রূপনারানের কূলে (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE HS Bengali Rupnaraner Kule MCQ, SAQ, Essay Type Solved Question Answer

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর

রূপনারাণের কূলে (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা MCQ, SAQ, বড় প্রশ্ন উত্তর | WBCHSE HS Bengali Solved Question Answer

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত উচ্চমাধ্যমিক রূপনারাণের কূলে কবিতা থেকে বহুবিকল্পীয়, সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তরগুলি (MCQ, Very Short, Short, Descriptive Question and Answer) আগামী পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

রূপনারাণের কূলে (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উচ্চমাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

বহুবিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (MCQ) | রূপনারাণের কূলে (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. “ চিনিলাম আপনারে ” – রবীন্দ্রনাথ যেভাবে নিজেকে চিনেছেন—
(ক) আঘাতে ও বেদনায়
(খ) আঘাতে আঘাতে বেদনায়
(গ) আঘাত ও বেদনায়
(ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়।

উত্তরঃ (ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়।

২. ‘এ জীবন’ হলাে— (ক) দুঃখের তপস্যা (খ) আমৃত্যু তপস্যা (গ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা (ঘ) তপস্যা।
উত্তরঃ (গ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা।

৩. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় জীবন নিয়ে যে পঙক্তিটি আছে—
(ক) জানিলাম এ জীবন স্বপ্ন নয়
(খ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন
(গ) কঠিন সত্যকে জানিলাম এ জীবনে
(ঘ) কোনােটিই নয়।

উত্তরঃ (খ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন।

৪. “সে কখনাে করে না ___________ ।”—
(ক) বিভ্রান্ত (খ) বঞ্চনা (গ) আশাহত
(ঘ) মােহগ্রস্ত।

উত্তরঃ (খ) বঞ্চনা

৫. রক্তের অক্ষরে কবি কী দেখেছিলেন ? (ক) আপনার রূপ
(খ) শহীদের আত্মদান
(গ) শােষকের অত্যাচার
(ঘ) সম্প্রীতির চেহারা।

উত্তরঃ (ক) আপনার রূপ

৬. রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি যে কাব্যের অন্তর্গত—
(ক) শেষ সপ্তক (খ) শেষলেখা (গ) মানসী (ঘ) মহুয়া।

উত্তরঃ (খ) শেষলেখা

৭. “সে কখনো করে না বঞ্চনা” –‘সে’ হলো—
(ক) মৃত্যু (খ) সত্য (গ) কঠিন সত্য
(ঘ) কঠিন মিথ্যা

উত্তরঃ (গ) কঠিন সত্য।

৮. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি ভালোবেসেছেন—
(ক) কঠিনকে (খ) সত্যকে (গ) নিজেকে
(ঘ) কঠিন সত্যকে

উত্তরঃ (ঘ) কঠিন সত্যকে।

৯. রুপ নারানের কূলে কবিতায় রূপনারান নদীটি কিসের প্রতীক ?
(ক) কবির বাসস্থানের (খ) বিশ্ব সংসারের (গ) মৃত্যুর (ঘ) কল্পনার

উত্তরঃ বিশ্ব সংসারের।

১০. “কঠিনেরে ভালোবাসিলাম” – যিনি ভালোবাসেন তিনি হলেন—
(ক) নীরেন্দ্রনাথ (খ) জগদীশচন্দ্র
(গ) দ্বিজেন্দ্রনাথ (ঘ) রবীন্দ্রনাথ

উত্তরঃ (ঘ) রবীন্দ্রনাথ।

১১. “জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়” – যিনি জানলেন—
(ক) রানি চন্দ (খ) রবীন্দ্রনাথ
(গ) অবনীন্দ্রনাথ (ঘ) রথীন্দ্রনাথ

উত্তরঃ (খ) রবীন্দ্রনাথ।

১২. কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের রূপ দেখেছিলেন ?
(ক) দর্পনে (খ) হৃদয়ে (গ) রক্তের অক্ষরে (ঘ) পল্লীগ্রামে

উত্তরঃ রক্তের অক্ষরে।

১৩. কবি রবীন্দ্রনাথের কাছে সত্যের স্বরূপ হলো ?
(ক) দুর্বোধ্য (খ) অজ্ঞেয় (গ) কঠিন
(ঘ) ব্যাখার অতীত

উত্তরঃ কঠিন।

১৪. কবি রবীন্দ্রনাথ জেগে উঠেছেন ?
(ক) গোদাবরী কূলে (খ) কাবেরীর কূলে
(গ) রূপনারানের কূলে (ঘ) দামোদরের কূলে

উত্তরঃ রূপনারানের কূলে।

১৫. “রূপনারানের কূলে” কবিতায় যে অক্ষরের কথা বলা হয়েছে তা হল ?
(ক) সোনার (খ) রক্তের (গ) জলের
(ঘ) শিক্ষার

উত্তরঃ রক্তের।

১৬. “রূপনারানের কূলে ” কবিতাটি রচিত হয় ?
(ক) ২৮ মে, ১৯৪১ (খ) ৩০ মে, ১৯৪১
(গ) ১৬ মে, ১৯৪১ (ঘ) ১৩ মে, ১৯৪১

উত্তরঃ ১৩ মে, ১৯৪১

১৭. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটির উৎস হল—
(ক) শেষের কবিতা (খ) শেষ লেখা
(গ) পুনশ্চ (ঘ) গীতাঞ্জলি

উত্তরঃ (খ) শেষ লেখা।

১৮.”রক্তের অক্ষরে দেখিলাম”- কী দেখলেন ? (উঃ মাঃ ২০১৯)
(ক) আপনার স্বপ্ন (খ) আপনার জগত
(গ) আপনার বেদনা (ঘ) আপনার রূপ

উত্তরঃ (ঘ) আপনার রূপ।

১৯. কবির মতে ‘এ জীবন’ হল—
(ক) সত্যের সন্ধান করা (খ) স্বপ্ন নিয়ে বাঁচা (গ) সুখের তপস্যা করা
(ঘ) আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা

উত্তরঃ (ঘ) আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা।

২০. কীসের মাধ্যমে জীবনের ‘সকল দেনা শোধ’ করতে হয় ?
(ক) মৃত্যুর (খ) জীবনের (গ) সত্যের
(ঘ) কঠিনের

উত্তরঃ (ক) মৃত্যুর।

২১. কে মানুষের সাথে কখনও বঞ্চনা করেনা ?
(ক) সত্য (খ) মিথ্যা (গ) জীবন
(ঘ) মৃত্যু

উত্তরঃ (ক) সত্য।

২২. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি রচিত হয়—
(ক) শান্তিনিকেতনে
(খ) কালিম্পঙে
(গ) কলকাতায়
(ঘ) শিলাইদহে

উত্তরঃ (ক) শান্তিনিকেতনে

২৩. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি রচিত হয়—
(ক) ৩০ বৈশাখ , ১৩৪৮
(খ) ২৮ বৈশাখ , ১৩৪৮
(গ) ২৬ বৈশাখ , ১৩৪৮
(ঘ) ২৯ বৈশাখ , ১৩৪৮

উত্তরঃ (ক) ৩০ বৈশাখ , ১৩৪৮

২৪. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি প্রথমে ক’টি ছত্রে লেখা হয়েছিল ?
(ক) নয় (খ) দশ (গ) এগারাে (ঘ) তেরাে

উত্তরঃ (গ) এগারাে

২৫. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা ?
(ক) ১০ সংখ্যক (খ) ১১ সংখ্যক
(গ) ৯ সংখ্যক (ঘ) ১২ সংখ্যক

উত্তরঃ (খ) ১১ সংখ্যক।

২৬. “ জানিলাম এ জগৎ _________”
(ক) মিথ্যা নয়
(খ) নিদ্রা নয়
(গ) স্বপ্ন নয়
(ঘ) কঠিন নয়

উত্তরঃ (গ) স্বপ্ন নয়।

২৭. ” চিনিলাম _________”
(ক) আপনারে (খ) তোমারে (গ) তাহারে
(ঘ) সকলে

উত্তরঃ আপনারে।

২৮. ‘সে কখনো বঞ্চনা করে না’— সে হল ?
(ক) মিথ্যা (খ) বন্ধু (গ) জননী (ঘ) সত্য

উত্তরঃ সত্য।

২৯. ‘জেগে উঠিলাম’ —কবির চেতনা কোথায় জাগরিত হল ?
(ক) সন্ধ্যারাগে ঝিলিমিলি ঝিলমের তীরে
(খ) যমুনাতীরে
(গ) রূপনারানের কূলে
(ঘ) গঙ্গাহৃদি বঙ্গভূমির কোলে

উত্তরঃ (গ) রূপনারানের কূলে।

৩০. রূপনারানের কূলে জেগে ওঠার অর্থ –
(ক) ঘুম থেকে জেগে ওঠা
(খ) অচৈতন্য থেকে চেতনা ফিরে পাওয়া
(গ) মােহভঙ্গ হওয়া
(ঘ) জীবনবােধে প্রাজ্ঞ হয়ে ওঠা

উত্তরঃ (ঘ) জীবনবােধে প্রাজ্ঞ হয়ে ওঠা।

৩১. রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি দেখলেন –
(ক) সূর্য উঠে আলাের প্রকাশ ঘটেছে
(খ) আকাশে মেঘ কেটে গেছে
(গ) স্বপ্ন ও বাস্তবের পার্থক্য অনেক
(ঘ) ঘুমের জগৎ আর বাস্তবের জগতের কোনাে পার্থক্য নেই

উত্তরঃ (গ) স্বপ্ন ও বাস্তবের পার্থক্য অনেক

৩২. “ রক্তের অক্ষরে দেখিলাম ” —কী দেখলেন ?
(ক) আপনার স্বপ্ন (খ) আপনার জগৎ
(গ) আপনার বেদনা (ঘ) আপনার রূপ

উত্তরঃ (ঘ) আপনার রূপ।

৩৩. “সত্য যে কঠিন, ‘— কবি এ কথা জানলেন—
(ক) শুধু আঘাতে আঘাতে
(খ) শুধু বেদনায় বেদনায়
(গ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়
(ঘ) চেতনাহীন হয়ে

উত্তরঃ (গ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়

৩৪. কবি ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’ বলতে বুঝিয়েছেন—
(ক) পৃথিবীকে (খ) জীবনকে (গ) কর্মকে
(ঘ) কর্তব্যকে

উত্তরঃ (খ) জীবনকে।

৩৫. সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করবেন—
(ক) কবি স্বয়ং
(খ) যে–কোনাে মানুষ
(গ) মৃত্যুঞ্জয়ী বীর
(ঘ) আত্মভােলা মানুষ

উত্তরঃ (ক) কবি স্বয়ং।

৩৬. জীবনের দেনা শােধ করবেন কবি—
(ক) মৃত্যুর মধ্য দিয়ে
(খ) জন্মের মধ্য দিয়ে
(গ) সত্যকে অস্বীকারের মধ্য দিয়ে
(ঘ) জীবন উপলব্ধির মধ্য দিয়ে

উত্তরঃ (ক) মৃত্যুর মধ্য দিয়ে

৩৭. “সে কখনো করে না বঞ্চনা”- ‘সে’ বলতে বোঝানো হয়েছে— (উঃ মাঃ ২০১৬)
(ক) কঠিনকে (খ) মৃত্যুকে (গ) সত্যকে
(ঘ) জীবনকে

উত্তরঃ (গ) সত্যকে।

৩৮. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি ‘রূপনারায়ন’ বলতে বুঝিয়েছেন—
(ক) কোনো এক নদীকে
(খ) রূপময় এই জগৎকে
(গ) সত্যকে
(ঘ) ঈশ্বরকে

উত্তরঃ (খ) রূপময় এই জগৎকে।

৩৯. “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম”- (উঃ মাঃ ২০১৫)
(ক) মৃত্যুর রূপ (খ) প্রকৃতির রূপ
(গ) আপনার রূপ (ঘ) রূপনারানের রূপ

উত্তরঃ (গ) আপনার রূপ।

৪০. “জানিলাম এ জগৎ”- (উঃ মাঃ ২০১৮)
(ক) মিথ্যা নয় (খ) নিদ্ৰা নয় (গ) স্বপ্ন নয়
(ঘ) কঠিন নয়

উত্তরঃ (গ) স্বপ্ন নয়।

৪১. ‘চিনিলাম আপনারে’- কবি কীভাবে নিজেকে চিনতে পেরেছেন?
(ক) আঘাতে
(খ) বেদনায়
(গ) রক্তের অক্ষরে
(ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়

উত্তরঃ (ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়।

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী (SAQ) প্রশ্ন উত্তর | রূপনারাণের কূলে (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. রূপনারানের কূলে ’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ?
উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

২. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটির রচনাকাল ও স্থান উল্লেখ করাে।

উত্তরঃ শান্তিনিকেতনের উদয়নে অবস্থানকালে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে এবং ১৪ মে এই দু-দিন ধরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি রচনা করেন।

৩. “জেগে উঠিলাম”— কে, কোথায় জেগে উঠলেন ?

উত্তরঃ রূপনারানের কূলে কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং রূপনারানের তীরে জেগে উঠলেন ।

৪ “জেগে উঠিলাম”— জেগে উঠে কবি কী উপলব্ধি করেছিলেন ?

উত্তরঃ বক্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপনারানের কূলে জেগে উঠে উপলদ্ধি করলেন যে, ‘এ জগৎ স্বপ্ন নয়।’

৫. “জানিলাম এ জগৎ / স্বপ্ন নয়।”— কখন কবি এ কথা জেনেছিলেন ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবন- সায়াহ্নে যখন রূপনারানের কূলে জেগে উঠেছিলেন, তখনই জেনেছিলেন যে এ জগৎ স্বপ্ন নয় ।

৬. রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি কী জানলেন ?

উত্তরঃ রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি জানলেন যে, এ জগৎ স্বপ্ন নয়।

৭. “জানিলাম এ জগৎ / স্বপ্ন নয়।” — কবির চোখে এ জগৎ কেমন ?

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারানের কুলে’ জেগে উঠে জেনেছিলেন, যে জগতে তিনি ছিলেন তা স্বপ্ন নয়, তা আঘাত- সংঘাতে ভরা কঠিন বাস্তব।

৮. “দেখিলাম আপনার রূপ,”— কবি কীভাবে এই রূপ দেখলেন ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রক্তের অক্ষরে নিজের এই রূপ দেখলেন।

৯. “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম” বলতে কীভাবে দেখার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে কবিতায় রক্তের অক্ষরে দেখিলাম’ বলতে কবি যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট মৃত্যুর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।

১০ “চিনিলাম আপনারে”— কে আপনারে চিনেছিলেন ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং আপনারে অর্থাৎ নিজেকে চিনেছিলেন ।

১১. “চিনিলাম আপনারে”— এই চেনার স্বরূপ কী ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজেকে চেনার অর্থ আসলে সত্যের কঠিন অথচ যথাযথ স্বরূপকে চিনতে বা বুঝতে পারা।

১২. “চিনিলাম আপনারে”— কবি কীভাবে নিজেকে চিনলেন ?

উত্তরঃ দ্বন্দ্ব-সংঘাতমুখর এই বাস্তব পৃথিবীতে কবি আঘাতে আঘাতে, বেদনায় বেদনায় নিজেকে চিনলেন।

১৩. “সত্য যে কঠিন”— কবি সত্যকে কঠিন বলেছেন কেন ?

অথবা,

‘রূপনারানের কূলে’ কবিতার কবি সত্যকে কঠিন বলেছেন কেন ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় সত্য কঠিন বলতে বুঝিয়েছেন যে, সত্য সব সময় কাঙ্ক্ষিত নাও হতে পারে।

১৪. “সত্য যে কঠিন”— এ কথা বলেও সত্য সম্পর্কে কবির প্রতিক্রিয়া কী ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় সত্যকে কঠিন জেনেও তাকে ভালোবেসেছেন।

১৫. “সত্য যে কঠিন”— তবু কবি সত্যকে ভালােবাসেন কেন ?

উত্তরঃ সত্য কঠিন জেনেও কবি সত্যকে ভালােবাসেন, কারণ সত্য কখনও বঞ্চনা করে না।

১৬. রূপনারানের কূলে ‘কবিতায় কবি সত্যকে কোন্ বিশেষণে ভূষিত করেন ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি সত্যকে কঠিন বিশেষণে ভূষিত করেছেন।

১৭. “সত্য যে কঠিন”— বক্তা সত্যের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন ?

উত্তরঃ বক্তা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যকে কঠিন জেনেও তাকে ভালােবেসেছেন।

১৮. “কঠিনেরে ভালােবাসিলাম”— কবি কেন কঠিন’- কে ভালােবাসলেন ?

অথবা,

“কঠিনেরে ভালােবাসিলাম”- কঠিনকে ভালােবাসার কারণ কী ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি ‘কঠিন’কে ভালােবেসেছিলেন কারণ কঠিনই হল সত্যের স্বরূপ এবং সে কখনও কাউকে বঞ্চনা করে না।

১১ “সে কখনাে করে না বঞ্চনা।”— বক্তা কে ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় উল্লিখিত পঙক্তিটির বক্তা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং।

২০. “সে কখনাে করে না বঞ্চনা।”— এরূপ বলার কারণ কী ?

উত্তরঃ সত্য যেহেতু মায়া বা স্বপ্ন নয়, তা কঠোর ও কঠিন বাস্তব, তাই তা কাউকে মােহোবিষ্ট বা স্বপ্নাবিষ্ট করে প্রবঞ্চনা করে না।

২১. “সে কখনাে করে না বঞ্চনা।”— কে কখনও করে না বঞ্চনা ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানিয়েছেন যে, কঠিন সত্য কখনও কবি তথা মানুষকে বঞ্চনা করে না।

২২. “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন” কবি জীবনকে দুঃখের তপস্যা মনে করেছেন কেন ?

অথবা,

কবি জীবনকে দুঃখের তপস্যা বলেছেন কেন ?

উত্তরঃ জীবনধারণ করতে গিয়ে প্রতিটি মানুষকেই প্রতিনিয়ত ব্যথা-বেদনা আঘাত দুঃখ-দুর্দশাকে বরণ করতে হয় বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারানের কুলে’ কবিতায় জীবনকে দুঃখের তপস্যা বলেছেন।

২৩. ‘রূপনারানের কুলে’ কবিতায় মৃত্যুতে সকল দেনা কীভাবে শোধ করা সম্ভব বলে কবি মনে করেছিলেন ?

অথবা,

“মৃত্যুতে সকল দেনা শােধ করে দিতে।”— মৃত্যুতে সকল দেনা কীভাবে শােধ করা সম্ভব বলে কবি মনে করেছেন ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় আমৃত্যু দুঃখের তপস্যার মধ্য দিয়েই মৃত্যুতে সকল দেনা শােধ করা সম্ভব হবে বলে কবি মনে করেছেন।

২৪. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি কীসের মূল্য লাভ করতে চেয়েছেন ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কুলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করতে চেয়েছেন ।

২৫ ‘সকল দেনা শােধ করে দিতে।’— ‘সকল দেনা’ বলতে কী বােঝ ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় সকল দেনা বলতে কোনাে মানুষ তার সারা জীবনে যা যা অর্জন করে সে-সবের কথা বলেছেন।

২৬. “সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে”— ‘সত্যের দারুণ মূল্য’ বলতে কী বােঝ ?

উত্তরঃ সত্যের দারুণ মূল্য বলতে কবি অপ্রিয় ও কঠিন সত্যকে স্বীকার করার জন্য যে মনােবল ও নিরাসক্ত মনােভাবের প্রয়ােজন তার কথা বলেছেন।

২৭. সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে কী ঘটেছে কবিজীবনে ?

উত্তরঃ সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করবার জন্য সারাজীবন ধরে দুঃখের তপস্যা করতে হয়েছে কবিকে।

২৮. সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করার জন্য কী করতে হয় ?

উত্তরঃ সত্যের দারুণ মূল্য অর্থাৎ প্রকৃত মূল্য লাভ করার জন্য আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা করতে হয়।

২৯. কবি মৃত্যুতে সকল দেনা শােধ করে দিতে চান কেন ?

উত্তরঃ নিশ্চিন্তে মৃত্যুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে চান বলেই কবি প্রকৃতি ও মানবসমাজের সকল দেনা শােধ করে দিতে চান ।

রচনাধর্মী (Essay Type) প্রশ্নোত্তর | রূপনারাণের কূলে (কবিতা) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – উচ্চমাধ্যমিক বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর | WBCHSE HS Bengali Question and Answer

১. ‘সত্য যে কঠিন’– এই উপলব্ধিতে কবি কীভাবে উপনীত হলেন, তা ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতা অবলম্বনে লেখো।

অথবা,

“সত্য যে কঠিন / কঠিনেরে ভালোবাসিলাম / সে কখনও করে না বঞ্চনা।”—কবি কোন্ কঠিন সত্যের কথা বলেছেন এবং তা কীভাবে উপলব্ধ হয় ?

উত্তরঃ রবীন্দ্রজীবনে নানান চড়াই উতরাই, জীবনের অস্তিমে ধ্যান সমাহিত শান্ত রূপের অন্তরালে যে তরঙ্গ প্রবাহ তা দেশ তথা বিশ্বমানবের উপলব্ধ সত্য আহরণ ও হৃদয়ঙ্গমের মধ্যে গ্রথিত। সুদীর্ঘ আশি বছরের জীবনের শেষে যে উত্তরণ ঘটেছে, তা তাঁর সমস্ত জীবনবোধে সত্যাশ্রয়ী পথে আবর্তিত হয়েছে। রুদ্ধতার বিচ্ছিন্নতার বাধা পেরিয়ে সত্য উপলব্ধ হয়েছে। বাস্তব জগতের প্রতিটি ঘটনা কবিমনকে নাড়া দিয়েছে। রোমান্টিকতার বিশেষ ভাবটি অতিক্রম করে পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহ দুর্যোগ, বিশ্বময় বীভৎস ও মহাবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের ঝনাৎকার কবিকে কঠিন ও রুঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। অপর দিকে ‘এ জন্মের তীর্থদর্শন’ রূপে রাশিয়া ভ্রমণ কবিকে সত্য ও বস্তুমুখীন জীবনবোধে উদ্দীপ্ত করেছে। সভ্যতার পিলসুজরূপী শ্রমিকশ্রেণি, অভুক্ত, অজ্ঞ জনগণই সকলের পরিচর্যা করে চলেছে আবহমানকাল ধরে। অথচ তারাই নীচে পড়ে অধস্তন হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। সামগ্রিক বিশ্বপরিস্থিতির এরূপ অসহনীয় চাপ কবির অন্তরকে বারেবারে বিদ্ধ করেছে। মানুষের সভ্যতা ও সংস্কৃতির চূড়ান্ত সংকটময় মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কবির অন্তরে ক্ষোভ-শঙ্কা জন্মেছে ঠিকই কিন্তু তা থেকে উত্তরণের জন্য মানুষের উপরই বিশ্বাস রেখেছেন। তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতা ও কর্মপ্রচেষ্টার মধ্যে ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতার অভ্যাস ও সংস্কারকে অবদমিত করে বিপুল মানুষের সহযাত্রী হয়ে ওঠার প্রয়াস লক্ষ করা যায়। তাঁর জীবনের অন্তিম কবিতায় রয়েছে সেই সত্যানুসন্ধানের অনুবর্তন—

“সত্যেরে সে পায়
আপন আলোক-ধৌত অন্তরে অন্তরে।”

সত্য মানবতাকে প্রতিষ্ঠা করে, মানবতা প্রতিষ্ঠার সাধনাই সত্যসাধনা। ভয় ক্ষোভ, আত্মকেন্দ্রিকতা, শোষণ-বঞ্ছনা, যুদ্ধ-বিবাদ প্রভৃতি মানবতা হননকারী বিষয় অতিক্রম করেই সত্য অর্জন করতে হয়। সেই কঠিন সাধনাতে কবি মগ্ন।

২. “মৃত্যুতে সকল দেনা শােধ করে দিতে।” — পঙক্তিটির সাধারণ অর্থ কী ? কার কাছে , কার দেনা ? কীজন্য দেনা ? মৃত্যুতে তা কীভাবে শােধ হয় ?

উত্তরঃ পঙক্তিটির সাধারণ অর্থ: মৃত্যুর মাধ্যমে সকল দেনা শােধ করতে হয়। বিশ্বপ্রকৃতির কাছে নিজের দেনা।

মানুষ বিশ্বপ্রকৃতি থেকে দুর্লভ জীবনপ্রাপ্ত হয়, যদিও সেজীবন ‘আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা’, তবুও সেজীবনে নানা উত্থানপতন বা প্রতিকূলতার মধ্যে যে সত্যকে খুঁজে পায়, সেই সত্য চরম মূল্যবান— এই সত্য লাভই হচ্ছে দেনা।

দেনা এই জন্য যে, বিশ্বপ্রকৃতি থেকে মানুষ মানুষজন্ম – জীবনপ্রাপ্ত হয়, ফলে এই সত্যলাভ সম্ভব।

মানুষই সৃষ্টিতে চূড়ান্ত। সুতরাং তার যা ধার – দেনা, তা কোনাে মানুষের কাছে শােধ দেওয়া অসম্ভব। কারণ সত্য লাভ এক নির্বস্তুক ব্যাপার, যা বাস্তবে বহুলৌকিক ঘটনার মধ্যে দিয়েই আসে। কৃতজ্ঞ মানুষ তাই জানে জীবনের আবির্ভাবে যে দেনা তা শােধ করবার একমাত্র পন্থা অনিবার্য মৃত্যুতে। বিশ্বপ্রকৃতিই যেখানে সত্য – মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণ করে, মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি ঘটায়, তাই সে প্রকৃতিতে স্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্য দিয়েই শােধ হয় সমস্ত দেনা।

৩. “জানিলাম এ জগৎ / স্বপ্ন নয়।” –‘রূপনারানের কূলে’ কবিতা অবলম্বনে কবির এই ভাবনার তাৎপর্য লেখো।

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ আমৃত্যু জগৎ ও জীবনের বাস্তব রূপ উদ্‌ঘাটনে তৎপর থেকেছেন। তাই মানবপ্রেমিক, প্রকৃতি প্রেমিক কবি জগতের প্রকৃত সত্যের সন্ধানে রূপনারানের কূলে জেগে উঠে প্রত্যক্ষ করেছেন যে, ‘এ জগৎ স্বপ্ন নয়’। জগৎ সংসারের রূঢ় বাস্তবতা মর্ত্যপ্রেমিক কবির দৃষ্টিতে ধরা দিয়েছে। রবীন্দ্র মন ও মনন সদা সর্বদা সুদূরে স্পর্শ লাভের আকাঙ্ক্ষায় ছুটে বেড়িয়েছে। তাই ‘বলাকা’-র গতিতত্ত্ববাদেও সেই সুদূরপিয়াসি সত্তাটিই প্রকাশিত। যার ফলে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, সমাজ ও জীবনে সভ্যতার ধ্বজাধারী উন্নতি মানুষের বোধকে কলুষিত করছে। যার বিষময় ফল হল বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা। এই পরিস্থিতি কবি হৃদয়কে দুঃখে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে। সভ্যতার বর্বরোচিত রূপটি দেখে কবি উপলব্ধি করেছেন যে, জগৎ আপাতদৃষ্টিতে স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা মনে হলেও তার প্রকৃত রূপ ভিন্ন। স্বপ্ন তো কল্পনায় গড়া যার মধ্যে বাস্তবতার আঁচ পাওয়া সম্ভব নয়। তবে স্বপ্নের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলেই সত্যের প্রকৃত রূপটি প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। কবি রবীন্দ্রনাথ তাই আবেগবর্জিত বস্তুনিষ্ঠ জগতের স্বরূপটি উন্মোচনে প্রয়াসী হয়েছেন, যেখানে জগতের যা কিছু সত্য তা-ই গ্রহণীয়। মূলত, এই কারণেই পার্থিব জগতের বস্তুনির্ভরতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করে সত্তা লালিত বিশ্বাসের মোহ ভেঙে কবি বলতে পেরেছেন যে, জগতের যা কিছু তা স্বপ্নিল নয়। স্বপ্নের বেড়াজাল ছিন্ন করে সত্যের আলোকরশ্মি জগতের অবক্ষয়ী রূপটি সর্বসমক্ষে তুলে ধরে মানুষের বোধকে জাগ্রত করে। তাই কবি জীবন-নদীতে অবগাহন করে জগতের সত্যানুসন্ধানে ব্রতী হতে চান।

৪. “চিনিলাম আপনারে / আঘাতে আঘাতে / বেদনায় বেদনায়”– উক্ত মন্তব্যের আলোকে রবীন্দ্রমননের দার্শনিক ভিত্তিটি আলোচনা করো।

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি বৈচিত্র্যের মধ্যে একটা আন্তঃসাযুজ্য বর্তমান। কাব্যজীবনের শুরুতে উপনিষদিক যে আনন্দবাদের প্রকাশ, প্রথম মহাযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশেষ পরিণত বয়সে তা তিনি বস্তুবাদী দর্শন সঞ্জাত উপলব্ধি কবিতায় ব্যক্ত করেছেন। সে কারণে বলা যেতে পারে যে, নিয়ত পরিবর্তনশীল অথচ পূর্ণতাভিলাষী একটি জীবনের অতুলনীয় উত্তরণের নামই হল রবীন্দ্রনাথ। সেই উত্তরণ কিন্তু একদিনে ঘটেনি, অনায়াসে ঘটেনি। আজন্ম সাধন কল্পনার মোহ ভেঙেই তিনি বলতে পারেন—

“রূপ-নারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।”

পারিবারিক ঐতিহ্য—দেশকাল পূর্বাপর অনুশীলনীয় অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনসাধনার ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে। ‘রাজর্ষি’-তে রাজা গোবিন্দ মাণিক্যের মধ্যে সেই উত্তরণের দর্শনজাত অনুভব লক্ষ করা যায়। জীবনের যা বাস্তব সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা তাকে অতিক্রম করতে গেলে অনেক ‘দুঃখের আঁধার রাত্রি’ পেরিয়ে যেতে হয়। এটা কেবল কবির ব্যক্তিক অনুভূতিই নয় বিশ্বসংসারে সমস্ত মানুষের অগ্রগতির ইতিহাসটাও তদ্রূপ। সেই ভাবনায় কবিমন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সংকটকালীন বেদনায় বলতে পারে—

“দুঃখের আঁধার রাত্রি বারে বারে
এসেছে আমার দ্বারে।”

প্রত্যক্ষত সেই সত্যদর্শনই রবীন্দ্রনাথকে নিজের স্বরূপ চিনতে এবং বিশ্ব-স্বরূপ বুঝতে সহায়তা করেছে। আক্রান্ত মানবসমাজকে তিনি সর্বশক্তি দিয়ে সংগ্রামে নামতে উদ্বুদ্ধ করেছেন—

“মুহূর্তে তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে;
যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে।”

এই দর্শনই সারাজীবন লালন করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

৫. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটির মর্মবস্তু সম্পর্কে আলোকপাত করো।

উত্তরঃ সভ্যতার সংকট প্রত্যক্ষ করে তা থেকে মানুষকে উদ্ধার করার সাধনায় সারাজীবন ব্যাপৃত কবি আত্মিক সংগ্রাম থেকে বিশ্বমানবের সংগ্রামে নিজেকে মেলে ধরেছেন। সেই উপলব্ধির নির্যাস হল ‘শেষলেখা’ কাব্যগ্রন্থের বেশ কয়েকটি কবিতা, বিশেষ করে ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি।

জীবনসায়াহ্নে উপনীত কবি নিজের উপলব্ধ প্রজ্ঞা ও অনুভব দিয়ে বলতে পারলেন যে, সারাজীবনের চলার পথ ও মতই শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র নয়। অভিজ্ঞতার সমুদ্রে ভাব-কল্পনা, রোমান্টিকতা তথা মানবিকতার জন্য চূড়ান্ত সংগ্রাম ও বস্তুনিষ্ঠ হিসেবনিকেশ করেই কবির আত্মোপলব্ধি—“এ জগৎ/স্বপ্ন নয়”। রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়ানো পৃথিবীতে জীবনসংগ্রামের জন্য কবির প্রাণে জেগেছে দরদ। বাস্তব চেতনাসম্পন্ন হৃদয়ে জীবনসংগ্রামে যুঝে নিজের স্বরূপ চিনতে পেরেছেন। সেখানে কল্পনাবিলাস নেই, আছে দ্বন্দ্ব-সংঘাত পূর্ণ কঠিন ও কঠোর জীবনবোধ। সত্যের স্বরূপ সন্ধানে অত্যন্ত রূঢ় বাস্তব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে জীবনের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার পূর্ণ হয়েছে। যুক্তি-বুদ্ধির আলোকে প্রাপ্ত সত্য কখনও মিথ্যা নয়। মানুষের সভ্যতা ও সংস্কৃতির চূড়ান্ত সংকট মুহূর্তে জগৎ ও জীবনের অবসানের আশঙ্কায় অসংখ্য অন্ধকার রাত্রির অভিঘাতকে আত্মস্থ করে সংকটে ও বেদনায় কঠিন সত্য রূপকে ধারণ করেছেন। জীবনের সূচনালগ্ন থেকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত পর্যন্ত যে জীবন, তার নির্ণীত অব্যয়টি হল সত্যমূল্য চয়ন করা। আসলে মৃত্যুর মধ্য দিয়েও অমৃতলোকের বা সত্যের সুধা লাভ করে বোধিলাভ করার কেন্দ্রে রয়েছে একমাত্র মানুষ। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মানুষের দুঃখবেদনার শরিক হওয়ার প্রচেষ্টাই সত্য অনুসন্ধান, যার কেন্দ্রে আত্মানুসন্ধান। সেই আত্মানুসন্ধান কবির একার নয় সর্বকালের সর্বমানুষের। সত্য ও ছলনার দ্বন্দ্বমুখর প্রেক্ষিতে মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশের জন্য মানবিক সত্য নির্ণায়ক কঠিন প্রশ্নের উত্তর কবি উপলব্ধি করেছেন। আত্মিক চেতনাবোধের প্রজ্ঞায় কবিমনে বিশ্বলোকের বোধ সঞারিত হয়েছে জীবনের শেষলগ্নেও।

৬. “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন” — কবি জীবনকে কেন ‘দুঃখের তপস্যা’ বলেছেন ? এখানে কবির মনােভাব বিবর্তনের যে ছবি পাওয়া যায়, তা নিজের ভাষায় লেখাে।

অথবা,

“আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন ” – উদ্ধৃতিটির মর্মার্থ বিশ্লেষণ করাে।

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় জীবনকে বিভিন্ন কারণে ‘আমৃত্যুর তপস্যা’ বলেছেন। কবির মতে, আঘাত – সংঘাত, পাওয়া না পাওয়ার বেদনার মধ্য দিয়েই জীবনের সত্যকে উপলব্ধি করা যায়। সত্য নির্মম, কঠিন। জীবনে। সুখ – আনন্দের মধ্যে সুখ উপলব্ধি করা যায় না। দুঃখের নির্মমতাকে উপলব্ধি করে কঠিন সাধনার মাধ্যমেই সত্যকে জানা সম্ভব হয়। কাল্পনিক ভাবনায় সত্যকে কখনােই অনুভব করা যায় না। বাস্তবের কঠিন পরিস্থিতিতে দুঃখ – কষ্টে জর্জরিত জীবনে সত্যের স্বরূপ আপনি ফুটে ওঠে। কবি জীবনের আঘাত – বেদনার ভেতরে সত্যের কঠিন স্বরূপ চিনতে পেরেছেন এবং তাকে ভালােবেসেছেন। কবির মতে, সত্য কখনাে না করে। সত্যের প্রতি কবির গভীর আকর্ষণ ও ভালােবাসার কারণে তিনি জীবনকে আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা বলেছেন।

সত্যের জীবনবােধে পৌছাতে গিয়ে কবির জীবনে বিবর্তন দেখা যায়। জীবন সম্পর্কিত ভাবনায় কবি কল্পনার মায়াজাল থেকে মুক্তি ও বাস্তবের নির্মম সত্যকে লাভ করেছেন, দেখেছেন জীবনের পরম সত্য দ্বন্দ্বমুখর মানুষের আঘাত – বেদনার মধ্যে। নিহিত আছে। জীবন তার কাছে স্বপ্নের লীলাভূমি নয় , বাস্তবের কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করা তার কাছে জীবনের স্বরূপ হয়ে উঠেছে। তাই কবি কবিতার সূচনাতেই বলেছেন— “রূপনারানের কূলে / জেগে উঠিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়।”

৭. “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম। আপনার রূপ”— বক্তা কে ? তিনি রক্তের অক্ষরে’ কীভাবে আপনার রূপ দেখেছেন ?

অথবা,

“রক্তের অক্ষরে দেখিলাম / আপনার রুপ”– বক্তা কে ? উক্তিটিতে কবির কী ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে ?

উত্তরঃ ‘রূপনারানের কূলে কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটি – র বক্তা হলেন কবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আলােচ্য উক্তিটিতে জীবন সম্পর্কে কবির প্রগাঢ় উপলদ্ধি ধরা পড়েছে। কবি জীবনের প্রান্তিক পর্যায়ে উপনীত হয়ে জ্ঞানলাভ করতে পেরেছেন যে জীবন কোনাে কাল্পনিক স্বপ্ন নয়। বাস্তব জীবন কঠিন সত্যে পরিপূর্ণ। এই বাস্তব সত্যকে উপলব্ধি করে কবি নিজের রূপকে চিনতে পেরেছেন। তিনি উপলদ্ধি করেছেন জীবন দুঃখ, বেদনা, আঘাত ও কঠিন বাস্তবতায় পূর্ণ। এই বাস্তবতা জীবনসত্য। জীবনে টানাপােড়েন, রক্তক্ষরণ, আঘাত থাকবেই। এর মধ্য দিয়েই জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

কবি ‘আপনার রূপ’ প্রত্যক্ষ করার জন্য কল্পনার মায়াজাল থেকে মুক্তিলাভ করে বাস্তবের কঠোর ভূমিতে পদচারণা করেছেন। জীবন সম্পর্কিত এই ভাবনায় কবির মধ্যে বিবর্তন দেখা যায়। কবি জীবনের স্বরূপকে দেখেছেন দ্বন্দ্বমুখর মানুষের আঘাত – বেদনার মধ্যে। কবির কাছে জীবন কোনাে স্বপ্নের লীলাভূমি নয়। বাস্তবের কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে সংগ্রাম করা তার কাছে জীবনের স্বরূপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। কবি কঠিন তপস্যার মধ্যে দিয়ে জীবনের স্বরূপকে উপলব্ধি করেছেন।

৮. রূপনারানের কূলে কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়ে যা উপলব্ধি করেছেন তা নিজের ভাষায় লেখ।

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা রূপনারানের কূলে কবিতাটিতে জীবনের শেষ লগ্নে পৌঁছে নিজের প্রকৃত আত্ম উপলব্ধি করতে চেয়েছেন। তার পরিণত বয়সের জীবন দর্শনের অসামান্য প্রকাশ ঘটেছে কবিতাটিতে। স্বপ্নের মায়াময় জগত থেকে কবি ফিরে এসেছেন প্রখর বাস্তবে। জীবনের সমস্ত টানাপোড়েন আঘাত সংঘাত বেদনায় বিদ্ধ হয়ে কবি উপলব্ধি করেছেন নিজের প্রকৃত স্বরূপ।

কঠোর সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মধ্যেই মানব জীবনের প্রকৃত সার্থকতা লুকিয়ে থাকে। এই সত্য কখনো প্রবঞ্চিত করে না কাউকে। এর মধ্যেই জীবনের গতিশীলতা প্রকাশ পায়। তাকে অস্বীকার করে রঙিন স্বপ্ন কল্পনার জগতে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যে কোন সার্থকতা নেই। এই কবিতা প্রসঙ্গে কবি বলেছিলেন, সত্য কঠিন, অনেক দুঃখ দাবি নিয়ে আসে, কিন্তু তিনি সেই কঠিন কেই ভালোবেসেছেন। কবিতাটির মাধ্যমে কবি জীবনের প্রকৃত সত্যকে চিনে নেওয়ার কথা বলেছেন। রূপনারানের কূলে জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে সত্য ও জীবনের সন্ধান করেছেন কবি।

৯. “সে কখনো করে না বঞ্চনা।”- কে কখনও বঞ্চনা করেনা ? কবি কিভাবে এই ভাবনায় উপনীত হয়েছেন ?

অথবা,

“সত্য যে কঠিন কঠিনেরে ভালোবাসিলাম”- কবির কাছে সত্যের যে ধারণা প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।

অথবা,

রূপনারানের কূলে অবলম্বনে কবির উপলব্ধি নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরঃ রূপনারানের কূলে কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উল্লিখিত অংশে বলতে চেয়েছেন সত্য বড় কঠিন কিন্তু তা কাউকে কখনো বঞ্চনা করেনা।

কবির পরিণত বয়সের জীবন দর্শনের এক অসামান্য প্রকাশ ঘটেছে কবিতাটিতে। রূপনারানের কূলে অর্থাৎ রূপময় প্রবাহমান জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি জেগে উঠেছেন। সেই জগতের মধ্যে কোন মায়ামোহ বা কল্পনাকে তিনি খুঁজে পাননি। তিনি মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন আঘাত সংঘাতমুখর বাস্তব জীবনের। এই জীবন স্বপ্নের রঙে রঙিন নয়, রক্তের অক্ষরে এর যথার্থ পরিচয়। তাই কবি উপলব্ধি করেছেন এ জীবনে দুঃখের তপস্যাই পরম সত্য। তার মধ্য দিয়েই ঘটবে জীবনের যথার্থ বিকাশ। কঠিন সত্য জীবনকে যথার্থরূপে চিনিয়ে দেয়। জীবনের অন্তিম লগ্নে মৃত্যুর কাছে নিজেকে নিশ্চিন্তে সমর্পণ করার মাধ্যমেই আমাদের জাগতিক জীবনের সমস্ত দেনা শোধ হয়। মিথ্যা মোহের বসে আবদ্ধ না হয়ে জীবনের সেই চরম সত্যের সাথে নিজেকে একাত্ম করার কথা বলেছেন কবি।

১০. “মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে”- বক্তা কে? মৃত্যুতে সকল দেনা বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সে দেনা কিভাবে শোধ করতে চেয়ে ছিলেন কবি?

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের 11 সংখ্যক কবিতা রূপনারানের কূলে থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে বক্তা হলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সয়ং।

কবি বিশ্বাস করেন প্রকৃতি ও মানব সমাজের কাছে প্রতিটি ব্যক্তিমানুষের যে ঋণ তা এই জীবনে শোধ করতে হয়, আর মৃত্যুতেই কবি সেই দেনা বা ঋণ শোধ করবেন। কবি উপলব্ধি করেছেন আমৃত্যু দুঃখের তপস্যার মধ্য দিয়েই আমাদের মানব জীবন এগোতে থাকে, এবং মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ হয়ে যায়।

মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্ত পর্যন্ত চলে মানুষের কঠোর সাধনা। আমরা প্রতি মুহূর্তেই প্রয়াস করে চলি জীবনের যথার্থ স্বরূপকে চিনবার জন্য। কল্পনা ও স্বপ্নের জগৎ ত্যাগ করে জীবনের কঠিনতম সত্যও কে মাথা উঁচু করে গ্রহণ করার শিক্ষা দিয়েছেন কবি।

১১. “রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম”- কে জেগে উঠলেন? জেগে ওঠার আসল অর্থ কবিতাটির মধ্যে কিভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা বুঝিয়ে দাও।

উত্তরঃ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর লেখা রূপনারানের কূলে কবিতায় নিজেই জেগে উঠলেন অর্থাৎ তার আত্মউপলব্ধি ঘটলো।

রূপনারায়ন নদীটি এখানে আমাদের প্রবাহমান জীবনকাল কে বোঝায়। জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়ে কবি অনুভব করেছেন এই জগত শুধু স্বপ্নের প্রহেলিকা নয়, আঘাত ও বেদনায় পরিপূর্ণ। রক্তের অক্ষরে সামাজিক রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যদিয়ে এই সত্যকে উপলব্ধি করেছেন তিনি। সত্য বড় কঠিন কিন্তু সেই কঠিন কেই কবি ভালবাসতে চেয়েছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন কঠিন কে গ্রহণ করার মধ্যেই প্রাণের গতি নিহিত আছে। জীবনের অর্থ কবির কাছে আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা। কঠিন সত্যকে গ্রহণ করার মাধ্যমে, মৃত্যুর কাছে নিজেদের সমর্পণ করার মাধ্যমে সেই তপস্যার পরিসমাপ্তি ঘটে। জীবনপথের অন্তিম লগ্নে উপনীত হয়ে আত্মোপলব্ধি অর্জন করাকেই তিনি জেগে ওঠা আখ্যা দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন্ ২০২৪

 

 

Leave a Reply