উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর
‘নানা রঙের দিন’ (নাটক) অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন (Essay Type) উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নানা রঙের দিন’ নাটক থেকে বহুবিকল্পীয়, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।
‘নানা রঙের দিন’ (নাটক) অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | ‘নানা রঙের দিন’ (নাটক) অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. ‘অদৃষ্ট তো মানেন আপনি’- সংলাপটির বক্তা কে ? (২০২০)
(ক) অমর গাঙ্গুলি
(খ) রজনী চাটুজ্জে
(গ) কালীনাথ সেন
(ঘ) শম্ভু মিত্র
উত্তরঃ (গ) কালীনাথ সেন
২. `A horse ! Ahorse ! My kingdom for a horse’- উদ্ধৃত সংলাপটি কোন নাটক থেকে গৃহীত হয়েছে ? (২০২০)
(ক) ম্যাকবেথ
(খ) ওথেলো
(গ) রিচার্ড দ্য থার্ড
(ঘ) জুলিয়াস সিজার
উত্তরঃ (গ) রিচার্ড দ্য থার্ড
৩. ‘তোমার প্রেমে আমাকে আবৃত করে দাও।’- কথাটি বলেছে- (২০২০)
(ক) সুজা
(খ) দারা
(গ) মোরাদ
(ঘ) পিয়ারা বানু।
উত্তরঃ (ক) সুজা
৪. “শাহজাদি সম্রাটনন্দিনী মৃত্যু ভয় দেখাও কাহারে ”- কোন্ নাটকের অংশ ? (২০১৯)
(ক) সাজাহান
(খ) মেবার পতন
(গ) রিজিয়া
(ঘ) চন্দ্রগুপ্ত।
উত্তরঃ (গ) রিজিয়া
৫. “উঃ কী শীত -সব আছে শুধু..”- কী নেই ? (২০১৯)
(ক) মানুষ নেই
(খ) আলো নেই
(গ) লোকজন নেই
(ঘ) শীতের পোষাক নেই।
উত্তরঃ (ক) মানুষ নেই
৬. রামব্রীজকে রজনীকান্তবাবু কত টাকা বকশিশ দিয়েছিলেন ? (২০১৯)
(ক) এক টাকা
(খ) তিন টাকা
(গ) চার টাকা
(ঘ) দুই টাকা।
উত্তরঃ (খ) তিন টাকা
৭. রজনীকান্ত ‘রিজিয়া’ নাটকের কোন্ চরিত্রের সংলাপ বলেছেন ? (২০১৮)
(ক) বক্তিয়ার
(খ) মহম্মদ
(গ) সাজাহান
(ঘ) মিরজুমলা
উত্তরঃ (ক) বক্তিয়ার
৮. “সেই টাকায় তিনি নিজেই আজকে মদ গিলে কোথায় পড়ে আছেন।” তিনি হলেন- (২০১৮)
(ক) রজনীকান্ত চাটুজ্জে
(খ) রামব্রীজ
(গ) কালীনাথ সেন
(ঘ) রজনীকান্তের বন্ধু
উত্তরঃ (খ) রামব্রীজ
৯. “তাও আর বছর কয়েক পরে মানাবে না আমাকে”- কোন চরিত্রের ভূমিকায় মানাবে না? (২০১৮)
(ক) ঔরঙ্গজীব
(খ) দিলদার
(গ) সাজাহান
(ঘ) মোরাদ
উত্তরঃ (খ) দিলদার
১০. রজনীকান্তবাবুর মতে অভিনেতা স্টেজ থেকে নামলে- (২০১৭)
(ক) সমাজশিক্ষক
(খ) মস্ত বোকা
(গ) খুবই জ্ঞানী
(ঘ) অস্পৃশ্য ভাঁড়।
উত্তরঃ (ঘ) অস্পৃশ্য ভাঁড়।
১১. ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের শেষ দিকে রজনীকান্ত কোন ইংরেজি নাটকের সংলাপ উচ্চারণ করেছেন? (২০১৭)
(ক) ম্যাকবেথ
(খ) ওথেলো
(গ) জুলিয়াস সিজার
(ঘ) মার্চেন্ট অফ ভেনিস।
উত্তরঃ (খ) ওথেলো
১২. “রাজনীতি বড়ো কূট।”- কথাটি বলেছিলেন- (২০১৭)
(ক) রজনী
(খ) মহম্মদ
(গ) কালীনাথ
(ঘ) কিং লিয়র।
উত্তরঃ (ক) রজনী
১৩. “আর একদিন তাকে দেখে মনে হয়েছিল”- (২০১৬)
(ক) মোমের আলোর চেয়েও পবিত্র
(খ) চাঁদের আলোর চেয়েও স্নিগ্ধ
(গ) ভোরের আলোর চেয়েও সুন্দর
(ঘ) গোধূলির আলোর চেয়েও মায়ারী।
উত্তরঃ (গ) ভোরের আলোর চেয়েও সুন্দর
১৪. “এ কথাটা মালিকের কানে তুলবেন না চাটুজ্জেমশাই”- কোন কথাটা ? (২০১৬)
(ক) গ্রিণরুমে ঘুমানোর কথা
(খ) ফাঁকা মঞ্চে অভিনয়ের কথা
(গ) চাটুজ্জেমশাইয়ের সঙ্গে বক্তার সাক্ষাৎ হওয়ার কথা
(ঘ) চাটুজ্জেমশাইকে বাড়ি পৌঁছে দিতে চাওয়ার কথা।
উত্তরঃ (ক) গ্রিণরুমে ঘুমানোর কথা
১৫. রজনীকান্ত কোন ঐতিহাসিক চরিত্রের পোশাকে ফাঁকা মঞ্চে প্রবেশ করেন ? (২০১৬)
(ক) ঔরঙ্গজীবের
(খ) দিলদারের
(গ) মহম্মদের
(ঘ) সাজাহানের।
উত্তরঃ (খ) দিলদারের
১৬. “যারা বলে ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’- তারা সব”- (২০১৫)
(ক) ভেঁড়া
(খ) গাধা
(গ) বোকা
(ঘ) চালাক।
উত্তরঃ (খ) গাধা
১৭. ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটিতে চরিত্র আছে- (২০১৫)
(ক) একটি
(খ) দুটি
(গ) তিনটি
(ঘ) পাঁচটি।
উত্তরঃ (খ) দুটি
১৮. রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় থিয়েটারে আসার আগে চাকরি করতেন- (২০১৫)
(ক) পুলিশে
(খ) ডাক বিভাগে
(গ) জাহাজে
(ঘ) কলেজে।
উত্তরঃ (ক) পুলিশে
১৯. ‘মাইরি, এই না হলে অ্যাকটিং- বক্তা-
(ক) কালীনাথ সেন
(খ) রামব্রীজ
(গ) মহম্মদ
(ঘ) রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়
উত্তরঃ (ঘ) রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়
২০. ‘ক্যায়া হোগা তুম্ সে ? কুছ্ নেহি। বিলকুল কুছ্ নেহি-’ বক্তা-
(ক) রজনী
(খ) রামব্রীজ
(গ) কালীনাথ সেন
(ঘ) রামপ্রসাদ সেন।
উত্তরঃ (ক) রজনী
২১. দিলদারের পোষাক পরিহিত রজনীকন্ত চট্টোপাধ্যায়ের হাতে ছিল-
(ক) মোমবাতি
(খ) ধূপ
(গ) প্রদীপ
(ঘ) জ্বলন্ত মোমবাতি।
উত্তরঃ (ঘ) জ্বলন্ত মোমবাতি।
২২. ‘এ কথাটা মালিকের কানে তুলবেন না চাটুজ্জেমশাই’, কারণ –
(ক) মালিক দুঃখ পাবেন
(খ) মালিক তাঁর মাইনে কমিয়ে দেবেন
(গ) বক্তা একেবারে বেঘোরে মারা পড়বেন (ঘ) মালিক তাঁকে তাড়িয়ে দেবেন।
উত্তরঃ (গ) বক্তা একেবারে বেঘোরে মারা পড়বেন
২৩. ‘গ্রিণরুমে ঘুমোই…’ – কে ঘুমোন ?
(ক) কালীনাথ সেন
(খ) রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়
(গ) রামব্রীজ
(ঘ) রামচরণ।
উত্তরঃ (ক) কালীনাথ সেন
২৪. ‘পুরোনো দিনের কথা ভুলে যান চাটুজ্জ্যেমশাই।’ উক্তিটির বক্তা-
(ক) কালীনাথ
(খ) রজনীকান্ত
(গ) অজিতেশ
(ঘ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।
উত্তরঃ (ক) কালীনাথ
২৫. ‘নানারঙের দিন’ নাটকে কালীনাথ সেন ছিলেন-
(ক) প্রম্পটার
(খ) মেকআপ
(গ) নাটকের প্রধান চরিত্র
(ঘ) বাদ্যকার।
উত্তরঃ (ক) প্রম্পটার
২৬. ‘সাজাহান’ নাটকটির রচয়িতা –
(ক) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
(খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ
(ঘ) গিরিশচন্দ্র ঘোষ।
উত্তরঃ (ক) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
২৭. ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের অভিনেতা রজনীকান্তর বয়স –
(ক) ৫০ বছর
(খ) ৬৮ বছর
(গ) ৬০বছর
(ঘ) ৭০ বছর।
উত্তরঃ (খ) ৬৮ বছর
২৮. রজনীকান্তবাবুর মতে অভিনেতা আসলে –
(ক) সমাজের শিক্ষক
(খ) বোকা
(গ) জ্ঞানী
(ঘ) অস্পৃশ্য ভাঁড়।
উত্তরঃ (ঘ) অস্পৃশ্য ভাঁড়।
২৯. “বড়ো ভয়ঙ্কর এ যোগ। শাহনায়াজ আর যশোবন্ত সিংহ”-কোন নাটকের সংলাপ এটি ?
(ক) মেবার পতন,
(খ) সাজাহান,
(গ) নবান্ন,
(ঘ) ছেড়াতার।
উত্তরঃ (খ) সাজাহান
৩০. ‘আজকের শো’তে আমি সাতটা ক্ল্যাপ পেয়েছি- উক্তিটির বক্তা-
(ক) রজনী
(খ) সজনী
(গ) কালীনাথ
(ঘ) ভোলানাথ।
উত্তরঃ (ক) রজনী
৩১. ‘পিতা আমায় ডেকেছিলেন ?’- নাটকে সংলাপটি কে বলেছিলেন?-
(ক) কালীনাথ
(খ) রামব্রীজ
(গ) রজনী
(ঘ) কাশীনাথ।
উত্তরঃ (ক) কালীনাথ
৩২. ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে কালীনাথ সেনের পরনে ছিল –
(ক) পরিষ্কার ধুতি-পাঞ্জাবি
(খ) ময়লা ধুতি
(গ) পরিষ্কার ধুতি
(ঘ) ময়লা ধুতি-পাঞ্জাবি।
উত্তরঃ (ঘ) ময়লা ধুতি-পাঞ্জাবি।
৩৩. ” নানা রঙ্গের দিন ” নাটকের পটভূমিতে আছে
(ক) পেশাদারী থিয়েটার
(খ) সখের থিয়েটার
(গ) গ্রুপ থিয়েটার
(ঘ) গ্রাম্য থিয়েটার
উত্তরঃ (ক) পেশাদারী থিয়েটার
৩৪. অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ঘুমিয়ে ছিলেন-
(ক) মঞ্চের উপরে
(খ) দোকানের ব্রাঞ্চে
(গ) গ্রীনরুমে
(ঘ) মাটিতে
উত্তরঃ (ক) মঞ্চের উপরে
৩৫. ” বা: বা: বুঢঢা । আছাহি কিয়া ।” এই ” বুঢঢা ” হলেন
(ক) কালিনাথ সেন
(খ) রামব্রিজ
(গ) রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়
(ঘ) শাজাহান
উত্তরঃ (গ) রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়
৩৬. ” নানা রঙের দিন ” নাটকে মাঝরাতে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় যার পোশাক পড়েছিলেন , তিনি হলেন
(ক) দিলদার
(খ) শাজাহান
(গ) ঔরঙ্গজেব
(ঘ) মানসিংহ
উত্তরঃ (ক) দিলদার
৩৭. ” পাবলিক তো আপনাকে ভালোবাসে চাটুজ্জেমশাই ” এই ‘ পাবলিক ‘ হলো
(ক) সাধারন মানুষ
(খ) সংস্কৃতি প্রেমী মানুষ
(গ) নাটকের সাধারন দর্শক
(ঘ) নাটকের সাধারন কলাকুশলীরা
উত্তরঃ (গ) নাটকের সাধারন দর্শক
৩৮. অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয়েছিল
(ক) ব্রাহ্মণ বংশে
(খ) প্রাচীন বংশে
(গ) কায়স্থ বংশে
(ঘ) দরিদ্র পরিবারে
উত্তরঃ (ক) ব্রাহ্মণ বংশে
৩৯. “ভোরের আলোর চেয়েও সুন্দর সে ” রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় কার কথা বলেছেন?
(ক) তার প্রাক্তন প্রেমিকা
(খ) বন্ধু
(গ) তার অভিনীত চরিত্র
(ঘ) রামব্রিজ
উত্তরঃ (ক) তার প্রাক্তন প্রেমিকা
৪০. ” নানা রঙের দিন ” নাটকে মঞ্চের মাঝ খানে উল্টানো ছিল
(ক) একটি টেবিল
(খ) একটি চেয়ার
(গ) একটি বাঞ্চ
(ঘ) একটি টুল
উত্তরঃ (ঘ) একটি টুল
৪১. “মনে মনে কত আশা, কত প্ল্যান” – কারণ, রজনী চাটুজ্জে তখন–
(ক) বিয়ে করেছেন
(খ) অঢেল পয়সা করেছেন
(গ) পুলিশের চাকরি করছেন
(ঘ) এক তরুণ যুবক
উত্তরঃ (ঘ) এক তরুণ যুবক।
অতিসংক্ষিপ্ত (SAQ) প্রশ্নোত্তর | ‘নানা রঙের দিন’ (নাটক) অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. “অভিনেতা মানে একটা চাকর—একটা জোকার, একটা ক্লাউন।”—বক্তার এমন কথা মনে হয়েছে কেন ?
উত্তরঃ বক্তা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় স্বনামধন্য অভিনেতা। তাঁর অভিনয় দক্ষতা দেখে সকলেই মুগ্ধ। কিন্তু ‘নাটকওয়ালা’ অপবাদে একটি মেয়ে তাঁকে ভালোবেসেও বিয়ে করেনি। এই জন্যই বক্তার এমন কথা মনে হয়েছে।
২. ’নানা রঙের দিন’ নাটকটি কোন্ বিদেশি নাটকের অনুকরণে রচিত ?
উত্তরঃ ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি আন্তন চেকভের ‘দ্য সোয়ান সং’ (The Sowan Song) নাটকের অনুকরণে রচিত।
৩. “ভোরের আলোর চেয়েও সুন্দর সে।”—সে বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে ?
উত্তরঃ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে যে মেয়েটি তাঁকে ভালোবেসেছিল, এখানে তার কথাই বলা হয়েছে।
৪. ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রারম্ভে মঞ্চসজ্জার কীরকম বর্ণনা দেওয়া আছে ?
উত্তরঃ পেশাদারি থিয়েটারের একটি ফাঁকা মঞ্চ। মঞ্চের পেছনে রাত্রে অভিনীত নাটকের দৃশ্যপট, জিনিসপত্র, যন্ত্রপাতি। মঞ্চের মাঝখানে একটি টুল ওলটানো, চারিদিকে অন্ধকার। দিলদারের পোষাক পরে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় প্রবেশ করেন। তার হাতে একটা মোমবাতি।
৫. “বকশিশও দিলুম ওকে।”— কে, কাকে, কত বকশিশ দিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় থিয়েটার হলের কর্মী রামব্রীজকে তিন টাকা বকশিস দিয়েছিলেন।
৬. “সব মিলিয়ে যেন একটা শ্মশান।”— কোন্ স্থানকে শ্মশান বলে মনে হয়েছে?
উত্তরঃ অভিনয় শেষে দর্শকশূন্য থিয়েটার হলকে শ্মশান বলে মনে হয়েছে।
৭. “যা করেছি ধর্মের জন্য”— ‘সাজাহান’ নাটকে এই সংলাপটি কার ?
উত্তরঃ ‘সাজাহান’ নাটকে এই সংলাপটি ঔরঙ্গজেবের।
৮. “একটুও ভালো লাগে না বাড়িতে!”– বক্তার কেন বাড়িতে ভালো লাগে না।
উত্তরঃ বক্তা রজনীকান্তের বাড়িতে নিজের বলতে কেউ নেই। তিনি এই পৃথিবীতে একা। তাই বাড়িতে তাঁর ভালো লাগে না।
৯. “এসব বাজে কথা আমি বিশ্বাস করি না।”— বক্তা কোন কথাকে বাজে কথা বলেছেন ?
উত্তরঃ দর্শকদের ফাঁকা হাততালি, খবরের কাগজে প্রশংসা, মেডেলে, সার্টিফিকেট আর নাট্যভিনয় একটি পবিত্রশিল্পের মতো মন্তব্যকে বক্তা বাজে কথা বলেছেন।
১০. “এই তো জীবনের সত্য কালীনাথ” – সত্যটি কী ?
উত্তরঃ প্রতিভা অমর। বয়সের ভারে মানুষ ভারাক্রান্ত হলেও প্রতিভার বার্ধক্য তুচ্ছ—এটাই জীবনের সত্য।
১১. “হঠাৎ যেন আমার চোখ খুলে গেল।”— কীভাবে বক্তার চোখ খুলে গেল ?
উত্তরঃ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখে একটি মেয়ে তাঁকে ভালোবেসেছিল। কিন্তু বড়ো লোকের সুন্দরী সেই মেয়েটি থিয়েটারের লোকের সঙ্গে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। এই ঘটনায় অভিনেতা সম্পর্কে মানুষের মনোভাবের কথা জানতে পেরে রজনীকান্তের চোখ খুলে যায়।
১২. “যাবার আগে মজলিশি গল্পের আস্তাকুঁড়ে নির্বাসন দিয়ে গেল আমাকে।”— কার যাবার কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ এখানে খ্যাতিমান অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিভা চলে যাওয়াকেই নির্দেশ করা হয়েছে।
১৩. “আমাকে কেউ চায় না কালীনাথ।”– বক্তা কেন একথা বলেছেন ?
উত্তরঃ বৃদ্ধ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়ে উপলব্ধি করেছেন জীবনে হিসাবের খাতায় জমার দিকে পড়ে আছে শূন্য। মানুষ এখন আর তাঁকে আগের মতো কদর করে না। তাই নিজের পরিণামের কথা ভেবে তিনি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
১৪. “তোমার চোখে জল, কেন বলতো ?”— শ্রোতার চোখে জল আসার কারণ কী ?
উত্তরঃ বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের ট্র্যাজিক জীবনের কথা শুনে শ্রোতা কালীনাথের চোখে জল এসেছিল।
১৫. “রাজনীতি বড়ো কূট।”— এ কথা কে বলেছিলেন ?
উত্তরঃ ‘সাজাহান’ নাটকে ঔরঙ্গজেবের উক্তি। তবে নানা রঙের দিন’ নাটকে উক্তিটি রজনীকান্ত চাটুজ্জের গলায় শোনা গেছে।
১৬. “সম্রাট নন্দিনী! মৃত্যুভয় দেখাও কাহারে ?”— কোন্ নাটকে, কার সংলাপ ?
উত্তরঃ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘রিজিয়া’ নাটকে বক্তিয়ারের সংলাপ।
১৭. “কাম অন, কুইক! মহম্মদের ক্যাচটা দাও তো।”– কে মহম্মদের ক্যাচ দিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ প্রম্পটার কালীনাথ মহম্মদের ক্যাচ দিয়েছিলেন।
১৮. “চাকরিটি ছেড়ে দিলাম।”– বক্তা কীসের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ বক্তা (রজনীকান্ত) পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন।
১৯. “কোনো জবাব আছে ?”— কোন্ কথার জবাব ?
উত্তরঃ ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় নিজেই নিজেকে বলেছেন— ‘রজনীবাবু অনেক তো বয়েস হল, এবার মদ খাওয়াটা ছাড়ুন। এই জবাবের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
২০. “বুকটা ভীষণ কাঁপছে”—কার বুক, কেন কাপছিল ?
উত্তরঃ নানা রঙের দিন’ নাটকে অতিরিক্ত মদ্যপানে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন। তাই তাঁর বুক কাপছিল।
২১. ’নানা রঙের দিন’ নাটকে প্রম্পটার কালীনাথের পোষাক কেমন ছিল ?
উত্তরঃ কালীনাথের পরনে ছিল ময়লা পাজামা আর গায়ে কালো চাদর
২২. “মরে যাব তবু ভুলব না।”– বক্তা কী ভুলবেন না ?
উত্তরঃ যে মেয়েটি অভিনয় দেখে রজনীবাবুকে ভালোবেসেছিল, বক্তা তাঁর কথা ভুলবেন না বলে জানিয়েছেন।
২৩. “আমি ওকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।”— বক্তা কাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন ?
উত্তরঃ যে মেয়েটি অভিনয় দেখে রজনীবাবুকে ভালোবেসেছিল, বক্তা তাঁকেই স্মৃতির সরণিতে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন।
২৪. “সেই রাত্রেই জীবনে প্রথম মোক্ষম বুঝলুম…”– বক্তা কী বুঝেছিলেন ?
উত্তরঃ ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় বুঝেছিলেন যে, ‘নাট্যাভিনয় একটি পবিত্র শিল্প’—এই কথা যারা বলে তারা সব গাধা, তারা সব মিথ্যা কথা বলে।
২৫. “মরা হাতি সোয়া লাখ।”—কার সম্পর্কে, কোন্ প্রসঙ্গে এমন প্রবাদ প্রয়োগ করা হয়েছে ?
উত্তরঃ বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর অভিনয়ে দর্শকদের প্রতিক্রিয়ার কথা বলতে গিয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
২৬. “দু-বার তো স্পষ্ট শুনেছি।”— বক্তা কী শুনেছিলেন ?
উত্তরঃ বক্তা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় দিলদার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের সাতটা হাততালি পেয়েছিলেন। তার মধ্যে দুবার তিনি সেই হাততালি শুনতে পেয়েছিলেন।
২৭. “আপনার পায়ে ধরছি।”—বক্তা কেন, কার পায়ে ধরেছিল ?
উত্তরঃ বক্তা কালীনাথের শোয়ার জায়গা নেই বলে রাত্রিতে গ্রিনরুমে ঘুমায়। এ কথা মালিকের কানে না তোলার জন্য কালীনাথ রজনীবাবুর পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিল।
২৮. “আমারও আর কিছু ভালো লাগত না”– বক্তার কিছু ভালো না লাগার কারণ কী ?
উত্তরঃ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কিছু ভালো না লাগার কারণ হল যে, নাট্যশিল্পকে তিনি জীবনের মূল স্তম্ভ হিসেবে আঁকড়ে ধরেছেন, সেই নাট্যশিল্পের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা মেকি বলে অনুভূত হওয়া।
২৯. “তারপর সেসব দিনও যেন কবে– কেমন করে ফুরিয়ে গেল,”— এখানে কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তরঃ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে অভিনয় জীবনে পদার্পণের পর প্রভূত খ্যাতি ও প্রতিপত্তি অর্জন করেন। অভিনয় জীবনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে যখন রজনীকান্ত এই মেকি মর্যাদা লাভ করেন, সেই সময়ের কথা, সেই দিনগুলির কথাই এখানে বলা হয়েছে।
৩০. রজনীকান্ত যে মেয়েটিকে ভালোবেসেছিলেন, সে কোন্ শর্তে তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল ?
উত্তরঃ থিয়েটার ছেড়ে দেওয়ার শর্তে সে তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল।
প্রশ্নঃ “দিলুম, তোকে বকশিশ দিলুম”— কে, কাকে বকশিশ দিয়েছিল ?
উত্তরঃ গ্রিনরুমে ঘুমন্ত মদ্যপ রজনীকান্ত, রামব্রীজকে বকশিশ দিয়েছিল।
প্রশ্নঃ “মাতালের এই হচ্ছে বিপদ।”– মাতালের বিপদ কী ?
উত্তরঃ মাতালের বিপদ হচ্ছে মদ ছাড়াতে চাইলেও ছাড়াতে পারে না।
প্রশ্নঃ “রজনীবাবু ভয়ে চিৎকার করে পিছিয়ে যান”– কাকে কী অবস্থায় দেখে রজনীবাবু ভয় পেয়েছিলেন ?
উত্তরঃ কালীনাথ সেন কে ময়লা পাজামা, গায়ে কালো চাদর ও এলোমেলো চুলে দেখে রাজনীবাবু ভয় পেয়েছিলেন।
প্রশ্নঃ “আপনি বামুন মানুষ, মিছে কথা বলব না।”– বক্তা কোন সত্যি কথাটি বলেছিল ?
উত্তরঃ বক্তা কালীনাথ সেনের সত্য কথাটি হল যে, তিনি রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রিনরুমে ঘুমোন।
প্রশ্নঃ “আর একদিন তাকে দেখে মনে হয়েছিল”– কাকে দেখে কী মনে হয়েছিল ?
উত্তরঃ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমিকাকে দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, সে ভোরের আলোর চেয়েও সুন্দর।
প্রশ্নঃ “সেই রাত্রেই জীবনে প্রথম মোক্ষম বুঝলুম”— বক্তা কী বুঝিয়েছিলেন ?
উত্তরঃ থিয়েটারে অভিনয় দেখে প্রেমে পড়া মেয়েটি বিয়ের সময় রজনীকান্তকে অভিনয় ছেড়ে দিতে বললে সেই রাতেই রজনীকান্ত বুঝেছিলেন যে, যারা নাট্যাভিনয়কে পবিত্র শিল্প বলে তারা সব গাধা।
প্রশ্নঃ “খুব খারাপ হচ্ছে না, কী বলো ?”— কী খারাপ হচ্ছে না?
উত্তরঃ দ্বিজেন্দ্রলালের ‘রিজিয়া’ নাটকের একটি সংলাপ বলেছেন রজনীবাবু, এখানে সেই সংলাপটি খারাপ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে রজনীকান্ত, ঔরঙ্গজেব ও মহম্মদের যে দৃশ্যের কথা বলেছিলেন সেটি কোন নাটকের অংশ ?
উত্তরঃ ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে রজনীকান্ত, ঔরঙ্গজেব ও মহম্মদের যে দৃশ্যের কথা বলেছিলেন সেটি ‘শাজাহান’ নাটকের অংশ।
প্রশ্নঃ ‘আপনি বামুন মানুষ মিছে কথা বলবো না’– বক্তা কোন সত্যি কথাটি বলেছিল ?
উত্তরঃ ‘নানা রঙের দিন ‘ নাটকে বক্তা কালীনাথ বামুন মানুষ রজনীকে বলেছিলো যে, সে রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রিনরুমে ঘুমায়।
প্রশ্নঃ ‘আর এরকম করে জীবন শুরু করা গেল’– সেই জীবনটা কেমন ছিল ?
উত্তরঃ বক্তা রজনীকান্তের শুরু হওয়া নতুন জীবনটা ছিল অত্যন্ত রঙ্গিন। অভিনেতা রজনীর নাম-ডাক ছিল অনেক। তিনি ছিলেন খ্যাতি তো সাফল্যের শীর্ষ পর্যায়ে।
প্রশ্নঃ ‘তাতে বয়সটা ঠিক বোঝা যায় না’- কীসে ‘বয়স’ বোঝা যায় না ?
উত্তরঃ রাজনীকান্তবাবু ছোকরাদের মতো ঢং করতে পারেন, লম্বা চওড়া চেহারা তার। তাছাড়া লম্বা লম্বা চুলে প্রতিদিন হাফ শিশি করে কলপ লাগিয়ে এমন ইয়ার্কি মারেন যে, তার বয়সটা ঠিক বোঝা যায় না।
প্রশ্নঃ ‘এখানেই গল্প শেষ।’- গল্পটির বিষয় কী ছিল ?
উত্তরঃ প্রশ্নে প্রদত্ত উক্তিটিতে ‘গল্প’ বলতে বোঝানো হয়েছে মানুষের জীবনকে। জন্মের পর থেকে স্বাভিক জীবনক্রম অতিবাহিত করতে করতে মানুষ ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। শৈশব, যৌবন, পৌঢ়ত্বের পথ পেরিয়ে আসে বার্ধক্য। তারপরই সব গল্প শেষ।
প্রশ্নঃ ‘পঁয়তাল্লিশ বছর থিয়েটারের জীবনে এই প্রথম মাঝরাতে একা ‘- মাঝরাতে একা দাঁড়িয়ে থাকার কারণ কী ?
উত্তরঃ পঁয়তাল্লিশ বছর থিয়েটার জীবনের সমাপ্তির পর হল খালি হয়ে যাওয়ায় রজনীবাবু একা মাঝরাতে মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ওইদিন মদ খেয়ে গ্রিনরুমেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
প্রশ্নঃ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যের জীবনে আসা মেয়েটি কেমন ছিল ?
উত্তরঃ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়ের জীবনে আসা মেয়েটি ছিল বেশ লম্বা, ফর্সা, সুন্দর, ছিপছিপে গড়নের। তার বয়স ছিল উঠতি এবং তার মনটাও ছিল দারুন ভালো। তাতে কোনো ঘোরপ্যাচঁ ছিল না।
প্রশ্নঃ ‘একদিন তাকে দেখে মনে হয়েছিল ‘- কী মনে হয়েছিল ?
উত্তরঃ একদিন মেয়েটিকে দেখে অভিনেতা রজনীকান্তের মনে হয়েছিল যে, ভোরের আলোর চেয়েও মেয়েটি সুন্দর।
প্রশ্নঃ ‘মরে যাব তবু ভুলব না’- বক্তা কী ভুলবেন না ?
উত্তরঃ বক্তা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায় তার দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটির অদ্ভূত চাহনি কখনোই ভুলবেন না।
প্রশ্নঃ ‘খুব খারাপ হচ্ছে না, কী বলো ?’– কী খারাপ হচ্ছে না ?
উত্তরঃ দ্বিজেন্দ্রলালের ‘রিজিয়া’ নাটকে বক্তিয়ারের মুখের সংলাপটি আওড়েছেন রজনী চাটুজ্জে মহাশয় , এখানে সেই সংলাপটি খারাপ না হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ ‘আমি বলছি রজনী চাটুজ্জে মরবে না’– কেন মরবে না ?
উত্তরঃ শিল্পীর দৈহিক মৃত্যু ঘটলেও প্রতিভার কোন দিন মৃত্যু হয় না সেই কারণেই কালীনাথ বলেছেন যে, রজনী চাটুজ্জে মরবে না।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর (Essay Type) | ‘নানা রঙের দিন’ (নাটক) অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer
১. “অভিনেতা মানে একটা চাকর-একটা জোকার, ক্লাউন। লোকেরা সারাদিন ঘেটে ঘুটে এলে তাদের আনন্দ দেওয়াই হল নাটকওয়ালাদের একমাত্র কর্তব্য”– বক্তার কথার তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তরঃ
প্রসঙ্গঃ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায় অভিনয়ের শেষে মদ্যপান অবস্থায় ফাঁকা মঞ্চে নিজের আত্মসমালোচনা করতে গিয়ে আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন। গ্রিনরুমে ঘুমিয়ে পড়া রজনীকান্তকে একা ফেলে বাড়ি চলে যান। হটাৎ জেগে উঠে দিলদারের পোশাক পড়া রজনী ফাঁকা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভয় অনুভব করেন। অবশেষে কালীনাথের উপস্থিতিতে নিজের আত্মসমালোচনায় মগ্ন হন।
তাৎপর্যঃ মঞ্চে রজনী কালীনাথের উপস্থিতিতে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার জন্য স্মৃতি রোমন্দন করেন। তার যৌবনের উজ্জ্বল জীবন, নাটকের খ্যাতি, প্রেমিকার স্বার্থপরতা সবকিছুই মনে পরে। নিজেকে আবিষ্কার করেছেন একজন প্রতিভাবান শিল্পী হিসেবে। কালীনাথকে এবিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি তাকে উৎসাহ দেন। ফলে একে একে অতীতের হতাশা থেকে মুক্তি ঘটতে থাকে তার। কিন্তু বিগত প্রেমজীবনের প্রসঙ্গ এলে থমকে যান রজনীকান্ত। যে ভালোবাসার জন্য সুনিশ্চিত সুখের জীবনকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন, তার জন্যই আজ তিনি সম্পূর্ণ একা। নাটকের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থাকার জন্যই তিনি প্রেমিকাকে ত্যাগ করেছিলেন। তবে সেই নাটকের ভালোবাসার পরিণয় তাকে সম্পূর্ণ মূল্যহীন নিঃসঙ্গ উপহার দিয়েছে।
ব্যাখ্যাঃ জীবনের শেষপর্যায়ে পৌঁছে রজনীকান্ত উপলব্ধি করেছেন নাটকওয়ালা একজন চাকর, জোকার ও ক্লাউন ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ সমাজের মানুষেরা সারাদিনের ক্লান্তিমোচনের জন্যই নাটক দেখতে আসে। সেই সব মানুষদের মনোরঞ্জন করেই হল নেতাকওয়ালাদের কর্তব্য। মঞ্চ থেকে নামলেই সেই সকল মানুষের সমাজে আর কোনো মূল্য থাকে না। তাই রজনী কালীনাথকে জানিয়েছেন- ‘থিয়েটারের পরিচয়ে কেউ তার মেয়ে কিংবা বোনের সঙ্গে বিয়ে দেবে কারো ? কক্ষনো না।’ অর্থাৎ নাটকের শিল্পীদের সমাজের মানুষ গ্রহণ করতে চায় না।
মন্তব্যঃ হৃদয়ে শত দুঃখ, কষ্ট থাকা সত্ত্বেও জোকার বা ক্লাউনদের মঞ্চে হাসতে হয় এবং লোককে হাসাতে হয়। নিজের কষ্ট বা দুঃখকে তারা লুকিয়ে রাখে অভিনয় করার সময়। তেমনি রজনীকান্ত নিজের নিঃসঙ্গতা একাত্বিত্ত ও হতাশাকে লুকিয়ে রেখে হাসির নাটক করতে বাধ্য হন। তাই তিনি নিজেকে চাকর বা জোকারের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
২. ‘নানা রঙের দিন’ নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ চরিত্র বিশ্লেষণঃ অজিতেশ বন্ধ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রধান চরিত্র হল রজনীকান্ত চট্ট্যোপাধ্যায়। সহ অভিনেতা কালীনাথ সেন চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য মূল চরিত্রকে সহযোগিতা করেছেন। সম্পূর্ণ নাটক পর্যালোচনা করলে চরিত্রটির কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট পাওয়া যায়, সেগুলি হল—
ব্যাক্তি রজনীকান্তঃ অভিনেতা রজনী ছিলেন সমাজের একজন দায়িত্ববান নাগরিক। তার কথা তিনি অনুযায়ী রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহন করেন। অভিনয়ের পূর্বে তিনি পুলিশের চাকরি করতেন। অর্থাৎ তিনি ছিলেন ইন্সপেক্টর অফ পুলিশ। সে সময় তার চেহারায় জেল্লা ছিল, শরীরে ছিল শক্তি, তার মনে ছিল সাহস। আজকের চেয়েও চারগুন বেশি খাটার ক্ষমতা ছিল তার। কিন্তু অভিনয়ের জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। অন্যান্য সমাজের তরুনের মতোই তারও জীবনে একটি সুন্দরী বড়োলোকের মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কিন্তু অভিনয়ের জন্যই সেই সম্পর্ক বিবাহ পর্যন্ত গড়ায়নি।
নিঃসঙ্গ ও একাকী চরিত্রঃ অভিনেতা রজনীকান্তের জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে সম্পূর্ণ যন্ত্রনাময় একাকী জীবন অতিবাহিত করেন অতীত গৌরব হারানো অভিনেতা জীবন যন্ত্রণাকে ভুলে থাকার জন্য সস্তা দামের মদ্যপান করেন। শিল্পের জন্যই তিনি গ্রাম, পরিবার, আদর্শ শক্তি, নারী ও প্রেমকে বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘ ৪৫ বছরের অভিনয় জীবন অতিক্রম করে বার্ধক্য বয়সে উপলব্ধি করেন- ‘পৃথিবীতে আমি একা, আমার আপনজন কেউ নেই – বউ নেই ,ছেলে-মেয়ে নেই, সঙ্গী-সাথী নেই,কেউ কোথাও নেই -আমি একদম একা।’ অর্থাৎ তিনি সম্পূর্ণ একা হয়ে যান। শুধুমাত্র শিল্পকে ভালোবেসে। তাই বেদনার্ত কন্ঠে সমস্ত দুঃখ যন্ত্রণাকে প্রকাশ করেছিলেন কালীনাথের সম্মুখে।
দ্বন্দময় চরিত্রঃ রজনীকান্তের চরিত্রের মধ্যে দ্বন্দ লক্ষ করা যায়। একদিকে ছিল শূন্য জীবনের হাহাকার, অন্য দিকে ছিল প্রতিভার দ্বারা বার্ধক্য, রোগ ও মৃত্যুকে জয় করার চেষ্টা। এই দুই সত্যের দ্বিধায় তিনি ঔরঙ্গজেবের মতো গ্লানিময় ও ওথেলোর মতো সর্বস্ব হারানো ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। অবশেষে রজনীকান্ত দদ্বিতীয় সত্যটিকে স্বীকার করে নেন।
উপসংহারঃ জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে রজনীকান্ত বুঝতে পারেন, নাটকওয়ালাদের সামাজিক সম্মান নেই। তাদের কাজ কেবল খদ্দেরদের আনন্দ দেওয়া। মৃত্যু ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না বয়স্ক শিল্পীদের। প্রতিভা দিয়েও এই সত্য বদলানো যায় না। তাই তিনি এই সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে ওথেলো নাটকে উক্তি করেছেন- ‘Life’s but walking shadow ,A poor player/ that struts and frets his hour upon the stage / and then is heard no more.’
৩. ‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্ক নাটক হিসেবে কতখানি সার্থক আলোচনা করো।
উত্তরঃ
ভূমিকাঃ নাটকের বিভিন্ন অংশের মধ্যে একজন অভিনেতার দ্বারা পরিচালিত অভিনয় এক অঙ্ক বিশিষ্ট নাটক নাম পরিচিত। যাকে one act play বা একাঙ্ক নাটকও বলা হয়। এরূপ নাটকে একটিমাত্র দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে নাটক সম্পূর্ন হয়। ফলে নাটকের মঞ্চ সজ্জার জন্য নানান সরঞ্জাম আলোও জ্বালানোর প্রয়োজন হয় না। স্বল্পকালীন মুহূর্তে মুষ্টিমেয় চরিত্রের দ্বারা অভিনয়ের দক্ষতায় নাটকটি ফুটিয়ে তোলা হয়। এরূপ নাটকের গভীরতা লুকিয়ে থাকে চরিত্রের সংলাপের মধ্যে। নাটকীয়তা ছাড়াই শুধুমাত্র সংলাপের মধ্য দিয়েই নাটকটি শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছাবে।
বিষয়বস্তুঃ আলোচ্য ‘নানা রঙের দিন’ নাটকটির সম্পূর্ণ বিষয় সীমাবদ্ধ মাত্র একটি রাতের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই। নাটক শেষে বৃদ্ধ অভিনেতা মঞ্চে দাঁড়িয়ে আত্মগ্লানিতে মগ্ন হয়। এরপর কালীনাথ সেনের সঙ্গে কথাপোকথনের মধ্য দিয়েই নাটকটি শেষ হয়। রজনীকান্ত নিজের দীর্ঘজীবনের অভিজ্ঞাতা থেকে জানিয়েছিলেন যে নাটকওয়ালারা জোকার বা ক্লাউন ছাড়া আর কিছু নয়। নাটকের মুহূর্তগুলিকে প্রথম জীবনে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল রজনীকান্তের। কিন্তু বাস্তবের কঠিন কোষ্ঠী পাথরের আঘাতে স্বপ্নের মায়াজাল ছিন্ন করে রজনীকান্ত বাস্তব ও কঠিনকে অনুর্ভব করেন। তার মূল্য মঞ্চে হ্রাস পেয়েছে, আগের মতো প্রতিভার দ্বারা চরিত্রগুলিকে ফুটিয়ে তোলার দক্ষতা কমে গেছে। অতীতের স্মৃতিচারণ করে রজনীকান্ত নিজের অসম্পূর্ণতাকে ঢাকাতে চেয়েছিলেন। অবশেষে হতাশ হয়ে জীবনের চূড়ান্ত সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নেয়।
একাঙ্ক নাটকঃ উপন্যাস ও ছোট গল্পের মধ্যে যেমন বৈশিষ্টগত তফাৎ রয়েছে তেমনি একাঙ্ক নাটক ও সাধারণ নাটকের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায়। ছোট গল্প যেমন কোনো একটি বিষয় বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়,তেমনি একাঙ্ক নাটক কোনো একটি মুহূর্তকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। আলোচ্য নাটকটি আবর্তিত হয়েছে শুধুমাত্র কয়েক মুহূর্তের কথাপোকথনকে কেন্দ্র করেই। কোনো দীর্ঘ জীবন বা একাধিক ঘটনার ঘনঘটা নেই। তাই ‘নানা রঙের দিন’ এক অঙ্ক বিশিষ্ট একাঙ্ক নাটক।
স্বার্থকতাঃ সমগ্র নাটকটি লক্ষ করলে দেখা যায় যে নাটকের চরিত্রগুলি উপস্থাপনার ক্ষেত্রে একমুখীনতা রয়েছে, চরিত্রগুলির গভীর ও সুষ্ট সংলাপ, রহস্যময় পর্যায় নাটকের চূড়ান্ত climax, ঘটনার বর্ণনা প্রভৃতি নাটকটিকে একাঙ্ক নাটকের মর্যাদা দিয়েছে। সুতরাং বলা যায় ‘নানা রঙের দিন’ একটি স্বার্থক একাঙ্ক নাটক।
৪. “আমার জীবনে পয়তাল্লিশটা বছর”– কার জীবনের কথা বলা হয়েছে ? পয়তাল্লিশ বছরের জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তরঃ প্রদত্ত উক্তিতে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজের জীবন কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের অন্যতম চরিত্র।
এই নাটকে রজনীকান্তকে আমরা পাই ৬৮ বছরের এক বৃদ্ধ অভিনেতা রূপে, যাঁর অভিনয় জীবন ৪৫ বছরের। অভিনয় শেষে মাতাল অবস্থায় ‘দিলদারের’ বেশে তাঁকে দেখা যায়।
একাকিত্ব তার জীবনযন্ত্রণার অন্যতম কারণ। তার নিজের বলতে কেউ নেই, সেজন্য থিয়েটার শো-এর পরে তাঁর বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। এমনকি—তিনি মরে গেলেও তাঁর জন্য ভাবার কেউ নেই, এমন আক্ষেপ তাকে কুরে কুরে খায়।
নিজের বংশমর্যাদা সম্পর্কে রজনীকান্ত সচেতন—“রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছিলুম।” অভিনয় জীবনে প্রবেশ করার আগে পুলিশের চাকরি পেয়েছিলেন, কিন্তু নাটকের প্রতি গভীর আকর্ষণ তাঁকে টেনে আনে থিয়েটারে। আর এই থিয়েটারকে কেন্দ্র করেই আসে যৌবনের প্রথম প্রেম ৷ দুজনেই দুজনকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন, কিন্তু তাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াল শেষ পর্যন্ত থিয়েটার।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনের শেষে রজনীকান্ত তাঁর জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসাবনিকাশে পূর্ণ করে চলেছেন ব্যর্থতার ঝুলি। যে থিয়েটারকে তিনি মনে করতেন ‘পবিত্র শিল্প’ সেই থিয়েটার থেকে তিনি পাননি যথার্থ সম্মান। বরং, অবহেলা আর অবজ্ঞা যেন আজ তাঁর সম্বল। নিজের প্রতি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবকে স্বীকার করেন “হায়রে প্রতিভা! কোথায় গেল বলো তো ?”— এভাবেই পরাজিত নায়কের মতো রজনীকান্ত বিদায় নিতে চান নাট্যমঞ্চ —থকে এবং জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে।
৫. “শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে—তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ”—’নানা রঙের দিন’ নাটক অবলম্বনে মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তরঃ একাধারে মঞ্চাভিনেতা-নির্দেশক নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একাঙ্ক নাটক ‘নানা রঙের দিন’। প্রতিভাবান নাট্য অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনকাহিনি অবলম্বনে নাট্যকাহিনি আবর্তিত হয়েছে। অভিনয় শিল্পকে আজীবন তিনি ভালোবেসে গেছেন। আপন জীবনাভিজ্ঞতার পারাবার মন্থন করে তার নির্যাস সহকর্মী কালীনাথের সামনে রেখে বলেছেন–“শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে- তার বার্ধক্য নেই”। রজনীকান্তের আড়ালে এখানে যেন নাট্যকার অজিতেশেরই কণ্ঠ শোনা যায়।
যথার্থ শিল্পী কখনও তার শিল্পীসত্তা থেকে সরে আসতে পারে না। সাধারণ মানুষের মতো দৈহিক বার্ধক্য, দৈহিক দুর্বলতার কাছে সে হার মানে না—এই সত্যই অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নাটকটিতে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। নাটকের মূল চরিত্র রজনীকান্ত দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে থিয়েটার করছেন। থিয়েটারকে ভালোবেসে তিনি সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন। বিশ্বসংসারে তাঁর আপনজন বলতে নাটক, নাটকের মঞ্চ। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে তাঁরও মনে হয়েছে ঘর বলতে তার কিছু নেই—“পৃথিবীতে আমি একা। আমার আপনজন কেউ নেই—”। কিন্তু যখনই আবার নিজের শিল্পী সত্তায় ফিরে এসেছেন শরীরে অনুভব করেছেন উত্তেজনা। রক্তে মিশে থাকা অভিনয় প্রতিভা তাঁকে নতুন ভাবে উজ্জীবিত করেছে। অভিনয়ের জন্য উদ্দীপনাই তাঁর কাছে জীবনের আর এক নাম। তাঁর শিল্পী সত্তাই তাঁর বার্ধক্য ভুলিয়ে দিয়েছে, একাকিত্ব ভুলিয়ে দিয়েছে, ভুলিয়ে দিয়েছে মৃত্যু ভয়। একজন যথার্থ শিল্পীর আসল জোরের জায়গাটি কোথায় সেটাই নাট্যকার রজনীকান্ত চরিত্রের মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
৬. একাঙ্ক নাটক বলতে কী বোঝো ? একটি সার্থক একাঙ্ক নাটক হিসেবে ‘নানা রঙের দিন’-এর সার্থকতা বিচার করো।
উত্তরঃ বাংলা নাটকের ধারায় একাঙ্ক নাটক বা একাঙ্কিকা নিতান্ত আধুনিক কালের সংযোজন। সাধারণভাবে পঞ্চ অঙ্কে সমাপ্ত, একাধিক চরিত্র ও বেশ কিছু উপকাহিনি বিশিষ্ট এবং দীর্ঘ আয়তন বিশিষ্ট নাটককে আমরা পূর্ণাঙ্গ বা পঞ্চাঙ্ক নাটক বলি। কিন্তু একাঙ্ক নাটকের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি অঙ্কের মধ্যে বেশ কিছু দৃশ্যের সমাবেশে স্বল্প সংখ্যক চরিত্রের সমবায়ে যে নাটক গড়ে ওঠে তা একাঙ্ক নাটক বা একাঙ্কিকা। এই ধরনের নাটকে ক্ষুদ্র সময় পরিসরে জীবনের এক বৃহত্তর সত্য প্রতিভাসিত হয়। কোনো একটি কেন্দ্রীয় বিষয়ই এর উপজীব্য হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটিমাত্র চরিত্রের একক কথনও সমগ্র নাটকে বিস্তার লাভ করে। স্বল্পায়তনে, ছোটোগল্পের কিছু বৈশিষ্ট্যকে উপজীব্য করে একাঙ্কিকা পূর্ণতার আস্বাদ বহন করে আনে। স্বল্প পরিসরে আকস্মিকভাবে দ্বন্দ্বমূলক বিষয়টির সূচনা, দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত রূপ বা Climax ও রেজোলিউশন ঘনীভূত হয়।
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা রঙের দিন’ নাটকটির মধ্যেও প্রায় সর্বাঙ্গীণভাবেই একাঙ্ক নাটকের স্বাদ পাওয়া যায়। নাটকটির সমগ্র ঘটনাবলি একটি রাত্রের কিছু সময়ের মধ্যে এবং একটিই ‘পেশাদারি থিয়েটারের একটি ফাঁকা মঞ্চ’-এ সীমাবদ্ধ। কয়েক ঘণ্টার বর্ণনায় নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় জীবনের উত্থানপতনের কাহিনি উপস্থাপিত করেছেন। এক সময়ের প্রখ্যাত অভিনেতার প্রৌঢ়ত্বে উপনীত হওয়ায় জনপ্রিয়তায় ঘাটতি আসা, তাঁর একাকিত্ব, বর্তমানকে গ্রহণ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক দ্বন্দ্বের প্রকাশ— সবই নাট্যকারের লিখনকৌশলে অনুপুঙ্খ ভঙ্গিতে ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে নাট্যকার নাট্যাভিনয়কারীদের জীবনের করুণ পরিণতিকেও তুলে ধরেছেন। নাটকের প্রতি দুর্নিবার প্রেম অভিনেতা রজনীকান্তর জীবনে সাংসারিক সুখ লাভের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে ওঠে। প্রথম জীবনে প্রেম সংসারকে নিতান্ত ক্ষুদ্র বলে মনে হলেও জীবনের অন্তিম স্তরে পৌঁছে যখন ক্রূর-কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হন তখন শুধুই বিদায় সংগীত ধ্বনিত হতে থাকে তাঁর অন্তরে। নাটকের ক্ষুদ্র পরিসরে, সংলাপের তীক্ষ্ণবাণে বিদ্ধ করে, ঔরঙ্গজেবের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে যেভাবে নাট্যকার শুধু অভিনেতা রজনীকান্তর জীবনের চরম সত্যকে উপস্থাপিত করতে গিয়ে ক্ষুদ্রত্বের মধ্য দিয়ে বৃহৎ এর ব্যঞ্জনা প্রদান করেছেন তার মাধ্যমে নাটকটি একটি সার্থক একাঙ্কিকা হয়ে উঠেছে।
৭. “আমাদের দিন ফুরিয়েছে।”—কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? বক্তার এই উপলব্ধির কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ বিখ্যাত নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্কিকাটিতে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনকথা তাঁরই জবানিতে ব্যক্ত হয়েছে। জীবনসায়াহ্নে উপনীত হয়ে মদ্যপ অবস্থায় খালি স্টেজে মধ্যরাত্রে তিনি তাঁদের নাটকের প্রম্পটার কালীনাথ সেনকে নিজের জীবনের দুঃখাবহ কথা শোনাতে থাকেন। দীর্ঘ এই কথোপকথনের শেষে কালীনাথকে অশ্রুসজল অবস্থায় প্রত্যক্ষ করেই রজনীকান্ত শিল্পীর জীবনের চরম পরিণতির কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় একজন প্রৌঢ় নাট্যাভিনেতা যিনি তার দীর্ঘ আটষট্টি বছরের জীবনে নাট্যাভিনয়ের প্রতি তীব্র প্রগাঢ় আবেগানুভূতির কারণে বহু দুর্মূল্য ধন হারিয়েছেন। পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি নাট্যাভিনয়ের অঙ্গ হয়ে ওঠেন, প্রেমের দুর্নিবার হাতছানিকেও তিনি নাটক ত্যাগ না করার শর্তে অস্বীকার করেন। জীবনের আলোকময় মুহূর্তে তাঁর যৌবনোদ্দীপ্ত প্রতিভার তেজে অগ্নিময় হয়ে উঠেছে বহু ভক্তের হৃদয়াবেগ কিন্তু নাট্যশিল্পীর আবেদন ভক্তের হৃদয়ে জাগ্রত থাকে শুধুমাত্র তার দেহকান্তি ও শিল্পের উৎকর্ষকে কেন্দ্র করে। দার্শনিক ধারণা অনুযায়ী শিল্পী অমর, তাঁর কর্মকে অবলম্বন করেই তিনি জনমনে চিরজাগ্রত থাকেন। রজনীকান্ত নিজেই বলেছেন—“শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে— তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ, একাকিত্ব নেই, রোগ নেই, মৃত্যুভয়ের ওপর সে তো হাসতে হাসতে ডাকাতি করতে পারে—”। কিন্তু বাস্তব স্পষ্টতই ভিন্ন। জীবনের দীর্ঘসময় অতিবাহিত করার পর তিনি লক্ষ করেছেন প্রতিভা রক্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও যৌবন ভিন্ন তা অর্থহীন। জীবনে যখন রাত্রি ঘনিয়ে আসে তখন জীবনের পাত্রকে রিক্ত করে দিয়ে প্রতিভা চিরতরে সঙ্গ ত্যাগ করে। জীবন বস্তুতপক্ষে চলমান ছায়ামাত্র, কিছু সময়ের জন্য সে দর্পিত পদক্ষেপে দাপিয়ে বেড়ায় রঙ্গমঞে, কিন্তু তারপর আর তার খোঁজ পাওয়া যায় না। প্রভূত আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও যখন রজনীকান্ত কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হন তখনই তিনি এই উপলব্ধিতে পৌঁছোন।
৮. “এখন শুধু মাঝরাত্তিরের অপেক্ষা— এখানেই গল্প শেষ।”– বক্তা মাঝরাত্রির জন্য অপেক্ষা করছেন কেন ? ‘এখানেই গল্প শেষ’ বলতেই বা নাট্যকার কী বোঝাতে চেয়েছেন ?
উত্তরঃ নাট্যকার-মঞ্চাভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় তার নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনযন্ত্রণা রূপায়িত করেছেন আলোচ্য একাঙ্কিকাটিতে। প্রৌঢ় অভিনেতার দীর্ঘ ৪৫ বছরের অভিনয়ের প্রতি নিষ্ঠার পরিণতি ব্যাখ্যাত হয়েছে এ নাটকে। মাদকাসক্ত রজনীকান্তর প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল থিয়েটারের প্রতি অদম্য ভালোবাসা ও আকর্ষণ। কিন্তু ক্রমে ক্রমে জীবনে ভোর, সকাল, দ্বিপ্রহর ও সন্ধ্যা অতিক্রম করে এসে তিনি উপলব্ধি করেন তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে শুরু করেছে। শিল্পীর জীবনে জনপ্রিয়তার অভাব তাকে ক্রমে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। তাই শুধু জীবনে রাত্রির হাতছানি প্রত্যক্ষ করে নয় তাঁর অভিনয় জীবনের শেষ পাদে উপনীত হয়ে তিনি মাঝরাত্রির অনন্ত নিদ্রার জন্য অপেক্ষমান।
নাট্যকার রজনীকান্তর কাছে অভিনয় তার জীবন তুল্য। পেশাদারি মঞ্চে অভিনয় করাকে তিনি শুধু পেশা হিসেবে নয় জীবনের বিশিষ্ট অধ্যায় হিসেবে গণ্য করেছেন। ক্রমে তাঁর জীবনে অধ্যায় থেকে অধ্যায়ান্তর ঘটেছে, কিন্তু অভিনয়কে অবলম্বন করে সামাজিক সম্মান লাভে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তার প্রেমিকাও তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হন মঞঞ্চ ত্যাগের শর্তে। ফলত, রঙ্গমঞ্ঝকে প্রাধান্য দেওয়ায় জীবন থেকে তাঁর প্রেমও হারিয়ে যায়। ক্রমে রজনীকান্তর আত্মবিশ্লেষণে প্রকট হয়ে ওঠে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও। সমাজের চোখে থিয়েটারওয়ালারা যে শুধুমাত্র ভাঁড় বা নকলনবিশ ছাড়া আর কিছুই নন তা তিনি বুঝতে পারেন। ধীরে ধীরে অভিনয় জগতে তাঁর প্রয়োজন কমতে শুরু করে। যে খ্যাতি, যে সম্মান, যে অমরত্ব তিনি লাভ করতে চেয়েছিলেন সেগুলিই বৃহৎ প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন হয়। তাই তিনি স্পষ্টতই বুঝেছেন যৌবনান্তে যখন তাঁর খ্যাতিতে ঘাটতি ঘটবে, জীবনের চরম পরিণতি যখন মধ্যরাত্রের কালো ছায়া রূপে তার জীবনে ঘনিয়ে আসবে তখনই ইতি ঘটবে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের। শিল্পীর মরণোত্তর জনপ্রিয়তা তাকে যে চিরস্থায়িত্ব প্রদান করে এই মরজগতে তা রজনীকান্তর পক্ষে লাভ করা সম্ভবপর হবে না। এই উপলব্ধিতে উপনীত হয়েই রজনীকান্ত একটি সহজ সত্য অনুধাবন করেছেন যে, জীবনের মধ্যরাত্রি ঘনীভূত হলে তিনি যখন চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন তখনই শেষ হয়ে যাবে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের গল্প, কেউ তাকে মনে রাখবে না। এ কথা স্পষ্ট করে তোলার জন্যই তিনি গল্প শেষ হওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন।
৯. “… প্রাক্তন অভিনেতা রজনী চাটুজ্জের প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ।”—কে বলেছেন ? এই অপমৃত্যু কীভাবে ঘটে বলে বক্তা মনে করেন?
উত্তরঃ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের উল্লিখিত অংশে বক্তা হলেন বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়।
প্রতিভার অপমৃত্যুঃ গভীর রাতে মঞের উপরে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় শূন্য অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহের দিকে তাকিয়ে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলিকে মনে করেছেন। তীব্র হতাশা এবং কষ্টবোধে ভুগেছেন তিনি। নিজের যৌবনে পুলিশ ইনস্পেকটরের চাকরি ছেড়ে নাটকের জগতে এসেছিলেন তিনি। নাটকের কারণেই তাঁর নামডাক হয়েছিল। ধনী মানুষের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে জীবনের একমাত্র প্রেম সম্পর্কটিও হয়েছিল এই অভিনয়ের সূত্রেই। কিন্তু সেই সম্পর্ক ভেঙেও গিয়েছিল এই অভিনয়কে ছাড়তে না পারার জন্যই। আর তখন থেকেই রজনীকান্ত উপলব্ধি করেছিলেন অভিনেতার জীবনের অর্থহীনতাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিনেতা হিসেবে তাঁর কদরও কমল। গলার কাজ নষ্ট হল, চরিত্রকে বোঝার এবং ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে গেল। আর এ কারণেই হতাশ রজনীকান্তের মনে হল থিয়েটারের দেওয়ালে কেউ অদযশ্য কালো হাতে যেন লিখে দিয়ে গেছে তাঁর প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ।
আরও পড়ুনঃ
উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪