ধ্বনিতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE HS Bangla Dhonitotto MCQ, SAQ, Essay Type Solved Question Answer

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর

বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন (Essay Type) উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer

বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব থেকে বহুবিকল্পীয়, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | ধ্বনিতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. বাগধ্বনি প্রধানত কয় প্রকার ?
(ক) দুই (খ) তিন (গ) চার (ঘ) পাঁচ

উত্তরঃ (ক) দুই

২. একাধিক দল যুক্ত শব্দের কোনো একটিকে বেশি জোর দিয়ে উচ্চারণ করা হল –
(ক) যতি (খ) শ্বাসাঘাত (গ) সুরতরঙ্গ
(ঘ) দৈর্ঘ্য

উত্তরঃ (খ) শ্বাসাঘাত

৩. মুখের মান্য বাংলার ধ্বনির সংখ্যা– (উ. মা. – ২০২৩)
(ক) ছয় (খ) সাত (গ) আট (ঘ) নয়

উত্তরঃ (খ) সাত

৪. বিভাজ্য ধ্বনির অপর নাম – (উ. মা. – ২০২২)
(ক) যুক্ত ধ্বনি (খ) পার্শ্বিক ধ্বনি
(গ) খন্ড ধ্বনি (ঘ) তাড়িত ধ্বনি

উত্তরঃ (গ) খন্ড ধ্বনি

৫. একটি তাড়িত ধ্বনি হল– (উ. মা.– ২০১৬)
(ক) ঝ্ (খ) ম্ (গ) ঞ্ (ঘ) ড়্

উত্তরঃ (ঘ) ড়্

৬. উষ্ম ধ্বনিটি হল– (উ. মা. – ২০১৫)
(ক) ত্ (খ) শ্ (গ) ম্ (ঘ) ল্

উত্তরঃ (খ) শ্

৭. পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে বলে–
(ক) দ্বিত্ব ধ্বনি (খ) যুক্তধ্বনি (গ) গুচ্ছধ্বনি
(ঘ) জোটধ্বনি

উত্তরঃ (গ) গুচ্ছধ্বনি

৮. খণ্ডধ্বনিকে বলা হয়–
(ক) পদ (খ) দল (গ) বিভাজ্য ধ্বনি
(ঘ) অবিভাজ্য ধ্বনি

উত্তরঃ (গ) বিভাজ্য ধ্বনি

৯. বাংলায় ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা –
(ক) ৩০ টি (খ) ৩২ টি (গ) ৩৪ টি (ঘ) ৩৬ টি

উত্তরঃ (ক) ৩০ টি

১০. ‘ল্’ – ধ্বনিটি –
(ক) পার্শ্বিক ধ্বনি (খ) নাসিক্য ধ্বনি
(গ) কম্পিত ধ্বনি (ঘ) উষ্মধ্বনি

উত্তরঃ (ক) পার্শ্বিক ধ্বনি

১১. প্রদত্ত কোনটি বাগ্ যন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়–
(ক) দন্ত (খ) নাসিকা (গ) কর্ণ (ঘ) কন্ঠ

উত্তরঃ (গ) কর্ণ

১২. ‘Phonology’ বলতে বুঝি –
(ক) ভাষাদর্শন (খ) ভাষা বিনিময়
(গ) ভাষাবিজ্ঞান (ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব

উত্তরঃ (ঘ) ধ্বনিতত্ত্ব

১৩. পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি ব্যঞ্জনার সমাবেশকে বলে –
(ক) দ্বিত্ব ধ্বনি (খ) যুক্তধ্বনি (গ) জোট ধ্বনি
(ঘ) গুচ্ছ ধ্বনি

উত্তরঃ (ঘ) গুচ্ছ ধ্বনি

১৪. নূন্যতম শব্দজোড়ের শব্দ দুটি হওয়া চাই –
(ক) একই ভাষার (খ) একাধিক ভাষার
(গ) দুটি ভাষার (ঘ) মিশ্র ভাষার

উত্তরঃ (ক) একই ভাষার

১৫. শ্,স্, হ্ – বর্ণগুলি –
(ক) উষ্ম ধ্বনি (খ) নাসিক্য ধ্বনি
(গ) কম্পিত ধ্বনি (ঘ) তাড়িত ধ্বনি

উত্তরঃ (ক) উষ্ম ধ্বনি

১৬. ঙ্, ঞ্, ন্, ঙ্, ম্ – বর্ণগুলি –
(ক) উষ্ম ধ্বনি (খ) নাসিক্য ধ্বনি
(গ) কম্পিত ধ্বনি (ঘ) তাড়িত ধ্বনি

উত্তরঃ (খ) নাসিক্য ধ্বনি

১৭. বিভাজ্য ধ্বনিকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায় ?
(ক) দুটি (খ) তিনটি (গ) চারটি (ঘ) পাঁচটি

উত্তরঃ (ক) দুটি

১৮. দৈর্ঘ্য, শ্বাসাঘাত, সুরতরঙ্গ, যতি হলো–
(ক) বিভাজ্য ধ্বনি (খ) অবিভাজ্য ধ্বনি
(গ) বাগ্ ধ্বনি (ঘ) সহধ্বনি

উত্তরঃ (খ) অবিভাজ্য ধ্বনি

১৯. বাংলা উচ্চারণে অর্ধস্বরের সংখ্যা –
(ক) তিনটি (খ) চারটি (গ) পাঁচটি
(ঘ) ছটি

উত্তরঃ (খ) চারটি

২০. ‘র্’ – ধ্বনিটি হলো–
(ক) কম্পিত (খ) পার্শ্বিক (গ) তাড়িত
(ঘ) নাসিক্য

উত্তরঃ (ক) কম্পিত

২১. ড়্, ঢ়্ – ধ্বনিটি –
(ক) কম্পিত (খ) পার্শ্বিক (গ) তাড়িত
(ঘ) নাসিক্য

উত্তরঃ (গ) তাড়িত

২২. দুটি ভিন্ন শব্দের মধ্যে নূন্যতম উচ্চারণ পার্থক্য থাকলে তাকে বলে –
(ক) মুক্তবৈচিত্র্য (খ) পরিপূরক অবস্থান
(গ) ন্যূনতম শব্দজোড় (ঘ) ধ্বনির সমাবেশ

উত্তরঃ (গ) ন্যূনতম শব্দজোড়

২৩. একদলের অন্তর্গত ব্যঞ্জন সমাবেশকে বলে–
(ক) যুগ্মধ্বনি (খ) গুচ্ছধ্বনি (গ) যুক্তধ্বনি
(ঘ) দ্বিস্বরধ্বনি

উত্তরঃ (গ) যুক্তধ্বনি

২৪. বাংলায় দুটি ব্যঞ্জনের সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা কমপক্ষে–
(ক) ১০০ (খ) ২০০ (গ) ২৮ (ঘ) ১৮

উত্তরঃ (খ) ২০০

২৫. শব্দের শুরুতে বা শেষে থাকে যে ব্যঞ্জন-সমাবেশ, তা–
(ক) যুগ্মধ্বনি (খ) গুচ্ছধ্বনি (গ) যুক্তধ্বনি
(ঘ) সহধ্বনি

উত্তরঃ (গ) যুক্তধ্বনি

২৬. কন্ঠনালীয় বর্ণটি হল –
(ক) শ্ (খ) হ্ (গ) র্ (ঘ) ক্

উত্তরঃ (খ) হ্

২৭. তিনটি ব্যঞ্জন-এর গুচ্ছধ্বনি বাংলায় –
(ক) পাঁচটি (খ) ছটি (গ) সাতটি (ঘ) আটটি

উত্তরঃ (ঘ) আটটি

২৮. চারটি ব্যঞ্জন-এর গুচ্ছধ্বনি বাংলায় –
(ক) তিনটি (খ) একটি (গ) পাঁচটি
(ঘ) আটটি

উত্তরঃ (খ) একটি

২৯. তিনটি ব্যঞ্জন-এর যুক্তধ্বনি সংখ্যা –
(ক) একটি (খ) দুটি (গ) তিনটি (ঘ) আটটি

উত্তরঃ (খ) দুটি

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর (SAQ) | ধ্বনিতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. খন্ড ধ্বনির অপর নাম কী ? (উ. মা. – ১৭)

উত্তরঃ খন্ড ধ্বনির অপর নাম হল বিভাজ্য ধ্বনি।

২. মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ স্বতন্ত্র উচ্চারণযুক্ত ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য স্বরধ্বনিকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে।

উদাহরণ– বাংলায় স্বরবর্ণের সংখ্যা ১১ টি হলেও স্বরধ্বনির সংখ্যা ৭ টি। এই ৭ টি স্বরধ্বনিই হলো মৌলিক স্বরধ্বনি। যথা – অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।

৩. বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি গুলি কটি ও কী কী ?

উত্তরঃ মুখের মান্য বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনি ৭টি। যদিও বর্ণমালায় ১১ টি স্বরবর্ণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

মৌলিক স্বরধ্বনি গুলো হল – অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।

৪. ন্যূনতম শব্দজোড় বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ দুটি ভিন্ন শব্দের মধ্যে উচ্চারণগত নূন্যতম (একটি মাত্র) পার্থক্য থাকলে, সেই শব্দজোড়কে বলা হয় ন্যূনতম শব্দজোড়। যেমন– ‘কাল’, ‘খাল’ শব্দে অন্য সব ধ্বনি এক হলেও কেবল ‘ক্’, ‘খ্’ ধ্বনির জন্য শব্দের অর্থ আলাদা হয়ে যায়। এই দুটি তাই নূন্যতম শব্দজোড়।

৫. গুচ্ছ ধ্বনি কাকে বলে ? (উ. মা. – ২০)

উত্তরঃ পাশাপাশি উচ্চারিত দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে গুচ্ছ ধ্বনি বলে। গুচ্ছ ধ্বনির মাঝখানে কোন স্বরধ্বনি থাকে না। যেমন – উত্তর শব্দে ‘ত্ত’ (ত্ + ত্) হল গুচ্ছ ধ্বনি।

৬. সুরতরঙ্গ কাকে বলে ?

উত্তরঃ বাক্যের মধ্যে বিভিন্ন শব্দে সুরাঘাতের হ্রাস-বৃদ্ধি অর্থাৎ সুরের তীব্রতার ওঠা-নামার দ্বারা যখন সমগ্র বাক্যের অর্থ নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন সেই সুরের ওঠানামা কে সুরতরঙ্গ বা স্বরতরঙ্গ বলে।

৭. তাড়িত ধ্বনি কাকে বলে?

উত্তরঃ ‘ড়্’, ‘ঢ়্’ উচ্চারণের সময় জিহ্বা দন্তমূলে এমনভাবে আঘাত করে যেন মনে হয় দাঁত তেড়ে আনছে তাই এই দুই ধ্বনিকে তাড়িত ধ্বনি বলে।

৮. পার্শ্বিক ধ্বনি কাকে বলে ?

উত্তরঃ ‘ল্’ – ধ্বনিটি উচ্চারণ কালে জিহ্বার দুই পাশ দিয়ে শ্বাসবায়ু নির্গত হয় বলে, একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে।

৯. মুখের মান্য বাংলায় ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা কত ? (উ. মা. – ১৮)

উত্তরঃ মুখের মান্য বাংলায় ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা হল ৩০ টি।

১০. ধ্বনি মূলের অবস্থান বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ একটি ধ্বনিমূল যে যে অবস্থানে উচ্চারিত হয়, তাকেই বলা হয় ধ্বনিমূলের অবস্থান।

উদা– ‘ই’ ধ্বনিমূল শব্দের আদি, মধ্য, ও অন্ত্য (ইলিশ, কোকিল, বই) অবস্থানে উচ্চারিত হয় বলে এই তিনটি হলো ‘ই’ ধ্বনিমূলের অবস্থান।

১১. যুক্ত ধ্বনি কাকে বলে ? (উ. মা. – ১৫)

উত্তরঃ শব্দের আদ্য অবস্থানে বা দলের আদিতে উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশকে যুক্তধ্বনি বলে।

যথা– দুই ব্যঞ্জনের সমাবেশে তৈরি যুক্ত ধ্বনি– তৃণ, প্রাণ, ধ্রুব ইত্যাদি। তিন ব্যঞ্জনের সমাবেশে তৈরি যুক্ত ধ্বনি– স্ত্রী, স্পৃহা।

১২. অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে? (উ. মা. – ১৮, ২২)

উত্তরঃ ভাষার যেসব উপাদান একাধিক ধ্বনিখণ্ড জুড়ে তৈরি হলেও সেই ধ্বনিখণ্ডগুলিকে কোনভাবেই খন্ডিত করা যায় না, তাদের অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে।

উদা– শ্বাসাঘাত, যতি, দৈর্ঘ্য, সুরতরঙ্গ।

১৩. ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ ধ্বনি কথ্যভাষার একক বলে তা শ্রুতিগ্রাহ্য, আর বর্ণ লেখ্য ভাষার একক বলে দৃষ্টি গ্রাহ্য।

১৪। স্বনিম কাকে বলে ?

উত্তরঃ কোন ভাষার প্রতিটি ধ্বনিকেই বলা হয় স্বনিম বা ধ্বনিমূল।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (MCQ) | ধ্বনিতত্ত্ব – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ব্যাকরণ প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. দু’টি করে উদাহরণ সহ গুচ্ছধ্বনি (২০১৬) এবং যুক্তধ্বনির পরিচয় দাও। (২০১৯)

উত্তরঃ ধ্বনিতত্ত্বের অন্যতম কাজ হল ধ্বনিমূলের অবস্থান এবং ধ্বনির সমাবেশ নিয়ে আলোচনা করা। ধ্বনি সমাবেশের অন্তর্গত দুটি বিষয় হল– গুছধ্বনি এবং যুক্তধ্বনি।

গুচ্ছধ্বনিঃ পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ব্যাঞ্জনধ্বনি যে যুগ্মধ্বনি তৈরি করে তাকে গুচ্ছধ্বনি বলে। অর্থাৎ, যে দুটি ব্যাঞ্জনধ্বনির মাঝখানে কোন স্বরধ্বনি নেই সেই ব্যঞ্জন দুটির যুগ্মধনিকে গুচ্ছধ্বনি বলে।

গুচ্ছধ্বনির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল এতে দলসীমা বর্তমান থাকে অর্থাৎ গুচ্ছধ্বনির অন্তর্গত ধ্বনিগুলি পৃথক দল।

বাংলায় দুটি ব্যঞ্জন ধ্বনিতে তৈরি ধ্বনিগুচ্ছের সংখ্যা-২০০, তিনটি ব্যাঞ্জনধ্বনি দিয়ে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা-৪ এবং চারটি ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা-১ টি।

ধ্বনিগুচ্ছের উদাহরণ—

» অজন্তা = অ+জ+অ+ন+ত+আ (এখানে ‘ন্ত’ হল গুচ্ছধ্বনি)

» শ্রদ্ধা = শৃ+র্+অ+দ্+ধ+আ (এখানে ‘দ্ধ’ হল গুচ্ছধ্বনি)

যুক্তধ্বনিঃ যে ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশগুলি
শব্দের আদিতে উচ্চারিত হতে পারে সেগুলিকে যুক্তধ্বনি বলে। এখানে দলসীমা থাকে না।

দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে যুক্তধ্বনি তৈরি হলে প্রথম ব্যঞ্জনধ্বনিটি [স] অথবা দ্বিতীয় ব্যঞ্জনটি [র] বা [ল] হবে। বাংলায় এই রকম ২৪ টি যুক্তধ্বনি রয়েছে। এছাড়া ইংরাজি থেকে আমদানি করা ১৪ টি যুক্তধ্বনি রয়েছে। তিনটি ব্যঞ্জনধ্বনি দিয়ে তৈরি যুক্ত ধ্বনির সংখ্যা- ২টি।

যুক্তধ্বনির উদাহরণ—

» স্নান = স্+ন্‌+আ+ন্ (এখানে ‘স্ন’ হল যুক্ত
ধ্বনি)

» ম্লান = ম্‌+ল+আ+ন্‌ (এখানে ‘ল’ হল যুক্তধ্বনি)।

২. বাংলা অবিভাজ্য ধ্বনি সম্পর্কে আলোচনা করো। ৫ (২০১৮)

উত্তরঃ মানুষ কথা বলার সময় ধ্বনির পর ধ্বনি জুড়ে বাক্য তৈরি করে। এই ধ্বনিসত্তার স্বরূপ বিচার করে ধ্বনিকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়- (১) বিভাজ্য ধ্বনি আর (২) অবিভাজ্য ধ্বনি। বিভাজ্য ধ্বনি বলা সেই সব ধ্বনিগত উপাদানগুলিকে যেগুলি পৃথক পৃথক এককে ভাগ করা সম্ভব। আর যেসব ধ্বনিগত উপাদানকে কোনোভাবেই খণ্ড খণ্ড করে প্রকাশ করা যায় না সেগুলিকে অবিভাজ্য ধ্বনি বলে। যেমন- ‘রাম আসবে ?’ এই বাক্যটির বিভাজ্য ধ্বনিগুলি হল- র্+আ+ ম্+ আ+ + + এ। আর এই বাক্যে অবিভাজ্য ধ্বনি যেগুলি মিশে রয়েছে সেগুলি একমাত্র মুখের কথায় পাওয়া সম্ভব। বাংলা ভাষার কয়েকটি অবিভাজ্য ধ্বনি হল-

(i) শ্বাসাঘাত- উচ্চারনের সময় কোনো একটি বিশেষ ধ্বনি বা অক্ষরের উপর জোর দেওয়াকে বলে শ্বাসাঘাত। সাধারণত বহুদল শব্দের প্রথম দলে শ্বাসাঘাত পড়ে। যেমন, ‘বিদ্যাসাগর’ শব্দের ‘বিদ্’ দলটিতে শ্বাসাঘাত পড়েছে।

(ii) দৈর্ঘ্য- কোনো দল উচ্চারণের সময় স্বরধ্বনির দীর্ঘতাকেই বলে দৈর্ঘ্য। গবেষণায় প্রমানিত যে, একদল শব্দের দৈর্ঘ্য তুলনামুলকভাবে বেশি। ‘জাম’ আর ‘জামা’ শব্দদুটির মধ্যে ‘জাম’ শব্দে ‘আ’ স্বরধ্বনিটির দৈর্ঘ্য বেশি।

(iii) যতি- দল বা শব্দের সীমায় অপেক্ষাকৃত লম্বা ছেদকে যতি বলে। যতি বাক্যের অর্থ পরিস্ফুটনে সহায়তা করে।

(iv) সুরতরঙ্গ- বাক্যে সুরের ওঠানামাকে

সুরতরঙ্গ বলে। এই সুরতরঙ্গের ফলেই বক্তার মনের বিশেষ ভাব অর্থাৎ বাক্যটি উক্তি, জিজ্ঞাসা নাকি বিস্ময় ইত্যাদি প্রকাশ পায়। যেমন, ‘রাম আসবে?’ এই প্রশ্নবোধক বাক্যে সুর ক্রমশ উর্ধমুখী হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, অবিভাজ্য ধ্বনিগুলি মুখের ভাষার অপরিহার্য অংশ। তবে এগুলির উপস্থিতিতে অর্থের পরিবর্তন হয় না বলে এগুলি বাংলাভাষায় ধ্বনিমূলের ভুমিকা পালন করে না।

৩. কোনো ধ্বনি ধ্বনিমূল না সহধ্বনি কীভাবে সনাক্ত করবে ?

উত্তরঃ ধ্বনিতত্ত্বের প্রধান কাজ হল কোনো ভাষায় ধ্বনিমূল ও সহধনিগুলিকে সনাক্ত করা। একটি ধ্বনি ধ্বনিমূল নাকি সহধ্বনি তা নির্ণয় করার বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে; বেশ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ধ্বনিমূল ও সহধ্বনি সনাক্ত করা সম্ভব।

প্রথমতঃ একটি ভাষার অভিধানে আছে এমন বেশ কিছু ন্যূনতম শব্দজোড় নির্বাচন করতে হয়। ন্যূনতম শব্দজোড় হল উচ্চারণে মিল আছে কিন্তু সামান্য পার্থক্য আছে এমন এক জোড়া শব্দ। যেমন- নরম-গরম, জাল-কাল ইত্যাদি। নুন্যতম শব্দজোড়ের যে ধ্বনিটির জন্য দুটি শব্দের অর্থপার্থক্য হয় সেটিকে পৃথক ধ্বনিমূল বলা যেতে পারে। সুতরাং উপরের নুন্যতম শব্দজোড়দুটি থেকে বলা যেতে পারে বাংলা ভাষায় /ন/, /গ/, /জ/, /ক/ এগুলি এক একটি ধ্বনিমূল।

দ্বিতীয়তঃ অনেক সময় দেখা যায় একটি ধ্বনির একাধিক উচ্চারণবৈচিত্র্য রয়েছে। যেমন- বাংলা /ল/ ধ্বনিমূলটির তিন রকমের উচ্চারণবৈচিত্র্য রয়েছে যেগুলি পাওয়া যায় যথাক্রমে –‘লঙ্কা’, ‘উল্টো’ এবং ‘আলতা’ শব্দ উচ্চারণ করে। এই তিনটি /ল/ একে অপরের জায়গায় উচ্চারিত হতে পারে না। কোন ধ্বনির নির্দিষ্ট প্রতিবেশে এই উচ্চারণকে পরিপুরক অবস্থান বলে। যে দুটি ধ্বনির মধ্যে পরিপুরক অবস্থান থাকে সেগুলিকে একই ধ্বনির সহধ্বনি বলা হয়।

তৃতীয়তঃ উচ্চারণ বিকৃতির জন্য একই ধ্বনি দু’রকম উচ্চারিত হতে পারে। যেমন-‘গাঢ়’ এই শব্দটি বেশিরভাগ মানুষ উচ্চারণ করে ‘গাড়’। কিন্তু ‘গাঢ়’ আর ‘গাড়’ এই দুটি ন্যূনতম শব্দজোড় নয়। এইরূপ শব্দজোড়ে প্রাপ্ত ধ্বনিগুলিকে ধ্বনিতত্ত্বের আলোচনায় মুক্তবৈচিত্র্য বলা হয়। এই মুক্তবৈচিত্র্যের ধ্বনিগুলিও সহধ্বনি রূপে বিবেচিত হয়।

৪. ধ্বনিমূল ও সহধ্বনির পার্থক্য লেখো ।

উত্তরঃ ধ্বনিতত্ত্বের মূল আলোচ্য বিষয় হল- বাকধ্বনি অর্থাৎ মানুষ কথা বলার জন্য যে ধ্বনি উচ্চারন করে। ধ্বনিতাত্ত্বিকেরা সেগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন- ধ্বনিমূল এবং সহধ্বনি।

ধ্বনিমূল এবং সহধ্বনির সম্পর্ক নিম্নরূপ–

প্রথমতঃ বাংলায় উচ্চারিত ৩০টি ব্যাঞ্জনধ্বনি এবং ৭টি স্বরধ্বনি সব একেকটি ধ্বনিমূল। আর, কোনো কোনো ধ্বনির যে উচ্চারন-বৈচিত্র্য রয়েছে, সেগুলি হল সহধ্বনি। ধ্বনিমূল এবং সহধবনি মিলে একেকটি পরিবার। ধ্বনিমূল সেই ধ্বনি-পরিবারের প্রধান। কোনো ধ্বনি-পরিবারের সদস্য অর্থাৎ সহধ্বনির সংখ্যা বেশি এবং কোন পরিবারের সদস্য সংখ্যা কম।

দ্বিতীয়তঃ ধ্বনিমূল একটি কল্পনামাত্র, সহধ্বনির সাহায্যে আমরা ধ্বনিমুলে পৌঁছানর চেষ্টা করি। সেই অর্থে সহধ্বনি হল ধনিমুলের ব্যাবহারিক রূপ।

তৃতীয়তঃ ধ্বনিমূলের পার্থক্যের জন্য শব্দের অর্থপার্থক্য হয় কিন্তু সহধ্বনি পালটে দিলে শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয় না। যেমন- ‘জাম’ শব্দটিকে যদি ‘নাম’ উচ্চারণ করি অর্থাৎ /জ/ পরিবর্তে /ন/ লেখি বা উচ্চারণ করি তাহলে অর্থ পুরোপুরি পাল্টে যাচ্ছে।

৫. উদাহরণসহ ধ্বনিমূল এবং সহ ধ্বনির সম্পর্ক বুঝিয়ে দাও। (২০২০, ২০২৩)

উত্তরঃ ধ্বনিমূল এবং সহধ্বনির সম্পর্ক একটি পরিবার আর তার সদস্যদের মতাে। ধ্বনিমূল হচ্ছে ধ্বনির কাল্পনিক চেহারা, আর সহধ্বনি তার বাস্তব প্রকাশ। যেমন ধরা যাক ‘প’ একটি ধ্বনিমূল। এই ‘প’ ধ্বনিকে দুটি আলাদা শব্দে ব্যবহার করা হল—পা,গাে, আর আলাপ,। লক্ষ করলে দেখা যাবে, ‘পাগল’ এর [প] উচ্চারণের সময়ে মুখবিবর এবং ওষ্ঠ যতটা ফাক হচ্ছে। আলাপ’ উচ্চারণের সময় [পে] ধ্বনি উচ্চারণ করতে গিয়ে তা হচ্ছে না। বরং মুখবিবর সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জিহ্বার প্রসারিত অবস্থানও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিবেশ অনুসারে একটি মূলধ্বনি এই যে আলাদা আলাদা ভাবে উচ্চারিত হল এরা প্রত্যেকেই এক-একটি সহ ধ্বনি। অর্থাৎ সহধ্বনি হল উচ্চারণভেদনির্ভর। প্রতিটি উচ্চারণভেদই তৈরি হয় প্রতিবেশ অর্থাৎ কোন্ অবস্থানে ধ্বনিটি আছে তার উপরে নির্ভর করে।

বাংলায় যে সাতটি মৌলিক স্বরধ্বনি এবং ৩০টি ব্যঞ্জনধ্বনি আছে তারা সকলেই এক-একটি ধ্বনিমূল। ধ্বনিমূল এবং সহ ধ্বনির সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য হল—তাদের উচ্চারণ মূলগতভাবে এক হবে। দ্বিতীয়ত, ধ্বনিমূল ভাষায় অর্থের তফাত করতে সমর্থ, কিন্তু সহধ্বনির পক্ষে সে কাজ করা সম্ভব নয়। আসলে ধ্বনিমূল একটি কল্পনা, যার বাস্তব উপলব্ধি হল সহধ্বনি।

আরও পড়ুনঃ

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪

Leave a Reply