West Bengal Class 10 Madhyamik History Question Paper 2023 Solved | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র 2023

WhatsApp Channel Join Now
Telegram Group Join Now

MADHYAMIK HISTORY QUESTION PAPER 2023

WBBSE Madhyamik History Question Paper 2023 Solved | মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র 2023

2023 History Question Paper with answers for Madhyamik students of West Bengal Board of Secondary Education. Question and Answers of the question paper are given below.
মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অধীন মাধ্যমিক ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ২০২৩ সালের উত্তরসহ ইতিহাস বিষয়ের প্রশ্নপত্র।

📌 মাধ্যমিক বিগত বছরের প্রশ্নপত্র | Madhyamik Previous Years Question Paper CLICK HERE

2023
HISTORY
Time 3 Hours 15 Minutes
( First 15 minutes for reading the question paper only )

Full Marks: 90 For Regular Candidates
Full Marks: 100 For External Candidates

Special credit will be given for answers which are brief and to the point. Marks will be deducted for spelling mistakes, untidiness and bad handwriting.

[ ‘ক’ বিভাগ থেকে ‘ঙ’ বিভাগ পর্যন্ত প্রদত্ত প্রশ্ন নিয়মিত ও বহিরাগত সব পরীক্ষার্থীদের জন্য। ‘চ’ বিভাগে প্রদত্ত প্রশ্ন শুধুমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য ]

(‘ক’ বিভাগে সকল প্রশ্ন আবশ্যিক। অন্য বিভাগে বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষণীয়। ‘খ’ বিভাগে কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা বিকল্প প্রশ্নের নির্দেশ অনুযায়ী উত্তর লিখবে। অন্য সকলে মানচিত্র চিহ্নিত করবে।

বিভাগ ‘ক’

১। সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখ : ১×২০=২০

১.১ রাচেল কারসন যুক্ত ছিলেন—
(ক) আঞ্চলিক ইতিহাসে
(খ) নারীর ইতিহাসে
(গ) পরিবেশের ইতিহাসে
(ঘ) শহরের ইতিহাসে

উত্তরঃ (গ) পরিবেশের ইতিহাসে।

১.২ বঙ্কিমচন্দ্র ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেছিলেন—
(ক) তিন বছর (খ) চার বছর (গ) দশ বছর
(ঘ) বারো বছর

উত্তরঃ (খ) চার বছর।

১.৩ রামমোহন রায় অ্যাংলো হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—
(ক) ১৮২১ খ্রিঃ (খ) ১৮২৩ খ্রিঃ
(গ) ১৮১৫ খ্রিঃ (ঘ) ১৮২৬ খ্রিঃ

উত্তরঃ (গ) ১৮১৫ খ্রিঃ

১.৪ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি প্রাপক ছিলেন—
(ক) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(খ) বিদ্যাসাগর
(গ) আনন্দমোহন বসু
(ঘ) আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

উত্তরঃ (ঘ) আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।

১.৫ ‘রেনেসাঁস’ শব্দটি হল, একটি—
(ক) ইংরেজি শব্দ (খ) ফরাসি শব্দ
(গ) ইতালিয় শব্দ (ঘ) ল্যাটিন শব্দ

উত্তরঃ (খ) ফরাসি শব্দ

১.৬ ‘জঙ্গলমহল’ নামে একটি পৃথক জেলা গঠন করা হয়েছিল—
(ক) সাঁওতাল বিদ্রোহের পরে
(খ) কোল বিদ্রোহের পরে
(গ) চুয়াড় বিদ্রোহের পরে
(ঘ) মুণ্ডা বিদ্রোহের পরে

উত্তরঃ (গ) চুয়াড় বিদ্রোহের পরে।

১.৭ ভারতের রাজকীয় বনবিভাগের প্রথম ইন্সপেক্টর জেনারেল ছিলেন—
(ক) জোহান ক্রুগার
(খ) এলিয়াস ফিসার
(গ) ডিয়েট্রিস ব্রান্ডিস
(ঘ) ফ্রেডারিক হফম্যান

উত্তরঃ (গ) ডিয়েট্রিস ব্রান্ডিস।

১.৮ মহাবিদ্রোহকে (১৮৫৭) যে ব্রিটিশ লেখক ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ আখ্যা দিয়েছেন
(ক) চার্লস রেইকস্ (খ) নর্টন (গ) ম্যালেসন
(ঘ) ডিজরেলি

উত্তরঃ (ক) চার্লস রেইকস্

১.৯ চৈত্রমেলা, ‘হিন্দুমেলা’ রূপে পরিচিত হয়—
(ক) ১৮৬৭ খ্রিঃ থেকে (খ) ১৮৭০ খ্রিঃ থেকে
(গ) ১৮৭২ খ্রিঃ থেকে (ঘ) ১৮৭৫ খ্রিঃ থেকে

উত্তরঃ (ক) ১৮৬৭ খ্রিঃ থেকে

১.১০ ভারতসভার প্রথম সভাপতি ছিলেন –
(ক) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(খ) আনন্দমোহন বসু
(গ) রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়
(ঘ) শিবনাথ শাস্ত্রী

উত্তরঃ (গ) রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।

১.১১ বাংলাপুস্তক ব্যবসায়ের পথিকৃৎ ছিলেন—
(ক) উইলিয়াম কেরি
(খ) রামমোহন রায়
(গ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
(ঘ) গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য

উত্তরঃ (ঘ) গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য

১.১২ বাংলা লাইনোটাইপ প্রবর্তিত হয়—
(ক) ১৭৭৮ খ্রিঃ (খ) ১৮৭৮ খ্রিঃ
(গ) ১৯২৫ খ্রিঃ (ঘ) ১৯৩৫ খ্রিঃ

উত্তরঃ (ঘ) ১৯৩৫ খ্রিঃ

১.১৩ দেশপ্রাণ’ নামে পরিচিত ছিলেন—
(ক) অশ্বিনীকুমার দত্ত
(খ) সতীশচন্দ্র সামস্ত
(গ) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত
(ঘ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল

উত্তরঃ (ঘ) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল।

১.১৪ ভারতের প্রথম শ্রমিক সংগঠন ছিল—
(ক) গিরনি কামগার ইউনিয়ন
(খ) মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন
(গ) ইন্ডিয়ান মিলহ্যান্ডস্ ইউনিয়ন
(ঘ) সর্বভারতীয় ট্রেডইউনিয়ন কংগ্রেস

উত্তরঃ (খ) মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন।

১.১৫ কৃষক প্রজাপার্টি প্রতিষ্ঠা করেন—
(ক) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল
(খ) প্রফুল্লচন্দ্র সেন
(ঘ) ফজলুল হক
(গ) বাবা রামচন্দ্র

উত্তরঃ (ঘ) ফজলুল হক।

১.১৬ বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা’ রচনা করেন—
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(গ) রজনীকান্ত সেন
(ঘ) রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী

উত্তরঃ (ঘ) রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী।

১.১৭ নারী কর্ম মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন—
(ক) উর্মিলা দেবী
(খ) বাসন্তী দেবী
(গ) সরলাদেবী চৌধুরানি
(ঘ) সুনীতি দেবী

উত্তরঃ (ক) উর্মিলা দেবী।

১.১৮ এজাভা সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা ছিলেন—
(ক) রামস্বামী নাইকার
(খ) ত্যাগরাজা চেটি
(গ) নারায়ন গুরু
(ঘ) ভীমরাও আম্বেদকর

উত্তরঃ (গ) নারায়ন গুরু

১.১৯ ভাষাভিত্তিক পৃথক অন্তপ্রদেশ রাজ্যটি গঠিত হয়েছিল—
(ক) ১৯৪৭ খ্রিঃ (খ) ১৯৫০ খ্রিঃ
(গ) ১৯৫৩ খ্রিঃ (ঘ) ১৯৫৬ খ্রিঃ

উত্তরঃ (গ) ১৯৫৩ খ্রিঃ

১.২০ পুরুলিয়া জেলাটি পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়—
(ক) ১৯৫০ খ্রিঃ (খ) ১৯৫২ খ্রিঃ
(গ) ১৯৫৬ খ্রিঃ (ঘ) ১৯৬০ খ্রিঃ

উত্তরঃ (গ) ১৯৫৬ খ্রিঃ

বিভাগ ‘খ’

২। যে কোনো ষোলোটি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে) : ১×১৬=১৬

উপবিভাগ : ২.১

একটি বাক্যে উত্তর দাও : ১×৪=৪

(২.১.১) ভারতে কোন বছর রেলপথ প্রবর্তিত হয় ?

উত্তরঃ ১৮৫৩ খ্রীঃ

(২.১.২) গ্রামবার্তা পত্রিকাটি কোথা থেকে প্রকাশিত হত ?

উত্তরঃ গ্রামবার্তা পত্রিকাটি কুষ্ঠিয়া থেকে প্রকাশিত হত।

(২.১.৩) বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর প্রথম অধ্যক্ষ কে ছিলেন ?

উত্তরঃ প্রমথনাথ বসু।

(২.১.৪) ‘গান্ধিবুড়ি’ নামে কে পরিচিত ছিলেন ?

উত্তরঃ মাতঙ্গিনী হাজরা।

উপবিভাগ : ২.২

ঠিক বা ভুল নির্ণয় করো : ১×৪=৪

(২২১) বিপিনচন্দ্র পালের জীবনীগ্রন্থের নাম ‘সত্তর বৎসর’।

উত্তরঃ ঠিক

(২.২.২) প্রথম ভারতীয় শবব্যবচ্ছেদকারী ছিলেন মধুসুদন দত্ত।

উত্তরঃ ভুল

(২.২.৩) ড. অনিল শীল আঠারো শতককে ‘সভাসামতির যুগ’ বলে অভিহিত করেছেন।

উত্তরঃ ভুল

(২.২.৪) গণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী।

উত্তরঃ ভুল

উপবিভাগ ২.৩

‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও : ১×৪=৪

‘ক’ স্তম্ভ ‘খ’ স্তম্ভ
(২.৩.১) সি. ভি. রমণ (১) সিন্ধুপ্রদেশ
(২.৩.২) বাবা রামচন্দ্ৰ (২) বোম্বাই
(২.৩.৩) ঊষাবেন মেহতা (৩) কলকাতা
(২.৩.৪) হেমু কালানি (৪) উত্তরপ্রদেশ

উত্তরঃ
(২.৩.১) সি. ভি. রমণ – (৩) কলকাতা।
(২.৩.২) বাবা রামচন্দ্ৰ – (৪) উত্তরপ্রদেশ। (২.৩.৩) ঊষাবেন মেহতা – (২) বোম্বাই। (২.৩.৪) হেমু কালানি – (১) সিন্ধুপ্রদেশ।

উপবিভাগ : ২.৪

প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত করো ও নাম লেখো : ১×৪=৪

(২.৪.১) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) একটি কেন্দ্র – মীরাট ।

(২.৪.২) সাঁওতাল বিদ্রোহের এলাকা (১৮৫৫)।

(২.৪.৩) বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের একটি কেন্দ্র – বারাসাত ।

(২.৪.৪) দেশীয় রাজ্য হায়দ্রাবাদ ।

অথবা,

(কেবলমাত্র দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের জন্য)

শূন্যস্থান পূরণ করো : ১×৪=৪

(২.৪.১) ‘মাস্টারদা’ নামে পরিচিত ছিলেন __________।

(২.৪.২) ওয়াহাবি বলতে বোঝায় ___________।

(২.৪.৩) ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির লেখক ছিলেন ___________।

(২.৪.৪ ) হরি সিং ছিলেন _________ এর রাজা।

উপবিভাগ : ২.৫

নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঙ্গে সঠিক ব্যাখ্যাটি নির্বাচন করো :

(২.৫.১) বিবৃতি : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাত্মসমাজে যোগদান করেন এবং এটি ব্রাত্ম আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ।

ব্যাখ্যা ১ : তিনি সমগ্র ভারতবর্ষে ব্রাত্মধর্মপ্রচার করেছিলেন ।

ব্যাখ্যা ২ : তিনি খ্রিষ্টধর্ম প্রচারকদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সাফল্যজনকভাবে ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করেছিলেন।

ব্যাখ্যা ৩ : তিনি ব্রাত্মসমাজের সংস্কার করেন এবং নতুন প্রাণ সঞ্চার করেন।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : তিনি ব্রাত্মসমাজের সংস্কার করেন এবং নতুন প্রাণ সঞ্চার করেন।

(২.৫.২) বিবৃতি : ভারতের ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার অরণ্য আইন প্রবর্তন করেছিলেন ।

ব্যাখ্যা ১ : ব্রিটিশ সরকারের অরণ্য আইন প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা

ব্যাখ্যা ২ : ব্রিটিশ সরকারের উদ্দেশ্য ছিল অরণ্যবাসীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা।

ব্যাখ্যা ৩ : ব্রিটিশ সরকার নিজেদের স্বার্থে অরণ্য সম্পদ ব্যবহার করতে চেয়েছিল।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ৩ : ব্রিটিশ সরকার নিজেদের স্বার্থে অরণ্য সম্পদ ব্যবহার করতে চেয়েছিল।

(২.৫.৩) বিবৃতি : গান্ধিজি কখনোই শ্রমজীবীদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাননি।

ব্যাখ্যা ১ : গান্ধিজি ছিলেন মিল-মালিকশ্রেণির প্রতিনিধি।

ব্যাখ্যা ২ : গান্ধিজি পুঁজি এবং শ্রমের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে চেয়েছিলেন।

ব্যাখ্যা ৩ : গান্ধিজি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ২ : গান্ধিজি পুঁজি এবং শ্রমের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে চেয়েছিলেন।

(২.৫.৪) বিবৃতি ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে মোপলা বিদ্রোহ সংঘটিত হয় ।

ব্যাখ্যা ১ : এটি ছিল কৃষকদের একটি জঙ্গী আন্দোলন।

ব্যাখ্যা ২ : এটি ছিল একটি উপজাতীয় বিদ্রোহ ।

ব্যাখ্যা ৩ : এটি ছিল শিল্প-শ্রমিকদের একটি অভ্যুত্থান ।

উত্তরঃ ব্যাখ্যা ১ : এটি ছিল কৃষকদের একটি জঙ্গী আন্দোলন।

বিভাগ ‘গ’

৩। দু’টি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো এগারোটি) : ১১×২=২২

৩.১ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

উত্তরঃ খেলা নিয়ে নানা সময়ে জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবোধের সঞ্চার ঘটেছে। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ফুটবল খেলায় বাংলার মোহনবাগান ক্লাব ইংরেজ ক্লাবকে খালি পায়ে ঠেলে হারিয়ে দিয়ে আইএফএ শিল্ড জয় করে, যা জাতীয়তাবোধের ক্ষেত্রে কেবল মূর্ত প্রতীক নয় স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিকায় এই বিজয় ছিল দেশ বিজয়ের মত।

৩.২ ‘সরকারি নথিপত্র’ বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী, সেনাপতি, সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সমকালীন বিভিন্ন প্রত্যক্ষ ঘটনা সম্পর্কে যে তথ্যাদি লিখে গিয়েছেন সেই সবই সরকারি নথিপত্রের বিবরণ নামে পরিচিত।

৩.৩ কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায় স্মরণীয়া কেন ?

উত্তরঃ কাদম্বিনী বসু গাঙ্গুলী ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক যিনি ডাক্তারি শাস্ত্রের একাধিক বিদেশি ডিগ্রি (LRCP (Edinburgh), LRCS (Glasgow), and GFPS (Dublin) অর্জন করেছিলেন। তিনি এবং চন্দ্রমুখী বসু একই সাথে ভারত তথা সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট ছিলেন।

৩.৪ কোম্পানির শিক্ষাক্ষেত্রে ‘চুঁইয়ে পড়া নীতি’ বলতে কী বোঝায় ?

উত্তরঃ সমাজের উচ্চবর্গের কিছু মানুষ পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হলে তাদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমাজের নিচের স্তরে শিক্ষা ছড়িয়ে পড়বে। ফলে সমাজের নীচের স্তরের মানুষরাও শিক্ষিত হবে। একইভাবে তারা আবার তাদের আরও নিম্নের অংশের মানুষকে শিক্ষিত করবে। মেকলের এই নীতি কে ডাউনওয়ার্ড ফিলট্রেশন থিওরি বা চুইয়ে পড়া নীতি বলে।

৩.৫ দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সী কেন গড়ে তোলা হয়েছিল ?

উত্তরঃ কোল উপজাতিদের জন্য একটি পৃথক ভূখণ্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ- পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি গড়ে তোলে। এখানে ব্রিটিশ আইন কানুনের পরিবর্তে কোলদের নিজস্ব আইন কানুন চালু করা হয়।

৩.৬ ফরাজি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ কী ?

উত্তরঃ ফরাজি আন্দোলন পূর্ব বাংলার একটি সংকীর্ণ স্থানে আবদ্ধ ছিল। ইংরেজ সরকার, নীলকর ও জমিদারদের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি আন্দোলনকারীদের ছিল না। সংকীর্ণ ধর্মীয় চেতনার ওপর ভিত্তি করে এই আন্দোলন গড়ে ওঠে। রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ এর বিরোধী ছিল। ফলে এই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

৩.৭ মহারানির ঘোষনাপত্রের (১৮৫৮) প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উত্তরঃ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে মহারানির ঘোষণার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটান এবং ভারতীয়দের নিজ শাসনাধীনে এনে তাদের বিভিন্ন সুযোগসুবিধা দান। তবে এই সবই ছিল রাজনৈতিক চমক মাত্র। এর ফলে ভারতীয়রা প্রকৃতভাবে লাভবান হয় নি।

৩.৮ জমিদারসভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ জমিদার সভা ও ভারতসভার মধ্যে দুটি মৌলিক পার্থক্য হল (১) জমিদার সভা ছিল মূলত জমিদার ও ধনী ব্যবসায়ীদের সংগঠন। অন্যদিকে, ভারতসভা সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে গণসংগঠন গড়ে তুলেছিল। (২) জমিদার সভার প্রধান লক্ষ্য ছিল বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার জমিদারদের স্বার্থ রক্ষা করা। অন্যদিকে, ভারতসভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয়দের সার্বিক কল্যাণসাধন ও স্বার্থরক্ষা।

৩.৯ ড. মহেন্দ্রলাল সরকার স্মরণীয় কেন ?

উত্তরঃ ড. মহেন্দ্রলাল সরকার ছিলেন একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক। তিনি ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা আই এ সি এস প্রতিষ্ঠা করেন।

৩.১০ বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের প্রভাব কতটা ?

উত্তরঃ বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ করা যায়। ছাপাখানার বিকাশের ফলে বাংলায় গণশিক্ষার প্রসার শুরু হয়। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সস্তায় বইপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছোতে থাকে। সাধারণ মানুষ সুলভে বইপত্র থেকে বিভিন্ন জ্ঞান আহরণের সুযোগ পায়। বইয়ের ব্যাবসার নতুন বাজার গড়ে ওঠে।

৩.১১ আল্লুরি সীতারাম রাজু কে ছিলেন ?

উত্তরঃ আল্লুরি সীতারাম রাজু ছিলেন উনিশ শতকের একজন স্বাধীনতা সংগ্ৰামী যিনি ঔপনিবেশিক যুগে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গেরিলা প্রতিরোধ শৈলী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯২২ সালে শুরু হওয়া রাম্পা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন।

৩.১২ ‘মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা’টি কী ?

উত্তরঃ ভারতে বামপন্থী ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, পি সি যোশী সহ মোট ৩৩ জন বামপন্থী শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে এক মামলা শুরু করে। এটি মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। ১৯৩৩ সালে মামলার রায়ে বিভিন্ন বন্দির বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড হয়।

৩.১৩ দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তরঃ দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল নারীশিক্ষার প্রসার সাধন এবং বিপ্লবী আন্দোলনের জন্য নারীদের প্রস্তুত করা।

৩.১৪ গুরুচাঁদ ঠাকুর স্মরণীয় কেন ?

উত্তরঃ গুরুচাঁদ ঠাকুর ছিলেন একজন বাঙালি সমাজসংস্কারক ও শিক্ষাব্রতী। তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, দলিত হিন্দুদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের পথিকৃৎ।

৩.১৫ ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতার দাবিকে অগ্রাহ্য করেছিলেন কেন ?

উত্তরঃ ভারতের অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত কোনো দেশীয় রাজ্য স্বাধীন থাকলে তা স্বাধীন ভারতের সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপদজনক হবে। তাই সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল ভারতের দেশীয় রাজ্যগুলির স্বাধীনতার দাবিকে অগ্রাহ্য করেছিলেন।

৩.১৬ রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) কেন গঠিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ প্রধানত দুটি উদ্দেশ্যে ফজল আলির নেতৃত্বে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়। যেমন

(ক) রাজ্য পুনর্গঠন করা হবে কি না বা হলেও এর ভিত্তি কী হবে তা ঠিক করা।

(খ) রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন এবং ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সুপারিশ করা।

বিভাগ ‘ঘ’

৪। সাত বা আটটি বাক্যে যে কোনো ছ’টি প্রশ্নের উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ একটি করে প্রশ্নের উত্তর দাও) : ৪×৬=২৪

উপবিভাগ : ঘ.১

৪.১ উনিশ শতকের বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে রামমোহন রায়ের ভূমিকার মূল্যায়ন করো।

ভূমিকাঃ উনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় (1772-1833 খ্রি.) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন যে, আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে।

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারঃ পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে রামমোহন পাশ্চাত্য দর্শন, গণিত, রসায়ন, অস্থিবিদ্যা প্রভৃতি শিক্ষার জন্য ব্যাপক প্রচার চালান।

ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাঃ 1815 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় নিজ উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে কলকাতায় অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল নামে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

সরকারি সহযোগিতার জন্য আবেদনঃ 1823 খ্রিস্টাব্দে রামমোহন লর্ড আমহার্স্টকে এক চিঠিতে শিক্ষাখাতে ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রদত্ত এক লক্ষ টাকা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে ব্যবহারের জন্য আবেদন জানান।

বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠাঃ কুসংস্কার দূর করে পাশ্চাত্য পদার্থবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের ধারণা প্রসারের উদ্দেশ্যে রামমোহন 1826 খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

এছাড়াও ডেভিড হেয়ার আলেকজান্ডার দ্য প্রমুখ পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের তিনি নানাভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করেন। এভাবে তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে আছেন।

৪.২ ধর্মসংস্কার আন্দোলনরূপে ব্রাহ্মআন্দোলনের মূল্যায়ন করো।

উপবিভাগ : ঘ.২

৪.৩ ‘বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব’ এর ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব—‌ এই তিনের-ই আলাদা আলাদা অর্থ ও উদ্দেশ্য আছে। মানুষ যখন কোনো কিছু পাওয়ার চেষ্টা করে অথবা তাদের স্বার্থ বিরোধী কোনো ব্যবস্থা পছন্দ না করে, তখন বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান বা বিপ্লবের আকারে তাদের প্রতি ক্ষোভ ও প্রতিবাদে শামিল হয়।

বিদ্রোহ— কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে, নির্দিষ্ট কিছু মানুষ যখন নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে অসংগঠিত বা সুসংগঠিতভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তখন তাকে বিদ্রোহ বলে। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে রংপুর বিদ্রোহ, পাবনা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ প্রভৃতি হল বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

অভ্যুত্থান— কোনো দেশ বা সমাজে কিংবা প্রশাসনে কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজ গোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ যখন একই জাতীয় স্বার্থে প্রতিবাদে শামিল হয়ে নিজেদের নেতা বা প্রভুদের বিরুদ্ধে তাদের অধীনস্থ মানুষ সংগ্রাম করে তখন তাকে ‘অভ্যুত্থান’ বলে। ১৮৫৭ সালে ভারতের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একাংশের উদ্যোগে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহ এবং ১৯৪৬ সালে ভারতের ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সেনাদের একাংশের নেতৃত্বে নৌবিদ্রোহ হল অভুত্থানের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

বিপ্লব— ‘বিপ্লব’ কথার অর্থ হল কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন। যখন একটি দেশ বা জাতির প্রায় সমগ্র অংশ আর্থিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ বদল ঘটানোর উদ্দেশ্যে নিজেদের নিয়োজিত করে তখন তাকে ‘বিপ্লব’ বলা হয়। বিপ্লবের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল— অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের শিল্পবিপ্লব এবং ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব। শিল্পবিপ্লবের দ্বারা ইউরোপের শিল্পব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা ফ্রান্সে পূর্বতন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত ও আমূল পরিবর্তন ঘটে।

৪.৪ বারাসাত বিদ্রোহের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ইসলামের পুনরুজ্জীবন ও ইসলাম ধর্মের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হিসাবে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

(ক) সাম্প্রদায়িক আন্দোলন: ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার, বিহারীলাল সরকার, কুমুদ রঞ্জন মল্লিক প্রমুখ একে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলেছেন। ডঃ ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত এই বিদ্রোহকে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সংগঠিত আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন।

(খ) জমিদার বিরোধী: পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে তিতুমীরের বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। হিন্দু-মুসলিম উভয়শ্রেণীর মানুষ জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। তাই এটিকে জমিদার বিরোধী, হিন্দু-মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক ও অসাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলে ঐতিহাসিক হান্টার, থর্নটন মন্তব্য করেন।

(গ) কৃষক বিদ্রোহ: ঐতিহাসিক নরহরি কবিরাজ, ও কেয়ামুদ্দিন আহমেদ এই বিদ্রোহ কে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বলে মনে করেন। নীলকর ও ব্রিটিশ বণিকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছিল এটি। ডঃ বিনয়ভূষণ চৌধুরির মতে ওয়াহাবি আন্দোলন বা বারাসাত বিদ্রোহ ছিল কৃষক বিদ্রোহ। বারাসাত-বসিরহাট অঞ্চলে ব্রিটিশের শাসন লোপ পায় ও কৃষক শ্রেণীর মানুষ ক্ষমতা দখল করে স্বল্প সময়ের জন্য।

(ঘ) নিম্নবর্গের শ্রেনী সংগ্রাম : তিতুমিরের ডাকে নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে শোষণের বিরুদ্ধে, নীলকরের বিরুদ্ধে জাতীয় ভাবাবেগে উদ্বুদ্ধ হয়ে লড়াইতে সামিল হয়। ঐতিহাসিক রনজিৎ গৃহ এই বিদ্রোহকে নিম্নবর্গের শ্রেনী সংগ্রাম বলে চিহ্নিত করেন।

তবে, ধর্মীয় আন্দোলন হিসাবে শুরু হলেও অচিরেই এটা কৃষক আন্দোলনের চেহারা নেয়।

উপবিভাগ : ঘ.৩

৪.৫ বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভূমিকার মূল্যায়ন করো।

ভূমিকা : বাংলায় ছাপাখানা ও তার বিকাশে মুদ্রাকর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর (১৮৬৩-১৯১৫ খ্রি.) নেতৃত্বে এসেছিল এক বিপ্লব।

ছাপাখানার উন্নতি‌ : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী একজন শিশুসাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশনা ও ছাপাখানার প্রাথমিক জ্ঞান তার ছিল। তিনি যেভাবে ছাপাখানার উন্নতিসাধন করেন তা হল—

(ক) নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা: তিনি নিজে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীকালে ‘ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স’ (১৮৯৫ খ্রি.) নামে পরিচিত হয়।

(খ) হাফ-টোন ব্লকের প্রবর্তন: ‘এনগ্রেভিং’ পদ্ধতিতে মুদ্রণ ব্যবস্থার যে সীমাবদ্ধতাগুলি ছিল তিনি তা দূর করেন। এর পাশাপাশি তিনি রঙিন ও হাফ-টোন ব্লকের প্রবর্তন করে ভারতের তথা বিশ্বের মুদ্রণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উন্নতিসাধন করেন।

(গ) নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন: তিনি সম্পূর্ণ দেশীয় উপাদানে গবেষণা করে রঙিন মুদ্রণের নানাপ্রকার ডায়াফর্ম যন্ত্র, স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্র, ডুয়োটাইপ ও টিন্ট প্রসেস পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। উপেন্দ্রকিশোর উদ্ভাবিত স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্রের নাম হয় ‘রে-স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার’ এবং টিন্ট প্রসেস -এর নাম হয়-‘রে-টিন্ট সিস্টেম’।

(ঘ) পথপ্রদর্শক : উপেন্দ্রকিশোরের পরিকল্পনা অনুসরণ করে ব্রিটেনে বাণিজ্যিকভাবে ‘স্ক্রিন অ্যাডজাস্টিং মেশিন’ তৈরি করা হয়।

উপসংহার : এভাবে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স’ ছাপাখানা ভারত ও বিশ্বে বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী হয়ে ওঠে।

৪.৬ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাভাবনার সমালোচনামূলক আলোচনা করো।

উত্তরঃ

উপবিভাগ : ঘ.৪

৪.৭ স্বাধীনতালাভের পর ভারতীয় রাজ্যগুলোকে ভাষার ভিত্তিতে পুনর্গঠনের জন্য কী কী প্রচেষ্টা হয়েছিল ?

ভূমিকা : মানুষের মুখের ভাষা মানবসংস্কৃতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মাতৃভাষার মাধ্যমেই মানুষ একে অন্যের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে রাজ্য পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে ভাষাগত বিষয়টিকে জাতীয় নেতৃবৃন্দ বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি।

(ক) দাবি : স্বাধীন ভারতে অধিকাংশ দেশবাসীর দাবি ছিল ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠন করতে হবে। এই প্রেক্ষিতে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে গণপরিষদের উদ্যোগে গঠিত ভাষাভিত্তিক প্রদেশ কমিশন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে তার রিপোর্ট জমা দেয়। কিন্তু ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে গঠিত জে ভি পি কমিটিএই দাবি প্রত্যাখ্যান করে।

(খ) আন্দোলনের তীব্রতা : কিছুদিনের মধ্যেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ভাষার ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। মাদ্রাজ প্রদেশের তেলুগু ভাষাভাষী-অঞ্চল নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে পাত্তি শ্রীরামুলু অনশনে প্রাণত্যাগ (১৯৫২ খ্রি.) করলে সেখানে চরম নৈরাজ্য শুরু হয়। ফলে কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য হয়ে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তেলুগু ভাষা অঞ্চল নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিল ভাষা-অঞ্চল নিয়ে তামিলনাড়ু রাজ্য গঠন করে।

(গ) রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠন : এই সংকটময় পরিস্থিতিতে অঙ্গরাজ্যগুলির সীমানা নির্ধারণের নীতি উদ্ভাবনের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠন করে।

(ঘ) রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস : রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ পাস হয়। এই আইন দ্বারা ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ভারত সরকার ভাষার ভিত্তিতে ১৪টি রাজ্য ও প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করে। এভাবে ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

উপসংহার : স্বাধীনতা পরবর্তী রাজ্য পুনর্গঠনের নীতি নির্ধারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু প্রথমে ভাষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি। কিন্তু কিছুকালের মধ্যেই প্রমাণ হয় যে, নেহরুর নীতি ভুল ছিল। পরে মূলত ভাষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে রাজ্যগুলি পুনর্গঠিত হয়।

৪.৮ কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয় ?

ভূমিকা : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় ভারতীয় ভূখণ্ডের উল্লেখযোগ্য দেশীয় রাজ্য ছিল কাশ্মীর। ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগের পর কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে উদ্যোগী হন।

(ক) জটিলতা : কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং হিন্দু হলেও এখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ বাসিন্দা ছিল মুসলিম। এই অবস্থায় মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করলে পাকিস্তান ও ভারত উভয় রাষ্ট্রই কাশ্মীরকে নিজ রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে।এর ফলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে।

(খ) পাক হানা : ২২ অক্টোবর, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পাক মদতপুষ্ট হানাদারবাহিনী ও পাক সেনাদল কাশ্মীরে প্রবেশ করে ব্যাপক হত্যালীলা, লুণ্ঠন ও নির্যাতন শুরু করে। ফলে মহারাজা হরি সিং ভারত সরকারের কাছে সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করেন।

(গ) ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর : কাশ্মীরের সামরিক সাহায্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার ঘোষণা করে যে, মহারাজা ‘ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করলে তবেই তারা কাশ্মীরে সেনা পাঠাবে। এদিকে পাকবাহিনী কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থান দ্রুত দখল করতে থাকলে মহারাজা হরি সিং ভারতভুক্তির ‘দলিল’-এ স্বাক্ষর করেন।

(ঘ) ভারতের অভিযান : মহারাজা হরি সিং ভারতভুক্তির দলিল’-এ স্বাক্ষর করার পরের দিন ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরে অভিযান শুরু করে দ্রুত কাশ্মীরের ২/৩ অংশ ভূখণ্ড দখল করে নেয়।

(ঙ) শেখ আব্দুল্লাহর ক্ষমতা দখল : ভারতের সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লাহ কাশ্মীরের শাসনক্ষমতা দখল করেন।

(চ) যুদ্ধ বিরতি : জাতিপুঞ্জ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ৩১ ডিসেম্বর কাশ্মীরে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে এবং ‘যুদ্ধ বিরতি সীমারেখা’ বা ‘নিয়ন্ত্রণরেখায়’ (Line of Controlet LOC) জাতি পুঞ্জের পরিদর্শক নিয়োগ করে।

(ছ) আজাদ কাশ্মীর : পাকিস্তানকে হটিয়ে ভারত কাশ্মীর দখল করলেও কাশ্মীরের কিছু অংশ পাকিস্তানের দখলে থেকে যায়, যা ‘আজাদ কাশ্মীর’ নামে পরিচিত।

উপসংহার : পাকিস্তান মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরকে নিজেদের দখলে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারতের রক্ত ও লৌহ’ নীতি এবং কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং-এর উদ্যোগের ফলে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু কাশ্মীর না পাওয়ার হতাশা থেকে পাকিস্তান আজও ভারতে বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

বিভাগ ‘ঙ’

৫। পনেরো বা ষোলটি বাক্যে যে কোন একটি প্রশ্নের উত্তর দাও : ৮×১=৮

৫.১ বাংলার নবজাগরণ বলতে কী বোঝায় ? এই নবজাগরণের সীমাবদ্ধতাগুলি কী ?

ভূমিকা: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম বাংলা তথা বাংলাদেশে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীতে সংগঠিত নবজাগরণ বা রেনেসাঁস এর অন্যতম প্রধান পীঠস্থান ছিল বাংলা। রাজা রামমোহন রায়, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও প্রমুখ ছিলেন সেই নবজাগরণের ধারক ও বাহক।

নবজাগরণ : নবজাগরণের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘রেনেসাঁস’ হলো একটি ফরাসি শব্দ। ষোড়শ সপ্তদশ শতকে ইউরোপে শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন সূচিত হয় তাই ছিল নবজাগরণ। পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের সূত্রে উনিশ শতকে বাংলায় শিক্ষা সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটেছিল তাকে অনেকেই নবজাগরণ বলে উল্লেখ করেছেন।

নবজাগরণের স্রষ্টা : ভারত তথা বাংলার নবজাগরণের স্রষ্টা ছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বাদী প্রবক্তাগণ। সনাতন হিন্দু ঐতিহ্যে বিশ্বাসী মনীষীরা যেমনভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন ঠিক তেমনভাবে পাশ্চাত্যবাদী মনীষীরাও উপলব্ধি করেছিলেন প্রাচ্যের সংস্কৃত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা। উভয় গোষ্ঠী বুঝেছিলেন, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন দ্বারাই ভারতীয়রা সু-সভ্য হয়ে উঠবে।

(ক) নবজাগরণের প্রকৃতি : উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের প্রকৃতি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। যেমন –

(i) রামমোহন রায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কেশব চন্দ্র সেন, বিপিনচন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখ উনিশ শতকের বাংলায় মানসিক ও সামাজিক স্ফুরণকে নবজাগরণ বলেই আখ্যা দিয়েছেন।

(ii) ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার তাঁর ‘হিস্টি অফ বেঙ্গল’ গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলাকে নবজাগরণের পীঠস্থান বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে বাংলার নবজাগরণ ছিল অনেক বেশি গভীর এবং বৈপ্লবিক।

(iii) অধ্যাপক সুশোভন সরকার বলেছেন, বাংলাদেশেই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ শাসনের বুর্জোয়া অর্থনীতি ও আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব অনুভূত হয়, যা নবজাগরণ ঘটায়।

(খ) বাংলার নবজাগরণ প্রকৃত নবজাগরণ নয়। উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণকে অনেকেই স্বীকার করেন না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্ন কথা বলেছেন। যেমন—

(i) তথাকথিত নবজাগরণ : প্রখ্যাত পন্ডিত অশোক মিত্র বাংলার নবজাগরণকে ‘তথাকথিত’ নবজাগরণ বলেছেন। তাঁর মতে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবাদে উদ্ভূত নতুন জমিদার শ্রেণী তাদের আয়ের একটা বিরাট অংশ তারা কলকাতার সংস্কৃতি কর্মকাণ্ডে ব্যয় করেন। ফলে সেখানে সাধারণ মানুষের কোনো যোগ ছিল না।

(ii) ইউরোপীয় নবজাগরণের সমতুল্য নয় : গবেষক সুপ্রকাশ রায় বলেছেন, বাংলার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আন্দোলনের প্রকৃতি ছিল ইউরোপের আন্দোলন থেকে অনেক ভিন্ন ও বিপরীতমুখী।

(iii) ঐতিহাসিক প্রতারণা : ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষ তাঁর ‘বাংলার নবজাগৃতি’ গ্ৰন্থে বলেছেন উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ ছিল একটি মিথ্যাচার। তিনি একে ‘ঐতিহাসিক প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।

(গ) নবজাগরণের সীমাবদ্ধতা : উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন—

(i) উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ ছিল মূলত শহরকেন্দ্রিক। সাধারন মানুষের একটা বড় অংশ এই নবজাগরণে শরিক হতে পারে নি।

(ii) ইতালির ফ্লোরেন্স নগরী ইউরোপের নবজাগরণে যে ভূমিকা পালন করেছিল বাংলার ক্ষেত্রে কলকাতার তা করতে পারেনি। ফ্লোরেন্সের মতো স্বাধীন মানসিকতা ও শিল্পীমন কলকাতার ছিল না।

(iii) বাংলার নবজাগরণ ছিল মূলত বর্ণ হিন্দুদের। মুসলিম সমাজ এই নবজাগরণের বাইরে ছিল।

(iv) বাংলার নবজাগরণের প্রবক্তারা বাংলার সমাজকাঠামো, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, জাতিভেদ প্রথা প্রভৃতি ক্ষেত্রে পুরোপুরি সাফল্য লাভ করতে পারে নি।

(ঘ) নবজাগরণের গুরুত্ব : উনিশ শতকে নবজাগরণের ফলে, ভারতীয়রা পাশ্চাত্য জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ পায়। ভারতীয়দের কাছে এর আগে এই ধারণা স্পষ্ট ছিল না। নবজাগরণের ফলেই ভারতীয় সামাজ মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ পদার্পণ করে।

৫.২ বাংলায় ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ সমূহের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

ভূমিকা : অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে ঊনবিংশ শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত সময়কালে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ছাপাখানা স্থাপিত হয়। ছাপাখানার প্রসারের ফলে মুদ্রণশিল্প একটি প্রতিষ্ঠানের পেশাদারী ব্যবসা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

(i) বই প্রকাশ : শিক্ষার্থীদের অক্ষরজ্ঞান সহ গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি পাঠ্য বিষয়ের বইপত্র ছাপাখানার মালিকরা তাদের ছাপাখানায় ছাপাতে থাকেন। ছাপাখানার মালিকরা সাহিত্য, কবিতা, নাটক, গানের বই, ধর্মগ্রন্থ, অনুবাদ গ্রন্থ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ছাপা শুরু করে। এইসব বই বিক্রি করে মালিকদের ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটে।

(ii) পত্র পত্রিকা : অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে বাংলায় বেশ কয়েকটি সংবাদ ও সাময়িক পত্র প্রকাশিত হয়।বেঙ্গল গেজেট, গ্রামবার্তা প্রকাশিকাপ্রভৃতি মাসিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের পত্রপত্রিকা ছাপা হলে ছাপাখানার ব্যবসার আরো প্রসার ঘটে।

(iii) অফিস আদালতের প্রতিষ্ঠা : ব্রিটিশ শাসনকালে প্রতিষ্ঠিত অফিস-আদালতের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজপত্র মুদ্রণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মিলিটারি বিল, সামরিক বাহিনীর বিধি-বিধান, বিজ্ঞপ্তি প্রভৃতি কাগজপত্রছাপার কাজ শুরু হলে ছাপাখানার ব্যবসা বৃদ্ধি পায়।

(iv) উইলকিনসের উদ্যোগ : ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে উইলকিনস কলকাতায় ব্যাবসায়িক উদ্যোগে ‘অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল ব্যাবসায়িক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি উল্লেখযোগ্য ছাপাখানা।

(v) গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের উদ্যোগ : প্রথম বাঙালি প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ গ্রন্থটিকে তিনি চিত্রসহ প্রকাশ করেছিলেন।

(vi) বিদ্যাসাগরের অবদান : বিদ্যাসাগর ব্যাবসায়িক উদ্যোগে সংস্কৃত প্রেস স্থাপন করেছিলেন। এখান থেকে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে প্রায় ৫০ হাজার কপি ‘বর্ণপরিচয়’ ছাপা হয়। ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগের জন্য তাকে ‘বিদ্যাবণিক’ বলা হয়।

(vii) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির অবদান :
বাংলাদেশে ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তার প্রতিষ্ঠিত ইউ.এন রায় অ্যান্ড সনস’ নামক ছাপাখানাটি আধুনিক বাংলা ছাপাখানার পথপ্রদর্শক ছিল।

উপসংহার : ব্যাবসায়িক উদ্যোগ হিসেবে এই সময় বাঙালিরা ছাপাখানার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।

৫.৩ বারদৌলি আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। তুমি কী মনে কর যে, এই আন্দোলন ভূমিহীন কৃষকশ্রেণি এবং কৃষিশ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সফল হয়েছিল ?

উত্তরঃ গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকের কৃষকরা ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এক শক্তিশালী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে, যা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

কারণ ও প্রেক্ষাপট—

• হালি প্রথা : বারদৌলিতে সম্পন্ন কৃষকেরা কুনবি পাতিদার নামে পরিচিত ছিল। এদের অধীনে জমি চাষ করত ঋণদাস নামে এক ধরনের দাস শ্রমিক। এখানকার ৬০ শতাংশ মানুষ ছিল নিম্নবর্ণের কালিপারাজ বা কালো মানুষ। আর উচ্চবর্ণের মানুষেরা উজালিপারাজ বা সাদা মানুষ নামে পরিচিত ছিল। ‘হালি’ প্রথা অনুসারে এখানকার ভাগচাষিরা উচ্চবর্ণের মালিকদের অধীনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত।

• খাজনা বৃদ্ধি : সরকার বারদৌলির কৃষকদের ওপরে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে খাজনার হার ২২ শতাংশ বৃদ্ধি করে। ফলে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়।

• দুর্ভিক্ষ : ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বারদৌলিতে ভয়ানক বন্যা হয়। ফলে কৃষকদের ফসল নষ্ট হওয়ায় সেখানে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে।

• নেতৃত্ব : বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কৃষকরা গান্ধিবাদী কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি এখানে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এছাড়া নরহরি পারিখ, রবিশংকর ব্যাস, মোহনলাল পান্ডে প্রমুখ সর্দার প্যাটেলকে সহযোগিতা করেন। মিঠুবেন প্যাটেল, মণিবেন প্যাটেল, সারদা মেহতা, ভক্তি বাঈ প্রমুখ নারী এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

• প্রভাব: আন্দোলনের সমর্থনে বোম্বাই বিধানসভার সদস্য কে এম মুন্সি ও লালজি নারাণজি পদত্যাগ করেন। গান্ধিজিও বারদৌলিতে এসে আন্দোলনে নেতৃত্বদানের কথা ঘোষণা করেন। শেষপর্যন্ত সরকার নিযুক্ত এক কমিটি ৬.২৫ শতাংশ খাজনা বৃদ্ধি অনুমোদন করলে কৃষকরা তা দিতে রাজি হয়।

ফলাফল—

• অবশেষে 1928 সালে বোম্বে সরকারের একজন পার্সি কর্মকর্তার মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি হয়। এটি পরের বছর না হওয়া পর্যন্ত 22% বৃদ্ধি স্থগিত করতে, চুরি হওয়া জমি এবং সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে এবং বছরের রাজস্ব প্রদান বাতিল করতে সম্মত হয়েছে।

• বোম্বে প্রেসিডেন্সিতে ব্রিটিশ সরকার ম্যাক্সওয়েল-ব্রুমফিল্ড কমিশন গঠন করতে বাধ্য হয় যখন তারা অনুভব করে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।

• তাই, সরকারী কর্মকর্তা এবং বারদোলীর কৃষকদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয় এবং রাজস্ব চাহিদা 6.03% এ নামিয়ে আনা হয়।

• এছাড়াও, বারদোলীর কৃষকরা তাদের বাজেয়াপ্ত জমি ফেরত পেয়েছে।

উপসংহার : সত্যাগ্রহ পদ্ধতিতে সংগঠিত বারদৌলি সত্যাগ্রহ কৃষকদেরকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল। গান্ধিজির সত্যাগ্রহ নীতি এখানে আর-একবার সফল বলে প্রমাণিত হয়। যখন সরকার আন্দোলনের ফলে খাজনার হার ২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.২৫ শতাংশ করে।

(কেবলমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য)

বিভাগ ‘চ’

৬। ৬.১ একটি সম্পূর্ণবাক্যে উত্তর দাও (যে কোনো চারটি) : ১×৪=৪

৬.১.১ ‘নীলদর্পণ’ নাটকটির রচয়িতা কে ?

৬.১.২ এশিয়াটিক সোসাইটি কোন বছর প্রতিষ্ঠিত হয় ?

৬.১.৩ ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ কাদের বলা হয় ?

৬.১.৪ একজন ব্যঙ্গচিত্র শিল্পীর নাম করো ।

৬.১.৫ কে বর্ণপরিচয় রচনা করেন ?

৬.১.৬ কে ‘সর্দার’ উপাধিতে ভূষিত হন ?

৬.২ দু’টি বা তিনটি বাক্যে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোনো তিনটি) : ২×৩=৬

৬.২.১ ডেভিড হেয়ার স্মরণীয় কেন ?

৬.২.২ ভারতসভা প্রতিষ্ঠার যে কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো ।

৬.২.৩ মোপলা বিদ্রোহ কেন হয়েছিল ?

৬.২.৪ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণীয় কেন ?

৬.২.৫ ‘রসিদ আলি দিবস’ কেন পালিত হয়েছিল ?

📌 আরও দেখুনঃ

» Madhyamik History Q.P 2024

» Madhyamik History Q.P 2023

» Madhyamik History Q.P 2022

» Madhyamik History Q.P 2020

» Madhyamik History Q.P 2019

» Madhyamik History Q.P 2018

» Madhyamik History Q.P 2017

📌 আরও দেখুনঃ

» মাধ্যমিক বাংলা সিলেবাস ২০২৫

» মাধ্যমিক বাংলা পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ইংরেজি পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ইতিহাস পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ভূগোল পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান

» মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পাঠ্যবই সমাধান

» দশম শ্রেণি সমস্ত বিষয়ের ইউনিট টেস্ট প্রশ্নপত্র

» মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিন ২০২৫

» মাধ্যমিক সমস্ত বিষয়ের MCQ মক টেস্ট

Leave a Reply