বাংলা চলচ্চিত্রের কথা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, বড় প্রশ্ন (Essay Type) উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer
বাংলা চলচিত্রের কথা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) থেকে বহুবিকল্পীয় এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলা চলচ্চিত্রের কথা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | বাংলা চলচ্চিত্রের কথা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. হীরালাল সেন ও মতিলাল সেন ভাতৃদ্বয় কবে রয়াল বায়োস্কোপ কোম্পানি তৈরি করেন ?
(ক) ১৮৯৮ সালে (খ) ১৮৯৬ সালে
(গ) ১৮৯৯ সালে (ঘ) ১৮৮০ সালে
উত্তরঃ (ক) ১৮৯৮ সালে
২. সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী ছবি সংগীত পরিচালনা করেছিলেন—
(ক) সত্যজিৎ রায় (খ) পণ্ডিত রবিশঙ্কর
(গ) ওস্তাদ বিয়ালেৎ খা
(ঘ) ওস্তাদ বিসমিল্লা খা
উত্তরঃ (খ) পণ্ডিত রবিশঙ্কর
৩. ১৯৭০ সালে ঋত্বিক ঘটক কোন চলচ্চিত্র তৈরি করেন ?
(ক) Chhou Dance of Purulia
(খ) Scientists of tomorrow
(গ) Why বা ইয়ে কিঁউ
(ঘ) Adivasiyon ka jeeban sharat
উত্তরঃ (গ) Why বা ইয়ে কিঁউ
৪. কত সালে প্রথম সবাক সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ?
(ক) ১৯৩৬ সালের ১৬ এপ্রিল
(খ) ১৯১৩ সালের ১৩ মে
(গ) ১৯২৯ সালের ১ জানুয়ারি
(ঘ) ১৯৩১ সালের ১১ এপ্রিল
উত্তরঃ (ঘ) ১৯৩১ সালের ১১ এপ্রিল
৫. ১৯৩২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নাটকে চলচ্চিত্রায়িত করেন—
(ক) শ্যামা (খ) রাজা (গ) চিত্রাঙ্গদা
(ঘ) নটির পূজা
উত্তরঃ (ঘ) নটির পূজা
৬. তপন সিংহের ‘কাবুলিওয়ালা’ সিনেমার ভূমিকায় কে ছিলেন ?
(ক) পাহাড়ী সান্যাল (খ) ছবি বিশ্বাস
(গ) কমল মিত্র (ঘ) জহর রায়
উত্তরঃ (খ) ছবি বিশ্বাস
৭. প্রথম ভারতীয় সবাক হিন্দি সিনেমা কোনটি ?
(ক) রাজা হরিচন্দ্র
(খ) সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র
(গ) আলম আরা (ঘ) বিদ্যাপতি
উত্তরঃ (গ) আলম আরা
৮. ১৯৬২ সালে নির্মিত ঋত্বিক ঘটকের প্রথম ছবি ‘নাগরিক’ কবে মুক্তি পায় ?
(ক) ১৯৭৭ সালে (খ) ১৯৫৩ সালে
(গ) ১৯৫৫ সালে (ঘ) ১৯৭০ সালে
উত্তরঃ (ক) ১৯৭৭ সালে
৯. অযান্ত্রিক সিনেমার গল্পকার হলেন—
(ক) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
(খ) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
(গ) মানিক বন্দোপাধ্যায়
(ঘ) সুবোধ ঘোষ
উত্তরঃ (ঘ) সুবোধ ঘোষ
১০. প্রথম বাংলা সবাক সিনেমার নাম কী ?
(ক) জামাইষষ্ঠী (খ) আলম আরা
(গ) নল-দময়ন্তী (ঘ) জনা
উত্তরঃ (ক) জামাইষষ্ঠী
১১. মৃণাল সেনের প্রথম ছবি হলো—
(ক) রাতভোর (খ) নীল আকাশের নীচে
(গ) আকাশের সন্ধানে (ঘ) কোরাস
উত্তরঃ (ক) রাতভোর
১২. বাংলায় সবাক ছবির যুগ শুরু হয়—
(ক) ১৯৩১ খিস্টাব্দে (খ) ১৮৪৭ খিস্টাব্দে (গ) ১৮৮০ খিস্টাব্দে (ঘ) ১৯৩২ খিস্টাব্দে
উত্তরঃ (ক) ১৯৩১ খিস্টাব্দে
১৩. প্রথম পূর্ণদৈর্ঘের সবাক বাংলা কাহিনী চিত্র—
(ক) জয়দেব (খ) বিল্বমঙ্গল (গ) জামাইষষ্ঠী (ঘ) শাপমোচন
উত্তরঃ (খ) বিল্বমঙ্গল
১৪. সত্যজিৎ রায় নিচের যে পুরস্কারটি পাননি—
(ক) পদ্মশ্রী (খ) নোবেল (গ) অস্কার
(ঘ) লিজিয়ন অফ অনার
উত্তরঃ (খ) নোবেল
১৫. সত্যজিৎ রায়ের পিতার নাম—
(ক) অমিত রায় (খ) সুকুমার রায়
(গ) বিধানচন্দ্র রায় (ঘ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
উত্তরঃ (খ) সুকুমার রায়
১৬. ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটি রচয়িতা হলেন—
(ক) তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়
(খ) মানিক বন্দোপাধ্যায়
(গ) সুবোধ ঘোষ
(ঘ) বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
উত্তরঃ (ঘ) বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়
১৭. ‘চারুলতা’ ছবিটি কোন গল্প অবলম্বনে তৈরি—
(ক) নষ্টনীড় (খ) সমাপ্তি (গ) দেনাওপাওনা (ঘ) একরাত্রি
উত্তরঃ (ক) নষ্টনীড়
১৮. ‘সোনার কেল্লা’ ছবির পটভূমি ভারতবর্ষের কোন রাজ্যকে নিয়ে ?
(ক) কাশ্মীর (খ) মহারাষ্ট্র (গ) আসাম
(ঘ) রাজস্থান
উত্তরঃ (ঘ) রাজস্থান
১৯. ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবির প্রধান অভিনেত্রী কে ?
(ক) সুচিত্রা সেন (খ) সুপ্রিয়া দেবী
(গ) মাধবী মুখার্জী (ঘ) কানন দেবী
উত্তরঃ (খ) সুপ্রিয়া দেবী
২০. দিলীপ কুমার অভিনীত তপন সিংহ পরিচালিত ছবি—
(ক) মেঘে ঢাকা তারা
(খ) সবুজ দ্বীপের রাজা
(গ) কাবুলিওয়ালা
(ঘ) সাগিনা মাহাতো
উত্তরঃ (ঘ) সাগিনা মাহাতো
২১. ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ কার রচিত উপন্যাস ?
(ক) তারা শংকর বন্দোপাধ্যায়
(খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(ঘ) সত্যজিৎ রায়
উত্তরঃ (ক) তারা শংকর বন্দোপাধ্যায়।
২২. কোন ছবিটি ফেলুদা সিরিজের নয় ? (ক) বম্বাইয়ের বোম্বেটে
(খ) যত কান্ড কাঠমান্ডুতে
(গ) সোনার কেল্লা
(ঘ) সবুজ দ্বীপের রাজা
উত্তরঃ (ঘ) সবুজ দ্বীপের রাজা
২৩. সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ ছবির সংগীত পরিচালনা করেছিলেন—
(ক) পন্ডিত রবিশঙ্কর
(খ) ওস্তাদ বিলায়েত খাঁ
(গ) সত্যজিৎ রায়
(ঘ) ওস্তাদ বিসমিল্লা খাঁ
উত্তরঃ (ক) পন্ডিত রবিশঙ্কর
২৪. ঋত্বিক ঘটকের স্মরনীয় চলচ্চিত্র—
(ক) পথের পাঁচালী (খ) মেঘে ঢাকা তারা (গ) আকালের সন্ধানে (ঘ) গল্প হলেও সত্যি
উত্তরঃ (খ) মেঘে ঢাকা তারা।
২৫. ভারতের কোন শহরে সিনেমার প্রথম প্রদর্শনীটি দেখানো হয়—
(ক) কলকাতা (খ) দিল্লি (গ) বেঙ্গলোর
(ঘ) মুম্বাই
উত্তরঃ (ঘ) মুম্বাই
২৬. ভারতের প্রথম নির্বাক চলচিত্র কোনটি ?
(ক) বিল্ব মঙ্গল (খ) রত্নাবলী
(গ) রাজা হরিশচন্দ্র (ঘ) সাগীনা মাহাতো
উত্তরঃ (গ) রাজা হরিশচন্দ্র।
২৭. উত্তম–সুচিত্রা জুটির প্রথম ছবির নাম কি ?
(ক) পথে হল দেরি (খ) সপ্তপদী
(গ) সাড়ে চুয়াত্তর (ঘ) হারানো সুর
উত্তরঃ (গ) সাড়ে চুয়াত্তর।
২৮. দেবদাস ছবির পরিচালক ছিলেন— (ক) শিশির কুমার ভাদুড়ি
(খ) রাজেন তরফদার
(গ) নরেশ্চন্দ্র মিত্র (ঘ) প্রমথেশ বড়ুয়া
উত্তরঃ (ক) প্রমথেশ বড়ুয়া।
২৯. ‘উদয়ের পথে’ ও ‘দো বিঘা জমিন’ চলচিত্র দুটির পরিচালক কে ?
(ক) বিমল রায় (খ) নিমাই ঘোষ
(গ) হেসেন গুপ্ত (ঘ) উদয় শংকর
উত্তরঃ (ক) বিমল রায়।
৩০. ‘পথের পাঁচালি’ মুক্তি পেয়েছিল কত খিস্টাব্দে ?
(ক) ১৯৪৮ খিস্টাব্দে (খ) ১৯৫৩ খিস্টাব্দে (গ) ১৯৫৫ খিস্টাব্দে (ঘ) ১৯৫৯ খিস্টাব্দে
উত্তরঃ (গ) ১৯৫৫ খিস্টাব্দে
৩১. মৃণাল সেনের প্রথম ছবির নাম কি ?
(ক) রাতভোর (খ) নীল আকাশের নিচে
(গ) অপরাজিত (ঘ) গঙ্গা
উত্তরঃ (ক) রাতভোর
৩২. ‘কাবুলিওয়ালা’ ছবির পরিচালক—
(ক) ঋত্বিক ঘটক (খ) রাজেন তরফদার
(গ) তপন সিংহ (ঘ) মৃণাল সেন
উত্তরঃ (গ) তপন সিংহ
৩৩. ভারতের প্রদর্শিত প্রথম সবাক ছবি
কোনটি ?
(ক) মাদার (খ) গোল্ড রাশ
(গ) বার্থ অফ এ নেশন
(ঘ) মেলোডি অফ লাভ
উত্তরঃ (ঘ) মেলোডি অফ লাভ
৩৪. ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছায়াছবিটি তৈরী
করেছেন (উঃ মাঃ ২০১৫)
(ক) সত্যজিৎ রায় (খ) মৃনাল সেন
(গ) উত্তম কুমার (ঘ) ঋত্বিক ঘটক
উত্তরঃ (ঘ) ঋত্বিক ঘটক
৩৫. ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম তথ্যচিত্রকার কে ? (উঃ মাঃ ২০১৭)
(ক) মৃনাল সেন (খ) হৃত্বিক ঘটক
(গ) হীরালাল সেন (ঘ) প্রমথেশ বড়ুয়া
উত্তরঃ (গ) হীরালাল সেন
৩৬. সত্যজিৎ রায় পরিচালিত কোন ছবিটিতে উত্তম কুমার অভিনয় করেছিলেন ?
(ক) চারুলতা (খ) হীরক রাজার দেশে
(গ) নায়ক (ঘ) অপুর সংসার
উত্তরঃ (গ) নায়ক
৩৭. কত খ্রিস্টাব্দে পথের পাঁচালী সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল ?
(ক) ১৯৫০ (খ) ১৯৫২ (গ) ১৯৫৫
(ঘ) ১৯৫৯
উত্তরঃ (গ) ১৯৫৫
৩৮. বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম রোমান্টিক জুটি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন—
(ক) সৌমিত্র-শর্মিলা (খ) উত্তম-সুপ্রিয়া
(গ) উত্তম-সুচিত্রা (ঘ) সৌমিত্র-সুচিত্রা
উত্তরঃ (গ) উত্তম-সুচিত্রা
৩৯. ম্যাডান কোম্পানির প্রযোজনায় প্ৰথম বাংলা কাহিনী চিত্র কোনটি ?
(ক) বিল্বমঙ্গল (খ) প্রফুল্ল (গ) বিষবৃক্ষ
(ঘ) জনা
উত্তরঃ (ক) বিল্বমঙ্গল
৪০. মৃণাল সেনের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি
কোনটি ?
(ক) রাতভোর (খ) নীল আকাশের নিচে
(গ) বাইশে শ্রাবণ (ঘ) আকাশ কুসুম
উত্তরঃ (ক) রাতভোর
৪১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতা অবলম্বনে ‘দো বিঘা জমিন’ সিনেমাটি কে পরিচালনা করেছিলেন ?
(ক) তপন সিনহা (খ) হেমেন গুপ্ত
(গ) বিমল রায় (ঘ) রাজেন তরফদার
উত্তরঃ (গ) বিমল রায়
৪২. ক্ষুধিত পাষাণ সিনেমাটির পরিচালক কে ?
(ক) তপন সিনহা (খ) ঋত্বিক ঘটক
(গ) সত্যজিৎ রায় (ঘ) মৃনাল সেন
উত্তরঃ (ক) তপন সিনহা
৪৩. প্রথম ভারতীয় সবাক চলচ্চিত্র কোনটি ?
(ক) রাজা হরিশ্চন্দ্র (খ) আলম আরা
(গ) আঁধি (ঘ) দেশপ্রেমী
উত্তরঃ (খ) আলম আরা
৪৪. ১৯৩৫ সালে নির্মিত দ্বিভাষিক ছবি দেবদাস-এর প্রধান চরিত্রে কে অভিনয়
করেন ?
(ক) কে এল সাইগল (খ) পাহাড়ি সান্যাল (গ) ছবি বিশ্বাস (ঘ) প্রমথেশ বড়ুয়া
উত্তরঃ (ঘ) প্রমথেশ বড়ুয়া
৪৫. ‘আমার লেনিন’ তথ্যচিত্রটির নির্মাতা কে ?
(ক) পূর্ণেন্দু পত্রী
(খ) সত্যজিৎ রায়
(গ) বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
(ঘ) ঋত্বিক কুমার ঘটক
উত্তরঃ (ঘ) ঋত্বিক কুমার ঘটক
৪৬. ছোটদের জন্য তৈরি সিনেমা ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ কে পরিচালনা করেছিলেন ?
(ক) তপন সিংহ (খ) সত্যজিৎ রায়
(গ) সত্যেন বসু (ঘ) নবেন্দু চট্টোপাধ্যায়
উত্তরঃ (ঘ) নবেন্দু চট্টোপাধ্যায়
রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর | উচ্চমাধ্যমিক বাংলা – বাংলা চলচ্চিত্রের কথা (শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি) প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Question and Answer :
প্রশ্নঃ ১. বাংলা সিনেমায় সত্যজিৎ রায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো। ৫ (২০১৫, ২০২৩)
উত্তরঃ চলচ্চিত্র নিছক বিনোদন নয়, এটা এক সামাজিক বার্তাও বহন করে – সত্যজিং রায় বাংলা সিনেমায় প্রথম এই সত্যটি তুলে ধরেন । এজন্য তিনি শিল্প, সাহিত্য, সংগীত এই চারের মিশেল ঘটান তার সিনেমায় । আর তখন থেকেই বাংলা চলচ্চিত্রে উঠে এল অনেক না বলা কথা, মানুষের জীবনের আঙিনায় পৌঁছে গেল বাংলা সিনেমা । তাই বাংলার মেঠো পথ, নদীর ধারের কাশবন, শরতের আকাশ, গ্রামের সবুজ – শ্যামলের বুক চিরে রেলগাড়ির ছুটে চলা আর অপু – দুর্গার কিশোরসুলভ চাঞ্চল্য জয় করল বিশ্ব – সিনেমামোদী মানুষের মন ।
দেশভাগ যেমন জীবনযন্ত্রণা বাড়িয়েছে তেমনি বাংলা সিনেমার বাজারটাকেও ছোটো করে দিয়েছিল । সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে বাংলা সিনেমার প্রায় মরা গাঙে এসেছিল । বাণিজ্যের জোয়ার । সত্যজিতের ছায়াছবি একের পর এক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার পর দেশে – বিদেশে বাংলা সিনেমার প্রদর্শন বেড়ে যায় । ‘পথের পাঁচালী’ ( ১৯৫৫ ) দিয়ে যে বিজয়রথ ছুটেছিল তা থেমেছিল ‘আগন্তুক’ – এ পৌঁছে । এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সত্যজিৎ রায় বাংলা চলচ্চিত্রে উপহার দিয়েছেন অপরাজিত, পরশপাথর, জলসাঘর, অপুর সংসার, দেবী, তিনকন্যা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, অভিযান, মহানগর, চারুলতা, কাপুরুষ ও মহাপুরুষ, নায়ক, গুপী গাইন বাঘা বাইন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত সোনার কেল্লা, জন অরণ্য, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, গণশত্রু ইত্যাদি কালজয়ী সিনেমা চলচ্চিত্রে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য তিনি ‘অস্কার’ সম্মান পান। ভারত সরকার তাঁকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূ ষিত করে। এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তিনি শতাধিক পুরস্কার ও সম্মানে ভূ যিত হন ।
প্রশ্নঃ ২. বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের কৃতিত্ব আলোচনা করো। ৫ (২০১৯)
উত্তরঃ বাংলা সিনেমার বিকাশের ধারায় মৃনাল সেনের (১৯২৩-২০১৮) অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। ১৯৫৫ সালে ‘রাতভোর’ ছবির মাধ্যমে তাঁর পথচলা শুরু। চলচ্চিত্র পরিচালনা, চিত্রনাট্য রচনা, তথ্যচিত্র নির্মাণ প্রভৃতি অনেক কাজের মধ্য দিয়ে এই কৃতীর কর্মধারা বহমান ছিল।
অবদানঃ প্রথম ছবিতে সাফল্য না পেলেও তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘নীল আকাশের নীচে'(১৯৫৮) তাঁকে আলাদা পরিচয় এনে দিয়েছিল। তারপর একে একে ‘বাইশে শ্রাবণ’ (১৯৬০), ‘ভুবন সোম’ (১৯৬৯), ইন্টারভিউ (১৯৭১), ক্যালকাটা ৭১(১৯৭২), পদাতিক (১৯৭৩), একদিন প্রতিদিন (১৯৭৯), খারিজ (১৯৮২), আকালের সন্ধানে(১৯৮২) প্রভৃতি ছবিগুলি স্বদেশে এবং বিদেশে সমাদৃত হয়েছে।
তাঁর অন্যান্য ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে ‘আকাশ কুসুম, ‘মৃগয়া’, ‘চালচিত্র’, ‘খন্ডহর’, ‘অন্তরীন’ এবং সর্বশেষ ২০০২ সালে ‘আমার ভুবন’। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে তিনি বাংলা ছাড়াও উড়িয়া (মাটির মনিষ) তেলেগু (ওকা উরি কথা) এবং হিন্দি (ভুবনসোম) ভাষাতেও ছবি নির্মান করেছেন।
অনন্যতাঃ মৃণাল সেনের ছবিতে
(১) আমরা সেই ভারতবর্ষের পরিচয় পাই যা বিভূতিভূষণের উপন্যাসে পেয়ে থাকি;
(২) মধ্যবিত্ত মানসিকতার প্রতিফলন খুব বেশি চোখে পড়ে;
(৩) সত্তরের দশকের অস্থির সমাজব্যাবস্থার ছবি দেখতে পাই;
(৪) অসহায়, বঞ্চিত ও শোষিত মানবাত্মার কথা তুলে ধরে;
(৫) একটি নতুন ধারার সন্ধান পাই যা পরবর্তীকালের অনেক চলচিত্র নির্মাতাকে প্রভাবিত করেছে।
সন্মান ও পুরস্কারঃ তাঁর ছবি যেমন অনেক পুরষ্কারে সন্মানিত হয়েছে তেমন তিনিও দেশে বিদেশে অনেক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন যার মধ্যে ১৯৮১ সালে ‘পদ্মভূষণ’, ২০০৫ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার, রাশিয়ার ‘অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ’ ও ফ্রান্সের ‘কমান্ডার অফ দি অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য ।
প্রশ্নঃ ৩. বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তপন সিংহের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা,
বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তপন সিংহের অবদান আলোচনা করো।
উত্তরঃ লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মেলবন্ধন ঘটিয়ে তপন সিংহ বাংলা সিনেমাপ্রেমী মানুষকে একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেন । তিনি নারী পুরুষের প্রেমের গণ্ডি ছাপিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে তুলে এনেছিলেন মানবপ্রেম, বিশ্বপ্রেম। তাঁর সময় থেকেই বাংলা সিনেমা হয়ে উঠল গীতিকবিতার মতো চিত্রধর্মী ও মানবাবেগে পূর্ণ শিল্পকলা। ফলে সিনেমা হলে পাশাপাশি দেখা গেল সব ধরনের মানুষের উপস্থিতি। সাধারণ আর বিশিষ্টের ফারাকটা তিনি ঘুচিয়ে দিলেন। এভাবে সব ছবিতেই তপন সিংহ পাল্টেছেন প্রেক্ষাপট। রবীন্দ্র ভাবধারা গ্রহণ করে তিনি কখনো চার দেওয়ালের মাঝের জীবনকে ছুঁয়েছেন আবার কখনো পাড়ি দিয়েছেন নিসর্গ প্রকৃতির কোলে।
তপন সিংহের সিনেমাগুলির মধ্যে প্রধান হলো অঙ্কুশ, কাবুলিওয়ালা, ক্ষুধিত পাষাণ, হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, নির্জন সৈকতে, জতুগৃহ, হাটেবাজারে, অন্তর্ধান ইত্যাদি। ভালোবাসার কথা শুনিয়েছেন বলে তিনি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভালোবাসা যথেষ্টই পেয়েছেন। এছাড়াও পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক পুরস্কার। বিশ্ব চলচ্চিত্রের দর্শকদের মধ্যে তপন সিংহ বাঙালি দর্শককেই শ্রেষ্ঠ বলেছেন। তাঁর ভাষায়— “সারা পৃথিবীতে দর্শক হিসেবে বাঙালি দর্শকই শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা, ছবির প্রতি ভালোবাসা, নাটকের প্রতি ভালোবাসা আর কোনো দেশের দর্শকের মধ্যে খুঁজে পাবেন কি না সন্দেহ।”
প্রশ্নঃ ৪. বাংলা চলচ্চিত্র ধারায় ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো। ৫ (২০১৭, ২০২২)
উত্তরঃ নিষ্ঠুর সামাজিক সত্যকে চলচ্চিত্রে রূপায়ণের ক্ষেত্রে যার অবদান অনস্বীকার্য তিনি হলেন বাংলার প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। ঋত্বিক ঘটক প্রথমে নাটক লেখা, পরিচালনা ও অভিনয়ের মধ্যে ব্যাপৃত ছিলেন। পরবর্তী কালে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে হাত দেন। নিমাই ঘোষের ‘ছিন্নমূল’ (১৯৫১) সিনেমার মধ্য দিয়ে ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তাঁর পরিচালিত সর্বশ্রেষ্ঠ ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে ‘নাগরিক’ (১৯৫২), ‘অযান্ত্রিক’ (১৯৫৮ ), ‘মেঘে ঢাকা তারা’ (১৯৬০) ; ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১), সুবর্ণরেখা’ (১৯৬২), ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৭৩), ‘যুক্তি তর্ক আর গল্প’ (১৯৭৪) ইত্যাদি। চলচ্চিত্র পরিচালনা ছাড়াও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কাহিনি ও চিত্র নাট্য রচনার ক্ষেত্রেও পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। যেমন- ‘দ্বীপের নাম টিয়া রং’ ‘রাজকন্যা’ ‘মধুমতী’, ‘মুশাফির’ ইত্যাদি। কয়েকটি চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয়ও করেছেন। যেমন- ‘তথাপি’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’।
চলচ্চিত্রের উপর ঋত্বিক ঘটক চিন্তামূলক বেশ কিছু প্রবন্ধ গ্রন্থও লিখেছেন। যেমন- ‘Human Society’, ‘Our tradition’ ‘Film Making and My Afforts’, ‘Film Making’ – ইত্যাদি ।
ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে বাণিজ্যিক কারণের প্রভাব নেই। তার চলচ্চিত্র বুদ্ধিদীপ্ত জীবনরস, সামাজিক নিদারুণ অভিঘাত দেখা গেছে। চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটক চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ‘পদ্মশ্রী’, ‘রজতকমল’ পুরস্কার এবং ১৯৭০ এ ষোড়শ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
প্রশ্নঃ ৫. বাংলা তথ্যচিত্রের ধারাটির পরিচয় দাও।
অথবা,
বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় তথ্যচিত্রের ধারাটির পরিচয় দাও।
উত্তরঃ যে চলচ্চিত্রে কাহিনি থাকে না, তথ্যের সমাহার থাকে, তাকে তথ্যচিত্র বলে। তথ্যচিত্রে অভিনেতা-অভিনেত্রীর কোনো ভূমিকা থাকে না। বিশেষ কোনো ব্যক্তি, ঘটনা, স্থানকে কেন্দ্র করে এ জাতীয় চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। গল্প পরিসর এবং একমুখিনতা তথ্যচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। বাংলা তথা ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের আদি পুরুষ হীরালাল সেনের হাত ধরেই বাংলা তথ্যচিত্র্যের জন্ম হয়। তাঁর ‘দিল্লী দরবার’ তথ্যচিত্রের উদাহরণ। তবে সার্থক তথ্যচিত্র তৈরি হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে।
বাংলা তথ্যচিত্র্যের ধারায় অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব হরিসাধন দাশগুপ্ত। তিনি বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘Konark’, ‘Panchthupi : A Village in West Ben gal’, ‘A Tale of Two Leaves and a Bud’ , ‘Baba’ , ‘Acharya Nan dalal’ ‘Mizoram’ ইত্যাদি। তথ্যচিত্রের ধারায় সত্যজিতের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। তিনি কাহিনিচিত্রের পাশাপাশি তথ্যচিত্র নির্মাণেও বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। তার পাঁচটি তথ্যচিত্রের মধ্যে একমাত্র তথ্যকেন্দ্রিক চিত্র হলো ‘Sikkim’, বাকি চারটি জীবনীমূলক তথ্যচিত্র হলো ‘Rabindranath Tagore The Inner Eye’, ‘Bala’, ‘সুকুমার রায়’। ঋত্বিক ঘটক তথ্যচিত্রের ধারায় আরেক দিকপাল। তাঁর উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘Adivasiyon Ka Jeeban Shrot’ , ‘Bihar Ke Darshaniya Sthan’, ‘Scentists of Tomorrow’, ‘Chhou Dance of Purulia’ ইত্যাদি। একে একে সিনেমা সমালোচক চিদানন্দ দাশগুপ্ত, বারীন সাহা তথ্যচিত্রের ধারাটিকে সমৃদ্ধ করেছেন। বিমল রায় আরেক তথ্যচিত্রকার যাঁর হাতে এই শিল্পধারা বিশেষভাবে পূর্ণতা পেয়েছে। তার স্মরণীয় তথ্যচিত্রগুলি হলো ‘Immortal Stupa’, ‘Life and message of Swami Vivekananda, Gautam The Buddha’ ইত্যাদি। এছাড়া তথ্যচিত্র নির্মাণে যেসব শিল্পীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন পুর্ণেন্দু পত্রী, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ প্রমুখ।
প্রশ্নঃ ৬. বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় পরিচালক তরুণ মজুমদারের অবদান আলোচনা করো। [৫]
উত্তরঃ বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তরুণ মজুমদার (১৯৩১-২০২২) একজন গুণী এবং সফল চলচ্চিত্রনির্মাতা হিসেবেই চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। দীর্ঘ ষাট বছরের কর্মজীবনে তিনি ৩৩টি ছবি পরিচালনা করেছেন, যার মধ্যে বাণিজ্যসফল ছবিও রয়েছে।
কর্মজীবনের শুরুতে তারুণ মজুমদার ‘যাত্রিক’ নামে একটি পরিচালক- গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছাড়াও এই গোষ্ঠীতে ছিলেন শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়। যাত্রিক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থেকে তরুণ মজুমদার মোট তিনটি ছবি পরিচালনা করেন। সেগুলি হল- চাওয়া পাওয়া (১৯৫৯), কাঁচের স্বর্গ (১৯৬২) এবং পলাতক (১৯৬৩)।
১৯৬৫ সালে তিনি এককভাবে দুটি ছবি পরিচালনা করেন। সেগুলি হল- আলোর পিপাসা (১৯৬৫) এবং একটুকু বাসা (১৯৬৫)। ১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বালিকা বধূ’ একটি বাণিজ্যসফল ছবি। তার পরিচালনায় অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল- শ্ৰীমান পৃথ্বীরাজ (১৯৭৩), ফুলেশ্বরী (১৯৭৪), সংসার সীমান্তে (১৯৭৫), গণদেবতা (১৯৭৮), দাদার কীর্তি (১৯৮০), আপন আমার আপন (১৯৯০), আলো (২০০৩) প্রভৃতি।
কৃতিত্বঃ চিত্রনির্মাতা চিত্রনির্মাতা হিসেবে তরুণ মজুমদার ছিলেন মনেপ্রাণে একজন বাঙালি এবং তার ছবিগুলি ছিল বাঙালিয়ানায় ভরপুর। দ্বিতীয়তঃ সাহিত্য থেকে সিনেমায় রূপান্তরে তিনি একজন দক্ষ ছিলেন। বিভিন্ন সাহিত্য অবলম্বন করে তিনি যেসব সিনেমা তৈরি করেন, সেইসব সিনেমাও সাহিত্যের মতোই মনোরম। উদাহরণ হিসেবে ‘গণদেবতা’, ‘আলো’ প্রভৃতি সিনেমার নাম করা যায়। তৃতীয়তঃ তিনি অনেক নতুন শিল্পীকে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন।
পুরস্কার ও সম্মানঃ সারা জীবনে তিনি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন, বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে চারটি জাতীয় পুরস্কার, সাতটি বি.এফ.জে.এ. সম্মান, পাঁচটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এবং একটি আনন্দলোক পুরস্কার। ভারত সরকার থেকে ১৯৯০ সালে তাকে পদ্মশ্ৰী সম্মানে ভূষিত করা হয়।
প্রশ্নঃ ৭. ভারতীয় সিনেমায় হীরালাল সেনের অবদান৷ (৫)
উত্তরঃ হীরালাল সেন (১৮৬৬-১৯১৭) ছিলেন একজন বাঙালি চিত্রগ্রাহক এবং ভারতীয় সিনেমার একজন প্রবাদপুরুষ। ভারতের প্রথম বিজ্ঞাপন-চলচিত্র এবং প্রথম রাজনৈতিক তথ্যচিত্র বানানোর কৃতিত্ব তাঁরই।
অবদানঃ বাংলা সিনেমার নির্বাক যুগে হীরালাল সেন প্ৰায় চল্লিশটির মতো সিনেমা বানিয়েছিলেন। বেশিরভাগ ছবিতেই তিনি ক্যামেরাবদ্ধ করেন অমরেন্দ্রনাথ দত্তের ক্লাসিক থিয়েটারে মঞ্চস্থ বিভিন্ন থিয়েটারের দৃশ্য। বিদেশ থেকে ফিল্ম আনিয়ে তিনি সিনেমা তৈরি করতেন। তাঁর তৈরি স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ‘ভ্রমর’, ‘হরিরাজ’, ‘বুদ্ধদেব’ প্রভৃতি। ১৯০৩ সালে নির্মিত ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’ সিনেমাটি ছিল তাঁর পুর্নদোর্ঘ্যের
সিনেমা।
ব্যাবসায়িক বিজ্ঞাপন জগতেও তিনি প্রবাদপুরুষ ছিলেন। তিনি ‘জবা কুসুম হেয়ারঅয়েল’ এবং এডঅয়ার্ডস টনিকের উপর বিজনাপনী চলচিত্র নির্মান করেন। Demonstration and movement at town hall, Calcutta on তাঁর তৈরি ‘Anti-Partition Swadeshi 22nd September 1905’ তথ্যচিত্রটি ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সিনেমার স্বীকৃতি পায়।
১৯১৩ সালে তিনি রয়্যাল বায়স্কোপ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে তাঁর সমস্ত ছবি ১৯১৭ সালে এক বিরাট অগ্নিকান্ডে নষ্ট হয়ে যায়। তাই মানুষের হাতে পৌঁছায়নি। তবে বাংলা হীরালাল সেনের কোনো চলচ্চিত্রই এযুগের
সিনেমার পথিকৃৎ হিসেবে হীরালাল সেন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রশ্ন: ৮. বাংলা ভাষায় ছোটোদের সিনেমা তৈরির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ চলচ্চিত্র শিল্পে শিশু-কিশোরদের জন্য নির্মিত সিনেমার বিশেষ স্থান রয়েছে। বাংলা ভাষায় ছোটদের জন্য নির্মিত সিনেমার ধারাটি তেমন সমৃদ্ধ নয়। ১৯৪৯ সালে নির্মিত সত্যেন বসুর ‘পরিবর্তন’ ছবিটি এই ধারার প্রথম ছবি। ১৯৫১ সালে অগ্রদূতের পরিচালনায় নির্মিত ‘বাবলা’ ছবিটিও ছোটদের সিনেমা।
এরপর ষাটের দশকে বেশ কয়েকটি ছোটদের ছবি তৈরি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘দেড়শো খোকার কান্ড, ‘মানিক’, ‘বাদশা’, ‘ডাকাতের হাতে’, ‘হীরের প্রজাপতি’ প্রভৃতি। পরিচালক শান্তি চৌধুরী এবং রঘু গোস্বামীর পুতুলের অ্যানিমেশন দিয়ে তৈরি ‘বিরসা এন্ড হিজ ম্যাজিক ডল’ (১৯৫৮) ছবিটিও এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়।
সত্যজিৎ রায়ের হাতে ছোটদের সিনেমা এক বিশেষ মাত্রা পেয়েছিল। তার ‘গুপীগাইন বাঘাবাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘সোনার কেল্লা’ ছবিগুলি আজও শিশু-কিশোরদের মধ্যে সমান জনপ্রিয়।
ঋত্বিক ঘটকের ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, তপন সিংহের ‘সফেদ হাতি’, ও ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ ছবিগুলি বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য ছোটদের ছবি।
প্রশ্ন: ৯. বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম যুগের কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ রুপোলী পর্দায় যাদের মুখাবয়ব, কথাবার্তা কিংবা অঙ্গভঙ্গি ফুটে উঠে, তাদেরকে বলা হয় অভিনেতা। বাংলা সিনেমার প্রথমযুগে যে ক’জন অভিনেতা-অভিনেত্রী সিনেমাকে প্রাণবন্ত করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ছিলেন—
প্রমথেশ বড়ুয়া (১৯০৩-১৯৫১): স্বনামধন্য এই শিল্পী রাজনীতি থেকে সিনেমায় এসেছিলেন। তিনি একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, আলোকশিল্পী এবং প্রযোজক। এই চারটি ক্ষেত্রেই তিনি সফল। তাঁর অভিনীত ছবির মধ্যে রয়েছে- ‘চরিত্রহীন’, ‘অপরাধি’, ‘বেঙ্গল’, ‘গৃহদান’, ‘উত্তরায়ণ’ প্রভৃতি।
উমাশশী (১৯১৫-২০০০): ‘বঙ্গবালা’ নির্বাক ছবির মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন। বাংলা, হিন্দি এবং উর্দু মিলিয়ে মোট ১৫ টি ছবিতে অভিনয় করেন। উল্লেখযোগ্য ছবি হল- ‘বিগ্রহ’, ‘অভিষেক’, ‘চণ্ডীদাস’, ‘দেশের মাটি’ প্রভৃতি। একসময় হঠাৎ অভিনয় জগত থেকে সরে এসেছিলেন এই অভিনেত্রী।
কানন দেবী (১৯১৬- ১৯৯২): ১৯২৬ সালে মাত্র ১০ বছর বয়েসে ‘জয়দেব’ সিনেমার শ্রীরাধার চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘বিদ্যাপতি’, ‘সাথি’, ‘মুক্তি’, ‘জোরবরাত’ ইত্যাদি।
তুলসী চক্রবর্তী (১৮৯৯-১৯৬১): বহু বাংলা সিনেমায় কৌতুক অভিনেতা এবং পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ‘পরশপাথর’, ‘পথের পাঁচালি’, ‘অযান্ত্রিক’ প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা।
ছবি বিশ্বাস (১৯০০- ১৯৬২):১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে অন্নপূর্ণার মন্দির চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে জলসাঘর, দেবী, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাবুলিওয়ালা, প্রতিশ্রুতি, শুভদা, হেডমাস্টার প্রভৃতি। চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি মঞ্চাভিনয়েও যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন।
উপরোক্ত নামগুলি ছাড়াও পাহাড়ি সান্যাল, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
প্রশ্ন: ১০. বাংলা নির্বাক সিনেমার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।
উত্তরঃ ভারতীয় উপমহাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের সূচনা ঘটেছিল এই বাংলাতেই। তবে তখন চলচ্চিত্র বলতে যা বোঝাতো তা নেহাতই চলমান চিত্র বা মুভি, সেগুলিতে শব্দ থাকতো না। এইসব শব্দহীন ছবিগুলিকেই বলা হয় নির্বাক চলচ্চিত্র। বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন দশকে বাংলাতে অনেকগুলি নির্বাক সিনেমা তৈরি হয়েছিল।
বাংলা নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রগুলির বৈশিষ্ট্য ছিল এরকম—
(১) চলচ্চিত্রের কাহিনী হিসাবে পৌরাণিক কাহিনীর প্রাধান্য পেত।
(২) চলচ্চিত্রগুলি সমাজশিক্ষকের ভূমিকা পালন করত সেই জন্য বেশিরভাগ চলচ্চিত্রে নৈতিকতা, মানবিকতা কে গুরুত্ব দেওয়া হতো।
(৩) অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং অন্যান্য কলাকুশলী বেশিরভাগই আসতেন নাট্যজগত থেকে।
(৪) এই সময় থেকেই বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে বাংলা সিনেমার যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছিল। অনেক জনপ্রিয় সাহিত্যকে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া হয়েছিল।
(৫) সমকালীন বাংলা বা ভারতের রাজনীতি নির্বাক চলচ্চিত্রে স্থান পায়নি।
(৬) অন্যান্য দেশের নির্বাক সিনেমার তুলনায় বাংলা নির্বাক সিনেমাগুলি দেশ এবং কালের সীমানা অতিক্রম করতে পারেনি।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলা নির্বাক সিনেমা গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট না হলেও চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই নির্বাক যুগের গুরুত্ব অপরিসীম। চলচ্চিত্রশিল্পের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে বাঙালি দর্শক সিনেমা-শিল্পের সাথে পরিচিত হতে পেরেছে এটাও তো কম পাওনা নয়।
আরও পড়ুনঃ
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪