WBCHSE Class 11 Bengali Solved Question Paper 2016 | একাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৬ – Prosnodekho

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

WBCHSE HIGHER SECONDARY (XI) BENGALI QUESTION PAPER WITH ANSWER 2016
একাদশ শ্রেণি বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৬, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার বাংলা বিষয়ের উত্তরসহ প্রশ্নপত্র সঠিক এবং নির্ভুল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তোমরা অবশ্যই তোমাদের সাবজেক্ট শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলিয়ে নেবে। নিচে উত্তরসহ প্রশ্নপত্র দেওয়া হলো।

একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা
নতুন পাঠক্রম
বাংলা ‘ক’ ভাষা
২০১৬
সময় : ৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট          [পূর্ণমান : ৮০]

পরিমিত এবং যথাযথ উত্তরের জন্য বিশেষ মূল্য দেওয়া হবে। বর্ণাশুদ্ধি, অপরিচ্ছন্নতা এবং অপরিষ্কার হস্তাক্ষরের ক্ষেত্রে নম্বর কাটা যাবে। ডানপাশে প্রশ্নের পূর্ণমান দেওয়া আছে।

একাদশ শ্রেণি বাংলা মক্ টেস্ট-৩

1 / 18

১.১ "অভূতের পেয়াদা ঘােরে”—

2 / 18

১.২ তেলেনাপােতায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতির দিনে থার্মোমিটারের পারা দেহের তাপমাত্রা জানাবে—

3 / 18

১.৩ জেলে থাকাকালীন সৌখীর ডিউটি ছিল—

4 / 18

১.৪ জগতের সবচেয়ে আদিম চলার রীতিটি হল—

5 / 18

১.৫ সৌখী এর আগে জেল খেটেছে—

6 / 18

১.৬ রেড সী পার হয়ে লেখকদের জাহাজ সুয়েজ বন্দরে পৌঁছায়—

7 / 18

১.৭ ভারতে আসার নতুন রাস্তা খোঁজার চেষ্টায় পার হয়েছিলেন—

8 / 18

১.৮ “বাড়ী হয়ে উঠলাে ফ্যাকটরী, কারুশালা"–এখানে যাঁর বাড়ির কথা বলা হয়েছে তিনি হলেন—

9 / 18

১.৯ “ধীবর জননী, পিতা ব্রাহ্মণ"–এঁদের সন্তান হলেন—

10 / 18

১.১০. লালন ও পড়শীর মধ্যে দূরত্ব হল—

11 / 18

১.১১. দ্বীপান্তরের বন্দিনী' কবিতাটির মুল কাব্যগ্রন্থের নাম—

12 / 18

১.১২. “খেতে বসে রাগ চড়ে যায়”- কারণ—

13 / 18

১.১৩. ডানাওয়ালা বুড়াে লােকটা খায়—

14 / 18

১.১৪. “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন" কাব্যের শেষ খণ্ডের নাম—

15 / 18

১.১৫. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ত্রয়ােদশ-চতুর্দশ শতাব্দীকে বলা হয়—

16 / 18

১.১৬. 'একেই কি বলে সভ্যতা' প্রহসনটির রচয়িতা—

17 / 18

১.১৭. বাংলা ভাষার উদ্ভব—

18 / 18

১.১৮ অভিশ্রুতি যে উপভাষার বৈশিষ্ট্য সেটি হল—

Your score is

The average score is 83%

0%

১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করাে : ১x১৮ =১৮

১.১ অভূতের পেয়াদা ঘােরে”—
(ক) খিড়কির আনাচে-কানাচে
(খ) সদরের রাস্তায়-ঘাটে
(গ) শ্মশানের রাস্তায় ঘাটে
(ঘ) জেলখানার আনাচে-কানাচে

উত্তরঃ (খ) সদরের রাস্তায়-ঘাটে

১.২ তেলেনাপােতায় ফিরে যাওয়ার
প্রস্তুতির দিনে থার্মোমিটারের পারা দেহের
তাপমাত্রা জানাবে—
(ক) একশাে তিন ডিগ্রি
(খ) একশাে দুই ডিগ্রি
(গ) একশাে পাঁচ ডিগ্রি
(ঘ) একশাে চার ডিগ্রি

উত্তরঃ (গ) একশাে পাঁচ ডিগ্রি

১.৩ জেলে থাকাকালীন সৌখীর ডিউটি
ছিল—
(ক) গুদামে (খ) রান্নাঘরে (গ) বাগানে
(ঘ) খামারে।

উত্তরঃ (ক) গুদামে

১.৪ জগতের সবচেয়ে আদিম চলার রীতিটি হল—
(ক) চোখ বুজে চলা (খ) চোখ খুলে চলা
(গ) গুটিসুটি হয়ে চলা (ঘ) জোরে জোরে হাঁটা

উত্তরঃ (ক) চোখ বুজে চলা


👉আরো দেখো : সমস্ত বিষয়ের প্রশ্নপত্র👈


১.৫ সৌখী এর আগে জেল খেটেছে—
(ক) একবার (খ) দুবার (গ) তিনবার (ঘ) চারবার

উত্তরঃ (খ) দুবার

১.৬ রেড সী পার হয়ে লেখকদের জাহাজ
সুয়েজ বন্দরে পৌঁছায়—
(ক) ১৪ই মার্চ (খ) ১৪ই এপ্রিল
(গ) ১৪ই নভেম্বর (ঘ) ১৪ই জুলাই।

উত্তরঃ (ঘ) ১৪ই জুলাই

১.৭ ভারতে আসার নতুন রাস্তা খোঁজার
চেষ্টায় পার হয়েছিলেন—
(ক) ভারত মহাসাগর
(খ) প্রশান্ত মহাসাগর
(গ) আটলান্টিক মহাসাগর
(ঘ) বঙ্গোপসাগর

উত্তরঃ (গ) আটলান্টিক মহাসাগর।

১.৮ “বাড়ী হয়ে উঠলাে ফ্যাকটরী,
কারুশালা”–এখানে যাঁর বাড়ির কথা বলা
হয়েছে তিনি হলেন—
(ক) টলেমী (খ) কোপারনিকাস (গ) গালিলিও (ঘ) বেলারিমিন।

উত্তরঃ (গ) গালিলিও

১.৯ “ধীবর জননী, পিতা ব্রাহ্মণ”–এঁদের
সন্তান হলেন—
(ক) ব্যাসদেব (খ) দ্রোণাচার্য (গ) দ্বৈপায়ন
(ঘ) ভীষ্ম।

উত্তরঃ (ক) ব্যাসদেব

১.১০. লালন ও পড়শীর মধ্যে দূরত্ব হল—
(ক) কয়েক মাইল (খ) একশাে যােজন
(গ) হাজার যােজন (ঘ) লক্ষ যােজন

উত্তরঃ (ঘ) লক্ষ যােজন

১.১১. দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতাটির মুল
কাব্যগ্রন্থের নাম—
(ক) ফণি-মনসা (খ) দোলন চাপা
(গ) অগ্নিবীণা (ঘ) সর্বহারা

উত্তরঃ (ক) ফণি-মনসা

১.১২. “খেতে বসে রাগ চড়ে যায়”- কারণ—
(ক) ঠাণ্ডা ভাতে ব্যঞ্জন নেই
(খ) ঠাণ্ডা ভাতে স্বাদ নেই
(গ) ঠাণ্ডা ভাতে নুন নেই
(ঘ) পরিমাণ মতাে ভাত নেই

উত্তরঃ (গ) ঠাণ্ডা ভাতে

১.১৩. ডানাওয়ালা বুড়াে লােকটা খায়—
(ক) কাঁকড়া (খ) ন্যাপথলিন (গ) মাছ
(ঘ) বেগুনভর্তা

উত্তরঃ (ঘ) বেগুনভর্তা

১.১৪. “শ্রীকৃয়কীর্তন কাব্যের শেষ খণ্ডের
নাম—
(ক) বংশী খণ্ড (খ) রাধাবিরহ
(গ) যমুনা খণ্ড (ঘ) বৃন্দাবন খণ্ড

উত্তরঃ (খ) রাধাবিরহ

১.১৫. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ত্রয়ােদশ-
চতুর্দশ শতাব্দীকে বলা হয়—
(ক) অন্ধকারময় যুগ (খ) সুবর্ণ যুগ
(গ) গৌরবময় যুগ (ঘ) সৃষ্টিশীল যুগ

উত্তরঃ (ক) অন্ধকারময় যুগ

১.১৬. ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ প্রহসনটির
রচয়িতা—
(ক) দীনবন্ধু মিত্র (খ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
(গ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
(ঘ) গিরিশচন্দ্র ঘােষ।

উত্তরঃ (গ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত

১.১৭. বাংলা ভাষার উদ্ভব—
(ক) শৌরসেনী অপভ্রংশ থেকে
(খ) মগধী অপভ্রংশ থেকে
(গ) মহারাষ্ট্রী প্রাকৃত থেকে
(ঘ) সংস্কৃত থেকে।

উত্তরঃ (খ) মগধী অপভ্রংশ থেকে

১.১৮. অভিশ্রুতি যে উপভাষার বৈশিষ্ট্য সেটি হল—
(ক) রাঢ়ী (খ) কামরূপী (গ) বঙ্গালী
(ঘ) বরেন্দ্রী

উত্তরঃ (ক) রাঢ়ী।

২. অনধিক কুড়িটি শব্দে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও : ১x১২=১২

২.১ “মহারথী-প্রথা কি হে এই, মহারথি ?”- কোন কাজ মহারথী প্রথার বিরােধী ?

উত্তরঃ কর্ণের রথের চাকা যখন মেদিনী গ্রাস করেছিল ঠিক তখন অর্জুন অন্যায়ভাবে তাকে বধ করেন। এই কাজ মহারথী প্রথার বিরােধী।

২.২. “গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি”–এখানে কোন গ্রামের কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ এখানে ‘আরশিনগর’ গ্রামের কথা
বলা হয়েছে।

২.৩. “যন্ত্রী যেখানে সান্ত্রী বসায়ে বীণার তন্ত্রী কাটিছে হায়”। –এখানে যন্ত্রী ও সান্ত্রী’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে ?

উত্তরঃ এখানে যন্ত্ৰী’ বলতে ব্রিটিশ সরকার ও সান্ত্রী’ বলতে সরকারের সশস্ত্র প্রহরীকে বােঝানাে হয়েছে।

অথবা,

বন্দী সত্য ভানিছে ধান’—কথাটির অর্থ কী ?

উত্তরঃ কথাটির আসল অর্থ হলাে ব্রিটিশ
সরকার সত্যের কন্ঠ রােধ করার উদ্দেশ্যে
স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল।

২.৪ “রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চডি”—মাথায় রাগ চড়লে কী ঘটনা ঘটে ?

উত্তরঃ মাথায় রাগ চড়লে বক্তা বাপ-ব্যাটা
দু-ভাই মিলে সারা পাড়া মাথায় করে।

২.৫ “এতদিন পর বাড়ি ফিরেছে ছেলে।”- কতদিন পর, কোথা থেকে ছেলে ফিরেছে ?

উত্তরঃ ছেলে অর্থাৎ সৌখী কিছু কম পাঁচ বছর পর জেল থেকে বাড়ি ফিরেছিল।

অথবা,

“সৌখী এ প্রশ্ন কানে তুলতে চায়”—এখানে কোন প্রশ্নের কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ জেলে গিয়ে সৌখীর অসুখ করেছিল
কি না- এই প্রশ্নের কথাই বলা হয়েছে।

২.৬. “একটা কটু গন্ধ অনেকক্ষণ ধরেই
আপনাদের অভ্যর্থনা করছে।”—কটু গন্ধের
কারণ কী ?

উত্তরঃ পুকুরের পানা পচা।

২.৭. ডাক্তারি পড়া ছেড়ে গালিলিও কোন্ কোন্ বিষয় পড়তে শুরু করেন ?

উত্তরঃ ডাক্তারি পড়া ছেড়ে তিনি গণিত ও
পদার্থবিদ্যা বিষয় পড়তে শুরু করেন।

২.৮, সুয়েজ খাল খননের ফলে কী সুবিধা
হয়েছে ?

উত্তরঃ ইউরােপ এবং ভারতবর্ষের মধ্যে
ব্যবসা বাণিজ্য করার অত্যন্ত অত্যন্ত সুবিধা
হয়েছে।

২.৯ শিক্ষার সার্কাস’ কবিতাটির রচয়িতা কে ?

উত্তরঃ আইয়াপ্পা পানিকর।

অথবা,

বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে ‘বুড়াে’ গল্পটি কোন্ মূল গল্পের অনুবাদ ?

উত্তরঃ গল্পটি গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ- এর ‘A very old man with enormous wings’ গল্পের অনুবাদ।

২.১০ অলচিকি লিপির উদ্ভাবক কে ?

উত্তরঃ অলচিকি লিপির উদ্ভাবক রঘুনাথ
মুর্মু।

২.১১ পাণিনি রচিত ব্যাকরণ বইটির নাম কী ?

উত্তরঃ পাণিনি রচিত ব্যাকরণ বইটির নাম
‘অষ্টাধ্যায়ী’।

২.১২ কামরূপী উপভাষা কোন্ কোন্ অঞ্চলে প্রচলিত ?

উত্তরঃ কামরূপী উপভাষা জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আসামের কাছাড় অঞ্চলে
প্রচলিত।

৩। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :৫x১ = ৫

৩.১ “কেননা ভবিষ্যতকে মানলেই তার জন্য যত ভাবনা, ভূতকে মানলে কোন ভাবনাই নেই”- কোন প্রসঙ্গে এই কথাটি বলা হয়েছে ? ভূতকে মানলে ভাবনা নেই কেন ? উদ্ধৃত অংশটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘কর্তার ভূত’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। বুড়ো কর্তা যখন মরণাপন্ন হলো তখন দেশের সবাই বলে উঠেছিল ‘তুমি গেলে আমাদের কি দশা হবে?’ কর্তাও মনে মনে ভেবেছিলো যে তার মৃত্যুর পর দেশবাসীর অভিভাবক কে হবে। শেষ পর্যন্ত দেবতার দয়ায় একটা উপায় হয়েছিল। বুড়ো কর্তা যাতে মারা যাওয়ার পরও ভূত হয়ে দেশবাসীর ঘাড়ে চেপে থাকে সেই ব্যবস্থা করা হল। দেশবাসীও নিশ্চিন্ত হল। এই প্রসঙ্গেই কথাটি বলা হয়েছে।

বুড়ো কর্তা মারা গেলে তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে সেটাই দেশের লোকের প্রধান চিন্তা হয়ে ওঠে। আসলে এই দেশবাসী ভীতু, রক্ষণশীল এবং আত্মমর্যাদাহীন। নতুন কিছুকে গ্রহন করার সাহস এবং ক্ষমতা তাদের নেই। লেখক বলেছেন– ‘ভবিষ্যতকে মানলেই তার জন্য যত ভাবনা, ভুতকে মানলে কোন ভাবনাই নেই’। কারণ, ভুতকে মানলে স্বাভাবিকভাবেই সব ভাবনা ভুতের মাথায় চাপে। কিন্তু, ভুতের মাথা নেই তাই কারো জন্য তার মাথাব্যথাও নেই।

আসলে ভুত হল অজ্ঞতা, ভবিষ্যৎ হল জ্ঞান। ভবিষ্যৎকে মানতে হলে অন্ধবিশ্বাস, অজ্ঞতা ও রক্ষণশীলতাকে বিসর্জন দিয়ে নতুন করে সবকিছু ভাবতে হবে। কিন্তু দেশবাসী এই পরিবর্তন চায় না। তাই লেখক এই কথাগুলি বলেছেন।

৩.২ “কে, নিরঞ্জন এলি ?” নিরঞ্জন কে ? কোন পরিস্থিতিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ?

উত্তরঃ প্রেমেন্দ্ৰ মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের প্রধান নারী চরিত্র যামিনীর সঙ্গে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার নাম নিরঞ্জন। সে ছিল যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের বোনপো।

তেলেনাপোতা আবিষ্কারে গিয়ে গল্পকথকের দৃষ্টি এবং হৃদয় আকর্ষণ করেছিল যামিনী। সে ছিল কথকের পানরসিক বন্ধু মণিদার জ্ঞাতিস্থানিয়া। যামিনীদের বাড়িতেই তাদের মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন হয়েছিল। খাওয়ার পর তারা যখন বিশ্রাম করছিল তখন যামিনী এসে মণিদাকে ডাকে এবং নিচু স্বরে কিছু কথা বলে যায়। কথক মণিদার মুখে নিরঞ্জন-বৃত্তান্ত শুনে।

চার বছর আগে নিরঞ্জন এসে মাকে কথা দিয়েছিল যে বিদেশ থেকে ফিরেই সে যামিনীকে বিয়ে করবে, কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি। যামিনীর মা গল্পকথকদের কাউকে নিরঞ্জন ভেবেছিল এবং তার কাছে নিরঞ্জনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য যামিনীকে জোর করছিল। মাকে শান্ত করার জন্যই যামিনী মণিদাকে ডাকতে এসেছিল।

৪। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:৫x১ = ৫

৪.১ “জাহাজের পেছনে বড় বড় হাঙ্গর ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে”— লেখকের অনুসরণে হাঙ্গর ভেসে বেড়ানাের দৃশ্য নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

উত্তরঃ ‘সুয়েজখালে: হাঙ্গর শিকার’ প্রবন্ধে লেখক সুয়েজ বন্দরের আশেপাশে ভাসমান হাঙ্গরদের ছবি তুলে ধরেছেন।

হাঙ্গর সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কৌতুহলের সীমা নেই। লেখক নিজেও আগে কথনো জলজ্যান্ত হাঙ্গর স্বচক্ষে দেখেননি। তাই সেদিন সকালের খাবার খাওয়ার আগেই যখন তিনি শুনলেন যে জাহাজের আশেপাশে হাঙ্গর ঘুরে বেড়াচ্ছে, অন্যন্য যাত্রীদের মতো তিনিও সেকেন্ড ক্লাসের বারান্দা থেকে হাঙ্গর দেখার জন্য উপস্থিত হন। কিন্তু তিনি যখন পৌঁছান তখন হাঙ্গরগুলি জাহাজ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। বনিটো সহ কয়েকটি ছোটো-বড়ো মাছ তখনো সেখানে ছিল কিন্তু হাঙ্গরের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

দীর্ঘক্ষণ পর আবার এক হাঙ্গরের আবির্ভাব হয়। তবে সে একা নয়, সঙ্গোপাঙ্গ নিয়েই হাজির হয়েছিল। হাঙ্গরের আগে আগে যে মাছটি আসছিল তার নাম আড়কাঠি মাছ বা পাইলট ফিশ। আরেকরকম মাছ হাঙ্গরের ঘাড়ে-পিঠে চড়ে আসছিল। সেগুলি হাঙ্গর-‘চোষক’ জাহাজের যাত্রীগণ উপরের বারান্দা থেকে ঝুঁকে এই দৃশ্য উপভোগ করছিল।

৪.২ “নিজের দূরবীন নিয়ে গালিলিও অনেক নতুন আবিষ্কার করলেন” গালিলিও কী কী আবিষ্কার করলেন ? এই সব আবিষ্কার সনাতনপন্থী দের মধ্যে কী প্রভাব ফেলল ?

উত্তরঃ সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ‘গালিলিও’ প্রবন্ধে বিশ্ববরেণ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী গালিলিওর জীবনেতিহাসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাওয়া যায়। হল্যান্ডের জনৈক কাচ-ব্যবসায়ী কাচের লেন্স নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে নিজের অজান্তেই যে দূরবীনের জন্ম দিয়েছিলেন গালিলিওর হাতে তা আরো উন্নত এবং শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। সেই দূরবীন নিয়ে গালিলিও মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচনে মনোনিবেশ করেছিলেন।

নিজের দূরবীন নিয়ে গ্যালিলিও যে সকল নতুন আবিষ্কার করেছিলেন সেগুলি হল- চাঁদের পর্বতমালা, বৃহস্পতির উপগ্রহসমূহ, সূর্যবিম্বে কলঙ্কবিন্দু, শুক্র গ্রহের চন্দ্রের মতো ঔজ্জ্বল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি, শনি গ্রহের বলয় এবং আরো অনেক জিনিস।

এইসকল বিষয় আবিষ্কারের পর গালিলিওর কাছে কোপার্নিকাসের মতবাদ অভ্রান্ত বলে মনে হয়েছিল। তাঁর আবিষ্কারের কথা জনগণের মধ্যে প্রচার করলে সকলকে তিনি তার স্বপক্ষে আনতে পারবেন-এই ভেবে তিনি বই লিখতে শুরু করলেন। কিন্তু এর ফল হল বিপরীত। গালিলিওর আবিষ্কার জনসমক্ষে আসার পরেই সনাতনীরা তার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেছিল। এইসব সনাতনপন্থীদের মধ্যে ছিল ফ্রান্সের ডোমিনিকান সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসীরা এবং তাঁর সেইসব সহকর্মী যারা তার যশোপ্রতিভায় ঈর্ষান্বিত ছিলেন। তারা গোপনে অভিযোগ করেছিলেন যে গ্যালিলিও ধর্মবিদ্বেষী মতবাদ প্রচার করছেন।

৫। অনধিক একশাে পঞ্চাশ শব্দে যে-কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x২ = ১০

৫.১ “কিন্তু বৃথা এ গঞ্জনা”- বক্তা কে ? তিনি কাকে গঞ্জনা করতে চেয়েছেন ? কেন তার মনে হয়েছে এই গঞ্জনা বৃথা ? ১+১+৩

উত্তরঃ মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা ‘নীলধ্বজের প্রতি জনা’ কবিতায় মাহেশ্বরী পুরীর রানী জনা এ কথাগুলি বলেছেন।

আলোচ্য অংশে জনা তার স্বামী নীলধ্বজকে গঞ্জনা দিতে চেয়েছেন।

জনার মনে হয়েছে তার স্বামীকে গঞ্জনা দেওয়া বৃথা, কারণ—

(১) রাজা নীলধ্বজ হল জনার স্বামী এবং হিন্দু শাস্ত্র মতে স্বামীকে গঞ্জনা দেওয়া পাপ। তাই জনা বলেছেন “পড়িব বিষম পাপে গঞ্জিলে তোমারে”।

(২) জনা একজন কুলনারী, তাই বিধির বিধানে সে পরাধীন। জনার নিজের শক্তি নেই যে তার মনের বাসনা পূরণ করবে, অর্থাৎ তার পুত্রের হত্যাকারী অর্জুনের বিনাশ করবে। তার স্বামী রাজা নীলধ্বজের উচিত ছিল অর্জুনকে হত্যা করে জনার মনের বাসনা পূরণ করার কিন্তু ভাগ্যদোষে জনার স্বামী জনার প্রতি বিরূপ। এইসব ভেবে জনার মনে হয়েছে তার গঞ্জনা দেওয়া বৃথা।

আরো একটি কারণে জনার মনে হয়েছে তার স্বামীকে গঞ্জনা দেওয়া বৃথা। সেটি হল- তার একমাত্র পুত্র প্রবীর তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সেইজন্য “এ জনাকীর্ণ ভবস্থল আজি/ বিজন জনার পক্ষে।” যে গেছে, কোনোভাবেই সে আর ফিরে আসবেনা। তাই এই অবস্থায় কাউকে গঞ্জনা দেওয়াই বৃথা।

৫.২ “আমি বাঞ্ছা করি দেখব তারি”- বক্তা কাকে দেখতে চান ? কীভাবে তার দর্শন পাওয়া যাবে ? ১+৪

উত্তরঃ লালন ফকির তার বাড়ির কাছে আরশিনগর’ কবিতায় তার মনের মানুষ’ অর্থাৎ ‘পড়শি’-কে দেখতে চেয়েছেন।

কবি একজন বাউলসাধক হিসেবে জানেন ঈশ্বর রয়েছেন মনের ভিতরে। ‘মনের মানুষ হিসেবেই তার উপস্থিতি। কিন্তু বিষয়বাসনায় কাতর মানুষের পক্ষে তার সাক্ষাৎ পাওয়া সহজ কথা নয়। কোনো মন্ত্র- তন্ত্র, সাধনপদ্ধতি নয়, শুধু আত্মোপলদ্ধির সাহায্যেই ‘মনের মানুষ’, যাঁকে কবি ‘পড়শি বলে উল্লেখ করেছেন তার দেখা পাওয়া যেতে পারে বলে কবি মনে করেছেন। তার সাক্ষাৎ পেলে পার্থিব জীবনের সব দুঃখ- যন্ত্রণা থেকে কবির মুক্তি ঘটবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন বিষয়াসক্তিকে সম্পূর্ণ দূর করে শুদ্ধস্বভাবের অধিকারী হওয়া। “গ্রাম বেড়িয়ে অগাধ পানি”–এই পানি’ অর্থাৎ বিষয়বাসনাকে অতিক্রম করলেই ‘মনের মানুষ’ বা ‘পড়শি’র সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব। লোভ-মোহ, কামনা বাসনা আমাদের মনকে চারপাশ থেকে ঘিরে থাকে। এর থেকে মুক্ত হতে পারলেই চিত্তশুদ্ধি ঘটা সম্ভব। আর চিত্তশুদ্ধি ঘটলেই মনের ভিতরে থাকা অধর মানুষ’ বা পড়শির দেখা পাওয়া সম্ভব হয়। নিরাকার ঈশ্বর পরমভক্তের শুদ্ধ চেতনার মধ্য দিয়েই তার কাছে ধরা দেন।

৫.৩ দ্বীপান্তরের বন্দিনী কে ? বন্দিনী’কে মুক্ত করার জন্য কবির যে আকুলতা প্রকাশিত হয়েছে, তা কবিতা অবলম্বনে লেখাে।

উত্তরঃ দ্বীপান্তরের বন্দিনী’ কবিতায় ‘দ্বীপান্তরের বন্দিনী হলেন ভারত-ভারতী বা ভারতমাতারূপী বাকদেবী সরস্বতী।

তিনি আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতীক। বন্দিনী ভারত-ভারতীর মুক্তির জন্য কবি নজরুলের ব্যথিত হৃদয়ের ব্যাকুলতার অবধি নেই। কবিতার প্রতি ছত্রে তাঁর দরদি চিত্তের আকুলতা প্রকাশিত। ভারতমাতা বাকভারতী দ্বীপান্তরে দেড়শাে বছর বন্দিনী। তিনি মুক্ত হয়ে না আসায় তাঁর শূন্য বেদিতে ক্রন্দনধ্বনি উঠছে। রুপাের কাঠির কঠিন স্পর্শে মায়ের রুপাের কমল বিবর্ণ। অস্ত্রধারীর অস্ত্রের আঘাতে তার পদ্ম শতচ্ছিন্ন। এই অন্যায়-অত্যাচার আর অবিচারের ঘটনায় কবি-হৃদয় বেদনাহত। তিনি মায়ের মুক্তির জন্য সতত ব্যাকুল। তাঁর ব্যাকুলতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, যখন শুনছেন দ্বীপান্তরে বাকভারতী ঘানি টানছেন। ঘানি থেকে জীবন-চুয়ানাে তেলে হােমানল জ্বলছে। সেখানে অত্যাচারিত হয়েও অত্যাচারের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। সত্যভাষীকে অন্যায় অত্যাচারের মার খেতে হচ্ছে। সত্যভাষণের স্বাধীনতাকে বিদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। অত্যাচারী শাসক রাজ্যপাট হারানাের ভয়ে স্বাধীনতাকামী বীরসিংহকে খাঁচাবন্দি করে রেখেছে। ব্যাঘ্রবিক্রম স্বাধীনতা যযাদ্ধাকে লক্ষ্য করে অগ্নি-শেল হানা হয়েছে। বীণা হয়েছে গুলিবিদ্ধ। বাণীর কমল জেল খাটছে। ব্যাকুল চিত্ত কবিমনের একটু আশা যে, মায়ের মুক্তির পূর্বাভাস সূচিত হয়েছে। কারণ যুগান্তরের ধর্মরাজ বাণীর পদ্মে চরণ রেখেছেন। দ্বীপান্তরের ঘানিতে যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক লেগেছে। দ্বীপান্তরের ঘানিতে লেগেছে / যুগান্তরের ঘূর্ণিপাক ।

৫.৪ “আমরা তাে অল্পে খুশি”–’অল্পে খুশি
মানুষদের জীবন-যন্ত্রণার যে ছবি ‘নুন’
কবিতায় ফুটে উঠেছে তার পরিচয় দাও। ৫

উত্তরঃ কবি জয় গােস্বামী ‘নুন’ কবিতায় সমাজের অতিসাধারণ শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার ছবি এঁকেছেন। তারা শ্রমজীবী, ‘দিন আনে দিন খায়’ এমনি হতদরিদ্র বটে, কিন্তু তারা অল্পে খুশি। তারা জানে দুঃখ করে দুঃখকষ্টের সুরাহা হয় না। দুঃখ কার কাছেই বা করবে ? দুঃখ জানিয়ে দুঃখের সুরাহা হবে এমন দরদি সমাজ-সংসার এদেশে নেই। কাজেই সাধারণ ভাতকাপড়ে তাদের দিন চলে। তাদের দিন চলে অসুখেবিসুখে ধারদেনা করে। কিন্তু দুঃখদারিদ্র্য, অসুখবিসুখ, দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা সবকিছু ভুলে থাকার জন্য রাতে দু-ভাই মিলে গাঁজার কলকেতে টান দেয়। অভাবের সংসারে সবদিন বাজার করা হয় না। যেদিন হয় সেদিন বেহিসেবিপনা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। কারণ গরিবের সংসারে অপ্রয়ােজনীয় গােলাপের চারা কিনে বাড়ি ফেরে : গােলাপচারা পুঁতে বাগান বানাবে, তেমন জায়গাটুকুও তাে নেই। কষ্ট ভােলার জন্য তারা যথারীতি গাঁজাতে।টান দেয়। নেশাভাঙেই তাদের আনন্দ, তাতেই তারা খুশি। এভাবে হেসেখেলে কষ্ট করে তাদের দিন চলে যায়। মাঝে মাঝে অভাব- অনটনে সংসার অচল হয়ে যায়। সেদিন মাঝরাতে তারা বাড়ি ফেরে। ভাত তখন ঠান্ডা। সামান্য নুনের জোগাড়টুকুও হয়নি। ফলে খেতে বসে মাথায় রাগ চড়ে। রাগ চড়ে গিয়ে এমন হয় যেন রাগের মাথায় সে চড়ে বসে। ফলে বাপব্যাটায় কিংবা দু- ভাইয়ে মিলে মারামারি ও চঁচামেচি করে সারাপাড়া মাথায় করে। অবশ্য তাদের রাগারাগি ও আত্মকলহে কাদের কী এসে যায় ? তারা খেটে-খাওয়া অতি নগণ্য মানুষ। তাদের চাওয়া বলতে ‘আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক। সমাজের কাছে, রাষ্ট্ৰচালকদের কাছে এটুকুই তাদের আর্জি।

৬। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x১ = ৫

৬.১ “সব শিক্ষা একটি সার্কাস”- শিক্ষার সার্কাস’ কবিতা অবলম্বনে শিক্ষা সার্কাসের সঙ্গে কীভাবে তুলনীয় আলােচনা কর। ৫

উত্তরঃ মালায়ালাম ভাষার স্বনামধন্য কবি আইয়াপ্পা পানিকরের একটি অনবদ্য কবিতা হলো ‘শিক্ষার সার্কাস’। কবিতার এই নামকরণ থেকে কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে এটাই অনুমান করা যেতে পারে যে কবি কোনোভাবে শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করতে চেয়েছেন। মূল কবিতাটি পাঠ করলে কবির অভিপ্রায় আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

শিক্ষা হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন নবীন শিক্ষার্থী তার পূর্বসূরীদের আয়ত্ত করা জ্ঞান আহরণ করতে পারে। কিছু প্রচলিত এবং কিছু অপ্রচলিত মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী শিখতে থাকে এবং সারাজীবন ধরেই সে কিছু না কিছু শেখে। কবি এখানে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার অর্থাৎ বিদ্যালয়কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন এবং তাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

প্রচলিত পরীক্ষা ব্যবস্থা হল পরীক্ষাসর্বস্ব। এখানে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান পরিমাপ করা হয় বৎসরান্তে একটি মাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে। পরীক্ষায় পাশ করলেই যেহেতু একজন শিক্ষার্থী পরের শ্রেণীতে উন্নীত হতে পারে, তাই পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়াটাই ছাত্রছাত্রীদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে, জ্ঞানার্জন হয়ে ওঠে গৌণ বিষয়। এইভাবে একের পর এক শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর যখন সব শিক্ষা শেষ হয়ে যায় তারপরও দেখা যায় একজন শিক্ষার্থীর লব্ধ জ্ঞান শূন্য। কবি এই শিক্ষাব্যবস্থাটাকেই সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করতে চেয়েছেন। সার্কাসের একজন জোকার যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে উপরে উঠে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী তেমনি ক্রমশ উচ্চতর শ্রেণীতে উন্নীত হয়।

৬.২ “সাতটার আগেই পাদ্রে গােনসাগা এসে হাজির”-পাদ্রে গােনসাগা কে ? তিনি কেন
এসেছিলেন ? ‘বন্দীর ভবিষ্যৎ নিয়ে’ জড়াে হওয়া দর্শকরা কী ভেবেছিল ? ১+১+৩

উত্তরঃ পাদ্রে গােনসাগা হলেন একজন যাজক। যাজক হওয়ার আগে ছিলেন এক হট্টাকট্টা কাঠুরে।

তিনি এসেছিলেন মুরগির খাঁচায় বন্দি বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ােকে দেখতে। পরীক্ষা করে বুঝে নিতে বিশাল ডানাওয়ালা বুড়াে সত্যিকারের মানুষ না দেবদূত।

বন্দীর ভবিষ্যৎ নিয়ে জড়াে হওয়া দর্শকরা নানারকম ভাবনাচিন্তা করেছিল| পেলাইও-দের জ্ঞানী প্রতিবেশিনী ডানাওয়ালা বুড়াে সম্পর্কে মন্তব্য করেছিল যে, বুড়ােটি একটি দেবদূত| আবার কৌতূহলী জনতার একাংশের ইচ্ছা ছিল বুড়ােটার সঙ্গে একটু মজা করার। তাদের কাছে বুড়ােটি কোনাে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন জীব নয়, যেন সার্কাসের জন্তু। আবার যারা সরলমতির দর্শক তাদের মধ্যে কেউ ভেবে নিয়েছিল তাকে সমস্ত জগতের পুরপিতা করে দেওয়া উচিত। যারা কঠিন হৃদয়ের আধিকারী তাদের মন্তব্য ছিল বুড়ােটাকে একজন পাঁচতারা সেনাপতির পদে উন্নীত করে দেওয়া দরকার, যাতে দেশের হয়ে লড়াই করে সব যুদ্ধ জিতিয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ তারা ভেবে নিয়েছিল বুড়ােটি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। অনেকের মনে হয়েছিল যদি এর দ্বারা ডানাওয়ালা জাতির বংশবিস্তার হয় তবে সে জাতি হবে জ্ঞানে ও গুণে সবার সেরা এবং তারাই বিশ্বব্রয়ান্ডের দায়িত্ব নিতে পারবে। কিন্তু পাদরি গােনসাগার মনে হয়েছিল বুড়ােটি জোচ্চোর এবং ফেরেববাজ।

৭। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x২ = ১০

৭.১ “তার রাগটা কী রকম সেইটে দেখবার জন্যেই তাে এ কাজ করেছি”- বক্তা কে ? এখানে কার রাগের কথা বলা হয়েছে ? তিনি রেগে গেলে কী হয় ? তার রাগের ধরন দেখার জন্য বক্তা কী করেছিল ? ১+১+১+২

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গুরু’ নাটকে অচলায়তনের আবাসিক পঞ্চক এই কথাগুলি বলেছিল।

আলোচ্য অংশে মহাময়ূরী দেবীর রাগের কথা বলা হয়েছে।

অচলায়তনের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহাময়ূরী দেবীর পুজোতে কোনো অনাচার ঘটলে তিনি ভয়ানক রেগে যান এবং তিনদিনের দিন একটি সাপ এসে অনিষ্টকারীকে দংশন করে।

পঞ্চকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এটাই যে সে যুক্তিবাদী। কোনো কিছু চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করে নেওয়ার মতো মানসিকতা তার ছিল না। অচলায়তনে প্রচলিত প্রতিটি নীতি-নিয়ম সে নিজে পরখ করে তবেই বিশ্বাস করত। মহাময়ূরী দেবীর ক্ষেত্রেও সে একই কাজ করেছিল।

গত মাসের শনিবার মহাময়ূরী দেবীর
পুজো ছিল। সেদিন পঞ্চক কাঁসার থালায় ইঁদুরের গর্তের মাটি রেখে তার উপর পাঁচটা শেয়ালকাটার পাতা এবং তিনটে মাষকলাই সাজিয়ে দিয়ে আঠারো বার ফুঁ দিয়েছিল। মহাময়ূরী দেবী সত্যিই রাগেন কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য পঞ্চক এই কাজ করেছিল।

৭.২ “তােমার এই অসামান্য সাহস দেখে উপাধ্যায় মশায়ের মুখে আর কথা নেই।”– এখানে কার সাহসের কথা বলা হয়েছে ? সে কীভাবে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল ? উপাধ্যায় মশায়ের মুখে কথা নেই কেন ? ১+২+২

উত্তরঃ এখানে যার সাহসের কথা বলা হয়েছে, সে হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘গুরু’ নাটকের ‘অচলায়তন’- এর অন্যতম শিক্ষার্থী সুভদ্র।

সুভদ্র কৌতূহলবশে অচলায়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে বাইরের দৃশ্য দেখে। অচলায়তনের বিধান অনুযায়ী এ এক ভয়ানক পাপ কাজ। আচলায়তনের উত্তরদিক একজটা দেবীর। জানালা খােলার ফলে উত্তরদিকের প্রবেশ করা বাতাস নাকি ওদিকের সমস্ত যজ্ঞপাত্রকে কলুষিত করেছে। এজন্য সুভদ্র নাকি মহাপাপী। তাকে কঠোর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। কিন্তু পঞকের অভিমত হল ওই কাজ সুভদ্রের পাপকাজ নয়, বরং তার সাহসিকতার পরিচয়। সে ওই কাজের দ্বারা তিনশাে পঁয়তাল্লিশ বছরের আগল দিয়েছে ঘুচিয়ে। অচলায়তনে গুরুর আসার পথ করেছে প্রশস্ত।

উপাধ্যায় কিন্তু পঞকের মতাে উদার ও খােলা মনের মানুষ নন। তিনি নানাবিধ সংস্কারের জালে আবদ্ধ। কাজেই সুভদ্রের অত বড়াে পাপ কাজের কথা শুনে তিনি স্তম্ভিত ও বাকরুদ্ধ। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না ওই মহাপাপের কী প্রায়শ্চিত্ত হতে পারে ! অচলায়তনই বা কতখানি অশুচি হয়েছে ? অশুচিতা দূর করে কীভাবে শুচিতা ফিরে আসবে।

৭.৩ যিনি সব জায়গায় আপনি ধরা দিয়ে বসে আছেন তাকে একটা জায়গায় ধরতে গেলেই তাঁকে হারাতে হয় !”- বক্তা কে ? মন্তব্যটির মর্মার্থ আলােচনা করাে। ১+৪

উত্তরঃ আলােচ্য উদ্ধৃতির বক্তা হলেন দাদাঠাকুর। তিনিই অচলায়তনে গুরু, যুনকপল্লিতে দাদাঠাকুর, দর্ভকদের মাঝে গোঁসাই।

পরমাত্মা সর্বব্যাপী, সর্বভূতে তাঁর অধিষ্ঠান। নরের মধ্যে তিনি নারায়ণ। ভূমিতে অধিষ্ঠিত ভূমা। তাঁকে কোনাে সংকীর্ণ ঘেরাটোপে বাঁধা যায় না। বাঁধতে চাওয়া মস্ত ভ্রান্তি, মূর্খামির একশেষ। তিনি বন্ধন অসহিষ্ণু। তিনি কোনাে বাঁধনে বাঁধা থাকেন না। তাঁকে অচলায়তনের দুর্ভেদ্য প্রাচীরের সংকীর্ণ বেষ্টনীতে বাঁধতে গিয়ে আচার্যরা মহাভুল করেছেন। প্রাণের অবাধ প্রবেশের পথ বন্ধ করে তাঁরা পরমাত্মাকে নির্বাসিত করেছেন অচলায়তন থেকে। পুথিনির্ভরতা, আচারসর্বস্বতা, অর্থহীন মন্ত্রতন্ত্রে আস্থাস্থাপন ইত্যাদিকে প্রকৃত জ্ঞানচর্চা,সত্য উপলব্ধি ভেবে গতানুগতিক অভ্যাসের চক্রপথে কেবলই ঘুরপাক খেয়েছেন অচলায়তনের আচার্য ও তাঁর সহকর্মীরা। তাঁরা জানেন না চক্র কেবল এক জায়গায় ঘােরায়, তা সােজা পথ দেখায় না। যে পথে বিশ্বের সব যাত্রীর সহযাত্রী হওয়া যায়। ওই সহযাত্রীদের হৃদয়মন্দিরই তাে পরমাত্মার অধিষ্ঠানক্ষেত্র।

৮। অনধিক ১৫৯ শব্দে যে-কোনাে দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৫x২ = ১০

৮.১ বৈষ্ণব পদ রচনায় বিদ্যাপতির প্রতিভার পরিচয় দাও। তাকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ কী ?

উত্তরঃ বিদ্যাপতি বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ট কবি । স্বয়ং চৈতন্যদেব তাঁর পদাবলীর রসাস্বাদন করে মুগ্ধ হয়েছেন । পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে মিথিলার বিসফী গ্রামে এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সংস্কৃত ভাষাসাহিত্য এবং স্মৃতি-সংহিতায় তিনি সবিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। মিথিলা রাজ শিবসিংহের আনুকূল্যে তিনি রাজকীয় মর্যাদা লাভ করেন। বিদ্যাপতি মিথিলাবাসি হলেও বাঙালিরা তাঁকে প্রাণের কবি হিসেবে বরণ করে নিয়েছে।

কৃতিত্বঃ মৈথিলি ভাষায় রচিত বিদ্যাপতির
পদগুলি বাংলাদেশে এসে ব্রজবুলি আকার ধারণ করেছে। এই শ্রুতিমধুর পদগুলি স্বয়ং চৈতন্যদেব আস্বাদন করতেন। বৈষ্ণব পদ ছাড়াও তিনি বেশ কিছু গ্রন্থও রচনা করেছেন। যেমন- পুরুষপরীক্ষা (নীতিশিক্ষা), লিখনাবলী (পত্র লেখার রীতি), কীৰ্ত্তিলতা (ইতিহাস), ভূ-পরিক্রমা (ভূগোল), দানবাক্যাবলী (দানসংক্রান্ত), দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী (স্মৃতিমূলক), শৈবসর্বস্বসার, বিভাগসার (স্মৃতিমূলক), গঙ্গাবাক্যাবলী (তীর্থস্থান), কীর্তিপতাকা (অবহট্ঠ ভাষায় রচিত) ইত্যাদি।

বিদ্যাপতিকে বাংলা সাহিত্যে অন্তর্ভুক্ত করার কারণঃ বিদ্যাপতি বাঙালি কবি না হয়েও বাংলা সাহিত্যে তথা বাঙালির হৃদয় দখল করে রয়েছেন। মিথিলা ছিল পূর্ব ভারতের সংস্কৃত চর্চার অন্যতম পীঠস্থান। এখানকার বহুশিক্ষার্থী সেখানে যেত ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্যে এবং বিদ্যাপতির পদগুলি নিয়ে আসত হৃদয়ে করে এভাবেই বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাপতির অন্তর্ভুক্তি ঘটেছিল। বিদ্যাপতির পদের রস বাঙালির হৃদয় আকৃষ্ট করেছিল। বিদ্যাপতি রচিত মৈথিলী ভাষার পদ শিক্ষিত সমাজের নজর কেড়েছিল যার ফলে বিদ্যাপতি আজও সমানভাবে সমাদৃত।

৮.২ ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যটির রচয়িতা কে ? তিনি কী উপাধি পেয়েছিলেন ? তার কাব্যটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যটি রচনা করেন চৈতন্য-পূর্ব যুগের কবি মালাধর বসু।

কবি মালাধর বসুর উপাধি ছিল গুণরাজ খান। গৌড়ের সুলতান রুকনুদ্দিন বরবক শাহ তাকে এই উপাধি দিয়েছিলেন।

কাব্য পরিচয়- ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ হল সংস্কৃত ভাগবতের প্রথম বাংলা অনুবাদ। কবি ভাগবতের দশম ও একাদশ স্কন্দ অনুবাদ করেছিলেন।

শ্রীকৃষ্ণবিজয় গ্রন্থটি তিনটি খন্ডে বিভক্ত। যথা—
» আদ্যকাহিনি- শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা;
» মধ্য কাহিনি- শ্রীকৃষ্ণের মথুরালীলা;
» অন্ত কাহিনি- শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকালীলা।

কাব্যটি রচনা করতে গিয়ে কবি বিষ্ণুপুরাণ, হরিবংশ প্রভৃতি গ্রন্থ অনুসরণ করেছেন। তবে, কাহিনি উপস্থাপনে একান্তভাবেই কবির নিজস্বতা প্রকাশ পেয়েছে।

মূল ভাগবতের তত্ত্বগত জটিলতা পরিহার করে কবি কাহিনির উপর আলোকপাত করেছেন। অবশ্য তৎকালীন বাঙালি সমাজের প্রেক্ষিতে এমনটাই কাম্য ছিল।

মূল ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বর্যভাব প্রকাশ পেলেও মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ গ্রন্থে কৃষ্ণের মধুর-কান্তা ভাবটিই ফুটে উঠেছে।

পরিশেষে বলা যায়, ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ সংস্কৃত ভাগবতের বাংলা অনুবাদ হলেও কবির স্বকীয়তায় উজ্জ্বল। চৈতন্য-পরবর্তী কালের অনেক কবি ভাগবত অনুবাদে প্রয়াসী হয়েছিলেন, মালাধর বসু ছিলেন তাঁদের পথপ্ৰদৰ্শক।

৮.৩ বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র
বিদ্যাসাগরের অবদান আলােচনা করাে।

ভূমিকাঃ উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার মাটিতে যে সমস্ত মহামানবদের আবির্ভাব ঘটেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলা গদ্য সাহিত্য বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান অবিস্মরণীয়। বিদ্যাসাগরের হাতেই সাহিত্যিক গদ্যের জন্ম। বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যকে দিয়েছেন স্বাতন্ত্র্য ও আভিজাত্য। তিনি বাংলা গদ্যের একটি রাজপথ তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই পথে পরবর্তীকালে বহুপদাতিকের আগমন হয়েছে। অ্যাডিশন ইংরেজি সাহিত্যের গদ্যের যা করেছেন বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্য সাহিত্যের জন্য সেই কাজ রবীন্দ্রনাথের কথায়— “বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষার প্রথম যথাৰ্থ শিল্পী ছিলেন”।

সাহিত্যকর্ম: বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন মহান সমাজসংস্কারক, তাই নির্মল সাহিত্য প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তিনি সমাজ ও মানুষের প্রয়োজনেই লেখনী ধরেছিলেন। তাঁর সমগ্র রচনাকর্মকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়- শিশুপাঠ্যগ্রন্থ, অনুবাদ ও মৌলিক কথামালা প্রধান। তাঁর শিশুপাঠ্য গ্রন্থ গুলির মধ্যে “বর্ণপরিচয়”, “বোধোদয়”, “কথামালা” প্রধান। বিভিন্ন ভাষা থেকে অনুবাদ গ্রন্থ গুলি হল “বেতাল পঞ্চবিংশতি”, “শকুন্তলা”, “সীতার বনবাস”, “ভ্রান্তিবিলাস” প্রভৃতি। তাঁর মৌলিক গ্রন্থগুলি হল “বিদ্যাসাগর চরিত”, “প্রভাবতী সম্ভাষণ”, “অতি অল্প হইল”, “আবার অতি অল্প হইল”, “ব্রজবিলাস”, “সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য শাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব”, “বিধবা বিবাহ চলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব”, “বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার” প্রভৃতি।

বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশে বিদ্যাসাগরের অবদান—

(১) ধ্বনি ঝংকার অনুসরণ করে উপযুক্ত স্থানে যতি চিহ্ন স্থাপন করে বাক্যাংশ গুলিকে সাজিয়ে তিনি প্রথম গদ্য ছন্দ কে আবিষ্কার করেছিলেন।

(২) বিদ্যাসাগরের ভাষা স্বচ্ছ ও প্রাঞ্জল সন্ধিযুক্ত ও সমাসবদ্ধ শব্দ ও পদ থাকলেও তা গতিকে ব্যাহত করে না বরং ভাষা আরো গতিময় হয়ে ওঠে।

(৩) বাংলা ক্লজ এবং ফ্রেজ বাক্যাংশ প্রয়োগ করে ভাষার ব্যবহারযোগ্যতা সম্পাদন করেছেন তিনি।

(৪) কমা সেমিকোলন এর ব্যবহার বিদ্যাসাগরই প্রথম যথার্থ অধিকারীর ঢংএ করতে পেরেছিলেন।

(৫) গদ্যকে উপ বাক্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে, বাক্যকে ভাব অনুসারে ধ্বনি সামঞ্জস্যে ছন্দ স্রোত এনে, বাক্যে গতির পূর্ণতার মাধ্যমে, বাংলা গদ্যের সম্পূর্ণতা এনে দিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর।

(৬) গদ্যের নানা বৈচিত্র্য যেমন- বিবৃতিমূলক গদ্য, আবেগ মূলক গদ্য বিতর্কমূলক ভাষা,লঘু ধরনের সংলাপ, স্মৃতিচারণ মূলক রচনা, প্রভৃতি তার গদ্যের ভিত্তিকে আরো সুপ্রতিষ্ঠা করেছে।

এইভাবে পর্যালোচনা করে ব্যাপক অর্থে বিদ্যাসাগরকে নিসংশয়ে বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক স্রষ্টার মর্যাদা দেওয়া যায়। আসলে মধ্যযুগের শেষ ভাগেই গদ্যের অস্পষ্ট আবির্ভাব ঘটে, ফোর্টউলিয়াম কলেজ এর পন্ডিতরা তাদের সীমাবদ্ধ সামর্থে তাকে যথার্থ রূপদান করতে প্রয়াসী হন। রামমোহন তাকে দৃঢ় অবয়ব দান করে। অক্ষয় কুমার দত্তের হাতে সেই ভাষা আরো মার্জিত হয়ে ওঠে এবং বাংলা গদ্য ভাষাকে প্রথম শিল্প ও সাহিত্য গুণান্বিত করে তোলেন বিদ্যাসাগর, সেই অর্থে বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক, প্রথম মহৎ স্রষ্টা রূপে অভিহিত করা যায়।

৮.৪ ছড়ার বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে। যে-কোনাে দুই ধরনের ছড়ার উদাহরণ দাও।

ছড়ার সংজ্ঞাঃ সমাজের সাধারণ মানুষের আবেগ, কল্পনা, স্বপ্ন, স্মৃতি, অভিজ্ঞতার কথা পদ্যের ভাষায় ছন্দের বন্ধনে ক্ষুদ্র অবয়বে যে বাঅয় রূপ লাভ করে তাই ছড়া।

ছড়ার বৈশিষ্ট্যঃ

ছড়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলাে, অকারণ তথ্যের ভারে ভারাক্রান্ত নয়, এর একটি অংশের সঙ্গে আর একটি অংশ সহজেই লগ্ন হয়ে যায়। ফলে একই ছড়ার মধ্যে ভাব ও চিত্রগত বিভিন্নতা দেখা যায়। যদিও রসগত অখণ্ডনীয়তা বজায় থাকে।

বাংলা ছড়ার বৈশিষ্ট্যসমূহকে সংক্ষেপে নিম্নরূপে উপস্থাপন করা যায়—

(১) ছড়ায় যুক্তিসঙ্গত বা বিশিষ্ট ভাব কিংবা ভাবের পারম্পর্য নেই

(২) ছড়ায় ঘটনার ধারাবাহিকতা বা আনুপূর্বিক কাহিনী থাকে না।

(৩) ছড়া ধ্বনি প্রধান, সুরাশ্রয়ী।

(৪) ছড়ায় রস ও চিত্র আছে, তত্ত্ব ও উপদেশ নেই।

(৫) ছড়ার ছন্দ শাসাঘাত প্রধান প্রাকৃত বাংলা ছন্দ।

(৬) ছড়া বাহুল্য বর্জিত, দৃঢ়বদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত ।

(৭) ছড়ার ভাষা লঘু ও চপল।

(৮) ছড়ার রস তীব্র ও গাঢ় নয়, স্নিগ্ধ ও সরস।

বাংলায় ঘুমপাড়ানি ছড়ার উদাহরণ—

• বাংলা ‘ঘুমপাড়ানি ছড়া’গুলির কেন্দ্রে রয়েছে শিশু। তাকে ঘুম পাড়ানাের নানা প্রণালী এই ছড়াগুলিতে ফুটে উঠেছে।
নিদ্রাহীন শিশুকে ঘুমপাড়ানাের জন্য যখন ‘ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি’কে আহ্বান করা হয় তখন ছড়া যেন লােকোত্তরের প্রকাশ হয়ে যায়। অথচ এর মধ্যেই আবার জীবনের অনেক অপূর্ণতাও উকি দিয়ে যায়-

ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি
মােদের বাড়ি এসাে,
খাট নেই, পালঙ্ক নেই
খােকার চক্ষু পেতে বসাে।

এইভাবেই ঐন্দ্রজালিক শক্তিতে ঘুমপাড়ানি ছড়া শিশুমনকে আকৃষ্ট করে, তার চোখে নিদ্রার আবেশ তৈরি করে দেয়।

খেলার ছড়া’ উদাহরণ —

অনেকসময় খেলাকে অবলম্বন করে ছড়াগুলি তৈরি হয়। কখনও ছড়াকে অবলম্বন করেও খেলার পরিকল্পনা হয়।
বৃষ্টির দিনে যখন বাইরে যাওয়া যায় না, সেই সময় ঘরের মধ্যে খেলায় গুণে গুণে নির্দিষ্ট কাউকে চোর ইত্যাদি বানানাের জন্য ছড়া কাটা হত—

আপন বাপন চৌকি চাপন,
ওল, ঢোল, মামার খােল
ওই মেয়েটি খাটিয়া চোর।

খেলার ছড়া সংঘবদ্ধতা এবং শৃঙ্খলাবােধ জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করে। যদিও অঞ্চলভেদে এই খেলার ছড়ার বিভিন্ন রূপ দেখা যায়।

৯। অনধিক ১৫০ শব্দে যে-কোনাে একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :৫x১ = ৫

৯.১ মিশ্র ভাষা কাকে বলে ? এই ভাষার চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তরঃ দুই বা তার বেশি ভাষাগোষ্ঠীর মানুষ একই এলাকায় বসবাস করলে তাদের ভাষাগুলির মিশ্রণে যে নতুন ভাষার জন্ম হয় তাকে মিশ্র কথা বলে। যেমন, বিচ-লা-মার, পিজিন-ইংরেজি মরিশাস, ক্রেয়ল, চিনুক, ফরাসি পিজন প্রভৃতি।

মিশ্র ভাষার বৈশিষ্ট্য—

(১) মিশ্র ভাষাতে উভয় ভাষারই ভাষাগত বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে উন্নত ভাষাটির প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়।

(২) মিশ্রভাষার ব্যবহার কথ্য ভাষা হিসাবেই সীমাবদ্ধ থাকে। এই ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে না।

(৩) মিশ্রভাষার কোন নির্দিষ্ট ব্যাকরণ থাকে না, কথা বলার সময় যে কোন একটি ভাষার নিয়ম প্রযোজ্য হয়।

(৪) মিশ্রভাষার শব্দভাণ্ডারও অত্যন্ত সীমিত।

পরিশেষে, মিশ্রভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। মিশ্র ভাষা মূলত প্রয়োজনভিত্তিক, এইজন্য এর স্থায়িত্ব কম। তবে কোন কারণে মিশ্রভাষার স্থায়ীত্বকাল বেশি হলে তার বৈশিষ্ট্যগত কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তখন এর শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ হয় এবং নির্দিষ্ট ভাষারীতি গড়ে ওঠে। মিশ্রভাষা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে কোনো প্রজন্মের মাতৃভাষায় পরিণত হয় তবে তাকে বলা হয় ক্রেওল এবং এই পদ্ধতিটিকে বলা হয় ক্রেওলাইজেশন।

৯.২ ভােটচীনা ভাষাবংশের সংক্ষিপ্ত পরিচয়
দাও।

উত্তরঃ ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে, ভারতবর্ষে প্রচলিত ভাষাগুলি চারটি ভাষাবংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এই চারটি ভাষা বংশের একটি হলো ভোটচিনা ভাষাবংশ।

সাধারণ পরিচয়ঃ

ভারতে আর্যদের আগমনের পূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠির মানুষ এসেছিল। উত্তর-পূর্ব ভারতে বসবাস করত মঙ্গোলয়েডরা। তারা যে ভাষায় কথা বলতেন সেই ভাষাই হল ভোটচিনা ভাষা।

ভৌগোলিক অবস্থানঃ

ভোটচিনা ভাষাগোষ্ঠির অবস্থান মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতে। আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশে ভোটচিনা ভাষাবংশের বিভিন্ন ভাষা প্রচলিত রয়েছে।

শাখা-প্রশাখা—

ভোটচিনা ভাষাবংশের প্রধান শাখা দুটি—
(১) ভোটবর্মী এবং (২) তাইচিনা। এই দুটি শাখার মধ্যে ভারতে ভোটবর্মী শাখার ভাষার সংখ্যা বেশি।

(১) ভোটবর্মী- এই শাখার ভাষাগুলিকে আবার চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা যেতে পারে—

(ক) বোডো বা বোরো– এই শ্রেণীর উল্লেখযোগ্য ভাষাগুলি হল গারো, কোচ, রাভা, কাছারি প্রভৃতি।

(খ) নাগা– এই শাখার ভাষাগুলি মূলত নাগাল্যান্ড এবং মণিপুরে প্ৰচলিত। উল্লেখযোগ্য ভাষাগুলি হল আও, অঙ্গামি, সেমা প্রভৃতি।

(গ) কুকিচিন– মণিপুরের ঐতিহ্যবাহী মেইতেই ভাষা, মিজো, কুকি প্রভৃতি এই শাখার উল্লেখযোগ্য ভাষা

(ঘ) বর্মী– চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচলিত মোঘ, ভ্রু প্রভৃতি বর্মী শাখার অন্যতম ভাষা।

(২) তাইচিনা— ভারতে প্রচলিত তাইচিনা শাখার উল্লেখযোগ্য ভাষা হল খামতি, অহোম প্রভৃতি।

পরিশেষে, মিশ্রভাষার আরেকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। মিশ্র ভাষা মূলত প্রয়োজনভিত্তিক, এইজন্য এর স্থায়িত্ব কম। তবে কোন কারণে মিশ্রভাষার স্থায়ীত্বকাল বেশি হলে তার বৈশিষ্ট্যগত কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তখন এর শব্দ ভান্ডার সমৃদ্ধ হয় এবং নির্দিষ্ট ভাষারীতি গড়ে ওঠে। মিশ্রভাষা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে কোনো প্রজন্মের মাতৃভাষায় পরিণত হয় তবে তাকে বলা হয় ক্রেওল এবং এই পদ্ধতিটিকে বলা হয় ক্রেওলাইজেশন।

৯.৩ কিউনিফর্ম বা কীলকলিপির নামকরণ কে করেছিলেন ? এই লিপির সবচেয়ে প্রাচীন নমুনাটি কোথায় পাওয়া গেছে ? এই লিপির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ লিপি বিশারদ টমাস হাইড কিউনিফর্ম বা কীলক লিপির নামকরণ করেন।

এই লিপির প্রাচীন নমুনাটি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের পুরনো এবং এটি পাওয়া গেছে উরুক শহরে।

লিপি বিশারদ জোহানস ফ্রেডরিকের মতে, পৃথিবীর সাতটি প্রাচীন সভ্যতায় লিপির ব্যাবহার শুরু হয়েছিল। সেগুলির মধ্যে সুমেরু সভ্যতায় প্রচলিত কিউনিফর্ম লিপি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পৃথিবীর প্রচীনতম লিপি হল কীলক লিপি বা কিউনিফর্ম। সুমেরু সভ্যতার মানুষেরা এই লিপি উদ্ভাবন করেন। কিউনিফর্ম কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ কিউনিয়াস (পেরেক) আর ফরমা (আকৃতি) থেকে । নরম মাটির চাকতিতে লিখে সেটি আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হত। শুকোনোর পর খোদিত লেখাটি পেরেকের মতো খোঁচা খোঁচা দেখাতো, যার জন্য এই লিপির নাম কিউনিফর্ম বা কীলক লিপি ৷

মেসোপটেমিয়ার মানুষ মনে করতেন ‘নেবো’ নামের দেবতাই এই লিপির আবিষ্কর্তা। আনুমানিক আড়াই হাজার বছর আগে এই লিপির ব্যাবহার বন্ধ হয়ে যায়। যাইহোক, কিউনিফর্ম লিপিতে খোদিত বিভিন্ন নমুনা থেকে প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতা সম্পর্কে বহু তথ্য আজ জানা সম্ভব হয়েছে।

CLASS 11 BENGALI QUESTION PAPER
2014 2015 2016 2017 2018
2019 2020 2022 2023 2024

This Post Has 2 Comments

Leave a Reply