অলৌকিক (ভারতীয় গল্প) – কর্তার সিং দুগ্‌গাল – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE HS Bengali Aloukik MCQ, SAQ, Essay Type Solved Question Answer

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর

অলৌকিক (ভারতীয় গল্প) – কর্তার সিং দুগ্‌গাল – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন (Essay Type) উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer

কর্তার সিং দুগ্‌গাল রচিত অলৌকিক ভারতীয় গল্প থেকে বহুবিকল্পীয়, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

অলৌকিক (ভারতীয় গল্প) – কর্তার সিং দুগ্‌গাল – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | অলৌকিক (ভারতীয় গল্প) – কর্তার সিং দুগ্‌গাল – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. গুরু নানক ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছেছিল—
(ক) হাসান আবদালের জঙ্গলে
(খ) মন্দিরে (গ) বামন পাহাড়ে
(ঘ) আরব সাগরের তীরে

উত্তরঃ (ক) হাসান আবদালের জঙ্গলে

২. গুরু নানকের শিষ্যের নাম ছিল—
(ক) গোবিন্দ সিংহ (খ) বাহাদুর (গ) মর্দানা (ঘ) রামদাস

উত্তরঃ (গ) মর্দানা

৩. বলী কান্ধারী ছিলেন একজন—
(ক) তান্ত্রিক (খ) সুফি সাধক (গ) ভক্তিবাদী (ঘ) দরবেশ

উত্তরঃ (ঘ) দরবেশ

৪. বলী কান্ধারীর জলের উৎস ছিল—
(ক) কুঁয়ো (খ) সমুদ্র (গ) ঝর্না (ঘ) সরোবর

উত্তরঃ (ক) কুঁয়ো

৫. নানক সম্পর্কে নিচের কোন বিশেষণটি গল্পে পাওয়া যায় ?
(ক) সাধু (খ) মহাত্যাগী (গ) ফকির
(ঘ) পীর

উত্তরঃ (ঘ) পীর

৬. বলী কান্ধারী নানককে বলেছিলেন— (ক) নিষ্টুর (খ) ভগবান (গ) কাফের
(ঘ) সদগুরু

উত্তরঃ (গ) কাফের

৭. গুরু নানক ঈশ্বরকে সম্বোধন করেছিলেন—
(ক) ‘জয় নিরঙ্কার’ বলে
(খ) ‘জয়সত্যসাই’ বলে
(গ) ‘জয়ভবানীশংকর’ বলে
(ঘ) ‘জয় শ্রীভগবান’ বলে

উত্তরঃ জয় নিরঙ্কার বলে

৮. পাথর সরানোর পরে মর্দানা কী দেখতে পেয়েছিলেন ?
(ক) জলের ঝরনা (খ) গুপ্তধন
(গ) বিষধর সাপ (ঘ) গুহামুখ

উত্তরঃ (ক) জলের ঝরনা

৯. নানককে অনুচরসহ বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল—
(ক) নদীর ধারে (খ) বাবলাতলায়
(গ) পাথরের উপরে (ঘ) কুঠির প্রাঙ্গণে

উত্তরঃ (খ) বাবলাতলায়।

১০. হাসান আবদালের বর্তমান নাম—
(ক) অমৃতসর (খ) চণ্ডীগড় (গ) গ্রন্থসাহেব
(ঘ) পাঞ্জাসাহেব

উত্তরঃ (ঘ) পাঞ্জাসাহেব

১১. নানকের গল্প নিয়ে গল্পের কথক কার সঙ্গে তর্ক করেছিলেন ?
(ক) মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে (খ) মা এর সঙ্গে
(গ) বন্ধুর সঙ্গে (ঘ) গুরু নানকের সঙ্গে

উত্তরঃ (ক) মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে

১২. ‘সাকা’ হলেই অনিবার্য ছিল—
(ক) সত্যাগ্রহ (খ) উপবাস (গ) অরন্ধন
(ঘ) প্রার্থনা

উত্তরঃ (গ) অরন্ধন

১৩. নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর গুলি চালিয়েছিল কারা ?
(ক) পুলিশরা (খ) ডাকাতরা (গ) ফিরিঙ্গীরা
(ঘ) স্বদেশীরা

উত্তরঃ (গ) ফিরিঙ্গীরা

১৪. পাঞ্জা সাহেবে ট্রেন থামানোর জন্য কার কাছে আবেদন জানানো হয় ?
(ক) ট্রেনের চালকের কাছে
(খ) স্টেশন মাস্টারের কাছে
(গ) সরকারের কাছে
(ঘ) স্থানীয় প্রশাসনের কাছে

উত্তরঃ (খ) স্টেশন মাস্টারের কাছে

১৫. পাঞ্জা সাহেবের ট্রেনের গল্প কথককে শুনিয়েছিলেন তাঁর—
(ক) মা (খ) মা-এর বান্ধবী (গ) মাষ্টারমশাই
(ঘ) বন্ধু

উত্তরঃ (খ) মা–এর বান্ধবী

১৬. বলী কান্ধারী মর্দানাকে কতবার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ?
(ক) চারবার (খ) দুবার (গ) একবার
(ঘ) তিনবার

উত্তরঃ (ঘ) তিনবার

১৭. ‘কিন্তু তার কাকুতি-মিনতি শুনে গুরু নানক দুশ্চিন্তায় পড়লেন।’— তার দুশ্চিন্তার কারণ …?
(ক) মর্দানার অসুস্থতা
(খ) মর্দানার খিদে পাওয়া
(গ) মর্দানার জলতেষ্টা
(ঘ) মর্দানার বাড়ি ফেরার ইচ্ছা

উত্তরঃ মর্দানার জলতেষ্টা

১৮. বলী কান্ধারী থাকতেন—
(ক) গুহার ভিতরে (খ) সমতলে
(গ) পাহাড়চূড়ায় (ঘ) বনের মধ্যে

উত্তরঃ (গ) পাহাড়চূড়ায়

১৯. নানক শিষ্য মর্দানাকে জলের জন্য কোথায় যেতে বলেছিলেন ?
(ক) সমুদ্রধারে (খ) পাহাড় চূড়ায়
(গ) নদীর ধারে (ঘ) সমতলে

উত্তরঃ (খ) পাহাড় চূড়ায়

২০. ‘আমি পীর নানকের সঙ্গী।’— বক্তা কে ?
(ক) বলী কান্ধারী (খ) মর্দানা (গ) লেখক (ঘ) লেখকের মাষ্টারমশাই

উত্তরঃ (খ) মর্দানা

২১. ‘উনি রীতিমতো হতভম্ভ।’— উনি কে ? (ক) নানক (খ) মর্দানা (গ) বলী কান্ধারী
(ঘ) লেখকের মা

উত্তরঃ (গ) বলী কান্ধারী।

২২. ‘অলৌকিক’ গল্পের রচয়িতা –
(ক) কর্তার সিং দুগ্‌গাল
(খ) অমৃত প্রীতম
(গ) আইয়াপ্পা পানিক্কর
(ঘ) বিজয় তেন্ডুলকার

উত্তরঃ (ক) কর্তার সিং দুগ্‌গাল

২৩. ‘অলৌকিক’ গল্পটির বাংলা অনুবাদক হলেন–
(ক) নবারুণ ভট্টাচার্য
(খ) দিব্যেন্দু পালিত
(গ) রমাপদ চৌধুরী
(ঘ) অনিন্দ্য সৌরভ

উত্তরঃ (ঘ) অনিন্দ্য সৌরভ

২৪. ‘অলৌকিক’ গল্পটি অনিন্দ সৌরভ– এর কোন্ গল্পসংকলনের অন্তর্গত ?
(ক) ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’
(খ) ‘অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প’
(গ) ‘জ্যোৎস্নারাতের ট্র্যাজেডি’
(ঘ) ‘মৌরীফুল গল্পসংকলন’

উত্তরঃ (গ) ‘জ্যোৎস্নারাতের ট্র্যাজেডি’

২৫. কর্তার সিং দুগ্‌গাল মূলত কোন্ ভাষায় সাহিত্যরচনা করেছেন ?
(ক) মালয়ালম্
(খ) গুজরাটি
(গ) মারাঠি
(ঘ) পাঞ্জাবি

উত্তরঃ (ঘ) পাঞ্জাবি

২৬. ‘অলৌকিক’ গল্পে গুরু নানককে বলা হয়েছে—
(ক) স্বামীজি (খ) সদগুরু (গ) মহাপ্রভু
(ঘ) ঋষি

উত্তরঃ (খ) সদগুরু

২৭. ধ্যান ভেঙে নানক চোখ খুলে দেখেন –
(ক) বলী কান্ধারীর কুটির
(খ) মদানা অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে
(গ) রোদে গরমে চারপাশ শুনশান
(ঘ) মর্দানা তেষ্টায় জল ছাড়া মাছের মতো ছটফট করছে

উত্তরঃ (ঘ) মর্দানা তেষ্টায় জল ছাড়া মাছের মতো ছটফট করছে

২৮. বলী কান্ধারী ছিলেন একজন–
(ক) ধনী ব্যক্তি (খ) গৃহী ব্যক্তি (গ) দরবেশ
(ঘ) ভীরু ব্যক্তি

উত্তরঃ (গ) দরবেশ

২৯. বলী কান্ধারী নানকের শিষ্যকে এক গণ্ডুষও জল দিতে চাননি, কারণ তাঁর মতে নানক ছিলেন–
(ক) পীর (খ) ফকির (গ) কাফের
(ঘ) দরবেশ

উত্তরঃ (গ) কাফের

৩০. গুরু নানক অনুচরসহ বসেছিলেন—
(ক) তমালতলায় (খ) বাবলাতলায়
(গ) পলাশতলায় (ঘ) বটতলায়

উত্তরঃ (খ) বাবলাতলায়

৩১. ‘নিমেষেই চারিদিকে থৈ থৈ।’– কারণ—
(ক) মুষলধারে বৃষ্টি
(খ) পাথরের নীচ থেকে বেরিয়ে আসা জলের ঝরনা
(গ) নদীর প্লাবন
(ঘ) বলী কান্ধারীর দয়া

উত্তরঃ (খ) পাথরের নীচ থেকে বেরিয়ে আসা জলের ঝরনা

৩২. ‘গল্পটা শুনতে বেশ ভালো লাগছিল।’- গল্পটা হল–
(ক) বলী কান্ধারীর গল্প
(খ) শিষ্য মর্দনার জলদানের গল্প
(গ) শিষ্য মর্দানার পাথর ভাঙার গল্প
(ঘ) গুরু নানকের ধ্যানের গল্প

উত্তরঃ (ক) বলী কান্ধারীর গল্প

৩৩. ‘ব্যাপারটা মেজাজ বিগড়ে দিল।’- কোন ব্যাপারটা ?
(ক) মর্দানার জল না পাওয়ার ঘটনাটা
(খ) বলীর পাথরের চাঙড় গড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা
(গ) নানকের হাত দিয়ে পাথরের চাঙড় থামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা
(ঘ) পাথরের নীচ থেকে জলের ঝরনা বেরিয়ে আসার ব্যাপারটা

উত্তরঃ (গ) নানকের হাত দিয়ে পাথরের চাঙড় থামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা

৩৪. ‘এ কি আদৌ সম্ভব ?’ — কথক অসম্ভব বলে মনে করেছেন–
(ক) পাথরের তলা থেকে জলের ঝরনা বেরিয়ে আসাকে
(খ) হাত দিয়ে পাথরের চাঙড় থামানোকে
(গ) বলী কাম্বারীর অন্যায় আচরণকে
(ঘ) কুয়ো জলশূন্য হয়ে যাওয়াকে

উত্তরঃ (খ) হাত দিয়ে পাথরের চাঙড় থামানোকে

৩৫. নানকের গল্পটি লেখক মায়ের কাছ থেকে শোনার পরে আবারও শুনেছিলেন–
(ক) গুরুদ্বারে ও স্কুলে
(খ) গুরুদ্বারে ও কলেজে
(গ) স্কুলে ও কলেজে
(ঘ) মায়ের বান্ধবীর কাছে আর স্কুলে

উত্তরঃ (ক) গুরুদ্বারে ও স্কুলে

৩৬. ‘গল্পটা মনে পড়লেই হাসি পেত।’- কোন্ গল্পটা ?
(ক) পাঞ্জাসাহেবে সাকা হওয়ার গল্প
(খ) ট্রেন থামানোর গল্প
(গ) গুরু নানকের হাত দিয়ে পাথর থামানোর গল্প
(ঘ) মুশলধারে বৃষ্টি পড়ার গল্প

উত্তরঃ (গ) গুরু নানকের হাত দিয়ে পাথর থামানোর গল্প

৩৭. ‘মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গেও তর্ক করলাম।’– কথক তর্ক করেছেন–
(ক) কুয়ো জলশূন্য হওয়া নিয়ে
(খ) বলীর পাথর গড়িয়ে দেওয়া নিয়ে
(গ) মর্দানার তিনবার পাহাড়চূড়োয় ওঠা নিয়ে
(ঘ) নানকের হাত দিয়ে পাথরের চাঙড় থামানো নিয়ে

উত্তরঃ (ঘ) নানকের হাত দিয়ে পাথরের চাঙড় থামানো নিয়ে

৩৮. ‘সাকা’ হলে রাতে শুতে হয়–
(ক) খড়ের গদিতে (খ) খাটে (গ) মাদুরে
(ঘ) মেঝেতে

উত্তরঃ (ঘ) মেঝেতে

৩৯. সাকার খবর পাওয়া মাত্র কথকের মা পাঞ্জাসাহেবে রওনা দিয়েছিলেন, সঙ্গে ছিল–
(ক) গল্পের কথক ও তাঁর ভাই হয়েছে
(খ) গল্পের কথক
(গ) গল্পের কথক ও তাঁর বোন
(ঘ) গল্পের কথক ও তাঁর দিদি

উত্তরঃ (গ) গল্পের কথক ও তাঁর বোন

৪০. “ঠিক হল, ট্রেনটা থামানো হবে।”– পাঞ্জাসাহেবের মানুষ ট্রেনটি থামানোর চেষ্টা করেছিল, কারণ–
(ক) ট্রেনটি অস্ত্রবোঝাই ছিল
(খ) ট্রেনটিতে ইংরেজ সৈনিকেরা যাচ্ছিল
(গ) ট্রেনটি কয়েদি বোঝাই ছিল
(ঘ) ট্রেনটিতে নিরীহ নিরন্ন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল

উত্তরঃ (ঘ) ট্রেনটিতে নিরীহ নিরন্ন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল

৪১. পাঞ্জাসাহেবের লোকেরা নিরীহ ও ক্ষুধার্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্য স্টেশনে ডাঁই করে রেখেছিল –
(ক) রুটি, পায়েস
(খ) রুটি, লুচি, ডাল
(গ) লুচি, ডাল, পায়েস
(ঘ) রুটি, পায়েস, লুচি, ডাল

উত্তরঃ (ঘ) রুটি, পায়েস, লুচি, ডাল

৪২. স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ট্রেনটিকে থামানোর জন্য পাঞ্জা সাহেবের লোকেরা –
(ক) স্টেশনমাস্টারের কাছে আবেদন করেছিল
(খ) ইংরেজ শাসককে রাজি করিয়েছিল
(গ) রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়েছিল
(ঘ) ট্রেনচালককে অপহরণ করেছিল

উত্তরঃ (গ) রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়েছিল

৪৩. পাঞ্জাসাহেবের মানুষদের আত্মত্যাগের আশ্চর্য গল্পটি লেখককে শুনিয়েছিলেন –
(ক) মায়ের বান্ধবী
(খ) মা
(গ) মাস্টারমশাই
(ঘ) গুরুদ্বারের লোকজন

উত্তরঃ (ক) মায়ের বান্ধবী

অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (SAQ) | অলৌকিক (ভারতীয় গল্প) কর্তার সিং দুগ্‌গাল – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Aloukik SAQ, Question and Answer :

১. ‘এ কি আদৌ সম্ভব ?’– কোন প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গঙ্গে বলী কান্ধারীর গড়িয়ে দেওয়া পাথরের চাঙড় নানক যেভাবে হাত দিয়ে থামিয়ে দেন, তাকেই লেখকের অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল।

২. ‘ভাই মর্দানা, সবুর করো।’– কাকে কী কারণে সবুর করতে বলা হয়েছিল ?

উত্তরঃ হাসান আব্দালের জঙ্গলে মর্দানার জলতেষ্টা পাওয়ায় গুরু নানক তাকে সবুর করতে বলেছিলেন, কারণ পরের গ্রামে পৌঁছোলে তবেই জল পাওয়া যাবে।

৩. ‘আমি কৌতূহলী হয়ে উঠি।’– বক্তা কোন বিষয়ে কৌতূহলী হন ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের লেখা ‘অলৌকিক’ গল্পে কথক । তাঁর মায়ের বলা গুরু নানকের গল্পটির অবশিষ্টাংশ শোনার জন্য কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলেন।

৪. ‘তারপর গুরু নানক ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছালেন’– নানক কোথায় এসে পৌঁছেছিলেন ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের লেখা ‘অলৌকিক’ গল্পে গুরু নানক ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছেছিলেন হাসান আন্দালের জঙ্গলে।

৫. ‘কোথাও একটা জনমানুষ নেই।’- ওখানকার পরিবেশ কেমন ছিল ?

উত্তরঃ হাসান আন্দালের জঙ্গলের চারপাশে ধু-ধু বালি, পাথরের চাই আর রোদে, গরমে ঝলসে যাওয়া গাছপালার মাঝে কোথাও জনমানুষের চিহ্নমাত্র ছিল না।

৬. ‘জল তেষ্টা পেল।’– কার তেষ্টা পেয়েছিল ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পে ভয়ানক রোদে – গরমে হাসান আব্দালের জঙ্গলে গুরু নানকের শিষ্য মর্দানার জলতেষ্টা পেয়েছিল।

৭. ‘তার কাকুতি-মিনতি শুনে গুরু নানক দুশ্চিন্তায় পড়লেন।’— এর কারণ কী ছিল ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে হাসান আব্দালের জঙ্গলে তৃষ্ণায় কাতর মর্দানার কাকুতি-মিনতি শুনে গুরু নানক দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন।

৮. ‘এটাকে ভগবানের অভিপ্রায় বলেই মেনে নাও।’- কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এমন উক্তি করেছিলেন ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পে হাসান আব্দালের জঙ্গলে কোথাও জল না থাকায় তৃষ্ণায় অস্থির মর্দানাকে বুঝিয়ে শান্ত করার উদ্দেশ্যে গুরু নানক প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটি করেছিলেন।

৯. ‘সে বেঁকে বসলে সবাইকেই ঝক্কি পোয়াতে হবে’- ‘সে’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশে ‘সে’ বলতে নানকের শিষ্য তৃষ্ণার্ত মর্দানাকে বোঝানো হয়েছে।

১০. ‘মর্দানা তবু নড়তে রাজি নয়।’— মর্দানা নড়তে রাজি নয় কেন ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পে হাসান আব্দালের জঙ্গলে কোথাও জল না থাকায় তৃষ্ণায় অস্থির মর্দানাকে গুরু নানক বুঝিয়ে শান্ত করে বলেন এটাকে ভগবানের অভিপ্রায় বলে মেনে নিতে এবং একটু সবুর করতে কিন্তু মর্দানা তৃষ্ণায় কাতর হয়ে বসে পড়ে এবং নড়তে রাজি নয়।

১১. ‘সেখানেই বসে পড়ে। এগুবার উপায় নেই’– কে, কেন বসে পড়ে ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পে হাসান আব্দালের জঙ্গলে তৃষ্ণায় কাতর হয়ে বসে পড়ে গুরু নানকের শিষ্য মর্দানা।

১২. ‘সেখানেই বসে পড়ে। এগুবার উপায় নেই’– এগুবার আর উপায় নেই কেন ?

উত্তরঃ গুরু নানক তাঁর শিষ্যকে বুঝিয়ে ধৈর্য ধরতে বলে এবং পরের গ্রামে গেলে জল পাওয়া যাবে। কিন্তু তৃষ্ণায় কাতর মর্দানা নড়তে রাজি না হয়ে সেখানেই বসে পড়ে। তাই এগুবার আর উপায় থাকে না ।

১৩. ‘চোখ খুলে দেখেন’— কী দেখার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্পে গুরু নানক ধ্যান শেষে চোখ খুলে দেখে মর্দানা তৃষ্ণায় জল ছাড়া মাছের মতো ছটফট করছে।

১৪. ‘সদ্গুরু তখন ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললেন’– সদ্গুরু কী বলেছিলেন ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্পে তৃষ্ণায় কাতর শিষ্য মর্দানাকে গুরু নানক বলেছিলেন, পাহাড়চুড়োয় বসবাসকারী বলী কান্ধারীর কুয়োতেই একমাত্র জল পাওয়া যাবে।

১৫. ‘ওঁর কাছে জল পেতে পার।’— কার কাছে জল পাওয়া যেতে পারে ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘ অলৌকিক ‘ গল্পে গুরু নানক তৃষ্ণার্ত শিষ্য মর্দানাকে পাহাড়চুড়োয় বলী কান্ধারীর কাছে জল পাওয়ার কথা বলেছিলেন।

১৬. ‘এক দরবেশ কুটির বেঁধে থাকেন।’– ‘দরবেশ’-এর পরিচয় দাও।

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে হাসান আব্দালের জঙ্গলে পাহাড়চুড়োয় কুটির বেঁধে থাকা দরবেশটির নাম হল বলী কান্ধারী ।

১৭. ‘মর্দানা শুনেই ছুটে গেল।’— কোথায় ছুটে গেল ?

উত্তরঃ জল তেষ্টায় ছটফট করতে থাকা মর্দানা বলী কান্ধারীর কুয়োয় জল থাকার কথা নানকের মুখে শুনে পাহাড়চুড়োর দিকে ছুটে গিয়েছিল।

১৮. ‘শেষ অবধি অনেক কষ্টে উঠতে পারল।’— কে, কোথায় উঠেছিল ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে নিদারুণ তেষ্টায় কাতর মর্দানা অতিরিক্ত রোদে-গরমে ঘেমে কাহিল হয়ে পড়ায় অনেক কষ্টে পাহাড়চুড়োয় বলী কান্ধারীর কুটিরে পৌঁছেছিল।

১৯. ‘হঠাৎ একটা প্রশ্ন জাগল ওর মনে।’–কার মনে প্রশ্ন জেগেছিল ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে তৃষ্ণায় কাতর মর্দানা কুয়োর দিকে এগোলে দরবেশ বলী কান্ধারীর মনে প্রশ্ন জেগেছিল।

২০. ‘হঠাৎ একটা প্রশ্ন জাগল ওর মনে।’- প্রশ্নটি কী ছিল ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে দরবেশ বলী কান্ধারীর মনে প্রশ্ন জেগেছিল যে, মর্দানা কোথা থেকে আসছে।

২১. ‘জিজ্ঞেস করলেন, কোত্থেকে আসছ ?’— বক্তা কে ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে উদ্ধৃত প্রশ্নটির বক্তা তথা প্রশ্নকর্তা দরবেশ বলী কান্ধারী।

২২. ‘বলী রেগে গিয়ে তাকে সঙ্গে সঙ্গে তাড়িয়ে দিলেন।’— এর কারণ কী ছিল ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে মর্দানা গুরু নানকের শিষ্য শুনে বলী কান্ধারী রেগে গিয়ে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন ।

২৩. ‘সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে গুরু হাসেন’— তিনি হেসে কী বলেছিলেন ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে গুরু নানক শিষ্য মর্দানার কাছে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে তাকে নানক দরবেশের অনুচর পরিচয় দিয়ে আর একবার যেতে বলেছিলেন।

২৪. ‘মার সঙ্গে তর্ক শুরু করি।’- কে, কোন বিষয় নিয়ে তর্ক করছিল ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে পাঞ্জাসাহেবের পাথরে গুরু নানকের হাতের ছাপ আজও লেগে রয়েছে শুনে সন্দিহান লেখকের মনে হয় সেই ছাপ পরে কেউ খোদাই করেছে। এই বিষয় নিয়েই তিনি মায়ের সঙ্গে তর্ক শুরু করেন।

২৫. পাথরের তলা থেকে জল বেরিয়ে আসার ব্যাপারটা মেনে নেওয়া যেতে পারে।’- বক্তার এমন মনে হওয়ার কারণ কী ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পে নানকের নির্দেশে পাথরের তলা থেকে জল বেরোনোর ব্যাপারটা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করা সম্ভব বলে লেখকের এমন মনে হয়েছিল।

২৬. “কিছুতেই বিশ্বাস হল না।”— কার, কী বিশ্বাস হল না ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগালের ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে নানকের হাত দিয়ে পাথরের চাঙড় থামানোর ব্যাপারটা মায়ের মুখে শুনে লেখকের কিছুতেই বিশ্বাস হয়নি।

২৭. ‘গল্পটা মনে পড়লেই হাসি পেত।’- কোন্ গল্পের কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে গুরু নানকের হাত দিয়ে পাথরের চাঙড় থামানোর গল্পটির কথাই এখানে লেখক বলেছেন।

২৮. ‘গল্পটা মনে পড়লেই হাসি পেত।’- কেন হাসি পেয়েছিল ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পে পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসা পাথরের চাঙড় নানকের হাত দিয়ে থামিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা অবাস্তব মনে হওয়ায় লেখকের হাসি পেত।

২৯. নানকের গল্পটা লেখক কোথায় কোথায় শুনেছিলেন ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পের লেখক নানকের গল্পটা বাড়িতে মায়ের মুখে, গুরুদ্বারে এবং স্কুলে মাস্টারমশাইয়ের মুখে শুনেছিলেন।

৩০. ‘পাঞ্জাসাহেবে ‘সাকা’ হয়েছে।’- পাঞ্জাসাহেবের আগের নাম কী ছিল ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্পে পাঞ্জাসাহেবের আগের নাম হল হাসান আব্দাল।

৩১. ‘কিন্তু থামল অনেক দূরে এসে।’- এর কারণ কী ছিল ?

উত্তরঃ ট্রেন থামানোর জন্য পাঞ্জাসাহেবের পুরুষ, মহিলা এবং শিশুরা পরপর রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়ে। ট্রেনটি অধিকাংশ পুরুষের বুকের ওপর দিয়ে চলে যাওয়ার পরে থামতে বাধ্য হয়।

৩২. ট্রেনটা পিছোতে লাগল’— ফলে কী হয়েছিল ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্প অনুসারে ট্রেনটা পিছোনোর ফলে রেললাইনের ওপর শুয়ে থাকা মানুষদের শরীরগুলো কেটে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল।

৩৩. ‘স্বচক্ষে দেখেছি’— কী দেখার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পে লেখকের মায়ের বান্ধবী নিজের চোখে পাঞ্জাসাহেবের স্টেশনসংলগ্ন খালপাড়ে রক্তের স্রোত বয়ে যেতে দেখেছিলেন। এখানে সে-কথাই বলা হয়েছে।

৩৪. ‘অবাক-বিহ্বল হয়ে বসে আছি, মুখে কথা নেই ।’— কেন ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পে পাঞ্জাসাহেবের লোকেদের আশ্চর্য ত্যাগ ও আত্মদানের ঘটনাটি শুনে গল্পকথক অবাক, বিহ্বল এবং বাক্যহারা হয়ে গিয়েছিলেন।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর | অলৌকিক (ভারতীয় গল্প) কর্তার সিং দুগগাল – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | HS Bengali Aloukik Essay Type Question and Answer :

১. ‘মায়ের বান্ধবী আমাদের সমস্ত ঘটনাটা শোনালেন’— ঘটনাটি কী ছিল ? ফলে বক্তার মানসিকতার কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পে লেখক কর্তার সিং দুগগাল পাঞ্জাসাহেবে গিয়ে মায়ের বান্ধবীর কাছে সমস্ত ঘটনাটি শুনেছিলেন। দূরের শহরে ফিরিঙ্গিরা একবার নিরস্ত্র ভারতীয়দের ওপরে গুলি চালানােয় বহু মানুষের মৃত্যু হয়। বাকিদের ট্রেনে করে অন্য শহরের জেলে পাঠানাের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কয়েদিরা খিদে-তেষ্টায় মৃতপ্রায় ছিল, তা সত্ত্বেও ট্রেন কোথাও না থামানাের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই খবর পাঞ্জাসাহেবে পৌঁছেলে উত্তেজিত জনতা সিদ্ধান্ত নেয় যে, খিদে-তেষ্টায় কাতর কয়েদিদের নিয়ে ট্রেনটিকে যেতে দেওয়া হবে না। এরপর ট্রেন আটকানাের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে বাড়ির মেয়ে, বাচ্চা-সহ পুরুষেরা রেললাইনে শুয়ে পড়ে। তীক্ষ্ণ হুইসেল দিয়ে ট্রেন এসে গতি কমালেও তার চাকা চলে যায় অনেকের বুকের ওপর দিয়ে, যার মধ্যে কথক মহিলার স্বামীও ছিলেন। ট্রেনের চাকায় লাশগুলি কেটে দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল। খালপারের সেতুর দিকে বয়ে গিয়েছিল রক্তের স্রোত। লেখকের মায়ের বান্ধবী শুধু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীই ছিলেন না, তিনি অবরােধে অংশগ্রহণও করেছিলেন।

গল্পটি শুনে লেখক যন্ত্রণা ও দুঃখে বিহ্বল হয়ে যান; সেইসঙ্গে উপলব্ধি করেন মানুষের সাহস, দৃঢ়তা, ত্যাগ ও সংকল্পের অকল্পনীয় শক্তির জোর। তিনি টের পান অনমনীয় প্রতিজ্ঞা আর ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর করে মানুষ আপাতভাবে অসম্ভবকেও সম্ভব করে তুলতে পারে। এ কথা অনুভব করে পাঞ্জাসাহেবের মানুষগুলোর জন্য যেমন তাঁর চোখ জলে ভরে ওঠে তেমনই নানকের অবিশ্বাস্য গল্পটিকেও সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়।

২. ‘অলৌকিক’ গল্পে হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামানোর ঘটনাটি লেখক প্রথমে বিশ্বাস করেননি কেন ? পরে কীভাবে সেই ঘটনা তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠল ? (২০১৮)

অথবা,

‘গল্পটা মনে পড়লেই হাসি পেত।’– কোন্ গল্পের কথা বলা হয়েছে ? এই গল্পের প্রতি লেখকের বিশ্বাস জন্মানোর কারণ কী ছিল ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্পের লেখক তাঁর মায়ের কাছে শুনেছিলেন, একবার হাসান আব্দালের জঙ্গলে ভয়ানক রোদে-গরমে নানকের শিষ্য মর্দানার খুব তেষ্টা পায়। নানক তাকে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য দরবেশ বলী কান্ধারীর কাছে হাত দিয়ে পাথর খামানোর গল্প পাঠান। কিন্তু নানকের শিষ্য হওয়ায় বলী মর্দানাকে জল না দিয়ে। বারবার অসম্মান করে ফিরিয়ে দেয়। তখন নানকের নির্দেশে মর্দানা একটা পাথর সরাতেই জলের ধারা বেরিয়ে আসে। তা দেখে ক্ষিপ্ত বর্ণী আক্রোশবশে একটি পাথরের চাঙড় গড়িয়ে দেন। পাথরটা কাছে আসতেই নানক হাত দিয়ে সেটাকে থামিয়ে দেন। পাথরের তলা থেকে জল বেরিয়ে আসার বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্ভব হলেও গড়িয়ে আসা পাথর হাত দিয়ে থামানোর ঘটনাটিকে লেখকের অযৌক্তিক মনে হওয়াতে বিশ্বাস করতে মন চায়নি।

গল্পের পরবর্তীতে দেখি মায়ের বান্ধবীর মুখে লেখক পাঞ্জাসাহেবের একটি আশ্চর্য ঘটনার কথা শোনেন। একবার ইংরেজরা বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ট্রেনে করে অন্য শহরে পাঠাচ্ছিল। হুকুম ছিল খিদে-তেষ্টায় কাতর বন্দিদের এই ট্রেন কোথাও থামবে না। কিন্তু পাঞ্জাসাহেরের লোকেরা ইংরেজদের এমন অন্যায় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। এরা রেললাইনে শুয়ে পড়ে ট্রেনটিকে থামতে বাধ্য করেছিল। এই ঘটনা শুনে লেখকের মনে হয়েছিল যদি ঝড়ের গতিতে এগিয়ে আসা ট্রেনকে মানুষ নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে থামাতে পারে, তাহলে পাথরের চাইকে থামানোও অসম্ভব কিছু নয়।

৩. ‘এগুবার আর উপায় নেই। গুরু গভীর সমস্যায় পড়লেন’— গুরুর পরিচয় দাও। তিনি কোন সমস্যায় পড়লেন ? সমস্যার সমাধান হল কীভাবে ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের লেখা ‘অলৌকিক’ গল্পে গুরু বলতে গুরু নানককে বোঝানো হয়েছে। গুরু নানক শিখধর্মের প্রবক্তা।

কর্তার সিং দুগ্‌গালের লেখা ‘অলৌকিক’ গল্পে ভয়ানক রোদে-গরমের মধ্যে গুরু নানক একদিন তাঁর অনুচরদের সঙ্গে নিয়ে হাসান আব্দালের জঙ্গলে গিয়ে পৌঁছোন। ভয়ানক পুকুর সমস্যা রোদে-গরমে হাঁটতে হাঁটতে গরু নানকের শিষ্য মর্দানার খুব জল তেষ্টা পায়। গুরু নানক তাকে ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন। কারণ পরের গ্রামে পৌঁছোলে তবেই জল পাওয়া যাবে। কিন্তু তার কাকুতি – মিনতি শুনে গুরু নানক দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন। কারণ অনেক দূর পর্যন্ত জল পাওয়া যাবে না অথচ মদানা বেঁকে বসেছে। তিনি তখন মর্দানাকে এটা ভগবানের অভিপ্রায় বলে ধৈর্য ধরতে বলে। মর্দানা তবু নড়তে রাজি নয়। সেখানেই বসে পড়ে। তখন গুরু নানক এই সমস্যায় পড়লেন।

তৃষ্ণায় কাহিল মর্দানার সাহায্যার্থে গুরু নানক ধ্যানে বসে দেখেন পাহাড়চুড়োয় দরবেশ বলী কান্ধারীর কুয়োয় জল আছে। তিনি মর্দানাকে বলীর কাছে যেতে বলেন। কিন্তু নানকের শিষ্য হওয়ায় বলী মর্দানাকে তাড়িয়ে দেয়। তিনবার বলী কান্ধারীর কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে এসে কাহিল মর্দানা প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে। নানক তাকে সাহস জুগিয়ে সামনের পাথরটা তুলতে বলেন। পাথরটা তুলতেই সঙ্গে জলের ধারায় চারপাশ ভেসে যায়। এভাবে মর্দানার তৃষ্ণা মেটে এবং গুরু তাঁর শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণার সমস্যা দূর করেন।

৪. ‘হঠাৎ শিষ্য মর্দানার জল তেষ্টা পেল।’— তেষ্টা মেটানোর জন্য মর্দানাকে কী করতে হয়েছিল ? তাঁর তেষ্টা শেষ অবধি কীভাবে মিটেছিল ? ৩+২ (২০২০)

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্গালের ‘অলৌকিক’ গল্পে দেখা যায় গুরু নানকের অন্যতম সহচর মর্দানার প্রচন্ড জল তেষ্টা পেয়েছিল। সশিষ্য গুরু নানক তখন হাসান আব্দালের জঙ্গলে এসে পৌঁছেছেন। মার্দানার অবস্থা দেখে গুরু নানক ধ্যানে বসেন এবং চোখ খুলে তিনি বলেন যে ওই এলাকায় একমাত্র বলী কান্ধারীর আশ্রমের কুয়োতেই জল রয়েছে। গুরুর কথা শুনে মর্দানা তিনবার বলী কান্ধারীর আশ্রমে গিয়েছিল।

প্রথমবার মর্দানা গিয়ে বলী কান্ধারীকে বলেছিল যে সে পির নানকের সহচর। একথা শুনে বলী কান্ধারী তাকে জল না দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল।

দ্বিতীয়বার গিয়ে মর্দানা বলেছিল যে সে নানক দরবেশের অনুচর। এবারেও বলী কান্ধারী তাকে জল দেয়নি।

তৃতীয়বারে মর্দানা বলী কান্ধারীর পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়েছিল। কিন্তু এবারেও বলী কান্ধারী মর্দানাকে গালিগালাজ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল।

এইভাবে মর্দানা তিনবার পাহাড়ের চুড়োতে গিয়েছিল কিন্তু জল না পেয়ে সে এসে গুরু নানকের পায়ের কাছে হতচেতন হয়ে পড়ে গেল। গুরু নানক তাকে অভয় দিয়ে সামনের একটা পাথর তুলতে বললেন। পাথর তুলতেই জলের ধারা দেখা গেল। এই জলেই মর্দানার তেষ্টা মিটেছিল।

৫. ‘হয়তো পথেই প্রাণটা বেরিয়ে যাবে’– কার প্রাণ বেরিয়ে যাবার কথা বলা হয়েছে ? তার এই অবস্থা কেন হয়েছে ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্পের আলোচ্য প্রশ্নাংশে গুরু নানকের শিষ্য মর্দানার প্রাণ বেরিয়ে যাবার কথা বলা হয়েছে।

হাসান আব্দালের জঙ্গলে রোদে-গরমে ও পথশ্রমে ক্লান্ত মর্দানার খুব জল তেষ্টা পায়। শিষ্যের করুণ অবস্থা দেখে নানক ধ্যানে বসে জানতে পারেন পাহাড়চুড়োয় দরবেশ বলী কান্ধারীর কুয়োয় জল আছে। মর্দানাকে বলী কান্ধারীর কাছে যেতে বলেন। তেষ্টায় কাতর মর্দানা কোনোক্রমে পাহাড়ের উপরে গিয়ে বলী কান্ধারীর কাছে জল চায়। বলী কান্ধারী প্রথমে রাজি হলেও মর্দানা নানকের শিষ্য জেনে, তাকে তাড়িয়ে দেয়। নানক সব শুনে মর্দানাকে আবার যেতে বলেন। কিন্তু এবারও একই ঘটনা ঘটে। প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার ফলে মর্দানা আরও হতোদ্যম অবস্থায় নানকের কাছে ফিরে আসে। পুরো ঘটনা শুনে নানক ‘জয় নিরঙ্কার’ বলে হাঁক দিয়ে মর্দানাকে আরও একবার বলী কান্ধারীর কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তৃতীয়বার আর যেন পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে মন সায় দিচ্ছে না, কিন্তু গুরু নানকের আদেশ অমান্য করতে না পেরে সে পুনরায় রওনা হয়। তখন তার অবস্থা খুবই খারাপ, তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে যাচ্ছে এমন অবস্থায় যেন পথেই প্রাণটা বেরিয়ে যাবে। তৃতীয় বার পাহাড়ের চূড়োয় পৌঁছে সে বলী কান্ধারীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে। ক্রুদ্ধ ফকির আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গুরু নানকের নামে যথেষ্ট গালিগালাজ করে মর্দানাকে ফিরে যেতে বলেন। তখন মর্দানা ফিরে এসে নানকের পায়ের কাছে প্রায় অচৈতন্য হয়ে লুটিয়ে পড়ে।

৬. ‘গল্পটা আমাদের স্কুলে শোনানো হল।’— গল্পটা কী ? স্কুলে গল্পটা শুনে লেখকের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ? (২০১৫)

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগালের ‘অলৌকিক’ গল্পে কথকের মা তাঁকে গুরু নানকের একটি গল্প শুনিয়েছিলেন। পরে এই গল্পটি তিনি স্কুলেও শুনেছিলেন। গল্পটি হল, একদিন হাসান আব্দালের জঙ্গলে রোদে-গরমে ও পথশ্রমে ক্লান্ত মর্দানার খুব জলতেষ্টা পায়। শিষ্যের করুণ অবস্থা দেখে নানক ধ্যানে বসে জানতে পারেন পাহাড়চুড়োয় দরবেশ বলী কান্ধারীর কুয়োয় জল আছে। নানকের নির্দেশে মর্দানা বলী কান্ধারীর কাছে গেলে নানকের শিষ্য হওয়ায় তাকে বলী জল না– দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এইভাবে তিনবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্লান্ত মর্দানা প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে। তখন নানক তাকে সাহস জুগিয়ে সামনের পাথরটা সরাতে বলেন। পাথর সরাতেই তলা থেকে জলের ঝরনা বেরিয়ে আসে। এদিকে বলী কান্ধারী দেখেন কুয়োয় জল নেই। ওদিকে নীচে জলস্রোত বইছে আর বাবলাতলায় নানক শিষ্যসহ বসে আছেন। এই দৃশ্য দেখে ক্ষিপ্ত বলী নানককে লক্ষ করে একটি পাথরের চাঙড় গড়িয়ে দেন। পাথরটা কাছে আসতেই নানক হাত দিয়ে সেটিকে থামিয়ে দিয়েছিলেন।

পাথরের তলা থেকে জল বেরিয়ে আসার বিষয়টির বৈজ্ঞানিক লেখকের প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা সম্ভব হলেও হাত দিয়ে গড়িয়ে– আসা পাথর থামানোর ঘটনাটিকে লেখকের অযৌক্তিক মনে হওয়ায় গল্পটা মনে পড়লেই তাঁর হাসি পেত।

৭. ‘ঝড়ের বেগে ছুটে আসা ট্রেন থামানো গেল, পাথরের চাই থামানো যাবে না কেন ?’ — ট্রেন থামানোর দরকার হয়েছিল কেন ? ট্রেন কীভাবে থামানো হয়েছিল ? (২০১৬)

অথবা,

ঠিক হল ট্রেনটা থামানো হবে।’– কোন্ ট্রেনের কথা বলা হয়েছে ? সেটি কীভাবে থামানো হয়েছিল ?

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগালের ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে সংকলিত উদ্ধৃতিটিতে যে ট্রেন থামানাের কথা বলা হয়েছে, সেটি ছিল ক্ষুধায় ও তৃষ্ণায় কাতর বন্দিদের নিয়ে পাঞ্জাসাহেবের ওপর দিয়ে অন্য শহরের কারাগারের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি ট্রেন। যে শহরে গুরু নানক শিষ্য মর্দানার তৃয়া মিটিয়েছিলেন, সেখান দিয়ে বন্দিরা যাতে ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত অবস্থায় না যেতে পারেন, সেজন্যই সেই ট্রেন থামানাের দরকার হয়েছিল।

পাঞ্জাসাহেবের লােকেরা ট্রেন না থামানাের সরকারি নির্দেশ মানতে পারেনি। যে শহরে গুরু নানক শিষ্য মানার তেষ্টা মিটিয়েছিলেন সেখান দিয়ে ক্ষুধার্ত -তৃষ্ণার্ত বন্দিদের নিয়ে ট্রেন চলে যাবে এটা পাঞ্জাসাহেবের মানুষদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। প্রথমে তারা স্টেশনমাস্টারের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু টেলিফোন, টেলিগ্রাম পেয়েও কোনাে পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তখন পাঞ্জাসাহেবের লােকেরা স্টেশনে রুটি, পায়েস, লুচি, ডাল ইত্যাদি নানা খাদ্যদ্রব্য মজুত করেন। তারপরে ট্রেন থামাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে স্ত্রী এবং সন্তান-সহ পাঞ্জাসাহেবের পুরুষ মানুষেরা রেললাইনে শুয়ে পড়েন। এই অবস্থায় তীক্ষ্ণ হুইসেল দিয়ে ট্রেন এসে গতি কমালেও তার চাকা চলে যায় অনেকের বুকের ওপর দিয়ে। ট্রেন পিছােতে গেলে লাশগুলি কেটে দুমড়ে মুচড়ে যায়। খালপারের সেতুর দিকে বয়ে যায় রক্তের স্রোত। এভাবে অজস্র প্রাণের বিনিময়ে সেদিন ট্রেন থামাতে সমর্থ হয়েছিল পাঞ্জাসাহেবের মানুষেরা।

৮. ‘অলৌকিক’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

উত্তরঃ প্রখ্যাত পাঞ্জাবী সাহিত্যিক কর্তার সিংহ দুগগাল রচিত ‘অলৌকিক’ গল্পটি বিশ্লেষণ করে উপলব্ধি হয়েছে যে, বিষয়নিষ্ট ও ব্যঞ্জনাধর্মী গল্পের উপাদানে সমৃদ্ধ গল্পটি। গল্পটির শিরোনাম অলৌকিক। অলৌকিক বলতে মনুষ্যলোকে অসম্বব, যা লোকাতীত।

সাহিত্যে নামকরণ একটি তাৎপর্য পূর্ণ বিষয়। নামকরণের মধ্য দিয়ে স্রষ্ট্রা বা শিল্পী তার দক্ষতা ও প্রতিভাকে প্রকাশ করে। তাছাড়া নামকরণের মাধ্যমে ফুটে ওঠে শিল্পীর মননশীল চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি। নামকরণ বিভিন্ন আঙ্গিকে হয়ে থাকে। পাঠ্য ‘অলৌকিক’ গল্পের নামকরণ গভীর ব্যাঞ্জনাধর্মী ও বিষয়ী বলে মনে হয়।

নানকের গল্প ও অলৌকিকতাঃ

লেখকের বর্ণনায় অলৌকিক গল্পের প্লট সত্যিই অলৌকিক। কাহিনির প্রথম পর্বে ধর্মগুরু নানকের একটি অলৌকিক অর্থাৎ লোকাতীত গল্প। হাসান আব্দালের জঙ্গলে তিনি পাথরের নীচে জলের ঝরনা আবিষ্কার করে শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণা নিবারণ করেছেন, বলী কান্ধারীর পাহাড়ের চূড়া থেকে গড়িয়ে দেওয়া পাথরের চাঙর হাত দিয়ে থামিয়েছেন এবং সেই পাথরে তাঁর হাতের পাঞ্জার ছাপ উথে গেছে। এগুলোই গল্প কথকের কাছে অলৌকিক বা লোেকাতীত ঘটনা।

সাকার ঘটনা ও অতিলৌকিকতাঃ

পাঠ্য গল্প শুধু ধর্মগুরু নানকের অলৌকিক ক্ষমতার কীর্তিগাথা নয়, বরং দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল বীরুগাথা হয়ে ওঠে। কাহিনীর দ্বিতীয় পর্বে পাঞ্জাসাহেবের একদল মানুষ বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামী ও দেশপ্রেমিকদের অভুক্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় দূরের শহরে যেতে দেবেন না বলে আত্মবলিদান দিয়ে ট্রেন থামান। এই পর্বে অতি লৌকিকতা ও অন্যান্য সাধারনতা প্রকাশ পায় ‘অলৌকিক’ নামকরণে।

গুরু নানকের পাথর থামানো এবং পাঞ্জাসাহেবে সাকা হওয়া- দুটি কাহিনি সুত্রে আসলে এই ব্যঞ্জনা যে, মহৎ লক্ষের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ শক্তিতে বলীয়ান মানুষ আপাত দৃষ্টিতে যা অলৌকিক তাকেও অতি লৌকিক ক্ষমতায় সম্ভব করে তোলেন। এই ব্যঞ্জনা নামকরণে অন্তর্নিহিত থেকে গল্পটি সার্থকনামা করে।

৯. ‘পাঞ্জাসাহেবে পৌছে এক আশ্চর্য ঘটনার কথা জানতে পারি।’— পাঞ্জাসাহেবের ওইরূপ নাম কীভাবে হয় ? আশ্চর্য ঘটনাটির বর্ণনা দাও। ১+৪

উত্তরঃ কর্তার সিং দুগ্গালের ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে জানতে পারি যে, হাসান আব্দালের বর্তমান নাম হল পাঞ্জাসাহেব। পাঞ্জা শব্দটির অর্থ হল পাঁচ আঙুল সহ করতল। হাসান আব্দালের একটি পাথরে এখনো গুরু নানকের পাঞ্জার ছাপ লেগে আছে। তাই এই শহরের নাম হয় পাঞ্জাসাহেব।

‘অলৌকিক’ গল্পের কথক তাঁর মায়ের বান্ধবীর কাছে পাঞ্জাসাহেবের সাধারণ মানুষের আত্মদানের এক আশ্চর্য ঘটনার কথা জানতে পারেন। ইংরেজরা একবার নিরস্ত্র ভারতীয়দের ওপর গুলি চালালে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়। জীবিত বাকিদের ট্রেনে করে অন্য শহরের জেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আশ্চর্য ঘটনায় মুখে কথা নেই নেয় ইংরেজ সরকার। সেইসঙ্গে ওপরতলা আসে ক্ষুধার্ত – তৃষ্ণার্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের এই ট্রেনটিকে কোথাও থামানো হবে না। কিন্তু এমনও নির্দয় আদেশ পাঞ্জাসাহেবের মানুষেরা মেনে নিতে পারেনি। তারা সকলে মিলে রুটি, পায়েস, লুচি – ডাল স্টেশনে এনে জড়ো করে । তাদের সমবেত আবেদন সত্ত্বেও কিছু না হওয়ায় পাঞ্জাসাহেবের মানুষেরা ট্রেন থামাতে আরও বদ্ধপরিকর হয়ে শেষে পুরুষ-মহিলা ও শিশু পরপর সারিবদ্ধভাবে সবাই রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়ে। তীব্র বেগে এগিয়ে আসা ট্রেন গতি কমালেও অনেক মানুষের বুকের ওপর দিয়ে চলে যাওয়ার পরে থামে। মৃতদের মধ্যে সেই মহিলার স্বামীও ছিলেন। এরপর তিনি স্বচক্ষে দেখেছিলেন খালপারের সেতু ভেসে গিয়েছিল রক্তের স্রোতে।

১০. ‘চোখের জলটা তাদের জন্য।’– বক্তা কাদের জন্য চোখের জল উৎসর্গ করেছেন ? যে ঘটনায় বক্তার চোখে জল এসেছিল সে ঘটনাটি সংক্ষেপে লেখো। (২০১৭)

উত্তরঃ ‘অলৌকিক’ গল্পের কথক তাঁর মায়ের বান্ধবীর কাছে পাঞ্জাসাহেবের সাধারণ মানুষের আত্মদানের এক আশ্চর্য ঘটনার কথা জানতে পারেন। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে, ট্রেন থামিয়ে যারা খিদে-তেষ্টায় কাতর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খাবার পৌঁছে দিয়েছিল। সেই মানুষদের জন্য চোখের জল উৎসর্গ করেছিলেন লেখক।

কোনাে-এক শহরের নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর গুলিবর্ষণ করার পর ফিরিঙ্গি সৈনিকরা জীবিতদের ট্রেনে করে অন্য শহরের জেলে নিয়ে যাচ্ছিল। নিরীহ কয়েদিরা খিদে-তেষ্টায় কাতর হলেও পথের মধ্যে কোথাও ট্রেন থামানাের নির্দেশ ছিল না। পাঞ্জাসাহেবের মানুষ এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। যে শহরে গুরু নানক শিষ্য মর্দানার তেষ্টা মিটিয়েছিলেন, সেখান দিয়ে ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত ভারতীয় বন্দিদের নিয়ে ট্রেন চলে যাবে—এটা তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। স্টেশন মাস্টারের কাছে আবেদন জানানাে হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ টেলিফোন, টেলিগ্রাফ পেয়েও সিদ্ধান্তে অটল থাকে। তখন পাঞ্জাসাহেবের মানুষ স্টেশন-প্ল্যাটফর্মে রুটি, লুচি, ডাল, পায়েস প্রভৃতি খাবার মজুত করেন। তারপর ট্রেন থামাতে বদ্ধপরিকর হয়ে স্ত্রী-সন্তান-সহ পুরুষ মানুষরা রেললাইনে শুয়ে পড়েন। এই অবস্থায় তীক্ষ্ম হুইসেল দিয়ে ট্রেন এসে গতি কমালেও তার চাকা চলে যায় অনেকের বুকের ওপর দিয়ে। ট্রেন পিছােতে গেলে মৃতদেহগুলাে কেটে, দুমড়ে মুচড়ে যায়। খালপাড়ের সেতুর দিকে বয়ে যায় রক্তের স্রোত। এভাবেই ক্ষুধা-তৃষ্ণায়-কাতর বন্দি স্বাধীনতাসংগ্রামীদের খাবার ও জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য অজস্র প্রাণের বিনিময়ে চলন্ত ট্রেন থামিয়েছিলেন পাঞ্জাসাহেববাসী। এই ঘটনাই বক্তার চোখে জল এনেছিল।

১১. ছোটোগল্প হিসেবে ‘অলৌকিক’ গল্পটির সার্থকতা বিচার করো।

উত্তরঃ সাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি ছোটোগল্প মণিমুক্তোর মতো মূল্যবান সামগ্রী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘বর্ষাযাপন’ কবিতায় বলেছেন—

“ছোটো প্ৰাণ, ছোটো ব্যথা, ছোটো ছোটো দুঃখকথা নিতান্তই সহজসরল, অতৃপ্তি রবে
সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ।”

বক্তার মানসিকতার যে ধরনের পরিবর্তন অন্তরে অর্থাৎ ছোটোগল্প আকারে ছোটো হবে এবং গল্পও হবে সহজ সরল এবং গল্পের শেষে অন্তরে অতৃপ্তির রেশ থাকবে ও জীবনের বৃহৎ চেতনা ফুটে উঠবে। ছোটোগল্পের এই আঙ্গিকে বিচার করব কর্তার সিং দুগ্‌গালের ‘অলৌকিক’ গল্পটি ছোটোগল্প হিসেবে কতখানি সার্থক।

‘অলৌকিক’ গল্পটি হল– আপাতভাবে অসম্ভব কোনো ঘটনা সম্পর্কে জীবনের অভিজ্ঞতার শিক্ষায় বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে ওঠার এক অসামান্য কাহিনি। দুটি ভিন্ন সময়ের ঘটনাকে যুক্ত করেছে পাঞ্জাসাহেব নামে একটি স্থান, যা গুরু নানকের স্পর্শধন্য। এখানেই তিনি পাথুরে ধূসর জঙ্গলে জলের ঝরনা বইয়ে দিয়ে শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণা মিটিয়েছিলেন। ঈর্ষাপরায়ণ বলী কান্ধারীর ঘাতক পাথরের চাঙড়টিকে হাত দিয়ে থামিয়ে ‘অলৌকিক’ গল্পটির চিরকালীন অলৌকিকতার জন্ম দিয়েছিলেন। লেখক কর্তার সিং দুগ্‌গাল অবিশ্বাস্য এই ঘটনাকে বাস্তবসম্মত করে তোলেন সম্পূর্ণ অন্য একটি ঘটনার নিরিখে। তিনি সংক্ষিপ্ত আয়তনে নাটকীয় দক্ষতায় এ-দুটি কাহিনির মধ্যে যোগসূত্র রচনা করেন। পাঞ্জাসাহেবের সাধারণ মানুষ খিদে-তেষ্টায় কাতর স্বাধীনতা – সংগ্রামীদের মুখে পৌঁছে দেয় রুটি ও জল। এই উদ্দেশ্যপুরণের লক্ষ্যে তারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে আসা ট্রেনকে আটকাতে রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়ে। লেখক উপলব্ধি করেন মায়ের মুখে শোনা নানকের যে গল্প অবাস্তব বলে মনে হয়েছিল, পাঞ্জাসাহেবের ঘটনায় তা যেন মানবীয় সম্ভাব্যতার স্বীকৃতি আদায় করে নেয়। তাই তিনি উপলব্ধি করেন, মানুষ ত্যাগ – নিষ্ঠা – সাহস ও মহত্ত্বের জোরে অসাধ্যসাধন করতে পারে, সীমিত চরিত্রে ও একমুখী ঘটনার ঘাত – প্রতিঘাতে গল্পকার সেই সত্যকেই ফুটিয়ে তোলেন। এভাবেই ‘অলৌকিক’ একটি সার্থক ছোটোগল্প হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুনঃ

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪

Leave a Reply