মহুয়ার দেশ (কবিতা) সমর সেন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE HS Bengali Mohuar Desh MCQ, SAQ, Essay Type Solved Question Answer

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর

মহুয়ার দেশ (কবিতা) সমর সেন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন (Essay Type) উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer

কবি সমর সেন রচিত শিকার কবিতা থেকে বহুবিকল্পীয়, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

মহুয়ার দেশ (কবিতা) সমর সেন – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | মহুয়ার দেশ (কবিতা) সমর সেন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় কীসের ‘গভীর, বিশাল শব্দের কথা বলা হয়েছে ?
(ক) কয়লা খনির (খ) সমুদ্রের (গ) মেঘের (ঘ) কারখানার

উত্তরঃ (ক) কয়লা খনির।

২. ‘সবুজ সকাল’ কীসে ভেজা ? (উঃ মাঃ ২০১৯) (ক) জলে (খ) মেঘে (গ) শিশিরে (ঘ) ভোরের আলোয়

উত্তরঃ (গ) শিশিরে

৩. “আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক”—
(ক) বকুল ফুল (খ) মহুয়া ফুল
(গ) শিউলি ফুল (ঘ) এদের কোনোটিই নয়

উত্তরঃ (খ) মহুয়া ফুল

৪. ‘অলস সূর্য’ বলা হয়েছে—
(ক) সকালের সূর্যকে
(খ) মেঘলা দিনের সূর্যকে
(গ) দুপুরের সূর্যকে
(ঘ) অস্তাচলগামী সূর্যকে

উত্তরঃ (ঘ) অস্তাচলগামী সূর্যকে।

৫. “মেঘমদির মহুয়ার দেশ” আছে— (উঃ মাঃ ২০১৮)
(ক) খুব খুব কাছে (খ) অনেক অনেক দূরে (গ) নিবিড় অরণ্যে (ঘ) প্রান্তরের শেষে

উত্তরঃ (খ) অনেক অনেক দূরে

৬. “অবসন্ন মানুষের শরীরে দেখি” (উঃ মাঃ ২০১৫)
(ক) ধুলোর কলঙ্ক (খ) অপমানের কলঙ্ক
(গ) পোড়া দাগ (ঘ) চাঁদের কলঙ্ক

উত্তরঃ (ক) ধুলোর কলঙ্ক।

৭. ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতাটি কোন কাব্য সংকলন থেকে গৃহীত ?
(ক) নানা কথা (খ) খোলা চিঠি
(গ) তিনপুরুষ (ঘ) কয়েকটি কবিতা

উত্তরঃ (ঘ) কয়েকটি কবিতা।

৮. ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় রাতের নির্জন-নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে—
(ক) নিশাচরের কোলাহল
(খ) শিকারীর পদসঞ্চার
(গ) অবসন্ন মানুষের আনাগোনা
(ঘ) সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস

উত্তরঃ (ঘ) সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস।

৯. “ধোঁয়ার বঙ্কিম নি:শ্বাস ঘুরে ফিরে আসে- (উঃ মাঃ ২০১৭)
(ক) নির্জন নিঃসঙ্গতার মতো
(খ) উজ্জ্বল স্তব্ধতার মতো
(গ) শীতের দুঃস্বপ্নের মতো
(ঘ) সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাসের মতো

উত্তরঃ (গ) শীতের দুঃস্বপ্নের মতো।

১০. ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় কীসের রঙ ‘ধূসর ?
(ক) জলস্রোত (খ) মহুয়া (গ) ফেনা
(ঘ) ধোঁয়া

উত্তরঃ (গ) ফেনা।

১১. অলস সূর্য ছবি আঁকে—
(ক) দিগন্তে (খ) পশ্চিমের আকাশে
(গ) সন্ধ্যার জলস্রোতে (ঘ) হৃদয়ে

উত্তরঃ (গ) সন্ধ্যার জলস্রোতে।

১২. উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ ছিল—
(ক) গলিত সোনার মতো
(খ) সন্ধ্যায় ল্যাম্পপোস্টের মতো
(গ) মেঘলা বিকেলের মতো
(ঘ) দেবদারু গাছের মতো

উত্তরঃ (ক) গলিত সোনার মতো।

১৩. জলের অন্ধকারের ধূসর ফেনায়—
(ক) জোৎস্না পড়ে
(খ) রুপোলি মাছেদের দেখা যায়
(গ) আগুন লাগে (ঘ) নৌকা ভাসে

উত্তরঃ (গ) আগুন লাগে।

১৪. ধোঁয়ার বঙ্কিম নিশ্বাস ঘুরে-ফিরে আসে—
(ক) শিশিরের ফোটার মতো
(খ) শীতের দুঃখ স্বপ্নের মতো
(গ) রেখার মতো
(ঘ) ভোরের কুয়াশার মতো

উত্তরঃ (খ) শীতের দুঃখ স্বপ্নের মতো

১৫. মহুয়ার দেশ হলো—
(ক) মেঘ-মদির (খ) চিরসবুজ
(গ) নিত্যচঞ্চল (ঘ) আলোকদীপ্ত

উত্তরঃ (ক) মেঘ-মদির।

১৬. মহুয়ার দেশে পথের দু-ধারে ছায়া ফেলে—
(ক) সজীনার গাছ (খ) হিজলের বন
(গ) তালের সারি (ঘ) দেবদারু গাছ

উত্তরঃ (ঘ) দেবদারু গাছ

১৭. কবি নিজের ক্লান্তির উপরে ঝরে পড়ার কথা বলেছেন—
(ক) সমুদ্রের উচ্ছাস (খ) বিকেলের বাতাস (গ) মহুয়ার ফুল (ঘ) নিশ্চিন্ত ঘুম

উত্তরঃ (গ) মহুয়ার ফুল।

১৮. কয়লা খনির শব্দ কবি শুনতে পান— (ক) নির্জন দুপুরে (খ) নিবিড় অন্ধকারে
(গ) শিশিরভেজা সকালে (ঘ) শীতের সন্ধ্যায়

উত্তরঃ (খ) নিবিড় অন্ধকারে

১৯. অলস সূর্য একে দিয়ে যায়—
(ক) সৌর কিরণ (খ) আলোক রেখা
(গ) আলোর স্তম্ভ (ঘ) ছায়াপথ

উত্তরঃ (গ) আলোর স্তম্ভ।

২০. ‘আর আগুন লাগে’- যেখানে আগুন লাগে—
(ক) জলের ওপরে (খ) জলের অন্ধকারে (গ) নদীতে (ঘ) ঝরনার জল স্রোতে

উত্তরঃ (খ) জলের অন্ধকারে।

২১. ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতাটির ক-টি স্তবক ? (ক) একটি (খ) দুটি (গ) তিনটি (ঘ) চারটি

উত্তরঃ (খ) দুটি

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (MCQ) | মহুয়ার দেশ (কবিতা) সমর সেন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. “অলস সূর্য দেয় এঁকে”– ‘অলস সুর্য’ কী আঁকে, সূর্যকে ‘অলস’ বলার কারণ কী ?

উত্তরঃ ‘অলস সূর্য’ সন্ধ্যার জলস্রোতে গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ এঁকে দেয়। অস্তগামী সূর্যের দীপ্তি স্তিমিত বলেই সন্ধ্যার সূর্যকে ‘অলস’ বলা হয়েছে।

২. সন্ধ্যার জলস্রোতে উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ কে এঁকে দেয় ?

উত্তরঃ কবি সমর সেন রচিত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় সন্ধ্যার জলস্রোতে অস্তান্মুখ সূর্য উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ এঁকে দেয়।

৩. “ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে”— বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ বলতে স্বপ্নময় প্রকৃতি-প্রধান ‘মহুয়ার দেশ’-এর বিপরীতে কয়লাখনি থেকে উঠে আসা নাগরিক সভ্যতার বিষবাষ্পের কথাই বোঝানো হয়েছে।

৪. “ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস” কীভাবে কবির কাছে আসে ?

উত্তরঃ তীব্র শীতের দুঃস্বপ্নের মতো ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ কবির কাছে তথা দরিদ্র আশ্রয়হীন মানুষের কাছে আসে।

৫. কবি কাকে ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’ বলেছেন ?

উত্তরঃ বহুদূরের কোনো এক অজানা নামহীন দেশকে কবি সমর সেন ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’ বলেছেন।

৬. ‘শীতের দুঃস্বপ্নের মতো’ কে নেমে আসে ?
উত্তরঃ মহুয়ার দেশ কবিতায় বর্ণিত ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিশ্বাস’ শীতের দুঃস্বপ্নের মতো নেমে আসে।

৭. “অনেক, অনেক দূরে আছে…”—সেই অনেক দূরে কী ঘটে ?

উত্তরঃ ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় অনেক দূরে মহুয়ার দেশে পথের দু-ধারে দেবদারু পারে দীর্ঘ রহস্য ছায়া ফেলে। দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস রাতের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে।

৮. “মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’— কবি কোন স্থানকে মেঘনাদের মহুয়ার দেশ বলেছেন ?

উত্তরঃ দূষিত নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতার বিপরীতে সাঁওতাল পরগনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মায়াময়তাকে ফুটিয়ে তুলতেই কবি সমর সেন এই স্থানকে ‘মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ’-রূপে অভিহিত করেছেন।

৯. “সমস্তক্ষণ সেখানে পথের দুধারে…”— ‘সেখানে’ বলতে কোথাকার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ সমর সেনের ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় ‘সেখানে’ বলতে ‘মহুয়ার দেশে’র কথা বলা হয়েছে।

১০. “দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য”—বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ সমর সেনের ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় ‘দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য’ বলতে দেবদারু গাছের দীর্ঘ ছায়াময় বিস্তারকে বোঝানো হয়েছে।

১১. ‘দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য’ কোথায় ছায়া ফেলে ?

উত্তরঃ কবি সমর সেন রচিত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় ‘দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য’ সুদূর মহুয়ার দেশে পথের দু-ধারে ছায়া ফেলে।

১২. কবি সমর সেন তাঁর ক্লান্তির উপরে কার ঝরে পড়া এবং নেমে আসার প্রার্থনা করেছেন ?

উত্তরঃ কবি সমর সেন তাঁর ক্লান্তির উপরে মহুয়া ফুলের ঝরে পড়া এবং মহুয়ার গন্ধ নেমে আসার প্রার্থনা করেছেন।

১৩. “গভীর বিশাল শব্দ।”— কীসের শব্দ ?

উত্তরঃ মহুয়া বনের ধারে কয়লাখনির গভীর বিশাল শব্দের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

১৪. “ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয় কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন”– কাদের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ আলোচ্য অংশে মহুয়ার দেশের অধিবাসী অবসন্ন মানুষদের কথা বলা হয়েছে।

১৫. “নামুক মহুয়ার গন্ধ।”—কবির এই প্রার্থনা কেন ?

উত্তরঃ মহুয়া ফুলের গন্ধ এক ধরনের আবেশ এবং হালকা নেশার উদ্রেক করে। তাই ক্লান্তি ভুলতে কবি মহুয়ার গন্ধকে আহবান করেছেন।

১৬. “রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে”— উৎস নির্দেশ করো।

উত্তরঃ আলোচ্য অংশটি কবি সমর সেনের ‘মহুয়ার দেশ’ শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।

১৭. “আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল।”– কবি ক্লান্ত কেন ?

উত্তরঃ নাগরিক যান্ত্রিকতায় কবি বিধ্বস্ত, অবসর নেই তার। তাই তিনি ক্লান্ত।

১৮. ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় অবসন্ন মানুষদের শরীরে কী দেখা যায় ?

উত্তরঃ কবি সমর সেনের ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় অবসন্ন মানুষদের শরীরে ধুলোর কলঙ্ক দেখা যায়।

১৯. “আমার ক্লান্তির ওপর ঝরুক মহুয়া-ফুল”— এখানে ‘মহুয়ার ফুল’ কীসের প্রতীক ?

উত্তরঃ আলোচ্য পঙক্তিতে উল্লিখিত ‘মহুয়া ফুল’ রোমান্টিক উপাদানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যে রোমান্টিক উপাদান কবির জীবনের ক্লান্তি অপনোদন করতে পারবে।

২০. মহুয়ার দেশের মানুষদের ঘুমহীন চোখে কী দেখা যায় ?

উত্তরঃ মহুয়ার দেশের মানুষদের ঘুমহীন চোখে দেখা যায় ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।

২১. “নিবিড় অন্ধকারে মাঝে মাঝে শুনি”– কী শোনার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ কবি সমষ্টি অনুচিত মহুয়ার দেশ কবিতায় বর্ণিত কয়লাখনির বিশাল শব্দের কথা বলা হয়েছে।

২২. শিশিরে ভেজা সবুজ সকালে কবি কী দেখেন ?

উত্তরঃ শিশির ভেজা সবুজ সকালে কবি সমর সেন ক্লান্ত মানুষের চোখে ধুলোর কলঙ্ক দেখেন।

২৩. “এখানে অসহ্য, নিবিড় অন্ধকারে”— ‘অসহ্য’ কেন ?

উত্তরঃ মহুয়ার বনের ধারে কয়লা খনির শ্রমজীবী মানুষরা শ্রমের ক্লান্তিতে অবসাদগ্রস্ত। তাই সেখানকার অন্ধকারকে অসহ্য বলে মনে হয়েছে।

২৪. “আর দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস।”– সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস কী করে ?

উত্তরঃ সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস মহুয়া বনের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে।

২৫. রাত্রের নিঃসঙ্গতাকে কে আলোড়িত করে ?

উত্তরঃ দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস রাত্রির নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে।

২৬. “নামুক মহুয়ার গন্ধ।”—কোথায় মহুয়ার গন্ধ নেমে আসার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ কবির ক্লান্তির ওপর মহুয়ার গন্ধ নেমে আসার কথা বলা হয়েছে।

২৭. ‘নিবিড় অন্ধকারে মাঝে মাঝে শুনি’ – কবি কী শোনেন ?

উত্তরঃ কবি শোনেন মহুয়া বনের ধারে অসহ্য কয়লাখনির গভীর, বিশাল শব্দ।

২৮. “ঘুমহীন তাদের চোখে”— কাদের চোখে কী হানা দেয় ?

উত্তরঃ মহুয়া বনের ধারে অবস্থিত কয়লাখনির শ্রমিকদের চোখে হানা দেয় ক্লান্তির দুঃস্বপ্ন।

২৯. “…জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায়।”— সেখানে কী ঘটে যায় ?

উত্তরঃ সমর সেনের ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনা অস্তগামী সূর্যের আলোয় লাল হয়ে ওঠে। সেই দৃশ্য দেখে মনে হয় আগুন লেগেছে।

৩০. “সেই উজ্জ্বল স্তব্ধতায়”— কীসের কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ সমর সেন রচিত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় অস্তগামী সূর্যের আলোয় জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায় যে আগুন লাগে, ‘উজ্জ্বল স্তব্ধতা’ বলতে তার কথাই বোঝানো হয়েছে।

৩১. ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় কবি নিজেকে কীভাবে উপস্থাপিত করেছেন ?

উত্তরঃ ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় কবি নিজেকে নগরজীবনের ক্লান্ত মানুষের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত করেছেন।

৩২. ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতাটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে ?
উত্তরঃ ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতাটি কবির ‘কয়েকটি কবিতা’ (১৯৩৭) কাব্য সংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে।

৩৩. ‘অবসন্ন মানুষের শরীরে দেখি ধূলোর কলঙ্ক’- কবি কোন সময়ে দেখেছিলেন ?
উত্তরঃ শিশিরে-ভেজা সবুজ সকালে কবি অবসন্ন মানুষের শরীরে ধূলোর কলঙ্ক দেখেছিলেন।

৩৪. সমস্তক্ষণ পথের দুধারে করা ছায়া ফেলে ?
উত্তরঃ কবি সমর সেন রচিত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় মেঘ-মদির মহুয়ার দেশের দেবদারু গাছ ছায়া ফেলে।

৩৫. ‘মহুয়ার দেশ ‘ কবিতায় কবি কোথাকার নিস্বর্গ প্রকৃতির বর্ণনা করেছেন ?
উত্তরঃ কবি সমর সেন রচিত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় সাঁওতাল পরগনার নিস্বর্গ প্রকৃতির বর্ণনা করেছেন।

রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (MCQ) | মহুয়ার দেশ (কবিতা) সমর সেন – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় কবি সমর সেনের প্রকৃতিপ্রেম কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা ব্যক্ত করো।

উত্তরঃ কবি সমর সেন জনগণের প্রাণের কথা শুনতে অভিলাষী। এই অভিলাষই তাকে প্রকৃতি ও রোমান্টিকতা থেকে দূরে সরিয়ে কঠিন-কঠোর বাস্তবতার স্তুতিগান রচনায় অনুপ্রাণিত করেছে। তবে যুবক কবির মন থেকে প্রকৃতির প্রতি অনুরাগ সম্পূর্ণ রূপে মুছে যেতে পারেনি। আলোচ্যমান ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতার মধ্যেও তাই প্রকৃতির প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়েছে অবক্ষয়িত নগরসভ্যতাকে ভুলে যাওয়ার বাসনায়।

কবি সমর সেন সাঁওতাল পরগনার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ শতই কল্পনার দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছেন তাঁর কলুষতামুক্ত কোমল রূপটিকে। কবি সেখানে সন্ধ্যার জলস্রোতে এক ভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করেছেন। কল্পনাবিলাসী কবি

“অলস সূর্য দেয় এঁকে
গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ”

সাঁওতাল পরগনায় অলস সূর্যের ম্লান আলোর প্রতিফলনে স্কুলের অন্ধকারে ধূসর ফেনায় আগুন লাগে। মহুয়ার দেশে ধোঁয়ার বঙ্কিম নিশ্বাস, দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস ঘুরে ফিরে কবির। ঝাছে ফিরে এসে কবির একাকিত্বকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে কবির কাছে সেই ধোঁয়ার বঙ্কিম নিশ্বাস কখনোই অভিপ্রেত নয়, কারণ তা প্রকৃতির স্নিগ্ধ অবয়বে কলুষতার কালিমা লেপন করে।

প্রকৃতির প্রতি কবির অমোঘ টানের অনুষঙ্গে এই কবিতায়। একর পর এক চিত্রকল্পের আগমন ঘটেছে। সিন্ধ্যার জলস্রোত, অলস সূর্য’, ‘জলের অন্ধকারে ধূসর ফেনা’, ‘দেবদারুর রহস্য’, ‘সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস’ কিংবা ‘শিশিরভেজা সবুজ সকাল’–এইসব চিত্রকল্পগুলির প্রয়োগে প্রকৃতি যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কবির ভাবনায় ও তার সৃজনীশক্তির দক্ষতায় প্রকৃতি হয়ে উঠেছে বিচিত্র রূপময়।

২. “অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ”—কবি ‘মহুয়ার দেশ’-এর কী বর্ণনা দিয়েছেন? এই ‘মহুয়ার দেশ’ কীভাবে কবির চেতনাকে প্রভাবিত করেছে, তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।

উত্তরঃ

মহুয়ার দেশের বর্ণনাঃ অন্য একটি কবিতায় সমর সেন লিখেছিলেন— “বৃষ্টির আভাসে করুণ পথে ধুলো উড়ছে, এমন দিনে সে ধুলো মনে শুধু আনে/সাঁওতাল পরগণার মেঘমদির আকাশ।” আলোচ্য কবিতাতেও দেখা যায় কবির কাছে মহুয়ার দেশ’ হল ‘মেঘমদির’। সেখানে সবসময় পথের দু-পাশে ছায়া ফেলে রহস্যময় দেবদারু গাছেরা। রাত্রির নিঃসঙ্গ নির্জনতাকে আলোড়িত করে ‘দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস’।

অবসন্নতা থেকে মুক্তিঃ ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় কবি সমর সেন নগরজীবনের ক্লান্তিকর অবসন্নতা থেকে মুক্তি খোঁজেন। কবির চেতনায় আসে মেঘমদির সুদূর মহুয়ার দেশ।

প্রকৃতির অনুষঙ্গঃ গ্রামজীবনের নির্মল প্রকৃতির অনুষঙ্গ হিসেবে কবির কল্পনায় মাদকতাময় মহুয়া ফুলের আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে। যে কবি লিখেছিলেন— “একদা শালবনে কেটেছে রোমান্টিক দিন”, তাঁর কবিতায় মহুয়ার দেশ’ হয়ে ওঠে বিবর্ণ শহরজীবনে ক্লান্ত মানুষের বেঁচে থাকার আশ্রয়। তার ক্লান্তির উপরে মহুয়া ফুল ঝরে পড়ুক, “নামুক মহুয়ার গন্ধ”—এটাই কবির আকাঙ্ক্ষা হয়ে ওঠে।

যন্ত্রসভ্যতার বিপন্নতাঃ যন্ত্রসভ্যতার বিপন্নতাই কিন্তু তাঁর স্বপ্নের মহুয়ার দেশেও হানা দেয়। যন্ত্রসভ্যতা। কবির কানে আসে মহুয়া বনের ধারের কয়লাখনির প্রবল শব্দ, শিশিরভেজা সবুজ সকালেও কবি দেখতে পান মানুষের শরীরে লেগে থাকা ধুলোর কলঙ্ক। নিদ্রাহীন এইসব মানুষের চোখে ভিড় করে আসা যন্ত্রসভ্যতার বিপন্নতাই কবির কাছে চূড়ান্ত সত্য হয়ে দেখা দেয়।

৩. “আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া-ফুল, / নামুক মহুয়ার গন্ধ।”-কবির কী কারণে ক্লান্তি? সেই ক্লান্তি কীভাবে দূরীভূত হতে পারে বলে কবি মনে করেন?

উত্তরঃ ক্ষয়িয়ু মধ্যবিত্ত জীবনের বিষণ্ণতায় কবিমন ক্লান্ত তাই শহরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে তিনি শান্তির খোঁজে গ্রামীণ জীবনে প্রবেশ করতে চান। যুগ ও জীবনের ক্লান্তি কবির বিভিন্ন রচনায় প্রত্যক্ষ করা যায়—

“মহানগরীতে এল বিবর্ণ দিন, তারপর আলকাতরার
মতো রাত্রি আর দিন
সমস্ত দিন ভরে শুনি রোলারের শব্দ।”

ক্লান্ত, অবসন্ন দেহচেতনা ও মানসিক বৈকল্য ঘোচাতে কবি সাঁওতাল পরগনার শান্ত-স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের বুকে বিচরণ করতে চেয়েছেন-

“অনেক, অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ”

কবি সেই উদাত্ত প্রকৃতির বুকে অবগাহন করে মনের ক্লান্তি দূর করতে চান। সেখানে মহুয়া আর দেবদারুর সুদীর্ঘ রহস্যঘেরা মায়াজাল কবিকে আকর্ষণ করে সুদূর নীলিমায়। দূর সমুদ্রের গর্জন রাত্রির নিরালা ও নিঃসঙ্গতাকে দূরে সরিয়ে দেয় সরব উপস্থাপনায়। মধ্যবিত্ত জীবনের চলার গতি থেকে কবিমন ক্লাস্ত। সেই একঘেয়েমির বৃত্তবলয় ভেঙে কবি তাঁর লালিত বিশ্বাসের বৃত্তচ্যুত হয়ে এক আশার জগতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সে কারণে উদার উন্মুক্ত প্রকৃতির প্রাঙ্গণে অনুপম সৌন্দর্যের আহ্বান কবিকে তাড়িত করেছে। তার সারা শরীরের ক্লান্তি অবসাদ দূর করতে মহুয়ার সৌন্দর্য চেতনা দ্বারা তিনি সিক্ত হতে চান।

৪. ‘মহুয়ার দেশ’ কোনো বাস্তবের দেশ নয়, স্বপ্নের দেশ—ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ চল্লিশের দশকের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কবি সমর সেন যুগ ও জীবনের প্রতি অকপট স্বীকারোক্তি এবং ক্লান্তি-হতাশা-গ্লানির প্রতি রুদ্রচণ্ড হয়ে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনকামী মতাদর্শে আস্থা জ্ঞাপন করেছেন। নগরজীবনের যা কিছু কুশ্রী ও বিকারগ্রস্ত তার থেকে মুক্তিলাভের জন্য কবি এমন এক স্থানের সন্ধান করেছিলেন যা পবিত্র প্রকৃতির রঙে ঠাসা। এমনই এক দেশ হল মহুয়ার দেশ। আপন কল্পনায় কবি মহুয়ার দেশ অর্থাৎ সাঁওতাল পরগনার নিসর্গ সৌন্দর্যকে অবলোকন করেছিলেন। সেখানে পড়ন্ত রোদের সন্ধ্যার জলে ‘গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ’ নির্মাণ, ‘দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য’, দূর সমুদ্রের রাত্রিকালীন দীর্ঘশ্বাস আর মহুয়া ফুলের মধুর সুবাস কবিকে চমকিত, পুলকিত করে।

কিন্তু এই অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কবি দেখেছেন সাঁওতাল পরগনার কোমল মনের মানুষগুলি কয়লাখনির শ্রমজীবীতে পরিণত হয়েছে। নিবিড় অন্ধকারে কবি শুনতে পান-

“মহুয়ার বনের ধারে কয়লার খনির
গভীর, বিশাল শব্দ,”

সেখানকার শ্রমক্লান্ত, অবসন্ন মানুষগুলোর শরীরে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন ধুলোর কলঙ্ক, তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তায় নিদ্রাহীন নিশিযাপন করতে দেখেছেন। যন্ত্রসভ্যতার দাপটে সাঁওতাল পরগনার পবিত্রভূমিও কলুষিত।

আসলে ‘মহুয়ার দেশ’ কোনো বিশেষ স্থান নয়। ‘মহুয়া’ হল একপ্রকারের মদ যা পান করে মানুষ ক্ষণিকের জন্য বাস্তব জগতকে বিস্মৃত হতে পারে কিন্তু তার প্রভাব চিরস্থায়ী হতে পারে না। তাই মহুয়ার দেশও সুন্দরের এক ভ্রম মাত্র। বাস্তবের ধুলোর আঘাতে তার ঘোর সহজেই কেটে যেতে পারে। তাই কবিও এক স্বপ্নময় জগৎ কল্পনা করলেও যৌবনে দেখা স্বপ্ন বাস্তবের কঠোরতার সম্মুখীন হয়ে অচিরেই মুছে যায় এবং প্রমাণ করে দেয় যে, মহুয়ার দেশ শুধুই স্বপ্নময় দেশ, বাস্তবে তা অস্তিত্বহীন।

৫. “ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়/কিসের ক্লাস্ত দুঃস্বপ্ন।”—’তাদের’ বলতে এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের নিদ্রাহীনতার কারণ কী ? ক্লাস্ত দুঃস্বপ্ন’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন।

অথবা,

“ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয়/কিসের ক্লাস্ত দুঃস্বপ্ন।” – কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের ঘুমহীন চোখে ক্লাস্ত দুঃস্বপ্ন হানা দেয় কেন ?

উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালের আধুনিক কবি সমর সেনের লেখা ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত আলোচ্য পঙক্তি দুটিতে ‘তাদের’ বলতে মহুয়ার দেশের কয়লাখনিতে কর্মরত শ্রমিকশ্রেণির কথা বলা হয়েছে।

প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা কয়লাখনির শ্রমিকরা দিবারাত্র কর্মরত থাকে। তা ছাড়া তাদের চোখে সদাজাগ্রত থাকে চির আপন জন্মভূমি থেকে অধিকার হারানোর বেদনা। মূলত, ভবিষ্যৎ জীবনের দুর্ভাবনা ও অধিকার হারানোর যন্ত্রণা—উভয় কারণেই তারা নিদ্রাহীন।

মহুয়ার দেশ প্রকৃতির সম্পদে পূর্ণ। এমন এক স্থানে খনিজ সম্পদকে কেন্দ্র করে প্রাচীন সভ্যতার বুকে পুঁজিবাদের একনায়কতন্ত্রের প্রসার ঘটলে সাঁওতাল পরগনার পাহাড় জঙ্গল অধ্যুষিত অঞ্চলের অধিবাসীগণ দিনমজুরে পরিণত হয়। ফলে তাদের জীবনে অধিকারহানির পাশাপাশি অনিশ্চয়তার আশঙ্কাও বাসা বাঁধতে থাকে। ধনতন্ত্রের আগ্রাসনের দ্বারা সর্বাধিক প্রভাবিত হয় তাদের চিরাচরিত জীবনব্যবস্থা ও স্বতঃস্ফূর্ততা। মহুয়ার ফুল তার মেঘ-মদির সুবাস সহযোগে তাদের ক্লান্তির উপর ঝরে পড়তে পারে না, হারিয়ে যেতে শুরু করে দেবদারু বৃক্ষের ‘দীর্ঘ রহস্য’। পরিবর্তে শুধু শোনা যেতে থাকে নিবিড় অন্ধকারে ডিনামাইট বিস্ফোরণের ভীষণ, জলদগম্ভীর শব্দ। অবসন্ন শরীরে বিনিদ্র রাত্রিযাপন করে খনিশ্রমিকরা। বিনিদ্র রাত্রে পাহাড়-জঙ্গল নদনদীর উপর থেকে নিজেদের চিরাচরিত অধিকার হারানোর দুশ্চিন্তা, ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে আশঙ্কা তাদের জীবনে দুঃস্বপ্নের আকারে ফিরে ফিরে আসে। কবি প্রতিবাদহীন এই মূর্তি সদৃশ মানুষগুলির দুঃস্বপ্নকে ক্লান্ত বলেছেন।

৬. ‘অনেক দূরে আছে মেঘ-মদির মহুয়ার দেশ,’- কবির দেখা মহুয়ার দেশটি কেমন তা কবিতা অবলম্বনে বর্ণনা করো।

উত্তরঃ কবির কাম্য-দূষণমুক্ত পরিবেশ: ‘কয়েকটি কবিতা’কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতাটি কবি সমর সেনের অধিকাংশ কবিতার মেজাজ থেকে অনেকটা আলাদা। নগরজীবনের একঘেয়েমি ও ক্লান্তি থেকে মুক্তি পেতে কবির মন যে মহুয়ার দেশে আশ্রয় খুঁজেছে ,সে দেশ অনাবিল পরিচ্ছন্নতার স্বর্গরাজ্য। অনেক দূরের সেই ‘মেঘ-মদির’ মহুয়ার দেশ কবির কাছে চির আকর্ষণীয়। সেখানে ‘ দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য ‘ ‘পথের দুধারে ছায়া ফেলে’ ‘সমস্তক্ষণ’। সেখানে ‘দূর সমুদ্রের দীর্ঘশ্বাস’ ‘রাত্রের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে’। দূষণমুক্ত প্রকৃতির এই স্নেহময় আবেশ ক্লান্ত ও অবসন্ন শহুরে কবির কাছে তাই কাঙ্ক্ষিত হয়ে দাঁড়ায়।

প্রাকৃতিলগ্ন জীবন: কালের পরিবর্তনের সঙ্গে কবির সেই পরমাকাঙ্ক্ষিত মহুয়ার দেশের ওপর নেমে আসে ধনতন্ত্রের থাবা। প্রগতির হিংস্রতা থেকে রক্ষা পায় না উদার,উন্মুক্ত প্রকৃতি। মহুয়ার দেশেও ‘নিবিড় অন্ধকারে ‘ শোনা যায় বেমানান কয়লা খনির ‘গভীর ,বিশাল শব্দ’। নাগরিক জীবনের দূষিত ক্লান্তির মতোই কবির কাছে সে ‘শব্দ’ অসহ্য ঠেকে। জীবনযন্ত্রণা ,জীবনযাপনের ক্লান্তি এসমস্ত কিছুই আসলে কোনো নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমায় আবদ্ধ নয়। তাই মহুয়ার দেশের ‘শিশির-ভেজা সবুজ সকালে’-ও মানুষের শরীরে থেকে ‘ধুলোর কলঙ্ক’। মহুয়ার দেশকে খুব কাছ থেকে দেখে কবি উপলব্ধি করেন সেখানকার প্রাকৃতিলগ্ন জীবনে ক্লান্তহীন একমাত্রিক পরিতৃপ্তি ছাড়াও রয়েছে পুঁজিবাদী সভ্যতার আগ্রাসন এবং মানবিক সত্তার অবক্ষয়। প্রগতির কাছে প্রকৃতির এই অসহায় আত্মসমর্পন প্রতিষ্ঠতা করে মহুয়ার দেশে বেঁচে থাকতে পারে কবির স্বপ্নে আর সত্তায়।

৭. “গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ” –কার লেখা কোন্ কবিতার অংশ এটি? উদ্ধৃতিটির প্রসঙ্গ উল্লেখ পূর্বক নিহিতার্থ লেখো।

উত্তরঃ উদ্ধৃত চরণটি আধুনিক কবি সমর সেনের ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতার প্রারম্ভিক অংশ। কবি সমাজ সভ্যতার দুটি রূপের অন্তরালে লুক্কায়িত প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটনে প্রয়াসী হয়েছেন বারেবারে। একদিকে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার অন্তরালে মানুষের উপরে নেমে আসা অত্যাচার ও গ্লানি ভয়ংকরতম রূপ লাভ করে, অপরদিকে সমাজের বৃহত্তর অংশই বঞ্ছনা ও পীড়নের শিকার। এরূপ দ্বন্দ্বসংঘাতের ঐতিহাসিক সত্য নিরূপণের পাশাপাশি কবি মধ্যবিত্ত সমাজজীবনের কদর্য রূপটি প্রত্যক্ষ করে তা থেকে উত্তরণের জন্য এবং শান্তি লাভের আশায় উদার প্রকৃতির অপরূপ লাবণ্যমাখা মহুয়ার দেশ সাঁওতাল পরগনায় উপনীত হয়েছেন। একদিকে প্রকৃতির উদ্দামতা আর সেখানের কর্মমুখর মানুষের শ্রমক্লান্ত জীবন কবিকে আকৃষ্ট করে, প্রাণিত করে। শাল-মহুয়া-দেবদারুসহ অগণিত বৃক্ষসমূহের সমারোহে সেখানকার বনভূমি লীলাচল সৌন্দর্যের আধার। কবি সেখানে দাঁড়িয়ে দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণে সূর্য অস্তমিত হওয়ার মুহূর্তে সমুদ্রের ঢেউয়ের উপর আলোর যে লীলাখেলা চলছিল তা উপভোগ করেন। অস্তাচলগামী অলস সূর্য গলে যাওয়া সোনার মতো উজ্জ্বলতর আলোকস্তম্ভ তৈরি করে প্রকৃতির বুকে। শুধু তাই নয়, সূর্যের আলোর সোনালি আভা দিগন্তকে উদ্ভাসিত করে তোলে। দিনান্তের সেই শেষ রশ্মিপাত সাগরের বুকের ঢেউয়ে যেন আগুন লাগায়। বস্তুবাদী কবির মনে দিনের শেষলগ্নের সূর্যের আভা ম্লান হয়ে দেখা দেয়নি, বরং প্রভাতের আগমনি বার্তা বয়ে নতুন দিনের স্বপ্ন চয়নে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠতে থাকে।

জীবনের চলমান ধারায় কর্মমুখর জনতার অক্লান্ত শ্রমদান সভ্যতার বুকে নতুন আলোর রোশনাইয়ের বিচ্ছুরণ ঘটায়। কবির দৃষ্টিপথে কর্মমুখর জনতার কর্মধারা উজ্জ্বল আলোকের মতো দিগন্তজোড়া বিস্তৃতিতে ধরা দেয়। সর্বোপরি, প্রেম ও নাগরিকতার ক্লান্ত নৈরাশ্যজনক অনুভূতি থেকে এক চূড়ান্ত আশাবাদ ঘোষিত হয়েছে সোনার উজ্জ্বলতর চাকচিক্যে। বর্তমান যতই দুর্বিষহ ও যন্ত্রণাকাতর হোক এবং ভবিষ্যৎ যতই অনিশ্চয়তায় ভরা থাক তবু নতুন আলোয় নতুন দিনের স্বপ্ন রচনা করেছেন কবি।

৮. ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস ঘুরে ফিরে ঘরে আসে / শীতের দুঃস্বপ্নের মতো।’- প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

উত্তরঃ সৌন্দর্যের ক্ষণস্থায়িত্ব: আলোচ্য উক্তিটি নাগরিক কবি সমর সেনের ‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি আলোচ্য কবিতায় প্রথম পর্বে শহর সভ্যতার দূষণপূর্ণ পরিবেশে অস্তগামী সূর্যের স্বর্ণালী আলোয় রচিত বঙ্গপ্রকৃতির সন্ধ্যাকালীন সৌন্দর্যকে ক্ষণস্থায়ী বোঝাতে আলোচ্য উক্তিটি অবতারণা করেছেন।

কবির মুক্তি কামনা: কবি আলোচ্য কবিতায় দেখিয়েছেন অস্তগামী সূর্যের স্বর্ণালী আলোর তির্যক আভায় যখন জলতলে নির্মিত হয় ‘উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ’, আর সেই আলোয় যখন জলের উপর ভাসমান ফেনায় লাগিয়ে দে আগুন রং ; তখন কবির মন মুগ্ধ হয়ে যায় শহরের এই সন্ধ্যার স্নিগ্ধ পরিবেশে। কিন্তু এই স্নিগ্ধতা বেশিক্ষন স্থায়ী হতে পারে না। প্রকৃতির এই অনাবিল সৌন্দর্য নিমেষেই ঢাকা পরে যায় প্রগতির বিলাসিতার কারণে তথা দূষণে। তাই ‘ধোঁয়ার বঙ্কিম নিঃশ্বাস’ কবির চেতনাকে চারপাশ থেকে চেপে ধরে , কবির মুগ্ধ দৃষ্টিকে অনাবিল করে দেয়। শিল্প-সভ্যতার দাপটে আপাত নিরীহ শীতের ঘুমের মতো নাগরিক সন্ধ্যার সৌন্দর্যে মুগ্ধ কবিমনে হানা দেয় দূষণ ,দুঃস্বপ্নের মতো। নাগরিক বহমান জীবন থেকে লড়াই করতে করতে যে শান্তির খোঁজ কবিমন করেছিল , তা সম্পূর্ণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কবির কাব্য ক্যানভাসে জমা হয় বিষাদ আল্পনা। শহরের অনিয়ন্ত্রিত দূষণ কবিকে মুক্তিকামী করে তোলে, কবির স্বপ্নের স্বচ্ছ শহর ঢাকা পড়ে যায় দুঃস্বপ্নের ধোঁয়াশায়।

আরও পড়ুনঃ

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪

Leave a Reply