয় সেগুলি হল—
• ধাঁধায় থাকে ভাষার প্রতি দখল, চিন্তার উৎকর্ষ এবং ছন্দ সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান।
• ধাঁধার মধ্যে স্রষ্টার সৌন্দর্যবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
• ধাঁধা রসের সামগ্রী। ধাঁধা বেশ আনন্দদায়ক।
• ধাঁধার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সংক্ষিপ্ততা।
• ধাঁধার মধ্যে লোকশিক্ষামূলক ভাবনা বর্তমান।
• ধাঁধা প্রশ্ন-উত্তর মূলক; এক পক্ষ প্রশ্ন করে অপরপক্ষ উত্তর দেয়।
• পরিচিত এবং দৈনন্দিন জীবন থেকে ধাঁধার উপকরণ সংগ্রহ করা হয়। যেমন, শিল, নােড়া, উনুন, ছাতা, লাঠি ইত্যাদি।
• ধাঁধায় বর্ণ, চিহ্ন, সংখ্যা, আকার, আচরণ, গুণ ইত্যাদির দিক দিয়ে সাদৃশ্য বা তুলনা আরােপ করে সংকেত তৈরি করা হয়। যেমনএকটুখানি গাছে / কেষ্ট ঠাকুর নাচে।
সুতরাং, ধাঁধার সঙ্গে শিক্ষা এবং উপদেশ প্রদানের বিষয়টি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।
কয়েকটি ধাঁধার উদাহরণ—
• মুখ নাই কথা বলে / পা নাই হেঁটে চলে। (উত্তরঃ ঘড়ি)
• বেলে হাঁসে আন্ডা পাড়ে/ কে কতটি গুণতে পারে ? (উত্তরঃ তারা)
• একটু খানি গাছে/রাঙা বউটি নাচে। (উত্তরঃ পাকা লঙ্কা)
৯। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে ১টি প্রশ্নের উত্তর দাও। ৫×১ = ৫
৯.১ মধ্যভারতীয় আর্যভাষার সময়কাল উল্লেখ করে এই পর্বটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ১+৪
উত্তরঃ মধ্যভারতীয় আর্যভাষার সময়কাল আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
মধ্যভারতীয় আর্যভাষাকে তিনটি স্তরে বিভক্ত করা হয়। আদি স্তরের স্থিতিকাল খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ থেকে ১ম খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এই পর্বে অন্যতম ভাষারূপ হল পালি। অশােকের অনুশাসনগুলিতে, বৌদ্ধধর্মশাস্ত্র ত্রিপিটক-এ পালি ভাষার নিদর্শন আছে। খ্রিস্টীয় ১ম শতক থেকে ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্ত মধ্যভারতীয় আর্য ভাষার দ্বিতীয় স্তর। এই পর্বে অঞ্চলভেদে পাঁচটি প্রাকৃতের জন্ম হয়েছে— মাহারাষ্ট্রী প্রাকৃত, শৌরসেনী প্রাকৃত, পৈশাচী প্রাকৃত, মাগধী প্রাকৃত, অর্ধমাগধী প্রাকৃত। মাহারাষ্ট্রী প্রাকৃতের নিদর্শন রয়েছে হালের ‘গাথাসত্তসঙ্গ’, বাপতি রাজের গৌড়বহ’, প্রবর সেনের ‘সেতুবন্ধ’ ইত্যাদি গ্রন্থে। সংস্কৃত নাটকের শিক্ষিত রমণী ও রাজপুরুষদের সংলাপে শৌরসেনী প্রাকৃতের ব্যবহার আছে। পৈশাচী প্রাকৃতের সাহিত্যিক নিদর্শন বিশেষ না থাকলেও সুতনুক প্রত্নলিপিতে মাগধী প্রাকৃতের নিদর্শন আছে। জৈন ধর্মসাহিত্যে রয়েছে অর্ধমাগধীর ব্যবহার। ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দ থেকে নবম শতক পর্যন্ত মধ্যভারতীয় আর্য ভাষার অন্ত্যস্তর। এই পর্বে প্রতিটি প্রাকৃত থেকেই এক-একটি অপভ্রংশ ভাষার জন্ম হয়। এই ভাবেই মাহারাষ্ট্রী, শৌরসেনী, পৈশাচী, মাগধী এবং অর্ধমাগধী অপভ্রংশের জন্ম হয়। এইসব অপভ্রংশ ভাষা থেকেই নব্যভারতীয় আর্যভাষার স্তরে বাংলাসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার জন্ম হয়
৯.২ “সংস্কৃত ভাষা বাংলা ভাষার জননী, এই মত গ্রহণযােগ্য কিনা তা যুক্তিসহ আলােচনা করাে।
উত্তরঃ সাধারণভাবে সংস্কৃত ভাষাকেই বাংলা ভাষার জননী বলা হয়ে থাকে। কারণ মনে করা হয় যে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে ভারতে আগত প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার শেষ পর্বের ভাষা হল সংস্কৃত এবং তা থেকেই প্রাকৃত ও অপভ্রংশের স্তর অতিক্রম করে বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে।
কিন্তু আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে সংস্কৃত ভাষার কোনো বিবর্তন হয়নি। কারণ পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী ব্যাকরণের মাধ্যমে সংস্কৃত ভাষাকে কঠিন বাঁধনে আবদ্ধ করার ফলে তা মৃত ভাষায় পরিণত হয়েছে।সেই সময়ে সাধারণ মানুষের মুখে ভাষার যে কথ্যরূপ প্রচলিত ছিল তা বিবর্তিত হয়েই মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার স্তরে প্রাকৃতের রূপ নেয়।পরবর্তীকালে সংস্কৃত নয় সেই প্রাকৃত ভাষারই বিবর্তন ঘটেছে।
ক্রমে অঞ্চল ভেদে প্রাকৃতের পাঁচটি রূপ গড়ে ওঠে-মাগধী, অর্থ মাগধী, পৈশাচী, শৌরসেনী এবং মহারাষ্ট্রী। এরা প্রত্যেকেই পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়ে পাঁচটি অপভ্রংশের রূপ নেয়। মাগধী প্রাকৃত থেকে আগত মাগধী অপভ্রংশের পূর্বী ও পশ্চিমা- এই দুটি রূপ গড়ে ওঠে। পরে পূর্বী রূপ থেকে বঙ্গ-অসমিয়া ও ওড়িয়া ভাষার জন্ম হয়। এই বঙ্গ অসমিয়া থেকেই কালক্রমে বাংলা ও অসমিয়া ভাষার জন্ম হয়।
অর্থাৎ মৃত সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্ম- এ কথা যুক্তিসঙ্গত নয়। ভাষার বিবর্তনের শেষ স্তর অপভ্রংশ তাই মাগধী অপভ্রংশ থেকেই কালক্রমে বাংলা ভাষার জন্ম। সুতরাং ভাষাবিজ্ঞানের আধুনিক ধারণা অনুযায়ী মাগধী প্রাকৃতজাত মাগধী অপভ্রংশ ভাষাকেই বাংলা ভাষার মাতৃস্থানীয়া ভাষা বলা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং সুকুমার সেন এই মতই প্রকাশ করেছেন। সংস্কৃতের সঙ্গে বাংলার যোগ বহুদূরবর্তী। পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভাষায় সংস্কৃত বাংলা ভাষার-” অতি- অতি- অতি- অতি- অতি বৃদ্ধ পিতামহী”।
৯.৩ ‘হিয়েরােগ্লিফিক’ কী ? এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ১+৪
উত্তরঃ প্রাচীন মিশরের লিপির নাম হল হিয়েরোগ্লিফিক লিপি। লিপি বিশারদদের মতে চার থেকে পাঁচ হাজার খ্রিস্ট পুর্বাব্দে লিপির ব্যাবহার শুরু হয়। লিপি বিশারদ জোহানস ফ্রেডরিক সাতটি প্রাচীন সভ্যতার কথা বলেন যেখানে লিপির ব্যাবহার শুরু হয়েছিল। সেই সাতটি সভ্যতার মধ্যে অন্যতম হল মিশর। আনুমানিক ৪০০০ খ্রীঃ পূঃ মিশরীয় লিপির উদ্ভব ঘটেছিল।
হিয়েরোগ্লিফিক লিপি- হিয়েরোগ্লিফিক কথাটি এসেছে দুটি গ্রীক শব্দ থেকে- ‘হিয়োরাস’ কথার অর্থ পবিত্র এবং ‘গ্লিফেইন’ কথার অর্থ খোদাই করা। সেই অর্থে হিয়েরোগ্লিফিক কথার অর্থ পবিত্ৰ লিপি৷ মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল ‘থথ’ নামক দেবতা এই ভাষা প্রবর্তন করেন।
হিয়েরোগ্লিফিক লিপির বিবর্তন- লিপিবিশারদদের মতে সব থেকে প্রাচীন মিশরীয় লিপির নমুনাটি প্রায় পৌনে সাত হাজার বছর পুরনো। যাইহোক কালক্রমে এই লিপির বিবর্তন ঘটেছিল। প্রথমদিকে হিয়েরোগ্লিফিক লিপি ছিল মূলত চিত্রলিপি, পরে তা ধ্বনিলিপির কাছাকাছি চলে এসেছিল। এই লিপির চিহ্নসংখ্যা ছিল ৫০০ এবং কোনো স্বরচিহ্ন ছিল না। কয়েকটি চিহ্ন একটিমাত্র ব্যঞ্জনধ্বনিকে বোঝাতো আবার এক একটি ব্যাঞ্জনধ্বনির জন্য একাধিক চিহ্নের ব্যবহার করা হত। মুলত ডান থেকে বাম দিকে লেখা হলেও বাম থেকে ডান দিকে লেখা হিয়েরোগ্লিফিক লিপির নমুনাও পাওয়া গেছে।
Pingback: WBCHSE Class 11 All Subject Question Paper | একাদশ শ্রেণি প্রশ্নপত্র - Prosnodekho -
Pingback: WBCHSE Class 11 Bengali Solved Question Paper 2014 | একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৪ - Prosnodekho -
Pingback: WBCHSE Class 11 Bengali Solved Question Paper 2023 | একাদশ শ্রেণি বাংলা প্রশ্নপত্র ২০২৩ -
Pingback: একাদশ শ্রেণি বাংলা প্রশ্ন ২০১৮ | WBCHSE Class 11 Bengali Solved Question Paper 2018 - Prosnodekho -